ড্যানিয়েল রাশল্যান্ড আর এব ক্রিসির শেষকৃত্যে অনেক লোক হলো। আন্ডারটেকার সবার চেয়ে বেশি গম্ভীর। একে বলে পেশা। যাজক বিড়বিড় করে বাইবেল থেকে শ্লোক আওড়াচ্ছে। শার্লির একপাশে দাঁড়িয়ে আছে লিউ ডিলন, অন্যপাশে ক্লিন্ট ডসন। শ্লোকে মনোযোগ দিতে পারছে না ক্লিন্ট, বারবার ওর চোখ চলে যাচ্ছে ডিলনের লোকদের দিকে। আজকে সবকয়জন গানম্যানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে ডিলন। তবে কোল আসেনি। একটু আগে শার্লিকে ডিলন বলছিল কেগল ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। লোকটা কি জানে না আসল ঘটনা? বেননের কাছে শুনেছে ক্লিন্ট। ডিলনকে বলে দেবে? না, আগ বাড়িয়ে বলার কোন দরকার নেই। শার্লির ব্যাপার। শালিই ইচ্ছে হলে জানাবে ডিলনকে।
বার কিউয়ের গানম্যানরা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ডিলন কি শহরেই ওর ওপর হামলা করবে? মনে হয় না। শার্লির সামনে গোলমাল করবে না লোকটা। ভাগ্যকে অভিশাপ দিল ক্লিন্ট। ব্যাঙ্কে ডাকাতি বড় অসময়ে হয়েছে। ডাকাতি না হলে ঋণ শোধ করে দিতে পারত ও। ভেবেছিল একবার ঋণমুক্ত হলেই শার্লিকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। তা আর হলো না। আগামী কয়েক বছরে বিয়ে করার মতো সচ্ছলতা ওর হবে কিনা সন্দেহ। ততোদিন শার্লি বসে থাকবে না। ডিলন ওকে ঠিকই বিয়েতে রাজি করিয়ে ফেলবে। ক্ষমতাশালী বিত্তবান ডিলনকে বাদ দিয়ে ওর মতো একজন কপর্দকশূন্য যুবককে বিয়ে করবে কেন শার্লি?
অহেতুক রাগ নিয়ে ডিলনের সুদর্শন চেহারা দেখল ক্লিন্ট। শার্লির পাশে দুঃখিত মুখভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। শার্লির সামনে লোকটা ওর সঙ্গে লাগতে যাবে না। প্রমাণ করতে চাইবে ওর মতো দু’পয়সা দামের মানুষের সঙ্গে ঝগড়া চলে না লিউ ডিলনের। সে বড় র্যাঞ্চার। মনস্থির করে ফেলল ক্লিন্ট। শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র ট্রিপল বারে ফিরে যাবে। কোন মেয়ের কারণে নিরাপত্তা পেতে অভ্যস্ত নয় ও রুচিতে বাধছে ভাবতেই।
যাজকের শ্লোক পড়া শেষ হতে কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল শার্লি। চাপা কান্না নিয়ে দেখল কফিন, তারপর ঘুরে দাঁড়াল। ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করল বাড়ির দিকে।
ক্লিস্ট আর ডিলন, দু’জনই মেয়েটাকে অনুসরণ করল। পরস্পারের মধ্যে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি বিনিময় হলো ওদের। বার কিউয়ের কাউবয়রা পেছন আর দু’পাশ থেকে চেপে এলো। ডসন এখন মুঠোর ভেতর, কিন্তু ঝামেলা শুরু করার অনুমতি পায়নি তারা।
ক্যাসিনো সেলুনের সামনে হিচরেইলে ঘোড়া বেঁধে রেখেছে বার কিউয়ের লোকরা। সেলুনের সামনেই থামল তারা। ক্লিন্ট আর ডিলন শার্লিকে এগিয়ে দিতে চলল বাড়ি পর্যন্ত। কয়েক পা এগিয়েই থেমে গেল ডিলন, কাঁধের ওপর দিয়ে একজন কাউবয়কে বলল, স্লিম, জারম্যানকে একটা খবর দাও। কাউবয়, নড করায় দ্রুত পায়ে ক্লিন্ট আর শার্লির পাশে চলে এলো সে।
বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ডিলন আর ক্লিন্টের দিকে আকুতি নিয়ে তাকাল শার্লি। অনুরোধের সুরে বলল, লিউ, ক্লিন্ট, দয়া করে তোমরা লড়াই শুরু কোরো না। ব্যাঙ্কের হিসেবপত্র দেখা শেষে ক্লিন্ট যে টাকা জমা রেখেছিল সেটা ফিরিয়ে দেয়া হবে। লিউয়ের দিকে ফিরল মেয়েটা। তোমার টাকা ফেরত পেয়ে যাবে।
চওড়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে শ্রাগ করল ডিলন। বলল, অপেক্ষা করতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে মনে হয় না ক্লিন্টকে টাকা দিলে ওর উপকার হবে। ক্লিন্টের নিয়তি হাজতবাস।
হাজতবাস? কি কারণে? কড়া চোখে ডিলনকে দেখল ক্লিন্ট। মুখে হাত চাপা দিল শার্লি, চোখে ভয়ের ছায়া পড়ল।
কারণটা তোমাকে জারম্যান বলে দেবে। আইনের প্রয়োগ ওর দায়িত্ব। ডিলনের চোখে বিদ্রূপ খেলা করছে। আমি হয়তো আমার প্রভাব খাটাব, যাতে ফাঁসিতে ঝুলতে না হয় তোমাকে।
