সেদিনের দৈনিকে বড়বড় অক্ষরে প্রকাশিত হলো সংবাদটা
জেরেমি টাউন থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলারের সোনার চালান মাহে মন্টানায়। আগামীকাল রেডরকের উদেশে যাত্রা করবে এই শহরের প্রথম চালান। শটগান হাতে পাহারায় থাকবে ড্যানি সেন।
অপরিচিত এক ড্রিফটার খবরটা দেখেই চেঁচিয়ে উঠল: দেখেছ, বোকার হদ্দ আর কাকে বলে! এসব খবর এভাবে প্রচার করে কেউ? এরা দেখছি নিজেরাই লুঠপাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে!–পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল বয়স্ক এক লোক, মৃদু রহস্যময় হাসি দেখা গেল তার ঠোঁটে। ঠিকই করেছে ওরা। ড্যানি লসনের নাম প্রচার করে আসলে সতর্ক করে দিচ্ছে সবাইকে। কারও সোনা লুঠ করার ইচ্ছে থাকলে ওই নামটা দেখে সাহস করবে না আর।
পরদিন ভোরে জেরেমি টাউন ছাড়ল সোনাভরা স্টেজ। পত্রিকায় পঞ্চাশ হাজার লেখা হলেও আসলে সোনার পরিমাণ আরও বেশি, সঠিক হিসেবে দুই লক্ষ সাত হাজার ডলার হবে সব সোনার মূল্য। ইচ্ছে করেই, সত্য চেপে গেছে হ্যান্স কোবার্ন, সোনা ব্যবসায়ীর ধারণা সঠিক তথ্য জানতে পারলে অতিমাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠবে দুর্বৃত্তরা। প্রাপ্তির তুলনায় ঝুঁকির পরিমাণ বেশি হলে কেউ কেউ হয়তো নিরস্তও হতে পারে।
ক্লান্তিকর যাত্রা। কোন যাত্রী নেই, যদি না হ্যান্স কোবার্নকে যাত্রী ধরা হয়। বেশিরভাগ সময় দুই ক্রুর সঙ্গে কোচের ভেতরে থাকছে সে। টিম কার্টিস আর রবার্ট অ্যালেন পালা করে চালাচ্ছে স্টেজ। পাশেই বসে আছে ড্যানি লসন, সামনের পথ বা আশপাশে চোখ রাখতে সুবিধে বলে সারাক্ষণ ওখানেই থাকছে। কোলে একটা উইনচেস্টার ওর, পায়ের কাছে পড়ে আছে ডাবল-ব্যারেল শটগান। কার্টিসের কোলে আরেকটা শটগান আছে। লোকটির সাথে এটা-সেটা নিয়ে গল্প করলেও সারাক্ষণ চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে লসন।
সন্ধে পর্যন্ত মাইল বিশের মত এগোল ওরা। একটা উপত্যকায় ক্যাম্প করার পর রান্না করতে বসল কাটিস। ক্লান্ত শরীরে ঘাসের ওপর বসে পড়ল অন্যরা। গরম কফি খানিকটা হলেওঁ চাঙা করে তুলল ওদের। একটা সিগারেট ধরিয়ে কিছু দূরে সরে এল লসন, ক্যাম্পের পেছনে পাহাড়ে উঠে এল। ফিল্ড গ্লাস বের করে জরিপ করল সামনের ট্রেইল। পুরো এক ঘণ্টা চোখ রেখেও কোন আগুন বা ক্যাম্পের চিহ্ন চোখে পড়ল না। কিন্তু তাতে নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই, লসন জানে স্টেজ লুঠ হওয়ার সম্ভাবনা ষােলো আনা। মন্টানা পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রার যে কোন জায়গায় আক্রান্ত হতে পারে ওরা। তবে ওর চিন্তা আপাতত বিগ বে পর্যন্ত, ওখানে পৌঁছতে পারলে বাকি পথ নিয়ে ভাববে। বিগ বে-র ট্রেইল স্মরণ করার চেষ্টা করল, আচমকা আক্রমণ করা যায় সম্ভাব্য এমন তিনটে জায়গা শনাক্ত করল মনে মনে। ঠিক মাইল দুই পরেই একটা। দুপুরের দিকে প্রথম জায়গাটা পেরিয়ে এসেছে ওরা।
উটকো ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই ক্রু। ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, কারণ শেষপর্যন্ত বেঈমানি করবে ওরা, নিশ্চিত জানে লসন। দুজনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে ও, কোবার্নকেও লেগে থাকার পরামর্শ দিয়েছে, আলাদা হতে দিচ্ছে না কাউকে। নিজের দায়িত্ব ভাল ভাবেই পালন করছে সোনা ব্যবসায়ী।
টেড স্পিড আর বব অ্যালেনকে পাহারার দায়িত্ব দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল লসন। মাঝরাত পর্যন্ত ওদের পালা, তারপর কার্টিস আর টমের। শেষ রাতে হ্যান্স আর ওর।
ভোরে ফের পাহাড়ে উঠে এল ও। অনেকক্ষণ ধরে চোখ রাখল ট্রেইলের ওপর। নিভু নিভু একটা আগুনের কুণ্ড দেখে খুশি হলো এবার। আন্দাজ করল মাইল দুই দূরে আছে ক্যাম্পটা।
নাস্তা শেষে নিজের ঘোড়ায় স্যাডল চাপাল লসন।
কি ব্যাপার, ড্যান, কোথাও যাচ্ছ নাকি? জানতে চাইল কোবার্ন।
আশপাশেই থাকব। স্টেজের ভেতরে ঢুকে অ্যামুনিশন বক্স থেকে বাড়তি কার্তুজ তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল ও, ঘাড় ফিরিয়ে মেঝেয় পড়ে থাকা স্ট্রংবক্সটা দেখল, যথেষ্ট মজবুত জিনিসটা। আঙটায় বড়সড় দুটো তালা ঝুলছে। ওগুলো অবশ্য কোন ব্যাপারই নয়, যে কেউ ভেঙে ফেলতে পারবে।
সূর্য যখন পুব আকাশে আড়মোড়া ভাঙছে ঠিক এসময়ে রওনা দিল দলটা।
বব?
