সিদ্ধান্তটা হঠাৎ করে নিয়েছে স্যামুয়েল ব্রুকস। আগাম বিপদ টের পাওয়ার সহজাত প্রবণতা আছে ওর মধ্যে। কারণ বিপদ ওর বহু পুরানো বন্ধু। পারকারের রাইডারেরা যে কোন সময়ে হামলা করতে পারে, কেবিনের চার দেয়ালের মধ্যে ওকে পেয়ে গেলে কাজটা সহজ হয়ে যাবে। সন্ধের পরপরই তাই সজি বাগানের পেছনে, উইলো ঝোপের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। জায়গাটা এমন কেবিন ও তার আশপাশের সবকিছুই স্পষ্ট চোখে পড়বে, অথচ আগে থেকে জানা না থাকলে ওদিক থেকে ওর অবস্থান আঁচ করা কঠিন।
অন্যদিনের চেয়ে একটু আগে সাপার সেরেছে ও, তারপর হেনরীটা নিয়ে উইলো ঝোপের কাছে চলে এসেছে। ঘাসের ওপর বেডরোল বিছিয়ে সিগারেট ধরিয়েছে, নির্জন প্রেইরিতে চোখ। চাঁদের ম্লান আলো নিকষ কালো আঁধার দূর করতে পারেনি। দশ হাত দূরে রোয়ানের অস্পষ্ট নড়াচড়া টের পাচ্ছে। এমিলিওর গেল্ডিংটাকে প্রেইরিতে ছেড়ে দেয়ার পর থেকে গরুগুলোর সাথেই থাকছে, খাওয়ার সময় হলে কেবিনের কাছে চলে আসে। ঘোড়াদুটোর ওপর আস্থা আছে ওর, বিশেষ করে দীর্ঘদিনের সঙ্গী রোয়ানের ওপর। অনাহুত কেউ আসামাত্র ওকে সতর্ক করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া ও নিজে তো আছেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঠিক ঠিক আগে থেকে টের পেয়ে যায় ও, বহুবার এমন হয়েছে। কেউ এলে একেবারে নিঃশব্দে আসা অসম্ভব, সুতরাং ও টের পাবেই। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম ভাঙল হঠাৎ করেই। মুখের ওপর থেকে হ্যাট সরিয়ে উঠে বসল ব্রুকস, কোলের ওপর তুলে নিল হেনরীটা। কেবিনের দিকে চলে গেছে দৃষ্টি, পোর্চে কয়েকটা ছায়া দেখে একটুও অবাক হলো না। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একজন, সপাটে দরজা আটকে দিল। হারামজাদা ভেগেছে! চাপা স্বরে বলল সে, কেবিনে আগুন লাগিয়ে দাও।
নড়েচড়ে উঠল লোকগুলো। দূরে দাঁড়ানো ঘোড়ার স্যাডল থেকে বড়সড় একটা টিনের পাত্র নিয়ে এল একজন, মুখ খুলে ভেতরের তরল দেয়ালে ছিটাতে শুরু করল, শেষে ছাদে ছুঁড়ে মারল।
প্রমাদ গুনল ব্রুকস, নিজের অবস্থান ফাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। নইলে কেবিনটাকে রক্ষা করা যাবে না, সাথে ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও সব যাবে। হেনরী কক্ করল ও, নির্জন রাতে শব্দটা তুলনামূলক জোরাল শোনাল। কাঠ হয়ে গেছে সবকটা ছায়া। ও কাজ কোরো না, তাহলে কিন্তু গুলি করব।
সাহস থাকে তো সামনে এসো! উস্কানি দিল একজন।
ডানদিকে চারহাত দূরের বোন্ডারের দিকে তাকাল ব্রুকস, অনায়াসে ঝাঁপ দিয়ে ওটার পেছনে আড়াল নেয়া যাবে। এদিকে ওর অবস্থান আঁচ করার চেষ্টা করছে লোকগুলো, সুযোগ পেলেই কোমরে হাত বাড়াবে। সময় যেন আটকে আছে। পায়ের ভর বদল করল একজন, হঠাৎ করে পাশে সরল সামনের লোকটা। তাতে আড়ালে পড়ে গেল পরের জন। ফশ করে দেয়াশলাইয়ের একটা কাঠি জ্বলে উঠল। ওরা এতটা সাহস দেখাবে ভাবতে পারেনি কন্স, তবে নির্দ্বিধায় গুলি করল। রাইফেলের ভারী গর্জনে কেঁপে উঠল প্রেইরির জমাট নিস্তব্ধতা। ঢলে পড়ল সামনের বার-পি, দেয়াশলাইয়ের কাঠিসহ হাতটা শরীরের নিচে চাপা পড়ে গেল।
ঝটিতি ঘুরেই আন্দাজের ওপর গুলি করল পেছনের লোকটা। ব্রুকসের দুহাত দূরে একটা বার্চের ওড়িতে গিয়ে বিধল। ফের গুলি করল ও, ফলাফল দেখার অপেক্ষায় না থেকে ঝাপ দিল। গড়ান দিয়ে চলে এল বোল্ডারের আড়ালে। জায়গাটায় যেন নরক ভেঙে পড়ল এরপর, সমানে গুলি করছে ওরা।
অপেক্ষা। প্রথম ঝাপটা কেটে যেতে থেমে গেল গুলির শব্দ। বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস। মাথা সরিয়ে তাকাল ব্রুকস, চারটে ছায়া, সবার ডান হাত লম্বা। একপাশে সরে গেল দুজন। বোন্ডারের আড়াল থেকে শরীর বের করল ও। নড়াচড়া টের পেয়ে গেল বার-পি জুরা, কিন্তু সুযোগ পেল না। ব্রুকসের গুলিতে থেমে গেল সামনের জন, ধীরে হাটু ভেঙে পড়ে গেল। অন্যরা ঝাপ দিয়েছে, মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলতে চাইছে শরীর।
সামলে নিয়ে আরেকপশলা গুলি চালাল ওরা, কিন্তু ততক্ষণে নিরাপদে সরে পড়েছে ব্রুকস।
মিনিট দশ ঠায় পড়ে থাকল ও। প্রতিপক্ষের সাড়া নেই। পিঠটান দিল নাকি? অন্তত দুজন মরেছে, তবু বলা যায় মোটেই আনাড়ি ছিল না লোকগুলো। ভড়কে দিয়ে ফায়দা লুটেছে ও। আরেকটা সুবিধা ছিল-বার-পি ক্ৰদেৱ মত ওকে খোলা জায়গায় থাকতে হয়নি। লড়াইয়ের সমীকরণ যখন অসমান তখন প্রতিপক্ষের দুর্বলতাই ওর পুঁজি। এটাও ঠিক একই ভুলও ওরা বারবার করবে না।
ধীরে নিঃশব্দে সরে এল ও। পেছনে ঘন উইলো ঝোপ, চাপ চাপ অন্ধকারের পটভূমিতে ওকে চোখে পড়ার কথা নয়। অনেকক্ষণ পর দুটো ছায়া চোখে পড়ল, পিছু হটছে। আপাতত বোধহয় ঝামেলা বিদায় হয়েছে। একটু পর দিগন্তের আবছা অবয়বে দেখা গেল ঘোড়সওয়ারদের, তিনজন। বার-পি বাথানের দিকে যাচ্ছে।
কেবিনের সামনে খোলা জায়গায় দৃষ্টি বুলাল ও, নিথর একটা দেহ পড়ে আছে পোর্চে। একটু দূরে করালের কাছে আরেকজন। তিন নম্বরকে পাওয়া গেল সজি বাগানের একেবারে কিনারায়। সম্ভবত মৃত। নিশ্চিত হতে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল ও, তারপর বেরিয়ে এসে লাশগুলো পরীক্ষা করল।