কেন? কি করেছে ও? ব্যগ্র কণ্ঠে জানতে চাইল শার্লি।
হঠাৎ করেই অন্তরে কৃতজ্ঞতা অনুভব করল ক্লিন্ট মেয়েটার আন্তরিকতা বুঝতে পেরে।
সময় হলে সবই জানবে, শার্লি, নিচু স্বরে বলল ডিলন। ঘুরে পা বাড়িয়ে বলল, তবে ডসন হয়তো আগেই বলবে তোমাকে।
কাউবয়দের কাছে ফিরে গেল সুদর্শন দীর্ঘ র্যাঞ্চার। ওখানে, জারম্যানও আছে। স্লিম এইমাত্র তাকে জেলখানা থেকে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে।
কি ব্যাপার, ক্লিন্ট? বেসুরো গলায় জানতে চাইল শার্লি। দুশ্চিন্তায় কুঁচকে আছে।
নিশ্চিন্ত করতে শার্লির বাহুতে হাত রাখল ক্লিন্ট। হাসল এক চিলতে। শান্ত স্বরে বলল, চিন্তা কোরো না, শার্লি। ডিলন ভাবছে আমার বিরুদ্ধে রাসলিঙের একটা অভিযোগ দাঁড় করাতে পেরেছে। কিন্তু ওর কপাল মন্দ, কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না। ডিলনের কাউবয়রা চলে যাবার পর সমস্ত চিহ্ন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ কথাই বুঝল না শার্লি। তবে ক্লিন্টের শান্ত ভঙ্গি দেখে একটু স্বস্তি পেল। গভীর দৃষ্টিতে ক্লিন্টের চোখে তাকাল। বারান্দায় উঠে অনুরোধের সুরে বলল, ডিলনের সঙ্গে লাগতে যেয়ো না, ক্লিন্ট, প্লীইইজ। ওরা সংখ্যায় অনেক।
মাথা দোলাল ক্লিন্ট। সমান সুযোগ না পেলে অস্ত্র বের করব না আমি। চোখের কোণে দেখল কাউবয়দের ছেড়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে জারম্যান। কোন একটা উদ্দেশ্য আছে, হাঁটার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে তা। শার্লির বাহু ছেড়ে দিল ক্লিন্ট। চোখের ইশারায় দরজা দেখাল। জারম্যান আসছে। কোন চিন্তা কোরো না। বন্দুকযুদ্ধ হবে না। তুমি ভেতরে যাও।
ক্লিন্টের চোখ থেকে চোখ ফেরাল না শার্লি, যুবক র্যাঞ্চারের পুরুষালী চেহারায় মায়ার ছাপ, ঠিকই অনুভব করল। তার চেয়েও গভীর একটা অনুভূতি হলো ওর। বুঝে গেল ক্লিন্টকে বাঁচাতে গিয়ে যদি লিউ ডিলনকে বিয়ে করতে হয় তাহলেও আপত্তি করবে না ও। ওকে লোকটা পণ্যের মতো ব্যবহার করবে, সাজিয়ে রাখতে চাইবে, দামী একটা আসবাবপত্রের মতো। তবু! ক্লিন্টের বাহুতে একবার চাপ দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল শার্লি। জানালায় দাঁড়িয়ে থাকল, দেখতে চায় কি হয়।
ক্লিন্টের দু’গজ সামনে থেমেছে জারম্যান। ঐ কুঁচকে একবার যুবক র্যাঞ্চারকে দেখে নিয়ে বলল, ঘোড়া নিয়ে আমার সঙ্গে একটু যেতে হবে, ক্লিন্ট। এসো। ডিলনের ধারণা তুমি ওর গরু রাসলিং করছ।
কিছু না বলে তাকিয়ে থাকল ক্লিন্ট। ঢোক গিলল জারম্যান। আমি ওর কথায় নাচছি না। ওকে বলেছি আমরা সবাই যাব, দেখব গিয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় কিনা। যদি আসলেই দোষী না হয়ে থাকো তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। তোমার।
বোর্ডওয়াক থেকে নেমে পড়ল ক্লিন্ট। চলো, যাওয়া যাক।
কয়েক মিনিট পর শহর থেকে বেরিয়ে গেল বড়সড় দলটা। মুখে কিছু না বললেও জারম্যান আর ডিলন দু’পাশ থেকে প্রহরা দিচ্ছে ক্লিন্টকে।
ওই যে আসছে ওরা। দূরের ধুলোর দিকে আঙুল তুলল বেনন।
নির্দেশিত দিকে চোখ কুঁচকে তাকাল ব্যাগলে। মাথা দোলাল। অনেকেই দেখি আসছে! ভাবো একবার ডিলনের মনটা কি খারাপ হবে যখন ও জানবে রাসলিঙের কোন প্রমাণ নেই! আসছিল ক্লিন্টকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা। করতে, ফিরে যাবে বোকা একটা গাধা হিসেবে।
আগের জায়গা থেকে সরে এলো ওরা দু’জন। বেনন একটা সিগার ধরাল, ব্যাগলে একটা সিগারেট। ক্রমেই কাছিয়ে আসছে ধুলো। তাতে অসুবিধা নেই। ড্রাই ওয়াশের উত্তর পাড়ের দুটো বোন্ডারের মাঝখানে আছে ওরা, নিজেরা দেখা না দিলে নিচে থেকে কেউ দেখে ফেলবে সেটা সম্ভব নয়। ওদের ঘোড়াগুলো পেছনে খানিকটা নিচুতে গ্রাউন্ডহিচ করা, পাথুরে জমিতে গজানো দুবলা ঘাস চিবাচ্ছে।
ওরা এদিকেই আসছে, বেনন। চিন্তিত দেখাল ব্যাগলেকে। ক্লিন্ট আর জারম্যান ওদের সঙ্গে থাকবে বলে মনে করো?
