আরও দুদিন কেটে গেল। অনেকখানি শক্তি ফিরে পেয়েছে এখন সলটার। তানিয়ার সেবা-শুশ্রষা পেয়ে মানসিক ভাবেও যথেষ্ট সুস্থ বোধ করছে।
নাস্তার টেবিলে প্রচুর খাবার-দাবার সাজানো রয়েছে তার জন্যে। এতদিন পর আজই টেবিলে খেতে এসেছে সে। অকারণেই ওর আশপাশে ঘুরঘুর করল তানিয়া। এগিয়ে দিল এটা ওটা। ব্যাপারটা উপভোগ করল সলটার।
সেদিন সকালটা বারান্দার বেঞ্চিতে বসে কাটাল সে। দুপুরের ঠিক আগে জর্জ ওয়াগনার আর র্যাঞ্চের অন্যেরা ফিরে এল। ক্লান্ত, অবসন্ন, মলিন দেখাচ্ছে তাদের।
কেমন আছ? প্রশ্ন করল জর্জ। স্যাডল থেকে লাফিয়ে নামল সে। আরও সপ্তাহখানেক বিশ্রাম দরকার তোমার। চেহারা তাই বলছে।
কোন কিনারা হল? প্রশ্ন করল সলটার।
ধুর! হতাশ শোনাল জর্জের কণ্ঠ। ঘাড় ফিরিয়ে সঙ্গের লোকগুলোর দিকে চাইল সে। ঘোড়া থেকে স্যাডল খুলছে ওরা। বিশ্রাম নিতে যাবে।
পুরো এলাকাটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি আমরা। রসলারদের টিকিটিও দেখলাম না। শহর থেকে পসি বাহিনী এসেছে। এছাড়া অন্যান্য র্যাঞ্চের লোকেরা তো ছিলই। সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক ছিলাম আমরা। সব পরিশ্রমই পানিতে গেল।
ঠিক মত খোঁজনি তোমরা, সলটার দৃঢ়স্বরে বলল।
কি বললে? রেগে উঠল জর্জ। ক্লান্তি আর হতাশায় লাল হয়ে গেছে মুখ। বললাম না তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।
তা তো বুঝলাম, কিন্তু তবু যে রাসলারদের খোঁজ পাওয়া গেল না এর কারণটা অন্যখানে।
বল শুনি কি কারণ, কর্কশ কন্ঠে বলল জর্জ।
রাসলাররা, তোমার সাথেই ছিল।
কি যা তা বলছ! গুলি খেয়ে মাথার ঠিক নেই তোমার।
জর্জ, তুমি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নাও, বলল সলটার, পরে এ ব্যাপারে কথা আছে তোমার সঙ্গে।
জবাব দিল না জর্জ। ঘুরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে এক কাউবয়কে ডাকল। তার ঘোড়াটা নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে চলে গেল।
জনা ছয়েক লোক এসময় এগিয়ে এল বারান্দার কাছে। এ র্যাঞ্চের কাউবয়।
কেমন আছ, সলটার? জানতে চাইল জো। বাকিরা জবাব শোনার জন্যে, অপেক্ষা করতে লাগল।
সেরে উঠছি, উত্তর দিল সলটার। এদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক তার! বেশিরভাগই পুরানো লোক এরা। স্যাঞ্চের প্রতি বিশ্বস্ত, অনুগত। তাকেও জান দিয়ে ভালবাসে, সমীহ করে।
অসম্ভব খেটেছ তোমরা। আমি তোমাদের জন্যে গর্বিত। নেহাত কপাল খারাপ আমাদের। তাই এখনও খোঁজ পেলাম না রাসলারদের। তবে আমাকে একটা সপ্তাহ সময় দাও আমি কিছু একটা করবই, বলল সলটার।
এর পেছনে কারা আছে মনে হয় তোমার? প্রশ্ন করল মার্টিন।
এখনও জানি না তবে বার করে ফেলব। তোমরা বিশ্রাম নাওগে যাও।
ম্যাকগ্রর সাথে কি হয়েছিল, সলটার? আমাদের জানা থাকা দরকার, বলল। একজন। জোহান বলেছে যদিও, তবু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
তেমন কিছু না, মৃদু হেসে বলল সলটার। জোহানকে খুঁজতে স্যালুনে গিয়েছিলাম, ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি ম্যাকগ্রর। সে আমাকে মারতে আসাতে শুইয়ে দিয়েছিলাম মাটিতে।
ব্যাপারটা এত সহজে ও ভুলবে না, সলটার, বলল মার্টিন। ওকে তো তুমি চেনই। ভাগ্যিস অসকার এই কাউন্টিতে এসেছিল। ম্যাকগ্র দূর হওয়াতে বেঁচেছি আমরা।
ও এখান থেকে দূর হলেও আমার ওপর থেকে রাগ দূর হয়নি ওর, ধীরে ধীরে বলল সলটার।
চুপ করে ওর কথাগুলো শুনল অনন্যরা। বেট ডান হাত দিয়ে ঘুসি মারল নিজের বাঁ হাতে।
খুনীটাকে কি ওই শালাই পাঠিয়েছিল? ক্রুদ্ধ শোনাল তার কণ্ঠস্বর।