স্টেজে উঠতে যাচ্ছিল তরুণ, লসনের ডাকে ফিরে তাকাল।
কাটিসের পাশে গিয়ে বোসো, গল্প না করে খেয়াল রেখো চারপাশে। শিগগিরই আক্রান্ত হতে পারি আমরা।
তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমার কথা ভাবতে হবে না, যা বলেছি ঠিকমত কোরো।
ঠিক আছে, ড্যান, মাথা কঁকিয়ে উত্তর দিল সে।
আড়চোখে বিল নিকোল আর টেড স্পিডের দিকে তাকাল লসন। ভাবলেশহীন থাকার চেষ্টা করছে ওরা, কিন্তু আড়ষ্ট মুখ দেখে বোঝা গেল লসনের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছে। তোমরা দুজন, তাদেরকে বলল ও। বসে বসে না ঝিমিয়ে চোখ-কান খোলা রাখো, মাইল দুইয়ের মধ্যে আছে ওরা। যে কোন সময়ে আক্রমণ করতে পারে।
নিস্পৃহ ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল টেড, উত্তেজনা বা উদ্বেগের নমুনাও নেই তার মধ্যে।
লসন নিঃসন্দেহ হয়ে গেল সামনের দলটার সঙ্গে জেসি ওয়েনের সম্পর্ক নেই, তেমন হলে এতক্ষণে উত্তেজনায় টগবগ করে ফোটার কথা দুজনের। এরা সঙ্গে থাকায় অন্তত একটা লাভ হয়েছে, ভাবল ও, রক্স বা ডেভিসের দল স্টেজ আক্রমণ করলে সাহায্য করতে পারবে।
শুরুতে স্টেজের পেছনে থাকল লসন, কিন্তু একটু পর পেছনে ফেলে এল লক্করঝক্কর মার্কা কনকর্ড কোচকে। মাইল খানেক এগিয়ে আচমকা ট্রেইল থেকে সরে এল। বিপজ্জনক জায়গাটার কথা মনে করার চেষ্টা করল-ক্লিফের পাশ দিয়ে এগিয়েছে ট্রেইল, খানা-খন্দে ভরা উপত্যকার পাশেই পঞ্চাশ ফুট নিচে খাদের তলায় গিয়ে মিশেছে খাড়া ঢাল। এরকম একটা জায়গা স্টেজের জন্যে সত্যিই বিপজ্জনক, এবং হামলা করার জন্যে যুৎসই; কারণ স্টেজ সামলাতে ব্যস্ত থাকবে ড্রাইভার। ক্লিফের দেয়ালে আড়াল নেওয়ার মত প্রচুর জায়গা রয়েছে।
মনে মনে একটা পরিকল্পনা দাঁড় করাল লসন, তারপর জোর কদমে ঘোড়া ছোটাল। ঢালের আড়াল ধরে এগোচ্ছে, তাছাড়া মূল ট্রেইল এড়িয়ে যাচ্ছে বলে কারও চোখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। মিনিট ত্রিশ পর ক্লিফটা দেখতে পেল। ঘোড়ার গতি কমিয়ে প্রায় হাঁটার পর্যায়ে নিয়ে এল ও, চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে।
ক্লিফের কাছাকাছি এসে স্যাডল ছাড়ল ও। জুনিপার ঝোপের আড়ালে ঘোড়া রেখে পায়ে হেঁটে এগোল। নিঃশব্দে উঠে এল পাহাড়ের চূড়ায়। সামনে আরও কয়েকটা পাহাড়, কোনটাই ষাট-সত্তর গজের বেশি উঁচু হবে না। ক্লিফের লাগোয়া পাহাড়ে চলে এল একসময়, সামনের খোলা জায়গায় সতর্ক দৃষ্টি চালাল। ক্লিফের সারি, নিচে রুক্ষ ট্রেইল আর পাহাড়ী খাদ স্পষ্ট চোখে পড়ছে। উল্টোদিকের পাহাড়ে বা আড়াল নেওয়ার মত যে কোন জায়গায় অনায়াসে নজর রাখতে পারবে।
ঢাল বেয়ে চূড়ায় উঠে এল ও, কিনারায় এসে শ্রান্ত শরীর গ্যানিটের ওপর বিছিয়ে দিল, পাশে রাখল রাইফেল। ক্যান্টিন থেকে এক ঢোক পানি গলায় ঢেলে ফিল্ড গ্লাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল এবার, সূর্যকিরণ সম্পর্কে পুরোমাত্রায় সচেতন, জানে ফিল্ড গ্লাসে প্রতিফলিত আলো মুহূর্তে ওর অবস্থান প্রকাশ করে দিতে পারে।
মিনিট বিশ লাগল লোকগুলোকে খুঁজে বের করতে। লোক তিনজন, কিন্তু সাতটা ঘোড়া দেখতে পেয়েছে। তারমানে অন্তত আরও চারজন আছে। খুঁজতে শুরু করল ও, মিনিট দশ পর দুজনের অবস্থান জেনে গেল। বাকিরা ওর অজ্ঞাতে রয়ে গেছে।
ধূমপানের ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখল লসন। পকেট থেকে এক মুঠি বুলেট বের করে পাশে মাটির ওপর রাখল। রাইফেল টেনে নেওয়ার সময় মনে মনে হিসাব কষল, বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে স্টেজ। ঢাল বেয়ে ওঠার সময় আক্রমণ করবে ওরা। ঢালের নিচে, চল্লিশ গজ দূরে স্টেজটাকে প্রথম দেখার পর তৈরি হয়ে যাবে প্রতিপক্ষ; এই ফাঁকে, মিনিট খানেকের মধ্যে ক্লিফের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যাবে কোচ।
সাকল্যে এই এক মিনিটই পাবে লসন, এরই মধ্যে কাজ সারতে হবে। লুকিয়ে থাকা লোকগুলোর অবস্থানের ওপর শেষবারের মত নজর বুলাল ও-চাতালের ওপর দুজন, কিছুটা ডানে বোল্ডারের আড়ালে তিনজন। অন্য দুজনকে খুঁজে পায়নি। তবে নিশ্চিত জানে আশপাশেই আছে।
চাতালের লোকগুলোকে আগে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিল লসন, লাগাতে সুবিধা হবে। তাছাড়া অরক্ষিত আছে ওরা, মুহূর্তের ব্যবধানে দুজনকেই নিকেশ করতে পারবে। বোল্ডারের কারণে কিছুটা হলেও আড়াল পেয়েছে অন্য তিনজন, সহজে ধরাশায়ী করা যাবে না ওদের। উল্টোটাও সত্যি, পাল্টা আক্রমণ করে সুবিধা করতে পারবে না ওর সঙ্গে। কিন্তু লসন ক্রমাগত গুলি করতে থাকলে আড়াল নিতে বাধ্য হবে ওরা, স্টেজের ওপর থেকে মনোযোগ সরে যাবে। কিন্তু অন্য দুজন? হয়তো এরাই আসল কাজ সেরে ফেলবে।
ধীরে ধীরে সময় কাটছে। তন্নতন্ন করে ক্লিফ আর পাহাড়ের সারির আনাচেকানাচে নজর বুলাল লসন। একবার মনে হলো চাতালের ওপাশে যে গুটিকয়েক গুল্ম জাতীয় গাছ জন্মেছে তার পেছনে বাদামী কিছু একটা চোখে পড়েছে, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারল না। অনেকক্ষণ চোখ রেখেও কিছু দেখতে পেল না। ধুমসে হুইস্কি গিলছে চাতালের লোক দুটো, মাঝে মধ্যেই হাত বদল হচ্ছে বোতলটা। দূরে স্টেজের হালকা শব্দ শোনা যেতে সতর্ক হয়ে গেল লোকগুলো, স্থির পড়ে আছে এখন। রাইফেল বাগিয়ে ধরেছে।
নিচ্ছিদ্র একটা ফাঁদ পেতেছে ওরা। কিন্তু লসনের অবস্থান এবং সময়োচিত তৎপরতার কারণে ছকটা পাল্টে যেতে পারে। সবকিছু নির্ভর করবে ওর দক্ষতার ওপর। মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় পাবে, এরই মধ্যে ছোট করে দিতে হবে দলটাকে; শুধু তাহলেই স্টেজটা নির্বিঘ্নে ফাঁদ পেরিয়ে যেতে পারবে।
ডানদিকের লোকটার কপালে নিশানা করল লসন।