নিশ্চয়ই। ডিলন আজকে এত রাগা রাগবে যে নিজের মাথার চুল খামচে তুলে নিতে পারে।
কয়েক মিনিট পর বেননের কথা সত্যি বলে প্রমাণিত হলো। ড্রাই ওয়াশের সামনে থামল দলটা। জারম্যান আর ডিলনের মাঝখানে থামতে বাধ্য হলো ক্লিন্ট। নির্দিষ্ট কয়েকজন কাউবয়কে হঠাৎ খুব বিস্মিত দেখাল। তাদের দিকে একবার তাকিয়ে ড্রাই ওয়াশের দিকে চোখ ফেরাল ডিলন। প্রথমে তাকে উদগ্রীব বলে মনে হলো। কিন্তু মুহূর্ত পরেই উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেল চেহারা। মুখটা লাল হতে শুরু করল। রাগে দাঁতে দাঁত চাপল। কুঁচকে গেল নাক। ক্লিন্টের মৃদু হাস্যরত চেহারা দেখে কান দিয়ে ভাপ বেরচ্ছে বলে মনে হলো তার। কোথায় রাসলিঙের চিহ্ন। কোথায় আগুনের দাগ আর ব্র্যান্ডিং আয়রন, ব্লক?
এটাই তো সেই জায়গা? হাতের তালুর উল্টোপিঠে ঘর্মাক্ত মুখ মুছল, জারম্যান।
হ্যাঁ, এটাই সে-জায়গা, হিসহিস করে বলল ডিলন। ওরা প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা যদি ড্রাই ওয়াশ ধরে সামনে এগোই তাহলে নিশ্চয়ই ক্লিন্টের চুরি করা গরুগুলোর দেখা পেয়ে যাব।
অবিশ্বাসের ছাপ পড়ল জারম্যানের চেহারায়। ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। তোমার কথা বিশ্বাস করে ক্লিন্টকে আমি গ্রেফতার করব না। নিজে যদি কোন প্রমাণ পাই তাহলে ওকে গ্রেফতার করতে দ্বিধাও করব না। সেক্ষেত্রে জুরিদের সামনে বিচার হবে ওর। তবে আগে প্রমাণ চাই আমার। প্রমাণ!
আরে, বুড়ো ছাগল, তুমি বরং ক্লিন্টকে নজরে রাখো, চোখ গরম করে বলল ডিলন, আমি এখনই গিয়ে প্রমাণ জোগাড় করে নিয়ে আসব।
এখান থেকে নড়বে না তুমি, ডিলন।
বেননের কর্তৃত্বপূর্ণ গলায় পরিষ্কার নির্দেশের সুর। ওপরে তাকিয়ে পরিচিত দুই আগন্তুককে দেখতে পেল বার কিউয়ের কাউবয়রা, হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বোল্ডারের গায়ে। দু’জনের হাতে চারটে সিক্সগান।
ডিলনের হাত হোলস্টারের কাছ থেকে যথেষ্ট দূরে থাকল, কিন্তু মার্শালের দিকে তাকাল সে অগ্নিদৃষ্টিতে। ক্রোধে কাঁপা চড়া গলায় জিজ্ঞেস করল, অপেক্ষা কিসের, জারম্যান? একটু আগেও তো আইনের বুলি কপচাচ্ছিলে, এখন সুযোগ এসেছে আইন প্রয়োগের। ওরা খুনি ডাকাত। ধরবে না ওদের?