আগে আমাকে প্রমাণ পেতে দাও। তারপর তোমরা তো সব জানবেই। এক সঙ্গেই যা করার করব আমরা।
এ কথায় অনেকখানি শান্ত হল ওরা। ফিরে চলল বাঙ্ক হাউসে। জর্জের ঘোড়াটা নিয়ে চলল একজন। বেঞ্চে আবার আরাম করে বসল সলটার।
সলটার, একটা বালিশ দেব? পিঠে আরাম পাবে, তানিয়ার কণ্ঠ। চকিতে ঘাড় ফেরাল সলটার। সুন্দর মুখটা অসম্ভব টানে তাকে। চুম্বকের মত। এ মুহূর্তে প্রচণ্ড ভালবাসা অনুভব করল সে মেয়েটির প্রতি।
দরকার নেই, তানিয়া, সহজ গলায় বলল সে। এগিয়ে এল তানিয়া। বেঞ্চিতে ওর পাশে বসে পড়ল। আমাকে একেবারে রোগী বানিয়ে ফেলেছ তোমরা, বলল সলটার। কালই আবার স্যাডলে চাপব আমি।
পাগল নাকি! রেগে উঠল তানিয়া। কাল ডাক্তার আসবেন। তুমি উল্টো পাল্টা কিছু করলে সব দোষ পড়বে আমার ঘাড়ে; সেটা হচ্ছে না। কোনরকম ঘাড় তেরামি চলবে না তোমার।
ঘাড় তেরামি? হেসে প্রশ্ন করল সলটার। আমি আবার ঘাড় তেরামি করি নাকি?
করই তো, তানিয়ার কণ্ঠে কপট রাগ।
আমার তো ধারণা ছিল আমি ঠাণ্ডা স্বভাবের লোক, বলল সলটার।
সবাই নিজেকে তাই মনে করে, হেসে ফেলল তানিয়া। ইদানীং তোমাকে আমার কেমন যেন ভয় করে। যেমন গোমড়ামুখো হয়ে গেছ তুমি, ভয় করবে না? কি হয়েছে, সলটার? তুমি তো এমন ছিলে না।
কিছু হয়নি, তানিয়ার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ও। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। মেজাজের কারণ, তানিয়ার প্রতি তার বুক ভরা ভালবাসার কথা বলে ফেলতে পারলে হালকা হতে পারত সে। মুখ খুলতে গিয়েও অসকারের কথা–ভেবে চুপ করে গেল ও। ওকে লক্ষ করল তানিয়া। বুঝল প্রসঙ্গটা অস্বস্তিতে ফেলেছে সলটারকে।
নিজের প্রতি তোমার খেয়াল নেই, সলটার, বলল তানিয়া। উঠে পড়ল বেঞ্চি থেকে। থাকলে বুঝতে কতখানি বদলে গেছ তুমি। কেন বদলেছ সে তুমিই জান।
জবাব দিতে পারল না সলটার, চলে গেল তানিয়া। সেদিকে চেয়ে রইল সে, দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল। ছোট হল চোখ। মেয়েটিকে বড় বেশি ভালবেসে ফেলেছে সে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি। রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে।
ওদিকে ধীরে ধীরে তানিয়ার হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে অসকার। লোক যেমনই, হোক সে, টাকা তো আছে।
তিক্ততায় ছেয়ে গেল সলটারের মন। যে কোন কিছু মোকাবেলা করতে পিছপা নয় সে। কিন্তু অসকারের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তানিয়ার পছন্দের লোকের কোন ক্ষতি করতে পারবে না ও।
র্যাঞ্চের চারদিকে চাইল সে। এটাই ওর বাড়ি। বাবা ওর তিন বছর বয়সে এখানে নিয়ে এসেছিলেন ওকে। তারপর থেকে এখানেই রয়েছে ও, ওয়াগনারদেরকে পরম আত্মীয় বলে জেনেছে। ও জানে তানিয়া ওকে পছন্দ করে। তবে সেটা নিছকই বন্ধুত্ব। তবে, তানিয়ার কাছে ভালবাসার কথা প্রকাশ করবে সে। সেজন্যে সময় চাই তার। আগে যোগ্যতা অর্জন, তারপর অন্য ভাবনা। নিজের জন্যে একটা র্যাঞ্চ গড়ে তুলতে হবে। র্যাঞ্চ ‘এস’ নাম হবে ওটার। তারপর প্রস্তাব দেবে তানিয়াকে। অবশ্য ততদিনে যদি আসকারের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে বা যদি বিয়েই হয়ে যাবে তবে এতসব ভাবনা সবই বৃথা। তাতে আপত্তি নেই সলটারের। তানিয়া সুখী হলেই খুশি ও।
সেদিন বিকেলে আবার বারান্দার বেঞ্চিতে গিয়ে বসল সলটার। গনগনে রোদ এখন বাইরে। চোখ বুজে ভাবতে লাগল সলটার। কল্পনায় দেখতে পেল গুলি খাওয়ার দৃশ্যটা। আবার কি সিক্সগানটা ব্যবহার করতে পারবে সে? নাকি সেদিনের সেই গুলিটা মনের জোর কেড়ে নিয়েছে ওর?
হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হল। গুলি। চমকে উঠল সলটার। ঠিক মাথার পেছনের কাঠে লেগেছে গুলিটা, বাঙ্ক হাউসের পাশ দিয়ে তাকাল ও। প্রায় শ’তিনেক গজ দূরে আবছা ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে দেখল সে। পরমুহূর্তেই মেঝেতে শুয়ে পড়ল সলটার, ঝাঁকি খেল কাঁধ। ফলে ককিয়ে উঠল সে। খানিক বাদেই ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ল জানালার কাঁচ।
জোহানকে এসময় দেখা গেল দরজায়। চেঁচিয়ে ওকে ভেতরে যেতে বলল সলটার। রাইফেল আনার জন্যে। জোহান যেন ওর কথা বুঝতে পারেনি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল সে। সলটার দেখল দরজার কাঠের খানিকটা অংশ ছিটকে পড়ল। এবার আর কিছু বলতে হল না জোহানকে। অদৃশ্য, হয়ে গেল সে।
আরও কয়েকটা গুলি এল। দু’বার অল্পের জন্যে বেঁচে গেল সলটার। গানম্যান পজিশন বদলেছে, বুঝতে পারল। তবে নড়ল না ও। বাঙ্কহাউসের সামনে থেকে সম্মিলিত কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেল। মুহূর্ত পরেই কমপক্ষে ছটা রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হল। গুলির শব্দে পুরো র্যাঞ্চটা প্রকম্পিত হয়ে উঠল।
দৌড়ে বেরিয়ে এল জর্জ। হাতে রাইফেল। সলটারের পাশে চলে এল সে। সলটার ততক্ষণে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
গুলি লাগেনি তো? প্রশ্ন করল জর্জ
না, দৃঢ় স্বরে বলল সলটার। ভেতরটা কেমন যেন করছে তার। ওকে টার্গেট করেছে কেউ। কে?
এতবড় সাহস! ওরা শেষ পর্যন্ত র্যাঞ্চে হামলা করল? ক্রুদ্ধ জর্জ বলল।
জবাব দিল না সলটার। বসে পড়ল বেঞ্চিতে। আহত স্থানে চাপ দিল ডান হাত দিয়ে। দপদপ করছে ব্যথাটা। বুকের ভেতর জ্বলছে আগুন। তুমি ভাবছ লোকটা রাসলার। তাই না, জর্জ?
তাই তো। তোমার কোন সন্দেহ আছে? উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল জর্জ। র্যাঞ্চের কজন লোক ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে ধাওয়া করল গানম্যানকে। আরও কজন বেড়ার কাছে দাড়িয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে লাগল।
সলটার। রাসলাররা স্থানীয় লোক, এ ধারণা তোমার এখনও রয়েছে?
অবশ্যই। অসহিষ্ণুভাবে বলল সলটার। দয়া করে আমার কথা শোন। প্রথমেই যদি শুনতে তবে সকলেরই ভাল হত। পুরো কাউন্টি তো খুঁজেছ তোমরা, তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু রাসলারদের চিহ্ন পাইনি কোথাও, দ্রুত বলল জর্জ। জোহান আর তানিয়াকে এ সময় দেখা গেল দরজায়। ভেতরে যাও, ওদের দেখে ধমকাল জর্জ। মরার শখ হয়েছে?