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে হলো না, লোকগুলোর নড়াচড়ায় স্পষ্ট বোঝা গেল কাছে চলে এসেছে স্টেজ। চাকার ঘড়ঘড় আওয়াজ তো শুনতে পাচ্ছেই। মুখটা বিস্বাদ লাগছে ওর, জানে জুয়া খেলতে যাচ্ছে এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। টিম কাটিস আর বব অ্যালেনের ওপর কিছুটা হলেও নির্ভর করছে ওর সাফল্য, কার্টিসকে দক্ষ হাতে ঘোড়াগুলো সামাল দিতে হবে, আর অন্তত দুএকজনকে নিকেশ করতে হবে অ্যালেনের, নইলে…
ট্রিগারে চেপে বসেছে ওর আঙুল, রাইফেলের ব্যারেল সেঁটে আছে কাঁধের সঙ্গে; মনোযোগ সামনের লোকগুলোর ওপর, স্টেজের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। প্রথমবার ট্রিগার টেনেই উইনচেস্টারের নল খানিকটা সরিয়ে দ্বিতীয়জনের কপাল বরাবর গুলি করল লসন। ফলাফল দেখার সুযোগ বা ইচ্ছে কোনটাই হলো না ওর, দ্রুত পরপর কয়েকটা গুলি করল অন্য তিনজনের দিকে। অপ্রত্যাশিত আক্রমণে ভড়কে গেছে লোকগুলো, সে-সুযোগটাই নিল লসন। তৃতীয় লোকটা সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে সংবিৎ ফিরল ওদের। যে পাহাড়ের ওপর অবস্থান নিয়েছে ও, সেদিকে তাকিয়ে ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু লসনের লাগাতার আক্রমণে পিছিয়ে গিয়ে আড়াল নিতে বাধ্য হলো দুজনেই। নিশানা ছাড়াই গুলি করে যাচ্ছে ও, বোল্ডার না ঝোপে গিয়ে লাগল দেখছে না। চাইছে লোকগুলো আরও কিছুক্ষণ আড়ালে থাকুক।
আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর সন্দিগ্ধ দৃষ্টি। জুনিপার ঝোপের কিনারে এক ঝলকের জন্যে বাদামী একটা কাপড় দেখেছিল একটু আগে, এবার অবশ্য এক লোককে দেখতে পেল। ট্রেইলের দিকে মনোযোগ লোকটার, ঢাল বেয়ে উঠে আসা স্টেজের কাউকে নিশানা করছে। সম্ভবত ড্রাইভারই তার টার্গেট।
সঙ্গে সঙ্গে ট্রিগার টেনে দিল লসন।লোকটার বাহুতে বিধেছে গুলিটা, এক চুল নড়ে গেল নিশানা; আর তাতেই বেঁচে গেল টিম কাটিস। ওর কপাল ঘেঁষে বেরিয়ে গেল বুলেট। সপাটে চাবুক হাঁকাল সে, তুমুল গতিতে ছুটতে শুরু করল ঘোড়াগুলো। পেছনেই দেখা গেল একটা সোরেলে চেপে ছুটে আসছে বব অ্যালেন। হাতে উদ্যত পিস্তল।
মেস্কিট ঝোপের কাছে আছে ওরা! চেচিয়ে তাকে জানাল লসন। গড়ান দিয়ে সরে এল ও, পাহাড়ের কিনারে এসে ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল। অপেক্ষায় ছিল ঘোড়াটা, ঘোটার মধ্যেই লাফিয়ে স্যাডলে চাপল ও, তারপর স্পার দাবাতে ছুটতে শুরু করল ঘোড়াটা। বাঁক নিয়ে ট্রেইলে উঠে আসার সময় আরেকটু হলে স্যাডল থেকে পড়ে যাচ্ছিল, কোন রকমে সামলে নিল। চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাল ও। বিপজ্জনক জায়গাটা পেরিয়ে গেছে স্টেজ, কোচের খোলা দরজায় দেখা যাচ্ছে হ্যান্স কোবার্নকে। দুই কু জানালায় অবস্থান নিয়েছে। সমানে দুর্বৃত্তদের অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করছে ওরা।
নির্দয় ভাবে স্পর দাবাল লসন, ঘোড়ার গতি বাড়াতে চাইছে। ওকে গুলি করার সুযোগ পেয়ে গেলে এক গুলিতে দফা-রফা হয়ে যাবে। স্বস্তির ব্যাপার ক্রুদের নিয়ে ওকে কাভার করছে কোবার্ন।
সামনে অন্য কোন দল না থাকলেই হয়। ক্লিফের দেয়ালের সঙ্গে শরীর ছুঁইছুঁই করছে ঘোড়াটার, তুমুল গতিতে ছুটছে। স্যাড়লের সাথে শরীর মিশিয়ে দিয়েছে লসন। স্টেজটাকে পেরিয়ে এসে হাপ ছাড়ল, কিন্তু গতি কমাল না। পাশ দিয়ে ক্লিফের দেয়াল চোখের নিমেষে সরে যাচ্ছে পেছনে, চোখ তুলে সামনে ট্রেইলের দিকে তাকাল ও। এঁকেবেঁকে এগিয়েছে ট্রেইল, একটু পরেই খোলা জায়গা।
ছোটার মধ্যেই রাইফেল রেখে পিস্তল তুলে নিল ও। চোখ পরবতী বাঁকের মুখে। একটা ব্যাক-আপ টীম আশা করছে। পাশে রবার্ট অ্যালেনের প্রসন্ন মুখ দেখতে পেল এসময়, হাসছে সে। খোলা চুল বাতাসে উড়ছে।
দারুণ কাজে দিয়েছে তোমার বুদ্ধি! চেঁচিয়ে বলল সে। পাত্তাই পায়নি ওরা।
সামনে হয়তো আরও দুএকজন আছে। সতর্ক থেকো।
সহাস্যে মাথা ঝাঁকাল অ্যালেন, পাশাপাশি ঘোড়া ছোটাচ্ছে।
বাঁক পেরিয়ে খোলা জায়গায় আসতে দেখা গেল লসনের আশঙ্কাই সত্যি। উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে তিন ঘোড়সওয়ার। কিছুটা আগেই উপস্থিত হয়ে গেছে স্টেজ, তাছাড়া পাশার ছক এভাবে পাল্টে যাবে আশা করেনি ওরা। লসন আর অ্যালেনকে দেখেই যার যার পিস্তল বা রাইফেলের দিকে হাত বাড়াল তিন দুর্বৃত্ত।
পিস্তল তৈরিই ছিল, স্রেফ নিশানা করতে হলে লসনকে, সামনের লোকটার উদ্দেশে একটা বুলেট পাঠিয়ে দিল। বুক চেপে ধরে স্যাডলে হুমড়ি খেয়ে পড়ল লোকটা। অ্যালেনের গুলিতে স্যাডলচ্যুত হলো পাশেরজন। মাত্র একটা গুলি করার সুযোগ পেল অন্য লোকটা, তাড়াহুড়ো করায় ফস্কে গেল সেটা-লসনের তিন হাত দূরে পাহাড়ের শরীরে গিয়ে বিঁধল। ততক্ষণে লোকটার একেবারে সামনে পৌঁছে গেছে ওরা। পাঁচ হাত দূর থেকে লোকটার বুক বরাবর গুলি করল লসন, চোখে চোখে তাকিয়ে থাকল গুলি করার সময়। সমূহ বিপদ বুঝতে পেরে মরিয়া হয়ে উঠেছে লোকটা, শেষ মুহূর্তে মাথা নিচু করে ফেলল। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারল না, প্রশস্ত কপাল গুড়িয়ে দিল ভারী বুলেট।ধূলিধূসর ট্রেইলে আছড়ে পড়ল তার দেহ, একটু পর চলন্ত স্টেজ মাড়িয়ে গেল তাকে।
দুশো গজের মত এগিয়ে থামল লসন, পাশে এসে দাড়িয়েছে অ্যালেন। হাঁপাচ্ছে সে। তবে মুখের হাসি ম্লান হয়নি এতটুকু। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনের ট্রেইলের দিকে তাকাল, স্টেজটা একটু আগে পেরিয়ে গেছে ওদের। দুর্বৃত্তদের কেউ পিছু নিয়ে থাকলে চড়াও হবে তার ওপর, কিন্তু মিনিট বিশ পরও উৎসাহী কোন রাইডারকে দেখা গেল না।
চলো হে, যাই এবার, স্মিত হেসে বলল অ্যালেন। মনে হচ্ছে সবকটাকে সাবাড় করে ফেলেছি! শেষ লোকটাকে চিনতে পেরেছ?