গাল ফুলিয়ে মুখ দিয়ে সশব্দে শ্বাস ছাড়ল জারম্যান। বুঝতে পারছে ঠিক কতখানি দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে তার সঙ্গে এই এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী লোকটার। তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই, কোলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আছে, বার কিউয়ে তার স্বার্থ ঠিকই সিদ্ধি হবে। মাথা নাড়ল জারম্যান।
তোমার কপাল ফাটা, ডিলন, বলল বেনন। আমি আর ব্যাগলে যে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করিনি জারম্যান সেটা এখন জানে। সে এটাও জানে যে আমরা খুন করিনি। তবে তোমাদের উদ্দেশ্য জারম্যান জানত না। এখন জানে। মিথ্যে অভিযোগে প্রতিবেশীর সর্বনাশ করতে চেয়েছিলে তুমি। মিথ্যে অভিযোগের মাধ্যমে কাউকে বিপদগ্রস্ত করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তোমার জেল জরিমানা হয়ে যেতে পারে ক্লিন্ট মানহানির মামলা করলে।
দেখার মতো হলো ডির্লনের চেহারা। কিন্তু দ্রুতই নিজেকে সামলে নিতে পারল সে। তার কয়েকজন গানম্যান উসখুস করে উঠল, আসন্ন বিপদ মোকাবিলার জন্যে হাত ঝুলিয়ে দিল হোলস্টারের পাশে। ডিলন বুঝতে পারছে লড়াই একবার শুরু হয়ে গেলে জিত তারই হবে। কিন্তু ব্যক্তিগত ঝুঁকির ব্যাপারটা থেকেই যাচ্ছে। সে হবে শক্রর প্রথম টার্গেট। তারই যদি মৃত্যু হয় তাহলে বার কিউ জিতল না হারল তাতে কি যায় আসবে আর? দেরি করা উচিত হচ্ছে না, গানম্যানদের কেউ একজন ধৈর্য হারিয়ে অস্ত্রে হাত দিয়ে বসলেই ঘটনা শুরু হয়ে যাবে।
গলা খাকারি দিয়ে জারম্যানের দিকে তাকাল ডিলন। প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে বলল, ওদের তাহলে আর খুঁজছ না তুমি, মার্শাল?
ধীরে ধীরে মাথা দোলাল জারম্যান।
কথাবার্তা যখন চলছে, আস্তে আস্তে সরে গেছে ক্লিন্ট। সবার অজান্তে কখন যেন সিক্সগানও বের করে ফেলেছে। সিক্সগানটা সে তাক করেছে ডিলনের পেটে। কথা যখন বলল, বলল জারম্যানের উদ্দেশে।
আমি যখন তোমার সঙ্গে শহর ছেড়ে রওনা হই, আমি জানতাম এখানে এসে কি দেখতে পাব। গতকাল ব্যাগলে দেখেছে বার কিউয়ের কাউবয়রা তাদের নিজেদের গরুর গায়ে আমার ব্র্যান্ড করেছে। গরুগুলোকে তারা আমার জমিতে ছেড়ে দেয়। এখানে একটা আগুন জ্বেলে রানিং আয়রন আর ব্লক ফেলে দিয়ে চলে যায়। ডিলন ভেবেছিল আমাকে এই সুযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে। কিন্তু ব্যাগলে ডিলনের পরিকল্পনা বরবাদ করে দিয়েছে। গরুগুলোকে ডিলনের রেঞ্জে খেদিয়ে দিয়েছে ও।
তীব্র আক্রোশ ভরা চোখে ব্যাগলের দিকে তাকাল লিউ ডিলন। জবাবে অকপট আনন্দের হাসি হাসল ব্যাগলে।
জানতে চাও কারা ব্র্যান্ড করছিল? ভ্রূ নাচাল ও। তোমার পেছনেই আছে সবকয়টা। ওই যে এক চোখ ট্যাড়া বদমাশটার পাশে ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘোড়ায় বসা হাড় হারামী চারজন-ট্যাড়া বদমাশ আর ওরা প্রত্যেকে ব্র্যান্ড করছিল।
ট্যাড়া কাউবয়ের চেহারা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বিপদের ভয়ে স্যাড়ল পমেলে গায়ের জোরে হাত চেপে রাখল সে। আশা করছে সে ড্র করবে না বুঝলে কেউ তাকে গুলি করবে না।
ব্যাগলে যাদের কথা বলল তাদের একবার দেখারও প্রয়োজন বোধ করল না ডিলন। জারম্যানের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল সে। গম্ভীর গলায় বলে উঠল, ক্লিন্টের পক্ষ নিলে মার্শাল থাকতে হবে না এটা জেনেও যদি পক্ষ নাও, আমার কিছু বলার নেই। তবে একটা কথা শুনে রাখো, স্রেফ দুইদিন, হ্যাঁ, দুইদিন সময় দিচ্ছি ওকে। এরমধ্যেই ট্রিপল বার ছেড়ে দিতে হবে। যদি ক্লিন্ট না যায়। তাহলে রক্তপাত হবে। রক্তপাতের জন্যে ব্যক্তিগত ভাবে তোমাকে আমি দায়ী করব, জারম্যান। ট্রিপল বার আমার। দুইদিন শেষ হবার পর ওই জমিতে যদি কোন অনধিকার অনুপ্রবেশকারী দেখতে পাই, কথা বলার আগে গুলি করা হবে।
জারম্যান কিছু বলার আগেই বলে উঠল ব্যাগলে, দু’দিনের অপেক্ষা কিসের? এখনই নয় কেন?
