তিন গোয়েন্দা গাড়িতে উঠলে হ্যানসন জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাব?

একটা টেলিফোন বক্সের কাছে, কিশোর জবাব দিল।

একটা পেট্রল স্টেশনে গাড়ি ঢোকাল হ্যানসন।

টেলিফোন ডিরেক্টরি ঘেঁটে বের করল কিশোরআর জে. ইম্পোরটারসের ঠিকানা। লং বীচে। দক্ষিণে পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ।

রিভসের সঙ্গে ফারের পোশাকের দোকানদারের যোগাযোগ আছে, দোকানদারের সঙ্গে ভালুকটার যোগাযোগ আছে, এবং ভালুকটার সঙ্গে ডলির। যোগাযোগ আছে, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। সুতরাং, যে কোম্পানি ভালুকটা সাপ্লাই করেছে, তাদের সঙ্গে দেখা করা দরকার।

অনেক দূরে, হ্যানসন বলল। ম্যাপ অবশ্য আছে গাড়িতে। ঠিকানাটা বের করে ফেলতে পারব।

 ঠিকানা জেনে নিয়ে আবার গাড়িতে উঠল তিন গোয়েন্দা। লং বীচে চলল। হ্যানসন। পেছনে উত্তেজিত হয়ে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। ছেলেরা।

লং বীচে সাগরের কিনারে বাড়িটা। কেমন বিষণ্ণ আর নির্জন মনে হচ্ছে জানালায় আলো নেই। বাড়ির সামনে ট্রাক-লড়ি কিছু নেই, কোম্পানিগুলোর সামনে সাধারণত যেমন থাকে।

এবারেও বাড়ি থেকে দূরে গাড়ি রাখল হানসন। বাড়িতে লোক থাকলে যাতে দেখতে না পায়।

 সামনে দাঁড়িয়ে ভুরু কুঁচকে বাড়িটার দিকে তাকাল রবিন। পশ্চিমে সাগরের দিকে মুখ করা। ভেতরে কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।

দেখি, দরজায় টোকা দিয়ে, কিশোর বলল।

দুই ধাপ সিঁড়ি উঠে দরজায় থাবা দিল সে। কেউ সাড়াও দিল না, বেরোলও না। দরজার পাল্লার ওপর দিকটায় কাঁচের প্যানেল লাগানো। সেখানে চোখ রেখে ভেতরে ছোট একটা অফিস দেখতে পেল। ঘরটা শূন্য।

নেই তো কিছু। ফিরে তাকিয়ে বলল কিশোর।

বাড়ির উত্তর পাশে একটা কার পার্ক। ওখানে এসে আবার তাকাল বাড়ির দিকে। জানালাগুলোতে লোহার গ্রিল লাগানো। একটা কাঠের বাক্স পড়ে থাকতে দেখে সেটা এনে একটা জানালার নিচে রেখে তার ওপর উঠল মুসা। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাল।

কি দেখছ? জানতে চাইল রবিন।

স্টোর রুম মনে হচ্ছে। বেশ কিছু ভালুক দেখতে পাচ্ছি। আর প্যাকেট করার জিনিসপত্র। একধারে ছোট একটা ঘর আছে মনে হয়। দরজায় সাইন লাগানো। পড়তে পারছি না।

নেমে এল মুসা। অন্য পাশ দিয়ে গিয়ে দেখি।

কিন্তু অন্য পাশে এসে দেখল, জানালাই নেই।

কিভাবে ঢোকা যায় আলোচনা করছে তিনজনে, এই সময় একটা গাড়িকে থামতে শুনল।

চুপ! ঠোঁটে আঙুল রেখে ইশারা করল কিশোর।

 দরজা খুলে নেমে এল কেউ। সিঁড়ি বেয়ে উঠল।

এইবার যাওয়া যাক, ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। বলব, একটা ভালুক কিনতে চাই আমরা।

ঘুরে আবার বাড়ির কোণে এসেই থমকে দাঁড়াল তিনজনে। সেই মেরুন। অডি।

পিছিয়ে এল ওরা।

আশ্চর্য! আনমনেই বলল কিশোর। কার ওপর চোখ রাখছে? রিভস? না আমাদের ওপর?

