০৮.
সাবধান করে থামানোর সময় নেই। লাফ দিয়ে এসে ডায়নার হাতে থাবা মারল কিশোর। মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল বড়িগুলো।
চিৎকার দিয়ে উঠল ডায়না।
কিশোরের কলার চেপে ধরল একটা হাত। ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল ডিন, এটা কি করলে?
ওর প্রাণ বাঁচালাম। আর্সেনিকের বোতলটা তুলে ধরল কিশোর।
নীরব হয়ে গেল ঘরটা।
ককিয়ে উঠল ডায়না। কটে বিছানো চাদরের মতই সাদা হয়ে গেছে মুখ।
সর্বনাশ! কিশোরের হাত থেকে ছোঁ মেরে শিশিটা কেড়ে নিলেন নরিয়েমা। আ-আ…আমি এটা কি করছিলাম!
আর্সেনিকের বোতল কেন এখানে? জানতে চাইল কিশোর।
সর্বনাশ! কি করছিলাম আমি! সর্বনাশ! কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না যেন নরিয়েমা। জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। কতবার ভেবেছি, কোন দিন এ রকম কিছু ঘটে যাবে! তবু সাবধান হলাম না। আজকে তো দিয়েছিলাম শেষ করে! ওষুধের দোকান থেকে আমিই কিনে আনি ওগুলো, পানিতে মিশিয়ে জমিতে ছিটাই আগাছা মারার জন্যে। অন্যান্য কেমিক্যাল আর ওষুধের সঙ্গে এখানেই রাখি। উচিত হয়নি, একেবারেই উচিত হয়নি। এই পোড়া চোখেও আজকাল আর ভাল দেখি না ছাই!…ডায়না, তোর কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি, মা!
তো-তোমার কোন দোষ নেই খালা, পানিতে ভরে গেছে ডায়নার চোখ। আমার কপাল! তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে কোনও একটা শক্তি, বাধা দেয়ার ক্ষমতাই ছিল না তোমার! জাস্ট করে ফেললে কাজটা!
কি বলতে চাস?
বোরজিয়া ড্যাগারের অভিশাপ! তোমার ওপর ভর করেছিল! চেঁচিয়ে উঠল ডায়না, হতাশায় ভরা কণ্ঠ, শেষ হয়ে গেছি আমি! একবার যখন ছুঁয়ে ফেলেছি, আর কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে! কেউ না! কোথাও গিয়ে আর বাঁচতে পারব
কিছুই হবে না, অভয় দেয়ার চেষ্টা করল কিশোর। সাধারণ দুর্ঘটনা এগুলো। অভিশাপ বলে কিছু নেই।
ও ঠিকই বলেছে, ডায়না, নরিয়েমা বললেন। ভুলটা আমারই। আরও সাবধান হব। এখন ঘুমাও। ঠিক হয়ে যাবে।
মাথার নিচে বালিশটা ঠিকঠাক করে দিলেন তিনি। ঘুমাও। আমি আর ডিন রইলাম, কোন ভয় নেই। এখানে কিশোরদের না থাকলেও চলবে।
পরিশ্রমে যতটা না তার চেয়ে বেশি ভয়ে কাহিল হয়েছে ডায়না। চোখের পাতায় কাঁপন জাগল। মুদে এল আপনাআপনি। ডিন আর নরিয়েমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, নিঃশব্দে অফিস থেকে বেরিয়ে এল কিশোর, মুসা আর রবিন।
বুড়িটাকে এক বিন্দু বিশ্বাস করি না আমি, হাঁটতে হাঁটতে বলল রবিন। বলছে ভুল হয়েছে। কি করে হলো? সব সময় কেমিক্যাল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে যে, তার এ রকম ভুল হয় কি করে?
কি জানি, গাল চুলকাল মুসা, ভুল সব মানুষেরই হতে পারে। যে রকম নার্ভাস হয়ে পড়ল, তাতে তো মনে হলো সত্যিই অ্যাক্সিডেন্ট। আসলে কি দিচ্ছে খেয়ালই করেনি।
আমিও মানতে পারছি না ব্যাপারটা, যোগ করল কিশোর।
*
চল্লিশ মাইল গতিতে বিপজ্জনক মোড় নিল পিকআপ।
করছে কি বলো তো! গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর আত্মহত্যা করতে চায় নাকি।
ক্লিফসাইড রোড ধরে ছুটছে দুটো গাড়ি। আগেরটা নীল কভারটিবল, পেছনেরটা সবুজ পিকআপ। আগের গাড়িটার খোলা ছাত। ড্রাইভারের সীটে বসা মেয়েটার লাল চুল লম্বা হয়ে উড়ছে বাতাসে।
ওটা ওর দুই নম্বর গাড়ি, মুসা বলল। আর কটা আছে এ রকম?
আছে নিশ্চয় অনেকগুলো টাকার তো অভাব নেই। তবে তৃতীয় গাড়িটা একটা মডেল টী হলে খুশি হতাম। বিশ মাইলের বেশি স্পীড তুলতে পারত না। আসলে, ওকে বাড়ি পৌঁছে দেয়া উচিত ছিল আমাদের।
বললাম তো কত করে, রাজি হলো না।
ক্লাব থেকে বাড়ি ফিরছে ডায়না। কমলা রঙের রোদ পড়েছে বনের গাছে গাছে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। মরগানদের সীমানায় ঢুকে পড়ল নীল গাড়িটা। খোয়া বিছানো পথে ধুলোর ঝড় তুলে এগিয়ে গিয়ে স্কিড করে থামল। একটা গ্যারেজের সামনে। চারটে গাড়ি রাখার জায়গা আছে ওটাতে।
পিকআপের গায়ে হালকা ধুলো জমেছে। রঙ কালো বলে ধুলোগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বেশি। উইন্ডশীল্ড ওয়াইপারটা চালু করে দিয়েছে মুসা, কাঁচ থেকে ধুলো মোছার জন্যে।
ডিরেক্টরি ঘেঁটে ইচ্ছে করলে ডায়নার ফোন নম্বরটা বের করে নিতে পারবে রবিন, তাই না? কিশোর বলল।
পারবে। আমাদেরকে খুঁজে বের করাও কঠিন হবে না। মরগান ম্যানশনটা কোথায়, ডিরেক্টরি খুললেই জেনে যাবে।
তুমিই কিন্তু ডায়নার বডিগার্ড সাজতে রাজি করালে আমাকে, আরেক দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
আমি মুসা অবাক। এই, কি বলছ…
ওয়েলকাম! ওয়েলকাম! গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল ডায়না।
ডায়না…
কিশোরকে কুথা শেষ করতে দিল না মেয়েটা। ঘুম থেকে উঠে খুব ভাল লাগছে। কটেজে গিয়ে ঘর দেখে এসো। আমাকে আসতে হবে?
মাথা নাড়ল দুজনেই।
আর কিছু বলল না ডায়না। দ্রুত রওনা হয়ে গেল ম্যানশনের দিকে।
জড়তার লেশও নেই, পিকআপের দরজা খুলতে বলল কিশোর।
গাড়ি থেকে নামল দুজনে। বাড়ির আশপাশে ঘুরল খানিকক্ষণ। তারপর চলল ডায়না কি করছে দেখার জন্যে। কটেজে পরেও যাওয়া যাবে, ভাবল। বসার ঘরে পাওয়া গেল ডায়নাকে। একটা টেলিফোন অ্যানসারিং মেশিনের ক্যাসেট রিওয়াইনড করছে।
খুব ভাল লাগে আমার এ সব যন্ত্র, ডায়না বলল। সেক্রেটারির চেয়ে অনেক ভাল। ভুল করে না, ছুটি চায় না, খিদে পেয়েছে বলে বেরিয়ে যায় না। যখনই দরকার, পেয়ে যাবে। তার খরচও অনেক কম
প্লে টিপতেই চালু হয়ে গেল মেসেজঃ হালো, মিস মরগান। জুভেনার বলছি। আপনার দাদার দলিলটা খুঁজে পেয়েছে আমাদের কর্চারী। অনেকগুলো ফাইলের নিচে চাপা পড়েছিল। কাল নাগাদ হাতে পেয়ে যাব। মঙ্গলবারে দয়া করে বাড়িতে থাকবেন, জিনিসগুলো ফেরত আনতে যাব। আরেকটা কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, মূর্তিটার দামও আপনাকেই শোধ করতে হবে। গ্রীক মূর্তিটার কথা বলছি। ওটা ভাঙার জন্য আপনাকেই দায়ী করব আমি। আপনিই জোর করে জিনিসটা নিয়ে গেছেন মিউজিয়ম থেকে। ভাল থাকুন।
চামড়ায় মোড়া গদিওয়াল আর্মচেয়ারে নেতিয় পড়ল ডায়না। চকের মত সাদা হয়ে গেছে গাল।
এ রকম কিছু হবে, আমি জানতাম, মুসা বলল। খারাপ লাগছে মেয়েটার জন্যে।
জানতে, না? কেঁকিয়ে উঠল ডায়না। তা তো জানবেই। তোমার তো আর কিছু না।
সরি, ডায়না। ওভাবে বলতে চাইনি-
জানি, জানি! জোরে নিঃশ্বাস ফেলল ডায়না। একদিক থেকে ভালই হলো। হতচ্ছাড়া এই জিনিসগুলো শুধু ভোগাচ্ছেই আমাকে, ক্ষতিই করছে। দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলোর ওপর চোখ বোলাল সে। ওগুলো ফেরত দিতে কষ্ট হবে, চোখ দেখেই বোঝা গেল।
জিনিসগুলো দেয়ার পরও কিন্তু আমাদের তদন্ত বন্ধ হবে না, কিশোর বলল।
অন্য কোন জগতে চলে গিয়েছিল যেন ডায়না, বাস্তবে ফিরে এল। ঠিক? কিশোরের চোখে চোখে তাকাল। এরপর কি করবে?
পারলারে খুঁজতে যাব…
না!
না কেন?
ডায়নার নিচের ঠোঁট সামান্য কাপল। আহত দৃষ্টিতে তাকাল কিশোরের দিকে। তুমি আমাকে একা ফেলে যাবে না। সিকিউরিটি অফিসার হয়েছ, মনে আছে?
তা আছে। মুসার দিকে তাকাল কিশোর। শ্রাগ করল। ঠিক আছে, তোমার ওপরই ছেড়ে দিলাম। সূত্র খুঁজে বের করা। পারবে তো?
পারব। দরজার দিকে এগোতে গিয়ে বিড়বিড় করে বলল, তুমি তো গার্ড দেবে ওকে, তোমাকে গার্ড দেবে কে?
কি বললে?
না, কিছু না। বেরিয়ে গেল মুসা।
*
কাঁচের বাক্সে আগের জায়গায়ই রয়েছে বোরজিয়া ড্যাগার। সাবধানে ডালাটা তুলল মুসা। অস্বাভাবিক কোন কিছু নেই তো বাক্সটায়? এই যেমন ইলেকট্রিক সুইচ, চোর ঠেকানোর কোন যন্ত্র…
আস্তে করে ছুরিটা তুলে আনল সে। মখমলের গদির নিচে খুঁজল হাত দিয়ে টিপে টিপে। কিছু নেই। ছুরিটা আবার রেখে দিয়ে এসে দেখল মূর্তিটা যেখানে ছিল সেখানটা। না, এখানেও চোখে পড়ার মত কিছু নেই।
তার মনে হচ্ছে, কিছু না কিছু আছেই ঘরে। ও দেখতে পাচ্ছে না এই যেমন সার্কিট ব্রেকারের বাক্স, লুকানো টেলিভিশন ক্যামেরা
এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওক কাঠে তৈরি দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বোলাচ্ছে সারা ঘরে। নড়তে গিয়ে খোদাই করা একটা জিনিসে কনুই লাগল। সরে গেল ওটা।
লাফিয়ে সরে এল মুসা। আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে জিনিসটা।
কিরিচ করে একটা শব্দ হলো, তারপর ঝাঁকুনি। অবাক হয়ে দেখল সে, বুককেসটা সরে যাচ্ছে, নাড়া লেগে পড়ে গেল কয়েকটা বই। পেছনে দেয়াল টেয়াল কিছু নেই, শুধু গাঢ় অন্ধকার।
একটা গোপন কুঠুরি, ভাবল মুসা। পুরানো গোয়েন্দা গল্পের সিনেমাগুলোতে যেমন থাকে।
অতি সাবধানে ভেতরে পা বাড়াল সে। মনে করল, সিঁড়িটিড়ি। আছে। কিন্তু কিছুই ঠেকল না পায়ে। শুধু মাকড়সার জাল। এত সতর্ক থেকেও দুর্ঘটনা এড়াতে পারল না। পড়ে গেল, গিলে ফেলল যেন তাকে অন্ধকার!
.
০৯.
