টাকা হয়তো সত্যিই তোমার কাছে আছে, বেনন আর ব্যাগলে ঘোড়া থেকে নেমে ক্লিন্টের পাশে দাঁড়ানোর পর মন্তব্য করল ডিলন। তীক্ষ্ণ চোখে প্রতিদ্বন্দ্বী র‍্যাঞ্চারকে দেখল। এখন বুঝতে পারছি তুমিও এদের মতো ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। রাশল্যান্ড আর ক্রিসির খুনের দায় থেকে বাঁচবে না। তোমাদের ঝোলানোর জন্যে যা যা দরকার সবই আমি করব।

শ্রাগ করে হুমকিটা উড়িয়ে দিল ক্লিন্ট।

আমার ধারণা এরাই বার কিউতে গিয়ে আমার কাছ থেকে ঋণের কাগজ চুরি করেছে। চোখে শীতল ক্রোধ নিয়ে দুই পাঞ্চারকে দেখল ডিলন।

তোমার ধারণা হলেই সেটা সত্যি হতে হবে এমন কোন কথা নেই, বলল বেনন। সায় দিয়ে ঘন ঘন গোঁফে তা দিল ব্যাগলে। সত্যি সত্যি কাগজ চুরি হয়েছে তারও কোন প্রমাণ নেই। এটাও প্রমাণ করা যাবে না যে ক্লিন্ট তোমার টাকা পরিশোধ করেনি। আইনত ট্রিপল বারের ওপর কোন অধিকার নেই তোমার। ওর জমিতে তুমি গোলমাল করলে ক্লিন্ট আইনের সাহায্য চাইতে পারে। রলিঙ্গে গিয়ে শেরিফকে খবর দিলেই রেঞ্জ ওঅর ঠেকাতে চলে আসবে সে। তোমার পক্ষ যে নেবে না এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ?

আমি বুঝেছি, ধীরে ধীরে বলল ডিলন। ঝড়ের গতিতে মাথা কাজ করছে তার। জারম্যান পারতপক্ষে তার বিরোধিতা করবে না। কিন্তু রলিন্স থেকে শেরিফ এসে তদন্ত শুরু করলে পরিস্থিতি জটিল হতে বাধ্য। সে-ভয়ে চুপ করে বসে থাকাও যায় না। রলিন্সের রাস্তায় সর্বক্ষণ প্রহরার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ট্রিপল বারের কেউ রলিলে যেতে না পারে। তবে এখনই ট্রিপল বার আক্রমণ করা যাবে না। আসলে তার কোন দরকারও নেই। আস্তে আস্তে চাপ প্রয়োগ করে ওদের কোণঠাসা করা যাবে। তারও দরকার নেই। ক্লিন্ট মারা গেলে ট্রিপল বারে কেউ থাকবে না। কারও কোন স্বার্থ নেই, স্বার্থ উদ্ধারের সম্ভাবনাও নেই। ক্লিন্ট মারা গেলেই…

ক্লিন্টের দিকে তাকাল ডিলন। এবার তুমি জিতে গেলে, ক্লিন্ট। আমি তোমাকে সৎ লোক বলে মনে করতাম। তুমি তোমার বাবার মতো হওনি।

আমি কিন্তু বলিনি টাকা দেব না, বলল গম্ভীর ক্লিন্ট। একথাও বলিনি তুমি টাকা পাও না। আমি বলেছি ঋণের কাগজ ফেরত দিলেই পাওনা টাকা দিয়ে দেব। তুমি দিতে পারছ না। টাকা শোধ করার পর তুমি আবারও দাবি জানাবে না তার নিশ্চয়তা কি?

তোমার কথা শেষ হয়েছে? শীতল স্বরে জানতে চাইল ডিলন।

চুপ করে থাকল ক্লিন্ট। মাথা কাত করে ডিলনকে বেরিয়ে যেতে ইঙ্গিত করল। বেনন।

ধীরেসুস্থে ঘোড়া ঘুরিয়ে নিল র‍্যাঞ্চার। অপমানে মুখটা লাল হয়ে আছে। স্পারের খোঁচা খেয়ে ছুটতে শুরু করল ঘোড়াটা। কিছুক্ষণ পর দক্ষিণের ঢালের ওপাশে চলে গেল।

এতক্ষণ পর বাঙ্ক হাউজ, বার্ন আর র‍্যাঞ্চ হাউজ থেকে রাইফেল হাতে বেরিয়ে এলো ডায়ার, রিন্টি ডেনভার, স্টেসি আর কন লেভিস। তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছিল ওরা। ডায়ারের চেহারায় স্বস্তির ছাপ সুস্পষ্ট। তরুণ কাউবয়রা একটু হতাশ।

আইন আসলে ওর পক্ষই নেবে, বলল ক্লিন্ট। আমি যতদূর জানি, জারম্যান সৎ লোক। কিন্তু যুক্তিতর্ক বোঝে কম। সে তোমাদের ব্যাঙ্ক ডাকাত এবং খুনি ভাবছে। আমার এখানে তোমরা আছ। তারমানে ডিলন ঠিক কাজ করছে এটা সে ধরেই নেবে।

তবুও রাতের আগে হামলা হবে বলে মনে হয় না, মতামত জানাল ব্যাগলৈ। ডিলন ঝুঁকি কমাতে চাইবে।

আমাদের ব্যাপারে জারম্যানের ধারণা পাল্টাতে হবে, বলল বেনন। ক্লিন্টের দিকে তাকাল। রলিন্সে আগে কোন টেলিগ্রাফ অফিস ছিল না। এখন হয়েছে?

