বেনন আর ব্যাগলে যখন টুইন স্প্রিংসে ঢুকল, দিনের আলো ফুরিয়ে এসেছে প্রায়। ক্যাসিনো সেলুনের দরজা খুলে যেতে দেখল ওরা। দেখল কয়েকজন লোক নিহত কাউবয়দের নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদের পেছনে দু’জন লোক ধরাধরি করে অচেতন ক্লিন্টকে বের করে আনল। বোতল যেখানে লেগেছিল, মাথা। সেখানে ফেটে গেছে ক্লিন্টের। তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। ঘোড়া থামিয়ে দৃশ্যটা মনোযোগের সঙ্গে দেখল বেনন। ক্লিন্ট বেঁচে আছে বুঝতে পেরে স্বস্তির শ্বাস ফেলল, কিন্তু মনের তিক্ততা কাটল না। বাচ্চা তিনটে ছেলেকে মেরে ফেলেছে ডিলনের লোকরা, এটা ভাবলেই শীতল একটা রাগ উথলে উঠছে অন্তরে। ঘন ঘন গোঁফে তা দিচ্ছে ব্যাগলে। অত্যন্ত উত্তেজিত বোধ করছে এটা তারই লক্ষণ! ব্যাগলে এগিয়ে যেতে চাইছিল, হাতের ইশারায় তাকে ঠেকাল বেনন। গম্ভীর গলায় বলল, ওদের কোন সাহায্যে আমরা আসতে পারব না, ব্যাগলে। কঠোর হয়ে গেছে বেননের চেহারা।

রাস্তার ধারে ঘোড়া সরিয়ে নিল ওরা। বোর্ডওয়াক ধরে জেলখানার দিকে গেল জারম্যান, ওদের দেখতে পেল না। কোনদিকে মনোযোগ দিচ্ছে না লোকটা, একমনে ভাবছে কি যেন।

যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে, বেনন, গোঁফে তা দিল ব্যাগলে। আমাদেরই করতে হবে। ক্লিন্টকে সাহায্য করার আর কেউ নেই।

উনি ছাড়া, আকাশে তর্জনী তাক করল বেনন। ঘোড়া পিছিয়ে ছায়ার আরও ভেতরে চলে এলো ও। ব্যাগলেও তাই করল। দু’জনই চিন্তা করছে, কি করা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা শুধু বাড়ছেই। এখনই সমাধান করতে না পারলে একসঙ্গে এত সমস্যা জমে যাবে যে শেষে কিছুই করা যাবে না।

ওদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়ার এটাই সময়, বলল ব্যাগলে। কাজটা সম্ভব।

কিভাবে?

কেগল আর ডিলন। কেগল আর শার্লি। আবার ডিলন আর শার্লি।

অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে উজ্জ্বল হয়ে উঠল বেননের চেহারা। দাবা খেলা! ঠিকই বলেছ, ব্যাগলে! সঙ্গে যোগ করো কেগল আর ডায়ার, ডায়ার আর ডিলন। চকচকে চোখে বন্ধুকে দেখল বেনন। কার কাছ থেকে বুদ্ধিটা ধার নিলে?

তোমার কাছ থেকে নয়, গোমড়া মুখে জবাব দিল ব্যাগলে।

ঠাট্টা করেছে বলে লজ্জিত বোধ করল বেনন। এখন ঠাট্টার সময় নয়। বাচ্চা কয়েকটা ছেলে খুন হয়ে গেছে। ডেনভার, স্টেসি আর লেভিসের বয়স কতই বা হবে! জীবনটাকে মাত্র উপভোগ করতে শুরু করেছিল ওরা। এখন ওরা বেঁচে নেই। খুনিদের শাস্তি হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। কয়েকদিন পর কেউ মনেও রাখবে না নিষ্ঠুর গানম্যানদের হাতে ঝরে গেছে কচি কয়েকটা প্রাণ। শপথ নিয়ে ফেলল বেনন, ও বেঁচে থাকতে পার পাবে না ডেনভার, স্টেসি এবং লেভিসের হত্যাকারী।

ক্যাসিনো সেলুনের উল্টোদিকে দুটো বিল্ডিঙের ফাঁকে ঘোড়া রেখে শহুরে মানুষের ঢলে মিশে গেল বেনন আর, ব্যাগলে। তরুণ কাউবয়দের হত্যাকাণ্ড মুখরোচক খবরে পরিণত হয়েছে। যারা গানফাইট দেখেছে তাদের কাছে কাউবয়দের মৃত্যু কোন তাৎপর্য বহন করে না। কাউবয়রা কাউবয়, ওদের ভাই বেরাদার নয়। গানফাইটের বর্ণনা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলছে তারা। দর্শক হতে পারাটাকে সৌভাগ্য বলে মনে করছে। টুকরো টুকরো বর্ণনা শুনে সেলুনের ভেতরে কি ঘটেছিল বুঝে নিল বেনন আর ব্যাগলে।

ঘোড়াগুলো স্টেবলে রেখে আসা দরকার, কিছুক্ষণ পর বলল বেনন। আজ রাতে শহর ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবে না আমাদের।

মুখে কিছু বলল না ব্যাগলে, মাথা দুলিয়ে সায় দিল। ভাবছে বেনন কিভাবে কি করবে।

স্টেবলে ঘোড়া রেখে চাইনিজ চপ হাউজে রাতের খাবার সেরে নিল ওরা তাড়াহুড়ো করে। তারপর বেরিয়ে এসে ক্যাসিনোর দরজার ওপর চোখ রাখল। রাত বাড়তেই বরফের গা ছুঁয়ে পাহাড় থেকে বইতে শুরু করল ঝিরঝিরে শীতল বাতাস, কাপ ধরিয়ে দিল হাড়ে। স্লিকার চাপিয়ে নিল ওরা, হাঁটাহাঁটি করে শরীর গরম করতে চাইল। সারারাত অপেক্ষা করার মতো মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে বেনন। ব্যাগলেরও ধৈর্যের অভাব নেই। কষ্ট হলেও অভিযোগ করবে না ও।

সারারাত অপেক্ষা করতে হলো না। মাঝরাতে যাকে চাইছিল তাকে দেখতে। পেল ওরা, সেলুনের ব্যাট উইং ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে।

লণ্ঠনের আলোয় ক্ষণিকের জন্যে দেখা গেল ডায়ারের মুখ। বোর্ডওয়াক থেকে নেমে পড়ল ডায়ার, হিচরেইলের কাছে চলে এলো। ওর ঘোড়াটা। হিচরেইলে দাঁড়িয়ে ঝিমাচ্ছে। ডায়ার ঘোড়ার দড়ি খুলতে যাবে এমন সময় বেননের অস্ত্র খোঁচা দিল ওর পিঠে।