শীতল হাসল ডিলন। এখন তোমরা সুবিধেজনক অবস্থানে আছ। অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই আমার।
ঠিক আছে, অস্ত্র চাল বেনন, গানবেল্ট খুলে নিজেদের পথে রওনা হয়ে যাও। অপেক্ষা করতে থাকো। দেখো কি হয়।
কি আর হবে, বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে খুন হয়ে যাবে তোমরা।
আগেও এধরনের হুমকি শুনেছি তোমার মুখ থেকে। হুমকি কার্যকর হতে দেখিনি। ফাঁকা বুলি না কপচে যা বলছি করো, নাহলে খুলি ফুটো করে দেব।
কড়া চোখে বেননের দিকে তাকিয়ে থাকল লিউ ডিলন। তার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে কাউবয় আর গানম্যানরা। সে নির্দেশ দিলেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যাবে। সবাই চোখে আগ্রহ নিয়ে দেখছে কি করে সে। তিক্ত চেহারায় নড় করল ডিলন, গানবেল্ট খুলতে শুরু করল। তার দেখাদেখি হাত চালাল অন্যরা,
দু’মিনিটের মাথায় সবাই গানবেল্ট আর অস্ত্র ফেলে দিল মাটিতে।
ভেবো না জিতে গেলে, বেননকে বলল ডিলন। এই মুহূর্ত থেকে আমার লোকদের ওপর নির্দেশ থাকল, দেখামাত্র গুলি করা হবে। দুইদিন আমরা নিজেদের রেঞ্জে থাকব, তারপর আসব ট্রিপল বার নিতে।
ক্লিন্ট রেগে উঠে কি যেন বলতে যাচ্ছিল, হাতের ইশারায় তাকে থামাল বেনন। বলল, দুদিন যথেষ্ট সময়, ডিলন। আমার ধারণা তার আগেই আমরা বের করে ফেলব কে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেছে। ক্লিন্টও তার টাকা ফেরত পাবে।
কথা বাড়াল না ডিলন, তাকে মুহূর্তের জন্যে একটু হতচকিত দেখাল। ড্রাই ওয়াশ থেকে বেরিয়ে বার কিউয়ের দিকে ঘোড়া ছোটাল সে। তার পিছু নিয়ে চলে গেল স্যাঙাতরা। একটু পরই ঘোড়ার খুরের শব্দ দূরে মিলিয়ে গেল।
ঘোড়া ধরে ঢাল বেয়ে নিচে নেমে এলো বেনন আর ব্যাগলে।
ব্যাঙ্ক ডাকাতির রহস্য সমাধান করে ফেলবে দুদিনে বলছিলে, ডিলন চলে যাবার পর বলল জারম্যান। একথা বলার পেছনে নিশ্চয়ই জোরাল কোন কারণ আছে তোমার? মার্শালের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। প্রয়োজনীয় কোন তথ্য গোপন করছ না তো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছে?
করছি না, বলল চিন্তিত বেনন, তবে আমরা কিছু একটা জানি এই খবর ছড়ালে হয়তো বেরিয়ে আসবে কেউ আড়াল ছেড়ে।
বেননের কথা জারম্যানকে প্রভাবিত করল বলে মনে হলো না। ঘোড়া থেকে নেমে গানবেল্ট আর অস্ত্র সংগ্রহ করল সে। চোখে কৌতূহল নিয়ে লোকটার কর্মকাণ্ড দেখল ক্লিন্ট, বেনন আর ব্যাগলে। কাজ সেরে হাতের ভঁজে বেল্টগুলো নিয়ে ঘোড়ায় উঠল জারম্যান, স্যাডল ক্যান্টলে হাত রেখে কয়েক মুহূর্ত বিশ্রাম নিয়ে নিল। তারপর ক্লিন্টকে বলল, আর কিছু করার নেই তোমার। আমার যতটুকু সাধ্য ছিল করেছি, ওকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি এখন খারাপ। মনে হয় ডিলনের কথা মতো চলে যাওয়াই তোমার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ডিলন ট্রিপল বারে ঢুকে সবাইকে মেরে ফেললেও আইন ওর বিপক্ষে যাবে না। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি জানতে চাও তো বলব দেখামাত্র গুলি করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে ওর।
কথা শেষে রওনা হয়ে গেল মার্শাল। বার কিউয়ের দিকে চলেছে সে।
পেছন থেকে ক্লিন্ট জিজ্ঞেস করল, তুমি বলছ ডিলনকে ঠেকানোর কোন চেষ্টা করবে না?
ঘাড় ফিরিয়ে মাথা দোলাল মার্শাল।
তাহলে তোমার উচিত কয়েকজন ডেপুটি নিয়োগ করা।
নাক দিয়ে ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করল জারম্যান। তাই? তা কাদের ডেপুটি করব আমি?
