ঘুম ভাঙল ব্যাগলের। আবছা ভাবে মনে হলো একটু আগেও এই ঘরে কেউ একজন ছিল। জানালা দিয়ে এখনও সূর্যের আলো আসছে। বাঁকা রশি দেখে আন্দাজ করল ব্যাগলে, দু’ঘণ্টার বেশি ঘুমায়নি ও। কেউ একজন এসেছিল। তাতে কি? আবার ঘুমিয়ে পড়তে চাইল ব্যাগলে। তারপর মনে পড়ল চেয়ারের ওপর ফেলে রাখা স্নিকারের পকেটে আছে ডিলনের কাছ থেকে নিয়ে আসা ঋণপত্রের নকল। বেনন বলেছিল ডিলনের লোক এখানে থাকলে জানা যাবে।
লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ল ও, স্নিকারের পকেট খুঁজে দেখল। কাগজটা নেই! ব্যাগলের ইচ্ছে হলো কাপড় পরে ছুটে বেরিয়ে যায় বাঙ্ক হাউজ থেকে, জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চেষ্টা করে কে নিয়েছে কাগজটা। কিন্তু কিছুই করল না। বিছানার ধারে বসে সিগারেট ধরাল একটা। দ্বিতীয় সিগারেট প্রায় মাঝামাঝি শেষ করে এনেছে এমন সময়ে উঠানে শুনতে পেল ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। দ্রুত পায়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল ব্যাগলে।দেখল হালকা ধূসর একটা মেয়ারে চড়ে বাইরে যাচ্ছে ডায়ার।
সিগারেট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল ব্যাগলে। আরাম করে শুলো। ভাবতে চেষ্টা করল ডায়ার কেন বিশ্বাসঘাতকতা করবে। হাসল আপনমনে। বেনন আর ও ভাল বুদ্ধি করেছিল! ঋণের দলিলের বদলে একই সমান একটা কাগজে যাবতীয় গালাগাল লিখে সুন্দর করে ভাঁজ করে রেখেছিল ও স্নিকারের পকেটে। সেটা ডায়ার নিয়ে গেছে। যাক। গালাগাল খেয়ে মাথা থেকে ভূত পালাবে লোকটার। ঠিক দু’ঘণ্টা পর পরিপূর্ণ বিশ্রাম শেষে র্যাঞ্চ হাউজে এসে ঢুকল ব্যাগলে, চলে এলো কিচেনে। জনি সিং রান্না করছে। আগুনে চাপানো পটে ফুটছে গরম কফি। ওকে দেখে একটা মগে কফি ঢেলে এগিয়ে দিল চাইনিজ কুক।
চুমুক দিল ব্যাগলে। কৃতজ্ঞ হয়ে বলল, কফিটা ভাল হয়েছে। …একটা প্যাকেটে রাতের খাবার দিয়ে দাও। বাইরে যাচ্ছি। ফিরতে দেরি হতে পারে।
লম্বা ডান্ডিওয়ালা চামচ দিয়ে একটা সাইডবোর্ড দেখিয়ে দিল কূক। ওখানে আগেই গোটা কয়েক প্যাকেটে খাবার রাখা আছে। দরকার মতো নিয়ে নাও, বলে রান্নায় আবার মনোযোগ দিল সে।
কফি শেষ করে খাবারের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে এলো ব্যাগলে। মাঠের ধারে একটা বেড়া মেরামত করছে ক্লিন্ট, স্টেসি আর ডেনভার। রাউন্ডআপের সময় একটা বুনো গরু বেড়ার ওই অংশ ছিঁড়ে ফেলেছিল। ওদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার কোন ইচ্ছে নেই ব্যাগলের, বার্নে চলে এলো ও, ডান গেল্ডিঙে স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে এলো উঠানে, তারপর ডায়ার যেদিকে গেছে সেদিকে চলল।
