টুইন স্প্রিংসের স্টেবলে ঘোড়াটা রেখে ক্যাসিনো সেলুনের কাছে চলে এলো ব্যাগলে। গাঢ় ছায়া দেখে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিরক্ত হয়ে উঠল। উঁকি দিল ক্যাসিনোর ব্যাট উইং ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে।
ওর কপালটা ভাল। ডিলনকে দেখতে পেল ও। পাঞ্চারদের সঙ্গে কথা সেরে ভেতর-দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে ডিলন। ওদিকে ক্যাসিনো সেলুনের হোটেল সেকশন।
সরে এলো, ব্যাগলে, রাস্তার উল্টোদিকে ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াল। আধঘণ্টা পেরিয়ে গেল অতি ধীরে। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন পাঞ্চার সেলুনে ঢুকেছে এবং বের হয়েছে, কিন্তু ডিলনের কোন দেখা নেই। নরম বিছানায় গরম কম্বল মুড়ি দিয়ে আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছে ডিলন, ভাবল ব্যাগলে। হঠাৎ করে মনে হলো অনেকদিন ভাল ঘুম হচ্ছে না ওর। একটু ঘুমিয়ে নিলে বেনন নিশ্চয়ই রাগ করবে না? বেনন তো আর চাইবে না ঘুমের অভাবে পাগল হয়ে যাক ও!
কাজেই সেথ হারবেনের হোটেলে একটা কামরা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পনেরো মিনিটের বেশি সময় নিল না ব্যাগলে।
পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙল ওর। মনের মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কুরকুর করতে লাগল। তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে নিয়ে হারবেনের দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়াল ও। সামনেই সদর রাস্তা। তেমন ভাবে লোক চলাচল শুরু হয়নি এখনও। এই মাত্র ছেড়ে গেল রলিন্সের স্টেজকোর্চ। রাস্তার বাঁক ঘুরল ভারী একটা স্কুনার, হার্ডওয়্যার স্টোরের সামনে থামল। নেমে এলো ড্রাইভার, দমাদম পেটাচ্ছে দোকানের বন্ধ দরজা। একটু পর দোকানের দরজা খুলে গেল। চোখ কচলাতে কচলাতে বউনিতে ব্যস্ত হয়ে গেল দোকানদার। ক্যাসিনো সেলুন থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এলো কয়েকজন পাঞ্চার। হিচরেইল থেকে ঘোড়ার দড়ি। খুলল তারা, ধীর গতিতে চলল রলিন্সের পথে। পাঞ্চারদের চেহারা দেখে ব্যাগলে বুঝল, রলিন্সের পথে অর্ধেক যাওয়ার আগে নেশা কাটবে না লোকগুলোর। বেশ কয়েকজন ঢুকল চাইনিজ চপ হাউজে। পশ্চিমের শহরে সকালবেলায় এগুলো স্বাভাবিক দৃশ্য। আয়েস করে দরজার পাল্লায় ঠেস দিয়ে দাঁড়াল:ব্যাগলে, একটা গি ধরল।
একটু পর সেথ হারবেনন এলো। নাগলের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে খানিক পর ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেল। ব্যাগলের মনে শান্তি নেই। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বারবার বেননের চেহারা চোখে ভাসছে! সহজ একটা দায়ত্ব দিয়ে। গিয়েছিল বেনন। ব্যর্থ হতে হলে খুবই লজ্জার কথা।
আরও দু’ঘণ্টা পর ব্যাগলের মনের মেঘ কাটল। আফসোস হলো হারবেশের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারেনি বলে। ওই তো দেখা যাচ্ছে ডিলনকে! ক্যাসিনো সেলুনের দরজা ঠেলে এই মাত্র বোর্ডওয়াকে এসে দাঁড়িয়েছে লোকটা। ধীরেসুস্থে একটা সিগার ধরাল।
দরজার কিছুটা ভেতরে সরে এলো ব্যাগলে। এখন ডিলন ওকে খেতে পাবে, কিন্তু ও ঠিকই ডিলনকে দেখতে পারবে।