আপাতত তোমাকে কোথাও যেতে হবে না, নিচু স্বরে বলল বেনন। শান্ত ছেলের মতো আমার সঙ্গে চলো, বেঁচেও যেতে পারো।

নরম সুরে বলা হলেও হুমকিটুকু কান এড়াল না ডায়ারের, চমকে উঠেছিল, ঝটপট সামলে নিল নিজেকে। মাথার ওপর হাত তুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। খোঁচা দিয়ে লোকটাকে সামনে বাড়াল বেনন। স্টেবল পেরিয়ে আসার পর কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করল। এখন ডায়ার গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও সাহায্য আসার আগে সরে পড়তে পারবে ওরা।

ঠিক আছে, দাঁড়াও, নির্দেশ দিল বেনন! ডায়ারের হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে দূরে অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

ব্যাপারটা কি? এতক্ষণে জবান ফিরে পেয়ে দাবির সুরে জানতে চাইল ডায়ার। ভাব দেখে কে বলবে ভেতরে ভেতরে থরহরিকম্প হয়ে গেছে!

সহজ ব্যাপার, ঠাণ্ডা গলায় বলল বেনন। তুমি ভেবেছিলে অতি চালাকি করে পার পেয়ে যাবে, কিন্তু আসলে পার পাবে না। মাথা নাড়ল ও। সিক্সগানের। নলটা ইঞ্চিখানেক সেঁধিয়ে দিল ডায়ারের কোমরের চর্বিতে। আমরা জানি তুমি ক্লিন্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ। এটাও জানি যে তুমি আর কেগল মিলে গরু চুরি করে পাহাড়ে ঘেরা একটা উপত্যকায় জড় করেছ। বুঝতেই পারছ আমরা অনেক কিছুই জানি! যেসব প্রশ্ন করব সেগুলোর জবাব মিথ্যে হলে টের পাব। তার ফল ভাল হবে না। যদি ঝেড়ে কাশো তাহলে জুরির সামনে দাঁড়িয়ে ন্যায় বিচার পাবে। আর সহযোগিতা যদি না করে তাহলে এখানেই গুলি করে মেরে রেখে যাব। একটু থামল বেনন। লোকটাকে ভাবার সময় দিল। তারপর বলল, কোনটা ঠিক করলে?

কি জানতে চাও? কর্কশ ভাঙা গলায় জানতে চাইল ডায়ার। ব্যাঙ্কে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলে?

না।

কেগল?

আমি জানি না।

বোনের ইশারায় ডায়ারের চুল খামচে ধরল ব্যাগলে। লোকটাকে মুখ বিকৃত করতে দেখেও নির্বিকার ভাবে টান বাড়াল। আর একটু টান বাড়ালেই গোড়া থেকে ছিঁড়ে আসবে দু’মুঠো চুল।

উহ্! ব্যাগলের মুঠো আলগা করতে চেষ্টা করল ডায়ার। আঙুলগুলো যেন লোহার আঁকশি! না পেরে ব্যথায় ঢোক গিলল। নাক-মুখ কুঁচকে বলল, বললাম তো আমি জানি না। ঈশ্বরের শপথ! কেগল যদি ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে থাকেও, আমার কাছে মুখ খুলবে কেন!

এব্যাটা ঠিকই বলছে, মন্তব্য করল ব্যাগলে। বেননের ইশারায় মুঠোর চাপ একটু কমাল।

বেনন জিজ্ঞেস করল, কেগল আর তুমি যে গরু চুরি করেছ তার সঙ্গে ডিলন জড়িত?

না। তবে রাউন্ডআপের সময় ক্লিন্টের বাছুরের গায়ে নিজের ব্র্যান্ড বসিয়েছে। সে। আমরা শুধু ওর লাভে সামান্য একটু ভাগ বসিয়েছি। রাসলিঙের সময় ওর গরুও চলে এসেছে কিছু।

ডিলন কিভাবে সামলাবে বুঝতে পারছ কিছু? ব্যাগলেকে বলল বেনন। আমরা যদি অভিযোগ তুলি তাহলে ডিলন বলবে, ওর চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। ডায়ার আর কেগল ডিলনের গরু চুরি করেছে এটাও তার পক্ষে যাবে। ডায়ারকে একটা খোঁচা দিল বেনন। নিজের চামড়া বাঁচাতে তোমাকে ফাঁসি দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠবে ডিলন।

বেননের কথায় একটু ভরসা মতো, পেল ডায়ার। বেনন তাহলে বোধহয় তাকে খুন করার কথা ভাবছে না। কিন্তু স্বস্তিটুকু বড় ক্ষণস্থায়ী। ডিলন ক্ষিপ্ত হয়ে। উঠবে ভাবতেই গলা শুকিয়ে গেল ওর। বুকের ভেতরে ধড়ফড় করছে। হাত-পা কাঁপতে লেগেছে বলে নিজেকে দোষ দিতে পারল না। বিপদ! বিরাট বিপদে পড়েছে সে! নিজের বিপদ দেখলে কেগল কি ওকে ছাড়বে? কেগল ছিল বলে এতদিন ডিলনের ভয় মনে, জেঁকে বসতে পারেনি, কিন্তু এখন কেগল ওর বিরুদ্ধে। ওর মুখ বন্ধ করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠবে না কেগল? তাহলে? এরা যদি ছেড়ে দেয় তাহলে পালিয়ে যাবে? কোথায়? গরু বিক্রি না করলে হাতে টাকা। আসবে না। নিঃস্ব অবস্থায় চলে যেতে হবে এত কষ্টের পর? উপায় কি আর? গরু নিয়ে একা সরে পড়া যাবে না। রুখে দাঁড়ানোর কথা ভাবাও যায় না। গানম্যান নয় সে। অস্ত্রে হাতও ভাল নয়।…আর নিজের কাছে স্বীকার করতে দোষ কী, তার বুকে সাহসও বেশি ছিল না কোনকালে। মিথ্যে ব্যক্তিত্বের একটা শক্ত খোলস তৈরি করে তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল এতকাল। এখন খোলস ভেঙে গেছে। লোতে পড়ে কেগলের মতো অসৎ লোকের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়লে আজকে…

জেলখানায় চলো, নির্দেশ দিল বেনন। তোমাকে জারম্যানের জিম্মায় রেখে ডিলন আর কেগলকে খুঁজতে বেরোব আমরা। জানা দরকার তোমার কথার বিরুদ্ধে কি বলার আছে ওদের।