সিমেন্টের মেঝেতে পড়ল সে। একটা মুহূর্ত পড়ে থাকল চুপচাপ। দম নিল। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে। নেড়েচেড়ে দেখল হাত-পা। না, ঠিকই আছে, ভাঙেনি।
ধীরে ধীরে চোখে সয়ে এল অন্ধকার। চারপাশে তাকাল সে। যেখান দিয়ে পড়েছে, সেই ফাঁক দিয়ে আলো আসছে আবছাভাবে। বেশ বড় একটা ঘরে পড়েছে সে। জিনিসপত্র নেই। অন্য পাশের দেয়ালে একটা ছোট দরজা।
উঠে এসে দাঁড়াল ওই দরজাটার কাছে। ঢোকার আগে দ্বিধা করল একবার। দরজাটা এত নিচু, মাথা নুইয়ে ঢুকতে হলো তাকে। খুব সতর্ক রইল যাতে আগের বারের অবস্থায় না পড়ে। দুই পাশে হাত ছড়িয়ে দেখল, দেয়ালের খসখসে পাস্টার লাগে হাতে। মাথা সোজা করতে যেতেই ছাতে বাড়ি লাগল, নিচু করে ফেলল আবার। একটা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছে সে, বুঝতে পারল। আলোর অভাবে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। পা বাড়াল সামনে। কোথায় যাচ্ছে, বোঝার উপায় নেই। শুধু এটুকু বুঝল, ঢালু হয়ে নেমে গেছে সুড়ঙ্গটা।
মাথা নিচু করে রেখে, দুহাতে দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগোল সে। প্রথমে ধীরে, তারপর গতি বাড়াল। কোন একটা জায়গায় নিশ্চয় পৌঁছবে, ভাবল সে। স্টোররূম, বয়লার রূম, কিংবা…
ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই কিসে যেন বাড়ি খেলো। কপাল ডলল, যেখানে লেগেছে। আরেক হাত বাড়িয়ে দিল সামনে, একটা দরজা লাগল হাতে। হাতড়ে বের করল নব। ওটা ঘুরিয়ে ঠেলা দিতেই খুলে গেল পাল্লা।
আরেকটা অন্ধকার ঘর। ভেতরে পা দিল সে। পায়ের নিচে পড়ল কি যেন, আরেকটু হলেই উল্টে পড়ে যেত, সময়মত ধরে ফেলল দরজার পাল্লাটা। সুইচবোর্ডের আশায় হাতড়াতে লাগল দেয়ালের পাশে।
হাতে ঠেকল ধাতব বোর্ডটা। সুইচ টিপতে উজ্জ্বল ফ্লোরেসেন্ট আলোয় ভরে গেল ঘর। এতক্ষণ অন্ধকারে থেকে এই আলো অসহ্য লাগল চোখে, বন্ধ করে ফেলল। আবার খুলে মিটমিট করল। ঠিক হয়ে এল ধীরে ধীরে। নানা রকম জিনিসে বোঝাই। ট্রাংক, বাক্স, বাগানে কাজ করার যন্ত্রপাতি, আরও নানা রকম জিনিস। দেখল, যেটাতে পা দিয়ে পিছলে পড়ে যাচ্ছিল, সেটা একটা ধাতব রোলার-টে।
একপাশের দেয়ালে দেখতে পেল সার্কিট ব্রেকারের ধাতব বাক্সটা। বাক্সের সামনে দরজাটা টেনে খুলল সে। সুইচ আছে মোট বিশটা। নিচে লেখা রয়েছে কোনটা কোন্ ঘরের: রান্নাঘর, বসার ঘর, পারলার…। সুইচগুলোর নিচে একটা বড় মেইন সুইচ। এখান থেকেই ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে, বিড়বিড় করে বলল সে নিজেকেই। পুরো ম্যানশন অন্ধকার করে দেয়া হয়েছিল, সুইচ অফ করে দিয়ে!
আরেক পাশের দেয়ালে দুটো কাঠের সিঁড়ি লাগানো। ওপরে দুটো দরজা। কোথায় ঢুকেছে সে, বুঝতে অসুবিধে হলো না। সুড়ঙ্গ দিয়ে বেসিমেন্টে চলে এসেছে, মাটির তলার ঘরে। সার্কিট ব্রেকার বক্সের দরজাটা আবার লাগিয়ে দিয়ে এসে একটা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠল। ঠেলা দিতেই খুলে গেল একটা দরজা। নাকে এসে লাগল ফুলের সুবাস। বাল্কহেড ডোর দিয়ে মাথা বের করল রোদের মধ্যে।
পেছনে তাকাতে চোখে পড়ল মরগানদের প্রাসাদটা। ওর দুই পাশেই ফুলের বাগান। সামনে খোয়া বিছানো রাস্তা। চলে গেছে ওটা গেস্ট কোয়ার্টার পর্যন্ত।
এক চিলতে হাসি ফুটল মুসার ঠোঁটে। লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে। প্রায় দৌড়ে চলল প্রাসাদের দিকে। বসার ঘরের একটা জানালার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় কানে এল ডায়নার কণ্ঠ, একটা কথা বলি, শোনো, সিকিউরিটি অফিসার হয়ে…
মাথা তুলে দেখল মুসা, কাউচের কিনারে সোজা হয়ে বসে আছে কিশোর। অস্বস্তি বোধ করছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে হাত রাখল ডায়না।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। চোখ পড়ল জানালার দিকে। মুসা! ওখানে কি করছো?
বিরক্ত করলাম না তো? মুচকি হেসে বলল মুসা।
না না, এসো, ভেতরে এসো।
ঘুরে এসে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল মুসা।
ছিলে কোথায় এতক্ষণ? সেই কখন থেকে ভাবছি আসবে, আসবে…
কোথায় ছিলাম, চলো, দেখাব। ডায়নার দিকে তাকাল মুসা। ডায়না, টর্চ আছে?
আছে। লাগবে?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
তাড়াতাড়ি টর্চ আনতে চলে গেল ডায়না। ফিরে এল বড় একটা টর্চ নিয়ে।
এসো আমার সঙ্গে, কিশোরকে বলে পারলারের দিকে এগোল মুসা। কিশোর আর ডায়না তার পিছে পিছে চলল।
বুককেসের কাছে ফোকরটা দেখে হা হয়ে গেল ডায়নার মুখ।
নিচে একটা ঘর আছে। ফোকর দিয়ে ভেতরে আলো ফেলল মুসা। বেশি নিচে না। লাফ দিলেই নামা যায়। সিঁড়ি থাকলে আর লাফানোর দরকার পড়ত না।
ফোকরের মুখে দাঁড়িয়ে ঘরের ভেতরটা আলো ফেলে দেখল সে। একপাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে একটা লোহার মই।
সব বুঝলাম, বলল মুসা। এই ঘর থেকে একটা সুড়ঙ্গ চলে গেছে স্টোর রূমে। সার্কিট ব্রেকার আছে ওখানে। ডায়নাকে যে খুন করতে চেয়েছে, সুড়ঙ্গ ধরে উঠে এসেছে এই ঘরে। তারপর মই বেয়ে উঠে ঠেলে ফেলে দিয়েছে মূর্তিটা।
আশ্চর্য! বিড়বিড় করল ডায়না।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দুজন নয়, একজনেই করেছে কাজটা।
হ্যাঁ, মুসাও একমত। আস্ত শয়তান। প্রথমে আলো নিভিয়েছে। তারপর সুড়ঙ্গ দিয়ে দৌড়ে চলে এসেছে এই ঘরে, মই বেয়ে উঠেছে, বুককেসটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে মূর্তিটা ফেলেছে, তারপর আবার বুককেসটা আগের জায়গায় সরিয়ে রেখেছে। নেমে গিয়ে সুইচ অন করে আলো জ্বেলে দিয়েছে।
তার মানে এমন একজন লোক কাজটা করেছে, এই বাড়ির সমস্ত গলিঘুপচি যার চেনা…
এবং অন্ধকারেও যে কাজ সারতে পারে, কিশোরের কথার পিঠে বলল মুসা। ডায়নার দিকে ফিরল। বুককেসটা যে আসলে দরজা, জানেন আপনি?
হাত নাড়ল ডায়না। জানলে কি আর বলতাম না? মূর্তিটা পড়ার পরপরই আগে ওটা সরিয়ে দেখতাম।
তা ঠিক।
এ সব ভাল লাগছে না আমার, শিউরে উঠল ডায়না। গোপন দরজা, গোপন সুড়ঙ্গ-নাহ, একেবারে ভূতের বাড়ি মনে হচ্ছে! কালই দেয়াল তুলে ওই ফোকর বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি। যথেষ্ট হয়েছে…
ডায়নার হাত ধরল কিশোর। এত ভয়ের কিছুই নেই। যেভাবে আছে থাকুক। সতর্ক করার দরকার নেই। ভুল করে বসতে পারে লোকটা। আর তাতে সুত্র পেয়ে যাব আমরা।
ঠিক আছে, তুমি যখন বলছ। মুখের কাছে হাত তুলল সে। হাই মাসছে।
আরও বিশ্রাম দরকার আপনার, কিশোর বলল। ঘুমানগে। আমাদের কাজ কালও করতে পারব।
মাথা ঝাঁকাল ডায়না। হ্যাঁ, আর দাঁড়াতে পারছি না আমি। কটেজে চলে যাও। সকালে দেখা হবে।
দোতলায় চলে গেল ডায়না। নিচতলার জানালাগুলো ভালমত বন্ধ করল দুই গোয়েন্দা মিলে। বেরিয়ে এসে ঘরে ঢোকার সমস্ত দরজা আটকে তালা লাগিয়ে দিল। তারপর ওদের ব্যাগ বের করল পিকআপ থেকে।
কটেজের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুসা বলল, কার কাজ, আন্দাজ করতে পারছি।
জুভেনার আর ডক্টর নরিয়েমাকে সন্দেহ থেকে বাদ দেয়া যায়। ঘটনাটা ঘটার সময় পারলারেই ছিল দুজনে।
দাঁড়িয়ে গেল মুসা। ওই দেখো।
কি দেখব? একটা রাস্তা, মাথা চুলকাল কিশোর। খোয়া বিছানো। কি বলতে চাও?
পার্টি শেষে এই পথ দিয়ে কাকে আসতে দেখেছিলাম?
এনুডা! বার্ব এনুডা! তাই তো! এ পথে এসে সহজেই স্টোর রূমে ঢুকে মেইন সুইচ অফ করে দিতে পারে!
ঠিক। জুভেনার কিংবা নরিয়েমার হয়েও কাজটা করতে পারে সে। মুসার দিকে তাকাল কিশোর। ভাবছি, কাল একবার গিয়ে দেখা করে আসব এনুডার সঙ্গে।
*
পঁচাশি ডিগ্রি।
চোখ ডলল মুসা। আউটডোর থারমোমিটারের রীডিং বিশ্বাস করতে পারছে না। বাপরে বাপ! বলল সে। সকাল বেলাও তো এত ছিল না! পুড়ে যাব আজকে!।
তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে ডায়নাকে খুঁজতে চলল দুই গোয়েন্দা। দেখল, কাপড় পরে বসে আছে ডায়না, ওদের জন্যেই। গুড মনিং, টেনে টেনে সুর করে বলল সে, তারমানে মেজাজ ভাল। আমিই যাচ্ছিলাম সাঁতার কাটতে যাবে কিনা তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে।
সাঁতার? মুসা বলল। পোশাক তো…
আছে, অনেক। কটেজের চেঞ্জিং রূমে খুঁজলেই পেয়ে যাবে। মেহমানদের জন্যে এক্সট্রা বেদিং সুট রেখে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু তারচেয়ে
কনুইয়ের তো মেরে মুসাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বলল, না, সাঁতারই কাটতে যাব।
ঠিক আছে। তোমরা গিয়ে কাপড় বদলে এসো। আমি ডিনকে ফোন করছি। সকালে সাঁতার কাটতে পছন্দ করে ও।
ফোন করতে গেল ডায়না। বেরিয়ে এল কিশোর-মুসা। সিটিং রূমের পাশ দিয়ে যাবার সময় কানে এল ডায়নার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ, ছেলেমানুষী কোরো না!…নিশ্চয়ই না!…নির্বোধ ভাবছ কেন ওদের? আমার তো ধারণা, তোমার চেয়ে অনেক চালাক ওরা!
পরস্পরের দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। কিশোর বলল, সমস্যাটা আমাদেরকে নিয়ে।
মাথা ঝাঁকাল মুসা। ভেবেছিলাম ডিনের সাহায্য পাব। কিন্তু ও তো আমাদের শত্রু ভারছে। এসো।
দ্রুত বেদিং সুট পরে নিল দুজনে।
চেঞ্জিং রূম থেকে আগে বেরোল কিশোর। দৌড়ে চলল সুইমিং পুলের দিকে। ডাইভিং বোর্ডে উঠে ঝাঁপ দেয়ার জন্যে তৈরি হলো। ঠিক ওই সময় পুলের নিচে ইলেকট্রিকের তারটা চোখে পড়ল তার। স্বচ্ছ পানিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, তারের একটা মাথায় লাগানো প্রাগ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে একটা আউটডোর সকেটে।
শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল সে। ঝাঁপ দেয়া থেকে বিরত থাকল। তার পেছনেই উঠে এসেছে মুসা। পাশ কাটিয়ে প্রায় দৌড়ে এগিয়ে গেল।
নাআ! নাআ! বলে চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে ডাইভ দিল মুসা।
.