আমাদের, বলল বেনন। আমাকে আর ব্যাগলেকে। ব্যাঙ্ক ডাকাতদের ধরতে গিয়ে ডিলনের লেজে যদি মোচড় মেরে বসি তাহলে আইনী সুবিধে পাব। রেঞ্জওয়ার ঠেকাতেও সুবিধে হবে।
তোমরা ক্লিটের লোক। চোখ সরু করে ওদের দেখল জারম্যান। তোমাদের ডেপুটি করলে সবাই ধরে নেবে আমিও পক্ষপাতদুষ্ট। পক্ষ যদি নিতেই হয় তাহলে আমি বরং ডিলনের পক্ষই নেব।
তাই তুমি নিতে, ধীর গলায় বলল ক্লিন্ট, বেনন আর ব্যাগলে না থাকলে। মার্শালকে তার শীতল দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল যুবক র্যাঞ্চার। ডিলনকে বলে দিয়ো, আমি থাকছি। যদি ট্রিপল বার দখল করতে হয় তাহলে অনেক গানপাউডার পোড়াতে হবে ওকে।
নিস্পৃহ হয়ে গেল জারম্যানের চেহারা। কাঁধ ঝাঁকাল। রওনা হতে গিয়েও তাকাল বেননের দিকে। ব্যাঙ্ক ডাকাত ধরতে গিয়ে ডিলনের লেজে মোচড় মারতে হবে বলেছিলে। কেন?
কারণ বার কিউয়ের এলাকায় ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়। ট্রেইলে একজায়গায় অনেক লোক উঠেছে দেখে কৌতূহল হয়েছিল। ব্যাক ট্র্যাক করি আমি। একটা ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে গেছে পথ। বার কিউ রেঞ্জে একটা উপত্যকায় তাদের চিহ্ন দেখেছি। একটা আগুন জ্বেলেছিল। পরে ওখান থেকে শহরের দিকে গেছে সবাই দল বেঁধে। ট্র্যাক দেখে মনে হয়েছে ব্যাঙ্কে লাশ পাবার। আগের দিনের ঘটনা।
এ থেকে কিছুই প্রমাণ হয় না, ক্রু কুঁচকে বলল জারম্যান। ডিলনের বিরাট রেঞ্জ। ওর রেঞ্জ থেকে ডাকাতরা বের হয়েছে বলে ডিলনকে দায়ী করা যায় না।
চুপ করে থাকল বেনন। ধীরে ঘোড়া চালিয়ে ড্রাই ওয়াশ থেকে বেরিয়ে গেল জারম্যান।
লোকটা ভাববে, মার্শাল চলে যেতে বলল ক্লিন্ট। ওকে তোমরা চিন্তায় ফেলে দিয়েছ। ও জানে ডিলনের কাছে গেলে কপাল পুড়বে না, কিন্তু এখন আর ততটা নিশ্চিত নয় যে ডিলনের হাতে সবগুলো ভাল তাস আছে।
এখান থেকে সরে পড়া উচিত, বলল ব্যাগলে। ডিলনরা এখনও বেশিদুর যায়নি। মার্শাল অস্ত্র ফিরিয়ে দিলে আবার এখানে আসার ইচ্ছে জাগতে পারে ওদের।
ব্যাগলে কথাটা মিথ্যে বলেনি। বার কিউ রাইডাররা যেদিকে গেছে তার উল্টোদিকে ছুটল ওরা দেরি না করে।
কয়েক মাইল যাওয়ার পর ক্লিন্টকে বলল ব্যাগলে, আমি যদি তোমার জায়গায় থাকতাম তাহলে ডিলনের কথা মেনে নিয়ে আপাতত ট্রিপল বার ছেড়ে দিতাম।
জবাবে কড়া চোখে ব্যাগলেকে দেখল ক্লিন্ট, কোন জবাব দিল না।
শহরে থাকলে ডিলনের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা যাবে। হামলার ভয় থাকবে না। ট্রিপল বারের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হবে না। সুবিধে মতো আবার দখল করে নেয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
বেশ কিছুক্ষণ নীরবে কাটল, তারপর মতামত চাওয়ার দৃষ্টিতে বেননের দিকে তাকাল ক্লিন্ট।
ব্যাগলে ঠিকই বলেছে, সায় দিল বেনন। তবে শহরে যাবে কি থাকবে সেটা নির্ভর করে তোমার ওপর। তুমি যদি সিদ্ধান্ত নাও ট্রিপল বারে থেকে হামলা মোকাবিলা করবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা থাকব।
দীর্ঘক্ষণ নীরবে এগিয়ে চলল ওরা। চিন্তা করে চলেছে ক্লিন্ট। বুঝতে পারছে এ দু’জনকে ট্রিপল বারে থাকতে অনুরোধ করা ওর উচিত হবে না। এরা ওর চেয়ে কম বোঝে না। তবে র্যাঞ্চটা ওদের নয়। ক্লিন্টের অনুভূতি ওরা বুঝবে না। ট্রিপল নার ছেড়ে চলে যাওয়াটা এক অর্থে পরাজয়ের মতো লাগবে ক্লিন্টের কাছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ক্লিন্ট, কথা বলার আগে বড় করে দম নিল, তারপর বলল, আগে ঝোঁপঝাড় থেকে গরু বের করে এনে ব্র্যান্ডিং করব। ওগুলোকে ব্র্যান্ডিং শেষে ছেড়ে দিয়ে তারপর যাওয়া যাবে শহরে। তোমরা কি বলে?