ডায়ারকে ট্র্যাক করতে কোন অসুবিধে হলো না। প্রথমে উত্তরে গেছে লোকটা, তারপর র্যাঞ্চ হাউজ থেকে দেখা যায় না এমন একটা জায়গায় এসে এগিয়েছে দক্ষিণে। সরাসরি বার কিউয়ের দিকে যাচ্ছে ট্র্যাক।
নিজের গতিতে ঘোড়াটাকে এগোতে দিল ব্যাগলে। কোন তাড়া নেই ওর। ডায়ারের ট্র্যাক বার কিউয়ের রেঞ্জে ঢোকার পর সরে গেল ও, এগোল টিলাগুলোর। দিকে। টিলার গায়ে ঘোড়া চলার মতো চওড়া জমি আছে। মাঝখান দিয়ে সরু সরু পথ। টিলারাজ্যের অনেক গভীরে যাওয়া যাবে ওসব পথ ধরে। ডিলনের রেঞ্জে প্রচুর টিলা আছে। ওগুলোর মাঝ দিয়ে অনেকদূর যাওয়ার পর ডিলনের রেঞ্জের গভীরে ঢুকে গেল ব্যাগলে। টিলার ফাঁকে ফাঁকে ঘাসজমি। অসংখ্য গরু চরছে। দূরে দেখা যায় একটা লাইন ক্যাম্প। ওখানে কাজ করছে কয়েকজন পাঞ্চার। দৃশ্যটা পরিষ্কার নয়। তাপ প্রবাহের কারণে কাঁপছে সামনের সব কিছু।
কিছুক্ষণ পর ঝিরঝিরে বাতাসের কারণে ঝাঁপসা ভাবটা ক্ষণিকের জন্যে দূর। হলো, পর্বতের গা ঘেঁষে একটা নদী দেখতে পেল ও। সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে পানি, সাতরঙা ঝিলিক মারছে বহুমূল্য হিরের মতো।
দিক নির্বাচন করে আবার এগোল ও। থামল বহুদূরে বার কিউয়ের র্যাঞ্চ হাউজ দেখতে পেয়ে। ছোট ছোট বাক্সের মতো লাগছে বিল্ডিংগুলোকে, মাঝখানে বড় আর উঁচু একটা বাক্স। ওটাই র্যাঞ্চ হাউজ।
ঘোড়া থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরাল ব্যাগলে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল র্যাঞ্চ হাউজের দিকে। প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো ওকে, তারপর, ছোট একটা বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো একটা ফোঁটা। নড়ছে ফোঁটাটা। ধুলো উড়ছে পেছনে। অশ্বারোহী আসছে। লোকটা কে হতে পারে আন্দাজ করতে পারল ব্যাগলে। ফিরতি পথ ধরল ও। আগের পথেই ফিরে চলেছে, কিন্তু খেয়াল রাখছে যাতে দূরবর্তী অশ্বারোহী কিছুতেই চোখের আড়াল না হয়।
বার কিউয়ের রেঞ্জ পেরনোর আগেই বাঁক নিল অশ্বারোহী। সামনে একদল গরু দক্ষিণে চলেছে, ওগুলোকে এড়াতে চায়। টিলার কাছে চলে এলো লোকটা। চেহারাটা চেনা গেল। শক্তপোক্ত, বিশ্বস্ত ডায়ার। পেছনে আনুগত্যের প্রমাণ রেখে ট্রিপল বারের দিকে ফিরছে লোকটা। ঘৃণায় ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল ব্যাগলের। ডায়ারকে অনুসরণ করতে গিয়েও থেমে গেল। দূরে, পুবে কয়েকজন পাঞ্চার পঞ্চাশটা মতো গরু তাড়িয়ে নিয়ে আসছে। খোলা জমি ছাড়িয়ে রুক্ষ জমিতে প্রবেশ করল ওরা। একটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি টিলার সামনে গরুগুলোকে ঘিরে ফেলল। আগুন জ্বালল কে যেন। ধোয়া দেখা গেল দূর থেকে।