১০.
বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মরবে তার বন্ধু, তারই চোখের সামনে, অথচ সে কিছুই করতে পারবে না, এ-দৃশ্য সইতে পারবে না সে। চোখ বন্ধ করে ফেলল কিশোর।
ঝুপ করে শব্দ হলো পানিতে পড়ার। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা। তারপর হুসস করে ভেসে ওঠার শব্দ। বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মরার পর কি সাথে সাথেই ভেসে ওঠে লাশ? কতটা কুৎসিত লাগে দেখতে ওটাকে?
কিশোর, চোখ বুজে আছো কেন? মুসার ডাক শোনা গেল।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর। আস্তে চোখ মেলে তাকাল। মুসাই। পানিতে মাথা তুলে ডাকছে। বহাল তবিয়তেই আছে। কিছুই হয়নি ওর!
ডাইভিং বোর্ড থেকে নেমে পড়ল কিশোর। দৌড়ে পুলের একপাশে এসে সকেট থেকে একটানে খুলে ফেলল প্লগটা।
সর্বনাশ! চোখ বড় বড় করে ফেলল মুসা। মরলাম না কেন?
আল্লাহই জানে!
ডায়না এসে হাজির হলো। পরনের বেদিং সুটটা লাল-কমলা ডোরাকাটা। এই, কি হয়েছে? কিসের কথা বলছ?
এই তারটা পানিতে ছিল, দেখিয়ে বলল কিশোর। প্লগ সকেটে ঢোকানো।
নিশ্চয় রাতের বেলা পাতা হয়েছে, বলল মুসা। মৃত্যুফাঁদ!
স্ট্রেঞ্জ! নিমেষে সাদা হয়ে গেছে ডায়নার মুখ, হাঁসি উধাও। আমার জন্যে পেতেছিল! জানে, সকালবেলা সাঁতার কাটতে নামি! ঢোক গিলে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল পুলের পাশের একটা চেয়ারে। হাত-পা কাঁপছে। কে.কে খুন করতে চায় আমাকে?
বলতে পারব না, ডায়না, কিশোর বলল। তবে এনুডাকে সন্দেহ করা যায়।
মুসা পানিতে নামার আগেই তারটা খুলেছ?
না। পরে। কি করে যে বেঁচে গেল, বুঝতে পারছি না!
আমি পারছি, ডায়না বলল। স্বস্তি ফিরে এসেছে কিছুটা। আমি নামলেও মরতাম না। সকেটটা খারাপ কয়েক বছর ধরেই। সারাবে সারাবে করেও সারায়নি বাবা। ভাগ্যিস ভুলে গিয়েছিল।
সাঁতার আপাতত থাক, কিশোর বলল। এনুডাকে গিয়ে ধরব এখন।
মাথা নাড়ল ডায়না। আমার মনে হয় না ওর কাজ। আমাকে দেখতে পারে, ঠিক, কিন্তু খুন করতে আসবে না।
চলুন না গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি?
না। আমি ওর সামনে আর যাব না।
কিশোর, তুমিই যাও, পানি থেকে উঠতে উঠতে বলল মুসা। আমি ডায়নাকে পাহারা দিই।
তাই করো, প্রস্তাবটা পছন্দ হলো কিশোরের। আমি রবিনকে ফোন করছি। ওকেও যেতে বলব। দরকার হতে পারে।
মুসা চলে গেল চেঞ্জিং রূমে, কাপড় বদলাতে। আর কিশোর গেল কটেজে রবিনকে ফোন করতে। এনুডার ঠিকানা দিয়ে বলল, রবিন যেন ওখানে দেখা করে। তারপর তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। দৌড়ে চলল ড্রাইভওয়ের দিকে।
পিকআপে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ডায়নাকে ডেকে বলল, ডায়না, দুশ্চিন্তা করবেন না। চলে আসব কাজ শেষ করেই।
পিকআপ ছেড়ে দিল কিশোর। ড্রাইভওয়েতে থাকতেই দেখল উল্টো দিক থেকে আরেকটা গাড়ি আসছে। ব্রেক কষল সে। গাড়িটা কাছে আসতেই জানালা দিয়ে মুখ বের করে হেসে বলল, গুড মর্নিং, ডিন। খুব গরম, না?
জবাব দিল না ডিন। মুখ কালো করে রেখেছে। হুস করে পিকআপের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে।
*
ক্লিফসাইডের মাইল চারেক দূরে থাকে এনুডা। রকি বীচের একটা পুরানো এলাকা এটা। বাড়িঘরগুলো সব পুরানো, কোন কোনটা ধসে পড়েছে ইতিমধ্যেই, বাকিগুলোর অবস্থাও কাহিল। কয়েকটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে। এক সময় লন ছিল সামনে, এখন সেখানে ঘাস আর আগাছার রাজত্ব, ফুলের নামগন্ধও নেই। বাতাস ভীষণ গরম। বাইরে কেউ নেই। মাঝে মাঝে বাচ্চা ছেলের চিৎকার আর নেড়ি কুকুরের ডাক ছাড়া কোন শব্দও নেই। দুচারটে জানালায় মানুষের মুখ দেখা গেল। একটুখানি হাওয়ার আশায় বসেছে খোলা জানালার ধারে। হাতপাখা দিয়ে জোরে জোরে বাতাস করছে। পিকআপের শব্দ পেয়ে কিশোরের দিকে তাকাচ্ছে কঠিন দৃষ্টিতে। কেন এই বিরক্তি, ওরাই জানে।
ডানে মোড় নিল কিশোর। বাড়ির নম্বর খুঁজতে লাগল। তার আগেই এসে হাজির হয়েছে রবিন। কিশোরকে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নামল। হাত নেড়ে ডাকল। এমুডার বাসার সামনেই পার্ক করেছে সে।
কিশোর গাড়ি থেকে নামতেই বলল, এত দেরি করলে।
তোমার চেয়ে দূর থেকে আসতে হয়েছে আমাকে।
ডায়না কেমন আছে? একটা ভুরু উঁচু করল রবিন।
আছে বোধহয় ভালই। এতক্ষণে নিশ্চয় হেভি মারপিট লাগিয়ে দিয়েছে ডিন আর মুসা, হেসে রসিকতা করল কিশোর।
ভাল। তুমি মুক্তি পেলে। বলে কিশোরের হাত ধরে এনুডার ঘরের দিকে টেনে নিয়ে চলল রবিন।
ছোট্ট একটা বাড়ি। দেয়ালে কতদিন রঙ পড়ে না কে জানে। একপাশের দেয়াল ধসে পড়েছে। সামনের খুদে চত্বর ঘিরে বেড়া দেয়া। পুরানো সেই বেড়ায় কাত হয়ে ঝুলছে একটা টিনের প্লেটে লেখা সাইনবোর্ড।
পড়তে পারছ? জিজ্ঞেস করল রবিন। সামনের দরজাটা ঠেলে খুলল।
দাঁড়াও দাঁড়াও! লেখা আছে…হইতে সাবধান!
কি হতে সাবধান?
সেটুকু তো মুছে গেছে। বোধহয় কুকুর…
এই, কুত্তা! সাবধান! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
বিশাল কালো একটা প্রাণী ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে আসছে।
ধক করে উঠল কিশোরের বুক। পাগলের মত এদিক ওদিক তাকাল একটা হাতিয়ারের জন্যে। মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল একটা ডাল। তুলে নিল ওটা। দৌড়ে এসে দাঁড়াল রবিনের সামনে, কুকুরটার মুখোমুখি।
এই, এই কুত্তা! সর, সর! ধমক দিয়ে বলল সে।
দাঁড়িয়ে গেছে জানোয়ারটা। দাঁত খিচাল বিকট ভঙ্গিতে।
এক পা আগে বাড়ল কিশোর। ডাল নেড়ে হুমকি দিল। গর্জে উঠল কুকুরটা। তবে পিছিয়ে গেল এক পা।
রবিন, সরে যাও! আস্তে করে বলল কিশোর। সামনের দরজাটা গিয়ে খোলো। আমি আটকে রাখছি এটাকে!
পারবে?
চেষ্টা করি। যাও!
কিশোরের পেছন থেকে বেরিয়ে রবিন পা বাড়াতেই লাফ দিয়ে এগোল কুকুরটা।
কষে ওটার নাকেমুখে এক বাড়ি মারল কিশোর। কেউ করে পিছিয়ে গেল কুকুরটা। আবার বাড়ি তুলল কিশোর। লাঠির দিকে তাকিয়ে আছে ওটা, আর এগোনোর চেষ্টা করছে না।
অবাক কাণ্ড তো! ওরকম করে তাকাচ্ছে কেন? আরে, আবার লেজও নাড়তে আরম্ভ হরেছে! কি ভেবে লাঠিটা একপাশে নাড়ল কিশোর। ঠিক সেই দিক সই করে লাফ দেয়ার ভঙ্গি করল কুকুরটা। দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরের গায়ে এসে পড়ার কোন ইচ্ছে নেই।
কি কুত্তা ওটা? রবিনও অবাক হয়েছে। ওরকম করছে কেন?
বোধহয় রিট্রিভার! ঝুঁকিটা নিল কিশোর। লাঠিটা ছুঁড়ে ফেলল রাস্তায়। বিদ্যুৎ খেলে গেল যেন কুকুরটার শরীরে। চোখের পলকে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল কুড়িয়ে আনার জন্যে। ওটা বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গেটটা লাগিয়ে দিল কিশোর।
রিট্রিভারই। চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা শব্দ করে ছাড়ল কিশোর। দাঁত আছে প্রচুর ওটার, মগজ নেই।
সামনের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল দুজনে। হলদে একটা কাগজে নোট লিখে টেপ দিয়ে সাঁটানো রয়েছে দরজায়:
ডিয়ার ফ্র্যাঙ্ক,
মলে যাচ্ছি আমি। পাঁচতলায় পাবে। ওখানে শূটিং হতে পারে আজ।
৬টায় দেখা হবে।
এন.বি.
গাধা নাকি লোকটা? কিশোর বলল। এ ভাবে খোলাখুলি লিখে রেখে যায় কেউ?
জলদি চলো! খুন করে ফেলার আগেই ধরা দরকার! শুটিং হতে পারে বলছে…, গেটের দিকে দৌড় দিল রবিন। কিন্তু কাছে যাওয়ার আগেই থমকে গেল। গেটের বাইরে দাঁতের ফাঁকে লাঠি চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে কুকুরটা। ফিরে চেয়ে বলল, এই কিশোর, কি করব?
দাঁড়াও। গেটের কাছে এগিয়ে গেল কিশোর। আমি খুললেই তুমি বেরিয়ে যাবে। সোজা গাড়িতে!
তোমাকে যদি কামড়ায়?
কামড়াবে না। গেটটা সামান্য ফাঁক করতেই ঢুকে পড়ল কুকুরটা। লাঠিটা ধরল কিশোর। এই সুযোগে চট করে বেরিয়ে গেল রবিন।
কুকুরের মুখ থেকে লাঠি নিয়ে দূরে আরেকদিকে ছুঁড়ে দিল কিশোর। জানোয়ারটা সেটা আনতে ছুটতেই বাইরে এসে গেট লাগিয়ে দিল সে। পিকআপে উঠে পড়ল।
*
রবিনের গাড়িকে অনুসরণ করে মলে চলে এল কিশোর। ইনডোর লটে গাড়ি পার্ক করে রেখে এলিভেটরের কাছে চলে এল। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজা। ভেতরে লোক ঠাসাঠাসি।
দরজা টেনে ধরল কিশোর। এক্সকিউজ আস! বলেই কারও প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে ঢুকে পড়ল ভেতরে। রবিনও ঢুকল। কেউ পছন্দ করল না ব্যাপারটা। তবে কিছু বলল না।
পাঁচতলা, মিষ্টি করে হেসে বলল রবিন। অপারেটরের মন ভেজানোর জন্যে।
গোমড়া মুখে সামান্যতম হাসি ফুটল না ছিপছিপে রোগাটে মানুষটার। বোতাম টিপে দিল।
ওই কয়টা তলা পেরোতেই যেন সারা জীবন লেগে যাবে, কিশোরের মনে হলো। প্রতিটি তলায় থামছে লিফট। গাদাগাদি হয়ে থাকা মানুষের মধ্যে দিয়ে গুতাগুতি করে নামছে পেছনে দাঁড়ানো লোকগুলো।
অবশেষে পাঁচতলায় পৌঁছল লিফট। দরজা খুলল। নামতে যাবে দুজনে, হাত বাড়িয়ে ঠেকাল ওদেরকে একজন দাড়িওয়ালা লোক।
ঠিক এই মুহূর্তে দুটো গুলির শব্দ হলো! দাড়িওয়ালার পেছনের নীল সুট পরা একটা লোক দিল খিচে দৌড়, যেন এই ছোটার ওপরই জীবন নির্ভর করছে তার।
অটোম্যাটিক পিস্তল হাতে তার পেছনে ছুটল বার্ব এনুডা।
.