বিস্মিত হয়ে বেননকে দেখল ক্লিন্ট। মাথা দোলাল। ফারগো অফিসে টেলিগ্রাফ আছে।

তাহলে জারম্যানকে নিয়ে রলিগে গিয়ে একটা টেলিগ্রাফ করতে হবে।

তুমি যাবে ভাবছ নাকি! ধরতে পারলেই তোমাকে জেলে পুরে দেবে সে।

ধরতে যাতে না পারে সে-ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাগলের দিকে তাকাল বেনন। তুমি এখানে থাকবে। রিন্টি ডেনভার আর স্টেসিকে নিয়ে শহরে যাব। আমি। এরমধ্যে ডিলন যদি আক্রমণ করে বসে তাহলে ঠেকানোর চেষ্টা না করে পিছিয়ে যাবে। পরেরটা পরে দেখা যাবে।

প্রতিবাদ করতে চাইল ব্যাগলে, তুমি শহরে ঢুকলেই তো…

হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিল বেনন। রিন্টি, স্টেসি, ঘোড়া নিয়ে আমার সঙ্গে এসো তোমরা।

ক্লিন্টের দিকে তাকাল দুই তরুণ। শ্রাগ করল ক্লিন্ট। বেনন কি করবে সে জানে না, কিন্তু ইতিমধ্যেই ওর ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে সে।

একটু পরই ট্রিপল বার ছেড়ে রওনা হয়ে গেল তিনটা ঘোড়া। টুইন স্প্রিংসের দিকে চলেছে বেনন, স্টেসি আর রিন্টি ডেভিস।

পেছন থেকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকল ব্যাগলে। ও নিশ্চিত, যত মজা বেননের কপালেই জুটবে। ওর যা কপাল, আজকে হয়তো ট্রিপল বারে হামলাই করবে না ডিলন।

টুইন স্প্রিংসের কিছুটা বাইরে টিলার আড়ালে ঘোড়া দাঁড় করাল বেনন। তার দেখাদেখি রিন্টি আর স্টেসিও থামল। একটা চুরুট ধরাল বেনন, ধোঁয়া ছেড়ে আচমকা বলল, স্যাডলের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ো তোমরা।

কি বললে? ভুল শুনেছে ভাবল স্টেসি।

বলছি শুয়ে পড়ো সা্যডলের ওপর। তোমাদের বাঁধব আমি। এমন করে বাঁধব যে দেখে মনে হবে মমি। ময়দার বস্তার মতো স্যাডলের ওপর পড়ে থাকবে তোমরা, যেভাবে লাশ পড়ে থাকে।

তারপর? কৌতূহলী হয়ে উঠেছে দুই কাউবয়। আগ্রহে চোখ চকচক করছে।

তারপর ঘোড়া দুটো শহরের রাস্তা দিয়ে ভেতরে পাঠিয়ে দেব। মুখ নিচু করে পড়ে থাকবে তোমরা। লোকে মনে করবে লাশ। ভিড় করবে সবাই। তোমাদের দিকে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করে সেই সুযোগে শহরের অন্যদিক দিয়ে ভেতরে ঢুকব।

হাসল দুই কাউবয়। স্টেসি জিজ্ঞেস করল, লোকে যখন জিজ্ঞেস করবে। আমাদের এই অবস্থা হলো কি করে, তখন কি জবাব দেব?

বলবে দুই ব্যাঙ্ক ডাকাতকে দেখে বন্দি করতে গিয়েছিলে তোমরা। কিন্তু তোমরা অস্ত্র বের করার আগেই অস্ত্র বের করে তোমাদের বন্দি করে ফেলে ওরা। তারপর ঘোড়ার পিঠে বেঁধে ছেড়ে দিয়েছে। বলবে ঘোড়া শহরে এসে না পৌঁছুলে বিপদে পড়ে যেতে।

চুপ করে থাকল দুই তরুণ।

আর কিছু? জানতে চাইল বেনন। স্টেসি আর রিন্টি জবাব না দেয়ায় ঘোড়া থেকে নামল। বেশি দেরি হলো না ওদের বেঁধে ফেলতে।

মড়ার মতো পড়ে থাকবে, কাজ সেরে বলল বেনন।

একটু পরই টিলার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো ও। দড়ি ধরে সঙ্গে নিয়ে আসছে দুই কাউবয়ের ঘোড়া দুটো। উপুড় হয়ে পড়ে আছে দুই কাউবয়। মাঝে মাঝে খিকখিক করে হেসে উঠছে স্টেসি।

ঢালের আড়ালে আড়ালে শহরের সিকি মাইলের মধ্যে পৌঁছে গেল ও। ট্রেইলের পাশে থেমে একে একে ছেড়ে দিল ঘোড়াগুলোর দড়ি। একটা ঘোড়ার পেছনে জোরে এক চাপড় লাগাতেই ট্রেইল ধরে ছুটল ওটা। একটু ইতস্তত করে তাকে অনুসরণ করল পরের ঘোড়াটা। ওরা শহরেই যাবে। ওখানে মানুষ আছে, স্টেবলের গন্ধ টানছে ঘোড়াগুলোকে। পাঁচ মাইল দূর থেকেও গন্ধ পায় ঘোড়া।

ঘোড়াগুলো উত্তর দিক থেকে শহরে ঢুকবে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ছুটল বেনন। পশ্চিম ঘুরে দক্ষিণে চলে এলো সাত মিনিটের মাথায়।