মাথা দোলাল বেনন আর ব্যাগলে। দু’জনকেই যুবক র্যাঞ্চারের সিদ্ধান্তে তৃপ্ত বলে মনে হলো।
ড্রাই ওয়াশ থেকে বেরিয়ে এলো লিউ ডিলন, রাগে কালো হয়ে আছে চেহারা। বেনন আর ব্যাগলের একটা ব্যবস্থা আর না করলেই নয়। লোকদুটো পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ওর প্রতিটি পরিকল্পনায় বাদ সাধছে। ওরা থাকলে শেষ পর্যন্ত হয়তো ট্রিপল বার হাতের মুঠোর বাইরে রয়ে যাবে।
একটু দূরে ডিলনের রাইডাররা, অপেক্ষা করছে, কিন্তু সেদিকে ডিলনের খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে একা একজন অশ্বারোহীর দিকে। বেশ দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে লোকটা। কাছে আসতে ভ্ৰ কুঁচকে গেল ডিলনের! চিনতে পেরেছে, শার্লি রাল্যান্ড। মুখের ভেতরটা তেতো হয়ে গেল ডিলনের। ক্লিন্টের ব্যাপারে উদ্বেগ! মেয়েটা উদ্বিগ্ন। সেজন্যেই এত তাড়াহুড়ো করে এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে। ঘোড়া থামিয়ে নিজেকে সংযত করল ডিলন। চেহারা থেকে মুছে ফেলল একটু আগের ঈর্ষার ছাপ।
একেবারে কাছে এসে থামল শার্লি। শহর থেকে বেরোতে ভয় লাগছিল, মনে আসছিল কেগলের কথা, ডিলনের কথা, কিন্তু ক্লিন্টের কিছু হয়ে যাবে এই দুর্ভাবনা এতই পেয়ে বসে ওকে যে শেষ পর্যন্ত আসতে বাধ্য হয়েছে শার্লি বিপদের ঝুঁকি নিয়ে। কি হয়েছে, লিউ? জানতে চাইল উদ্গ্রীব হয়ে। ক্লিন্ট কোথায়?
হাতের ইশারায় ড্রাই ওয়াশ দেখাল ডিলন। কিছুই হয়নি। ওদিকের ড্রাই ওয়াশে দলবল নিয়ে অপেক্ষা করছে ডসন।
স্বস্তিতে বুক ভরে উঠল শার্লির, চেহারায় তার ছাপ পড়ল। বিব্রত হয়ে বলল, আমি..আমি আর শহরে থাকতে পারছিলাম না। তোমরা আসলে এত রাগী আর জেদী! ভয় হচ্ছিল কি না কি হয়ে যায়।
ড্রাই ওয়াশের দিকে যেতে চেয়ে ঘোড়ার মুখ ফিরিয়েছিল শার্লি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, চট করে রাশ ধরে ঘোড়াটাকে থামিয়ে ফেলল ডিলন।
ডিলনের চোখে আগুন দেখে চমকে গেল শার্লি।
তোমার কাছ থেকে এই পরিমাণ মনোযোগ পাবার যোগ্যতা নেই ডসনের, থমথমে গলায় বলল ডিলন। ডসন এখন সাধারণ এক ভবঘুরে। তার দিকে এত ঝুঁকে পড়া তোমাকে মানায় না। ডসনের ভাল-মন্দের দায়িত্ব তোমার নিজের মনে। করে এভাবে তুমি ছোটাছুটি করে বেড়াবে, সেটা আমি চাই না। কি বলছি বুঝতে পারছ?