কফির তেষ্টা পেয়েছে। কেবিনের ছাদ ও দেয়ালে তেল ঢেলেছে লোকগুলো, চুলো জ্বালানো বিপজ্জনক হতে পারে। পোর্চে উঠে এসে পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল লাশটা, তারপর ভেতরে ঢুকে পড়ল। তিন বছর ধরে থাকছে এখানে, অন্ধকারেও অনায়াসে তাই চলতে পারছে। রান্নাঘরে চলে এল ও, হাতড়ে ওঅশ বেসিনের পাশে পেল কেতলিটা। ওটায় পানি ঢেলে মগ, চিনি আর কফির গুঁড়ো নিয়ে বেরিয়ে এল। উইলো ঝোপের পেছনে খোলা জায়গা দেখে মাটিতে গর্ত করল, আগুন জ্বালিয়ে তিনটা পাথরখণ্ডের ওপর কেতলি চাপিয়ে দিল।
মগভর্তি গরম কফি নিয়ে আয়েশ করে বিছানায় বসল ও। ধীরে চুমুক দিচ্ছে। বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত না নিলে এতক্ষণে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হত, ভাবছে ও। চমৎকৃত হওয়ার কিছু নেই, জানত এরকম কিছু হতে পারে। ধরে নেয়া যায় বাকি রাতটুকু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। বার-পি এত মরিয়া হয়ে যায়নি যে আজ রাতেই ফের হামলা চালাবে। মরার ভয় ওদেরও আছে, তাছাড়া লড়াই করতে যারা এসেছিল কেউই বোধহয় পরকারের নিজস্ব লোক নয়। ভাড়াটে লোকের আগ্রহ কখনোই আন্তরিক হয় না। ওরা লড়াই করবে তখুনি যখন সাফল্যের পাল্লা নিজেদের দিকে ভারী থাকবে।
ভোরে ঘুম ভাঙল ওর। চারপাশের ফিকে আলোয় নির্জন প্রেইরি ঝাপসাভাবে চোখে পড়ছে। পায়ে বুট গলিয়ে কফির পানি চড়াল, তারপর কেবিনে এসে ঢুকল। হাত-মুখ ধুয়ে শুকনো জার্কি আর বিস্কুট দিয়ে নাস্তা সেরে নিল। কফির মগ হাতে বিতৃষ্ণার সাথে দেখল লাশগুলো। বিন্দুমাত্র করুণা হচ্ছে না। অস্থির অনিশ্চয়তায় ভরা জীবনটা পেছনে ফেলে এসেছিল ও, এরা ওকে বাধ্য করেছে সে-জীবনে ফিরে যেতে। মাসুল তো দিতেই হবে, হয় তাদেরকে নয়তো ওকেই।
কফি শেষ করে মাটি দিয়ে গর্তটা ভরাট করল, বেডরোল গোটাল এরপর। এমিলিওর গেন্ডিংটা কাছে চলে এসেছে। করালে গিয়ে দুটো ঘোড়ারই যত্ন নিল। শেষে গেল্ডিঙের পিঠে স্যাডল চাপাল, আপত্তি করল না ঘোড়াটা। দূর থেকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখছে রোয়ানটা, পছন্দ বা অপছন্দ কোনটাই করছে না। আপনমনে হাসল ব্রুকস, ঘোড়াটা ওর মতই-প্রয়োজন ছাড়া নিরুৎসাহী, ধীর-স্থির কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল।
গেন্ডিঙে চড়ে তৃণভূমিতে এল ও। কয়েকটা গরু সীমানার কাছাকাছি চলে গেছে, বেশ কসরৎ করে ফিরিয়ে আনল ওগুলোকে। সজি বেড় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল এরপর। চারপাশে সজাগ দৃষ্টি রাখছে, জানে বার-পি আবারও চড়াও হতে পারে।
জুলিয়াস পারকারকে রীতিমত ঘৃণা করতে শুরু করেছে ব্রুকস। নিজের লড়াই অন্যকে দিয়ে করায় দুর্বল ও কাপুরুষেরা, পারকার, তেমনই একজন। কিন্তু এ তল্লাটে সবচেয়ে বেশি প্রতাপ তারই। হাস্যকর। নিজের তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যুহের ভেতর লোকটা প্রচণ্ড শক্তিশালী ঠিকই, দেয়ালটা একবার ভেঙে গেলে ইদুরের মত ভয়ে সিঁটিয়ে যাবে।
পারকারের পরবর্তী চাল অনুমান করতে কষ্ট হয় না। টাকার পরোয়া না করে আরও লোক আনবে। ভয়ঙ্কর কিছু লোকের আনাগোনায় ভরে যাবে বেসিন। সত্যিকার কিছু টাফ লোকও আসবে যাদের গতরাতের মত সহজে ভড়কে দেয়া কিংবা কাবু করা যাবে না। তবে এসব নিয়ে খুব একটা ভাবছে না ব্রুকস। একসময় নিজের হাতে ভাগ্য গড়তে চেয়েছিল, কিন্তু নয়তি ওর পিছু ছাড়েনি, পুরানো জীবনে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাই নিয়তির হাতে সঁপে দিয়েছে সবকিছু, ও কেবল টিকে থাকার চেষ্টা করবে। এতগুলো লোকের সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব, জানে, কিন্তু পিছিয়ে যাওয়া ওর ধাতে নেই। পরিণতি নিয়েও ভাবছে না। ব্রুকস জানে, দেখেছেও বহুবার-একজন বন্দুকবাজের মৃত্যু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় বন্দুকের গুলিতে। তেমন করে মরতে হবে ওকে, হয়তো আজ বা কাল…কিংবা আরও পরে। নির্ভর করে কিভাবে টিকে থাকছে তার ওপর।
পুব দিগন্তে দুজন ঘোড়সওয়ারকে দেখে ভুরু কুঁচকে উঠল ওর। সীমের চারাগুলোর মাঝখান থেকে দ্রুত কয়েকটা আগাছা তুলে নিল। একবার নজর বুলাল রাইফেলের ওপর, নাগালের মধ্যেই আছে। লাশগুলোর কথা মনে পড়তে উঠে পড়ল। টেনে ঝোপের কাছে এনে রাখল ওগুলো। কাজটা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু আগন্তুকদের পরিচয় আন্দাজ করতে পারছে বলেই করল।
পোর্চে দাঁড়িয়ে বাপ-বেটির ওপর নজর বুলাল ব্রুকস, তৃণভূমি আর পর্বতমালা দেখছে ওরা। ঠোঁট নড়ছে, আলাপের বিষয়বস্তু ব্রুকসের কানে না এলেও আঁচ করতে পারছে। কাছে আসার পর জেমস ফ্ল্যাগানের কথায় ওর ধারণাই সত্যি হলো।
দারুণ এক বাথান! অকৃত্রিম প্রশংসা সার্কেল-এফ মালিকের কণ্ঠে। পাঞ্চাররা বলাবলি করত কিন্তু কখনোই আমল দেইনি আমি। স্যাম, মনে হচ্ছে কেবল তোমার পক্ষেই সম্ভব এটা, অন্য কেউ পারত না। নালা কেটে, ঝর্নার গতিপথ বদলে দিয়েছ। আর তাতে সবকিছু এভাবে বদলে যাবে কে ভেবেছিল! তোমার অনেক আগে এখানে এসেছি আমরা, কিন্তু এরকম ধারণা কারও মাথায়ই আসেনি।
ফ্ল্যাগান-কন্যার দিকে তাকাল ব্রুকস। নিতান্ত সাধারণ স্কার্ট-ব্লাউজে অপূর্ব লাগছে। মহিলাদের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা ওর বলতে গেলে নেই, কিন্তু কোন্ মুখ কতটা সুন্দর তা ভাল করে জানে।
ওর আশঙ্কা লাশগুলো হয়তো মেয়েটার চোখে পড়ে যাবে, তাহলে অস্বস্তিতে ভুগবে লরিয়া।
স্যাডল ছেড়ে পোর্চে এসে দাঁড়াল জেমস ফ্ল্যাগান। তবে সবার আগে খুশি হয়েছি তোমাকে খাড়া থাকতে দেখে।
ব্রুকসের চোখে প্রশ্ন ফুটে উঠল।
রাতে গোলাগুলির শব্দ শুনলাম। নিশ্চয়ই হামলা করেছে বার-পি। কজন এসেছিল?