সঙ্গে সঙ্গে শহরে না ঢুকে অপেক্ষা করল ও। একটু পরই হৈ-চৈ শুরু হলো। বোর্ডওয়াকে ছুটন্ত পদশব্দ শোনা গেল। উত্তেজনার ছোয়া শহরে। উত্তর দিকে যাচ্ছে সবাই কি ঘটেছে বোঝার জন্যে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুটো ঘোড়া, ওগুলোকে ঘিরে জটলা করছে কিছু মানুষ।

কেউ দেখল না বেনন দক্ষিণ দিক দিয়ে শহরে ঢুকেছে। জেলখানার সামনে থামল ও। ঘোড়াটা বাঁধল রাস্তার উল্টোপাশের হিচরেইলে। জেলাখানার দিকে পা বাড়িয়ে দেখল ঠেলাগুতো মেরে লোক সরিয়ে কি ঘটেছে দেখতে চাইছে মার্শাল জারম্যান।

মার্শালের অফিসের দরজায় তালা মারা নেই। ঠেলতেই খুলে গেল দরজা। ভেতরে পা দিয়ে থেমে দাঁড়াল বেনন। চোখ বড় বড় হয়ে উঠল বিস্ময়ে, তারপর মাথা থেকে সমব্রেরো নামিয়ে নর্ড করল ও। পায়ের ঠেলায় পেছনে বন্ধ করে দিল দরজা। ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। চোখে ভয় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাঙ্কার রাশল্যান্ডের মেয়ে শার্লি।

মেয়েটা সত্যিই সুন্দরী। গায়ের চামড়া থেকে গোলাপী আভা ঠিকরে বেরচ্ছে। মুখটা পানপাতার মতো। নীল রঙের চোখ দুটো বড় বড়। চোখের পাপড়ি দীর্ঘ আর ঘন কালো। মেয়েটা এই মুহূর্তে নার্ভাস। বারবার চোখের পলক ফেলছে। দৃষ্টিতে শঙ্কা।

ভয় পাবার কিছু নেই, ম্যাম, বলল বেনন। চেয়ারে বসো। জারম্যান আসার আগে পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকছি।

পিছিয়ে গিয়ে টেবিলে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল মেয়েটা। অভিযুক্ত করার ভঙ্গিতে আঙুল তুলল বেননের দিকে। আমার বাবাকে যারা মেরে ফেলেছে তুমি তাদের। একজন।

ফুঁপিয়ে উঠে দরজার দিকে দৌড় দিল শার্লি। পাশ কাটাতে পারল না, হাত ধরে ফেলল বেনন। জোর করে বসিয়ে দিল একটা চেয়ারে।

মিস রাশল্যান্ড, গম্ভীর হয়ে গেল বেননের চেহারা, বিশ্বাস করো আর না করো, আমি বা আমার বন্ধু তোমার বাবাকে খুন করিনি। এই কথাটা জারম্যানকে বোঝাতেই এসেছি এখানে। আমি দুঃখিত যে তোমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার হত্যাকারীকে ধরতে যদি কোন সাহায্য করতে পারি তাহলে অবশ্যই করব।

বেননের চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত হয়ে গেল মেয়েটা। মুখে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক রং ফিরে এলো। একটু ইতস্তত করে বলল, আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি। তোমাকে দেখে মনে হয় না ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করার মতো লোক তুমি।

ধন্যবাদ, ম্যাম, আবার বাউ করল বেনন। আমাদের ব্যাপারে ক্লিন্ট ডসনেরও একই ধারণা। সেজন্যেই ওর ব্ল্যাঙ্কে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে ও। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যুবতীকে দেখে নিল বেনন। ক্লিন্টের নাম শুনেই অজান্তে গলার কাছে হাত নিয়ে গেছে মেয়েটা। দুর্বলতা না থাকলে এরকম প্রতিক্রিয়া মেয়েদের হয় না। তবে দুঃখের কথা হচ্ছে দু’একদিনের মধ্যে ক্লিন্টের নিজেরই আশ্রয় দরকার হয়ে পড়বে।

তাই? কেন? বিস্ফারিত চোখে জানতে চাইল শার্লি।

ডসন তোমার বাবার কাছে টাকা জমা রেখেছিল। ভেবেছিল ডিলনের ঋণ শোধ করে দেবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়ে যাওয়ায় এখন ওর কাছে আর শোধ দেবার মতো টাকা নেই। ডিলন ওর র‍্যাঞ্চটা কেড়ে নেবে।

কথা থামিয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকাল বেনন। শার্লি চিন্তিত, কিন্তু কেন চিন্তিত তা বোঝার কোন উপায় নেই। রাস্তায় কোলাহল থেমে গেছে। বোধহয় সবার কৌতূহল মিটিয়ে ফিরতি পথ ধরেছে স্টেসি আর রিন্টি। দরজার কাছে চলে এলো বেনন, কান পাতল দরজায়। বলল, জারম্যান বোধহয় শিগগিরই আসবে। লোকটা আমাকে খুনি ভাবছে। আমাকে হয়তো অস্ত্র বের করে হুমকি দিতে হবে। তোমার ভয় পাবার কোন কারণ নেই, মিস রাশল্যান্ড।

বাইরে কিসের গোলমাল হচ্ছিল? জানতে চাইল শার্লি।

আজকে সকালে ট্রিপল বারে ডিলনের উপস্থিতির কথা জানাল বেনন। বলল কিভাবে দুই কাউবয়কে লাশ সাজিয়ে শহরে ঢুকেছে ও।