হাসি চাপল সলটার। জর্জের ধমকে জোর আছে। সুড়সুড় করে ভেতরে চলে গেল দু’ভাই-বোন। আবার ওর দিকে ফিরল জর্জ।
তোমার ধারণা কি? প্রশ্ন করল জর্জ। তোমার সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়। স্বীকার করতে দোষ নেই।
সিদ্ধান্ত নয়, সন্দেহ বলতে পার, বলল সলটার। রসলারদের খোঁজ মেলেনি এবং তারা এ কাউন্টি ছেড়েও যায়নি। কাজেই নিশ্চয় স্থানীয় লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। আমার ধারণা তারা আশপাশের র্যাঞ্চেই আছে। এবং তারাও রাসলারদের খোজার ভান করছে। মুখ দেখে তো আর বোঝার উপায় নেই কে রাসলার, যদি না গরু সহ ধরা পড়ে।
তোমার কথা হয়ত সত্যি, ভারী গলায় বলল জর্জ। ওরা কোন র্যাঞ্চের লোক সেটা তো বললে না। বাইরে উঠনের দিকে চাইল জর্জ। তার র্যাঞ্চের লোকজনেরা রয়েছে ওখানে। আমাদের লোকেরা নয় তো?
না, আমি বিশ্বাস করি না। তবে যদি হয় সেটা নেহাত দুর্ভাগ্য। যা হোক কোন্ পথে গরু তাড়িয়ে নেয়া হয় সেটা বল।
সবগুলো ট্র্যাক চলে গেছে রেড রিজ কান্ট্রির দিকে, যেখানে তোমরা গুলি খেয়েছ।
রেড রিজ যেখান থেকে শুরু অসকারের র্যাঞ্চ সেখানেই শেষ।
তুমি বলতে চাও এই রাসলিং-এর পেছনে অসকারের হাত আছে? জর্জের কণ্ঠে বিস্ময় আর অবিশ্বাস।
আমি তা বলছি না। অসকার বেশিদিন হয়নি এসেছে এখানে। ওর পক্ষে এরকম একটা পরিকল্পনা করা এত সহজ নয়। আমি বলছি ম্যাকার কথা। র্যাঞ্চ। ‘ও’-র মালিক বলতে গেলে সে-ই। অন্তত ওর কাজ-কর্মে তাই মনে হয়। শনিবার। বিকেলে ওর সঙ্গে শহরে গোলমাল হল আমার। ক’ঘণ্টা পরেই গুলি খেলাম আমি, আর শেরিফ মারা গেল।
যে লোক গুলি করেছে সে ম্যাকগ্র নয়। তুমিই বলেছ।
আমি আমার সন্দেহের কথা বলছি। ম্যাকগ্র ভাল লোক নয়, সে তুমি ভালই জান। ওর স্বভাব এমন যে সহকর্মীদের বুকে অস্ত্র ধরতেও দ্বিধা করবে না। আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ও নিশ্চয়ই কিছু জানে।
মাথা ঠাণ্ডা কর, সলটার। আসলে ম্যাকগ্রর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে তোমার। তুমি ধরেই নিচ্ছ ফোরম্যান হওয়ার জন্যে তোমার বাবাকে খুন করেছে
সেটা কি একেবারেই অসম্ভব?
না। ওর সত্যিই ইচ্ছে ছিল ফোরম্যান হওয়ার। তোমাকে ফোরম্যান করায় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল সে। তোমার বাবার খুনের ব্যাপারে ওকে যদি সন্দেহ করিও তবু রাসলিং-এর সঙ্গে ও জড়িত রয়েছে সেটা ভাবতে পারছি না আমি।
পারবে।
কিভাবে?
ফাঁদ পাতব আমরা। দেখি ও ধরা দেয় কিনা।
খুলে বল।
সময় হলে বলব, জবাব দিল সলটার। আমার ধারণা ভুল নয়। এইমাত্র যে গোলাগুলি হয়ে গেল এটা কোন সাধারণ রাসলারের কাজ হতে পারে না।
সে তুমি জান, বলল জর্জ। ওর কথায় অসন্তুষ্ট। ওরা ফিরে এসেছে।
উঠে দাঁড়াল সলটার। চেয়ে দেখল তিনজন অশ্বারোহী ফিরে আসছে। সাথে বাড়তি ঘোড়া নেই। তারমানে গানম্যান ধরা পড়েনি। পালিয়েছে। জো লাথি মারল ঘোড়ার পেটে বারান্দার কাছে চলে এল ঘোড়া।
কপাল খারাপ, বস্, হতাশ ভঙ্গিতে বলল সে। শালা পালিয়েছে। খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে নাকি?