মাথা নাড়ল লসন।
কিনকেডের এক চেলা। গতকাল জ্যাক চেম্বারল্যান্ডের সেলুনে দেখেছি ওকে।
ঘোড়ার গতি বাড়িয়ে স্টেজটাকে ধরে ফেলল ওরা। গতি কমিয়ে এনেছে কার্টিস। বিপজ্জনক জায়গাটা পেরিয়ে আসার সময় সর্বোচ্চ গতি আদায় করেছে পশুগুলোর কাছ থেকে, গতি কমিয়ে পরিশ্রান্ত পশুগুলোকে খানিকটা বিশ্রাম দিচ্ছে এখন।
পরদিন নির্বিঘ্নে বিগ বে-তে পৌঁছল ওরা। দুপুর তখন। লসনের নির্দেশে লঅফিসের সামনে স্টেজ থামাল টিম কাটিস। শহরের শুরুতে আলাদা হয়ে গেছে বব অ্যালেন, ল-অফিসের উল্টোদিকের বাড়ির সামনে অবস্থান নেবে। ফুটপাথে থাকল দুই কু, আর শেরিফের অফিসে গিয়ে ঢুকল হ্যান্স কোবার্ন। জানালার কাছে থাকবে সে। ভেতরে গিয়ে শেরিফের সঙ্গে আলাপ করল লসন, ওর সঙ্গে বেরিয়ে এল দুই ডেপুটি, এরাও পাহারায় থাকবে।
যাই ঘটুক, এখান থেকে নড়বে না কেউ! নির্দেশ দিয়ে দক্ষিণে এগোল লসন।
কোথায় যাচ্ছ? সন্দিহান সুরে জানতে চাইল বিল নিকোল।
যা বলছি করো, নিকোল! হাঁটার মধ্যেই বলল ও।
চাপা অসন্তোষ দেখা গেল যুবকের চোখে। আমাদের এখানে খাঁটিয়ে মারবে, আর নিজে সেলুনে গিয়ে আয়েশ করে হুইস্কি গিলবে?
ধীরে ধীরে তার দিকে ফিরল লসন, স্থির দৃষ্টিতে মাপল নিকোলকে। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল ওরা, তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল লোকটা।
তোমার যদি তেষ্টা পেয়ে থাকে, না হয় তুমিই যাও, নিকোল। দশ মিনিটের ছুটি দেয়া হলো তোমাকে। কিন্তু দশ মিনিট পর ঠিক এখানে এসে দাঁড়াবে। আপাতত তোমার জায়গায় থাকছি আমি।
ভুলে যাও, কথাটা এমনিতেই বলেছি, আড়ষ্ট ভাবে হাসল নিকোল, কিন্তু বিদঘুটে দেখাল হাসিটা। সত্যি কথা বলতে কি, আমারই হুইস্কির তেষ্টা পেয়েছে।
ফিরে এসে তার সামনে দাঁড়াল লসন। বেশ তো, এক পেগ গিলে এসো।
কি যেন ভাবছে বিল নিকোল। আরে, আমি তো এমনি এমনি বলেছি।
আমি কিন্তু তামাশা করছি না।
চোখে চোখে তাকিয়ে থাকল সে, তারপর শ্রাগ করল। ঠিক আছে, তুমি যখন আপত্তি করছ না। কিন্তু একা যেতে ইচ্ছে করছে না। টেডকে সঙ্গে নিয়ে যাব? একা একা ড্রিঙ্ক করে আয়েশ হয় না।
উঁহু, কোথাও যাচ্ছে না টেড। বরং আমিই যাব তোমার সঙ্গে।
তুমি!?
হ্যাঁ, আমি।
তুমি তো কাজে যাচ্ছিলে, এড়ানোর চেষ্টা করল বিল।
যাচ্ছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছে সেটা তোমার পছন্দ হয়নি। এখন আমার সাথেই যেতে হবে তোমার, বিল, এবং শেরিফের অফিসে যাচ্ছি আমরা। তুমিও, টেড।
বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেল দুজনের চোখ। এর মানে কি, ড্যান?
গেলেই বুঝতে পারবে। হাত তুলে ল-অফিসটা দেখাল লসন, আরেক হাতে পিস্তল চলে এসেছে। নাও, অনেক আলাপ হয়েছে। এবার এগোও, নয়তো পায়ে গুলি করব। বব, তরুণকে বলল ও। টেড ছোড়ার পিঠে পিস্তল চেপে ধরো তো, মনে হচ্ছে জোর করেই নিতে হবে ওদের। উঁহু, কোন চালাকি করার চেষ্টা কোরো না। টেড স্পিডের চোখে চাঞ্চল্য দেখে দ্রুত বলল লসন, তারপর সপাটে তার নাকে পিস্তলের নল চালাল। এগোও!