ডিলনের মারমুখী ভঙ্গির কথা শুনে জ কুঁচকে উঠল যুবতীর। ঠোঁটের ওপর আঙুল নিয়ে মেয়েটাকে শব্দ করতে নিষেধ করল বেনন। বোর্ডওয়াকে বুটের ভারী আওয়াজ এগিয়ে আসছে। দরজার পাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল বেনন। অস্ত্র বের করে নিল হোলস্টার থেকে। বাইরে থেমে গেল পায়ের শব্দ। দরজা খুলে গেল নিঃশব্দে।

তোমাকে একা বসিয়ে রাখতে হয়েছে সেজন্যে আমি অত্যন্ত দুঃখিত, মিস শার্লি, ঘরে পা রেখে বলল জারম্যান। আরও কি যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মেয়েটার চোখের দৃষ্টি ওর পেছনে লক্ষ করে চরকির মতো পাক খেয়ে ঘুরল। একই সঙ্গে পিস্তলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। বঁট ছোঁয়ার আগেই থেমে গেল হাত। বেননের সিক্সগান বুকের দিকে তাক করা দেখে কুঁচকে গেল। ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। খসখসে গলায় বলল, তোমার সাহস দেখে হতবাক হচ্ছি। এখানে কি চাও?

তোমাকে চাই, জারম্যান, কনুই দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল বেনন। তুমি মাথা মোটা লোক বলেই বিশ্বাস করছ না যে আমি আর আমার বন্ধু তোমাদের ব্যাঙ্কারকে খুন করিনি। কিন্তু এখন তোমাকে এমন লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব যার কথা তুমি বিশ্বাস না করে পারবে না। আমার সঙ্গে রলিন্স যাচ্ছ তুমি। ওখান থেকে পিঙ্কারটন এজেন্সিতে টেলিগ্রাফ করবে। উইলিয়াম পিঙ্কারটন তোমাকে জানাবে এখানে আমরা কেন এসেছি।

অবিশ্বাসের ছাপ পড়ল জারম্যানের চেহারায়। বেননের কথা উড়িয়ে দিতে চাইল হাত নেড়ে। তারপর থেমে গেল ওর চোখের গভীর দৃষ্টি দেখে। ঠাট্টা করছে লোকটা!

বললেই তোমার সঙ্গে রলিন্সে যাব সেটা ভাবলে কোন সাহসে? ধমকের সুরে জানতে চাইল মার্শাল।

স্বেচ্ছায় না গেলে স্যাডলে বেঁধে নিয়ে যাব, ঠাণ্ডা গলায় জানাল বেনন। ঊরুর পাশে থাবা দিয়ে অন্য অস্ত্রটাও বের করল। ট্রিগার গার্ডে আঙুল ঢুকিয়ে অস্ত্র ঘোরাল বার কয়েক, তারপর হঠাৎ করেই তাক করল মোটা মার্শালের পেটে। আমি হলে কিন্তু দেরি করতাম না।

যাব তোমার সঙ্গে, গম্ভীর চেহারায় বলল জারম্যান। ভয় পেয়ে যাচ্ছি তা নয়। আমি দেখতে চাই তুমি সত্যি কথা বলছ কিনা। সত্যি বলে থাকলে অন্যভাবে তদন্ত শুরু করতে হবে আমাকে।

তাহলে গানবেল্ট খুলে ফেলো, নির্দেশ দিল বেনন। মোটকু ওদের ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যাপারে ডিলনের সঙ্গে একমত হয়েছিল সেটা ভুলতে পারছে না। একে বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না। সুযোগ পেলেই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে পেটমোটা মার্শাল।

গানবেল্ট খুলে মেঝেতে ফেলে দিল জারম্যান। বেনন দেখল চোখে ভয় নিয়ে ওদের দেখছে শার্লি। মেয়েটার উদ্দেশে হাসল ও। মনে হলো কিছুটা স্বস্তি পেল, মেয়েটা।

চলো তাহলে, মার্শালকে বলল বেনন। একেবারে ভদ্রলোকের মতো স্যাডলে বসে থাকবে। কোন দিকে তাকাবে না। সোজা বেরিয়ে যাবে শহর থেকে। কোন বেচাল দেখলে গুলি করব আমি। মনে রেখো, চালাকি করলে মরতে

অস্ত্রের নল দিয়ে ইশারা করল। জারম্যান বেরিয়ে এলো অফিস থেকে। সেলের করিডর হয়ে জেলখানার পেছনে চলে এলো। জায়গাটা ছোট্ট একটা উঠান মতো। দেয়াল দিয়ে ঘেরা। একটা দরজা আছে। মার্শালের ঘোড়া এখানেই রাখা হয়। জারম্যানের একটু পেছনেই থাকল বেনন। আসার আগে মিস শার্লিকে আরেকবার বাউ করে এসেছে ও, আশা করছে মেয়েটা চিৎকার চেঁচামেচি করে ওকে বিপদে ফেলবে না।

ঝামেলা না করে ঘোড়ায় স্যাডল চাপাল জারম্যান। লোকটাকে নিয়ে উঠান থেকে বেরিয়ে এলো বেনন। কপালের ওপর টেনে এনেছে টুপি। কাছ থেকে কৌতূহলী হয়ে কেউ না তাকালে সহজে ওকে চিনতে পারবে না। আর চেনার কথাও নয়। ও যখন এসেছিল শহর ছিল খালি। বিপদ ঘটাতে পারে জারম্যান, সে হৈ-হট্টগোল করলে মানুষ জড় হয়ে যাবে। কিন্তু লোকটা ঝুঁকি নেবে বলে মনে হয় না।

হিচরেইল থেকে ঘোড়ার দড়ি খুলে স্যাডলে চেপে তারপর জারম্যানকে ঘোড়ায় উঠতে ইশারা করল বেনন। রাস্তায় লোক চলাচল কম। আগ্রহ নিয়ে কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে নেই।

পাশাপাশি চলল বেনন আর মার্শাল। দূর থেকে দেখে যে কেউ ভাববে কোন বন্ধুর সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে তাদের মার্শাল।

শহর ছাড়িয়ে আসার অনেকক্ষণ পর মুখ খুলল জারম্যান। উইলিয়াম পিঙ্কারটনের মতো নামকরা লোক তোমার পক্ষে সাফাই গাইবে কেন?