কৌতূহল বোধ করল ব্যাগলে। কাছে যাওয়া দরকার। দেখা দরকার লোকগুলো কি করছে। চারপাশের জমি ভাল করে দেখে নিল। টিলার আড়ালে ওদের চারশো গজের মধ্যে পৌঁছুনো সম্ভব। তারপর ঘোড়া রেখে ঘাসের আড়ালে বুকে হেঁটে আরও কাছে যাওয়া যাবে।
লম্বা একটা গালি ধরে টিলার গোড়ায় নেমে এলো ব্যাগলে। ও যেখানে আছে তার চেয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি টিলার সামনের জমি বেশ উঁচুতে। হাঁটার গতিতে ঘোড়া নিয়ে এগোল ও। পাঞ্চারদের তিনশে গজ দূরে কাছের টিলাটা। ওটার পেছনে ঘোড়া থামিয়ে টিলার বাঁক ঘুরে ক্রল করে এগোতে শুরু করল ও ঘাসের ভেতর দিয়ে। একটু পর লক্ষ করল ঘাস এখানে যথেষ্ট লম্বা। হামাগুড়ি দিলেও কারও দেখার সম্ভাবনা নেই। হামাগুড়ি দিয়ে চলার গতি দ্রুত করল ব্যাগলে। প্রায় আধঘণ্টা পর পাঞ্চারদের পাশ কাটিয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি টিলার পেছনে চলে এলো। ওকে লোকগুলো দেখতে পাবে না বুঝতেই টিলা বেয়ে উঠতে শুরু করল। কিনারায় এসে উঁকি দিল নিচে।
ওরা পাঁচজন। তিনজন ব্যস্ত হয়ে দড়ি ছুঁড়ে বাছুর ধরছে, বাকি দু’জনের একজন আগুনে ব্র্যান্ডিং আয়রন গরম করছে, অপরজন ডিলনের বার কিউ ব্র্যান্ড কেটে দিয়ে ক্লিন্টের ট্রিপল বার ব্র্যান্ড বসাচ্ছে। ব্যাগলের চোখের সামনে নতুন ব্র্যান্ড করা একটা বাছুরকে ছেড়ে দিল পাঞ্চাররা। হাঁচড়াচড় করে উঠে দাঁড়াল গরুটা, গগনভেদী হাম্বা হাম্বা করতে করতে ফিরে চলল দলের কাছে। ওটার চামড়া থেকে এখনও ধোঁয়া বেরচ্ছে।
পরপর মোলোটা গরু নতুন করে ব্র্যান্ডিং করল পাঞ্চাররা। তারপর আগুনের পাশে বসে আয়রন গরম করছে যে লোকটা, সে বলল, আমার মনে হয় যথেষ্ট হয়েছে।
এতেই চলবে। সায় দিল আরেকজন।
অপেক্ষায় থাকল ব্যাগলে। একটু পরই গরুগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে ট্রিপল বারের দিকে রওনা হলো পাঞ্চাররা।
দৌড়ে টিলা থেকে নেমে এলো ব্যাগলে, ছুটল ঘোড়ার দিকে। পেছনে কেউ তাকাবে না কারণ গরু তাড়িয়ে নিতে লোকগুলো ব্যস্ত। স্যাডলে উঠে অনেক দূর থেকে পাঞ্চারদের অনুসরণ করল ব্যাগলে। দেখল ট্রিপল বারের রেঞ্জে গরুগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একটা ড্রাই ওয়াশে আরেকটা আগুন জ্বেলেছে বার কিউ কাউবয়রা।
কিছুক্ষণ পর তারা সবাই বার কিউয়ের দিকে ছুটল।
লোকগুলো বার কিউ রেঞ্জে ঢুকে চোখের আড়ালে চলে না যাওয়া পর্যন্ত টিলার ওপরের নিরাপদ আশ্রয় থেকে নড়ল না ব্যাগলে। পরিস্থিতি যখন নিরাপদ। মনে হলো, যেখানে কাউবয়রা আগুন জ্বেলেছিল, সেই টিলার গোড়ায় চলে এলো ও। এমন ভাবে ব্যাপারটা সাজানো হয়েছে যে কাঁচা লোকও বুঝবে এখানে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছিল। আগুনটা নিভে গেছে। পাশে পড়ে আছে ব্র্যান্ডিং আয়রন আর ব্লক।