ভাল জায়গা বেছেছে ব্যাগলে। জরুরী কিছু ওর নজর এড়াচ্ছে না। উল্টোপাশের বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে আসছে শার্লি রাশল্যান্ড। ডিলনকে দেখে চলার গতি একটু কমে গেল। ক্ষণিকের জন্যে চেহারায় ছায়া ফেলল অপছন্দের ছাপ। পাশের একটা দোকানে চট করে ঢুকে গেল মেয়েটা। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করল ডিলন, তারপর রাস্তা পার হয়ে সে-ও দোকানে ঢুকল। একটু পরই বেরিয়ে এলো শার্লি। তার পাশে আঠার মতো লেগে আছে ডিন। এক হাতে মেয়েটার কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে। শার্লির আচরণে একটা আড়ষ্ট ভাব আছে, নজর এড়াল না ব্যাগলের। তবে অনুভূতি গোপন করতে চেষ্টা করছে মেয়েটা।
সিগারেটে কষে টান দিল ব্যাগলে। মনটা হঠাৎ করেই খুব ভাল হয়ে গেল। একটা ব্যাপারে ক্লিন্ট ভুল করেছে। এই মেয়ে ডিলনের প্রেমে পড়েনি। ক্লিন্টকে যদি ফিরিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে তার অন্য কোন কারণ আছে।
ক্যাসিনো থেকে বেরিয়ে এসেছে একজন কাউবয়। তাকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ছাড়ল ডিলন, কেগলকে বলো সবাইকে নিয়ে বার কিউতে যাবার জন্যে যেন তৈরি হয়ে যায়।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিল ব্যাগলে। দেখল হতাশ ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাচ্ছে কাউবয়। বলল, রাতে ক্যাসিনোয় ফেরেনি কেগল।
পুরো একমিনিট পাঞ্চারের দিকে তাকিয়ে থাকল ডিলন, তারপর শার্লিকে বিড়বিড় করে কি যেন বলল। দেরি না করে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে এলো বোর্ডওয়াক থেকে। গলা চড়িয়ে নির্দেশ দিল, মাগো, সবাইকে স্যাড়লে উঠতে বলো। আমরা এক্ষুণি শহর ছাড়ব।
ক্যাসিনো সেলুনে ঢুকে গেল পাঞ্চার। ডিলন চলল জেলখানার দিকে। তড়িঘড়ি করে রাস্তা পার হলো শার্লি, তারপর তালা খুলে ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ল।
ডিলন জেলখানায় ঢোকার পর হারবেনের হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রায় দৌড়ে ব্যাঙ্কে চলে এলো ব্যাগলে। ওর কপাল ভাল ডিলনের কোন লোকের চোখে পড়ল। দরজা সামান্য ফাঁক করে ভেতরে ঢুকল ব্যাগলে, পেছন ফিরে বন্টু আটকে দিল।
মিস শার্লি রাশল্যান্ড মাত্র ডেস্কের পেছনে বসেছে এমন সময়ে ব্যাগলেকে চোরের মতো আচরণ করতে দেখল ও। ঠোঁটের ওপর একটা আঙুল তুলে। আওয়াজ করতে নিষেধ করছে ব্যাগলে। একটা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ওর পিঠের দিকে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকাল শার্লি, তারপর কৌতূহলী হয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াল। দেখল ডিলন সামনের বোর্ডওয়াক দিয়ে ঝড়ের গতিতে ব্যাঙ্কটাকে পাশ কাটাচ্ছে। আঁধার হয়ে আছে চেহারা। র্যাঞ্চার পার হয়ে যাবার পর হাসল ব্যাগলে, চলে এলো অফিসের মাঝখানে।
ব্যাপারটা কি! একহাতে সোনালী চুলের খোঁপা ঠিক করতে করতে জিজ্ঞেস করল শার্লি। ব্যাগলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে।
শার্লির ডেস্কের এক কোনায় বসল ব্যাগলে। কোমল দৃষ্টিতে মেয়েটাকে দেখল। সহজ গলায় বলল, আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। শার্লির বড় বড় নীল চোখ দুটো ব্যাগলের মুখে স্থির। মাথা দোলাল মেয়েটা। শুনতে চায় ব্যাগলের কথা। ক্লিন্ট যদি তার র্যাঞ্চ ফিরে পায় তাহলে ডিলনকে বিয়ে করবে তুমি? ধরো ক্লিন্টকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। তাহলে?
