ঘরে পা দিয়েই গুঙিয়ে উঠল মুসা, কিশোর, সব সাফ করে ফেলা হয়েছে।

আনমনে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তাকাল বিশাল ঘরটায়। জানালা দিয়ে রোদ আসছে। সেটা দিয়ে হোটেলের সামনের দিকের ড্রাইভওয়ে আর ট্যাক্সি পার্ক করার জায়গা দেখা যায়। তারপরেও বহুদূরে দৃষ্টি চলে যায়, একেবারে নীল প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত।

কিছু রেখে গেলেও আর পাওয়া যাবে না সেটা, রবিন বলল।

ঠিকই বলেছ, একমত হলো কিং। কিশোর, লাভ হবে না। নোটফোট কিছু রেখে গেলে নিশ্চয় ঝাড় দিয়ে ফেলে দিয়েছে ঝাড়ুদার।

হয়ত, স্বীকার করল কিশোর। তার পরেও কথা আছে। ঝাড়ুদাররা ঠিকমত ঝাড়ু দেয় না অনেক সময়। তাছাড়া আমার মনে হয় না এত সাধারণ কিছু রেখে গেছে পিটার যেটা সহজেই ফেলে দেয়া যায়। সহজে চোখে পড়ে এমন কিছু রেখে। গেছে বলেও মনে হয় না। কারণ সে জানে কিডন্যাপাররা খুঁজতে পারে। তাহলে ওরা দেখে ফেলবে। না, অত সহজ কিছু রেখে যায়নি সে। সাংকেতিক কিছু রেখে। গেছে। এমন কিছু যা স্যার মনটেরোর বন্ধুরা চিনতে পারবে, শত্রুরা নয়। কাগজের ওপরও লিখে রেখে যেতে পারে, কিংবা অন্য কিছুতে।

তুমি বলতে চাইছ, রবিন বলল। খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে এমন কিছু করেছে, যা ঘর থেকে সরানো যাবে না। কিডন্যাপারদের নজরে পড়বে না। অথচ তার বন্ধুদের চোখে ঠিকই পড়বে।

হ্যাঁ, সে রকমই কিছু।

এসো, তাহলে বের করে ফেলি, কিং বলল।

বাথরুমে খুঁজতে চলে গেল মুসা। অন্যেরা রইল শোবার ঘরেই। ওপরে নিচে, জিনিসপত্র যা আছে সব সরিয়ে, ছবির পেছনে, পর্দার আড়ালে, কার্পেটের নিচে, সব জায়গায় দেখা হতে লাগল। রেডিয়েটরের নিচে আর ছাতের আলোর শেড দেখা হলো। গদির কাভার সরিয়ে দেখল কিশোর, পিটার কিছু লিখে রেখে গেছে কিনা। কিছুই পাওয়া গেল না। এমন কিচ্ছু দেখা গেল না যেটাকে মেসেজ কিংবা সূত্র মনে হয়।

বেশি সহজ জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছি আমরা, কিশোর বলল অবেশেষে। প্রথম মেসেজটাতে ডাবল কোড ব্যবহার করেছিল পিটার। জ্যাঙ্গাস প্রেস বলে বুঝিয়েছে ইমবালা। এবং ইমবালা বলে লাল সিংহের পাহাড় বোঝাতে চেয়েছে সে। এখানেও সে রকম কিছু করে রেখে যেতে পারে।

এবং সেটার সমাধান করতে পারবে, যোগ করল রবিন। ও ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞান আছে শুধু যাদের, তারাই।

রাইট। তার মানে পিটারকে খুঁজে বের করতে হলে কিছু বিশেষ ব্যাপারে জ্ঞান থাকতেই হবে। সেটার ওপরই নির্ভর করছে সব। কিং, পিটারের কি কোনও বিশেষ স্বভাব ছিল? কোনও কিছুতে আগ্রহ? উদ্ভট কোনও আচরণ?

নানদার ইতিহাসের ওপর তার অসম্ভব আগ্রহ ছিল, হ্যারি জানাল।

কাঠের ওপর খোদাই করা আফ্রিকান শিল্পও সংগ্রহ করত সে, কিং বলল। ছোট ছোট স্কেচ করতে পছন্দ করত। বিশেষ করে দেয়ালে। স্যার মনটেরো একবার রাগ করে বলেছিলেন তাঁর অফিসের দেয়ালে পর্যন্ত আঁকাআঁকি করেছে। পিটার।

 ঠিক! তুড়ি বাজাল কিশোর। দেয়ালে স্কেচ আঁকলে সহজে সেটা মোছা। যাবে না, নতুন করে রঙ না করলে। আর কোনও হোটেলের ঘরেই অত তাড়াতাড়ি রঙ করা হয় না। এটাই খুঁজতে হবে আমাদের। এই, খোঁজো খোঁজো সবাই।

কিন্তু এবারেও কিছু পাওয়া গেল না। দেয়ালে কোনও স্কেচ নেই। এমনকি আসবাবপত্রেও নেই কিছু, কোনও চিহ্নও নয়। কিছুই আকেনি।

কিশোর, কিছুই নেই এখানে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল মুসা। আমার বিশ্বাস, কিডন্যাপারদের দেখার পর এখানে কিছু করার সময়ই পায়নি পিটার।

চরকির মত পাক খেয়ে মুসার দিকে ঘুরল কিশোর। ঠিক, ঠিক বলেছ, মুসা! এটাই জবাব!

মানে? মুসা অবাক। কি এমন বললাম?

পিটার খুব চালাক ছেলে, ধীরে ধীরে বলল কিশোর। অথচ ম্যানেজারকে বলল লোকগুলোকে পাঠিয়ে দিতে, বাইরের লোক সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকা সত্ত্বেও। সে তখন পালিয়ে রয়েছে। লোকগুলো শত্রু না বন্ধু জানে না। কিন্তু তবু ম্যানেজারকে বলল পাঠাতে। আমরা হলে বলতাম কি?

না, জবাব দিল রবিন। ম্যানেজারকে বলতাম ওদেরকে আটকাতে। যাতে লুকিয়ে ওদের চেহারা একবার দেখতে পারি।  

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। নিশ্চয়। পিটারও দেখেছিল। জানালা দিয়ে। তবে, সেটা কাকতালীয় ভাবেই। সে তখন জানালার কাছে দাঁড়িয়েছিল হয়ত। যাই হোক, লোকগুলোকে আটকাতে বলেনি ম্যানেজারকে। প্রয়োজন মনে করেনি। ওদেরকে বুঝতে দিতে চায়নি যে একটা প্ল্যান সে ইতিমধ্যেই করে বসে আছে।

প্ল্যান? ভুরু কোঁচকাল রবিন, কি প্ল্যান?

সব চেয়ে সহজ প্ল্যান, ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়া। এমন কোথাও যেখান থেকে লোকগুলোর ওপর চোখ রাখতে পারে। লোকগুলো শত্ৰু এটা বোঝর সঙ্গে সঙ্গে যাতে পালাতে পারে ওখান থেকে। এসো।

কিশোরকে অনুসরণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এল সবাই।

বেরোনোর পথের কাছেই কোথাও হবে, নিজেকেই যেন বোঝাচ্ছে কিশোর। যেখান থেকে লোকগুলোর ওপর নজর রেখেছে সে। এমন কোথাও… হলওয়েতে নজর বোলাচ্ছে সে। ওই আলমারিটার মত কোনও জায়গা।

লম্বা, সরু একটা দেয়াল আলমারি। সিঁড়ি থেকে কয়েক ফুট দূরে। পর্দা আর বিছানার চাদরটাদরগুলো বোধহয় রাখা হয় ওখানে। ভেতরে ঢুকে দরজা সামান্য ফাঁক করে রাখলেই এলিভেটর আর সিঁড়ির ওপরের অংশ চোখে পড়বে। যে কেউ এসে পিটারের ঘরের দিকে যেতে চাইলে তাকে দেখা যাবেই ওখান থেকে।

পেন্সিলে আঁকা স্কেচ খোঁজ, নির্দেশ দিল কিশোর।

একবার তাকিয়েই দেখে ফেলল মুসা। আলমারির দরজার ভেতর দিকে। এই যে! খাইছে! দারুণ এঁকেছে তো! একটা গাড়ি। ভেতরে ড্রাইভারও আছে। পাশে ব্যাজের মত কি যেন আঁকা। ওপরেও আছে।

ভ্রূকুটি করল কিশোর। গাড়ি? গাড়ি একে কি বোঝাতে চেয়েছে?

সাধারণ গাড়ি নয়, কিশোর! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। দেখ, ড্রাইভারের মাথায় ক্যাপ আছে। আর হাতে একটা বাতির মত। তার মানে ট্যাক্সি!