ছয়জন।
ফিরে গেল কজন?
অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে লরিয়া, ওদের এসব আলাপ ভাল লাগছে না। সজি বাগানের ওপর চোখ পড়তে আঁতকে উঠল, চোখে বিস্ময়। বাবা, দেখো…লোকগুলো, ওরা কি সত্যি…
লরা, ভেতরে গিয়ে কফি তৈরি করবি? দ্রুত বলে উঠল ফ্ল্যাগান, মেয়েকে সরিয়ে দিতে চাইছে। লরিয়া কেবিনের ভেতর ঢুকে পড়তে বাগানের দিকে এগোল। কাছে গিয়ে লাশগুলো উল্টে চেহারা দেখল। সবকটা বদমাশ! এর আগে একজনকেও দেখিনি, কিন্তু ওরা যে নির্দয় খুনী তা মরার পরও ওদের চেহারায় লেখা রয়েছে। ফেরার সময় সিগার ধরাল সার্কেল-এফ মালিক। এতদিনে শিক্ষা হবে বুড়ো ভামটার! আজীবন অন্যের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছে, এবার মজা বুঝবে। তুমি লোকটা আসলেই অসাধারণ! শুধু খাটতেই জানো না, বুকের পাটাও আছে। তোমার জায়গায় হলে আমি কখন সটকে পড়তাম!
ক্ষীণ হাসল ব্রুকস যদিও একমত হতে পারল না। ফ্ল্যাগানদের আত্মসম্মানবোধ খুব প্রখর, আইরিশদের মধ্যে বরাবর যা দেখা যায়। এ লোক মরবে কিন্তু পালাবার দলে নয়।
তোমাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হতাম, স্যাম। দুজন কাউহ্যান্ডকে ধার দিতে পারি, তবে এটা ঠিক, তোমার মত লড়তে পারবে না ওরা। অবশ্য বাথানের কাজে সাহায্য করতে পারবে।
সার্কেল-এফকে এর সাথে জড়াতে চাই না আমি।
লরিয়াকে নিয়েই তো ঝামেলার শুরু। তুমি অস্বীকার করলেও আমি মনে করি সার্কেল-এফ প্রথম থেকে এতে জড়িয়ে আছে।
তোমার লোকগুলো কেমন, ফ্ল্যাগান? তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। দুএকজনের সাথে আমার কথাও হয়েছে। উঁহু, নিরীহ লোকগুলো পারকারদের তোপের মুখে পড়ক তা আমি যেমন চাই না তেমনি ওরাও চাইবে না।
এই, বাবা, ভেতর থেকে ডাকল লরিয়া। কফি হয়েছে, এসো তোমরা।
ফ্ল্যাগান এগোতে অনুসরণ করল ব্রুকস। টেবিলে অপেক্ষা করছিল লরিয়া, মগপূর্ণ ধূমায়িত কফি আর বিস্কুট পরিবেশন করেছে।
লরা, আমরা ওর বাড়িতে এলাম নাকি ও আমাদের বাড়িতে এল? সহাস্যে জানতে চাইল সার্কেল-এফ মালিক।
আভা ছড়াল মেয়েটার ফর্সা গালে। চুপ করবে? কড়া দৃষ্টিতে দেখছে বাপকে, ব্রুকসের অভিব্যক্তিহীন মুখের দিকে তাকাল একবার, তারপর বাপের পাশে বসে পড়ল। শোনো, বুড়ো, তোমার মুখটা থামাও নইলে লবণ মেশানো কফি জুটবে কপালে। ভুলে যেয়ো না কফি তৈরি করার অনুরোধ তুমিই করেছিলে।
টিম ম্যাসনের মত? সশব্দে হেসে উঠল সার্কেল-এফ মালিক। কিন্তু ছেলেটা তো মোটেও খারাপ নয়, অন্তত আমার দৃষ্টিতে। চাকুরিটাও ভাল। কেমন জবরদস্ত প্রভাব ওর সারা তল্লাটে! নিখাদ কৌতুক ফ্ল্যাগানের চোখে।
আমি ওকে পছন্দ করি না, ব্যস! অধৈর্য দেখাল মেয়েটাকে। ও আমাকে বিরক্ত করছিল, তাই কফির সাথে লবণ মিশিয়ে দিয়েছি। এতে অন্তত একটা লাভ হয়েছে, ও আর আমার ধারে-কাছে ঘেষছে না।
কৌতুক বোধ করল ব্রুকস। ডেপুটির সাথে তামাশা করার ভাল উপাদানই পেয়েছে মার্শাল জ্যাক হবস।
ওকেও লবণ মেশানো কফি দিলি নাকি?
বিমূঢ় দেখাল লরিয়াকে, খানিকটা ফ্যাকাসেও। না! নিচু স্বরে প্রতিবাদ করল।
ফ্ল্যাগানের হাসি থামছে না। তোকে ম্যাসনের মত বিরক্ত করলে?
ও আমাকে বিরক্ত করেনি, বরং আমরাই…
বুঝলে, স্যাম, উত্যু স্বরে মেয়েকে বাধা দিল ফ্ল্যাগান। আমার খুব ভাল লাগছে এ জন্যে যে শেষপর্যন্ত কোন পুরুষকে মনে ধরেছে ওর।
ব্রুকসের সাথে চোখাচোখি হলোলরিয়ার, সবুজ চোখে আহত দৃষ্টি। বাপের ওপর অভিমানহত মনে হচ্ছে ওকে। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বাপের দিকে তাকাল মেয়েটা, দৃষ্টি বদলে গিয়ে প্রচ্ছন্ন রাগ ফুটে উঠেছে। আমাকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্যে এখানে এসেছ, বাবা? তুমি চুপ না করলে আমি চলে যাব।
দুহাত তুলে হার মানল সে। দুঃখিত, ম্যাম। আমি ভাবলাম… তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না!