না। তেমন কিছু না। একটা জানালা ভেঙেছে কেবল, জবাব দিল সলটার।
ধন্যবাদ, জো।
আমরা ঘোড়ায় চেপে পাহারার কথা ভাবছিলাম, বলল জো।
দরকার নেই, বলল জর্জ। তবে কাউবয়দের বল গোটা কয়েক ঘোড়ায় স্যাডল পরিয়ে তৈরি রাখতে। যে কোন সময় দরকার পড়তে পারে। নিজেরাও সতর্ক থাকবে।
অবশ্যই, দৃঢ়স্বরে বলল জো। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল সে।
ভেতরে এস। বাইরে থাকা ঠিক নয়, সলটারকে বলল জর্জ। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল সলটার। ধীরে ধীরে এগোল দরজার দিকে।
তানিয়া রয়েছে রান্নাঘরে। দুপুরের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। সলটারের দিকে বড় বড় চোখে চাইল সে। খাবার টেবিলে যথারীতি উত্তেজিত হয়ে উঠল জোহান, আজকের ঘটনার ব্যাপারে। ওকে গম্ভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল সলটার। ছেলেটা ম্যাকগ্রদের সাথে বেশ কিছুদিন মেলামেশা করেছে। ও কি জানে কিছু? হয়ত ওদের দু’একটা কথা কানে এসেছে জোহানের–কিন্তু গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে। করেনি সে। ওকে জিজ্ঞেস করা দরকার। খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল সলটার।
জোহান, শান্ত কণ্ঠে বলল সে। ম্যাকগ্রদের সঙ্গে ইদানীং প্রচুর মেলামেশা করেছ তুমি।
করেছিলাম। তবে আর নয়, বলল সে।
জর্জ টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল। কিন্তু সলটারের উদ্দেশ্য বুঝে বসে পড়ল। সরু চোখে চাইল ছেলের দিকে। অস্বস্তি বোধ করছে জোহান।
ভাল, বলল সলটার। ম্যাকগ্রর সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তোমার। এমনকি ওর প্রেমিকার সাথে তোমাকে মিশতে দিতেও দ্বিধা করেনি সে। তাই?
লাল হয়ে উঠল জোহানের মুখ। বাপের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই মাথা নিচু করল সে।
সলটারের প্রশ্নের জবাব দাও, মৃদুকণ্ঠে বলল জর্জ।
কি জানতে চাও বল, সলটারকে বলল জোহান।
মার্কর কথা জানতে চাই। ওকে বা ওর কোন লোককে কখনও এ এলাকার রাসলিং-এর ব্যাপারে কিছু বলতে শুনেছ?
না, জবাব এল। সলটারের মনে হল এত শীঘ্রি প্রশ্নটা করে বসা উচিত হয়নি।
শোন সলটার। ম্যাকগ্র খারাপ লোক নয়। লোকে ওকে ভুল বোঝে, বলল জোহান।
কথা গোপন করছ কেন? প্রশ্ন করল জর্জ।
করছি না, বাবা। গোপন করার কি আছে?
আমাকে বল, নরম স্বরে বলল জর্জ। আমি তোর বাবা। মুখ দেখে আমি তোর মনের কথা বলে দিতে পারি। তুই কিছু একটা গোপন করতে চাইছিস। কি সেটা? ম্যাকগ্র কি এই রাসলিং-এর হোতা? ওদের কাউকে চুরির ব্যাপারে কিছু বলতে শুনেছিস?
না, বাবা। ভুল চিন্তা করছ তোমরা, ম্যাকগ্র এর সাথে জড়িত নয়।
বিশ্বাস করি না, কর্কশ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। মিথ্যে বলছিস তুই। মনে রাখিস শেরিফকে খুন করা হয়েছে। নতুন শেরিফ অপরাধীকে ছেড়ে দেবে না। খুঁজে বার করবেই। তোর কোমরে দড়ি পড়বে না তো?
না, চিৎকার করে উঠল জোহান। চেয়ার ঠেলে দরজার দিকে হাঁটা দিল সে। ওর বাবা প্রায় লাফিয়ে এসে চেপে ধরল ছেলের বাহু। ছেড়ে দাও আমাকে, প্রায় ধমকে উঠল জোহান। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ তোমরা। আগেই বলেছি আমি এসবের কিছুই জানি না। ছাড়। ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল জোহান। বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।
ও এতে জড়িয়ে গেছে, কঠিন গলায় বলল জর্জ। তবে কিভাবে জড়াল আমাকে জানতে হবে।
<