বিস্মিত হলো শার্লি, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করায় বিরক্তও হলো। মুখে লাল ছোপ পড়ল। রাগ লাগছে। কিন্তু ব্যাগলের চেহারা অত্যন্ত আন্তরিক। শেষ পর্যন্ত মৃদু গলায় বলল শার্লি, ডিলনকে বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছি আমি।
আমিও তাই ভেবেছিলাম, নরম সুরে বলল ব্যাগলে। এখানে থাকলে যদি ডিলনকে মেরে ফেলতে বাধ্য হয় সেজন্যে ক্লিন্ট চলে যাবে ঠিক করেছে। ওর মনে হয়েছে ডিলনকে ভালবেসে বিয়ে করছ তুমি।
চোখ নামিয়ে নিল শার্লি। ফিসফিস করে বলল, ও ভাবুক আমি ডিলনকে ভালবাসি। ওকে সত্যি কথাটা জানিয়ো না। দূরে কোথাও চলে গেলে প্রাণে তো। বাঁচবে।
মেয়েটাকে গভীর মনোযোগে লক্ষ করল বাগলে। এই তাহলে ব্যাপার! নিজের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলবে শার্লি, তিলে তিলে সহ্য করবে আত্মবঞ্চনা, তবু ভালবাসার মানুষের ক্ষতি হতে দেবে না? হঠাৎ করে মেয়েদের প্রতি ওর সমস্ত জমাট ক্ষোভ দূর হয়ে গেল। মনে হলো ওর বউ আসলে মানুষ হিসেবে ওর চেয়ে অনেক ভাল। বাচ্চাগুলো যদিও অমানুষ, তবু।
শার্লির দিকে তাকাল ব্যাগলে। বলল, জারম্যান আর কেগল রাসলিং করে একটা উপত্যকায় গরু, জড় করেছে। হাজারখানেক হবে। আজকে ওখানে যাচ্ছে। ওরা গরু সরিয়ে নিয়ে বেচে দেবে বলে। ওদের পিছু নিয়েছে ক্লিন্ট আর বেনন। ক্লিন্ট বেননের সঙ্গে যাচ্ছে কারণ বেনন ওর সাহায্য চেয়েছে। কাজ শেষে চলে যাবে ও নিজের পথে। থামল ব্যাগলে। বাইরে অনেকগুলো ছুটন্ত ঘোড়ার আওয়াজ। সদলবলে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে ডিলন। বেশ তাড়া আছে তার। দ্রুত ছুটছে ঘোড়াগুলো। ওই যে ডিলন গেল, আওয়াজ দূরে চলে যেতে বলল ব্যাগলে। কেগলের পিছু নেয়ার নিজস্ব কারণ আছে ডিলনের। ভ্রু কুঁচকে গেল ওর। বেনন আর ক্লিন্ট দুটো দলের মাঝখানে পড়ে যাবে।
কথাটা শুনে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল শার্লির। কল্পনায় দেখতে পেল দুই দলের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে গেছে ক্লিন্ট। আহত হয়েছে। মারা যাচ্ছে। কেউ নেই ওকে সাহায্য করার। ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল শার্লি।
আমার মনে হয় প্রথম সুযোগেই তোমার উচিত ক্লিন্টকে মনের কথাটা জানানো। তাতে আর কিছু না হোক, দুটো জীবন হয়তো নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচবে। ডিলনের মুখোমুখি দাঁড়াক না ক্লিন্ট। যদি মরেও যায় আফসোস থাকবে ওর। জেনে যেতে পারবে ওকে ভালবাসার মানুষ আছে। এখন ক্লিন্ট যদি চলে যায়, বাকি জীবন নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াবে ও।