১১.
ধরো, ধরো ওকে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। থামাও।
যেও না, যেও না! বাধা দিতে গেল কিশোর। ওর হাতে পিস্তল…
শুনতে পেল না বোধহয় রবিন। দাড়িওয়ালার হাত ঠেলে সরিয়ে বেরিয়ে গেল, দৌড় দিল এনুডার পেছনে।
চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে লোকে, বাজার করতে এসেছে ওরা মলে। কেউ কেউ উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মেঝেতে। কারও দিকেই তাকাচ্ছে না এনুডা। চোখ লাল, কঠিন চেহারা, তার নজর নীল সুট পরা লোকটার দিকে। মুহূর্তের জন্যেও সরাচ্ছে না। রবিনের বাড়িয়ে দেয়া পা-টাও দেখতে পেল না সে-জন্যে।
পায়ে পা বেধে উড়ে গিয়ে পড়ল এনু। ধড়াস করে পড়ল যেন ময়দার বস্তা। হাত থেকে ছুটে উড়ে চলে গেল পিস্তলটা। দোকানের জানালা-দরজা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে খরিদ্দারেরা। বাধা দিতে বা কোন কিছু করতেই এগোচ্ছে না কেউ।
এই, থামো! খ্যাখ্যান করে উঠল একটা কণ্ঠ। ছেলেটা কে?
চিনি না, টম, জবাব দিল দাড়িওয়ালা লোকটা। আমার হাত সরিয়ে দৌড় দিল।
ঘুরে তাকাল রবিন। সার্চলাইটের উজ্জ্বল সাদা আলো প্রতিটি কোণ থেকে এসে পড়েছে তার ওপর। মেঝেতে এঁকেবেঁকে পড়ে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার। হেসে উঠল কয়েকজন মানুষ, টিভি ক্যামেরা হাতে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। একজন চিৎকার করে বলল, ফিল্মটা রেখে দিও টম। দারুণ দৃশ্য! কাজে লাগবে পরে!
যথেষ্ট হয়েছে, বলল প্রথম কণ্ঠটা। এই সরাও তো সব, পরিষ্কার করো। দশ মিনিটের মধ্যেই আবার শূটিং করব।
গুঞ্জন উঠল জনতার মাঝে। এদিক ওদিক সরে যেতে লাগল ওরা। কয়েকজন এগিয়ে গেল একটা টেবিলের দিকে, হালকা খাবার আর কোমল পানীয় রাখ ওটাতে।
ঢোক গিলল রবিন। দাড়িওয়ালা লোকটাকে তার দিকে আসতে দেখে লাল হয়ে গেল গাল। সব ভজকট করে দিয়েছ। আবার নতুন করে করতে হবে পুরো দৃশ্যটা।
সরি, স্যার, আমি ভেবেছিলাম…
যা করার করেছ। আর করবে না।
দাড়িওয়ালা লোকটা চলে গেলে ফিরে তাকাল রবিন। কিশোর এসে দাঁড়িয়েছে পাশে। রবিন কাঁধে হাত রেখে সান্তুনার সুরে বলল, ওরকম ভুল সবাই করতে পারে। তুমি না করলে আমি করতাম, বাধা দিতে যেতাম এনুডাকে।
পেছন থেকে বলে উঠল এনুডা, আবার আমার পেছনে লেগেছ!
ফিরে তাকিয়ে শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, ভুল হয়ে গেছে, মিস্টার এনুডা। দেখলেনই তো…
একেবারে স্পষ্ট দেখেছি! চিবিয়ে চিবিয়ে বলল এনুডা, এনুডা এনুডা করবে না। এখানে আমি নিভার ব্রাউন। আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে এসেছ নাকি?
না, মিস্টার এনুডা। জানতে এলাম, ডায়না মরগানকে খুনের চেষ্টা আপনি কেন করছেন?
বড় বড় হয়ে গেল এডার চোখ। বুক চেপে ধরে মাতালের মত টলে উঠল। ইংরেজি নাটকের সংলাপ নকল করে বলে উঠল, ইউ ভাইল, ইভিল জুভেনাইল ডেলিংকোয়েন্ট! এত্তোবড় সাহস তোমার, আমাকে খুনী বলতে এসেছ…
করব না-ই বা কেন? প্রাসাদে সে-রাতে রিভলভার হাতে কাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি? যে পথে দেখা গেছে আপনাকে, ওই পথ দিয়েই সার্ভেন্টস কোয়ার্টার থেকে এসে প্রাসাদের বেসিমেন্টে নামা যায়, সার্কিট ব্রেকারগুলো যেখানে আছে।
সার্কিট ব্রেকার? কি বলছ!
আরও বলতে পারি। আপনার সিলভার-প্লেটেড রিভলভারটাই বনের মধ্যে পাওয়া গেছে। গতকাল। ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে ডায়নাকে গুলি করার পর।
ফালতু কথা রাখো! আমার ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার ভয় আছে, নইলে ধরে তোমাকে এখন এমন ধোলাই দিতাম! তুমি বলছ কান্ট্রি ক্লাবে গিয়েছিলাম, আর আমি বলছি সারাদিন আমি এখানে ছিলাম। আমার পার্ট আসার অপেক্ষায়। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে একটা খাতা নিয়ে এল। ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, এই যে দেখো, আমার হাজিরা।
কিশোর পড়ল:
ব্রাউন, নিভার।
এসেছে-সকাল ৭.৩০।
বেরিয়েছে-বিকাল ৬.৩৫।
বিশ্বাস হলো তো? আরেকটা কথা, আমি বেসিমেন্টে ঢুকিনি।
কি করে বুঝব? সেরাতে গিয়েছিলেন ম্যানশনে। চাকরদের ঘরে ঢুকেছিলেন…
পার্টি চলছিল। সবার চোখ এড়িয়ে কটেজে ঢোকার উপযুক্ত সময় ছিল ওটা।
পাঁচ মিনিট! চিৎকার করে বলল একটা ভারী কণ্ঠ। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। সবাই রেডি?
গুঙিয়ে উঠল এনুডা। হায়, হায়, অনেক সময় নষ্ট করলাম বকবক করে! আমি যাই! তাড়াহুড়ো করে চলে গেল সে।
এখনও আমি বিশ্বাস করি না ওকে, কিশোর বলল।
এখানে থেকেও আর লাভ নেই। এনুডার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। চলো।
ওদের পেছনে হুস করে খুলে গেল এলিভেটরের দরজা। ঢুকে পড়ল দুজনে। এবার ভেতরে আর একজনও নেই, শুধু ওরাই।
আমার অন্য কাজ আছে, কিশোর বলল। তুমি এখানে থেকে এনুডার ওপর নজর রাখতে পারবে?
খুব পারব, আগ্রহের সঙ্গে বলল রবিন।
ও কি করে না করে সব দেখবে। দরকার হলে ওর বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে যাবে। সাবধান, ও যেন তোমাকে চিনতে না পারে।
পিকআপের মধ্যে প্রয়োজনীয় নানা রকম জিনিস আছে। বাক্স খুলে একটা সবুজ ইউনিফর্ম বের করল কিশোর, শ্রমিকের কাজের পোশাক। নাও, পরে ফেলো। একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নিয়ে ময়লা টোকানোর ভান করবে। পারবে তো?
দেখোই না, হেসে বলল রবিন। পোশাকটা হাতে নিয়ে বলল, আসছি। এক মিনিট। মহিলাদের টয়লেটের দিকে রওনা হয়ে গেল সে।
ফিরে এল একটু পরেই। ঠিকমত লাগেনি পোশাকটা। সামান্য ঢলঢলে হয়েছে। হাত আর পায়ের নিচের অংশ ভাজ করে মুড়ে রাখতে হয়েছে।
হেসে ফেলল কিশোর। দেখো, টিভির পরিচালক না আবার দেখে ফেলে। অভিনয়ের জন্যে জোর করে ধরে নিয়ে যাবে তাহলে।
ভালই হবে, হাসতে হাসতে বলল মেয়ে সেজে আসা রবিন।
তাকে রেখে পিকআপ নিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। রকি বীচ মিউজিয়ামে রওনা হলো। শহরের ঠিক মাঝখানে এসে লাল আলো দেখে থামল সে। এই সময় একটা লাল গাড়ি চোখে পড়ল, একধারে থেমে রয়েছে। পরিচিত লাগল গাড়িটা। ল্যামবোরগিনি।
চিনে ফেলল। ডায়নার গাড়ি। সামনে না এগিয়ে গাড়িটার পেছনে এনে পিকআপ রাখল কিশোর। কাছের একটা স্টোর থেকে বেরিয়ে এল ডিন রুজভেল্ট, হাতে একগাদা পত্র-পত্রিকা।
হাত নেড়ে ডাকল কিশোর, হাই, ডিন!
ফিরে তাকাল ডিন। কিশোরকে দেখেই চোখ জ্বলে উঠল। কী?
ডায়না এসেছে নাকি?
না, এল আর কই? বডিগার্ডের সঙ্গে রয়ে গেছে! বডিগার্ড শব্দটা ব্যঙ্গের সুরে বলল সে।
আমাদের ওপর অযথাই রেগে আছো। হাহ হাহ! তা কি জন্যে এসেছ?
গারেজ থেকে গাড়িটা নিতে, ল্যামবোরগিনটা দেখাল ডিন। ডায়নাই অনুরোধ করল।
পিকআপ থেকে নামল কিশোর। এত পত্রিকা কার জন্যে?
ওর জন্যেই। আজকের কাগজেও ওর ছবি বেরিয়েছে। বলল সব কটার একটা করে কপি কিনে নিয়ে যেতে।
ওর কাজ করে দিতে আপনার ভাল লাগে, না?
লাগলেই বা কি? তোমার জ্বালায় কিছু করতে পারব নাকি? আর তোমাকেই বা দোষ দিয়ে কি হবে? যতবারই ওর কাছাকাছি যেতে চাই, কেউ না কেউ এসে মাঝখানে পড়ে বাগড়া দেবেই।
এ-জন্যেই আমার ওপর রাগ, না? হেসে বলল কিশোর। বিশ্বাস করুন, বাগড়া দিয়ে শয়তানি করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
তাহলে ওভাবে পিছে লেগে রয়েছ কেন?
রহস্যের লোভে। দারুণ একটা কেস পেয়ে গেছি। বোরজিয়া ড্যাগারকে ঘিরে জমে উঠেছে রহস্য। এর কিনারা করার জন্যেই ঘোরাফেরা করি ম্যানশনে।
সত্যি বলছ?
হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইল ডিন। মনে হলো না, কথাটা বিশ্বাস করেছে।
ডিন, আপনাকে পেয়ে ভালই হলো। হয়তো বুঝতে পারছেন, ডায়নাকে কেউ খুন করার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে সাহায্য করেন না কেন?
ডায়নার ওপর কড়া নজর রাখছি আমি।
কই আর রাখলেন? এই তো, চলে এলেন এখানে। যদি এই সময়ের মধ্যে কিছু হয়ে যায়?
কেন, তোমার বন্ধু আছে না ওখানে?
হ্যাঁ, আছে। সেজন্যেই তো বলছি, চোখ রাখার দরকার নেই। অন্যভাবে সাহায্য করুন আমাদেরকে।
কি ভাবে?
আসুন আমার সঙ্গে। রকি বীচ মিউজিয়ামে যাব। এ সবের পেছনে জুভেনারের হাত থাকতে পারে। তাহলে তাকে ঠেকাতে হবে। সাহায্য দরকার আমার। আপনি এলে ভাল হয়।
কি যেন ভাবল ডিন। তারপর মাথা নাড়ল, বেশ, চলুন তাহলে।
*
মিউজিয়ামে ঢোকার সময় চুলে হাত চালাল ডিন, অস্বস্তি বোধ করছে। শেষে বলেই ফেলল, কিশোর, আমি গোয়েন্দা নই। এ সব কাজ আমাকে দিয়ে কি হবে? তারচেয়ে আমি ম্যানশনে চলে যাই, ডায়নার কাছে কাছে থাকলে কাজ হবে।
আসুন। বেশিক্ষণ লাগবে না। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব শুধু জুভেনারকে।
রিসিপশনিস্ট জানাল, অফিসে নেই জুনোর। কোথায় গেছে, বলতে পারল না। ফিরতে দেরি হবে। বসা যাবে কিনা, জিজ্ঞেস করল কিশোর। রিসিপশনিস্ট বলল, ঠিক আছে, ওর অফিসে গিয়ে বসো।
এসে বসে আছে তো আছেই ওরী। জুভেনারের দেখা নেই।
উঠে যাবে কিনা ভাবছে কিশোর, বিশেষ করে ডিনের চাপাচাপিতে বিরক্ত হয়েই অনেকটা, এই সময় দরজা খোলার শব্দ হলো। ফিরে তাকাল দুজনে।
জুভেনার নয়। বাদামী সুট এ দুজন বিশালদেহী লোক।
জুভেনার কই? জিজ্ঞেস করল একজন।
তার জন্যেই তো বসে আছি আমরা, জবাব দিল কিশোর।
আসবে কখন?