মেয়ের অগ্নিমূর্তি দেখে বাধ্য শিশুর মত মাথা কাত করল বাথান মালিক। কিন্তু মুখে চাপা হাসি লেগে থাকল। লরিয়া মগগুলো নিয়ে বেসিনের দিকে চলে যেতে মুখ টিপে হাসল। তুমি কিছু মনে করছ না তো, স্যাম? ব্রুকসের দিকে সরে এসে নিচু কণ্ঠে বলল: আমাদের বাপ-বেটিতে খুনসুটি লেগেই থাকে। আমি খুব উপভোগ করি। ওকে কত সহজে রাগানো যায় তা আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।
কিছু না বলে সিগারেট ধরাল ব্রুকস।
তোমার সামনে কঠিন সময়, স্থা। পারকার খুব নাছোড়বান্দা লোক। তুমিও কম যাও না দেখছি, মাটি কামড়ে পড়ে আছ। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে, বয়। ক্ষমতায় কুলালে সাহায্য করতাম। কিন্তু আসলে তেমন কিছু করার নেইও। সবাই যখন কাল রাহুর দটনা গুনবে, অবাক হয়ে যাবে। এতগুলো লোকের বিরুদ্ধে কি করে টিকে আছ এটা ওদের জন্যে গবেষণার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
টিম ম্যাসনের মত ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে, ভাবল ব্রুকস মার্শাল কেমন লোক?
জ্যাক হবস? খানিক ভোবে বলতে শুরু করল সার্কেল-এফ মালিক। একসময় ওকে দেখে অ্যাপের কথা মনে হত আমার-সাহসী, দুধর্ষ এবং বেপরোয়া। বাফেলো টাউনের শুরুতে খুনে-বদমাশে ভরে গিয়েছিল শহরটা, ফ্রেডারিক পারকার পরোক্ষভাবে মদদ দিত। যখন অতিষ্ঠ হতে বাকি, হঠাৎ হাজির হলো ও। বিশ্বাস করব কি, ওকে দেখে হাসি থামাতে কষ্ট হচ্ছিল আমাদের। মদে চুর হয়ে আছে, নোংরা কাপড় পরনে। ঘোড়া তো ছিলই না পিস্তল পর্যন্ত খুইয়েছে। এমন লোক যদি বলে দুই হাজার ডলার পেলে শহরটা সাফ করে দেবে তাহলে না হেসে উপায় আছে? পাত্তা দিলাম না আমরা। ও চলে গেল, লকহার্টের সেলুনে হুইস্কির বোতল নিয়ে বসল। রাতে ওর সাথে টক্কর বাধল টমাস হার্ডির। সে তখন শাসন করছিল শহরটা। দুজনে মিলে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিল সেলুনে। হার্ডিকে ধরে আচ্ছামত পেটাল ও, নিজেও অবশ্য কম খায়নি। পরদিন ওর কাছে গেলাম আমরা, দাবি বেড়ে গেল ওর। দুই হাজার ডলার, পিস্তল-রাইফেল আর একটা ঘোড়ায় রফা হলো। দশদিনের মধ্যে শহরটা খালি করে ফেলল হবস। এরপর থেকে বলতে গেলে বাফেলোতে বড় কোন ঝামেলা হয়নি, তা কেবল ওর কারণেই। যদিও মদ ওকে শেষ করে দিয়েছে। তবু, ভুলেও ওর সাথে লাগতে যেয়ো না। বয়স হলেও এখনও সমানে দুহাতে গুলি চালাতে পারে। মাতাল অবস্থায়ও ওর মাথাটা পরিষ্কার থাকে। ওকে সৎ হিসেবে জানি আমরা।
টিম ম্যাসন?
অপদার্থ একটা। শহরে রাজত্ব ওরই, দরকার না পড়লে হবস বেরোয় না কি-না।
দ্বিতীয় দফায় কফি পরিবেশন করল লরিয়া। এর আগে ছিলে কোথায়, স্যাম? কফিতে চুমুক দিয়ে হঠাৎ জানতে চাইল জেমস ফ্ল্যাগান।
আসলে নির্দিষ্ট কোথাও থাকিনি আমি। সারা বছর চলার মধ্যে কাটিয়ে দিতাম, ইচ্ছে হলে হয়তো থেমেছি কোথাও। হাঁপিয়ে উঠলে আবার পথচলা। ব্রুকস খেয়াল করল অসন্তুষ্ট দেখাচ্ছে সার্কেল-এফ মালিককে। ওর অতীত ঘটার ইচ্ছে তার পূরণ হয়নি।
এখানেও কি সেরকম থাকছ? লরিয়ার প্রশ্ন।
না। এখানে বসতি করতেই এসেছি। ছুটে ছুটে ক্লান্তি লাগছিল, বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতে চাই।
বলো কি! বয়েস কত হলো তোমার, স্যাম? সারা জীবনই তো সামনে পড়ে আছে!
সাত বছর বয়স থেকে আমি পথে পথে ঘুরছি, ফ্ল্যাগান। ঘুরতে খারাপ লাগে, কিন্তু অনেকেই পিস্তলের নলের আগায় পেতে চায় আমাকে। আর আমি তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কাজ হয় না, তাতে। একজোড়া পিস্তল এড়িয়ে গেলে পড়তে হয় আরেক জোড়ার সামনে। এই টানাপোড়ন আর চাই না। ভেবেছি এখানে যদ্দিন থাকব ওসবে আর ফিরে যাব না। সবকিছু পেছনে ফেলে শান্তিতে থাকতে চাই, কাউকে যেমন ঝামেলায় ফেলার ইচ্ছে নেই তেমনি চাই না কেউ অযথাই আমাকে ঝামেলায় ফেলুক।
একজন নিঃসঙ্গ যুবকের চিন্তা! কৌতুকপূর্ণ স্বরে মন্তব্য করল ফ্ল্যাগান, হাসছে। এ তল্লাটের মেয়েদের জন্যে সুখবর!
জেমস ফ্ল্যাগানের চরিত্রের থই পাচ্ছে না ব্রুকস। খুব দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করছে, কখনও খুব গম্ভীর, সিরিয়াস আবার কখনও বেখেয়ালী মনে হচ্ছে। আগাগোড়া আমুদে লোক, নিজের মেয়েকে অস্বস্তিতে ফেলেও আনন্দ পাচ্ছে। একটা ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিত ও-ফ্ল্যাগানরা ভাল মানুষ এবং ওর শত্রু হতে যাচ্ছে না।
তোমার ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকছে না, নিচু স্বরে বলল সার্কেল-এফ মালিক, গম্ভীর দেখাচ্ছে। আসলে তুমি কে? উঁহু, ব্রুকস কিছু বলতে যেতে হাত তুলে বাধা দিল। বুঝতে পারছি নিজের পরিচয় জানাতে তোমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। হয়তো দুদিনের মধ্যে তা জেনে ফেলবে জ্যাক হবস। আমার মাথা-ব্যথা কেবল এক জায়গায়-আইন তোমার পিছু নিচ্ছে না তো? কঠোর হয়ে এল তার কণ্ঠ। আমি চাই না কোন জোচ্চোর বা খুনে-বদমাশের সাথে আমার বন্ধুত্ব থাকুক। আর, তেমন কারও কাছে আমার মেয়ে আসুক তা-ও চাই না।
ক্ষীণ হাসল ব্রুকস। তুমি তো মানুষ চেনো, কি মনে হয় আমাকে?