ভ্রূ কুঁচকে জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল ব্যাগলে। ভাবল কি করবে। কেন কাউবয়রা একাজটা করেছে? ডিলনের কি সুবিধা ভাবতেই সমস্ত জবাব পেয়ে গেল ও। ধীরে ধীরে ঠোঁটে ফুটে উঠল চওড়া হাসি।
একঘণ্টা এক নাগাড়ে পরিশ্রম করল ব্যাগলে। কাজ শেষে ট্রিপল বারের পথ ধরল। চেহারা দেখে ওকে সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে। ট্রিপল বারের জমিতে এখন আর ব্র্যান্ডিঙের কোন চিহ্ন নেই। নতুন ব্র্যান্ড করা গরুগুলোও ট্রিপল বারে নেই, ওগুলো এখন বার কিউয়ের জমিতে চরছে।
অস্বস্তি লাগছে শার্লির। বুকের ভেতরে কাপ ধরিয়ে দিচ্ছে সঙ্গী গানম্যানের শীতল চাহনি। রক্ত জমে যেতে চাইছে। মনে হচ্ছে দেহ অবশ হয়ে যাবে। লোকটার তাকানোর মধ্যে নোগ্র কি একটা আছে। কেগল তাকালেই নিজেকে উলঙ্গ মনে হচ্ছে। চোখে রাগ নিয়ে বারকয়েক ও তাকানোর চেষ্টা করেছিল কেগলের চোখে, কিন্তু লাভ হয়নি। রাগটা খুব দ্রুত ভয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। কখন ও নিজেও জানে না, হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে ওর। তখন থেকে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, ভয়ের কোন কারণ নেই। কেগল এমন কিছু করবে না যাতে লিউ ডিলনের বিরাগভাজন হতে হয়। টুইন স্প্রিংসের ট্রেইলে পড়ার পর থেকেই মেয়ারটাকে। কেগলের ঘোড়ার কিছুটা সামনে রাখার চেষ্টা করছে শার্লি। আগে কেগল সামনে ছিল। তখন চেষ্টা করেও লোকটার ওপর থেকে চোখ সরাতে পারেনি ও। মনে, হলো কোল বুঝছে ভয় আর অসহায়ত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে ও। কিছুক্ষণ পর ধারণাটা শিকড় গাড়ল গভীরে। এভাবে চললে মনোবল বলতে কিছুই থাকবে না টের পেয়ে কেগলের ঠাণ্ডা দৃষ্টির সামনে ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে গেছে ও। এখন আর কেগলকে দেখতে হচ্ছে না এটা একটা বড় স্বস্তি।
সামনে সামনে যাচ্ছে শার্লি। বুঝতে পারল না ওর দেহে সেঁটে আছে কেগলের আঠালো দৃষ্টি।
মেয়েমানুষ কখনোই তেমন একটা আকর্ষণ করেনি কেগলকে। শার্লির দিকে তাকাল কেগল। মেয়েমানুষ যতটা ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে সে-তুলনায় দিতে পারে অতি সামান্য। কোন কারণ না থাকলে শার্লির দিকে দ্বিতীয়বার তাকাত না ও। কিন্তু মেয়েটার আড়ষ্ট ভঙ্গি অত্যন্ত অপমানকর। চাহনি দিয়ে মেয়েটা বুঝিয়ে দিয়েছে কেগল তার সমাজের উপযুক্ত নয়। সামান্য একজন গানম্যান কেগল! ভাবনাটা যতই কেগল তাড়াতে চেষ্টা করল ভাবনার মূল মগজে গেড়ে বসল ততই। শেষে তীব্র রাগে শরীর জ্বলতে লাগল ওর। মনে হলো মেয়েটাকে শিক্ষা। দিতে হবে। এমন শিক্ষা যাতে কোনদিন আর কাউকে ছোট নজরে দেখতে না। পারে। মিস রাশল্যান্ডের গর্ব মাটিতে মিশিয়ে দিতে না পারলে স্বস্তি পাবে না ও।