কলে আটকা পড়া ইঁদুর মনে হলো নিজেকে ডায়ারের। পালাতে পারলে বেঁচে যেত। ডায়ার একবার ভাবল বেননের পা চেপে ধরে ক্ষমা চাইবে কিনা। কিন্তু কঠোর মুখটা দেখে ভরসা পেল না। মাথা নিচু করে বেনন আর ব্যাগলের আগে আগে চলল সে জেলখানার দিকে। হাঁটার সময় প্রায়ই দু’হাঁটু বাড়ি খাচ্ছে তার। তবু বুকের মাঝে একটু ভরসা, জেলখানায় মরতে হবে না ওকে। ডিলন নিশ্চয়ই জারম্যানের উপস্থিতিতে সরাসরি কিছু করতে পারবে না।

গুঙিয়ে উঠল ক্লিন্ট। বিরক্ত দৃষ্টিতে ক্লিন্টের দিকে তাকাল জারম্যান। মাত্র জ্ঞান ফিরেছে ট্রিপল বারের মালিকের। হাত দিয়ে মাথার আঘাতটা পরখ করে দেখল।

খড়ের বিছানায় আধবসা হলো। মার্শাল বসে আছে উল্টোদিকের বাঙ্কে।

তোমার কপাল ভাল যে বেঁচে আছ, বলল জারম্যান। গোঙানি থামিয়ে ঈশ্বরকে বরং ধন্যবাদ দাও।

প্রচণ্ড মাথা ধরেছে ক্লিন্টের। একে অতিরিক্ত মদ্যপান, তার ওপর বোতলের বাড়িতে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কে যেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল ও। দৃষ্টি পরিষ্কার করার জন্যে বার বার চোখ পিটপিট করল। একটু পর নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ মনে হলো। বিষদৃষ্টিতে মার্শালকে দেখল ও। মাথার ক্ষতটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি এটা করেছ?

মাথা নাড়ল জারম্যান। না, ডেভিস। মাতাল অবস্থায় কিছু না বুঝেই গানফাইটে জড়িয়ে পড়ছিলে তুমি, ও তোমাকে বাঁচিয়েছে। বোতল দিয়ে বাড়ি মেরেছে মাথায়। জ্ঞান না হারালে এখন ডেনভার, স্টেসি আর লেভিসের মতোই আন্ডারটেকারের অফিসে পড়ে থাকতে তুমি।

কারা মেরেছে ওদের?

কেগল। একাই। লাগতে যাওয়া উচিত হয়নি ওদের।

তীব্র কষ্টে মুখ বিকৃত হলো ক্লিন্টের। সে-কষ্ট মাথাব্যথার কারণে নয়। অনেক, অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকল ও। ডেনভার, লেভিস আর স্টেসিকে ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করত ও। বিশ্বাস হতে চায় না ওরা আর নেই। ওরা যে ট্রিপল বারের জন্যে লড়তে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে এটা কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল। ওর লড়াই নিজেদের বলে মনে করেছিল তাই প্রাণের ভোয়াক্কা করেনি বেপরোয়া ছেলেগুলো। বিনিময়ে ভাল ব্যবহার ছাড়া কিইবা দিতে পেরেছে সে ওদের? বাপ-মা খেদানো কয়েকটা ছন্নছাড়া ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ওর বাবা, তার প্রতিদান দিয়ে গেছে ওরা নিজেদের জীবন দিয়ে।

চোখ গরম করে তাকানোর কোন কারণ নেই, খোঁচাতে শুরু করল জারম্যান। ওদের ওপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। গায়ে পড়ে লাগতে যাওয়া ওদের অনুচিত হয়েছে। ডিলনের লোকরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ওয়েডিং উপলক্ষে আগাম একটু ফুর্তি করছিল ওরা। কথা শেষে ক্লিন্টের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যে চকচকে চোখে তাকাল জারম্যান।

কার ওয়েডিং? ভোঁতা সুরে জানতে চাইল ক্লিন্ট। ওর মনে কোন সন্দেহ নেই কার ওয়েডিং।

লিউ ডিলন আর শার্লি রাশল্যান্ডের ওয়েডিং। কয়েকদিন পরই ওদের বিয়ে।

ফাঁকা দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকল ক্লিন্ট। তাহলে এই ব্যাপার! বিকেলে এই সম্ভাবনাই উঁকি দিয়েছিল ওর মনে। ডিলনের সঙ্গে ওর গোলাগুলি না হোক তাই চেয়েছিল শার্লি। চেয়েছিল ওর কথা ভেবে নয়, ডিলনের নিরাপত্তার কথা ভেবে। তিক্ত হাসিতে ঠোঁট বেঁকে গেল ক্লিন্টের। বুড়োরা হয়তো ঠিকই বলে, সব মেয়েমানুষ আসলে একই রকম। বিত্তবান, ক্ষমতাশালী মানুষের কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে ভালবাসে মেয়েরা। প্রতিহিংসার চিন্তার মাঝেও একটা আলাদা চিন্তা ক্লিন্টকে নাড়িয়ে দিল। সত্যিই ও ভালবাসে শার্লিকে। শার্লির সুখ। নিশ্চিত করতে নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে পারে ও শার্লির সুখ ডিলনের বেঁচে থাকার ওপর নির্ভর করলে ট্রিপল বারের দখল নিয়ে ওর লড়াই একরকম শেষ হয়ে গেছে বলেই ধরে নেয়া চলে।

তবে স্টেসি, ডেনভার আর লেভিসের হত্যাকারীকে ও ছাড়বে না। আজ ও নিঃস্ব, রিক্ত, একা। চলে যাবে ও এই অঞ্চল থেকে। আর কখনও আসবে না। কিন্তু তার আগে প্রতিশোধ নেবে। রক্তের বদলে রক্ত নেবে ও। কেগলের লাশ ফেলে তারপর যাবে এখান থেকে।

সেল থেকে বেরিয়ে দ্রুত হাতে দরজায় তালা মেরে দিল জারম্যান, বাধা দেয়ার চেষ্টা করল না ক্লিন্ট।

প্যাসেজ হয়ে অফিসে চলে এলো মার্শাল, কাবার্ড থেকে নতুন একটা বোতল নিয়ে গ্লাসে রাই হুইস্কি ঢালল। চুমুক দেবে এই সময় রাস্তার দিকের দরজা খুলে গেল, ভেতরে ঢুকল ডায়ার। তার পেছনে অস্ত্র হাতে বেনন আর ব্যাগলে। ডায়ারের খালি হোলস্টারের ওপর থেকে ঘুরে এলো জারম্যানের চোখ। চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ পড়েই মিলিয়ে গেল। তাকাল গম্ভীর দুই বন্ধুর দিকে। কি চাও তোমরা! কর্কশ গলায় জানতে চাইল।