ডান হাতে নাক চেপে ধরল সে, রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। যুগপৎ ঘৃণা আর প্রতিহিংসা ফুটে উঠেছে চোখে। ইতোমধ্যে তার হোলস্টার খালি করে ফেলেছে লসন। পিঠে পিস্তলের নলের খোঁচা দিয়ে এগোতে বাধ্য করল তাকে। ঘাড় ফিরিয়ে বিল নিকোলের দিকে তাকাল, লোকটাকে প্রায় ঠেলে নিয়ে আসছে অ্যালেন। হোলস্টারটা শূন্য।
ভেতরে ঢুকল ওরা। জানালার কাছে একটা চেয়ারে বসে ছিল হ্যান্স কোবার্ন। হাতে রাইফেল।
মি. কোবার্ন, এর মানে কি? অসহিষ্ণু স্বরে জানতে চাইল, টেড স্পিড। তুমি নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা করবে?
এতক্ষণেও বুঝতে পারোনি? স্মিত হাসি সোনা ব্যবসায়ীর মুখে।
বোঝার কি আছে আবার?
বুঝবে, একটু পরেই খোলসা হয়ে যাবে সব। শেরিফ, মেহমানদের সেলে ঢোকাও তো! কিছুক্ষণ ওদের সঙ্গে কথা বলবে ড্যান, দয়া করে এই সময়টা বাইরে থেকো তুমি। দশ মিনিট, বেশিক্ষণ লাগবে না ওর।
চল্লিশোর্ধ্ব এক লোক, জেরি টাম্বলার হচ্ছে বিগ বে-র শেরিফ। কোন একটা গোপন ব্যাপার আছে মনে হয়? হেসে জানতে চাইল সে, চুলোয় কফির পানি চড়িয়েছে মাত্র। এগিয়ে এসে ড্রয়ার থেকে চাবি বের করল, দুজনকে আলাদা সেলে ঢোকানোর পর তালা আটকে দিল। সমানে খিস্তি করছে টেড, লসনের চোদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছে।
বিব, নিজের জায়গায় চলে যাও। আমি ডাকার পর কফি খেয়ে যাবে। একজন একজন করে আসবে।
ওদের ব্যাপারটা কি? কিছুটা বিস্মিত দেখাচ্ছে তরুণকে।
পরে ব্যাখ্যা করব, ঠিক আছে?
নিশ্চয়ই, ড্যান। মাথা ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
আমাদের হাতে সময় খুব কম, হ্যান্স, একটা চেয়ারে বসার সময় বলল লসন। হয়তো এখানেই আক্রমণ করবে ওরা। শুনতে অসম্ভব মনে হলেও জেসি ওয়েনের পক্ষে সম্ভব এটা। ভাবছি টেডকে চেপে ধরব, দেখি মুখ খোলে কিনা।
একটু বেশি ঝুঁকি নিচ্ছ না? দুজন লোক কমে যাচ্ছে। হয়তো আরও পরে গন্তব্যের কাছাকাছি হামলা করত ওরা।
ঝুঁকিটা নিতেই হবে, হ্যান্স। দুটো কেউটেকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই আর। বাইরে থেকে অ্যাম্বুশ করে অন্যরা যতটুকু ক্ষতি করতে পারবে দলের ভেতর থেকে তারচেয়েও বেশি করতে পারবে ওরা। আমি নিশ্চিত হয় এখানে, নয়তো সামনে ট্রেইলের কোথাও আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছে ওরা। তখনকার অবস্থা চিন্তা করে দেখো, কাকে সামলাব-জেসি ওয়েনকে না ওদের? তাছাড়া, নিজের পিঠের দিকে নজর রাখতে রাখতে এই দুদিন বিরক্তি ধরে গেছে আমার!
নীরবে ব্যাপারটা মেনে নিল হ্যান্স কোবার্ন।
সেলের দিকে এগোল লসন। বিষদৃষ্টিতে ওকে দেখছে দুই আসামী। আক্রোশে ফেটে পড়ছে যেন, পারলে এখনই খুন করে ফেলে ওকে।
টেড স্পিড?
গোল্লায় যাও তুমি, ড্যান!
শোনো, একটা সুযোগ দিচ্ছি তোমাদের। কয়েকটা তথ্য দরকার আমার, এবং তা জানানোর জন্যে খুব বেশি সময় পাবে না। দ্বিতীয়বার কিন্তু জিজ্ঞেস করব না। হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে কক করল ও। শেরিফ, তুমি বরং বাইরে চলে যাও। এখানে যা ঘটবে সবকিছু হয়তো পছন্দ হবে না তোমার।
কি করবে? জানতে চাইল জেরি টাম্বলার, কণ্ঠে অনুমোদনের সুর।
ফিরে এসেই দেখতে পাবে।
তাড়াহুড়োর কি আছে। আজকের দিনটা এখানে কাটিয়ে দাও, বিশ্রাম নেওয়া হবে, তাছাড়া সময় পেলে ওদের কাছ থেকে খবরও বের করা যাবে।
উঁহু, সময় নেই আমার হাতে।
শ্রাগ করে কফি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে।
তোমাদের পরিকল্পনা কি? কোথায় আক্রমণ করার বুদ্ধি করেছ? জানতে চাইল লসন।
চুপ করে থাকল ওরা, চাপা আক্রোশ দেখা যাচ্ছে দুজনের মুখে।
পিস্তল তুলে টেড স্পিডের ঊরুসন্ধিতে নিশানা করল লসন। তা দেখে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল তস্কর, নিমেষে সমস্ত আক্রোশ বিদায় নিল মুখ থেকে, আতঙ্ক আর সন্দেহ দেখা যাচ্ছে সেখানে। আরে, করছ কি! সত্যি গুলি করবে নাকি? ভয়ার্ত স্বরে জানতে চাইল সে।
খোদার কসম, জবাব না পেলে সত্যি তাই করব! শীতল কণ্ঠে বলল লসন।
তামাশা করছ? জানতে চাইল বিল নিকোল, হাসি হাসি মুখ।
গুলি করল লসন, নিকোলের কোমরের পাশে দেয়ালে চল্টা উঠাল গুলিটা। বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেল তার চোখ, আতঙ্কিত হয়ে পড়ল এবার। টেড, হারামজাদা দেখি সত্যি সত্যি গুলি করছে! শেরিফ, তুমি. এটা সহ্য করছ কিভাবে?
চোপরাও, নিকোল! অনেক হয়েছে। আর এক মিনিট দেখব, তারপর আগে তোমাকে গুলি করব। আমার ধারণা, এরপর থেকে কোন মেয়ের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে হবে না তোমার।
শেরিফ! শুনতে পাচ্ছ? মরিয়া হয়ে চিৎকার করল সে।
গুলি করল লসন। বিল নিকোলের উরুতে গিয়ে বিঁধল এবার। থরথর করে কেঁপে উঠল সে, হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল মেঝেয়। সমানে হাত-পা কাঁপছে। টেড, পাগল হয়ে গেছে ও! ওকে বলে দাও! আরে বাবা, নিজে বাঁচলে তো জেসি ওয়েন আমাদের সাহায্য করবে।
ঠিক বলেছ, বিল, ধন্যবাদ। পিস্তলের নল এবার টেডের দিকে ঘোরাল লসন।
সাথে সাথে লাফালাফি শুরু করল টেড স্পিড, চোখে নিখাদ আতঙ্ক। বলছি, বলছি! খোদার দোহাই, গুলি কোরো না!