টাফ একজন লোক। বাথান মালিক হিসেবে ঠিক মানায় না, একটু থামল ফ্লাগান, ভাবছে। না, ভুল বললাম। বাথানের কাজ যে কারও চেয়ে ভাল জানো, এটা তুমি প্রমাণ করেছ।…আসলে আমার মাথায় কেবল গতরাতের ঘটনাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ছয়জনের বিরুদ্ধে একা। আবার বোলো না যে এটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে। তো ব্যাপারটা কি দাড়াল? দুর্ধর্ষ একজন লোক লুকিয়ে আছে মরগান পিকসের উপত্যকায় যাকে খোচাতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পারকাররা।…নাহ, আমি বিভ্রান্ত। তবে এটা ঠিক, তোমার সাথে আমার শুভাকাঙ্ক্ষা থাকবে এবং খুশি হব যদি শেষপর্যন্ত টিকে থাকতে পারো। থেমে হাসল ফ্ল্যাগান, সিগার ধরাল।
তুমি খুব সিগার টানছ, বাবা! অভিযোগ করল লরিয়া।
চুপ করে থাক! মেয়েকে কপট হুমকি দিল ফ্ল্যাগান। বড়দের ব্যাপারে নাক গলাবি না। বেশি জ্বালালে এক থাবড়া মারব!
ছোঁ মেরে সিগার কেড়ে নিল লরিয়া, ওঅশ বেসিনে ছুঁড়ে ফেলল। বোকা বোকা দেখাচ্ছে সার্কেল-এফ মালিককে। তাকে মিষ্টি হাসি উপহার দিল মেয়েটা, অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ভুরু নাচাল। ব্রুকসের দিকে ফিরল এবার। নিশ্চিন্তে রোল করা সিগারেট ফুকছে ও, খানিক আগে ফ্ল্যাগানের বলা কথাগুলো সম্পর্কে ভাবছে। লরিয়ার সাথে দৃষ্টি এক হতে ঠোঁট থেকে সিগারেট নামাল, তারপর ছাইদানিতে গুঁজে রাখল। একজন ভদ্রমহিলা যখন চাচ্ছে না কেউ তার সামনে ধূমপান করুক তখন তাকে সম্মান দেখানো ছাড়া উপায় থাকে না। হালকা সুরে বলল ও।
সব ব্যাটাই দেখছি টিম ম্যাসন! ব্রুকসের প্রবোধে কাজ হলো না, গোমড়া মুখে কপট বিরক্তি প্রকাশ করল বাগান মালিক। আমার বাচ্চাটাকে খুশি করার তালে আছে কেবল!
হেসে তামাশায় যোগ দিল ব্রুকস।
বাবা, ওঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাছাড়া ওর নিশ্চই কাজ আছে।
ইশশ, গল্পটা তো ভালই জমেছিল! উঠে দাঁড়াল ফ্ল্যাগান, মাথায় হ্যাট চাপিয়ে দরজার দিকে এগোল। ধন্যবাদ, স্যাম। সময়টা দারুণ কাটল।…প্রয়োজন হলে সোজা পুবদিকে ঘোড়া ছোটাবে, আমার র্যাঞ্চের আগে থেমো না।
মৃদু হেসে পোর্চে বেরিয়ে এল ব্রুকস। বাপ-মেয়ে স্যাডলে চেপেছে।
বিশ্বাস করো, বাছা, তোমাকে আমার হিংসে হচ্ছে। দারুণ একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছ। যদি কখনও সিদ্ধান্ত নাও বেচবে, সবার আগে আমাকে জানিয়ো।
তোমার এই ইচ্ছেটা পূরণ হবে না। বিক্রি করে চলে যাওয়ার জন্যে কষ্টটুকু করিনি। তবে আমি মারা গেলে, লরিয়ার দিকে তাকাল ব্রুকস, সবুজ চোখে কৌতূহল। মনে মনে আনন্দ পেল এই ভেবে যে ইচ্ছে করলে মেয়েটিকে দারুণ বিস্মিত করে দিতে পারে। বলছিলাম আমার মৃত্যুর পর হয়তো একটা সুযোগ আসবে তোমার। পারকাররা সে-সুযোগ করে দেয়ার জন্যে তো মুখিয়েই আছে।
ব্যাপারটাকে অন্যভাবে নিল জেমস ফ্ল্যাগান-মালিকহীন একটা বসতি হিসেবে। সন্দেহ নেই আসল ঘটনা তাকেও বিস্মিত করবে। পুলক অনুভব করছে ব্রুকস, ওর জন্যে এ ধরনের অনুভূতি এই প্রথম। নিজের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি কাউকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে অন্য এক ধরনের আনন্দ আছে।
শহরে যাচ্ছে এমন কাউকে ট্রেইলে পেলে বলে দেব, লাশগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল ফ্লাগান। এতক্ষণে খবর পেয়ে না থাকলে চলে আসবে মার্শাল।
ধন্যবাদ, ফ্লাগান।
সাবধানে থেকো, বাছা, স্পার দাবাল সার্কেল-এফ মালিক। তার কণ্ঠের আন্তরিকতা ছুঁয়ে গেল ব্রুকসকে, তাকিয়ে থাকল ছোটখাট মানুষটার দিকে। নিঃস্বার্থভাবে কখনও ওর ভাল চায়নি কেউ, কেবল এমিলিও ছাড়া।
মি. ব্রুকস? লরিয়ার ডাকে চৈতন্য ফিরল ওর।
কোন ভাবে কি পারকারদের এড়ানো যায় না?
হয়তো, যদি আমি পালিয়ে যাই।
মাথা নাড়ল লরিয়া। তুমিও ওদের মত লোক ভাড়া করতে পারো।
ধারণাটা মন্দ নয়। কিন্তু আমার অপছন্দ, তাছাড়া সে-সময়ও নেই।
খুব ভয়ঙ্কর লোক তুমি, তাই না? তিরস্কার মেয়েটির কণ্ঠে। এতগুলো লোকের বিরুদ্ধে একা কদিন টিকবে? সাহস দেখানোর একটা সীমা আছে, প্রথমেই সেটা পেছনে ফেলে এসেছ তুমি। শুধু বুকভর্তি সাহস নিয়ে কেউ টিকতে পারে?
মাথা নাড়ল ব্রুকস। আরেকটা জিনিস আছে আমার। এখানে বসতি গড়ার স্বপ্ন।
ঠিক বুঝতে পারছি না তোমাকে, শ্রাগ করল লরিয়া। একবার তাকাল বাপের দিকে, ততক্ষণে বেশ দূরে চলে গেছে সে। তবে এটুকু বুঝতে পারছি পারকারদের মত তুমিও একরোখা আর অহঙ্কারী। এতকিছু ঘটতে দেখেও আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না যে সব ঘটছে সামান্য একটা কারণে, আর তিন বছর শান্তিতে কাটানো নিরীহ লোকটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। বাফেলোয় যাওয়ার পথে সেদিন বাড পারকারকে এড়িয়ে যেতে পারতে তুমি। তাহলে এত লোক মারা যেত না, এত রক্তও ঝরত না।
তাহলে লরিয়া ফ্ল্যাগানকে অপমানিত হতে হত।
ব্রুকসের চোখে দৃষ্টি রাখল লরিয়া। স্যামুয়েল ব্রুকস, তাতে তোমার কিছু আসত-যেত, এখন যে চড়া মাসুল দিতে হচ্ছে?