ধাক্কা দিয়ে ডায়ারকে ঘরের আরও ভেতরে ঠেলে দিয়ে পায়ের ঠেলায় পেছনে দরজা বন্ধ করে দিল বেনন।

একে চোখে চোখে রাখো। কেগলের সঙ্গে রাসলিং করছিল। পাহাড়ের মাঝে বিরাট এক পাল গরু জড় করেছে এ আর কেগল।

তোমরা জানলে কি করে! একটু থমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল জারম্যান।

ওর কাছ থেকে জেনে নিয়ে সত্যি বলছি কিনা, বলল বেনন। আমরা যাচ্ছি ডিলনকে নিয়ে আসতে। আমার ধারণা ডিলন যখন জানবে রাসল করা গরুর মধ্যে ওর গরুও আছে তখন ডায়ারকে ধরে ফাঁসিতে ঝোলাতে চাইবে। সেটা ঠেকানো তোমার দায়িত্ব।

সম্মতিসূচক নড় করল জারম্যান। চোখ চকচক করছে তার। ইশারায় টেবিলের ধারে একটা চেয়ারে ডায়ারকে বসতে বলল সে। বেনন আর ব্যাগলে। বাইরের বোর্ডওয়াকে পা রাখার আগেই নিয়ে ফেলল দ্রুত সিদ্ধান্ত। ঘড়ঘড়ে গলায় বলল, ডায়ার, তাড়াতাড়ি কার্যকরী কিছু না করলে ফেঁসে যাবে তুমি। ডায়ারের ভীত চেহারা দেখল, তারপর গ্লাস ভরে রাই হুইস্কি দিল লোকটার হাতে। বলল, এটা শেষ করো, ততক্ষণে আমি ক্লিন্টকে ছেড়ে দিয়ে আসছি। পেছন-দরজা দিয়ে বের করে দেব।

ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে তেমনি করে গ্লাসটা ধরল ডায়ার। দীর্ঘ চুমুকে খালি করে ফেলল। বোতল থেকে ঢেলে নিল আবার। শুনতে পেল প্যাসেজের ওপাশে সেলের দরজা খুলেছে জারম্যান। দরজাটা ফাঁক হয়ে আছে। জারম্যানকে দেখতে পাচ্ছে ও। কত নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে মার্শালের চেহারা। ও নিজেও যদি ওরকম নিশ্চিন্ত হতে পারত! দ্বিতীয় গ্লাসটাও খালি করে ফেলল ডায়ার।

সেলের দরজা খুলে সরে দাঁড়াল জারম্যান। বেরোও, কর্কশ স্বরে নির্দেশ দিল। আজকে সেলে লোক থাকবে, কাজেই তোমাকে আর এখানে রাখতে পারব না।

বাঙ্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধ ঝাঁকাল ক্লিন্ট, তিক্ত সুরে বলল, আমি নিজের ইচ্ছেয় এখানে এসেছিলাম বলে তো মনে পড়ছে না, জারম্যান! ঠিক আছে, যাচ্ছি। তুমি ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে রাতভর মদ গিলবে তাতে আমি বাধা হয়ে দাঁড়াব কেন। তবে ডিলনকে বলে দিয়ো, কোলকে আমি ছাড়ব না। চোখ সরু করে তাকাল মার্শাল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। প্যাসেজের শেষ মাথায় গিয়ে লোহার দরজার ডাবল বোল্ট খুলে দিল। হাত নাড়ল অধৈর্য ভঙ্গিতে বেরিয়ে যেতে বলছে ক্লিন্টকে।

হ্যাট আর স্নিকার তুলে নিয়ে সেল থেকে বেরিয়ে এলো ক্লিন্ট। সে বাইরে পা রাখতেই পেছনে দরজা বন্ধ করে দিল মার্শাল, বোল্ট লাগিয়ে ফিরে এলো অফিসে। দাঁড়িয়ে আছে ডায়ার। এরইমধ্যে মার্শালের রেখে যাওয়া বোতল এক তৃতীয়াংশ খালি করে ফেলেছে। ব্যাপারটা দেখেও দেখল না জারম্যান, হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিয়ে রেখে দিল টেবিলের ওপরে।

এবার? কি করব আমরা? ডায়ারের গলায় আত্মবিশ্বাসের ভাবটা ফিরে এসেছে।

এই মাত্র ক্লিন্টকে ছেড়ে দিলাম, বলল জারম্যান। আমাদের সম্পর্কে যত কম জানে ততই ভাল। ও গেলে তুমিও চলে যাবে। পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে, কেউ টের পাবে না। বাইরে আমার ঘোড়ায় স্যাডল চাপানো আছে, কোথায় লুকাতে হবে তা তো জানোই। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে গরুগুলো আমরা সরিয়ে নেব।

সাইডওয়াকে পায়ের শব্দ পাওয়া যায় কিনা শোনার জন্যে কান খাড়া করে রেখেছে ডায়ার। বলল, কোথায় লুকাব সেটা জানি, কিন্তু গরু সরাতে দেরি করা চলবে না। বেনন আর ওর বন্ধু জানে কোথায় আছে ওগুলো।

কচু জানে। ওরা আন্দাজ করছে কিছু একটা গড়বড় আছে। ভাবছে ডিলনের সামনে ভেঙে পড়বে তুমি। ক্রু কুঁচকে ডায়ারকে দেখল জারম্যান। বলল, ওরা আসার পর উপত্যকার কোন কিছুই পরিবর্তিত হয়নি। ওরা জায়গাটা চেনে না। মাথা নাড়ল। না, ওরা সন্দেহের বশে কাজ করছে।

দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। অস্থির হয়ে উঠল ডায়ার। বাইরে যখন পায়ের আওয়াজ পেল, লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। বিড়বিড় করে বলল, ওরা আসছে!