কাঁদবে মেয়েটা, অনুনয় করবে, ক্ষমা চাইবে, বললে এমনকি হামাগুড়ি দেবে সামনে। মান-সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না।
গভীর মনোযোগে শার্লির ভরাট যৌবন লক্ষ করল কেগল। জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল। হাসি এসে যাচ্ছে ওর। আস্তে আস্তে ঠোঁট প্রসারিত হলো অশুভ হাসিতে। মেয়েটা নিশ্চয়ই নিজেকে নিরাপদ ভাবছে! মনে করছে ডিলনের ভয়ে কেউ তাকে কিছু বলবে না। ভুল ধারণাটা ভেঙে দেয়া দরকার। সময় এলে ডিলনের ব্যবস্থাও। করতে হবে। তখন দেখা যাবে আসলে কে এই অঞ্চলের রাজা। গলার গভীরে সন্তুষ্টিসূচক ঘড়ঘড় আওয়াজ হলো ওর। স্পার দাবিয়ে ঘোড়াটাকে শার্লির পাশে নিয়ে এলো।
টিটকারির সুরে জানতে চাইল, এত, তাড়া কিসের, ম্যাম? ভয় পাচ্ছ। কাউকে?
একবার লোকটার দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিল শার্লি। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিয়ে প্রয়াসকৃত শান্ত গলায় বলল, শহরে অনেক কাজ পড়ে আছে।…কষ্ট করে সঙ্গে আসার দরকার নেই। আমার গতি যদি পছন্দ না হয় তাহলে ফিরে যেতে পারো।
হাত বাড়িয়ে শার্লির মেয়ারের রাশ ধরে ফেলল কেগল। ঘোড়া দুটোকে দাঁড় করিয়ে ফেলল। রাগে জ্বলছে দু’চোখ। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তোমাকে আমার। গতিতে যেতে হবে। একটা আঙুল যুবতীর বুকে তাক করল সে। আমার সঙ্গে গরম দেখিয়ো না, আমি জানি কি করে তোমার মতো মেয়ের গরম কমাতে হয়।
ভয়ে বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে গেল শার্লির চোখ। চট করে মুখ ঘুরিয়ে নিল যাতে অসভ্য লোকটাকে এড়ানো যায়। নোংরা ইঙ্গিত করছে লোকটা! কাপ উঠে যাচ্ছে শার্লির শরীরে, কিন্তু ভয় পেলে মাথায় উঠবে কেগল নামের এই পিশাচটা। নিচু গলায় বলল শার্লি, আমাকে যেতে দাও। অভদ্রতা করলে ফিরে গিয়ে লিউ ডিলনকে বলে দেব আমি। ডিলন তোমাকে…
হেসে উঠল কেগল। তারপর হাত ঘুরিয়ে গায়ের জোরে চড় মেরে বসল শার্লির গালে। শার্লির অবিশ্বাস মাখা চাহনি দেখে হাসিটা আরও চওড়া হলো। হিমশীতল গলায় বলল, আমি যখন তোমাকে ছাড়ব, ইচ্ছে হলে যেতে পারবে ডিলনের কাছে। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি যাবে না। কাউকে যদি আমার কথা বলতে পারোও, ডিলনকে বলতে পারবে বলে মনে হয় না। অবশ্য তুমি যদি ডিলনের বউ হতে চাও তাহলেই।