কিং বলল, একটা ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ড তো রয়েছেই হোটেলের সামনে।

সে বোঝাতে চেয়েছে, হ্যারি আন্দাজ করল। সব লোকের ওপরই নজর রেখেছিল সে। আর ট্যাক্সিতে করে পালানোর প্ল্যান করেছে।

বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে একটা মাত্র ট্যাক্সি দেখা গেল। ম্যাগাজিন পড়ছে ড্রাইভার। ওকে জিজ্ঞেস করা হলো। না, চারদিন আগে কোনও কিশোরকে নিয়ে যায়নি সে এখান থেকে। তার আগেও নেয়নি, পরেও না।

কটা ট্যাক্সি আছে এখানে? হ্যারি জানতে চাইল।

অনেক, মিস্টার। তবে সবই আমাদের কোম্পানির। একটাই কোম্পানি।

তোমাদের মেইন গ্যারেজটা কোথায়? জিজ্ঞেস করল কিং।

বলে দিল ড্রাইভার। তার কথা মত ট্যাক্সি কোম্পানির সেন্ট্রাল গ্যারেজে চলে এল হ্যারি। বন্দরের কাছাকাছি। বিরাট এক কাঠের আড়তের পাশ দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। গ্যারেজের পেছন দিকে রয়েছে অফিস। সেখানে এসে, দিনের বেলা ডিউটি যে ম্যানেজারের তাকে পেল গোয়েন্দারা। কি চায়, বলল তাকে। একটা তালিকা দেখতে শুরু করল ম্যানেজার।

রেড লায়ন? চারদিন আগে? হ্যাঁ, সেদিন পাঁচজন ড্রাইভার ডিউটি দিয়েছে। ওখানে। দুজন এখন এখানেই আছে। রড আর হেগ। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার।

তার ট্যাক্সির ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করছে হেগ। চারদিন আগে কোনও কিশোরকে কোথাও নিয়ে যায়নি সে।

রডকেও পাওয়া গেল। অলস ভঙ্গিতে বসে কফি খাচ্ছে। সে জানাল, হ্যাঁ, একটা ছেলেকে রেড লায়ন থেকে নিয়ে গিয়েছি। সরাসরি তাকাল কিশোরের দিকে। তোমাকেই তো। জিজ্ঞেস করছ কেন আবার? দুদিন পরই তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল, ঠিক না? পত্রিকায় বেরিয়েছে, দেখেছি। ব্যাপারটা কি বল তো!

বাধা দিয়ে কিশোর বলল, কিডন্যাপ করা হয়েছিল আমাকেই। তবে আপনি যাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সে আমি নই। ভাল করে তাকান তো আমার দিকে। দেখুন আলাদা করে চিনতে পারেন কি না।

ভাল করেই তাকাল লোকটা। ওই ছেলেটার মতই লাগছে। শুধু পোশাকের ব্যাপারটা আলাদা। সে অনেক বেশি ফিটফাট ছিল তোমার চেয়ে। তাহলে তুমি বলতে চাইছ তুমি সেই ছেলে নও?

কিশোর জবাব দেবার আগেই হ্যারি জিজ্ঞেস করল, ছেলেটাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন মনে আছে?

নিশ্চয় আছে, মাথা ঝাঁকাল রড়। মনে আছে তার কারণ আজব আচরণ। করছিল ছেলেটা। মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঘটাচ্ছে। হোটেল থেকে ছুটে বেরিয়ে এল। আমাকে বলল শহরের আরেক ধারে নিয়ে যেতে। নিয়ে চললাম। বার বার পেছনে তাকাতে লাগল সে। যেন ভূতে তাড়া করেছে। একবার মনে হলো, হোটেল থেকে কিছু চুরি করেনি তো? কিন্তু চোর মনে হলো না। তবে পালিয়েছে যে তাতে কোনও সন্দেহ ছিল না আমার। শেষে গাড়িটা…

কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন? অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কিং।

বলছি বলছি। কেবলই পেছনে তাকাচ্ছিল। সারা শহর ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াল আমাকে। হঠাৎ থামতে বলল। কতগুলো গুদাম আর কারখানার মাঝখানে। আমার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে নেমে গেল। দৌড় দিল গলি দিয়ে। টাকা বেশিই দিয়ে। ফেলেছিল আমাকে, ভাঙতি নেয়ার জন্যেও থামেনি। তারপর এল গাড়িটা, যেটার কথা বলছিলাম। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। মনে হলো ছেলেটারই পিছু নিয়েছে।

কি গাড়ি? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

সবুজ মার্সিডিজ। ভাল গাড়ি। ওরকম একটা গাড়ি পেলে আর কিছু চাইতাম, নাঃ..,

যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলেন ছেলেটাকে, আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন সেখানে? ভাল পয়সা দেব, হ্যারি বলল।

পারব না কেন। নিশ্চয় পারব।

জায়গাটা গ্যারেজ থেকে বেশি দূরে না। শহরের একধারে কতগুলো গুদাম আর কারখানা বাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। নির্জন এলাকা। গুদামগুলোতে লোক আছে। বলে মনে হয় না। আর কারখানাও ছোট ছোট, টুকিটাকি জিনিস তৈরি হয়। বেশির ভাগই খালি অঞ্চল, বাড়িঘর কিছু নেই। দুটো বাড়ির মাঝের একটা গলি  দেখাল ড্রাইভার, ওদিক দিয়েই গেছে।

লোকটার ভাড়া মিটিয়ে দিল কিং। অনেক বেশিই দিল। মোড়ের কাছে ক্যাডিলাকটা রাখল হ্যারি।

এখানে আসতে গেল কেন? মুসার প্রশ্ন। নির্জন এলাকাটায় চোখ বোলাচ্ছে। ও কিডন্যাপারদের খসাতে চেয়েছে হয়ত, রবিনের অনুমান। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল ওরা তাকে অনুসরণ করছে।

তা হতে পারে, কিশোর বলল। লুকানোর আরেকটা জায়গা খুঁজছিল হয়ত। প্রচুর ঘোরপ্যাঁচ রয়েছে এমন কোথাও। চল, গলিটা দেখি। দেখা যাক আর সূত্র আছে কিনা।

সরু গলি। দুধারে ইটের দেয়াল। তিনটে দরজা দেখা গেল। সবগুলোতে বড় বড় তালা ঝোলানো। মরচে পড়া। বেশ কিছুদিন যে ভোলা হয়নি বোঝা যায়। গলির শেষ মাথায় চলে এল গোয়েন্দারা, বিশেষ কিছুই নজরে পড়ল না।

এবার? মুসা জিজ্ঞেস করল, এবার কি করব?

সামনে আরেকটা গলি। যেটাতে রয়েছে ওরা ওটারই মত দেখতে। দুপাশে গুদামঘর, ছোট ছোট কারখানা, আর প্রচুর শূন্য জায়গা, যেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে জঞ্জাল। ওই গলির একমাথা দিয়ে আরেকটা রাস্তা চলে গেছে আড়াআড়ি, ইংরেজি টি অক্ষর তৈরি করে।

তিন দিকে যেতে পারে সে, হ্যারি বলল। যে কোনও তিনদিক। কোন পথে যে গেছে ঈশ্বরই জানে!

.

১২.

যেদিকেই যাক, কিশোর বলল। কোনও একটা দিকে তো গেছে। একবারে সব দিকেই যেতে পারে না।

কি বলতে চাও? রবিনের প্রশ্ন।

কিডন্যাপাররা তার পিছু লেগেছিল। সে সেটা জানত। বেশি দূর যাওয়ার উপায় ছিল না তার। সময়ই ছিল না। নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে পড়তে হয়েছে।

তা ঠিক, একমত হলো কিং। এখন আমাদের কাছেই কোথাও রয়েছে কিনা কে জানে!