আমার ধৈর্য খুব কম। পিস্তলের নল এক চুল সরাল না ও।
এখানেই, রওনা দেয়ার সময়, দ্রুত আউড়ে গেল টেড।
শেরিফ! তালাটা খুলে দাও তো, ভেতরে ঢুকব আমি। দেখি কতক্ষণ মিথ্যে বলতে পারে ওরা। অবশ্য আগে হাত-পাগুলো ভেঙে নেব, তাহলে আর লাফালাফি করতে পারবে না। তারপর নিশ্চিন্তে ওদের জিনিসে গুলি করতে পারব।
খোদার কসম, মিথ্যে বলিনি! মরিয়া হয়ে বলল স্পিড।
কি হলো, শেরিফ? তালা খুলতে বলেছি তোমাকে, কফি দিতে তো বলিনি!
ঘামতে শুরু করেছে ওরা, আড়চোখে দেখল লসন। পিস্তল হোলস্টারে ঢুকিয়ে টেবিলের কাছে ফিরে এল ও, ভাবার জন্যে কয়েক মিনিট সময় দিয়েছে দুই কয়েদীকে। কফি শেষ করে ফিরে এল সেলের কাছে।
তালা খুলতে সঙ্গে এসেছে শেরিফ। না বাপু, তুমি মানুষটা যেন কেমন! অন্যদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে জানো বটে। চোখ তুলে দুই আসামীর দিকে তাকাল সে। বাছারা, ভালয় ভালয় ওকে বলে দাও, দেরি করে লাভ কি! পরে আফসোস করার চেয়ে জানিয়ে দাও সব, সারা জীবন মেয়েদের দেখে আতঙ্কে দৌড় দেয়ার চেয়ে এটা কি ভাল নয়?
নরকে যাও, হতচ্ছাড়া শেরিফ! খেঁকিয়ে উঠল বিল নিকোল।
যাব, তার আগে দেখে নিই জিনিস হারিয়ে কেমন ছটফট করো তোমরা।
লারোডো ক্রসিংয়ে, ঘোড়া বদলের সময়! চিৎকার করে জানাল টেড।
নিষ্পলক দৃষ্টিতে লোকটাকে দেখল লসন, তারপর ক্ষীণ মাথা ঝাঁকাল। কজন থাকবে?
চারজন।
ব্যাখ্যা করো।
অসহায় দৃষ্টি ফুটে উঠল টেড স্পিডের চোখে। ট্রিগারে চেপে বসা লসনের আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীন দৃষ্টিতে। ক্ষণিকের জন্যে অসহায় দেখাল লোকটাকে, তারপর শ্রাগ করে বলতে শুরু করল। বলছি। দোহাই লাগে, পিস্তলটা সরাও! ওহ্, কি বেয়াড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি রে বাবা! তখনই বলেছিলাম, স্টেজ গার্ডের চাকুরি নেওয়ার দরকার কি? প্রায় স্নান স্বরে স্বগতোক্তি করল সে। তারপর ঝট করে ফিরল পাশের সেলে বন্দী বিল নিকোলের দিকে। তুমিই জোর করে ওয়েনকে রাজি করিয়েছ, বিল! এখন বোঝ ঠেলা!
জলদি, টেড! তাড়া দিল লসন।
ঘোড়া বদলানোর ফাঁকে খেতে বা ড্রিঙ্ক করতে যেতাম আমরা। কথা ছিল ফিরতে দেরি করব। ওখানে যে বড় সেলুন আছে, ওটার পাশের গলি থেকে বেরিয়ে এসে হামলা করবে ওরা। পেছনে থাকার কথা আমাদের। দুই দলের মধ্যে পড়ে… শেষ করল না সে, লসনের হাতের পিস্তলের দিকে চকিত দৃষ্টি হানল একবার। বিশ্বাস করো, এক বর্ণও মিথ্যে বলিনি!
মনে মনে পরিকল্পনাটার সম্ভাবনা যাচাই করে সন্তুষ্ট হলো লসন। ওয়েন কোথায়?
বলেছিল বিগ বে-তে থাকবে, সুযোগ পেলে ওর সঙ্গে টোবির সেলুনে দেখা করতে বলেছে আমাদের। পরিকল্পনায় কোন রদবদল হলে এখানেই জানাত।
পিস্তল হোলস্টারে ফেরত পাঠাল লসন, দেখল সশব্দে দম ছেড়ে হাঁপ ছাড়ল ওরা। একটা শব্দও যদি মিথ্যে বলে থাকো, ফেরার সময় নিজ হাতে তোমাদের খুন করব আমি! শাসাল ও।
কিন্তু সেলুনে আমাদের না দেখলে হয়তো পরিকল্পনা পাল্টে ফেলবে ওয়েন, বলল টেড স্পিড।
ঘুরে তার দিকে তাকাল লসন, হাসল। ভাল কথা মনে করেছ, তেমন কোন। কথা তোমাদের মধ্যে হয়েছে কি?
মাথা ঝাঁকাল সে।
শেরিফ, কফি দাও ওদের। আমার অনেক সময় আর শ্রম বাঁচিয়ে দিয়েছে ওরা।
সশব্দে মেঝেতে থুথু ফেলল টেড। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারবে না তুমি, ড্যান, জেদী স্বরে বলল সে। জেসি ওয়েন ঠিকই তোমাকে খুন করবে।
তাতে তোমার লাভ কি?
চুপ করে থাকল সে, জবাব দিল না।
নতুন দুজন লোক ভাড়া করব নাকি? লসন অফিসে ফিরে আসতে জানতে চাইল কোবার্ন।
দরকার নেই। বিশ্বস্ত লোক পাব না। তাছাড়া পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করতে যাচ্ছি আমরা, ভাবছি লারেডো ক্রসিং পেরিয়ে দক্ষিণের ট্রেইল ধরব কিনা।
থমকে গিয়ে ওকে দেখল সোনা ব্যবসায়ী। মাথা ঠিক আছে তোমার? এত সোনা নিয়ে চল্লিশ মাইল দীর্ঘ মরুভূমি পাড়ি দেবে নাকি?
ঠিক সেটাই ভাবছি আমি। মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিয়ন সিটিতে গিয়ে ট্রেনে সোনা তুলে দেব, ব্যস, পরদিন মন্টানায় পৌঁছে যাবে। কয়েকবার হামলার আশঙ্কা নিয়ে এ ট্রেইল ধরে আরও একশো মাইল পাড়ি দেয়ার ইচ্ছে নেই আমার।
কিন্তু এত সোনা নেবে কিভাবে? স্টেজ নিয়ে নিশ্চয়ই মরুভূমি পাড়ি দেয়ার কথা ভাবছ না? আর, প্রতিপক্ষ ঠিকই জেনে যাবে ওদের ফাঁকি দিয়েছি আমরা।
তাহলে তুমিও স্বীকার করছ যে ওদের ফাঁকি দিতে পারব আমরা? তাজা ঘোড়ার সরবরাহ অবশ্য পাব না, কিন্তু যদি বাড়তি কয়েকটা ঘোড়া সঙ্গে নিই, দেড় দিনে চল্লিশ মাইল দূরত্ব ঠিকই পেরিয়ে যেতে পারব। সবচেয়ে বড় কথা, রুট বদলে মরুভূমিতে যাচ্ছি আমরা ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করবে না কেউ। তাছাড়া সাধারণ ট্রেইলের চেয়ে মরুভূমি অনেক বেশি নিরাপদ।
সত্যি মরুভূমি পাড়ি দেবে? আমি কিন্তু এর আগে যাইনি ওদিকে। ট্রেইল আর ওঅটর হোলগুলো চেনা না থাকলে কাজটা আত্মহত্যার মতই হবে।
নিশ্চিন্ত থাকো, হ্যান্স। কার্টিস এ ব্যাপারে ওস্তাদ লোক। বহুবার এই ট্রেইলে যাতায়াত করেছে ও।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল ড্রাইভার। কোথায় যাচ্ছ? লসনকে উঠতে দেখে জানতে চাইল।
লিয়ন সিটিতে টেলিগ্রাম করব। ওদের জানাতে হবে না?