কারণ তার অনুরোধেই এদিকে এসেছি আমি।

অনুরোধে? তোমাকে…আউট-ল রক বেননকে অনুরোধ করেছে উইলিয়াম পিঙ্কারটন? আমাকে একথাও বিশ্বাস করতে হবে?

টেলিগ্রাফ করলেই জানতে পারবে।

ধরলাম তুমি সত্যি বলছ। ব্যাঙ্ক ডাকাতি বা খুনের সঙ্গে তোমাদের কোন যোগাযোগ নেই। তোমাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ না থাকে তাহলে কি তোমরা চলে যাবে?

না। কিছু প্রশ্নের জবাব না পেলে এখান থেকে নড়ছি না আমরা। যখন এলাম শহরটা কেন খালি ছিল, কে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করল, ব্যাঙ্কার আর কর্মচারীর খুনি কে–এসব না জানা পর্যন্ত ঠিক করেছি থাকব।

ক্লিন্টের লোকদের ওভাবে শহরে পাঠানো সাজানো ব্যাপার, তাই না?

হতে পারে।

ওদেরকে এমনিতেই শহরে চলে আসতে হবে। ডিলন টাকা না পেলে ট্রিপল বার নিয়ে নেবে। সে নিশ্চয়ই ক্লিন্টের কর্মচারীদের রাখবে না।

আজকে সকালে ট্রিপল বার দখল করতে গিয়েছিল ডিলন। তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

ঐ কুঁচকাল জারম্যান। ব্যাঙ্ক-ডাকাত ধরা না পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারত লিউ। বেননের দিকে তাকাল। তুমি কি ক্লিন্টের পক্ষ নিচ্ছ নাকি?

পিঙ্কারটন আমাকে অনুরোধ করেছে ক্লিন্টের ভাগ্য বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করার জন্যে।

ও। শুনেছি বুড়ো ডসনের বন্ধু ছিল লোকটা।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ক্লিন্টের বাবার মৃত্যুর পর মাঝে মাঝে খোঁজখবর নিত সে। পরে ক্লিন্ট মানা করে দেয়। বিনা পয়সায় একটা গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নেবার মানসিকতা হয়নি ওর। তারপর থেকে পিঙ্কারটন গোপনেই খোঁজ নিয়েছে। ট্রিপল বারে রাসলিং হচ্ছে এব্যাপারে বুড়ো পুরোপুরি নিশ্চিত।

তোমার সঙ্গে পিঙ্কারটনের পরিচয় কিভাবে?

তার হয়ে দু’একটা অ্যাসাইনমেন্টে গেছি আমি।

আউট-লকে কাজে লাগাল? তার তো অ্যালার্জি ছিল।

অ্যালার্জি এখনও আছে। কিন্তু উপায় নেই তার। পুব আর উত্তর-পুবে পিঙ্কারটনের নিয়মিত এজেন্টরা ব্যস্ত। কয়েকজনকে অফিসওয়ার্ক থেকে তুলে অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো হয়েছে। খানিকটা বাধ্য হয়েই আমাকে অনুরোধ করল পিঙ্কারটন। আমিও এদিকেই আসতাম, রাজি হয়ে গেছি। সমস্ত খরচ বুড়ো দিচ্ছে, আপত্তি করব কেন?

ফোঁশ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল জারম্যান। যেভাবে বললে তাতে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। কষ্ট করে রলিন্সে না গেলেও চলে। তোমাদের ওপর থেকে অভিযোগ উঠিয়ে নেবার ব্যবস্থা করব আমি।

রলিন্সে যাচ্ছি আমরা, গম্ভীর হয়ে গেল বেনন। তোমাকে নিশ্চিত হতে হবে। এখন আমার কথা শুনে বিশ্বাস করছ, একটু পরেই অন্য কারও কথায় মতামত পাল্টে ফেলতে পারো। এখন এদিকে যেরকম পরিস্থিতি তাতে তোমার ইচ্ছেমতো গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না।

আপত্তি করতে গিয়েও চুপ করে গেল জারম্যান।

জিজ্ঞেস করল বেনন, আমরা যখন শহরে আসি তখন শহরটা খালি ছিল। কারণ জানা গেছে?

বেননের দিকে মার্শাল এমন ভাবে তাকাল যেন, বেননই আসলে দায়ী এই অঘটনের জন্যে। বেনন নাচানোয় অনিচ্ছুক ভঙ্গিতে বলল মাইনারের কথা। বেশির ভাগ লোক ফিরে এসেছে। তবে এখনও কয়েকজন রয়ে গেছে আশায় আশায়। শিগগিরই ফিরবে তারাও। মানুষজন এত রেগে আছে যে মাইনারকে পেলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে খালি হাতে।

খুবই বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে, প্রশংসা না করে পারল না বেনন। তারপর বলল, তবে মাইনার একটা খুঁটি মাত্র। এসবের পেছনে আসল লোকটা শহরের কেউ। সে জানত ব্যাঙ্কের সেফে কত টাকা আছে। বাইরের কোন ডাকাত দল দিনে বা রাতে ডাকাতির চেষ্টা করত, কিন্তু শহর খালি করার চেষ্টা করত না। কাজটা এই এলাকার পরিচিত লোকরাই করেছে। তীক্ষ্ণ চোখে মার্শালকে একবার দেখে নিল বেনন। মাইনারকে ট্রেইল করার চেষ্টা করেছিলে তুমি?