হয়তো, কিংবা না।…তোমার বাবা অপেক্ষা করছে, ম্যাম।
সার্কেল-এফের দরজা তোমার জন্যে খোলা থাকবে। তোমার সাহায্যে আসতে পারলে খুশি হব। আর…একদিন হয়তো আমার কোন প্রশ্নকেই এভাবে এড়িয়ে যাবে না তুমি। সখেদে বলল মেয়েটা, দৃষ্টিতে একরাশ অভিযোগ ছুঁড়ে দিয়ে লাগাম ঢিলে করতে এগোল ঘোড়াটা, কয়েক গজ এগিয়ে ছুটতে শুরু করল।
ঘোড়াটা দৃষ্টির আড়াল হওয়া পর্যন্ত লরিয়ার অভিমানমাখা মুখ আর দৃষ্টি ভেসে থাকল ব্রুকসের চোখে। চাপা জেদ প্রকাশ পাচ্ছিল মেয়েটির চাহনিতে। চেষ্টা করেও তা ভুলতে পারছে না ব্রুকস।
কেবিনে ফিরল ও, নিজের ওপর বিরক্ত। অযথা অনেক সময় নষ্ট হলো। অলস দৃষ্টিতে তাকাল কামরার চারদিকে, কেবিনটার মায়া ত্যাগ করতে হচ্ছে। বার-পি ক্রুরা একবার চেষ্টা করেছিল, আবারও করবে। সারাক্ষণ এখানে থাকা সম্ভব নয়, আবার থাকাও বিপজ্জনক হবে। জিনিসপত্র যে কটা সম্ভব সরিয়ে ফেলতে হবে। চুলোয় স্টু চাপিয়ে কাজে নেমে পড়ল ও। দুপুর পর্যন্ত টানা কাজ করল, উপত্যকার গোপন একটা জায়গায় সরিয়ে ফেলল কেবিনের বেশিরভাগ জিনিসপত্র।
লাঞ্চ সেরে কফির মগ হাতে নিয়ে বসেছে এসময়ে নিজের জমির সীমানায় দেখতে পেল দুজনকে। একজন ঘোড়ায় চেপেছে, অন্যজন একটা ওয়াগন চালিয়ে নিয়ে আসছে। সূর্যের আলো পড়তে ঘোড়সওয়ারের বুকে ঝিলিক দিয়ে উঠল কিছু একটা। ব্রুকস ধারণা করল লোকটা জ্যাক হবস, আর অন্যজন বোধহয় আন্ডারটেকার। ডেপুটি এত মোটাসোটা নয়।
চেয়ার ছেড়ে কেতলিতে পানি চড়াল ও। ঘড়ঘড় শব্দে ওয়াগনটা যখন বাইরে এসে পৌঁছাল, বেরিয়ে এল। সবে স্যাডল ছেড়ে গায়ের ধুলো ঝাড়ছে মার্শাল, বিরক্ত দেখাচ্ছে।
একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না দেখছি! চারপাশে চোখ বুলিয়ে ঝোপের পাশে স্থির হলো মার্শালের দৃষ্টি। স্থূলদেহ টেনে নিয়ে এগোল সেদিকে। তুমি লোকটা মোটেও সুবিধের নও, স্যাম। ঝামেলা ছাড়া চলতেই পারো না। পা দিয়ে ঠেলে লাশগুলো উল্টে দেখল। লেসলি উলফ আছে দেখছি, শয়তানটা মরে গিয়ে ভালই হয়েছে। অ্যারিলিনের চৌহদ্দিতে রাসলিংটা বন্ধ হকে এবার। অন্য দুটোই বা কম কিসের! রাস্টি স্টুয়ার্ট আর বিল লয়ারী। নাহ্, মানতেই হবে তোমার ভাগ্যটা সত্যি ভাল। তিনজনের রিওয়ার্ডের টাকা, সব মিলিয়ে সাতশো। টাকা আসতে সময় লাগবে এবং তদ্দিন পর্যন্ত যদি টিকে থাকতে পারো, নইলে তোমার উত্তরাধিকারীকে পৌঁছে দিতে হবে। তাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেটাও ঝামেলার কাজ। দেখলে, স্যাম, ঝামেলার সাথে তোমার কেমন সখ্যতা?
বিল কারভারের কাছে চলে যেয়ো, ও জানে টাকাটা দিয়ে কি করতে হবে।
সব দেখছি আগে থেকে ভেবে রেখেছ!
বাজে লোক আমার সম্পত্তি ভোগ করবে কেন?
ঘুরে দাঁড়াল জ্যাক হবস, মোটাসোটা সঙ্গীর দিকে তাকাল। ও টোলবি, আন্ডারটেকার।
মাঝবয়সী লোকটির দিকে ফিরে নড় করল ব্রুকস, কফির আমন্ত্রণ জানাল। মাথা কঁকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে, একাই লাশগুলো ওয়াগনে তুলতে লাগল। বয়স হলেও একটা লাশ বইবার মত শারীরিক সামর্থ্য তার যথেষ্টই আছে। কফির ব্যাপারে টোলবির চেয়ে মার্শালকেই বেশি উৎসাহী মনে হলো, ভেতরে এসে আয়েশ করে বসল।
পুরো ব্যাপারটা ঘোলাটে লাগছে, স্যাম, আলাপী সুরে শুরু করল জ্যাক হবস, কিন্তু গুরুত্বটা চাপা থাকল না। চারপাশে কিছু খোজ-খবর করতে গিয়ে ভয় ধরে গেছে আমার! অ্যারিজোনার তাবৎ বন্দুকবাজ এখন বাফেলো টাউনের পথে। তুমি বোধহয় এর কিছুটা ব্যাখ্যা দিতে পারবে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে মার্শাল।
কফি পরিবেশন করে চেয়ার টেনে বসল ব্রুকস, ক্ষীণ হাসল। দুঃখিত, জ্যাক, সাহায্য করতে পারছি না। ওদের কাউকেই আমি ডেকে পাঠাইনি।
অনেকক্ষণ ধরে ওকে দেখল হবস, কি যেন বোঝার চেষ্টা করছে। তারপর শ্রাগ করে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিল। আমি কিন্তু বলিনি যে তুমিই ভাড়া করেছ বা ডেকে পাঠিয়েছ ওদের। হতে পারে এরা কেউ তোমার বন্ধু, কেউ বা শত্রু। এসব লোক শেষপর্যন্ত জাঁকিয়ে বসবে এখানে। শহরটাকে নরক বানিয়ে ছাড়বে, আমার দুশ্চিন্তার কারণ এটাই। নিরীহ লোকজনও যে মরবে না তার নিশ্চয়তা কি? কফির মগ টেনে নিয়ে চুমুক দিল সে, খেই ধরল এরপর। তালিকাটা বেশ লম্বা। ইয়েলোস্টোনের খনিতে কাজ করছিল বিল লসন, পাঁচ দিন আগে রওনা দিয়েছে সে। সাথে ওর স্যাঙাৎ স্টিভ কোলম্যান। কার্লি ব্রসন যাত্রা করেছে। ফ্রগস রীভার সিটি থেকে। কয়েক মাস লাপাত্তা থাকার পর হঠাৎ করে টাকসনে দেখা গেছে টম স্টিরাপকে, সেখানে এক রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে বাফেলোর পথ ধরেছে ও। মন্টানা কিড, লিয়ন সিটির মার্শালকে খুন করার পর এদিকেই ঘোড়া ছুটিয়েছে। আরও কতজন যে হবে তা কে জানে! ভয়ঙ্কর ব্যাপার, গ্যারেটরা দুই ভাই নাকি কলোরাডে ক্যানিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। সারা বছর ওখানেই কাটায় ওরা। যখন বেরিয়ে আসে নির্ঘাত কারও কপালে খারাবি থাকে।
লোকগুলোকে ঠিকমত দেখোনি তুমি, মৃদু স্বরে অনুযোগ করল ব্রুকস।
এই জীবনে কম দেখিনি, প্রসঙ্গ বদলে যাওয়ায় বিরক্ত দেখাল মার্শালকে। ওরা এখানে মরতে এসেছে!