ওগুলোর যে কোনও একটাতে লুকাতে পারে। কয়েকটা গুদামঘর দেখাল। কিশোর। কিন্তু এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। তাছাড়া খাবার দরকার। এখানে তা নেই। তার মানে এখানে লুকালেও কিছুক্ষণের জন্যে, সাময়িক। তারপর একটা মোটেল কিংবা রুমিং হাউস খুঁজে নিয়েছে। রাস্তায় থাকাও তার জন্যে নিরাপদ নয়।

তাহলে, হ্যারি প্রস্তাব দিল। ছড়িয়ে পড়ে খোঁজা শুরু করা দরকার আমাদের। ভাগ হয়ে তিনদিকে চলে যাই।

মুসা আর হ্যারি গেল ডানে। কিশোর আর কিং বায়ে। রবিন সামনের দিকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার টি-এর মাথার কাছে মিলিত হবার সিদ্ধান্ত নিল।

সবার আগে ফিরে এল রবিন। সোজা এগিয়ে গিয়েছিল গলি ধরে। একটা মাঠের কিনারে গিয়ে শেষ হয়েছে পথটা।

 ধারেকাছে কোনও মোটেল কিংবা রুমিং হাউস চোখে পড়েনি। লাঞ্চটাইম হয়ে গেছে। খিদে পেয়েছে তার। অস্থির হয়ে অন্যদের ফেরার অপেক্ষা করতে লাগল সে।

তারপর এল কিশোর আর কিং।

কাছেই বড় রাস্তা, মোটর চলাচল করে, কিং জানাল। ওখান থেকে পাঁচ ব্লক দূরে একটা মোটেল আছে। সেখানে খোঁজ নিয়েছি। এক হপ্তার মধ্যে কোনও কিশোরকে ঘর ভাড়া দেয়নি ওরা। কিশোরকে চিনতে পেরেছে। খবরের কাগজে তার ছবি দেখেছিল।

বেশির ভাগই খালি জায়গা ওদিকে, কিশোর জানাল। মাঠ আর পতিত জমি।

অবশেষে ফিরে এল মুসা আর হ্যারি। ওরা অনেক দূর গিয়েছিল।

একটা মোটেল আর দুটো রুমিং হাউস পেয়েছি, মুসা বলল। কোনটাতেই কোনও কিশোর একা বাস করছে না।

পিটার যখন পালাচ্ছিল, তার পায়ে পায়ে লেগেছিল কিডন্যাপাররা, কিং বলল ধীরে ধীরে। সূত্র রেখে যাওয়ার সামান্যই সুযোগ পেয়েছে সে। আর আমরা তার মেসেজ পাব এমন আশাও নিশ্চয় করেনি। নাহ, কোনও উপায়ই দেখতে পাচ্ছি না।

হ্যাঁ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল রবিন।

আপাতত সে রকমই লাগছে, ব্যর্থ হয়েছে, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না কিশোর।

আমি আর হ্যারি হোটেলে ফিরে যাই, কিং বলল। দেখি লস অ্যাঞ্জেলেসে কোনও খবর পাঠিয়েছে কিনা পিটার। আমরা যে তাকে খুঁজছি, এটা বুঝতে পারছে সে। নিশানা হারিয়ে ফেলেছি এটা পারছে কিনা জানি না। তাকে সেটা কোনভাবে বোঝান দরকার। যাতে আরেকটা মেসেজ পাঠায়।

যদি সম্ভব হয় আরকি, তেমন আশা করতে পারছে না হ্যারি।

আমরা হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাব, ভোতা গলায় বলল কিশোর। নতুন কোনও বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করব। স্যালভিজ ইয়ার্ড এখান থেকে বেশি দূরে না। কিং, আপনি কি আমাদের নামিয়ে দিয়ে যাবেন?

আরিব্বাবা, এত্ত দেরি হয়ে গেছে। ঘড়ি দেখে প্রায় আঁতকে উঠল যেন মুসা। তাই তো বলি, পেটের ভেতর ছুঁচো দৌড়াদৌড়ি করে কেন?

তিন গোয়েন্দাকে বাড়ি পৌঁছে দিল কিং আর হ্যারি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হেডকোয়ার্টারে কিশোরের সঙ্গে দেখা করবে বলে চলে গেল মুসা ও রবিন।

কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে পারল না। বাড়িতে কাজ পড়ে গিয়েছিল। আসতে আসতে দুই ঘণ্টা লেগে গেল দুজনেরই। হেডকোয়ার্টারে ঢুকে দেখে ডেস্কের ওপর।  রাজ্যের ম্যাপ ছড়িয়ে নিয়ে বসেছে গোয়েন্দাপ্রধান। স্ট্রীট ম্যাপ। অসংখ্য কাগজ ছড়ানো টেবিলে। স্কেচ করেছে, নানা রকম হিসেব করেছে ওগুলোতে কিশোর।

কিছু বুঝলে? ঢুকেই জিজ্ঞেস করল মুসা।

 নাহ, মাথা নাড়ল কিশোর। খুব একটা সুবিধে হচ্ছে না।

কিং ফোন করেছে?রবিন জিজ্ঞেস করল। ট্রেড মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল পিটার?

আমিই ফোন করেছিলাম হোটেলে, জবাব দিল কিশোর। না, কোনও খবর পাঠায়নি পিটার।

কিশোর, চিন্তিত ভঙ্গিতে মুসা বলল। বোধহয় ওকে ধরে ফেলেছে কিডন্যাপাররা। খবরের কাগজে তোমার ছবি দেখে ভুল বুঝতে পেরেছিল। তারপর খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলেছে আসল ছেলেটাকে।

সেকথাও ভেবেছি, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল কিশোর। ধরতে তো পারেই। তবে আমার তা মনে হয় না। তাহলে স্যার মনটেরোকে মেসেজ পাঠাত। আরেকটা ব্যাপার, আমাদের ওপর নজর রাখত না। তখন ঝোপে বসে রেখেছিল, মনে নেই?

ঢোক গিলল মুসা। তার মানে এখনও বসে আছে কোনখানে?

আমার তা-ই মনে হয়। হ্যারি আর কিঙের ওপরও নজর রাখছে ওরা। সাবধানে থাকতে হবে আমাদের। তবে পিটারকে যতক্ষণ খুঁজে বের করতে না পারছি ততক্ষণ আমরা নিরাপদ। কিছু করবে না আমাদেরকে।

আরেকটা কথা ভাবছ না কেন? রবিন বলল, কিশোরের কিডন্যাপিঙের খবর পিটারও তো পড়ে থাকতে পারে। এটাই তার সুযোগ, বেরিয়ে এসে পুলিশকে গিয়ে জানানো। জানাচ্ছে না কেন? পুলিশ তাকে সাহায্য করবে তখন। নিরাপদ জায়গায় রেখে দেবে।

তাই তো! মুসা বলল।

তাহলে ধরে নিতে হবে পেপার দেখেনি পিটার, কিশোর বলল। এমন কোথাও লুকিয়েছে যেখানে কাগজ নেই। বেরিয়ে আসতেও সাহস করছে না। সেই জায়গাটা যে কোথায় সেটা বুঝতে পারলেই হত!

এত ভাবনা চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারলে না?

ভাবছি খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেব। সাংকেতিক ভাষায়, যাতে শুধু। পিটার বুঝতে পারে। হ্যারি আর কিঙের সঙ্গে কোথাও দেখা করতে বলব তাকে। কিন্তু সেই একই সমস্যা রয়ে যাবে এতেও। খবরের কাগজ দেখার সুবিধেই যদি না পায় সে?

না, হবে না, রবিন বলল।

তাহলে ভূত-থেকে-ভূতে ব্যবহার করে দেখতে পারি। রকি বীচের এত ছেলেমেয়ের মাঝে কেউ না কেউ দেখে থাকতে পারে কথায় অদ্ভুত টানওয়ালা একটা ছেলেকে।

তাতেও বিশেষ সুবিধে হবে বলে মনে হয় না, রবিন বলল। লুকিয়েই যদি থাকে, বেরোতে না পারে, কথা বলবে কিভাবে ছেলেদের সঙ্গে?

তাছাড়া, মুসা যোগ করল। তাকে তুমি মনে করে ভুল করতে পারে রকি বীচের ছেলেরা।

এটাই হলো সমস্যা, তিক্তকণ্ঠে বলল কিশোর। যাকগে, কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর ভূত-থেকে-ভূতে ছাড়া উপায় নেই। এখন আরেকটু ভেবে দেখা যাক। পিটার নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে ফেলেছে যারা তাকে খুঁজছে তারা তার চারদিন আগে রেখে আসা নিশানা হারিয়ে ফেলেছে। শেষ চিহ্নটা রেখে এসেছে রেড লায়ন র‍্যাঞ্চে। সুতরাং…

আবার সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

করবে। লুকিয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে। সে জন্যে নজর রাখতে বলেছি হ্যারি। আর কিংকে। হয়ত এতক্ষণে ওখানে চলে গেছে ওরা। আর, আরেকটা কথা।

কী? জানতে চাইল রবিন।

মনের ভেতর একটা কথা কেবলই খচখচ করছে। আমাকে আবিষ্কার করল কিভাবে কিডন্যাপাররা? পিটার বলে, ভুলই বা করল কেন?

সহজ, সমাধান করে দিলে মুসা। তোমাকে ইয়ার্ডে দেখেছে ওরা।

 এখানে আসল পিটার না এসে থাকলে?