ঘণ্টাখানেক পর ল-অফিসে বসে লাঞ্চ করে নিল ওরা। ক্যাফে থেকে খাবার আনিয়েছে শেরিফ। ভরপেট কফি পান করে লারেডোর উদ্দেশে রওনা দিল ওরা। নির্বিঘ্নে বেরিয়ে এল বিগ বে থেকে, কোন সমস্যা হলো না।
ভবিষ্যতের কথা ভাবছে লসন। মন্টানা যাওয়ার সহজ ট্রেইল ছেড়ে উল্টোদিকে এগোবে ওরা, এটা নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারবে না দুর্বৃত্তরা। ট্রেইলে স্টেজকোচ না দেখে শেষে হয়তো সন্দিহান হয়ে উঠবে, ততক্ষণে অনেক দূর চলে যাবে কোচ। সবচেয়ে নিরাপদে সোনা পৌঁছানোর উপায় বোধহয় এটাই। সামনে কটা দল অপেক্ষা করছে কে জানে! ওয়েন, রক্স বা কিনকেডের দল। থমসনও নিশ্চয়ই বাকি থাকবে না। আর নেইল ডেভিস তো আছেই। এ লোকটিকে নিয়েই বেশি ভয় ওর। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা আগে খুঁজে বের করে মোক্ষম সময়ে আক্রমণ করে ডেভিস, অথচ সুবিধা করতে না পারলে হামলাই করবে না। ওর স্বভাবই এরকম। অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে নারাজ সে, ঠিক রক্সের মতই।
অ্যাবিলিনে ওর সাথে রক্সের প্রথম দেখা। পরস্পরকে পছন্দ করতে পারেনি ওরা। প্রথম পরিচয়ের তিক্ততা খুব কমই কাটে। ওদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কারণও আছে, দুজনের পথ সম্পূর্ণ আলাদা। জীবন বাঁচাতে বা কর্তব্যের খাতিরে কার্ট রক্সের মত বহু মানুষের লাশ টপকে এতদূর এসেছে ড্যানি লসন। আর রক্স তেমনই একজন মানুষ যার নামে চার-পাঁচটা হুলিয়া আছে, কিন্তু বিপদ সম্পর্কে সচেতন সে, জানে লসনের সাথে লাগতে গেলে প্রাণের ঝুঁকি নিতে হবে। স্বার্থ ছাড়া ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতি নয় সে। তবে এ-ও ঠিক, ওর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে তাকেও ছাড়তে রাজি নয় রক্স, সে যেই হোক। তেমন একটা মুহূর্ত হয়তো জেরেমি টাউন বা এ যাত্রায় তৈরি হতে পারে। কে বলতে পারে?
চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে লসন। বিগ বে থেকে অতিরিক্ত ছয়টা ঘোড়া নিয়েছে। হ্যান্স কোবার্ন তা পছন্দ করতে না পারলেও তর্ক করেনি। লসনের ধাত ভাল করে জানে সে। আগেও দেখেছে, প্রয়োজন ছাড়া আচমকা কিছু করে না ড্যানি লসন।
মন্টানার ট্রেইলটা দুর্গম, কিন্তু মরুভূমি আরও কঠিন জায়গা। তবে বিপদ আর অবাঞ্ছিত হামলা এড়ানো যাবে তাতে। কিছু লোক হয়তো পিছু নেবে, কিন্তু স্টেজ লুঠ করতে হলে আগে ওদের সামনাসামনি হতে হবে। অ্যাম্বুশ করার আশঙ্কা থাকছে না, এটাই হচ্ছে বড় স্বস্তির বিষয়। একবার উৎরে গেছে বলে প্রতিবারই সেরকম হবে এমন আশা করা চরম বোকামি। তাছাড়া এখন দুজন লোক কম।
দীর্ঘ চল্লিশ মাইল রুক্ষ মরুভূমি পাড়ি দিতে হবে, কিন্তু মন্টানার দুর্গম ট্রেইলের তুলনায় কাজটা সহজ, যেখানে কার্টিসের অভিজ্ঞতা থাকছে ওদের সাথে। স্টেজ নিয়ে ধীর-গতিতে এগোতে হবে জেনেও ঝুঁকিটা নিয়েছে লসন। কোন রকমে লারেডো ক্রসিং পেরোতে পারলেই হয়, তারপর দক্ষিণে ঘোড়া ছোটাবে। পারলে পেছন থেকে অনুসরণ করে ওদের ধরুক দুর্বত্তরা! মরুভূমিতে আর যাই হোক, অসহায় অ্যাম্বুশের শিকার তো হতে হবে না। সমান-সমান সম্ভাবনা থাকবে সবার।
লারেডো ক্রসিঙে কি ধরনের অভ্যর্থনার আয়োজন করবে জেসি ওয়েন? বিগ বে থেকে টেলিগ্রাম করার ফাঁকে কয়েক জায়গায় ঢু মেরেছিল লসন, টোবির সেলুনেও গিয়েছিল, কিন্তু ওয়েনের দেখা পায়নি। লোকটা যদি সত্যিই বিগ বে-তে, এসে থাকে, এতক্ষণে নিশ্চয়ই খবর পেয়ে গেছে যে ধরা পড়ে গেছে ওর ক্রুরা? এবার কি পরিকল্পনা করবে সে? বোঝার উপায় নেই। নিখাদ সতর্কতা আর নিজেদের দক্ষতাই ওদের সম্বল, সঙ্গে ভাগ্যের খানিকটা সহায়তা পেলে হয়তো লারেডোর ফাঁদটা এড়িয়ে যেতে পারবে।
বিগ বে থেকে লারেডো ক্রসিং, ট্রেইলটা মোটামুটি সমতল। পথে অ্যাম্বুশ করার মত সুবিধাজনক জায়গা নেই বললেই চলে। তবুও হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়নি লসন। জানে সঠিক জায়গা বেছে নেবে ওয়েন, সেজন্যে খোদ লারেডো ক্রসিং হচ্ছে আদর্শ জায়গা।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ। সন্ধ্যার আগেই লারেডো ক্রসিঙের মাইল খানেকের মধ্যে পৌঁছে গেল ওরা। আচমকা বিরতি দিল লসন, ট্রেইল থেকে সরে গিয়ে জরিপ করল সামনের পথ। একেবারে খোলা জায়গা, ওদিক থেকে কেউ এলে আগে-ভাগেই টের পাবে।
কফির আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল টিম কাটিস। লসনের নির্দেশে স্ট্রং বক্স খুলে সব সোনা চারটা স্যাডল ব্যাগে ঢোকাল কোবার্ন আর অ্যালেন। চার ব্যাগে অনায়াসে জায়গা হয়ে গেল। বিগ বে থেকে কেনা চারটে ঘোড়ার পিঠে চাপাল ব্যাগগুলো। কাজ শেষে ফের আগের মতই বাক্সে তালা আটকে রাখল ওরা, তবে কিছু বালি আর পাথর ভরে রেখেছে।
এখন থেকে স্যাডল ব্যাগে সোনা রাখব আমরা। বাধ্য হয়ে যদি কোচ ফেলে যেতে হয়, তাহলে অন্তত সোনাগুলো হারাতে হবে না, অন্যদের প্রশ্নের উত্তরে ব্যাখ্যা করল লসন। লারেডোয় পৌঁছে কি পরিস্থিতিতে পড়ব কে জানে, আগে থেকে সতর্ক থাকা ভাল। আর এখানেই সাপার করব আমরা।
কি! চমকে উঠল কার্টিস।
হ্যাঁ, লারেডোর খাওয়া আমাদের কপালে জুটবে না।
তারমানে, বিস্ময় কোবার্নের কষ্ঠে। লারেডোয় থামব না আমরা?