কেউ পেছন থেকে গুলি করেনি এবং দুএকটা গুলি করার সুযোগ ওদেরও হয়েছে, এটা যদি তোমার মুখ থেকে বেরোয় তো আমার আর ঝামেলা থাকে না। কেউ বলতে পারবে না আমি ওদের অ্যাম্বুশ করেছি।
কেন তোমার পক্ষে বলব? অধৈর্য দেখাচ্ছে হবসকে। আমি কারও পক্ষে নই। যা দেখেছি বুঝেছি, তা-ই আমার কাছে চূড়ান্ত। সিদ্ধান্তটা কারও বিরুদ্ধে গেলে আমার কিছু যায়-আসে না।
পারকার হয়তো বলবে ওদের অ্যাম্বুশ করা হয়েছে।
সেটা যে ধোপে টিকবে না এটুকু বোঝে ও, টেবিলে চাপড় মারল মার্শাল, পুরানো প্রসঙ্গে ফিরে গেল। দুজনের খবর পাইনি আমি। ইয়েট অ্যাৰ্প আর হারডিনের। অ্যাৰ্প অনেকদিন থেকে নিখোঁজ, আমার ধারণা অ্যাবিলিনে সত্যিই মারা গেছে ও। ওর গল্পগুলোর মত এটাও অবশ্য গুজব। আর হারডিন তো ছায়ার মত ঘুরে বেড়ায় সারা পশ্চিমে। কেউ ওকে চেনে না।…তোমার বয়স কত, স্যাম?
উনত্রিশ। হারডিনের সাথে ঠিক মেলে না। ওর সম্পর্কে যেসব গল্প চালু আছে তাতে ওকে আরও বয়স্ক মনে হয়। তাতে অবশ্য কিছুই প্রমাণিত হয় না। করবেটকে আগে থেকে চিনতে নাকি?
না।
ওর ওপর যেভাবে চোটপাট দেখালে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে আমার। বসে বসে মার খেল, টু শব্দ করেনি, অথচ তোমার চেয়ে দেড়গুণ চওড়া সে। আতঙ্কে সিটিয়ে ছিল, ভয় পেয়েছিল তোমাকে, কেন? মামুলি একজন স্যামুয়েল ব্রুকসকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
মার্শালকে দেখছে ব্রুকস। ফ্লাগান ঠিকই বলেছে, লোকটার মাথা পরিষ্কার। আসল ঘটনা ঠিক আঁচ করে নিয়েছে। সেটা করবেট ভাল বলতে পারবে, প্রত্যুত্তরে বলল ও। আমি ওদের বলেছিলাম টেবিল থেকে হাত সরালেই মনে করব ড্র করতে যাচ্ছে। প্রথমে না হলেও শেষে সাহস দেখিয়েছে লোগান আর ওর বন্ধু।
এবং মরেছে, সিগার ধরিয়ে টান দিল হবস। ধোঁয়ার পেছন থেকে ভেসে এল পরের কথাগুলো। তিনজন লোক যাদের একজন ম্যাট লোগান, তুমি জানতে ড্র করবে ওরা। কিংবা কালকের কথাই ধরো, ছয়জনের বিরুদ্ধে লড়তে হবে জেনেও তোমার বুক এতটুকু কাপল না। স্যামুয়েল ব্রুকসের জন্যে ঘটনাগুলো একটু অস্বাভাবিক নয় কি?
ভয় পাইনি তা কি বলেছি? তাছাড়া পরিস্থিতি আমার অনুকূল ছিল।
আর হাসিয়ো না, স্যাম। দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি, ওরা কোন পাত্তাই পায়নি। এত সাহস বুকে নিয়ে চলে এরকম মানুষ এদেশে কমই আছে।
তুমি দেখছি আমাকে নায়ক বানিয়ে ছাড়বে, হালকা সুরে বলল ব্রুকস। শুনতে অবশ্য মন্দ লাগছে না। কিন্তু আসল ব্যাপার অন্যরকম, এটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে এবং ভাগ্য ও পরিবেশের সহায়তা পেয়েছি আমি। কোণঠাসা হয়ে গেলে এমন হতেই পারে।
বিরক্ত মনে হলো মার্শালকে। কিছু একটা বলতে চেয়েছিল, টোলবি প্রবেশ করায় নিরস্ত হলো। নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকাল কফির দিকে, এক চুমুকে শেষ করে ফেলল। আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল, এরপর, দৃষ্টি সিলিংয়ের দিকে। বুঝলে বাছা, হারডিন ব্যাটাকে আমি ঠিক ধরে ফেলেছি। একমত না হয়ে তুমি আমার আনন্দটুকু মাটি করে দিচ্ছ।
টোলবিকে কফি পরিবেশন করতে মিনমিন করে ধন্যবাদ জানাল সে।
তোমার কাজ আরও বাড়বে, টোলবি। কাকে যে কখন বুটহিলে জায়গা নিতে হয় তার ঠিক নেই।
সায় জানানোর মত একটা ভঙ্গি করল আন্ডারটেকার, কথা বলার চেয়ে কফিতে আগ্রহ বেশি।
অনেকদিন থেকে শুনে আসছিলাম গ্যারেটরা খুঁজে বেড়াচ্ছে হারডিনকে, আগের প্রসঙ্গে ফিরে গেল হবস। এখন দেখছি সেটাই ঠিক। পারকারদের টাকা বোধহয় বিফলে যাবে না এবার।
বাজে বকছ, জ্যাক। একজন মার্শাল ফ্যান্টাসি নিয়ে কাজ করে না।
নাম ভাড়িয়ে আশা করছ তোমাকে চিনতে পারবে না কেউ, এটাই তো সবচেয়ে বড় ফ্যান্টাসি! মৃদু হাসল জ্যাক হবস, পকেট থেকে ছোট্ট একটা হুইস্কির বোতল বের করে অফার করল ওকে, ব্রুকস প্রত্যাখ্যান করায় খুশি মনে গলায় ঢালল তরল পানীয়। শেষপর্যন্ত নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না, স্যাম, ঠোঁট চাটল মার্শাল। পকেটে বোতল ঢোকানোর সময় খেয়াল করল বেরিয়ে যাচ্ছে টোলবি। সামনে কঠিন সময়, বাছা। ইচ্ছে থাকলেও তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। মনে হচ্ছে ঝামেলা আমাকেও পোহাতে হবে, গ্যারেটরা শহরে এসে যদি বেতাল কিছু করে তবে কপালে খারাবি আছে আমার। ওদের দিকে পিস্তল তাক করতে আমার বুক কাঁপবে।
তোমার আশঙ্কা ঠিক না-ও হতে পারে।
আমি ভাল করেই জানি ওরা কেন, কোথায় আসছে। যেখানেই যায় হারডিনের খোজ করে গ্যারেটরা। ওদের দুর্ভাগ্য দেশটা অনেক বড় বলে এতদিন হদিস পায়নি। এবার নিশ্চিত হয়ে ক্যানিয়ন থেকে বেরিয়ে এসেছে। আচ্ছা, ওদের ছোট ভাইটাকে খুন করলে কেন?