হয়ত রাস্তায় কিংবা বাজারে দেখেছে তোমাকে, রবিন বলল। তারপর পিছু নিয়ে চলে এসেছে।

হ্যাঁ, রবিনের সঙ্গে সুর মেলাল মুসা। এটা তো হতেই পারে। ব্যাপারটাকে কাকতালীয় ভেবেছে ওরা। তোমাকে হঠাৎ দেখে ফেলে নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করেছে।

যুক্তি আছে তোমাদের কথায়, ঠিক মেনে নিতে পারছে না কিশোর। তবু, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জরুরী কিছু মিস করছি আমরা। নিশ্চয় ওই লোকগুলো এমন কিছু পেয়েছে, যা থেকে এখানে এসে খুঁজে বের করেছে আমাকে। রাস্তায় কিংবা বাজারে অ্যাক্সিডেন্টলি দেখে ফেলেনি।

সেটা কি, কিশোর?

জানি না।

নীরব হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। ভাবছে। অনেক ভেবেও কিছু বের করতে পারল না। শেষে বাড়ি ফিরে গেল রবিন আর মুসা। দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ভাবতে ভাবতে এসে লিভিং রুমে ঢুকল কিশোর। টিভি দেখছেন রাশেদ। পাশা। সে-ও বসে পড়ল। একটা কাজ দিলেন তাকে রাশেদ পাশা। ইয়ার্ডের। অ্যাকাউন্ট বুকে কি একটা গোলমাল হয়েছে, হিসেবের, সেটা মিলিয়ে দিতে হবে। ডিনারের সময় হল। টেবিল সাজিয়ে ডাকতে এলেন মেরিচাচী।

বিরক্তিকর, নিরাশায় ভরা একটা দিন কেটেছে। কিন্তু খেতে বসে কিশোর দেখল, সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে। বেশ খেতে পারছে। এক প্লেট শেষ করে আবার বাড়িয়ে দিয়ে হাসল, তোমার গরুর কাবাবটা খুব ভাল হয়েছে, চাচী।

অবাক হলেন মেরিচাচী। তোর কি হয়েছে আজ, বল তো কিশোর? এভাবে তো খেতে চাস না কখনও! আজ আমার ফ্রিজটাই খালি করে দিয়েছিস!

কিশোরও অবাক। আমি খেয়েছি! ছিলামই তো না সারাদিন, খেলাম কখন?

ওই যতক্ষণই ছিলি। খেয়েছিস ভাল করেছিস। আমিও তো চাই তুই খা…

কিশোরের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলেন মমরিচাচী। গোল গোল হয়ে গেছে। তার চোখ। হা হয়ে গেছে মুখ। চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি।

এই কিশোর, কি হলো? ভুরু কুঁচকে ফেলেছেন রাশেদ পাশী। শরীর খারাপ হয়ে গেল নাকি?

না..না..চাচা, আমি ভাল আছি…এত ভাল অনেকদিন থাকিনি! লাফিয়ে। উঠে দাঁড়াল কিশোর। আসছি!

আরে খেয়ে যা না! ঠেকাতে গেলেন মেরিচাচী।

 রওনা হয়ে গেছে ততক্ষণে কিশোর। মিনিটখানেকের বেশি লাগবে না।

দ্রুত এসে লিভিং রুমে ঢুকল সে। রবিনকে ফোন করল। নথি? জলদি মুসাকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে চলে এস। মাকে বলে আসবে সারারাত বাড়ি ফিরবে না। আমাদের সঙ্গে থাকবে।

 রবিনকে কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর। ফিরে এল রান্নাঘরে, খাবার টেবিলে। এত উত্তেজিত হয়ে গেছে, খিদেই নষ্ট হয়ে। গেছে। মেরিচাচীর বিখ্যাত অ্যাপল পাইয়ের টুকরো দুটোর বেশি খেতে পারল না। আর। তারপর চাচীর ভয়ে কোনমতে জোর করে এক গেলাস দুধ গিলে নিয়ে উঠে পড়ল। বেরিয়ে চলে এল ঘর থেকে। দ্রুত এগোল ট্রেলারের দিকে।

পনেরো মিনিট পর দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকল রবিন আর মুসা। দেখল, ডেস্কে বসে তাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে কিশোর পাশা। হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ।

কি ব্যাপার? রীতিমত হাঁপাচ্ছে রবিন। জোরে জোরে প্যাভাল করে সাইকেল চালিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে।

সারা রাত থাকতে হবে কেন? মুসার প্রশ্ন।

কারণ, নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করল গোয়ন্দাপ্রধান। পিটার মনটেরো কোথায় লুকিয়ে আছে, জানি আমি।

.

১৩.

 কোথায়? চিৎকার করে উঠল রবিন।

কি করে জানলে? মুসাও না চেঁচিয়ে পারল না।

সারাক্ষণ আমাদের নাকের নিচেই রয়েছে, জবাব দিল কিশোর। অন্ধ হয়ে ছিলাম আমরা। বলেছি না একটা কিছু মিস করেছি। রাস্তায় দেখে আমাকে ফলো করে এখানে এসে হাজির হয়েছে কিডন্যাপাররা, কথাটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার।

কেন? মুসার প্রশ্ন।

কারণ, তাহলে ওরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যেত পালানোর চেষ্টা করছি না আমি। লুকানোরও চেষ্টা করছি না। তোমাদের সঙ্গে সহজভাবে মিশছি, রকি বীচের আর দশটা ছেলের মত। আমাকে কথা বলতেও শুনে থাকতে পারে। কথায় যে টান। নেই এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না। ভুল ওরা করত না।

কিন্তু কিশোর, মনে করিয়ে দিল রবিন। ভুল ওরা ঠিকই করেছে।

করেছে। এবং সেটাই হলো জবাব। কারণ ওরা আমাকে এমন জায়গায় দেখেছে যেখানে পিটারকে আশা করেছিল। ওখানেই খুঁজছিল তাকে।

খুঁজছিল? হাঁ হয়ে গেছে রবিন।

হ্যাঁ, নথি। ট্যাক্সি থেকে নেমে বেশি দূর যেতে পারেনি পিটার। লুকিয়ে পড়তে হয়েছে। এমন জায়গায়, যেখানে গত কদিন ধরে খাবার চুরি যাচ্ছে। চকচক করছে কিশোরের চোখ। পিটার আমাদের নাকের নিচে এই ইয়ার্ডেই লুকিয়ে আছে!

ই.ই..ইয়ার্ডে! তোতলাতে শুরু করেছে মুসা।

যেখান থেকে সে গায়েব হয়েছে সেখান থেকে মাত্র এক মাইল দূরে ইয়ার্ড, বোকা হয়ে গেছে যেন রবিন। মুসা, সেদিন তোমার খাবার ইঁদুরে খায়নি। পিটার খেয়েছে।

হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কিডন্যাপারদের হাত থেকে পালাতে গিয়ে এই ইয়ার্ডে ঢুকে পড়েছিল সেদিন পিটার। এখানে এত বেশি জঞ্জাল, লুকানোর। জায়গার অভাব নেই। কাজেই এখানেই, থাকবে ঠিক করেছিল সে। খাবার চুরি। করাও এখানে সহজ। প্রায় সারাটা দিনই রান্নাঘর খালি পড়ে থাকে। কিডন্যাপাররা তাকে ইয়ার্ডে ঢুকতে দেখেছে, কিংবা দেখেনি, যা-ই হোক, ওরা আশপাশে ঘুরঘুর করেছে। আমাকে দেখেই মনে করেছে আমি পিটার। আর কিছু বোঝার অপেক্ষা করেনি। পয়লা সুযোগটা পেয়েই ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।

সারাক্ষণ এই ইয়ার্ডেই রয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছে না এখনও মুসা।

 তাতে কোনই সন্দেহ নেই। এখন আমাদের কাজ ওকে খুঁজে বের করা।

খুঁজব আর কি? বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করে নাম ধরে ডাকি, বেরিয়ে চলে আসবে।

 মাথা নাড়ল কিশোর। না, তাতে কাজ হবে না। আমাদেরকে চেনে না সে। হয়ত দুর থেকেই দেখেছে শুধু। লুকিয়েছে ভালমতই। হ্যারি আর কিংকেও নিশ্চয়। দেখেনি, তাহলে বেরিয়ে আসত। আমরা চেঁচাতে শুরু করলে আবার ভয় পেয়ে গিয়ে পালাতে পারে। তার চেয়ে খুঁজেই বের করি।

এই জঞ্জালের মাঝে সেটাও সহজ না। কিশোর, অপেক্ষা তো করতে পারি। আমরা। বেরোতে তাকে হবেই, এক সময় না একসময়। সারাক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবে না।

না, তা পারবে না। থাকবেও না। কিছুটা নিরাপদ বোধ করলেই বেরিয়ে চলে যাবে, সম্ভবত রেড লায়নে। ট্রেড মিশনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। তবে তার আগে পর্যন্ত লুকিয়েই থাকবে। সেটা কত দিন ঠিক বলা যায় না।

তাহলে কি করব? রবিনের প্রশ্ন।  

একটা বুদ্ধি করেছি। আমার বিশ্বাস, শুধু রাতের বেলাতেই বেরোয় পিটার। যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে। সব কিছু শান্ত থাকে।

সে জন্যেই সারারাত থাকতে বলেছ, বুঝতে পারল মুসা।

হ্যাঁ।

একটা ফাঁদ পাততে পারি না? রবিন বলল, পেতে অপেক্ষা করে বসে থাকব।

ও বুদ্ধিটা সেটাই। খাবারের দরকার হলেই কেবল বেরোয় পিটার। চালাক ছেলে। যতটা দরকার তার চেয়ে কম নেয়, যাতে ব্যাপারটা কারও নজরে না পড়ে। মেরিচাচীর কড়া নজর তার পরেও এড়াতে পারেনি। তবে চাচী ভেবেছে পরিবারেরই কেউ খেয়েছে। ফাঁদ পাততে অসুবিধে হবে না আমাদের।

খাবারের ফাঁদ, মুসা বলল।

ইয়ার্ড নীরব হলেই বেরিয়ে আসবে সে, বলল কিশোর। বাইরে বেরিয়ে প্রচুর কথা বলব আমরা।

কোন বিষয়ে?