জানি না। সেক্রেটারি বলল, দেরি হবে। কোথায় গেছে, জানে না।
হারামজাদাকে পেলে মজা দেখাতাম আজ! হাত মুঠো করে ফেলেছে লোকটা। টাকা দেবে না, ওর বাপ দেবে।
এই, কি বলছ! ধমক দিয়ে বলল দ্বিতীয়জন। মাথা সব সময়ই গরম হয়ে থাকে! চলো, পরে আসা যাবে।
প্রথম লোকটাকে প্রায় টেনে বের করে নিয়ে গেল দ্বিতীয়জন।
টানাটানিতে একজনের কোটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হোলস্টার, কিশোরের চোখ এড়ায়নি সেটা। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, দেখলেন?
কী? অবাক হলো ডিন।
পিস্তল। দুজনের কাছেই পিস্তল আছে।
বলে কি! ভয় পেয়ে গেল ডিন। তবে কি জুভেনারকে খুন করতে এসেছিল?
কি জানি!
আমি আর বসব না। চলো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ঘড়ি দেখল কিশোর। হ্যাঁ, সাড়ে চারটে বাজে। চলুন।
সেক্রেটারির কাছে এসে জুভেনারের বাড়ির ঠিকানা চাইল কিশোর।
একটা কাগজে খসখস করে কিছু লিখে বাড়িয়ে দিল সেক্রেটারি।
লেখাটা পড়ে কিশোর বলল, হার্ড লেক। পাশের শহরটাই। ডায়নাদের বাড়ি থেকে দূরে না। ডিনের দিকে তাকাল। যাবে নাকি?
না, বাবা, আমি পারব না! দুহাত নাড়ল ডিন। পারলে তুমি যাও। আমি ম্যানশনে যাচ্ছি।
হাসল কিশোর। এত ভয় পেলেন? চলুন, আমিও যাব। মুসার সঙ্গে কথা আছে। রসিকতার ভঙ্গিতে চোখ টিপল সে। দেখি, ও সরতে রাজি হয় কিনা। তাহলে খানিকক্ষণের জন্যে একলা পাবেন আপনি ডায়নাকে। ওর বডিগার্ড হওয়ার খায়েশটা পূরণ হবে।
*
মরগান ম্যানশনের কাছে পৌঁছল দুটো গাড়ি। লাল ল্যামবোরগিনিটা আগে আগে রয়েছে, পেছনে কিশোরের পিকআপ।
ড্রাইভওয়ে পেরিয়ে আসতেই গাড়ি-বারান্দায় আরেকটা গাড়ি চোখে পড়ল।
ওটার কাছে এসে পিকআপ থামিয়ে নামল কিশোর।
এই যে, তোমরা এসেছ। ডায়না কোথায়?
ফিরে তাকল কিশোর। প্রাসাদের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়লেন তার দিকে ডক্টর নরিয়েমা। প্রশ্নটা তিনিই করেছেন।
ল্যামবোরগিনির দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামল ডিন। কেন, মুসার সঙ্গেই তো ছিল! এখানেই থাকার কথা!
অবাক হলেন ডক্টর। বলো কি? আমি এসে দেখি, দরজা খোলা। ওরা নেই!
কিশোর আর ডিনও অবাক হলো। শঙ্কা ফুটল ডিনের চোখে।
খোঁজ করা দরকার। জরুরী কণ্ঠে বলল কিশোর। ডিনকে পাঠাল প্রাসাদে খুঁজতে। সে চলল গ্যারেজে দেখতে।
চারটে দরজাই খোলা। লনে কাজ করার যন্ত্রপাতি আর কিছু গ্রিল পড়ে থাকতে দেখা গেল গ্যারেজের দুটো ঘরের ভেতরে, বাকি দুটো পুরো খালি।
গাড়ি নিয়ে গেছে, ভাবল কিশোর। ফিরে চলল প্রাসাদে।
মাঝপথে থাকতেই দরজায় দেখা দিল ডিন। উত্তেজিত ভঙ্গিতে হাত নেড়ে ডাকল
দৌড় দিল কিশোর।
ড্যাগার! ড্যাগার! চেঁচিয়ে বলল ডিন।
কি হয়েছে? কিশোর জানতে চাইল।
ডিনের চোখে ভয়। নেই ওটা!
ডিনের পাশ কাটিয়ে ছুটে পারলারে ঢুকল কিশোর। আবার জায়গামত ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়েছে বুককেসটা, ছবিগুলো ঝোলানো রয়েছে ঠিকমতই। সোজা সাইডবোর্ডের দিকে এগোল সে। পড়ে রয়েছে কাঁচের বাক্স। ডালা খোলা। ছুরিটা নেই ভেতরে। দরজায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ডক্টর নরিয়েমার দিকে তাকাল সে!।
ডিন, ওপরতলায় খুঁজুন, কিশোর বলল। ডক্টর, আপনি হলওয়ে আর সিটিংরূমে দেখুন। আমি এখানে দেখছি। বলা যায় না, মুসাও লুকিয়ে রেখে যেতে পারে।
সমস্ত পারলারে তন্নতন্ন করে খুঁজল কিশোর। ড্রয়ার, কার্পেটের নিচে, বইয়ের ফাঁকে-মোট কথা ছুরি লুকানো যায় এ রকম কোন জায়গা বাদ দিল না
নেই।
ডিন আর ডক্টর নরিয়ে ফিরে এল শূন্য হাতে। দুজনেই মাথা নাড়ল।
কি হতে পারে বলো তো? ডিনের প্রশ্ন। ডায়নাকে কিডন্যাপ করল নাকি কেউ? সেই সাথে ছুরিটাও নিয়ে গেল?
আমার তা মনে হয় না। গাড়ি নেই যেহেতু মুসাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বেরোতে পারে। বসে থেকে থেকে বের হয়ে গিয়েছিল হয়তো। কোথায় যেতে পারে, বলুন তো?
কান্ট্রি ক্লাব! সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল ডিন।
কিংবা মলে!
বেশ। ডক্টর, আপনি আর আমি চলুন ক্লাবে যাই। ডিন, আপনি মলে যান।
বাইরে বেরোতেই দেখা গেল একটা গাড়ি আসছে। ডায়নার গাড়িবারান্দায় এসে থামল ওটা। দরজা খুলে নেমে এল ডায়না আর মুসা। অবাক দৃষ্টিতে ওদের মুখের দিকে তাকাতে লাগল।
ডায়না জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
কোথায় গিয়েছিলেন? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
ঘুরতে। ভাল্লাগছিল না বসে থেকে থেকে। কিন্তু হয়েছেটা কি? মুখ অমন করে রেখেছ কেন? কি ব্যাপার?
আপনার জন্যে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
আমার জন্যে? কেন? সাথে তো মুসাই আছে। আর আমি কচি খুকি না। বেরোতেই পারি যখন খুশি।
তা পারেন। ভাবতাম না, যদি বোরজিয়া ড্যাগারটা গায়েব না হয়ে যেত।
কি বললে!
ঠিকই বলছে, বললেন নরিয়েমা। খুলে বললেন, কি হয়েছে।
থমথমে হয়ে গেছে ডায়নার চেহারা। একটা কথাও আর না বলে চুপচাপ ঘরে ঢুকল, ছুরির বাক্সটা দেখার জন্যে।
*
আমি জুভেনারের ওখানে যাচ্ছি, ঘোষণা করল কিশোর। সারাটা বিকেল ওর অফিসে বসে থেকে এসেছি। ফেরেনি। সে-ও এসে ছুরিটা চুরি করে নিয়ে পালাতে পারে।
তা পারে, ডায়না বলল। কারণ বাড়ির দরজা-জানালা খোলাই ছিল।
ভুল করেছ, গম্ভীর হয়ে বললেন ডক্টর। এত দামী দামী জিনিস রয়েছে ঘরে। তালা দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
যায়নি যখন, কি আর করা? কিশোর বলল। জুভেনারের বাসার ঠিকানা নিয়ে এসেছি। কারও ইচ্ছে করলে আসতে পারেন আমার সঙ্গে।
মাথা নাড়ল ডায়না আর ডিন। আর ডায়না যেহেতু থাকছে, মুসাও যাবে না। ডক্টর নরিয়েমা বললেন, আমি যাব। লোকটার সঙ্গে একটা বোঝাঁপড়া আছে আমার। জিজ্ঞেস করব, মেয়েটাকে এত জ্বালাচ্ছে কেন?
ক্লিফসাইড হাইটস পেরিয়ে এল ওরা। শর্ট নেক চেনেন নরিয়েমা, কিশোরকে পথ বলে দিতে থাকলেন। পথের দুধারে এখন ঘোট ঘোট বাড়ি আর টাওয়ারের মত উঁচু হয়ে উঠে যাওয়া বিশাল ম্যাপল গাছ। বাড়িঘরগুলো দেখতে সব প্রায় একই রকম। সাদা রঙ করা দেয়াল, ছিমছাম সন আর সুন্দর ফুলের বাগান। ঠিকানাটা তার হাতে তুলে দিয়েছে কিশোর। নম্বর দেখছেন নরিয়েমা। একটা বাড়ি দেখিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, ওটাই।
অন্য বাড়িগুলোর মত পরিচ্ছন্ন নয় এটা। আগাছা সাফ হয় না বহুদিন। সর্বত্র। অযত্নের ছাপ।
গাড়িটাড়ি তো দেখছি না, কিশোর বলল। বোধহয় বাড়ি নেই।
এখন কি করবে তাহলে?
আপনি গাড়িতে বসুন। আমি দেখে আসি।
শূন্য ড্রাইভওয়ে ধরে হেঁটে চলা কিশোর। প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ময়ল, জল ফেলে রেখেছে যেখানে সেখানে। নোংরা করে রেখেছে জায়গাটা।
সামনের দরজায় এসে ঘন্টা বাজল সে।
জবাব নেই।
আবার বাজাল। সাড়া মিলল না এবারেও। তুতীয়বার বাজিয়ে, জবাব না পেয়ে পাশে একটা জানালার কাছে চলে এল। ভেতরে উকি দিয়ে দেখল কেউ নেই। ফিরে এল পিকআপের কাছে।
কি আছে? জিজ্ঞেস করলেন নরিয়েমা।
না। বিছানা এলোমেলো। টেবিলে পড়ে আছে অধোয়া থালা-বাসন দেখে মনে হয়, তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে।
তার মানে পালিয়েছে। ছুরিটা চুরি করে।
হতে পারে। কিন্ত এর কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না আমি! জুভেনার চায় সময় জিনিস যেগুলো মিউজিয়াম থেকে নিয়ে এসেছে ডায়না। শুধু একটা ছুরি চুরি করে পালাবে কেন? প্রশ্নটা এখন হঠাৎ করেই উদয় হলো কিশোরর মাথায়।
.
১২.
একটা মুহূর্তও আর এ ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছে না আমার, ডায়না বলল। কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে সব।
তা ঠিক, মাথা দোলালেন নরিয়েমা। ভাল না লাগলে, চলো, বাইরে থেকে ঘুরে আসি। রাতের খাওয়াটাও কোন রেস্টুরেন্টে সেরে নেয়া যাবে। চলো, আজ আমিই খাওয়াব তোমাদের।
আইডিয়াটা মন্দ না, কিশোর বলল। কোন রেস্টুরেন্টে যাবেন?
ডিলমারস প্লেস।
চমৎকার জায়গা!তুড়ি বাজাল মুসা। রান্না খুবই ভাল। দামও বেশি।
দামের জন্যে ভাবতে হবে না তোমাদের, হাসলেন ডক্টর।
মুসার দিকে ফিরে বলল কিশোর, ঠিক আছে, তুমি যাও ওদের সঙ্গে। আমি রবিনকে নিয়ে চলে আসব সময়মত। মলে রেখে এসেছি ওকে, এনুডার ওপর নজর রাখার জন্যে।
*
পিকআপটাকে দেখে হাসল রবিন। তার গাড়ির পেছনে পিকআপ থামাল কিশোর। এনুডার বাড়ি থেকে ব্লকখানেক দূরে।
নেমে এগিয়ে এল সে। জানালার কাছে ঝুঁকে বলল, মলে গিয়েছিলাম। দেখলাম, শূটিং শেষ। তুমি নেই, এনু নেই। ভাবলাম, এখানেই এসেছ। তা খবর কি?
বিরক্ত হয়ে গেছি। শুটিং শেষ করে সোজা বাড়ি চলে এসেছে এনুডা। তারপর সেই যে গিয়ে ঘরে ঢুকেছে, বেরোনোর আর নামই নেই।
সন্দেহ হয় এমন কিছু চোখে পড়েছে?
নাহ্। একটা দৃশ্যেরই ছবি তোলা হলো কয়েকবার করে। অনেক দর্শক ভিড় করে বসে থাকল চারপাশে গোল হয়ে। কাজ শেষ করে ঘণ্টা দুয়েক আগে বাড়ি চলে এসেছে এনুডা।
কেউ দেখা করেছে তার সঙ্গে?।
করেছে, একটা মোটা লোক। মাথায় টাক। চোখে ভারী চশমা ছটার সময় ওকেই দেখা করতে বলেছে বোধহয় এনূড়া। ওর নামই হয়তো ফ্র্যাঙ্ক।
হু। ভেতরেই আছে এখনও?
