বেশ বড়সড় একটা ভিড় জমেছে জেলখানার সামনে।
কেগলকে জেলখানায় ভরে সেলের তালার চাবি পকেটে পুরে বেরিয়ে এলো বেনন, ধৈর্য ধরে কি ঘটেছে ব্যাখা করল। সবার কৌতূহল মিটিয়ে স্টেবলে রেখে এলো ঘোড়াটা, তারপর ক্লান্ত পায়ে বোর্ভওয়াক ধরে হোটেলের দিকে চলল।
হারবেনের হোটেলে একটা ঘর নিল ও, সেখানে বিশ্রাম করল ঘন্টা দুয়েক। অপেক্ষা করছে, ব্যাগলে ফিরবে। ফিরছে না ব্যাগলে।
চাইনিজ চপ হাউজে রাতের খাওয়া সেরে শার্লি রাশল্যান্ডের বাড়িতে গিয়ে একবার আহত ক্লিন্টকে দেখে এলো। জামাই খাতির পাচ্ছে র্যাঞ্চার। বেনন যখন গেল, মস্ত বিছানায় ধবধবে সাদা চাদরে শুয়ে ছিল, পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে হরেক জাতের ফলমূল আর বাড়িতে বানানো সুস্বাদু খাবার। সেবাযত্নের অভাব হচেছ না।
টাকাভরা স্যাডলব্যাগ শার্লির কাছেই রাখতে দিয়েছে বেনন। বলেছে ব্যাগে যা আছে সেগুলো ব্যাঙ্কের টাকা। ডিলনের ব্যাপারে খুলে বলেছে, জানিয়েছে পরিণতি। গভীর আগ্রহ নিয়ে বেননের কথা শুনেছে শার্লি আর ক্লিন্ট। শার্লির চেহারায় কোন দুঃখের ছাপ পড়েনি। এখন মেয়েটা জানে, কে ওর বাবার হত্যাকারী। শহরে আসার পথে কোলের জ্ঞান ফিরেছে, অনেক কথা বলেছে লোকটা। ডিলন ট্রিপল বার দখল করার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছিল। ডিলন জানত পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। একদিন না একদিন নদীর মূল স্রোত পাহাড় চাপা পড়ে হারিয়ে যাবে, শুকোতে শুরু করবে বার কিউয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া নদীর অংশ। ট্রিপল বার নিজেদের জমিতে খাল কাটতে না দিলে মরুভূমি হয়ে যাবে বার কিউয়ের অধিকাংশ জমি। উপায় ছিল না ডিলনের। ট্রিপল বার দখল করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে গিয়েছিল। ক্লিন্টের কাছে কোন সাহায্য চেয়ে ছোট হবার মানসিকতা ছিল না ডিলনের।
শার্লি তার বাড়িতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে, সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে বেনন, ফিরে এসেছে হোটেলে।
হোটেলের ঘরে বসে সময় কাটছে না, বাইরে যাওয়ার জন্যে বেরিয়ে এলো বেনন। ওর ঘরটা দোতলায়। সিঁড়িতে ব্যাগলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওকে দেখেই চওড়া একটা হাসি উপহার দিল ব্যাগলে, হাত ধরে বেননকে টেনে নামিয়ে নিয়ে চলল। সেথ হারবেনন হোটেল চালায় বটে, তবে মদও বিক্রি করে। কাউন্টারের পেছনে বসে আছে সে। দু’বন্ধু দুটো ড্রিঙ্ক নিল।
তারপর? জিজ্ঞেস করল বেনন।