যেন বাইরে চলে যাচ্ছি আমরা। কাল রওনা হব। তিনটে প্যাকেট লাঞ্চ তৈরি করে রাখতে হবে সে জন্যে। ওগুলো রান্নাঘরে না রেখে রাখব পাশের বারান্দায়। যাতে সকালে সহজেই নিতে পারি। কথাগুলো তার কানে যাবেই এমন না-ও হতে পারে। তবে যেতেও পারে। সে জন্যেই বলব।

বুঝলাম। তিনটে প্যাকেটে অনেক সময় পার করতে পারবে সে। কাজেই লোভী হয়ে উঠবেই। আকর্ষণটা এড়াতে পারবে না।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ভাববে, আমরা কিছু বুঝতে পারব না। ইঁদুরকে দোষ। দেব, কিংবা কোনও ভবঘুরেকে। রাত দশটায় ইয়ার্ড থেকে সরে যাব আমরা। খাবারের তিনটে প্যাকেট রেখে চলে যাব শোবার ঘরে। দুজন ঘরেই থাকব। আরেকজন পা টিপে টিপে নেমে চলে আসব নিচে। রান্নাঘরে বসে নজর রাখব। বারান্দার দিকে, যেখানে টেবিলে খাবারগুলো রাখব। দুই ঘণ্টা পর পর পালা করে পাহারা দেব আমরা।

ইমারজেন্সি সিগন্যালগুলো সঙ্গে রাখতে হবে। পিটারকে দেখলেই সঙ্কেত দেব অন্য দুজনকে। যদি ঘুমিয়েও পড়ি, জোরাল সঙ্কেত জাগিয়ে দেবে। আমাদেরকে।

তারপর? জিজ্ঞেস করল রবিন।

দৌড় দেব দুজনেই। দুদিক থেকে গিয়ে পিটারের পালানোর পথ বন্ধ করে দেব। তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলা হবে তাকে। যাওয়ার একটাই পথ থাকবে তার তখন। সামনের দিক। গেট থাকবে তালা দেয়া। যাবে কোথায়? ধরা তাকে। পড়তেই হবে।

তার পর আর কি? উপসংহার টানল মুসা। তাকে আমাদের পরিচয় দেব। শান্ত থাকতে বলব। হ্যারি আর কিংকে ফোন করব।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তবে বেশি হৈ চৈ করা চলবে না আমাদের। চাচা চাচী যেন জেগে না যায়। চল এখন। সিগন্যালগুলো বের করে নিয়ে কাজে লেগে। যাই।

ওয়ার্কশপে এসে কাজে লাগল তিন গোয়েন্দা। আসলে কাজের ভান করতে লাগল। অনেক কথা বলল ওরা, জোরে জোরে। শব্দ করল। মেরিচাচী আর রাশেদ চাচা তখনও ঘুমাননি। কাজেই অসুবিধে হল না তাদেরকে নিয়ে। ওয়ার্কশপ থেকে বেরিয়ে লাঞ্চ প্যাকেট তৈরি করতে বসল তিনজনে। সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাখল। বারান্দার টেবিলে, এমন জায়গায়, যাতে রান্নাঘর থেকে সহজেই চোখে পড়ে। দশটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ইয়ার্ডের বাইরের আলোগুলো সব নিভিয়ে দিল। তারপর রওনা হল কিশোরের শোবার ঘরের দিকে।

প্রথম পাহারা দিতে নামল রবিন। লুকিয়ে রইল এসে অন্ধকার রান্নাঘরে। মেরিচাচী আর রাশেদ পাশা ওপর তলায় শোবার ঘরে চলে গেছেন। সঙ্কেত দেয়ার যন্ত্রগুলো শার্টের পকেটে ভরে নিয়েছে কিশোর আর মুসা। রবিনেরটা তার হাতে।

মাঝরাতে রবিনের জায়গায় এসে বসল কিশোর।

বারান্দায় টেবিলেই পড়ে আছে প্যাকেটগুলো। কোনও নড়াচড়া নেই কোথাও। কোনও শব্দ নেই। শুধু বাইরের রাস্তায় মাঝেসাঝে হুস হুস করে চলে যাচ্ছে দুএকটা গাড়ি।

রাত দুটোয় মুসার পাহারা দেয়ার পালা পড়ল। রান্নাঘরে ঢুকেই হাই তুলল। কয়েকবার। মেরিচাচীর ফ্রিজটায় হামলা চালাবে কিনা ভাবল একবার। বাতিল করে দিল ভাবনাটা। তাতে পাহারার অসুবিধে হতে পারে। ভোর চারটেয় আবার এসে তার জায়গা দখল করল রবিন।

কিশোর মনে হয় ভুল করেছে, ফিসফিস করে বলল মুসা। কিংবা অন্য কোথাও চলে গেছে পিটার। এই রাস্তায় এটাই একমাত্র বাড়ি নয়। আরও আছে। ওগুলোতে লুকানোর জায়গা আছে, খাবারের ব্যবস্থা আছে।

ভোর সাড়ে পাঁচটা। পুবের আকাশে ধূসর আলোর আভাস। তবে ইয়ার্ডের জঞ্জালে অন্ধকার আগের মতই শেকড় গেড়ে রয়েছে যেন, নড়তে চাইছে না। ঠিক এই সময় বাড়ির পেছনের বারান্দার কাছে কি যেন নড়তে দেখল রবিন।

তন্দ্রা এসেছিল। ঝট করে সোজা হলো সে। চোখ মিটমিট করে দৃষ্টি স্বচ্ছ করার চেষ্টা করল। ভাল করে তাকাল বারান্দার দিকে। আবছা একটা ছায়ামূর্তি এসে উঠেছে বারান্দায়। ইমারজেন্সি সিগন্যাল চালু করে দিল রবিন।

এত জোরে লাফিয়ে বিছানা থেকে নামতে গেল কিশোর, পড়েই যাচ্ছিল আরেকটু হলে। মুসার কাধ ধরে নাড়া দিল, এই ওঠ ওঠ, জলদি! বলেই দিল দরজার দিকে দৌড়। টিইপ টিইপ করছে তার পকেটে ইমারজেন্সি সিগন্যাল।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমেই দুজন দুদিকে চলে গেল। লুকিয়ে পড়ল দুটো ঝোপের ভেতরে।

রান্নাঘরে বসে ঘড়ি দেখল রবিন। আবার তাকাল বারান্দার দিকে। বারান্দাটা একেবারে খোলা নয়। অর্ধেকটা বেড়া দেয়া। টেবিলটা রয়েছে সেই ঘেরা অংশের ভেতরে। সেখানে ঢোকার মুখের কাছে চলে গেছে ছায়ামূর্তিটা। একটা ছেলে, কোনও সন্দেহ নেই। আবছা অন্ধকারেও কিশোর পাশার অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠল যেন। অবিকল একই রকম শরীর দুজনের। টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল ছেলেটা। খাবারের প্যাকেটের দিকে হাত বাড়াল।

এই, থামো! চিৎকার করে বলল রবিন। তোমাকেই বলছি, পিটার মনটেরো!

যেন কারেন্টের শক খেয়েছে ছেলেটা, এমন করে ঝটকা দিয়ে পিছিয়ে এল। ঘুরেই দিল দৌড়। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আছাড় খেয়ে পড়েই যাচ্ছিল প্রায়। পেছন ফিরে তাকাল একবার। রবিনের দিকে চোখ পড়ল। ঘরের কোণ ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল ওপাশে।

 বেরিয়ে পড়েছে কিশোর। শিকারী বেড়ালের মতই এসে লাফ দিয়ে পড়ল যেন ছেলেটার ঘাড়ে।

ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল ছেলেটা। পালাতে পারল না। ততক্ষণে হাজির হয়ে গেছে মুসা আর রবিন। চেপে ধরল পিটারকে। ছাড়া পাওয়ার জন্যে। ধস্তাধস্তি শুরু করল ছেলেটা।

ভয় নেই, আমরা বন্ধু! বোঝানোর চেষ্টা করল গোয়েন্দারা। স্যার মনটেলোর হয়ে কাজ করছি। তোমাকে সাহায্য করতে চাইছি! কিং আর হ্যারি…!