চুপ করে ভাবছে শার্লি। জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকাল ব্যাগলে। ডিলনের লোকরা কেউ শহরে নেই বলে মনে হচ্ছে। দরজার দিকে পা বাড়াল ও।
কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল মেয়েটা।
ডিলনের পিছু নেব, দরজার বল্ট খুলতে খুলতে বলল ব্যাগলে।
এগিয়ে এলো শার্লি। চেহারায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আমিও তোমার সঙ্গে যাব।
এসো, এক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলল ব্যাগলে। বুঝতে পেরেছে মেয়েটাকে মানা করলেও শুনবে না। যেতে চাইছে চলুক না। ওর মন বলছে শার্লির কোন ক্ষতি হবে না। দরজা খুলে একপাশে সরে শার্লিকে বেরোবার পথ করে দিল ব্যাগলে।
একটু পরই শহর ছাড়ল ওরা।
আহত ক্লিন্ট আর চোখ ট্যাড়া হরিবলকে নিয়ে বিধ্বস্ত বার কিউ হেডকোয়ার্টার ছাড়ল বেনন। একটু পরই পুবাকাশে উঁকি দিল সূর্য। কুয়াশার পর্দা ছিঁড়ে নিজেকে জাহির করতে আরও অনেক সময় নেবে ওটা।
স্যাডল পমেল খামচে ধরে ঘোড়ার পিঠে কোন রকমে টিকে আছে ক্লিন্ট। বেনন ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়ার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে বেশ সময় লেগেছে তার। রক্তশূন্য ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে চেহারা। মুখটা কুঁচকে আছে ব্যথায়। চোখে ঝাঁপসা দেখছে। জিম হরিবলও মুখ বিকৃত করে রেখেছে। মাথার ফোলাটা টিশ-টিশ করছে তার।
ক্লিন্টকে নজরে রেখেছে বেনন। মাঝে মাঝেই পাশে চলে আসছে। নীরব সাহচার্যে মনোবল বাড়িয়ে দিতে চাইছে। ভদ্রতা করে হাসছে ক্লিন্ট।
পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগবে ক্লিন্টের। ব্যথা না পেয়ে ঘোড়ায় চড়তে লেগে যাবে মাস খানেকের বেশি। ঘোড়ার গতি কমিয়ে রেখেছে বেনন। অধৈর্য হয়ে উঠছে মনে মনে। কেগলের পিছু ধাওয়া করার বদলে ক্লিন্টকে শহরে পৌঁছে। দেয়াই ওর প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মুহূর্তে দূরে চলে যাচ্ছে কেগল। নিজেকে সান্ত্বনা দিল, শেষ পর্যন্ত দেখা কেগলের সঙ্গে হবেই।
দীর্ঘ ক্যানিয়ন পার হয়ে শহরের ট্রেইলে পড়ল ওরা। খাড়া একটা ড্রয়ের ওপর উঠতেই দেখতে পেল মাইল খানেক দূরে নিচু জমিতে ধুলোর ঝড় তুলে বার কিউয়ের দিকে আসছে একদল অশ্বারোহী। চট করে ক্লিন্টের ঘোড়ার রাশ ধরে দাঁড় করিয়ে ফেলল বেনন, পিছিয়ে এলো, চড়া গলায় জিমকে নির্দেশ দিল পিছু নেয়ার। ট্রেইলের ধারে লুকোনোর অনেক জায়গা আছে। একধারে একটু উঁচু জমিতে জন্মেছে এক ঝাড় জুনিপার গাছ। গাছের জটলার পেছনে আশ্রয় নিল। ওরা।