ঠোঁটে তিক্ত হাসি নিয়ে ট্রিপল বারের ফোরম্যানকে দেখল জারম্যান। কোন অস্থিরতা নেই তার মাঝে। পেছনের দরজা দিয়ে, শান্ত গলায় বলল।

ডায়ার প্যাসেজে ঢোকার দরজার কাছে পৌঁছে গেছে এমন সময় পেছন থেকে জারম্যান বলল, ডায়ার, এটা তোমার কাজে লাগবে।

থামল ডায়ার, জারম্যানকে নিজের একটা সিক্সগান এগিয়ে দিতে দেখে মাথা দোলাল। আসলেই যখন তখন দরকার পড়তে পারে ওটার।

ধরো! ডায়ারের দিকে সিক্সগানটা ছুঁড়ে দিল জারম্যান।

শূন্যে ঘুরতে ঘুরতে ডায়ারের দিকে গেল অস্ত্র। ডায়ারের চোখ অস্ত্রের ওপর, কাজেই সে দেখতে পেল না কখন মার্শালের হাত হোলস্টার থেকে তুলে এনেছে। অন্য সিক্সগানটা। সুন্দর ক্যাচ ধরল ডায়ার, ধন্যবাদ দেয়ার জন্যে তাকাল মার্শালের দিকে। আর ঠিক ওই মুহূর্তেই গুলি করল মার্শাল। একটা মাত্র গুলি করল। নিখুঁত ভাবে ফুটো করে দিল ডায়ারের হৃৎপিণ্ড।

বাইরের দরজায় পায়ের শব্দ থামল। সেদিকে ঘুরে গেল জারম্যান। তার সিক্সগানের ব্যারেল থেকে চুইয়ে চুইয়ে উঠছে ধোয়া

ভিড়ের মধ্যে দিয়ে পথ করে ধোয়া ভরা সেলুনের ভেতরে ঢুকল বেনন আর ব্যাগলে। কাউন্টার আর টেবিলগুলোর ওপর ঘুরে এলো ওদের সতর্ক চোখের দৃষ্টি। সাধারণ মানুষ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাল না, কিন্তু বারে দাঁড়িয়ে আছে ডিলন তার লোক পরিবেষ্টিত হয়ে, তারা ওদেরকে চোখের দৃষ্টিতে ভস্ম করে দিল। গানম্যানদের হাত চলে গেল উরুর পাশে। কেগল হোলস্টারের দিকে হাত নামাতেই ইশারায় তাকে বারণ করল ডিলন। টেবিলগুলোর মাঝখানের সরু পথ ধরে ডিলনের দিকে এগোল বেনন আর ব্যাগলে, দু’জনই গানবেল্টের ভেতরদিকে

বুড়ো আঙুল গুঁজে রেখেছে। ডিলনের লোকদের সামনে থামল ওরা, তারপর ওদের উপেক্ষা করে তাকাল বারটেন্ডার মেয়ার্সের দিকে।

রাই, ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল বেনন। ডিলনের লোকরা সামান্য সরে গেল যাতে মেয়ার্স ড্রিঙ্ক দিতে পারে।

ড্রিঙ্ক সেরে র‍্যাঞ্চারের দিকে মনোযোগ দিল বেনন। জেলখানায় একজনকে রেখে এসেছি, সে রাসলিঙের ব্যাপারে কথা বলবে তোমার সঙ্গে। কেগলের ওপর থেকে ঘুরে এলো ওর দৃষ্টি। মনে হচ্ছে এদিকের রেঞ্জে রাসলারদের কাছ থেকে গরু চুরি হয়ে যাচ্ছে। চোরের ওপর বাটপারি করছে কেউ কেউ। লোকটা আমাদের কাছে মুখ খুলেছে। তোমাকেও কিছু বলার আছে তার। আমার ধারণা ওর কথা শুনলে উপকার হবে তোমার।

দৃষ্টিতে পরিষ্কার অপছন্দ নিয়ে ধূলিধূসরিত বেনন আর ব্যাগলেকে দেখল ডিলন। ঝগড়া বাধাবার কোন ইচ্ছে নেই তার মধ্যে, তাছাড়া এখন এদেরকে। ততটা আর বিপজ্জনক মনে হচ্ছে না। ক্লিন্ট হার স্বীকার করে ট্রিপল বার ছেড়ে চলে এসেছে। গ্লাসে ছোট্ট করে চুমুক দিল ডিলন। দুদিন পরই শার্লি রাশল্যান্ডের সঙ্গে ওর বিয়ে হচ্ছে। বেনন আর তার বন্ধু থাকলেও এখন তার পরিকল্পনায় কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

কে লোকটা? আমি চিনি তেমন কেউ? ডিলনের কণ্ঠে নিরুৎসাহ। বেনন আর ব্যাগলের কথায় গুরুত্ব দিতে চাইছে না।

ধীরেসুস্থে মাথা দোলাল বেনন। লোকটা ডায়ার। অদ্ভুত কিছু তথ্য আমাদের দিয়েছে সে।

কেগলের দিকে এক ঝলক তাকাল বেনন। মুখে কোন ভাব নেই। কেগলের, যেন মুখোস পরে আছে। তবে চোখ দুটো জ্বলছে। জারম্যান ডায়ারকে আটকে রেখেছে, ইচ্ছে করলে জেলখানায় যেতে পারো আমাদের সঙ্গে।

জারম্যানের নাম শুনে কেগলের ঠোঁটে শীতল হাসি দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। হঠাৎ করে বেননের মনে হলো কি যেন ভুল করে ফেলেছে ও।

গ্লাস চোখের সামনে তুলে গভীর মনোযোগে ভেতরের তরল দেখল ডিলন। চিন্তার ছাপ পড়ল চেহারায়। হুইস্কিটুকু গিলে নিয়ে গ্লাসটা নামিয়ে রাখল কাউন্টারে। দুআঙুলে ধরে কপালের ওপর টেনে আনল হ্যাট। দলের সবাইকে একপলক দেখে নিয়ে বলল, তোমরা এখানেই অপেক্ষা করবে।

ক্রুরা সবাই শরীরে ঢিল দিল। কাউন্টারে কনুই রেখে দাঁড়িয়ে আছে কেগল। চকচকে চোখে তার দিকে তাকাল ব্যাগলে।

বেনন বলল, কেগল সঙ্গে এলে ভাল হয়। ডায়ারের দেয়া তথ্যগুলো শুনতে ভাল লাগবে ওর।

মাথা কাত করে ইশারা করল ডিলন, কেগলকেও সঙ্গে আসতে বলছে। অলস দৃষ্টিতে বেনন আর ব্যাগলেকে দেখে নিয়ে বারের কাছ থেকে সরে এলো গেল।

একসঙ্গে ওরা চারজন বেরিয়ে এলো সেলুন থেকে। বার কিউয়ের কাউবয়রা ছাড়া আর কেউ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটা লক্ষ করল না। স্টিভ ডেভিসের নর্তকীদের নাচের সময় হয়ে গেছে। এক কোণে পিয়ানোয় সুর তুলল একজন নিগ্রো। পেছনের ছোট একটা ঘর থেকে স্বল্প পোশাক পরিহিত ছয়জন মেয়ে বেরিয়ে এসে টেবিলগুলোকে ঘিরে ঘিরে নাচতে লাগল। সবার মনোযোগ তাদের দিকে।

