খাওয়া শেষ করে সবার সম্মিলিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে দৃঢ় পদক্ষেপে রাস্তায় বেরিয়ে এল ক্লিফ ফ্যারেল। জেলহাউসের সামনে ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে দশ বারজন লোক জটলা পাকাচ্ছে. এখন। এরা নিঃসঙ্গ মানুষ, হেঁটেল, শ্যাক কিংবা কোনও স্যালুনের অতিরিক্ত রুমে রাত কাটায়, হাতে কোনও কাজ নেই বোধহয়, জেলের সামনে রয়ে গেছে।

এতক্ষণ, সন্দেহ নেই, সবাই মিলে মদ গিলেছে। কিন্তু হৈচৈ করছে না ওরা। সবাই শান্ত। রাস্তা ধরে সামনে এগোলে ক্লিফ, জেলহাউসে ফিরে এল। নিষ্করুণ চোখে ওকে জরিপ করল জনতা।

জেলের ভেতরে ঢুকে স্টোনের দিকে তাকাল ক্লিফ। লোকজনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে মহা পাপ করে ফেলেছি!

এ-রকম হবে জানতাম, বলেছি না? বলল স্টোন।

তা বলেছ। ঘুরে কাঁচের, ফোর দিয়ে বাইরে চোখ রাখল ফ্যারেল। পাহাড়ের আড়ালে সূর্য লুকিয়ে পড়েছে, তবে এখনও আঁধার নামে নি। ঘড়ি দেখুল ও, সোয়া ছটা, অন্ধকার হতে এখনও প্রায় দুঘণ্টা দেরি।

ফিরে এসে বিছানায় বসল ও। রেগানের কী অবস্থা?

ভালোই। হাড়গোড় ভাঙে নি।

চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল,ফ্যারেল, টুপিট্রা টেনে চোখ ঢাকল। অবসাদে ভেঙে পড়তে চাইছে শরীর, কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না; ঘুম দরকার ওর। কাল রাতে ঘুমুতে পারে নি; দশ বার হাত দূরে একজন খুনীকে নিয়ে নিশ্চিতে ঘুমানো যায় না।

ঘুম নেমে এল ক্লিফের দুচোখে। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে তড়াক করে উঠে বসল ও। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, চারদিকে অন্ধকার। দরজার গায়ে গাছের গুড়ি দিয়ে ধাক্কা মারছে জনতা।

দ্বিধান্বিত, হতবাক চেহারায় ইতিউতি তাকাল ক্লিফ। গানর‍্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জেস স্টোন, কিন্তু ওর হাতে অস্ত্র নেই।

বিছানা থেকে নামল ক্লিফ, র‍্যাকের সামনে এসে একটা ডাবল ব্যারেল্ড শটগান তুলে নিল। ডেস্কের ড্রয়ার থেকে কার্তুজ নিয়ে দ্রুত তৈরি করে নিল অস্ত্রটা। রাগত চেহারায় স্টোনের দিকে তাকাল। তোমার কী হলো?দেখছ না। জেল ভাঙার চেষ্টা করছে ওরা?।

কাঁধ ঝাঁকাল স্টোন। দেখেছি। কিন্তু কী করব? একটা বদমাশ রেপিস্টকে বাঁচাতে নিরীহ শহরবাসীর ওপর গুলি ছুড়ব?

নিরীহ? বলে কী! নিরীহ হলে এমন করে? কে আসল, রেপিস্ট ওরা. জানে? না দুজনকেই ঝোলাতে চায়? একজন তো দোষী হবেই, তাই না?

রাগে জ্বলে উঠল স্টোন। দেখো, আমার সাথে মেজাজ দেখিয়ো, না! এখানে আমি শেরিফ, তুমি ডেপুটি মাত্র!

মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করল ক্লিফ ফ্যারেল। আমার বাবা একবার লোক চিনতে ভুল করেছিল, ঠিক, কিন্তু আসামীকে কখনও লিঞ্চিং মব-এর হাতে তুলে দেয় নি। আমিও তা করতে দেব না!

চাইলে তোমাকে বরখাস্ত করতে পারি আমি, জানো! কেড়ে নিতে পারি ওই ব্যাজ!

ঝট করে জেস স্টোনের দিকে তাকাল ফ্যারেল। চেষ্টা করেই দেখো!

দরজার দিকে এগোল ও। অপেক্ষা করল কয়েক মুহূর্ত। গাছের গুড়ি আবার কাটে আঘাত করতেই এক টানে দরজা খুলে ফেলল। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল জনতা, নড়তেও ভুলে গেল।

প্রায় ডজনখানেক হারিকেনের আলোয় ঝলমল করছে জেলখানার সামনের রাস্তা। জনাপঞ্চাশেক তোক দেখা যাচ্ছে। কোত্থেকে একটা উপড়ানো টেলিগ্রাফের খুঁটি যোগাড় করে এনেছে, সেটা দিয়েই দশবার জন লোক দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিল। এখন প্রস্তর মূর্তিতে পরিণত হয়েছে সবাই।

কাকে ঝোলাতে চাও তোমরা? চেঁচিয়ে জানতে চাইল ফ্যারেল।

যাকে ধরে এনেছো।

ও-ই দোষী কীভাবে জানলে?