আর কি, কাঁধ ঝাঁকাল ব্যাগলে। একেবারে সহজ কাজ দিয়েছিলে। শেরিফকে তোমার নাম বলতেই সে চিনল। এমনিতেই আমার কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছিল, তারপর যখন জারম্যানের ক্যাশ মেমো দেখালাম, বললাম ইচ্ছে করলে পিঙ্কারটন এজেন্সিতে টেলিগ্রাফ করে খবর নিতে পারে, তখন একেবারে করিৎকর্মা হয়ে উঠল। সেলুনে গিয়ে পাসির জন্যে সদস্য চাইতেই ছাব্বিশজন লোক হাত তুলল। আমি নিজে গুনে দেখেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা এজেন্টের অফিসে গেলাম। শেরিফই ইন্ডিয়ান এজেন্টকে খুঁজে বের করল। ব্যাটা প্রথমে স্বীকার করছিল না। কিন্তু ক্যাশ মেমোটা দেখে একেবারে কানে ধরে ধরে অবস্থা। বলল আগেও কয়েকবার এই কাজ করেছে। লোকটা এখন রলিন্সের জেলখানায় শেরিফের বন্দি। এজেন্টই আমাদের নিয়ে গেল রাসলারদের কাছে। গোলাগুলি হলো। পালাবার সময় দু’জন মারা গেছে; অন্যদের ধরা যায়নি। গরু চুরিতে কাদের হাত ছিল সেটা ক্লিন্ট যদি জানাতে পারে তো ওয়ারেন্ট ইন্ড্য করবে শেরিফ। গরুগুলো রলিন্সের রেল স্টেশনের পেনে আছে। একনাগাড়ে কথা বলে বিরাটুকরে দম নিল ব্যাগলে। তারপর জানতে চাইল, ক্লিন্টের কি অবস্থা?
ভাল, সংক্ষেপে জবাব দিল বেনন। খুলে বলল ব্যাগলৈকে বিদায় দেয়ার পর কি ঘটেছে। অ্যাভালাশের কথা শুনে ব্যাগলের মুখটা ম্লান হয়ে গেল। ওর চেয়েও অনেক বেশি উত্তেজনাময় সময় কাটিয়েছে বেনন। ও থাকলে••ফোশ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ব্যাগলে। সবার কপালে সব হয় না।
পরদিন সকালে ওদের হোটেল ঘরে এলো ক্লিন্ট আর শার্লি। হাত ধরাধরি করে আছে ওরা। আজকে ক্লিন্টকে অনেকটা সুস্থ দেখাচ্ছে। অকুণ্ঠ চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল ও দু’বন্ধুর কাছে। ওর কথা শেষ হবার পর রীতিমতো লজ্জা লাগল বেনন আর ব্যাগলের। ক্লিন্টের জন্যে এতকিছু করেছে তা নিজেদেরও যেন জানা ছিল না ওদের। মনের মধ্যে একটু সন্দেহও হলো, ভদ্রতা করে বাড়িয়ে বলছে। যুবক র্যাঞ্চার। ওদেরকে ট্রিপল বারে থেকে যেতে অনুরোধ করল ক্লিন্ট।
সব তত ভালয় ভালয় শেষ হলো, জবাবে বলল বেনন। এবার বিদায় নেব। জরুরী কাজ পড়ে আছে আমার। তাছাড়া ব্যাগলেকেও ফার্মে ফিরতে হবে। ওর বউ অপেক্ষা করে আছে।
আরও একটু অপেক্ষা করলে বিরাট কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না, তাড়াতাড়ি করে বলল ব্যাগলে। বেনন ভুল বলছে, সব কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিয়ে না খেয়ে আমি যাচ্ছি না। তাকিয়ে আছে ও শার্লির নিষ্পাপ অপরূপ মুখের দিকে।
লজ্জায় লাল হয়ে গেল শার্লি। ঘনঘন মাথা দুলিয়ে ব্যাগলের কথায় সম্মতি দিল ক্লিন্ট।
ফোঁশ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল বেনন। একবার যখন মুখ ফুটে বলে ফেলেছে ব্যাগলে থাকবে, থাকবেই ও। কথা সেখানে নয়। কথা হচ্ছে, দেরি করার কারণে ব্যাগলের বউয়ের কাছে আর কাউকে নয়, জবাবদিহি বেননকে করতে হবে। ব্যাগলে তখন পেছনে লুকিয়ে থাকবে।
থাকছি আমরা, মুখ চুন করে বলল বেনন। তবে একটু খুশিও লাগছে, সুচারু ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে।
<