না। এসে, কয়েক মিনিট থেকেই চলে গেছে।
বোঝা গেছে। এখানে আর কিছু করার নেই আমাদের। ভুরু নাচিয়ে মিটিমিটি হাসল কিশোর। রাতে খাবে কোথায়?
কেন, বাড়িতে! অবাকই হলো রবিন।
চলো না, কোন রেস্টুরেন্টে চলে যাই?
কিশোরের দিকে দীর্ঘ এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল রবিন। ব্যাপারটা কি, বলো তো? হঠাৎ এ ভাবে খাওয়ার দাওয়াত
খুলে বলল সব কিশোর, ছুরি হারানো থেকে শুরু করে, সব।
*
ডায়নার মনমেজাজ খারাপ থাকায় খাওয়াটা তেমন জমল না। বিল মিটিয়ে দিলেন নরিয়েমা। জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোথায় যাবে?
বাড়ি, নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল ডায়না। ঘুম পেয়েছে আমার।
গাড়ি মোট তিনটে। ডায়নার ল্যামবোরগিনি, কিশোরের পিকআপ, আর রবিনের গাড়ি। তিনজনকে ড্রাইভ করতে হবে।
কিশোরকে অনুরোধ কবে বসল ডায়না, কিশোর, তুমি চালাও না আমারটা! আমার চালাতে ইচ্ছে করছে না!
ঝট করে ডিন আর রবিনের দিকে চোখ চলে গেল কিশোরের। ডিনের চোখে রাগ। রবিনের মিটিমিটি হাসি। বোধহয় কিশোরকে ডায়নার শোফার হিসেবে কল্পনা করেই হাসি পাচ্ছে তার।
নিরাসক্ত দৃষ্টিতে ডিন আর রবিনের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসল কিশোর।
কিশোর আর ডায়না উঠল ল্যামবোরগিনিতে। রবিনের গাড়িতে রবিন একা। পিকআপে মুসা আর ডক্টর নরিয়েমা। ডিন কারও গাড়িতে উঠল না। সে আশা করেছিল গাড়িটা চালাতে বলবে ওকে ডায়না। সে-অপেক্ষাতেই ছিল। সেটা যখন হলো না, মেজাজ খারাপ করে চলে গেল সে। হুমকি দিয়ে গেল, ছুরিটা আর ফেরত পাবে না ডায়না!
সবাই চলল ওরা মরগান ম্যানশনের দিকে। ডিনই বা এ কথা বলল কেন, আর ডায়নাই বা ডিনকে উঠতে না দিয়ে কিশোরকে গাড়ি চালাতে বলল কেন, দুর্বোধ্য ঠেকল সবার কাছে। তবে এ নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা ঘামাল না কেউ।
পথে নরিয়েমার বাড়িতে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হলো।
রাস্তায় কোন অঘটন ঘটল না।
তবে বাড়ি পৌঁছে ডিনের ছুরি না দেয়ার কথাটা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কিশোর। প্রথমে রেগে উঠল ডায়না। তারপর আমতা আমতা করতে লাগল। চেপে ধরল তাকে কিশোর, ছুরিটা কোথায় আপনারা জানেন, তাই না?
না না…আ-আমি…কিছু… থেমে গেল ডায়না। তারপর রেগে উঠল, আমাকেই চোর ভাবছ?
সব কথা জানতে চাই আমি, ডায়না, ভারী হয়ে গেছে কিশোরের কণ্ঠস্বর। খুলে বলুন।
এমন কিছু ছিল কিশোরের কণ্ঠে, প্রতিবাদ করার সাহস করল না আর ডায়না। ঠোঁট কেঁপে উঠল তার। ধপ করে বসে পড়ল একটা সোফায়। আঁকুনি লেগে চুল এসে পড়ল মুখের ওপর, সরানোর চেষ্টা করল না। আমাকে খুন করার চেষ্টা কে করেছে, জানি, মোটা খসখসে হয়ে গেছে তার কণ্ঠ।
কে? এনুডা?
মাথা নাড়ল ডায়না। না। এনুডাও নয়, জুভেনারও না।
তাহলে?
দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল ডায়না। চোখে পানি নিয়ে তাকাল কিশোরের দিকে, যেন করুণার আশায়।
কে, ডায়না? কোমল গলা জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চোখের পানি আর ঠেকাতে পারল না ডায়না। আমি আর ডিন! সমস্ত ব্যাপারগুলো ছিল সাজানো!
চমকে যাওয়া সব কটা মুখের দিকে এক এক করে তাকাল সে। আর পেটে রাখতে পারল না কথা, গড়গড় করে বেরিয়ে আসতে লাগল সব, আব্বার রেখে যাওয়া সব টাকা বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে, বেহিসেবী খরচ করে শেষ করেছি। আমি। উড়িয়ে দিয়েছি কিছুদিনের মধ্যেই। টাকা ওড়ানো যে এত সহজ, জানতাম না! হঠাৎ একদিন দেখি খালি হয়ে গেছে অ্যাকাউন্ট। চাকর-বাকরের খরচ দিতে পারছি না। বিদেয় করে দিতে হলো ওদেরকে। শুধু যে অ্যাকাউন্টই খালি হয়েছে, তা নয়, ধারও হয়েছে অনেক। ম্যানশনটা বিক্রি করে দিলেও সে-ধার শোধ করে খুব সামান্যই বাকি থাকে। ওই টাকা দিয়ে রকি বীচে কোনমতে ছোটখাট একটা বাড়ি কেনা যায়। খাওয়া-পরার জন্যে একটা কাজ জুটিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না আমার। সেজন্যেই মিউজিয়াম থেকে আর্ট কালেকশনগুলো ফেরত নিয়ে এসেছি আমি, বলে গেল ডায়না। জানি, বেআইনী ভাবেই করেছি কাজটা। দলিলটা হারিয়ে ফেলেছে জুভেনার, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। নিয়ে এসেছি বিক্রি করার জন্যে। চোখের পানির সঙ্গে কালো মাসকারা গাল বেয়ে নামছে তার।
বলে যান, কিশোর বলল। এর সাথে ড্যাগার চুরি আর খুনের চেষ্টার সম্পর্ক কি?
নোরজিয়া ড্যাগারটা নিয়ে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে বেশি, নানা রকম ভাবে, গল্প বলে, সিনক্রিয়েট করে। খুনের চেষ্টাগুলো সব সাজানো-বন থেকে আমাকে সই করে গুলি ছোঁড়া, সুইমিং পুলে তার ফেলে রাখা, সব।
কেন?
বললাম না, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্যে। রিপোর্টাররা এসেছে। ফলাও করে খবর ছেপেছে। বিখ্যাত হয়ে পড়েছে বোরজিয়া ড্যাগার। ভাল দাম আশা করেছিলাম আমরা। তা-ই হতে যাচ্ছিল। দুএকজন টো টাকা অফারও দিয়ে ফেলেছে। ডিন আমাকে ভালবাসে, চোখ নামিয়ে দিল ডায়না। আমি বাসি না। কিন্তু তার এই দুর্বলতাটা কাজে লাগিয়ে তাকে দিয়ে এ সব করিয়ে নিয়েছি আমি। একটা মানুষকে কতদিন আর গাধা বানিয়ে রাখা যায়? বুঝতে পেরে সরে গেছে সে!
কয়েক সেকেন্ড নীরবতা।
তারপর মুসা জিজ্ঞেস করল, ছুরিটা কোথায়?
বাগানে। একটা ফুলের বেডের মধ্যে রেখেছিলাম…
কখন?
তুমি তখন বাথরূমে গিয়েছিলে। এই সুযোগে ওটা বাক্স থেকে বের করে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। দরজার দিকে রওনা হলো।
কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল ডায়না। পাবে না। এতক্ষণে নিয়ে গেছে নিশ্চয় ডিন।
তাহলে তাকে খুঁজে বের করব।
ঠিক এই সময় দপ করে নিভে গেল সমস্ত আলো।
.
১৩.
ডিন, ডিনের কাজ! চিৎকার করে বলল ডায়না। আমাকে খুন করবে এবার! প্রতিশোধ নেবে! পাগল হয়ে গেছে!
আল্লাহই জানে, কি করবে? বিড়বিড় করল মুসা। হতে ছুরি আছে যখন..
আছে কোথায় ও রবিনের প্রশ্ন।
আউফ! করে উঠল অন্ধকারে মুসা।
কি হলো? কিশোর উদ্বিগ্ন।
কে যেন পা মাড়িয়ে দিল! ডায়নাই হবে!
তোমার পা? জোরে নিঃশ্বাস ফেলল ডায়না। আমি টর্চ খুঁজছি…
ড্রয়ার খোলার শব্দ হলো। অন্ধকার চিরে দিল টর্চের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি।
দুটো আছে, ডায়না বলল।
আমাকে একটা দিন, বলল মুসা।
এই, চুপ! শোনো! ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। সবাই শুনতে পেল বিচিত্র শব্দটা। থেমে গেল হঠাৎ।
এল কোত্থেকে? বুঝতে পারছে না ডায়না।
কি জানি! বুঝতে পারল না মুসাও। মনে হয় নিচে কোন জায়গা থেকে। দেখি, আলোটা জ্বালানো যায় কিনা।
সেলারের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল মুসা। টান দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকল। সারকিট ব্রেকারের বাক্সটার কাছে এসে আলো ফেলল। মেইন সুইচ অফ করা। টান দিয়ে তুলে দিল ওটা। নিশ্চয় আলো জ্বলেছে, নিজেকে বলল সে।
বাইরে বেরিয়ে দেখল আগের মতই অন্ধকারে রয়েছে প্রাসাদ। আলো জ্বলেনি।
মেইন লাইনের তারটার কেটে দিয়েছে, অনুমান করল কিশোর আলো নেভাল, চিন্তিত শোনাল কিশোরের কণ্ঠ, অথচ আসছে না! ও কিছু করার আগে আমাদেরই ওকে খুঁজে বের করা উচিত। এসো তো।
টর্চের আলোয় পথ দেখে সামনের দরজার দিকে এগোল চারজনে। গ্রীষ্মের রাতের ভ্যাপসা গরম, আঠা আঠা করে দেয় ঘাম। এই পরিবেশে ওদের মনে হলো সব কিছুই যেন খুব ধীরে ঘটছে, স্লো মোশন ছায়াছবির মত। পুরানো কাঠ আর ধুলোয় ঢাকা কার্পেটের গন্ধ ভাসছে ঘরের বাতাসে। একের পর এক ঘরে ঢুকছে ওরা, আর একই রকম গন্ধ পাচ্ছে।
হঠাৎ থ্যাক করে একটা শব্দ হলো। ঝটকা দিয়ে মুখ তুলল কিশোর। ওপরে তাকাল। এক দৌড়ে হল পেরিয়ে এসে উঠল সিঁড়িতে। ঠিক পেছনে রয়েছে মুসা। সিঁড়ির মাথায় উঠে হলঘরে টর্চের আলো ফেলে দেখল। শূন্য ঘর।
ভুল করছেন আপনি, ডিন, চেঁচিয়ে বলল কিশোর। আমরা চারজন, আর আপনি একা। কিছুতেই পারবেন না। গোলমাল না করে বেরিয়ে আসুন। কিছু বলব না আপনাকে।
সাড়া নেই।
ডান দিকে হয়েছিল শব্দটা, ফিসফিস করে বলল কিশোর।
দেয়ালের দিকে পিঠ করে পা টিপে টিপে সেদিকে এগোল সে আর মুসা। দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল। বন্ধ। পাথর হয়ে পঁড়িয়ে রইল কয়েকটা সেকেন্ড।
তারপর হঠাৎ এক লাথি মেরে পাল্লা খুলে ফেল্প কিশোর। পরক্ষণেই সেটে গেল দেয়ালের সঙ্গে।
ঝটকা দিয়ে খুলে দেয়ালের সঙ্গে খটখট করে বাড়ি খেলো পাল্লাটা। কেউ বেরিয়ে এল না ঘর থেকে। টর্চ জ্বেলে ঘরে আলো ফেলল কিশোর। বড় একটা বিছানা রয়েছে, চানপাশে বেশ কিছু আসবাবপত্র। একটা আলমারির কাছে এসে টান দিয়ে খুলল দরজা। ভেতরে তিনটে কোট ঝুলছে হ্যাঁঙারে।
পালিয়েছে, মুসা বলল।
কিন্তু কোন পথে? কিশোরের প্রশ্ন। আবার বেরিয়ে এসে হলঘরে আলো ফেলল। ডায়না আর রবিনই বা কোথায়? কোন সাড়া নেই!