জানাজানির আবার কী আছে? ওটা-ই আসল হারামজাদা, দেখলেই বোঝা যায়!

হাসল ক্লিফ। পোমরয়ের গলা না?

জনতার মাঝে হাসির রোল, পড়ল। হাসি থামতেই তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল ক্লিফ। এখানে গোলমাল না করে বাড়ি ফিরে যাও। জেস হয়তো তোমাদের পথ ছেড়ে দিত, কিন্তু আমি ছাড়ব না। সারা রাত দরজার দিকে শটগান ধরে বসে থাকব, ফের যদি দরজায়, বাড়ি পড়ে সঙ্গে সঙ্গে ট্রিগার টিপব, মনে রেখো এটায় বাকশট ঢোকানোযার গায়ে লাগবে, সোজা জাহান্নামে চলে যাবে।

হঠাৎ নীরবতা নামল রাস্তায়। কঠিন চোখে আরও একবার জনতার দিকে তাকাল ফ্যারেল, তারপর ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিল। পা দিয়ে একটা চেয়ার টেনে ঠিক দরজার মুখে বসে পড়ল।

হঠাৎ চোখ তুলে দেখল কাঁচের ফোকর দিয়ে ওকে দেখছে কে যেন, চোখাচোখি হতেই অদৃশ্য হলো মুখটা।

ক্লিফ জানে, এবার আলোচনার ঝড় উঠবে জনতার মাঝে, মদ গিলে মাতাল হবে ওরা, হুমকি দেবে ওকে। কিন্তু জেল ভাঙার আর চেষ্টা করবে না। আর জেল না ভেঙে আসামীকে ছিনিয়ে নেয়ার কোনও উপায় নেই। শটগানের একটা ট্রিগারে হাত রেখে সতর্ক পাহারায় রইল ক্লিফ। যাবার আগে ওকে বাজিয়ে দেখবে জনতা, জানে, ওদের নিরাশ করবে না।

পাঁচ মিনিটের মতো কেটে গেল নীরবে। বিছানায় শুয়ে পড়ল স্টোন। সেলের ভেতর কথা বলছে দুই কয়েদী, কিন্তু কী বলছে বোঝা যাচ্ছে না।

অকস্মাৎ, এল হামলা। হামলা আসবে জানা থাকা সত্ত্বেও চমকে উঠল ফ্যারেল। প্রচণ্ড বাড়ি পড়ল দরজায়। গাছের গুঁড়ি নয়, বড়সড় পাথর ছুঁড়ে দিয়েছে কেউ।

দরজার মাত্র ছইঞ্চি দূর থেকে শটগানের ট্রিগার টিপল ক্লিফ।

বদ্ধ ঘরে বিস্ফোরণের প্রচণ্ড, শব্দ হলো, কানে তালা লেগে গেল। শটগানের মাযলে ধোঁয়া উড়ল। ধোয়া কেটে যাবার পর দেখা গেল, দরজার গায়ে প্রায় দুইঞ্চি প্রস্থচ্ছেদের একটা ফোকর তৈরি হয়েছে; কিন্তু বাইরে থেকে কারও আর্তনাদ শোনা গেল না।

 দ্রুত শটগান লোড করে নিল ক্লিফ, হ্যামার কক করল।

অস্ত্রটা কোলের ওপর রেখে পকেট থেকে কাগজ তামাক বের করে সিগারেট বানিয়ে ধরাল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল শেরিফের দিকে।

আজ রাতে আর উৎপাত করবে না কেউ। দরজার ফোকর দিয়ে ওকে গুলি করে মারতে চাইলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ওরা চরম সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না।

ধীরে ধীরে স্তিমিত হলো বাইরের কোলাহল। হারিকেনগুলো অদৃশ্য হলো। দরজার বিকট ফোকরটার দিকে বিষণ্ণ চেহারায় তাকিয়ে বসে রইল ফ্যারেল।

শটগানের গোলায় দরজায় ফোকর তৈরি হয়েছে, কিন্তু বিপদ কাটে নি। কেন যেন অস্বস্তি বোধ করছে ফ্যারেল, আশঙ্কায় কেঁপে উঠছে বুক; সামনে আরও গোলযোগ, রক্তপাত আর মৃত্যু অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে।

ল্যুক রেগানকে হত্যা না করে ভুল করল না তো?

<

Super User