কিন্তু কোনও কথাই যেন ঢুকছে না ছেলেটার কানে। ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেই চলেছে। শক্ত করে তাকে চেপে ধরে রাখল রবিন আর মুসা। কিশোর বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল।

হার্বার্ট কিং? অবশেষে যেন কথা কানে ঢুকল ছেলেটার। হ্যারি ম্যাকঅ্যাডাম? ওরা এখানে?

হ্যাঁ, এখানে, কিশোর বলল। তুমি এখন পুরোপুরি নিরাপদ। কোনও ভয় নেই আর। চল, আমাদের হেডকোয়ার্টারে।

প্রায় টেনেহিঁচড়ে পিটারকে নিয়ে এসে ট্রেলারে ঢোকাল তিন গোয়েন্দা।

এটা…এটা কি? জানতে চাইল পিটার।

একটা ট্রেলার, জবাব দিল কিশোর। জঞ্জালের তলায় লুকানো একটা মোবাইল হোম। আমাদের হেডকোয়ার্টার। তোমার জন্যে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কারণ, যারা তোমাকে কিডন্যাপ করতে চায়, এ মুহূর্তে তারা হয়ত এই ইয়ার্ডের চারপাশেই ঘুরঘুর করছে।

সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল রবিন।

কিশোরের দিকে তাকিয়ে থ হয়ে গেল পিটার। বড় বড় হয়ে গেল চোখ। মুখ। হাঁ। অনেক কষ্টে যেন কথা খুঁজে পেল, তুমি…তুমি দেখতে একেবারে আমার মত! অবিকল এক! কেন?

.

১৪.

হেসে বলল কিশোর, একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।

পিটারও হাসল। হ্যাঁ, তোমাদের দেশে যখন আমি প্রশ্ন করার অধিকারটা তোমারই বেশি।

তার ওপর আবার কিশোরের পোশাক পরেছ, মুসা বলল।

কিশোরের একটা পুরনো প্যান্ট পিটারের পরনে। গায়ে শাদা শার্ট, কয়েক মাস আগেই ওটা ফেলে দিয়েছিল সে। আর এক জোড়া ছেঁড়া স্যাণ্ডাল।

পালানোর সময় কাপড় ছিঁড়ে শেষ হয়ে গেছে আমার, পিটার বলল। একেবারে পরার অনুপযুক্ত। কি আর করব। জঞ্জালের নিচে হামাগুড়ি দেয়ার সময়। একটা বাক্সের ভেতরে পেয়ে গেলাম এগুলো।

খাইছে! গুঙিয়ে উঠল মুসা। কথাবার্তার ভঙ্গিও দেখি এক। একজন কিশোর পাশার যন্ত্রণায়ই অস্থির, দুজনকে সইব কি করে?

হাসতে লাগল সবাই।

তোমাদের বেকায়দায় ফেলে দিলাম। সরি, পিটার বলল। তবে আমাকে যে, খুঁজে বের করেছ এজন্যে আমি কৃতজ্ঞ। আমি তো ঘাবড়েই যাচ্ছিলাম আদৌ কেউ বের করতে পারবে কিনা ভেবে।

তোমাকে পেয়ে আমিও খুব খুশি, দাঁত বের করে হাসল কিশোর। যমজ তো।

একা থাকার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলাম না, পিটার বলল। কিন্তু তোমরা কে? পরিচয়ই কিন্তু হয়নি এখনও।

তোমার যমজ ভাইয়ের নাম তো শুনলেই-কিশোর পাশা, গোয়েন্দাপ্রধান, পরিচয় করিয়ে দিল রবিন। আমার নাম রবিন মিলফোর্ড। রেকর্ড রাখা আর রিসার্চের কাজগুলো আমি করি। আর ও হলো মুসা আমান, সহকারী গোয়েন্দা।

গোয়েন্দা? অবাক হয়েছে পিটার। সত্যি?

এই যে আমাদের কার্ড, পকেট থেকে বের করে দিল কিশোর।

দারুণ তো! তোমরা আমেরিকানরা খুব মজার মজার কাণ্ড কর। সত্যিই গোয়েন্দা?

সত্যিই গোয়েন্দা, জবাব দিল রবিন। তোমাকে খুঁজে বের করতে আমাদেরকে ভাড়া করেছে কিং আর হ্যারি। তুমি ভেবে কিডন্যাপাররা কিশোরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর।

তাই নাকি? কিশোরকে কিডন্যাপ করেছে?

সংক্ষেপে সব কথা পিটারকে জানাল কিশোর। মন দিয়ে শুনল ছেলেটা। তারপর বলল, তাহলে তোমরাই বের করেছ জ্যাঙ্গাস প্লেস বলে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি। বের করেছ রেড লায়নের আলমারিতে আঁকা ট্যাক্সির ছবি। সত্যিই বুদ্ধিমান।

তুমি যে এখানে লুকিয়ে আছ, এটা অবশ্যই বুঝতে পেরেছে আমাদের কিশোর, মুসা বলল গর্বের সঙ্গে।

দারুণ দেখিয়েছ, সত্যি। তো এখন কি হবে? কিং আর হ্যারির সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যাতে আমার বাবাকে খবর দিতে পারে?

নিশ্চয়। দুই বন্ধুর দিকে তাকাল মুসা। পিটারকে সোজা মিরামার হোটেলে নিয়ে যেতে পারি আমরা।

সেটা কি উচিত হবে? রবিনের প্রশ্ন। কিডন্যাপারগুলো ইয়ার্ডের বাইরে বসে চোখ রাখতে পারে। হোটেলেও চোখ রাখতে পারে।

তোমার তাই মনে হয়? সতর্ক হয়ে গেল পিটার।

রবিন ঠিকই বলেছে, কিশোর বলল। সেটা হতেই পারে। সহজে হাল ছাড়বে না উগ্রবাদীরা। পিটার এখানেই নিরাপদ। অযথা ঝুঁকি নেয়ার কোনও মানে হয় না। তার চেয়ে বরং হ্যারি আর কিংকে ফোন করি। এখানে চলে আসুক

করব? বলে জবাবের অপেক্ষা না করেই ফোনের দিকে হাত বাড়াল রবিন। মিরায়ার হোটেলে ডায়াল করল। অবাক হয়ে ট্রেলারের ভেতরটা দেখছে পিটার। সাজানো গোছানো চমৎকার একটা ছোটখাট বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার যেন। নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। বিড়বিড় করে আনমনেই বলল, বাইরে থেকে ট্রেলারটা দেখেছি আমি জঞ্জালের নিচে ঘোরার সময়। ভেতরে যে এই অবস্থা কল্পনাই করতে পারিনি!

বাইরে থেকে দেখে যাতে কিছু বোঝা না যায় সেই ব্যবস্থাই করেছি আমরা।

সাংঘাতিক!

রিসিভার রেখে দিল রবিন। কেউ ধরছে না ওদের ঘরে। কোথায় গেছে বলতে পারল না ক্লার্ক। বললাম আবার ফোন করব। মেসেজ দিতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করল, দিলাম না। বলা যায় না কার চোখে পড়ে যায়।

ঠিকই করেছ, কিশোর বলল। আমার মনে হয় রেড লায়নে নজর রাখতে গেছে। ফিরে আসবে সময় হলেই। পিটারের দিকে তাকাল সে। তোমাকে আমরা খুঁজে না পেলে কি করতে?

আরও অপেক্ষা করতাম। তারপর নিরাপদ বুঝলে ফিরে যেতাম রেড লায়নে, দেখতাম, আমার মেসেজ পেয়ে ওখান পর্যন্ত কেউ যেতে পেরেছে কিনা।

ঠিক যা তাবছ আমি।

ট্রেড মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না? রবিন জিজ্ঞেস করল।

 সেটা একেবারে শেষ অবস্থায় গিয়ে পড়লে। অর্থাৎ বাধ্য হলে। রেড লায়নের কিডন্যাপারগুলোকে দেখেই বুঝে গেছিলাম আমার পাঠানো মেসেজ দেখে ফেলেছে ওরা। বুঝে ফেলেছে। তার মানে কোনও একটা যোগাযোগ রয়েছে জানার। স্পাই আছে ওখানে। কাজেই মিশনকে আর বিশ্বাস করতে পারি না পুরোপুরি।

ড্রয়ার থেকে হাতির দাঁতে তৈরি গহনাটা বের করল কিশোর। বক্স ক্যানিয়নে যেটা পেয়েছিল। পিটারকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, চিনতে পারো?

জিনিসটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল পিটার। নানদাতেই তৈরি হয়েছে, সন্দেহ নেই। চেনাও লাগছে। তবে কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না।

রবিন, মুসা বলল। অনেকক্ষণ তো হলো। করে দেখ আরেকবার।

 আবার মিরামার হোটেলের নম্বরে ডায়াল শুরু করল রবিন।

 পিটার দেখতে লাগল ট্রেলারের ভেতরটা। সর্ব-দর্শন নামের পেরিস্কোপটা দেখল, ট্রেলারের ছাত ফুঁড়ে যেটা বেরিয়েছে। দেখল টেলিফোন লাইনের সঙ্গে লাগানো লাউডস্পীকার। ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরাটার ওপর গিয়ে দৃষ্টি স্থির হলো। এত জিনিস কোথায় পেলে?

বেশির ভাগই বাতিল মাল থেকে নতুন করে বানিয়ে নিয়েছি, মুসা জানাল। ইলেকট্রনিকের জাদুকর বলতে পার কিশোরকে…

 আর ইঞ্জিনের জাদুকর মুসা, হেসে যোগ করল কিলোর।

রবিন হলো চলমান জ্ঞানকোষ, মুসা বলল।

 তোমরা জিনিয়াস! আরেকবার প্রশংসা করল পিটার।

রিসিভারের মাউথপিসে হাত রেখে ফিরে তাকাল রবিন। ক্লার্ক বলছে, হ্যারি নাকি ফিরেছে। ঘরের দিকে যেতে দেখেছে। কথা বলতে চাইলাম। ধরতে বলল।

ধর, মুসা বলল। আমরা পিটারকে ওয়ার্কশপটা দেখিয়ে আনছি।

দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ওয়ার্কশপে বেরিয়ে এল কিশোর, মুসা আর পিটার। পিটার জানাল এটাতে কখনও ঢোকেনি। লোকজনের সাড়া পেয়ে ঢোকার সাহসই হয়নি আসলে। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে যখন ট্রেলারে ঢুকেছে তখনও এখান দিয়ে নয়, ঢুকেছে সবুজ ফটক এক দিয়ে। ওয়ার্কশপের চেহারা দেখে আরও তাজ্জব হয়ে গেল। ছোটখাট একটা আধুনিক কারখানা বলেই মনে হল তার। বেলা হয়েছে। রোদ উঠেছে। পরিষ্কার দিনের আলোয় বেরিয়ে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করতে লাগল সে। ভয় ভয় করছে। প্রশ্ন করল, আমি এখানে নিরাপদ?

কেন নয়? কিশোর বলল, এখানে কেউ তোমাকে দেখতে পাবে না। ইয়ার্ডের চারপাশ ঘিরে বেড়া আছে দেখেছই তো। তার ওপর রয়েছে জায়গায় জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ। এর ভেতরে কেউ দেখতে পাবে না।

হাসল বটে পিটার, তবে তেমন আশ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হলো না। তাকিয়ে। তাকিয়ে দেখছে ওয়াকর্শপের জিনিসপত্র। সাজিয়েছ বটে!

সুড়ঙ্গমুখ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল রবিন। হ্যারির সঙ্গে কথা বললাম, উত্তেজিত কণ্ঠে বলল সে। কিংকে নিয়ে এখুনি চলে আসবে বলেছে। পিটারকে নিতে।

কিন্তু আমি যে যেতে চাই না, পিটার বলল। তোমাদের হেডকোয়ার্টার ভারি পছন্দ হয়েছে আমার। দেখার অনেক কিছু বাকি। ভাবছি আজ সারাদিন ধরে দেখব। ওয়ার্কবেঞ্চের নিচে ঝুঁকে একটা জিনিস দেখিয়ে বলল, এটা কি?

দেশলাইয়ের বাক্সের সমান কালো একটা বাক্সমত জিনিস বের করল সে।

ওটা? বলতে চাইল মুসা, ওটা-ওটা–কিশোর, কি জিনিস?

ছোট বাক্সটা দেখতে লাগল রবিন। এটা…এটা…

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। সতর্ক হয়ে গেছে। এটা আমাদের জিনিস নয়! বাগ!

বাগ? ভুরু কোঁচকাল পিটার। ইংরেজিতে বাগ মানে তো পোকা, গোবরে পোকা, তাই না?

শ্রবণ যন্ত্রকেও বলে, বুঝিয়ে দিল কিশোর। এক ধরনের রিমোট মাইক্রোফোন। দূর থেকে চুরি করে কথা শোনার কাজে ব্যবহার করে স্পাইরা। নিশ্চয় আমাদের কথা শুনছে কেউ। জলদি চল! বেরোতে হবে…

ওয়ার্কশপের বাইরে থেকে কথা বলে উঠল কেউ। পরিচিত কণ্ঠ। তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই, বুঝলে। পালাতে পারবে না।

ওয়ার্কশপের দরজায় দেখা দিল লোকটা। বেঁটে, কোকড়া বাদামী চুল। তার পেছনে এসে দাঁড়াল পাতলা লম্বা লোকটা। সেই দুই কিডন্যাপার, কিশোরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল যারা।

দুজনের হাতেই পিস্তল।

.

১৫.

 গুড, কুৎসিত হাসি হাসল বেঁটে লোকটা। সবাই আমরা এখানে রয়েছি।

ডেভ, লম্বু বলল। মনে হয় আমাদের লোককে পেলাম।

 সেরকমই তো লাগছে।

এই ছেলেগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত আমাদের, লম্বা লোকটা বলল, তিন গোয়েন্দার কথা। চালাক ছেলে। ওরা না থাকলে আমরা বেরই করতে পারতাম না। অনেক সহজ করে দিল আমাদের কাজ।

ওদেরকে তাহলে ধন্যবাদ দেয়া দরকার, হেসে উঠল ডেভ।

যেন খুব উপভোগ করছে দুই উগ্রপন্থী।

হ্যারি আর কিং না আসা পর্যন্ত এদের আটকে রাখা দরকার, বুঝতে পারছে। তিন গোয়েন্দা। গরম হয়ে রবিন বলল, এসব করে পার পাবেন না আপনারা!

স্যার মনটেরোকেও বাগে আনতে পারবেন না, ফুঁসে উঠল মুসা।

ছেলেটাকে নিয়ে পার হয়ে যেতে পারলেই আমরা খুশি, ডেভ বলল। তারপর স্যার মনটেরো কথা শোনে কিনা দেখা যাবে।

হাসল খাটো কিডন্যাপার। পিটারের দিকে তাকাল, তারপর কিশোরের দিকে। অন্য লোকটাও দেখছে দুজনকে। কিশোরের চোখ চকচক করছে দেখতে পেল রবিন আর মুসা।

তুমি খুব চালাক, কিশোর পাশা, ডেভ বলল। তোমাদের মধ্যে কে, পিটার সেটা গোপন করতে চাইছ। ভেবেছ আমরা বের করতে পারব না। হেলিকপ্টারটা ফেলে রেখে আবার এখানে ফিরে এসে ভালই করেছি বুঝতে পারছি। খবরের কাগজ দেখেছি। ভুল বুঝতে পেরেছি। জানলাম, মাস্টার মনটেরো এখনও এই এলাকাতেই আছে। পুলিশ কল্পনাই করেনি ওদের নাকের নিচে রয়েছি আমরা। ওরা আমাদেরকে অন্য জায়গায় খুঁজছে, আর আমরা পিটারকে খুঁজতে লাগলাম এখানে। ঠিক জায়গায়।

হ্যারি আর কিংকে দেখে ফেললাম আমরা, হেসে যোগ করল জন। ওদের। সঙ্গে যোগ দিলে তোমরা, তিন গোয়েন্দার কথা বলল সে। বুঝে গেলাম আগে হোক পরে তোক পিটারের কাছে আমাদেরকে নিয়ে যাবেই তোমরা। এই ইয়ার্ডে অনেক লোক আসে। তাদের ভিড়ে ঢুকে পড়াটা কোনও ব্যাপারই না। ঢুকলাম। তোমরা তখন পিটারকে খুঁজতে এতই ব্যস্ত আমাদেরকে লক্ষই করলে না।

আপনাদের দেখেছি। রেগে গেল মুসা।

ঝোপের ভেতর ছিলাম চেহারা তো আর দেখনি। চিনবে কি করে? যাই হোক, তোমাদেরকে আমি ভাল করেই দেখেছি। কি করতে চলেছ বুঝেছি। এক ফাঁকে ঢুকে পড়লাম তোমাদের ওয়ার্কশপে। বাগটা ফেলে রাখলাম বেঞ্চের তলায়। তারপর তোমাদের অনেক আলোচনাই শুনেছি।

বিশাল এক জঞ্জালের স্তূপের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই কিডন্যাপার। চট করে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। এক ধরনের ফাঁদ পাতা আছে ওই জঞ্জালে। বিপদে পড়লে প্রয়োজনের সময় যাতে শত্রুর ওপর টান মেরে ফেলে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে। মাথা নেড়ে নিষেধ করল কিশোর। দুজন পিস্তলধারী লোক, ভয়াবহ বিপজ্জনক, ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। তবে তার চোখ জ্বলজ্বল করতে দেখল রবিন। কি প্ল্যান করেছে গোয়েন্দাপ্রধান?