খামচি মেরে রাশের ওপর থেকে কেগলের হাত সরাতে চাইল শার্লি। একটুও ঢিল হলো না মুঠি। তালুর উল্টোপাশ দিয়ে আবারও চড় কসাল কেগল মেয়েটার গালে। স্যাডল থেকে পড়ে গেল শার্লি। উঠে দাঁড়াবার আগেই ঘোড়া থেকে নামল কেগল, হাত বাড়িয়ে এগোল মেয়েটার দিকে। লালসায় বিকৃত হয়ে গেছে চেহারা। শার্লি বুঝল, আজ আর নিস্তার নেই। সর্বস্ব খোয়াতে হবে আজকে এই নরপশুর হাতে। চড় লেগে ঠোঁট কেটে গেছে শার্লির। অসচেতন ভাবে ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত মুছল মেয়েটা। পিছাবার চেষ্টা করল।
কেগলের গলার গভীর থেকে আনন্দের ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে। শার্লি এখন তার হাতের মুঠোয়। পালাতে পারবে না মেয়েটা। আজকের পর থেকে চোখ তুলে আর কথা বলতে পারবে না। তবে ট্রেইলের মাঝখানে নয়, কোন পাথর টাথরের আড়ালে শার্লিকে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত পায়ে সামনে বেড়ে খপ করে শার্লির হাত চেপে ধরল কেগল, হ্যাচকা টানে নিয়ে এলো বুকের কাছে। কোমর পেঁচিয়ে ধরে নিয়ে চলল ট্রেইলের ধারে। ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো শার্লি। অসুরের শক্তি ভর করেছে গানম্যানের শরীরে।
রক্তে বান ডেকেছে কেগলের, মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ফলে মাথা থেকে সমব্রেরো উড়ে যাওয়ার পরপর তীক্ষ্ণ আওয়াজটা শুনেও চট করে বুঝতে পারল না কি ঘটেছে। মাটিতে লুটোচ্ছে হ্যাট। ওটার গায়ে ফুটো দেখে বুঝতে পারল গুলি করেছে কেউ। সামনে ছিটকে পড়েছে হ্যাট। পেছনে আছে লোকটা!
শার্লিকে ছেড়ে দিয়েই চরকির মতো ঘুরল কেগল। পিস্তলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখতে পেল অনাহুত লোকটাকে। পরবর্তী গুলি কেগলের হাত থেকে অস্ত্রটা ফেলে দিল। ব্যথায় হাত ঝাড়া দিল কেগল। তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল। বেননের চোখে। নিজেকে বোকা বোকা লাগছে। বুঝতে পারছে না লোকটা নিঃশব্দে এত কাছে এলো কি করে।
রলিন্স থেকে ফেরার পথে বিশ্রাম নিতে থেমেছিলাম, গম্ভীর চেহারায় বলল বেনন। মিস রাশল্যান্ডের দিকে সর্বক্ষণ চেয়ে না থাকলে আমার ট্র্যাক দেখতে পেতে। একটা, ঘোড়া খানিক আগে ট্রেইল ছেড়েছে এটা বুঝতে পারতে। সন্দেহ হতো। কিন্তু তুমি ব্যস্ত ছিলে। লক্ষ করোনি।
তুমি আজকে আমার সম্মান বাঁচিয়েছ, কাঁপা গলায় বলল শার্লি। কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দেব…
নড করল বেনন। রাইফেল তাক করে ধীরে সুস্থে এগোল। বলল, সত্যি প্রতিদান দিতে চাও, ম্যাম? তাহলে কেগলের অস্ত্রটা কুড়িয়ে নাও। ওটা তাক করে রাখবে। প্রয়োজনে ওর মাথায় গুলি করবে। পারবে না?
পারব। একটু বিস্মিত হলেও কোলের অস্ত্র তুলে নিয়ে সরে দাঁড়াল শার্লি। শঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করল, কি করতে চাও?