বাইরে, বেনন আর ব্যাগলের আগে আগে হেঁটে চলেছে ডিলন। তার মনে কোন ভয় আছে বলে মনে হয় না। অন্য তিনজন র‍্যাঞ্চারের কয়েক পা পেছনে চলেছে। কথা বলছে না কেউ। ওদের বুটের আওয়াজ ফাঁপা শোনাচ্ছে কাঠের বোর্ডওয়াকে। পাশের একটা সেলুন থেকে মাতাল এক কাউবয় বেরিয়ে এসে ডিলনের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ডিলন, বিড়বিড় করে অভিশাপ দিল। ব্যাগলে খুশি হয়ে উঠল। ডিলনের কপালে শনিগ্রহের প্রভাব শুরু হয়েছে। মাতাল কাউবয় গায়ে পড়ছে, একটু পর ডায়ার জানাবে ক্লিন্টের বাছুরের গায়ে ব্র্যান্ড করেছে ডিলন। রাসলারের সঙ্গে আর কোন তফাৎ থাকল না লোকটার। নিশ্চয়ই দেখার মতো হবে লোকটার চেহারা? কি করবে? সম্মান রক্ষা করে এই ঝামেলা থেকে বাঁচবে কিভাবে?

জেলখানার দরজার কাছে প্রায় চলে এসেছে ওরা, এমন সময় রাতের শহরের স্বাভাবিক শব্দমালা ছাপিয়ে গুলির আওয়াজ হলো। জেলখানার ভেতরে গুলি করেছে কেউ। লাফ দিয়ে আগে বাড়ল বেনন, হাতে অস্ত্র চলে এসেছে। ওটা বাগিয়ে দরজায় ধাক্কা দিল ও। খুলে গেল দরজা। ভেতরে ঢুকল ও। ধোয়া বেরনো সিক্সগান হাতে দাড়িয়ে আছে জারম্যান। তার পেছনে মাটিতে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে ডায়ার। এক পলক দেখেই বোঝা যায়, বেঁচে নেই।

বেননের পর পরই ভেতরে ঢুকল ডিলন, ব্যাগলে আর কেগল। জারম্যানের নজর ক্ষণিকের জন্যে সেঁটে থাকল কেগণের ওপর। জারম্যানের ওপর থেকে ঘুরে মৃত ডায়ারের ওপর স্থির হলো ডিলনের দৃষ্টি, তারপর আবার তাকাল সে জারম্যানের দিকে। ভ্রু কুঁচকে গেল। বলল, কি ব্যাপার?

হোলস্টারে অস্ত্র রেখে ধীরেসুস্থে টেবিল থেকে বোতল তুলে নিয়ে চুমুক দিল মার্শাল, তারপর বেনন আর ব্যাগলেকে দেখিয়ে বলল, এরা ডায়ারকে নিয়ে এসেছিল। এদের ধারণা হয়েছিল ডায়ার এমন কিছু জানে যেটা তোমাকে জানানো প্রয়োজন। সম্ভবত রাসলিঙের ব্যাপারে কিছু একটা। ডায়ারকে আমার জিম্মায় রেখে তোমাকে ডাকতে গেছিল এরা।

সেই দুঃখে আত্মহত্যা করে বসল ডায়ার? চোখ সরু করে মার্শালের দিকে তাকাল বেনন। অস্ত্র পেল কই?

বেননকে পাত্তা দিল না জারম্যান, নজর সরল না ডিলনের ওপর থেকে। খুব উত্তেজিত ছিল ডায়ার, আমি বুঝতে পারিনি। বারবার বলছিল এরা দু’জন হুমকি দিয়েছে মেরে ফেলবে ওকে। জোর করে নাকি রাসলিঙের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও আদায় করেছে। প্রাণের ভয়ে ওকে বলতে হয়েছে যে কেগল আর সে মিলে সবার গরু চুরি করেছে।

তীক্ষ্ণ নজরে মার্শালের ভেতরটা দেখে নিতে চাইল ডিলন। বোতলে লম্বা একটা চুমুক দিল জারম্যান।

আমি ডায়ারকে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম আমি। নিরপেক্ষ, কাজেই দোষ না করে থাকলে তোমার চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু সে বারবার বলতে লাগল বেনন আর ব্যৗগলের কথামতো কাজ না করলে তাকে মেরে ফেলা হবে। থামল জারম্যান। ইচ্ছে করেই বেনন আর ব্যাগলের দিকে তাকাচ্ছে। না। ঝুঁকি নিতে ভয় পেয়েছিল ডায়ার। পালাতে চেয়েছিল। যাই হোক, আমি তাকে ড্রিঙ্ক দেবার জন্যে কাবার্ডের কাছে গেলাম। ঘুরে দেখি আমারই একটা অস্ত্র নিয়ে প্যাসেজের দরজার কাছে চলে গেছে সে। দরজা খুলতে চেষ্টা করল। পারল না। আমাকে বলল চাবিটা দিতে। আমি আপত্তি জানাতেই গুলি করতে চাইল। কাঁধ ঝাঁকাল জারম্যান। ডায়ারের গতি খুব ধীর ছিল।

ঘাড় ফিরিয়ে শীতল চাহনিতে বেনন আর ব্যাগলেকে দেখল ডিলন। নিচু স্বরে বলল, তোমাদের কপাল মন্দ, যে উদ্দেশ্যেই কাজটা তোমরা করে থাকো না কেন, তা সফল হয়নি।

কপাল যদি কারও মন্দ হয় তো সে তুমি, উত্তপ্ত স্বরে বলল ব্যাগলে। ডায়ারের কথা শোনার সুযোগ হলো না তোমার। ও যা বলত সেটা তুমি ঠিকই জানবে, কিন্তু জানবে অনেক দেরিতে।

কেউ ওকে জোর করে কিছু বলতে চায়নি, যোগ করল বেনন। মার্শাল হয় মিথ্যে বলছে, নাহলে ভুল ধারণা পেয়েছে।

আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়াই তোমাদের উদ্দেশ্য, এতক্ষণে মুখ খুলল কেগল। ঠোঁটে টিটকারির হাসি। ক্লিন্ট বোধহয় তোমাদের বলেনি যে বার কিউয়ের কাউবয়রা অন্যের প্ররোচনায় কান দেয় না? ওর বলা উচিত ছিল। ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকলে নিজেদের মাঝে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করি আমরা।

কোলের দিকে তাকিয়ে আছে ডিলন। তার চোখে সামান্য একটু সন্দেহের আভাস দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। ব্যাপারটা খেয়াল করল কেগল। নির্মল হাসল। বসের দিকে চেয়ে।

নিশ্চিত হয়ে বেনন আর ব্যাগলের দিকে তাকাল ডিলন। বিরক্তির সুরে বলল, আর কিছু বলবে তোমরা?