একটু পরেই কানে এলো ঘোড়ার খুরের শব্দ। প্রায় বিশজন রাইডার ঝড়ের বেগে ছুটে এলো। ডালপালার ফাঁকফোকর দিয়ে দেখল বেনন, ট্রেইল ধরে সবার আগে ছুটছে ডিলন। সামনের ট্রেইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। শরীরটা টানটান। মুখে দৃঢ় সিদ্ধান্তের ছাপ।
ধুলোর আড়ালে পড়ে গেল অশ্বারোহী দল। ক্যানিয়নে ঢুকে যাওয়ায় তাদের আর দেখা গেল না। দূরে চলে যাচ্ছে খুরের শব্দ। ক্যানিয়নের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। একটু পরই আর কোন আওয়াজ থাকল না। হাসল বেনন। কল্পনায় দেখতে পেল পোড়া র্যাঞ্চ হাউজ দেখে ডিলনের চেহারাটা কেমন হবে। ক্লিন্ট আর জিম হরিবলকে নিয়ে বেরিয়ে এলো ও গাছের পেছন থেকে, লম্বা ড্র ধরে শহরের দিকে চলল।
সূর্যের তাপ বেড়ে গেছে। স্যাডলে কুঁজো হয়ে বসে আছে ক্লিন্ট, দু’চোখ। বন্ধ। ব্যথা আরও বাড়ছে। বেননের সন্দেহ হলো ক্লিন্ট শহর পর্যন্ত টিকবে না। ভাবল জিমকে ডাক্তার আর ওয়্যাগনের জন্যে শহরে পাঠাবে কিনা। কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারল না। ডিলনের কোন লোক যদি শহরে থাকে তাহলে বেফাস কথা বলে বিপদে পড়তে পারে জিম। ওদের জন্যেও বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। সামনে একটা বাঁক। বাকটা ঘুরতেই শিসের আওয়াজ পেল ও। সুরটা ব্যাগলের প্রিয়। চারপাশে তাকাল বিস্মিত বেনন। ট্রেইলের পাশে একটা টিলার কাঁধে ব্যাগলেকে দেখতে পেল। ওর মনে হলো ঈশ্বর প্রেরিত হয়ে এখানে এসেছে ব্যাগলে। ব্যাগলের পেছনে আরেকটা ঘোড়ায় কে যেন: আসছে। ওর বিস্ময় আরও বাড়ল শার্লি রাশল্যান্ডকে চিনতে পেরে।
ব্যাগলেও বেননের দলটাকে দেখতে পেয়েছে। ঘোড়া থামিয়ে ফেলল সে। তারপর দ্রুত বেগে টিলা থেকে নেমে বেননের সামনে এসে থামল। দু’একটা কথা হলো ওদের মাঝে। ইতিমধ্যে ক্লিন্টের পাশে চলে এসেছে শার্লি। বেনন আর ব্যাগলে লক্ষ করল, গভীর মমতা নিয়ে ক্লিন্টের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে শার্লি, মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করছে আঘাতটা কতখানি গুরুতর।
ক্লিন্ট! ক্লিন্ট! অস্থির চেহারায় বিড়বিড় করল শার্লি। গুলি লেগেছে? কষ্ট হচ্ছে খুব?
চোখ খুলল ক্লিন্ট। হাসার চেষ্টা করল। কষ্ট হচ্ছে সামান্য। ডাক্তার দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে।
চোখে নীরব-কাকুতি নিয়ে বেননের দিকে তাকাল আতঙ্কিত শার্লি।
শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখালেই ঠিক হয়ে যাবে, ক্লিন্টের কথাই পুনরাবৃত্তি করল বেনন। ওকে সেথ হারবেনের হোটেলে বিশ্রামে থাকতে হবে কয়েকদিন, ব্যস। শেষ কথাটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বলেছে বেনন। শার্লি ফুঁসে ওঠায় নির্মল হাসল বেনন।