না। ভাব দেখাব থামতে যাচ্ছি, তারপর হঠাৎ করেই ঘোড়া ছোটাব। স্টেজ সহ স্টেশনটা পেরোনোর চেষ্টা করব, কিন্তু অবস্থা খারাপ দেখলে কোচ ফেলে রেখে যাব।
এজন্যেই ঘোড়া ভাড়া করেছ, সোনাগুলোও আলাদা করে ফেলেছ? হেসে জানতে চাইল কাটিস।
লারেডো পেরিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো সর্বোচ্চ গতিতে ছুটতে হতে পারে আমাদের। বিগ বে-তে থাকতেই মরুভূমি পাড়ি দেয়ার চিন্তা মাথায় এসেছিল। ভাবছিলাম কোন ভাবে ঘোড়া বদলের ব্যাপারটা এড়ানো যায় কিনা। ঘোড়া বদলাতে গেলে খামোকা কিছু মূল্যবান সময় নষ্ট হবে, তাছাড়া আমাদের আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যাবে ওরা। তারচেয়ে এটাই কি ভাল হলো না? না থেমে সরাসরি স্টেশন পেরিয়ে যাব, কোচটা ফেলে গেলেও সোনা ঠিকই থাকবে আমাদের সঙ্গে।
কপাল ভাল থাকলে সবাই বেরিয়ে যেতে পারব, কিন্তু কেউ যদি পড়েই যায়, তাহলে অন্যদের দায়িত্ব হবে তার স্যাডল ব্যাগ নিয়ে কেটে পড়া।
আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপতে চাইছে, ড্যান, সহাস্যে বলল টিম কার্টিস। চিন্তা করো, পুরো পঞ্চাশ হাজার ডলারের সোনা থাকবে আমার সঙ্গে, ইচ্ছে করলে অনায়াসে তোমাদের ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়তে পারব। মরুভূমিটা আমার চেয়ে বেশি চেনো না তোমরা।
হতে পারে, তবে কিছু কিছু তো চিনি। যেখানেই যাও আমি তোমার পিছু নেব! পাল্টা হেসে উত্তর দিল লসন।
না হে, তোমাকে খেপানোর ঝুঁকি নিতে রাজি নই। দরকার নেই অত সোনার পারিশ্রমিক হিসেবে দুশো ডলার পাব, আমার জন্যে এই ঢের। নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারব কয়েক মাস।
ওগুলো শেষ হয়ে গেলে, আর যদি কোন কাজ না পাও, যোগাযোগ কোরো আমার সঙ্গে। তোমাকে একটা কাজ দিতে পারব বোধহয়, জেরেমি টাউনের কাছেই।
তোমাদের বাথানে?
জানলে কিভাবে?
জেরেমির প্রায় সবাই জানে। তোমার বাবা শহরে এসেছিল একদিন। বাথানের কয়েকটা গরু চুরি করেছিল কিনকেডের দুই লোক, এদের পিছু নিয়ে ঠিক চলে এসেছে জ্যাক লসন। শহরের একেবারে শেষে যে দুটো কটনউড আছে তাতে ওদের ঝুলিয়ে দিল সে, সবার সামনে এবং চুরি করা গরুর পিঠে চাপিয়ে। আহ্, দেখার মত হয়েছিল দৃশ্যটা! কিনকেড পর্যন্ত চুপ মেরে ছিল, কিছু করতে পারল না।
এরকম কোন ঘটনা আর বরদাস্ত করবে না, যাওয়ার সময় ঘোষণা দিয়ে গেল জ্যাকব লসন, এবং মাংসের দরকার হলে যেন গরু কিনতে ওর বাথানে যায় লোকজন। সাহস আছে মানুষটার, অন্তত বিশজন লোক ঘটনাটা দেখেছে, কিন্তু একটা আঙুল তোলার সাহস পায়নি কেউ, অথচ জ্যাকব লসনের সঙ্গে ছিল মাত্র তিনজন লোক।
এদের একজন ম্যাট হিগিন্স, তাই না?
মাথা ঝাঁকাল কাটিস। খোলা জানে কিভাবে এই দুর্ধর্ষ গানম্যানকে পটিয়েছে তোমার বাবা, কিন্তু জ্যাকব লসনের একান্ত বাধ্য মনে হয়েছে ওকে। সবার তো ধারণা ছিল তিন বছর আগে সত্যিই টুকসনে মারা গেছে হিগিন্স। পাহাড়ে ছিল বলেই বোধহয় ওর খোঁজ পায়নি কেউ।
ঘটনাটা আমার জানা নেই। এবার অনেকদিন পর বাড়ি ফিরে দেখলাম পরিবার সহ এখানে থাকছে সে।
তুমি কি সত্যিই বাথানে কাজ করার প্রস্তাব দিচ্ছ আমাকে?
মাথা ঝাঁকাল লসন। বব, তোমাকেও।
কি যেন ভাবল কার্টিস। মনে হচ্ছে কাজটা উপভোগ করব আমি। ম্যাট হিগিন্সের সঙ্গে কাজ করার আনন্দই আলাদা।
সাপার শেষ করে কফি পান করল ওরা। নীরব হয়ে গেছে সবাই, গম্ভীর। কিছুক্ষণের মধ্যে লারেডো ক্রসিঙের উদ্দেশে যাত্রা করবে। জানে না মাইল দুই দূরের নিঃসঙ্গ স্টেজ স্টেশনে কি চমক বা অভ্যর্থনা অপেক্ষা করছে, তবে অনেক অনিশ্চয়তা যে আছে সেটা নিশ্চিত জানে।
<