একটা কথাই শুধু বলব, বলল বেনন। তোমার প্রেমিকা শার্লি রাশল্যান্ডকে ট্রেইলের ওপর ধর্ষণ করতে যাচ্ছিল কেগল, আমি না ঠেকালে মেয়েটাকে কলঙ্কিত করত সে।

ছলাৎ করে রক্ত উঠে এলো ডিলনের মুখে। চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বেরল।

শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে কেগল, মুখটা হাসি হাসি। তবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে কেউ বুঝবে ধনুকের ছিলার মতো টানটান হয়ে আছে লোকটার শরীর। যোলো আনা তৈরি হয়ে আছে ড্র করার জন্যে।

ঝটকা দিয়ে হোলস্টার থেকে অস্ত্রটা বের করে ফেলল মোটা জারম্যান। কর্কশ স্বরে সতর্ক করল, গোলাগুলি করতে চাইলে খবর আছে। অস্ত্রের দিকে কেউ হাত বাড়ালে ফুটো হয়ে যাবে।

বেননের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে শ্রাগ করল ডিলন। দাঁতে দাঁতে পিষে বলল, অপেক্ষা করতে পারব আমি। বেনন হও আর ক্যানন হও, সময় এলে বুঝিয়ে দেব লাশের কিছু করার থাকে না।

পাশ ফিরতে শুরু করল বেনন, যেন ব্যাগলেকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে জেলখানা থেকে, পর মুহূর্তেই ঝটকা দিয়ে ঘুরল, বিদ্যুৎ গতিতে বের করে আনল সিক্সগান। বন্ধ জায়গায় গম্ভীর, একটা গর্জন ছাড়ল ৪৫ বুলেট। গুলির ধাক্কায় জারম্যানের হাত থেকে ছিটকে পড়ল অস্ত্র। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠল জারম্যান। মাঝপথে জমে গেল হতভম্ব কেগলের হাত। সতর্ক চোখে তাকিয়ে আছে ডিলন, নড়ল না। হাসল বেনন, ইশারায় ডায়ারের মৃতদেহ দেখিয়ে বলল, তোমার হাত একটু বেশি চালু, জারম্যান। এতক্ষণ স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এবার আমরা একটু শান্তিতে কথা বলতে পারব।

কিছু বলল না জারম্যান, দৃষ্টিতে ঝরে পড়ল অপরিসীম ঘৃণা।

ক্লিন্ট কোথায়? মৃদু গলায় জানতে চাইল বেনন। প্রচ্ছন্ন হুমকিটুকু চাপা থাকল না।

ডায়ারকে দিয়ে যাওয়ার একটু পরই চলে গেছে ও। শ্রাগ করল জারম্যান। কোথায় গেছে বলে যায়নি। বেননের অবজ্ঞার দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে বোতলে মনোযোগ দিল সে, চুমুক দিল মুখে তুলে।

ডিলনের দিকে তাকাল বেনন। পরামর্শ দেবার সুরে বলল, আমার কথা বিশ্বাস না হলে শার্লি রাশল্যান্ডকে জিজ্ঞেস করে দেখো। ওর কথা নিশ্চয়ই বিশ্বাস হবে? কোলের দিকে সিক্সগানের নল তাক করল ও। কেগল, বেশি চালাকি করতে যেয়ো না, শেষে হয়তো দেখবে তোমার হাতে ভাল কোন তাস নেই।

ডিলন বা কেগল, মুখে কেউ কিছু বলল না। কিন্তু ফোরম্যানের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকাল ডিলন।

ইশারা করল বেনন। জবাবে মাথা দোলাল ব্যাগলে। ব্যাগলের সহায়তায় দুই মিনিটের মাথায় উপস্থিত সবাইকে নিরস্ত্র করে ফেলল বেনন। ডায়ারের মৃতদেহের হাতে শক্ত হয়ে আটকে আছে জারম্যানের দেয়া সিক্সগান। ওটা খুলে নিল ব্যাগলে, দেয়ালের ব্র্যাকেট থেকে সগ্রহ করল একটা শাপস রাইফেল।

আমাদের পিছু পিছু বাইরে যাওয়া স্বাস্থ্যকর হবে না, মৃদুস্বরে উপদেশ দিল বেনন। শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমরা। লিভারি স্টেবলে তোমাদের অস্ত্র রেখে যাব, ওখান থেকে সগ্রহ করে নিয়ে।

লোকটা নিজেকে ভাবে কী! ক্রোধে রক্ত গরম হয়ে উঠল তিন বন্দির। সেটা জারম্যান আর কেগলের চেহারা দেখে বোঝা গেল। তবে ডিলনকে আগের মতোই শান্ত দেখাচ্ছে। হিসেব কষে দেখছে সে, জিত তারই হয়েছে। ক্লিন্ট ট্রিপল বার ছেড়ে দিয়েছে। বেনন আর ব্যাগলে, এই দুই উটকো ঝামেলাও এবার চলে যাবে নিজেদের পথে। ওদের সঙ্গে কথা বাড়িয়ে দেরি করিয়ে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।

বাড়াবাড়ির সীমা ছাড়িয়ে গেছ তোমরা, হিসহিস করে বলল জারম্যান। উইলিয়াম পিঙ্কারটন কি মন্তব্য করেছে তাতে আর কিছু যায় আসে না। এর পরেরবার এই শহরে দেখলে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেব। সার্কিট জাজ আসার আগে পর্যন্ত পচতে হবে তোমাদের।

তার আগেই ওরা আমার হাতে মরবে, দাঁতে দাঁত চেপে বলল কেগল। বৃটহিলে পচতে হবে ওদের।

কে কোথায় পচে সেটা দেখা যাবে সময় এলে, গম্ভীর চেহারায় বলল বেনন। ব্যাগলেকে ইশারা করে পিছাতে শুরু করল ও, দরজার কাছে চলে এলো। দেয়ালের পেরেক থেকে তুলে নিল জেলখানার সামনের দরজার চাবি।

ব্যাগলে আগে বেরল। তারপর অস্ত্রের মুখে শত্রুপক্ষকে রেখে বেরিয়ে এলো বেনন, দরজা বন্ধ করে তালা মেরে চাবিটা ফেলে দিল বোর্ডওয়াকের ফাঁক দিয়ে।

লিভারি স্টেবলে ঘোড়া আনতে গেল ব্যাগলে। রাস্তার উল্টোদিকে ছায়ায় সরে এসে জেলখানার ওপর লক্ষ রাখল নেন। বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেল, কেউ বেরল না। হাসল বেনন, আগুনটা হাতের আড়ালে রেখে একটা সিগার ধরাল। হুমকিটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ডিলন, কেগল আর জারম্যান।

দশ মিনিট পর সেলুনের চাপা গুঞ্জন ছাপিয়ে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ পেল ও! রাস্তার দু’পাশের আলোয় ব্যাগলেকে চেনা গেল। তার পাশে ঘোড়া ছুটিয়ে কে যেন আসছে। এক মুহূর্ত পর লোকটাকে চিনতে পারল বেনন। ক্লিন্ট ডসন!