সুযোগ পেলেই ক্লিন্ট তার র্যাঞ্চ ধরে রাখতে পারবে, কিছুটা উত্তপ্ত গলায় বলল শার্লি। তখন ওকে আর ভবঘুরে হতে হবে না।
সুযোগ ক্লিন্ট পেতে পারে, ধীরে ধীরে গম্ভীর গলায় বলল ডিলন, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে, যেন দেখে নেবে অন্তরের গভীরে কি আছে। সুযোগ সে পাবে, যদি তুমি আমাকে বিয়ে করো। সময় চেয়েছিলে তুমি। সময় দিলাম। এক সপ্তাহ সময় পাচ্ছ। এরমধ্যে তোমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
প্রত্যাখ্যান চলে এসেছিল জিভের ডগায়, শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল শার্লি। নীরব বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেল অন্তরটা। ডিলন তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চোখ থেকে ঝরে পড়ছে লালসা। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে শার্লি বলল, আমার মনে হয় না বিয়ের কথাবার্তা হওয়ার জন্যে এজায়গা উপযুক্ত। একটু থামল ও, তারপর কম্পিত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলল, আর হুমকির মুখে কাউকে বিয়ে করতে হলে তাকে ঘৃণা করা ছাড়া উপায় থাকবে না আমার।
কয়েকদিনের মধ্যেই তুমি ভুলে যাবে কেন আমাকে বিয়ে করেছিলে, গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল ডিলন। হাসল সন্তুষ্টির হাসি। ভাল লাগবে তোমার।
আমি তোমাকে এতটাই ব্যস্ত রাখব যে মাথা থেকে আর সব চিন্তা উবে যাবে।
ভদ্রভাবে নোংরা কথা বলছে ডিলন। গালে রক্ত জমল শার্লির। অপরাধবোধ জাগল শার্লির মনে। নিজেকে কলঙ্কিতা মনে হলো। এত অসহায় ও! নিজের ওপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে! ক্লিন্টকে ভালবাসে, অথচ বিয়ে করতে হবে সামনে দাড়ানো এই সুপুরুষ অমানুষকে। কান্না পেল শার্লির। কোনমতে চেপে রাখল চোখের জল।
ডসন টিকে থাকার সুযোগ পাবে কিনা সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে, আবার বলল ডিলন। এখন যদি ডসনের সঙ্গে দেখা করে ওর প্রতি সহানুভূতিশীল হও, এত দ্রুত ওকে আমি তাড়াব যে মন্ট্যানার এই অংশে কোথাও থামার সাহস পাবে না সে। শার্লির চোখের গভীরে দৃষ্টি রাখল র্যাঞ্চার। অবশ্য ডসন যদি বাঁচে তবেই থামার প্রশ্ন। সম্ভবত বাঁচবে না ও। কিন্তু তুমি যদি এখন শহরে ফিরে ওয়েডিঙের প্রস্তুতি নাও, ডসনকে কিছু বলব না। আমার ধারণা নিজের অক্ষমতা বুঝতে পেরে কিছুদিনের মাথায় নিজেই চলে যাবে ও এখান থেকে।
কথা বলার প্রতিটি মুহূর্ত চিন্তা করে চলেছে ডিলন, কিভাবে নিজের ওপর দায় না ফেলে ক্লিন্টকে সরিয়ে দেবে জগৎ থেকে। ট্রিপল বার দখল করা ঠিক কতটা প্রয়োজন তা শার্লি কখনও ভাবতেও পারবে না। শার্লিকে এখন যে-কথাই দেয়া হোক না কেন তার আসলে কোন মূল্য নেই। ক্লিন্টের প্রতি শার্লির আগ্রহের। মাত্রা দেখে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চিত করতে হবে ট্রিপল বার দখল, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে ক্লিন্টের অকাল মৃত্যু।
ঠোঁট কামড়ে রেখেছে শার্লি। মনের মাঝে চিন্তার ঝড় উঠছে ওর। হতাশ। লাগছে ভাবতেই যে ডিলন ওকে এক হপ্তার সময় বেঁধে দিয়েছে। এরমধ্যে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। এখন যদি ও ক্লিন্টের কাছে। যায়? কোন সুযোগ পাবে না ক্লিন্ট। ক্লিন্টকে স্রেফ পিষে মেরে ফেলবে ডিলন। কিন্তু এক হপ্তা কম সময় নয়। এরমধ্যে হয়তো এমন কিছু ঘটবে যে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। ক্লিন্টের দুই সঙ্গীর কথা মনে এলো ওর। ওরা কঠোর, যোগ্য, বিশ্বাসভাজন লোক। এক হপ্তা সময় পেলে ওদের সহযোগিতায় ক্লিন্ট হয়তো কিছু করতে পারবে। হয়তো ব্যাঙ্ক ডাকাত ধরা পড়বে, বা আরও কত কিছুই তো হতে পারে। স্যাডলে সোজা হয়ে বসল শার্লি, ডিলনের চোখের দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে মাথা দোলাল। ঠিক আছে, এখন শহরে ফিরে যাচ্ছি আমি।
ঠোঁট প্রসারিত হলো নিঃশব্দে। হাসল ডিলন। অনুভব করল রাগটা চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। সুদর্শন চেহারা থেকে মেঘ কেটে গেল। শালির ঘোড়ার রাশ ছেড়ে দিল সে। নিজের ঘোড়াটা সরিয়ে নিল যাতে শার্লি মেয়ারটাকে ফিরিয়ে নিয়ে শহরের দিকে যেতে পারে। শান্ত গলায় বলল, এই তত বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছ, শার্লি। বেশিদিন লাগবে না, আমার সঙ্গে মানিয়ে চলা শিখে যাবে তুমি।
ওকে যেতে দিচ্ছে সেই স্বস্তিতে হাসল শার্লি। ডিলন ধরে নিল মেয়েটা সায় দিয়ে হাসছে।
শার্লি ঘোড়া ফিরিয়ে নিয়ে শহরে ফিরে চলল। পেছন থেকে তাকিয়ে আছে ডিলন। মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে। শার্লির যৌবন পরিপূর্ণ শরীর যতক্ষণ দেখা গেল দেখল ডিলন। মেয়েটা অনেক দূরে ধুলোর আড়ালে চলে যাবার পরও কিছুক্ষণ নড়ল না, ভাবল আরামদায়ক বিছানা আর আনন্দ বিলাসের কথা।
<