তার কথার জবাবেই যেন উল্টো দিক থেকে ভেসে এল তীক্ষ্ণ চিৎকার।
দৌড় দিল দুজনে। একটা ঘরে শব্দ শোনা গেল। ছুটে ভেতরে ঢুকল ওরা। মেঝেতে লুটিয়ে রয়েছে একটা দেহ, টর্চের আলো পড়ল তার ওপর।
রবিন! উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠল কিশোর। কি হয়েছে, রবিন? হাঁটু মুড়ে বসল তার পাশে।
উফ, কানটা…! কান চেপে ধরে আছে রবিন।
দেখি তো, রবিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে কানের দিকে তাকাল কিশোর। আরি, রক্ত পড়ছে তো! অবশ্য বেশি কাটেনি।
এখানে কি করছিলে তুমি? মুসা জিজ্ঞেস করল।
তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি আর ডায়না ভাবলাম পেছনের সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাই। ও সোজা তিনতলায় উঠে গেল। আমি দোতলায় উঠতেই একটা শব্দ কানে এল।
তারপরেই তুমি এখানে এসে ঢুকেছ? কিশোর বলল। টর্চ ছাড়া?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। এখানে ঢুকতেই শুনলাম, পেছনে কে যেন ফিসফিস করে ডায়নার নাম ধরে ডাকছে। ফিরে চেয়ে আবছা একটা মৃর্তিকে দেখলাম, ডিনের মতই লাগল। ছুরি চালাল। সরে গিয়েছিলাম, ফলে শুধু কানে একটু খোঁচা লেগেছে। চিৎকার করে উঠলাম। ও বুঝে ফেলল আমি কে। গাল দিয়ে উঠে দৌড়ে চলে গেল। কেঁপে উঠল রনি। লোকটা পুরো পাগল হয়ে গেছে।
ভাগ্যিস কান ছাড়া আর কিছু কাটতে পারেনি, কিছুটা রসিকতা করেই বলল মুসা।
কান দিল না রবিন। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না! ডিনের মাথা এখন খারাপ! ডায়াকে পেলে ছাড়বে না। জলদি চলো।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, চলো!
ওপরতলা থেকে হঠাৎ আরেকটা চিৎকার শোনা গেল, প্রতিধ্বনি তুলল প্রাসাদের দেয়ালে। ছুটতে আরম্ভ করেছে ততক্ষণে কিশোর, মুসা আর রবিন। বড় একটা চিলেকোঠায় এসে ঢুকল।
ঢালু হয়ে নেমে গেছে কাঠের সিলিং। শেষ প্রান্তে একটা টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ডিন আর ডায়না।
সরো, জানোয়ার কোথাকার! হিস্টিরিয়া রোগীর মত চেঁচিয়ে উঠল ডায়না। ছুরিটা তুলে ধরেছে ডিন। এবার টেবিলের এ পাশ ঘুরে, আরেকবার ওপাশ ঘুরে পৌঁছতে চাইছে ডায়নার কাছে।
এই, ফেলো ওটা! দরজার কাছ থেকে বলল কিশোর।
ঝট করে ঘুরে তাকাল ডিন। মুখে পড়েছে কিশোরের টর্চের আলো।
বিকট চিৎকার করে টেবিলের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ল ডিন। প্রায় পিছলে চলে এল আরেক পাশে। ছুরি তুলে ছুটে এল কিশোরকে মারার জন্যে। কাছে এসে প্রথমেই থাবা দিয়ে কিশোরে হাত থেকে টর্চটা ফেলে দিল। মেঝেতে গড়াতে শুরু করল ওটা, তবে আলো নিভল না। থাবা দিয়ে ধরতে গিয়েও পারল না কিশোর, চলে গেছে আওতার বাইরে।
বোরজিয়া ড্যাগারের স্বাদ দেখে কেমন লাগে! সাপের মত হিসহিস করে উঠল ডিন।
দাঁড়িয়ে রইল না মুসা। তাড়াতাড়ি গিয়ে তুলে নিল টর্চটা, দুজনের গায়ের ওপর ফেলে দেখল, ডিনের ছুরিধরা হাতটা ধরে ফেলেছে কিশোর। কব্জির ওপরটায় একহাতে ধরে মোচড় দিয়ে আরেক হাতে কিছু একটা করল সে, ছুরিটা প্রায় উড়ে চলে গেল ডিনের হাত থেকে। খটাং করে গিয়ে পড়ল মেঝেতে।
ঘরের সবাই ছুটল ওটার দিকে। কিশোর, ডিন, রবিন, মুসা, ডায়না, সব্বাই। একসাথে হাত বাড়াল ওটা তুলে নেয়ার জন্যে। শুধু একজনের হাত পৌঁছল ওটার ওপর।
সরো! সরে যাও! চেঁচিয়ে বলল কিশোর। ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করল রবিন আর ডায়নাকে।
মাথার ওপর ছুরিটা তুলে ঘোরাতে লাগল ডিন।
হঠাৎ লাফিয়ে এসে পড়ল ডায়নার ওপর। বাহু দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরল। চেঁচানোর চেষ্টা করল ডায়না, সুর বেরোল না ঠিকমত, আ-আ-মার…দম…
ছুটে গেল কিশোর-মুসা।
সরো! ছুরিটা ডায়নার গলায় ঠেকিয়ে ধমক দিয়ে বলল ডিন।
মাঝপথেই দাঁড়িয়ে গেল দুই গোয়েন্দা।
এ রকম হওয়ার কথা তো ছিল না, ডায়না! তীক্ষ্ণ হয়ে গেছে ডিনের কণ্ঠ। কত কষ্ট করে, আলাপ-আলোচনা করে প্ল্যান করেছিলাম আমরা। ভেবেছিলাম বাকি জীবনটা সুখে কাটাব দুজনে। কিন্তু তুমি সব নষ্ট করেছ। সব শেষ করে দিয়েছে তোমার লোভ। কি, করেনি?।
ডি-ডিন, ছড়ো…! শরীর মুচড়ে গলা ছাড়ানোর চেষ্টা করল ডায়ণ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তুমি পাগল হয়ে গেছ!
প্যাঁচ আরও শক্ত করল ডিন। আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছ, স্বীকার করো সে-কথা! করতে লজ্জা লাগছে? বলো, নীলামের সমস্ত টাকা মেরে দেয়ার ফন্দি করোনি তুমি? আমাকে কি দিতে চাওনি?
নাআআ…! হাঁসফাঁস করছে ডায়না। ছাড়ো, প্লীজ…
ঠেলে নিয়ে চলল তাকে ডিন। ধাক্কা দিয়ে ফেলল একটা কেবিনেটের ওপর। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল ওটার দরজা। অসংখ্য প্লেট আর রূপার তৈজসপত্রের ফোয়ারা ঝরতে লাগল যেন। ওপর দিকে তাকাল সে। কিছুটা ঢিল হয়ে গেল বাহুর বাধন।
সুযোগটা কাজে লাগাল ডায়না। ঝাড়া মেরে গলা ছোটাল, তবে বাসনে পা পিছলে আছড়ে পড়ল মেঝেতে। ঝনঝন করে পড়ছে জিনিসপত্র।
আলো নিভিয়ে দিল মুসা। নরক গুলজার শুরু হয়ে গেল যেন।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলে লড়াই। শেষ হলো ভোতা একটা ধুপ শব্দ দিয়ে।
আবার যখন আলো জ্বালল মুসা, দেখা গেল ডিনের ভূপাতিত নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। ডান হাতের আলগা মুঠোয় পড়ে আছে বোরজিয়া ড্যাগার।
বেশি জোরে মারলাম না তো? হাতের টর্চটা নেড়ে হেসে বলল মুসা। মরে না গেলেই বাঁচি।
আরে নাআহ, ঠিক হয়ে যাবে, ডায়নাকে টেনে সরিয়ে নিতে নিতে বলল কিশোর।
মেরে ফেলেছিল আরেকটু হলেই! ফুঁপিয়ে উঠল ডায়না।
আর পারবে না, অভয় দিল কিশোর।
বাইরে একটা গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হলো।
কে এল? রবিনের প্রশ্ন।
কি জানি! মুসা বলল।
এখনও কাঁপছে ডায়না। ধরে ধরে তাকে এনে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল কিশোর।
সব আমার দোষ, কিশোর, ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল ডায়না। আমি আর ডিনই সব করেছি…
এক মিনিট, হাত তুলল রবিন। হাতের টর্চটা ঘোরাল ডায়না আর ডিনের ওপর। একটা ব্যাপার বাদ পড়ে যাচ্ছে। ধরলাম, বনের ভেতর থেকে গুলি করেছিল ডিন। সুইমিং পুলে বিদ্যুতের তার ফেলে রাখাটাও ওর কাজ। কিন্তু সেদিন পার্টিতে ইলেকট্রিসিটি অফ করে দিয়ে মূর্তিটা ঠেলে ফেলল কে সেটা তো তার কাজ হতে পারে না?
ডায়নার দিকে তাকাল কিশোর-মুসা। পেছনের সিঁড়িতে মৃদু পায়ের শব্দ হলো।
কি, জবাব দাও? ডায়নার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল রবিন। দরজার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেল ডায়না। ঘরে স্নান আলো এসে পড়ল।
ফিরে তাকাল অন্যরা।
হাতে একটা কেরোসিনের বাতি নিয়ে গড়িয়ে আছেন ডক্টর নরিয়েমা। মুখে কুৎসিত হাসি। হাতের পিস্তলটা তুলে বললেন, এই যে তোমার জবাব।
.
১৪.
ডায়না, সব ভণ্ডুল করে দিয়েছ তুমি, নিমের তেতো করল যেন ডক্টরের কণ্ঠে। বিরক্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। সব ঠিকঠাক চলছিল। এ রকম যে ঘটবে ভাবতেই পারিনি।
আমাদেরকে খুন করবেন? মুসা জিজ্ঞেস করল।
ডায়নার কাছে গিয়ে দাঁড়াও তোমরা তিনজন, তিন গোয়েন্দাকে নির্দেশ দিলেন তিনি। ডিনের কাছে। ডায়না, সরো। সেটটা এমনভাবে সাজাব, যাতে মনে হয়, তিনজনকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে ডিন। খিকখিক করে হাসলেন তিনি। খবরের কাগজে হেডিং কি বেরোবে, এখনই আন্দাজ করতে পারছি। দারুণ খবর ছাপবে ওরা। সব দোষ পড়বে ছুরিটার ঘাড়ে। ফলাও করে ওরা লিখবে, বোরজিয়া ড্যাগারের রক্তলালসার কারণে মারা পড়ল এতগুলো তরুণ প্রাণ। আহারে! পিস্তল নাড়লেন তিনি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও।
ধীরে ধীরে ডিনের দিকে এগোল ওরা।
প্লীজ, খালা…
চুপ! এখানে এসো! আমার পাশে!
পিস্তলটা এখন কিশোরের দিকে ধরে রেখেছেন ডক্টর। উঠে দাঁড়াল ডায়না, টলমল করছে শ, যেন যে কোন মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। আমি…আমি আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, খালা। আপনার কথা বলিনি ওদেরকে। কেন এলেন? কারোই তেমন কোন ক্ষতি হত না…
আমার হত! সব টাকা পানিতে যেত! জুভেনার সমস্ত মাল ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আমার টাকাগুলোর কি হত? মাথা নাড়লেন ডক্টর। আমি তা হতে দিতে পারি না।
ভাবনার ঝড় বইছে কিশোর-মুসার মাথায়। চোখ বোলাচ্ছে সারা ঘরে। মুক্তির উপায় খুঁজছে।
হাত তোলো! কড়া আদেশ দিলেন ডক্টর। সোজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তোমাদের ফন্দি বুঝতে পারছি না আমি মনে করেছ?
কিছু করার নেই ওদের। আদেশ মানতে বাধ্য হলো। হারিকেনের আলো কেমন ভূতুড়ে ছায়া ফেলেছে ঘরের ভেতর। ডিনের কাছাকাছি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তিনজনে। ডায়না এগোল দরজার দিকে।
এই মেয়ে, জলদি করো না! বেঁকিয়ে উঠলেন ডক্টর। সারারাত দাঁড়িয়ে থাকব নাকি?