চুপ করে থাকল ব্রুকস।
দেখো বাছা, রাখ-ঢাক করে লাভ হবে না। পারকার ভাল করেই জানে তুমি কে, নয়তো এত নামী-দামী গানম্যানরা বাফেলো টাউনে আসত না। তোমার আচরণও বলে দেয় তুমি সাধারণ কেউ নও। পারকারের ক্রুরা ছাড়া আর কেবল আমিই জানি তোমার পরিচয়। জেমস ফ্ল্যাগান বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে, তবে ও ভাবছে তুমি হয়তো বড়সড় কোন বন্দুকবাজ। শেষপর্যন্ত সবাই জানবে। তো লুকিয়ে রেখে লাভ কি?
আমার পরিচয় নিয়ে এত মাথা-ব্যথা হওয়া উচিত নয় তোমার। বাফেলোতে আরও অনেক কিছু ঘটছে।
তুমি একজন ভয়ঙ্কর লোক। মার্শাল হিসেবে বিপজ্জনক লোকের ওপর আমাকে নজর রাখতে হয়, পরিচয় জানা থাকলে সেটা সহজ হয়ে যায়। আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে মার্শাল, দুহাতে টেবিলে ভর দিয়ে ঝুঁকে এসেছে। তাছাড়া এবার পারকারকে চেপে ধরার চিন্তা করছে শহরের লোকজন। বাথান মালিকেরাও রাজি হবে। যার যার অবস্থান থেকে বার-পির বিরুদ্ধে একজোট হতে পারি আমরা। তুমি একা, সাহায্য ছাড়া বেশিদিন টিকতে পারবে না। আমরা তোমাকে সাহায্য করব যদি নিশ্চিত হতে পারি যে একজন সৎ লোককে সাহায্য করছি।
এমন কিছু আমি করিনি যাতে সন্দেহ করতে পারে কেউ, আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ করতে পারবে না।
সায় জানাল জ্যাক হবস। কিন্তু অবস্থাটা এমন, তোমাকে নিজেদের একজন বলে ভাবতে পারছে না এখানকার কেউ। এ জন্যে যে তুমি কারও সাথে মিশতে চাওনি। তোমার আর পারকারদের মধ্যে ওরা পার্থক্য দেখে কমই।
ফ্ল্যাগানদের সাথে আমার পরিচয় আছে।
সেটা মাত্র কিছুদিন হলো। আর ঠিক এ জন্যেই তোমার প্রতি কিছুটা সহানুভূতি আছে ওদের। বেসিনে ফ্ল্যাগানদের পরিচিতি সবচেয়ে ভালমানুষ হিসেবে। লরিয়াকে সাহায্য করে ওদের অনেকটা কাছে চলে এসেছ তুমি। এখন দরকার সবার আস্থা অর্জন করা। সবাই মিলে পারকারকে ঠেকাতে পারলে তোমাকে নিজেদের একজন বলে ভাববে ওরা।
দেখো, জ্যাক, সময় নিয়ে সিগারেট রোল করল ব্রুকস, ভাবছে অযথা কেন ওকে খোচাচ্ছে মার্শাল। তোমার খেলাটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। আমাকে হারডিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোমার কি লাভ সেটাই মাথায় ঢুকছে না। শান্তি তে থাকতে এখানে এসেছি আমি, কেউ তাতে বাগড়া দিলে তাকে মাসুল দিতে হবে। আর…কারও সাহায্য আমার লাগবে না। নিজের ঝামেলা নিজেই মিটিয়ে নিতে পারব। কারও খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ইচ্ছেও আমার নেই।
বিমূঢ় দেখাল মার্শালকে। দুহাতের আঙুলগুলো টেবিলে তাল ঠুকছিল, থেমে গেছে। চওড়া কাধ উচিয়ে অসহায় একটা ভঙ্গি করল। দারুণ একরোখা লোক তুমি, স্যাম। সবকিছু জেনেও কি করে অস্বীকার করছ মাথায় ঢুকছে না আমার।
তুমি যেমন অযথাই খোচাচ্ছ আমাকে। আচ্ছা, আমার চেহারার কোন পোস্টার খুঁজে পেলে নাকি?
ওই কাজটা করছে টিম ম্যাসন। ওর ধারণা তুমি লুকিয়ে থাকা দাগী কোন আসামী। দিনকে দিন ওর বিশ্বাস আরও দৃঢ় হচ্ছে এবং তা প্রমাণ করার জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছে। তবে ভুল পথে এগোচ্ছে ও। আমার স্থির বিশ্বাস তোমাকে অভিযুক্ত করা যায় এমন কিছু খুঁজে পাবে না।
আর তুমি?
সে-চেষ্টা আমি করছি না। কাঁচা কোন কাজ ওয়েসলি হারডিন করে না। ওর কাজে কোন খুঁত থাকে না। +
হারডিন সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ মনে হচ্ছে তোমাকে?, বরং আগ্রহী বলতে পারো, ব্রুকসের মুখে আটকে থাকল মার্শালের দৃষ্টি। পরিচিত হয়ে অবশ্য মন্দ লাগেনি। তবে আফসোেস একটাই, নিজের চোখে একবার ড্র করতে দেখলাম না! উঠে দাঁড়ানোর সময় অর্থপূর্ণ চাহনি হানল হবস, অলস ভঙ্গিতে মাথায় হ্যাট চাপাল। কফির জন্যে ধন্যবাদ, বাছা।
একই জায়গায় বসে থাকল স্যামুয়েল ব্রুকস। খুরের শব্দ মিলিয়ে গেল একসময়। উঠে বেসিনের কাছে গিয়ে মগগুলো ধুয়ে নিল, মুছে তাকের ওপর রাখল। শুকনো জার্কি, সিদ্ধ সীম আর বেশ কিছু রুটি ভরল একটা প্যাকেটে। বেরিয়ে এসে দরজা আটকে দিল। আজকের পর আর কেবিনে থাকা সম্ভব কি-না জানে না কিন্তু যে কোন অবস্থার জন্যে তৈরি থাকতে চায় ব্রুকস। ওকে কোণঠাসা অবস্থায় পেয়ে যাক বার-পি ক্রুরা, সেরকম ইচ্ছে ওর মোটেও নেই।
পরের আক্রমণটা এল ভোরবেলা।
<