শিক্ষা। ওকে পশ্চিমের রীতিনীতি শেখাব। মহিলাদের সম্মান করতে ভুল করবে না আর।
আমি রক্তপাত চাই না, আতঙ্কিত গলায় বলল শার্লি।
বেশ, রক্তপাত হবে না। আর কোন কথা না বলে রাইফেলটা মাটিতে ফেলে এগোল বেনন কেগলের দিকে। চোখ দুটো জ্বলছে ওর ক্ষুধার্ত শ্বাপদের মতো। পেছানোর কোন সুযোগ পেল না গানম্যান, ঝাঁপিয়ে পড়ল বেনন। আঘাত না করে দু’হাতে বেননকে ঠেলে দিয়ে গার্ড নিতে চাইল কেগল। শরীরে যথেষ্ট শক্তি ধরে সে। হাতাহাতি লড়াইয়ের কৌশলও কিছু জানে। আত্মবিশ্বাস আছে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু আজকে প্রচলিত কোন নিয়মে লড়াই করার ইচ্ছে বা রুচি নেই বেননের। খপ করে দু’হাতে কেগলের গার্ড নেয়া দু’কজি আঁকড়ে ধরল বেনন। শক্তিশালী কাঁধের পেশি ফুলে উঠল। ওর তালুর ঘষায় পড়পড় করে লোম ছিড়ছে কেগলের। হাত পিছলে যাচ্ছে বেননের। চাপ আরও বাড়াল। মোচড় দিল গায়ের জোরে। মটমট করে উঠল গানম্যানের কনুইয়ের হাড়। ব্যথায় মুখ বিকৃত হয়ে গেল। ছাড়া পাবার চেষ্টা করল। সরার জন্যে ঝটকা মারল। একচুল নড়তে পারল না। হাতের চাপ না কমিয়ে হাঁটু দিয়ে তলপেটে গুতো মারল বেনন। কুঁজো হয়ে গেল কেগল। ফুপিয়ে শ্বাস নিল। আবার তো দিল বেনন। এবার গোপনাঙ্গে।
গোঙাতে শুরু করল কেগল। ছটফট করছে। চোখ উল্টে গেল। জ্ঞান হারাবে যেকোন সময়। হাত ছেড়ে দিল বেনন। মাটিতে পড়ে গেল কেগল। দু’হাতে নিম্নাঙ্গ ধরে গোঙাচ্ছে। বুটের ডগা দিয়ে এবার গায়ের জোরে কেগলের বুকে লাথি মারল ও। ছিটকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়ল গানম্যান। ভুশ করে বেরিয়ে গেল দম। তড়পাচ্ছে মাটিতে শুয়ে। ছাড়া পেল না। মনের সাধ মিটিয়ে পাজরে কয়েকটা লাথি মারল বেনন। চোখে আতঙ্ক নিয়ে ব্যাপারটা দেখছে শার্লি।
কোল জ্ঞান হারানোর পর থামল রক। হাঁপাতে হাঁপাতে শার্লিকে বলল, তুমি কি একা শহরে ফিরতে পারবে, ম্যাম?
পারব, দ্রুত জবাব দিল শার্লি। কেগলের চেয়ে ওর কাছে রক বেননকে আরও অনেক বেশি বিপজ্জনক আর ভয়ানক লাগছে।
ঠিক আছে, ম্যাম, রাইফেলটা তুলে নিতে নিতে কেগলকে একবার দেখে নিল বেনন। আমার মনে হয় না লোকটা আর কখনও জ্বালাবে তোমাকে।
বেঁচে আছে? জিজ্ঞেস করল শার্লি। অসুস্থ বোধ করছে ও।
কাঁধ ঝাঁকাল বেনন। থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। এটুকু বলতে পারি, স্বর্গে যাবে না ও।
অনেক দূর চলে আসার পর পেছনে তাকাল শার্লি। দেখল রাস্তার ধারে পাথরের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বেনন। বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছে ঠিকই, তবু। ভয় লেগে উঠল শার্লির। লোকটা ভয়ঙ্কর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল যাতে কারও অমন অন্ধ ক্রোধ চাক্ষুষ করতে না হয় আর।
শার্লি বাঁক ঘুরে চোখের আড়ালে চলে যাওয়ায় হাঁটতে শুরু করল বেনন। পঞ্চাশ গজ দূরে রাস্তার পাশে একটা বড় বোন্ডারের পেছনে ওর ঘোড়াটা আছে। একটু পরই ট্রিপল বারের দিকে চলল। ওর মনে কোন কৌতূহল নেই। কোল মরে গিয়ে থাকলে পরে জানা যাবে।
<