ছায়া থেকে বেরিয়ে এলো ও। ব্যাগলে ওর ঘোড়াটা নিয়ে এসেছে। চুপচাপ স্যাডলে উঠে বসল বেনন। একটু পরই রলিন্সের ট্রেইল ধরে টুইন স্প্রিংস শহরের বাইরে চলে এলো তিনজনের দলটা। শহরের বাইরে এসে থামল। ব্যাগলের মুখে ডায়ারের বিশ্বাসঘাতকতার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল ক্লিন্ট।

এখন বুঝতে পারছি ডিলন সব সময়েই সুবিধেজনক অবস্থানে ছিল, কিছুক্ষণ পর একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল সে। ফোরম্যানই যদি বিরুদ্ধে কাজ করে তাহলে র‍্যাঞ্চ টেকানো অসম্ভব।

আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, সান্ত্বনা দিল বেনন। সায় দিয়ে মাথা দোলাল ব্যাগলে। আশা আছে। কি হয় বলা যায় না।

আমার আর কোন আশা নেই, হতাশ কণ্ঠে বলল ক্লিন্ট। ব্যর্থতা যেন গ্রাস করেছে ওকে। তিক্ত একটু হাসল। তারপর মৃদু স্বরে বলল, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, এখানে আর থাকব না। আমার লড়াই শেষ হয়ে গেছে। হেরে গেছি আমি। বিপদের সময় তোমরা সঙ্গী হয়েছিলে, অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকেই এশহরে আমার শেষ দিন। এখন রলিন্সে যাব আমি। সেখান থেকে কোথায় যাব জানি না।

পকেটে হাত দিল ক্লিন্ট। বেনন আর ব্যাগলের মজুরীর টাকা বের করে গুনতে শুরু করল। ওদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার পর অতি সামান্য টাকাই থাকবে ওর কাছে।

চুরুটে কষে টান দিয়ে চাঁদের আবছা আলোয় ক্লিন্টের চেহারা গভীর মনোযোগে দেখল বেনন। খুক খুক করে কাশল। তারপর বলল, উপত্যকায় অন্তত পাঁচশো গরু আছে তোমার। এখনও আশা আছে র‍্যাঞ্চ টিকিয়ে রাখতে পারবে। তবুও তুমি চলে যেতে চাইছ। কারণটা কি? পিছিয়ে যাওয়ার লোক বলে তোমাকে মনে হয়নি আমার। মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল করি না আমি।

ব্যক্তিগত কারণে চলে যাচ্ছি, বলল ক্লিন্ট। তোমরা বন্ধু স্থানীয়, তোমাদের বলতে আপত্তি নেই, ভয় পেয়ে পালাচ্ছি না আমি। লড়াইয়ে হেরে যাব সে-ভয়ে চলে যাচ্ছি না। আসলে মনটা ভেঙে গেছে আমার। করুণ হাসল ক্লিন্ট। সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিল। ভেবেছিলাম ট্রিপল বারে বউ করে তুলব শার্লি রাশল্যান্ডকে। আমার ধারণা হয়েছিল ও আমাকে ভালবাসে। আজকে সেই ভুল ধারণা ভেঙে গেছে। দুদিন পর ডিলনকে বিয়ে করছে শার্লি। তাই আমি চলে যাচ্ছি। বুঝে গেছি শার্লির পছন্দের মানুষকে আমি খুন করতে পারব না। চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার। বলতে পারো শার্লিকে ভালবেসে আমি হেরে গেছি। ডিলন হারিয়ে দিয়েছে আমাকে।

বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল বেননের। নিজের কিছু স্মৃতি মনে পড়ল। মুখ ফুটে ভালবাসার মেয়েটিকে কিছু বলতে পারেনি ও। তার আগেই তো ও আউট-ল হয়ে গেল। পরে গিয়েছিল ও, দেখেছিল মেয়েটি সুখে সংসার করছে। দূর থেকেই দেখেছিল। মনে কোন তিক্ততা জন্মায়নি। এ তো স্বাভাবিক। মন। থেকে মেনে নিয়েছিল। ক্লিন্টের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ওর নিজের বুকের ভেতরটাও হঠাৎ ফাঁকা ঠেকল।

চোখ ছলছল করে উঠল ব্যাগলের। অনুভব করল কত বড় মনের মানুষ হলে প্রেমিকার সুখের জন্যে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেউ।

তোমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু বলব না, কিছুক্ষণ পর বলল বেনন। তবে একটা অনুরোধ করব। আমাদের বেতন আপাতত তোমার কাছেই রাখো। চলে যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে যাও। তোমার সাহায্য দরকার হবে আমাদের।

ঠিক আছে, রাখছি আমি তোমাদের বেতন। সাহায্য? আমার সাহায্য লাগবে তোমাদের? হাসার চেষ্টা করল ক্লিন্ট। সাধ্য মতো সবকিছুই করব। বলল কি করতে হবে।

আমার ধারণা একটু পরই চিরতরে শহর ছাড়বে কেগল, বলল বেনন। ওকে আমি অনুসরণ করব। সঙ্গে তোমাকে চাই। ব্যাগলে এখানেই থাকবে, ডিলনের ওপর চোখ রাখবে।

নিশ্চয়ই যাব তোমার সঙ্গে। ভাবছ উপত্যকা থেকে চোরাই গরু সরাতে যাবে কেগল

যেতে পারে। সম্ভাবনা আছে। টুইন স্প্রিংসের দিকে ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে নিল বেনন। চলো তাহলে। শহর থেকে বেরোনোর দুটো পথই দেখা যায় এমন জায়গায় থামব আমরা, লক্ষ রাখব কারা আসছে যাচ্ছে। কেগলকে কোথাও যেতে দেখলে অনুসরণ করব।

ব্যাগলেও চলল ওদের সঙ্গে। শহরের কাছে কোথাও অবস্থান নিয়ে ডিলনের জন্য অপেক্ষা করবে। দেখবে লোকটা কি করে। অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

<

Super User