তোমার সঙ্গে আসতে না হলে আজকে ট্রেইল খুঁজতে শুরু করতাম।

খোঁচাটা নীরবে হজম করল বেনন। সারা রাস্তা দুজনের মাঝে আর কোন কথা হলো না।

ওয়েলস ফারগো অফিসে গিয়ে পিঙ্কারটন এজেন্সির নামে একটা টেলিগ্রাফ পাঠাল ওরা। জবাব এলো ছয় ঘণ্টা পর। টেলিগ্রাফার কাগজটা বেননের দিকে এগিয়ে দিতে, বেনন মার্শালকে দিতে বলল। বেশ বড় মেসেজ। পড়া শেষে বেননের দিকে তাকাল জারম্যান। চোখে আর অবহেলার ভাব নেই।

পড়বে? জানতে চাইল সে।

বেনন মাথা নাড়ল। এখানে আর কোন কাজ নেই ওর। জারম্যান এখন জানে ওরা অপরাধী নয়, কাজেই ফিরতি পথ ধরা যায় নিশ্চিন্তে। দেরি করা ঠিক হবে না। ওদিকে হয়তো বিপদের মুখে আছে ব্যাগলে।

মার্শালের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে বিশ্রাম না নিয়ে সে রলিন্স থেকে নড়বে। দু’এক কথায় জারম্যানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো বেনন। জারম্যান বোর্ডওয়াকে পা রাখার আগেই ঘোড়ায় চড়ে বসল। টুইন স্প্রিংসের দিকে ছুটতে শুরু করল ঘোড়াটা।

বেনন আর জারম্যান বেরিয়ে যাওয়ার পরও বসে রইল শার্লি। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। লিউ ডিলন আর ক্লিন্ট ডসন লড়াই করবে ভাবতেই বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। দুজনই বন্ধু। দুজনকেই ও পছন্দ করে। ওরা দুজনই চায় তাদের একজনকে ও জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিক। কোন তাড়া নেই শার্লির। এখনও ঠিক করেনি কাকে মন দেবে। ডিলন আর ডসন দুজনই সুপুরুষ। ওদের বন্ধুত্ব আর সঙ্গ রীতিময়ে উপভোগ করে ও। তবে এটাও জানে, একদিন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সেদিন যেকোন একজনের প্রতি ওর অনুভূতি গভীর হতে দেবে।

একটু বিস্মিতই বোধ করছে শার্লি এখন। কিছুক্ষণ আগে আবিষ্কার করেছে, শুধু ক্লিন্ট ডসনের কথাই ভাবছে ও। কারণ খুঁজতে গেল না শার্লি। একটা কথা অন্তর থেকে পরিষ্কার অনুভব করল, বিপদের মধ্যে আছে ক্লিন্ট। ক্লিন্টের ক্ষতি। হোক এমন কিছু চাইতে পারবে না ও। অস্থির করা চিন্তাগুলো দূরে ঠেলে দিয়ে মার্শালের অফিস থেকে বেরিয়ে এলো শার্লি, নিজের বাড়িতে ফিরে এলো। একটু পরই রাইডিং ড্রেস পরে নিয়ে বেরিয়ে এলো আবার। বাড়ির পেছনে স্টেবল। সেখানে গিয়ে পিঠে স্যাডল চাপিয়ে বের করে আনল মেয়ারটাকে। কড়া রোদে দগ্ধ হচ্ছে টুইন শ্রিংস। রাস্তায় মানুষ নেই। বার কিউয়ের দিকে চলল শার্লি। প্রথম দিকে ঘোড়ার গতি থাকল কম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর গতি বাড়াল মেয়েটা। অস্থিরতা তাতেও কাটছে না, মনে হচ্ছে আরও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছুনো দরকার, ডিলনকে বোঝাতে হবে, কথা আদায় করতে হবে, যাতে কোন গোলমালে জড়িয়ে না পড়ে ডসনের সঙ্গে। ঘোড়ার গতি আরও বাড়াল শার্লি। বার কিউতে যখন পৌঁছুল, দরদর করে ঘাম ঝরছে মেয়ারের গা থেকে, ফেঁশ ফোশ করে শ্বাস ফেলছে।

বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আছে ডিলন। পরিশ্রান্ত ঘোড়ার ওপর থেকে ঘুরে এলো তার বিস্মিত দৃষ্টি। শার্লিকে স্যাডল থেকে নামতে দেখে উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে, তিন ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নেমে উঠানে স্বাগত জানাল মেয়েটাকে।

ঘোড়াটাকে অনেক বেশি খাটিয়েছ, শার্লি, অভিযোগ নয়, মন্তব্য করল ডিলন। এত তাড়া কিসের? উঠানের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন পাঞ্চার। তাদের একজনকে চোখের ইশারায় ডাকল র‍্যাঞ্চার। ধমকের সুরে বলল, জানোয়ারটাকে স্টেবলে নিয়ে যাও। পাঞ্চার এগিয়ে আসছে দেখে নিয়ে এবার শার্লির দিকে তাকাল ডিলন, এক হাতে মেয়েটার কাঁধ জড়িয়ে ধরে বাড়ির ভেতরে যাবার জন্যে পা বাড়াল।

শার্লিকে দামী চামড়া মোড়া একটা আর্ম চেয়ারে বসিয়ে কিচেনে চলে এলো সে, একটু পরেই ফিরে এলো অ্যাপল জ্যাকের জাগ নিয়ে। একটা গ্লাসে অ্যাপল জ্যাক ঢেলে শার্লির হাতে দিয়ে ফায়ারপ্লেসের চওড়া গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল, চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল শার্লির দিকে।

আমি… একটু ইতস্তত করল শার্লি। ডিলনের চোখের দিকে তাকাল না। আমি শুনলাম আজকে সকালে ক্লিন্টের ওখানে গিয়েছিলে তুমি। কেন?