বুকের ওপর ঝুলে পড়তে চাইছে ডায়নার মাথা, এতই ক্লান্ত মনে হচ্ছে তাকে। তবে নরিয়েমার আদেশ পালন না করে পারল না।
ধরো, হ্যারিকেনটা বাড়িয়ে দিলেন ডক্টর। শক্ত করে ধরে রাখে। খবরদার, ছাড়বে না! ডায়না বাতিটা হাতে নিতেই দুহাতে ধবলেন পিস্তলটা, যাতে গুলি করার সময় না নড়ে। প্রথমে কিশোরের দুচোখের মাঝখানে নিশানা করলেন।
মারতে খারাপই লাগছে। চালাক-চতুর ছিল। স্বভাবও ভাল, জোরে নিঃশাস ফেললেন ডক্টর। কিন্তু উপায় নেই।
তারপর ঘটতে লাগল একের পর এক ঘটনা। অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে গেল ঘরের আলো। গুলির শব্দ হলো। শোনা গেল আরেকটা চিৎকার।
দরজার দিকে ঘুরে গেল কয়েক জোড়া চোখ। হ্যারিকেনের সাতে পুরো বাড়িয়ে দিয়েছে ডায়না। ডক্টরের চোখের সামনে ধরে রেখেছে।
শয়তান! উন্মাদ হয়ে গেছে ডায়না। যত নষ্টের গোড়া তুমি! ডিনকে জানোয়ার বানিয়ে ছেড়েছ! আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছ। তোমাকে শেষ করব এবার আমি…।
হ্যারিকেনটা ডায়নার হাত থেকে কেড়ে নিতে গেলেন নরিমো। টানাটানিতে ছুটে গেল ওটা ডায়নার হাত থেকে, উরও ধরে রাখতে পারলেন না, মেঝেতে পড়ে চুরমার হয়ে গেল কাঁচ, গড়িয়ে চলে গেল টেবিলটার তলায়। তবে আলো নিভল না।
ভেবেছিলাম তোকে কিছু করব না! ভীষণ রেগে গেছে নরিয়েমা। এবার তোকেও শেষ করব।
ডায়নার দিকে পিস্তল যোরালেন তিনি।
এটাই সঠিক সময়। নড়ে উঠল রবিন। লাফ দিয়ে গিয়ে পড়ল চারের সামনে। দা চালানোর মত করে কোপ মারল আর হতে। খসে পড়ে গেল।
আহত বিড়ালের মত চিৎকার করে উঠ পিলটা তুলে নেয়ার জন্যে পা বাড়ালেন ডক্টর। লাথি মেরে পিলটা সরিয়ে দিল রবিন। হ্যারিকেনের কাছে গিয়ে পড়ল ওটা।
দেখে প্রথমটায় কিছুক্ষণের জন্যে হয়ে গেল সবাই। পুরনো কাঠের মেঝেতে কেরোসিন পড়েছে, আগুন ধরে গেছে তাতে। শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে টেবিলের পায়া, তাতেও আগুন ধরল।
নেভাও! নেভাও! চিৎকার করে বলল ডায়না।
ফায়ার এক্সটিংগুইশার কোথায়! মুসা জিজ্ঞেস করল।
আমি জানি না…
এর বেশি আর শোনার অপেক্ষা করল না কিশোর-মুসা। যেভাবে শুকিয়ে রয়েছে কাঠ, দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে দেরি হবে না। একটানে রবিনকে নিয়ে দরজার দিকে এগোল কিশোর। বেরোনোর আগে ডক্টরের হাত চেপে ধরল। দুজনকেই টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
মুসাও দাঁড়িয়ে নেই। ডিনকে তুলে নিয়ে দৌড় দিয়েছে।
ডায়নাকে কিছু বলতে হলো না। সে নিজে নিজেই ছুটে বেরোল দরজা দিয়ে।
যত দ্রুত সম্ভব সিঁড়ি দিয়ে নামল ওরা। সদর দরজা দিয়ে ছুটে বেরোল কামানের গোলার মত সবাই, শুধু মুসা বাদে। ডিনকে বয়ে নিতে হচ্ছে তাকে।
বাইরে বেরিয়ে দেখল পুলিসের একটা গাড়ি এসে গেমেছে। দুজন পুলিস নেমে দৌড়ে এল প্রাসাদের দিকে।
বেরিয়েছে! চেঁচিয়ে বলল একজন।
কিশোরকে গালাগাল করতে করতে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন নরিয়েমা।
ছাড়ল না কিশোর। টানতে টানতে তাকে নিয়ে এগোল পুলিসের গাড়ির দিকে। দুজন পুলিসের একজন ওদের চেনা, পল নিউম্যান। উত্তেজিত কণ্ঠে তাকে জানাল কিশোর, তিনতলায় আগুন লেগেছে!।
দেখেছি, জবাব দিল পল। ফোন করে দিয়েছি দমকলকে। ভুরু কোঁচকাল সে। গুলির শব্দ শুনলাম মনে হলো?
দেখুন অফিসার, অভিযোগ শুরু করলেন ডক্টর, এই গুণ্ডাটা আমাকে…
কিশোর, ওভাবে টানাহেঁচড়া করছ কেন মহিলাকে? মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তোমার? ছাড়ো, ছাড়ো…
মিস্টার নিউম্যান, কিশোর বলল, গুলি যেটা শুনেছেন, এই মহিলাই ছুঁড়েছে। আমাকে মারার জন্যে।
সন্দেহ মেশানো বিস্ময় দেখা দিল পলের চোখে। একবার মুসার দিকে একবার কিশোরের দিকে তাকাতে লাগল। এই মহিলা!
হ্যাঁ। মুসা জবাব দিল। তা আপনি এলেন কি করে এখানে?
পাতলা পলিথিনের ব্যাগে করে সিলভার-প্লেটেড একটা রিভলভার নিয়ে এসেছে পল। সেটা দেখিয়ে বলল, ক্লিফসাইড কান্ট্রি ক্লাবে বনের ভেতর পাওয়া গিয়েছিল এটা, তোমাদের মনে আছে নিশ্চয়। আমাদের ব্যালিস্টিক এক্সপার্ট পরীক্ষা করে বলেছে, এটা মিস্টার মরগানের জিনিস। সেজন্যেই আমরা এসেছি, মিস মরগানকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে।
হ্যাঁ, এটা এখন ডায়নারই! চেঁচিয়ে উঠলেন নরিয়েমা। অ্যারেস্ট করুন ওকে, অ্যারেস্ট করুন!
হুমম, বুঝলাম, মাথা দোলাল পল। আনমনে বিড়বিড় করল, পুরানো অভিশাপ…একজন বৃদ্ধা মহিলা, তরুণকে গুলি…এবং একটা মেয়ে, যাকে তার নিজের রিভলভার দিয়েই গুলি করা হয়েছে..তারমানে…
…ব্যাপার আছে, ফস করে বসল মুসা।
চোখ স্থির হলো পলের। হ্যাঁ, ব্যাপার আছে। লম্বা কোন গল্প। খপ করে হাত চেপে ধরল ডায়না আর নরিয়েমার। আপনাদেরকে থানায় যেতে হবে। সারারাতই থাকতে হতে পারে ওখানে।
পলের কথায় বিশেষ কান নেই ডায়নার। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে তিনতলার দিকে। ঘন ধোঁয়া উড়ছে এখন ওখান থেকে। আমি যাব না…যেতে পারব না…! প্রায় ফিসফিসায় বলল সে।
ওর বাড়ি পুড়ছে তো, বুঝতে পেরে বলল দ্বিতীয় অফিসার। দাঁড়াও খানিকক্ষণ। দমকল আসুক। দেখেই যাই, কি হয়।
দমকল! বিরক্ত ভঙ্গিতে নাক কুঁচকালেন নরিয়েমা। ওদের বুদ্ধি তোমাদের মত হলে আর দেখতে হবে না! সারারাতই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এখানে।
হাতকড়া বের করল পল। দেখে বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত নিয়ে গেলেন ডক্টর।
কমলা আগুন নাচানাচি শুরু করেছে প্রাসাদের ছাতে।
পাহাড়ের গোড়া থেকে ভেসে এল সাইরেনের শব্দ।
কিশোরের পেছনে ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছে রবিন। কিশোর তাকাতে বলল, না, কিছু না। শক পেয়েছি তো, সামলাতে সময় লাগছে।
তা লাগবেই। রবিনের হাত ধরে কিশোর বলল, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তোমার জনেই এখনও বেঁচে রয়েছি আমি।
প্রাসাদের ছাতে আগুন বাড়ছে। বিষণ্ণ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে ডায়না। কারও দিকেই নজর নেই তার।
*
জ্যাকেটের বোম এঁটে পিকআপের জানালা খুলে দিল মুসা। তাহলে কি জিনিস তোমার পছন্দ?।
দেখো, মুসা, কিশোর বলল তীক্ষ্ণ কণ্ঠে, আর যা-ই হোক, এই হ্যালোইন ক্যান্ডি অন্তত নয়। ওগুলো বাচ্চাদের খাবার। কতবার বলেছি, তোমার ইচ্ছে হলে খাও যত খুশি, আমাকে সাধাসাধি কোরো না। আমার ভাল্লাগে না।
ভাল, খুব ভাল। স্টিয়ারিং ঘোরাল মুসা। অক্টোবরের চমৎকার বাতাস। মলের দিকে চলেছে ওরা। তোমাকে অন্য কিছুই কিনে দেয়া হবে। রবিন, তুমি?
আমার ক্যান্ডি খেতে আপত্তি নেই, হেসে বলল রবিন। কিশোরের মত তো আর ওজন বাড়ার আতঙ্ক নেই আমার।
পার্কিং লটে এসে গাড়ি রাখল মুসা। তিনজনেই নামল। এলিভেটরে উঠল শুধু ওরাই, আর কেউ নেই। চারতলায় এসে আস্তে করে থামল কোন ঝাঁকুনি ছাড়া।
খবরদার, মুসা! চেঁচিয়ে বলল কিশোর। দরজা খুলতেই এলিভেটরের অন্য পাশে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেছে সে। লাফিয়ে সরে এল মুসাও।
খাটো, টাকমাথা একজন লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতে মেশিনগান নিয়ে। মুখে মুখোশ। চুপ! ধমক দিয়ে বলল কিচকিচে কণ্ঠ, একদম নড়বে না!
এই, কি করছ? লোকটার পেছন থেকে বলল এক মহিলা। ঠেলে লোকটাকে এলিভেটরে ঢোকানোর চেষ্টা করল। ওদের ভয় দেখাচ্ছ কেন? বাজার করতে এসেছে বেচারারা। দাঁড়াও, আজ বাড়ি গিয়ে নিই। পাগলামি তোমার ছাড়াব ভালমত। খেলনা কেনার শখ বের করব!
এলিভেটর থেকে বেরিয়ে এসে হাসল তিন গোয়েন্দা।
চিড়িয়া একেকটা, হেসে বলল মুসা। পাগল যে কত আছে এদেশে। বাচ্চাদের মত ছিনতাইকারী সাজার শখ হয়েছে।
হ্যাঁ। আরেকটা জুভেনার।
যা-ই বলো, কিশোর, ওটা অনেক বেশি বড় পাগল। মিউজিয়ামের জিনিস ফেরত নেয়ার জন্যে কি কাণ্ডটাই না করল। যেন ওর নিজের জিনিস। ফিরিয়ে নিয়ে তারপর ছাড়ল।
ছাড়ল আর কই? মূর্তিটার জন্যেও কেস করে দিয়েছে ডায়নার বিরুদ্ধে। টাকা আদায় করে তবে ছাড়বে।
মেয়েটার জন্যে খারাপই লাগে। শেষ পর্যন্ত বাপদাদার বসতবাড়িটাও বিক্রি করতে হবে। ভাগ্যিস আগুনটা নেভাতে পেরেছিল দমকল বাহিনী। নইলে বিক্রির জন্যে ওটাও থাকত না।
কোনও চাকরি-টাকরি এখন পেলে হয়।
পাবে। পেয়ে যাবে। পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞাপন হয়েছে তো। টিভিতেও চান্স পেয়ে যেতে পারে। অনেক দিন দেখা নেই, ভাবছি দেখা করব…।
ইলেকট্রনিক্সের একটা দোকানের পাশ দিয়ে চলেছে ওরা, তীক্ষ্ণ চিৎকারে থেমে গেল। দোকানের ভেতর টিডি চলছে, চিৎকারটা এসেছে ওটার ভেতর থেকেই। পর্দায় দেখা গেল, পাগলের মত মাথার চুল ছিঁড়ছে আর চেঁচামেচি করছে এটা মেয়ে।
খাইছে। বলতে না বলতেই হাজির! অবাক হয়ে বলল মুসা। চিনেছ? আমাদের ডায়না মরগান! সত্যি সত্যি অভিনয় শুরু করে দিয়েছে টিভিতে!
ঘরময় ছোটাছুটি করছে ডায়না। চেঁচাচ্ছে, কাপ-প্লেট ছুঁড়ছে, চেয়ার উন্টে ফেলছে। হাতের কাছে একটা ফুলদানী পেয়ে সেটা নিয়ে তেড়ে গেল কাঁচুমাচু হয়ে থাকা খানসামার দিকে।
একেবারে নিজের জীবনের ঘটনা, কিশোর বলল। সেজন্যেই এত জীবন্ত।
যা-ই বলো, ট্যালেন্ট আছে মেয়েটা। নাম করে ফেলবে।
খানসামাটি কে, চিনতে পেরেছ ভুরু নাচাল রবিন।
আরে তাই তো, বার্ব এনুডা!
দুজনের অভিনয় দেখতে দেখতে হাসি ফুটল মুসার মুখে। ঠিকই হয়েছে। যেখানে যাওয়ার কথা ওদের, ঠিক সেখানেই গেছে।
এক পর্যায়ে হাসি আর চেপে রাখতে পারল না কিশোর। হো হো করে হেসে উঠল। চমৎকার হাসির অভিনয় করছে ডায়না আর এনুডা। হাসল মুসাও। তারপর হঠাই যেন সংবিৎ ফিরল। আরে, দাঁড়িয়ে আছি কেন এখনও! চলো! চলো!
একটা দোকানের দিকে ছুটল সে। হালউইন ক্যাভি কেনার জন্যে।
<