কী! সেথ হারবেনের ওই জঘন্য হোটেলে থাকবে ক্লিন্ট? ওখানে তো ওর কোন যত্নই হবে না! ওকে আমি বাসায় নিয়ে যাব। তাতে এটুকু অন্তত নিশ্চিত হওয়া যাবে যে কেউ ওর সেবা শুশ্রূষা করছে।
ব্যথায় ভোতা হয়ে আছে ক্লিন্টের বুদ্ধি, একটু দেরিতে হলেও শার্লির কথার মানে বুঝতে পারল। একচিলতে তৃপ্তির হাসি দেখা দিল ওর ঠোঁটে। স্যাডল পমেলটা আরও জোরে চেপে ধরল। মনে হলো জ্ঞান হারাবে ও যেকোন সময়ে, তবুও বুকের মাঝে অনুভব করল আশ্চর্য প্রশান্তি।
শার্লির দিকে তাকিয়ে বলল বেনন, তাহলে শহরে ফিরে যাও তোমরা। এদিকে আমাদের কাজ পড়ে আছে তাই সঙ্গে যাচ্ছি না। চিন্তিত চেহারায় জিম হরিবলকে দেখল ও। লোকটাকে আগের চেয়ে সুস্থ দেখাচ্ছে। বলল, ট্রিপল বারে যদি সত্যি কাজ করতে চাও তো এখন থেকেই শুরু করে দিতে পারো। শহরে। গিয়ে ডাক্তারকে একটা খবর দাও, বলো ওয়াগন নিয়ে আসতে। ক্লিন্ট যদি শহরে পৌঁছুনোর আগে জ্ঞান হারায় তাহলে ওয়্যাগটা কাজে আসবে।
এক্ষুণি যাচ্ছি আমি। দেরি না করে ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে গেল লোকটা শহরের ট্রেইলে।
কৃতজ্ঞ চোখে বেনন আর ব্যাগলেকে দেখল শার্লি। তারপর ক্লিন্টের ঘোড়ার রাশ ধরে জিম হরিবলের পেছনে এগোল।
পেছন থেকে ব্যাগলে বলল, দুশ্চিন্তা কোরো না, ম্যাম। আমরা যদি বেঁচে থাকি তাহলে কোন বিপদ ছুঁতে পারবে না তোমাদের।
অনেক ধন্যবাদ তোমাদের, গ্রীবা ফেরাল শার্লি। দু’চোখে পানি টলটল করছে ওর। বলল, সাবধানে থেকো তোমরা।
থাকব, কথা দিল ব্যাগলে। বেনন আর ব্যাগলে তাকিয়ে থাকল, একটু পরেই একটা বাঁক ঘুরে চোখের আড়ালে চলে গেল মেয়েটা।
শহর পর্যন্ত টিকতে পারবে ক্লিন্ট?
পারবে। একটা সিগার ধরাল বেনন। ব্যাগলেকে পকেট হাতড়াতে দেখে ম্যাচটা বাড়িয়ে দিল। তবে শক্তি বলতে শরীরে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। আঘাতটা কাঁধে, মারা যাবার মতো নয়। কিন্তু অনেক রক্ত হারিয়েছে বেচারা।
একটা সমস্যার সমাধান হলো, সিগারেট ধরিয়ে বলল ব্যাগলে। মেয়েটাকে কে পাবে সেটা স্থির হয়ে গেল।
মাথা দুলিয়ে সায় দিল বেনন। ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে নিতে নিতে বলল, তা হয়েছে। এবার চলো নিজেদের কাজে যাই। ট্রেইলের শেষে কি আছে জানতে জীবন দিতেও আপত্তি নেই আমার।
আমারও নেই। বেননের পাশে পাশে ঘোড়া ছোটাল ব্যাগলে।
যেতে যেতে বেনন ওকে বলল রাতে কেগলের পিছু নিয়ে বার কিউতে যাওয়ার পর কি ঘটেছে।
আমরা যা ভেবেছিলাম তাই, সব শুনে মন্তব্য করল ব্যাগলে।
কিন্তু একটা ব্যাপার এখনও পরিষ্কার নয়, বলল বেনন? ট্রিপল বার দখল করার জন্যে ডিলন এত ব্যগ্র হয়ে উঠেছে কেন?