কালো হয়ে গেল ডিলনের সুদর্শন মুখ। কথা বলার আগে একটু ভেবে নিল। তারপর শব্দ চয়ন করে নিয়ে বলল, অনেক দিন হলো আমার টাকায় র‍্যাঞ্চ চালাচ্ছে ক্লিন্ট ডসন। আজকে আমার ঋণ শোধের শেষ দিন ছিল। শোধ দেয়নি সে। র‍্যাঞ্চ ছেড়ে যেতেও রাজি হয়নি। উল্টো হুমকি দিয়েছে আমাকে অস্ত্রের মুখে। আমি আমার পাওনা টাকা চেয়ে কোন অসঙ্গত আচরণ কি করেছি?

ক্লিন্ট শোধ দেয়নি সেটা তো ওর ইচ্ছেকৃত নয়। শোধ দেবার ইচ্ছে ছিল ওর। সেজন্যেই আমার বাবার কাছে টাকা জমা রেখেছিল। ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়েছে সেজন্যে ক্লিন্টকে দোষ দেয়া যায় না। চোখে অনুরোধ নিয়ে ডিলনের দিকে তাকাল শার্লি। টাকা যোগাড় করার আরেকটা সুযোগ তুমি ক্লিন্টকে নিশ্চয়ই দেবে, লিউ?

মাথা নাড়ল ডিলন। শার্লি, আমি তোমার সঙ্গে তর্কে যেতে চাই না। যথেষ্ট সময় পেয়েছে ক্লিন্ট। আর দেরি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কখনোই আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না ক্লিন্ট। আমার ঋণ শোধ করতে পারবে না। আমি যদি অপেক্ষা করি তাহলে একদিন হয়তো দেখব ওর জায়গায় আর কেউ ট্রিপল বার চালাচ্ছে। নতুন লোক এখানে জমি কিনলে আমার সঙ্গে ঠোকাঠুকি করবে। সে-ঝুঁকি আমি নিতে পারি না।

বড় বড় চোখে অবাক বিস্ময় নিয়ে ডিলনের কথা শুনল শার্লি। তারপর বলল, ক্লিন্ট তার জমি বেচবে না। তাছাড়া ব্যাঙ্কের হিসেব পরীক্ষা শেষ হলেই জমা রাখা টাকা ফেরত পাবে ও, তখন পাওনা শোধ করে দিতে পারবে।

কি বলছ তুমি? অজান্তেই চড়ে গেল র‍্যাঞ্চারের গলা। কর্কশ ভাবটুকু শার্লির কান এড়াল না।

যদি সম্ভব হয় তাহলে রাশল্যান্ড ব্যাঙ্ক তার পাওনাদারদের পাওনা মিটিয়ে দেবে। বাবা থাকলেও তাই করত, কাজেই এটা আমারও কর্তব্য।

কিন্তু ক্লিন্ট তোমাদের গ্রাহক ছিল না, বোঝানোর চেষ্টা করল ডিলন। ক্লিন্ট তোমার বাবার ব্যাঙ্কে টাকা জমা রাখেনি। রাল্যান্ড ব্যাঙ্কের সঙ্গে কোন ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল না ওর। যাদের টাকা পাওনা আছে তাদের টাকা শোধ করতেই তোমার কষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। গ্রাহকদের পাওনা মেটানো তোমার প্রথম কর্তব্য। আমিও গ্রাহকদের একজন।

চুপ করে থাকল শার্লি। ডিলন যা বলছে শুনতে খারাপ লাগলেও সেটা সত্যি কথা। আমি ভুলে যাইনি যে তুমিও পাওনাদারদের একজন, কিছুক্ষণ পর বলল

আমি তোমাকে সে-টাকা ফেরত দেবার জন্যে চাপ দিচিং না, নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্যে দ্রুত বলল ডিলন। ওই টাকা না পেলেও আমি আইনের সাহায্য নেব না। তবে এটাও ঠিক, আমি চাইব ক্লিন্ট তার টাকা ফেরত পাবার আগে যাতে আমি আমার টাকা ফেরত পাই। আমি অন্যায় কিছু বলেছি?

আস্তে করে মাথা নাড়ল শার্লি। ডিলন লক্ষ করল শার্লির গ্লাস খালি। গ্লাসটায় অ্যাপল জ্যাক ঢেলে দিল সে। তারপর বসল শার্লির উল্টোদিকের চেয়ারে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল একদৃষ্টিতে। যুবতীর মিষ্টি মুখ আর নিখুঁত দেহ রক্ত চলাচলের গতি বাড়িয়ে দিল তার।

হঠাৎ আজকে তুমি ক্লিন্টের হয়ে কথা বলছ কেন, শার্লি? যখন কোন মানুষ ব্যর্থ হয়, ডুবে যেতে হয় তাকে।

ক্লিন্ট ব্যর্থ হয়েছে কিনা সে-ব্যাপারে আমার দ্বিমত আছে। আমার ধারণা ভাগ্যটা ওকে সহায়তা করছে না।