পুলিশ আপনাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, সময় নষ্ট করার জন্যে বলল মুসা।

জানি, জবাব দিল ডেভ। আমাদের টিকিও ছুঁতে পারবে না। আমরা যাকে চাই তাকে পেয়ে গেছি।

আমাদের কিছু করতে পারবে না ওরা, জন বলল দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।

পিটার, চল, আর দেরি করতে পারছি না, ডেভ বলল।

 চালাকির চেষ্টা করবে না কেউ, হুশিয়ার করল জন। গুলি করতে দ্বিধা করব না আমরা বুঝতেই পারছ।

তা পারছি, এগিয়ে গেল পিটার। চলুন, যাচ্ছি।

তার পাশে এসে দাঁড়াল কিশোর, হ্যাঁ, চলুন।

কিশোর, পিটার বলল। আমার জন্যে তোমার এতবড় ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে। ওরা এত বোকা নয়। ঠিক বুঝে গেছে আমিই পিটার।

মস্ত বড় অভিনেতা কিশোর। বিখ্যাত পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারকে পর্যন্ত বোকা বানিয়ে দিয়েছিল তার ভাতিজা সেজে। জন আর ডেভ তো কিছুই না। পিটারের কথার টান নকল করে ফেলল সে অবলীলায়, তুমি সরো তো কিশোর। আমিও জানি ওরা বোকা নয়। ঠিকই বুঝতে পেরেছে কে পিটার।

কিশোর! প্রতিবাদ করল পিটার। ওদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি যে পিটার বুঝতে পেরেছে। পেরেছেই।

দুজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে দুই কিডন্যাপার। হাসি হাসি ভাবটা দূর হয়ে গেছে চেহারা থেকে। হঠাৎই আবিষ্কার করেছে, দুটো ছেলের মাঝে কোনজন কিশোর আর কোনজন পিটার, জানে না। কিশোরের চোখ কেন জ্বলজ্বল করছিল। এতক্ষণে বুঝল রবিন। দুজনের পরনে এক ধরনের পোশাক, এক চেহারা, কথাও বলছে একই রকম ভাবে।

শাসানির ভঙ্গিতে পিস্তল নাড়ল ডেভ, অনেক হয়েছে। যথেষ্ট। আসল পিটার কে, জলদি বলো!  

প্লীজ, কিশোর, অনুরোধ করল পিটার। আমি চলে যাই ওদের সঙ্গে!

থামো! ধমক দিয়ে বলল, কিশোর, ওরা জানে আমি পিটার। খামোকা আমাকে বাঁচাতে চাইছ কেন? চলুন, আমি যাচ্ছি।

ভয়ংকর হয়ে উঠেছে দুই কিডন্যাপারের চেহারা।

 প্রিন্টের শার্ট পরা ছেলেটা পিটার, ডেভ বলল। ও-ই বেশি করে যেতে চাইছে। বেশি ইচ্ছুক। তার মানে নতুন বন্ধুকে বাঁচাতে চাইছে।

আমার তা মনে হয় না, জন বলল। শাদা সার্ট পরা ছেলেটা পিটার। অহেতুক কিশোরকে বিপদে ফেলতে চাইছে না।

পিস্তল হাতে আগে বাড়ল জন।

কাপড় দেখ ওদের, ডেভ বলল পেছন থেকে। ধোপার দোকানের চিহ্ন থাকবেই। বোঝা যাবে।

কিশোরের শার্টের কলারের ভেতরটা উল্টে দেখল জন। ও-ই কিশোর পাশা, ডেভ। এই তো। পাশা : তেরশো বত্রিশ!

শ্রাগ করল কিশোর। আমি কিশোর নই। পালানোর সময় কাপড় ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমারগুলো ফেলে তখন কিশোরের কাপড় নিয়ে পরেছি। বিশ্বাস না হলে ওর কলারের ভেতর দেখুন।

পিটারের শার্টের কলারও দেখল জন। তাতেও লেখা রয়েছে পাশা : আঠারোশো তেইশ। গাল দিয়ে উঠল সে।

মাথা ঝাঁকাল পিটার। কিশোর ঠিকই বলেছে। আমি কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। তখন তার এক সেট কাপড় নিয়ে পরেছি।

তারমানে দুজন পিটার হয়ে গেলাম আমরা, কিংবা দুজন কিশোর, হেসে বলল কিশোর। তাহলে আসল কিশোর কে? আমি? বুড়ো আঙুল নাড়ল সে। মোটেও না।

হাঁ হয়ে গেছে মুসা আর রবিন। কাপড়ের ব্যাপারটা জানা না থাকলে এখন ওরাও দ্বিধায় পড়ে যেত কে কিশোর আর কে পিটার ভেবে।

শুনুন, কিশোর বলল। কিশোরের পকেট দেখুন। একটা জিনিস পাবেন। যেটা প্রমাণ করবে সে কিশোর পাশা।

 দ্রুত পিটারের পকেটে হাত ঢোকাল জন। ছোট একটা যন্ত্র বের করল। ঘুরে তাকাল সঙ্গীর দিকে। এ তো আমাদেরই বাগ! এটা পাশাদের ওয়ার্কশপ। নিশ্চয় পাশাই কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে রেখেছে। সেটাই স্বাভাবিক।

ইডিয়েট! ধমকে উঠল ডেভ। ওটা পিটার পেয়েছে, শুনলাম না তখন? তারপর হাতে হাতে ঘুরেছে। কার কাছ থেকে কার কাছে গেছে কি করে বুঝব?

ওদের কথার কোনও বিশ্বাস নেই।

রাগে লাল হয়ে গেল জনের মুখ। কিশোরের কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল। লোকটার জ্যাকেট খামচে ধরল কিশোর, যেন পতন ঠেকানোর জন্যে। গাল দিয়ে উঠল কিডন্যাপার, এই ছাড়, ছাড়, আমার জ্যাকেট ছাড়!

ছেড়ে দিল কিশোর। তার পকেট ভালমত খুঁজে দেখল জন। তারপর পিটারের সব পকেট দেখল। কিছু নেই! সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে নিরাশ কণ্ঠে বলল সে।

 হাসতে আরম্ভ করল কিশোর। দেখাদেখি পিটারও হাসতে লাগল।

এটা বন্ধ করা দরকার! চেঁচিয়ে উঠল ডেভ। পিটারের বাবার একজন। শোফার আছে। আর্মির লোক। তার নাম আর র্যাংক বলতে হবে তোমাদেরকে। যে বলতে পারবে না, ধরে নেব সে-ই কিশোর পাশা। হ্যাঁ, বলে ফেল এখন।

বরফের মত জমে গেল যেন রবিন আর মুসা। এইবার ফাঁদে পড়েছে কিশোর। কি করবে? প্রশ্নের জবাব জানা নেই তার। তাকে বাঁচানোর জন্যে সঠিক জবাবটা দিয়ে দেবে এবার পিটার।

 বেশ, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করল পিটার। এবার আটকে ফেলেছেন। বলতে পারলাম না। আমিই কিশোর পাশা।  

ভাবান্তর ঘটল না মুসা আর রবিনের চেহারায়। তবে মনে মনে উৎফুল্ল হয়ে উঠল ওরা। কিশোরের খেলাটা ধরে ফেলেছে পিটার। পাকা খেলোয়াড়ের মত খেলতে আরম্ভ করেছে।

হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি, কিশোর বলল। আমি কিশোর পাশা। শোফারের নাম বলতে পারব না।

প্রচণ্ড রাগে জ্বলে উঠল দুই কিডন্যাপার, বিশেষ করে ডেভ। ঝটকা দিয়ে ঘুরল রবিন আর মুসার দিকে। আশা করি তোমরা ওদের মত বোকা নও! মরার ইচ্ছে নেই! বলে ফেল কে কিশোর আর কে পিটার?

ও! পিটারকে দেখাল মুসা।

ও! কিশোরকে দেখাল রবিন।

আস্তে মাথা নাড়ল ডেভ। হুঁ। একটাই উপায় আছে এখন আমাদের। এছাড়া আর কিছু করার নেই। দুই কিশোরের দিকে এগিয়ে এল সে, কিংবা দুই পিটার। কোনটা যে বের করবে এবার।

<

Super User