কাঁধ ঝাঁকাল ব্যাগলে। কে জানে কেন! তবে ডিলনের খেল্ খতম। ব্যাঙ্কার আর ক্রিসির খুনের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে ওকে।
বেড়ালের গলায় ঘন্টি বাঁধবে কে? ডিলন গানম্যানের দল সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে।
জবাব দিল না ব্যাগলে। বেননও নিজে থেকে কিছু বলল না। দু’জন ওরা দু’জনকে চেনে। প্রয়োজনে সমস্ত বিপদ উপেক্ষা করে ডিলনকে আক্রমণ করার সাহস আছে ওদের। ওরা জানে একটু ভুল হলেই মারা পড়তে হবে বেঘোরে, কিন্তু সেজন্যে ওরা ভীত নয়। ট্রেইলে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা, ভঙ্গি দেখে মনে হতে পারে ট্রেইলের শেষে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে পিকনিক পার্টি। ওরা বিশেষ
অতিথি। ওরা না গেলে খাওয়াদাওয়া আরম্ভ হবে না।
ক্যানিয়নে ঢুকে সূর্যের আলোর হাত থেকে বাঁচল ওরা। কিন্তু একটু পরেই ক্যানিয়ন বাঁক নিয়ে সরু হয়ে গেল, দু’পাশের পাথর সূর্যের আলো পড়ে উত্তপ্ত হয়ে আছে, ভাপ ছাড়ছে রীতিমতো। ওদের মনে হলো খোলা জায়গায় সূর্যের তাপেই ওরা ভাল ছিল। খোলা জায়গায় অন্তত বাতাস আছে। মাঝে মাঝে বাতাস বইলে তাপ কমে যায় কিছুক্ষণের জন্যে।
ক্যানিয়ন থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে চলল ওরা। রাতে ওদিকে গেছে কোলের সঙ্গীরা। পরে কেগলও গেছে। ওদিকের একটা উপত্যকায় আছে চোরাই গরুগুলো। পোড়া র্যাঞ্চ হাউজ আর ফাঁকা সিন্দুক দেখে ডিলনও ওদিকেই যাবে।
সামনে মাথা তুলেছে একসারি নিচু টিলা, ওগুলো পার হয়ে কিছুদূর পর্যন্ত ঘাসে ছাওয়া জমি, তারপর নীল টলটলে জলের নদী। অগভীর একটা শাখা নদী আছে ওখানে। ওটাও ট্রিপল বারের ভেতর দিয়েই বয়ে যাচ্ছে। জল তাতে অল্পই। ট্রিপল বারের অনেক গভীরে ঢুকেছে শাখা নদীটা, তারপর বয়ে গেছে উত্তর-পুব দিকের টিলাসারির দিকে। ওদিকের টিলাগুলো টুইন স্প্রিংসের গায়ের ওপর ঝুঁকে আছে।
বার কিউয়ের পানির অভাব নেই। চমৎকার তাজা ঘাসে ভরা অফুরন্ত জমি। আপন মনে মাথা নাড়ল ব্যাগলে। পানির অভাবে ট্রিপল বার দখল করতে চাইছে ডিলন, বোধহয় অতি লোভ। পুরো এলাকার অধিকার চায়।
এখন যেদিকে যাচ্ছে বেনন আর ব্যাগলে, তাতে দুর্গম সেই উপত্যকায় পৌঁছোতে দিক বদল করতে হবে না। ডিলন বার কিউয়ের দিকে গেছে। ওখান থেকে কোলের ট্র্যাক ধরে উপত্যকায় পৌঁছে যাবে সে ঠিকই। তার আগেই ওখানে যেতে চাইছে বেনন।
নদীর পাড়ে থামল ওরা, ঘোড়াগুলোকে তৃষ্ণা মেটাতে দিল। শহর ছাড়ার আগে শার্লি কিছু খাবার সঙ্গে নিয়েছিল, সেগুলো ভাগ করে খেল। ঘোড়াগুলো ততক্ষণ তাজা ঘাসে মুখ ডুবিয়ে রাখল। এটুকু দেরি কোন সমস্যা করবে না। ডিলন যত তাড়াহুড়োই করুক, অন্তত দেড় ঘণ্টার পথ এগিয়ে আছে বেনন।
খাওয়া সেরে আধঘণ্টা বিশ্রাম নিল ওরা, শুয়ে থাকল নদীর পাড়ে। তৈরি হয়ে নিল। তারপর এগোল আবার। এখন দুজনের দেহে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই।
<