হ্যাঁ, ভাগ্য ওকে সহায়তা করছে না। আমাকেও করেনি। আর করেনি বলেই ক্লিন্টকে আমি ধার দিয়েছি। শ্রাগ করল ডিলন। বিনিময়ে কি পেলাম আমি? লোকসান সর্বস্ব একটা র‍্যাঞ্চ। লাভের মুখ দেখতে হলে আরও অনেক টাকা ওখানে বিনিয়োগ করতে হবে আমার।

উঠে দাঁড়িয়ে থমথমে মুখে ডিলনের দিকে তাকাল শার্লি। অনুভূতিপ্রবণ মেয়ে। আসন্ন সংঘাতের কথা চিন্তা করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে ওর। ক্ষণে ক্ষণে টাইট হয়ে যাচ্ছে ব্লাউজ। বুকের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে ডিলনের।

লিউ, মৃদু স্বরে বলল শার্লি। বাবা মারা যাবার পর তুমি আর ক্লিন্টই শুধু আমার সত্যিকারের বন্ধু। আমি চাই না তোমরা পরস্পারের বিরুদ্ধে লড়াই করো।

চেয়ার ছাড়ল ডিলন, যুবতীর কাছে এসে দাঁড়াল। ডিলনের চোখের ভাষা পরিষ্কার পড়তে পারল শার্লি। বুঝতে পারল কি ভাবছে এখন লোকটা। অনুভব করল স্বেচ্ছায় ডিলনের ইচ্ছে পূরণের মতো মন মানসিকতা এই মুহূর্তে নেই ওর। ডিলন বা ডসন, কাকে স্বামী হিসেবে বেছে নেবে এখনও স্থির করেনি ও।

ডিলনের পরবর্তী কথায় নিজেকে বন্দি একটা পশুর মতো মনে হলো শার্লির।

ডিলন আবেগ জড়ানো গলায় বলছে, বুঝতে পারছি তোমার কেমন লাগছে, শার্লি। তোমার কথা রাখতে পারলে খুবই খুশি হতাম। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই বোবঝা, ক্লিন্ট তোমার বন্ধু বলেই তাকে আমি ছেড়ে দিতে পারি না। তবে… একটু থামল ডিলন। তুমি যদি আমার বউ হতে তাহলে ব্যাপারটা আমি অন্যভাবে নিতাম। ক্লিন্টকে কিছুটা ছাড় দিতেও আপত্তি করতাম না হয়তো।

কথা শেষে শার্লিকে সে কাছে টেনে নিল। আপ্রাণ চেষ্টা করল শার্লি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার। শক্তিশালী পুরুষ ডিলন। প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে কাছে টানছে ওকে। চুমু খেতে শার্লির ঠোঁট খুঁজল ডিলনের মুখ। এত বাড়াবাড়ি ঠিক হচ্ছে না। মুখ। সরিয়ে নিল শার্লি। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, এখন নয়, লিউ! এখন নয়। লিউ, বাবার শেষকৃত্য শহরে। আমাকে যেতে হবে…

হ্যাঁ, ঠিক, যেতে হবে তোমাকে। ফোশ ফেঁশ করে শ্বাস নিচ্ছে ডিলন। শার্লিকে ছেড়ে দিয়ে এক পা পিছিয়ে দাঁড়াল। একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা কোরো। আসলে তুমি এত সুন্দর যে কাছে থাকলে দুনিয়ার আর কোন চিন্তা মাথায় থাকে না।

কালকে আসছ, লিউ? জিজ্ঞেস করল শার্লি। নিজেকে ফিরে পেতে এখনও লড়াই করছে ও ভেতরে ভেতরে।

মাথা দোলাল ডিলন। চোখ পড়ে আছে যুবতীর উন্নত বুকের দিকে।

আমার সঙ্গে দেখা হবার আগে ট্রিপল বারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করবে না তুমি, কথা দিচ্ছ?

প্রথম চিন্তা যেটা মাথায় এসেছিল চেপে গেল ডিলন। কথা দিতে অসুবিধে কি? নিজে জড়িত না হয়েও ক্লিন্টের ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবে ও। কি দরকার মেয়েটাকে চটিয়ে, যখন আসলেই মেয়েটাকে ওর এত প্রয়োজন!

ঠিক আছে, শার্লি, তোমার কথা রাখব, বলল সে। তবে ভবিষ্যতে আমার মতামতকে প্রভাবিত করতে হলে বিয়েতে দেরি করা চলবে না।

আমাকে তাড়া দিয়ো না, লিউ, দীর্ঘশ্বাস ফেলল শার্লি। গ্লাভস আর হ্যাট তুলে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল। আমাকে একটু ভাবতে দাও।

উঠানে বেরিয়ে এলো ডিলন, চেঁচিয়ে আদেশ দিল, যাতে শার্লির ঘোড়াটা কেউ এনে দেয়। করালের সামনে দাড়িয়ে একটা বুনো মাস্ট্যাং ঘোড়াকে বশ মানাতে দেখছে কে। তাকে ডাক দিল ডিলন। বলল, তুমি মিস শল্যান্ডের সঙ্গে শহরে যাবে। খেয়াল রাখবে কেউ যাতে তাকে পথে বিরক্ত না করে।

আস্তে করে নড় করল কেগ। দৃষ্টি স্থির হলো শার্লির ওপর। মাত্র এক মুহূর্ত, তারপরই চোখ সরিয়ে নিল গানম্যান। কিন্তু ওই একটি মুহূর্তে কাপ ধরে গেল শার্লির বুকের ভেতর। খর রোদে দাঁড়িয়ে শীত লেগে উঠল।

<

Super User