নজর রাখব। দেখি কি করে? রবিন বলল।

অপেক্ষা করতে লাগল ওরা। পনেরো মিনিট গেল… বিশ…তারপর দরজা খুলল বাড়িটার। একটা ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এল একজন লোক। গাড়ির বুটে নিয়ে গিয়ে তুলল। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে চলে গেল।

জেনসেনই, মুসা বলল। সন্দেহ নেই। মনে হচ্ছে শয়তানের চেলা সে-ই। সব কিছুর হোতা, নাটের গুরু। গাধার মত পিজা শ্যাকে বসে আলোচনা করেছি। আমরা। সব সে শুনেছে। পিছু নিয়েছে আমাদের।

এ বাড়িতে আটকে রাখেনি তো ডলিকে! বলে উঠল রবিন।

জলদি চলো! পুলিশকে ফোন করি!

যদি ডলি ভেতরে, না থাকে, নিরাশ করল ওদেরকে কিশোর। তখন কি জবাব দেব? পুলিশকে খবর দেয়ার আগে শিওর হতে হবে আমাদের।

ওপর দিকে তাকাল মুসা। আচ্ছা, এক কাজ তো করতে পারি। ওখানে উঠে গিয়ে স্কাইলাইটের ভেতর দিয়ে দেখতে পারি আছে কিনা কেউ ভেতরে।

বলেই রওনা হয়ে গেল সে। পিছু নিল কিশোর আর রবিন। কোণের কাছে একটা পাইপ নেমে এসেছে ওপর থেকে। ওটা বেয়ে উঠতে শুরু করল।

জলদি কর! তাগাদা দিল রবিন। কেউ দেখে ফেললে পুলিশকে খবর দেবে। এখানেও কিছু করতে পারব না আমরা।

ছাতে উঠে গেল মুসা। ছটা স্কাইলাইট আছে মোট। ছোট যে ঘরটার কথা সে বলেছিল, বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে দেখেছিল, একটা স্কাইলাইট দিয়ে সেটার ভেতরটা। দেখা যায়। কাঁচে পুরু হয়ে ময়লা লেগে রয়েছে। হাত দিয়ে ডলে ডলে পরিষ্কার করল সে। তারপর ভেতরে উঁকি দিল।

কি দেখছ? নিচে থেকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।

কিছুই তো বুঝতে পারছি না। অন্ধকার। কিছু বস্তাটস্তা আছে মনে হয়।

 মাটিতে বসে পড়ল কিশোর। নাহ, মনে হয় এখানে নেই!

আরও কয়েক মিনিট চেষ্টা করে ফিরে এল মুসা।

তিনজনে বসে বসে আরও কিছুক্ষণ আলোচনা করল, সমস্যাটার সমাধান করা যায় কিনা। উপায় বের করতে পারল না।

শেষে কিশোর বলল, একটা স্কাইলাইট দিয়ে দেখেই নেমে এলে কেন? বাকিগুলো দেখা দরকার ছিল।

চল না, তিনজনেই উঠে যাই, রবিন প্রস্তাব দিল।

মন্দ বলনি। চলো, আরেকবার দেখি।

তিনজনেই ছাতে উঠে পড়ল। পুরানো ছাত। হঠাৎ এক জায়গায় মড়মড় করে। উঠল। তিনজনের ভার সইতে পারছে না।

খবরদার! নড়বে না! চিৎকার করে উঠল মুসা।

 আবার গুঙিয়ে উঠল ছাতের তক্তা। মড়মড় করে উঠল জোরে। দেবে যেতে শুরু করল। থাবা দিয়ে কিছু একটা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করল কিশোর। পারল না। পড়ে যাচ্ছে নিচের দিকে।

.

১৭.

অন্ধকারে পড়ে আছে কিশোর। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কোনমতে উঠে বসল। অনেকটা সহজ হয়ে এল শ্বাস-প্রশ্বাস।

কিশোর? কিশোর, তুমি ঠিক আছ? 

মুসা ডাকছে। যে ফোকরটা দিয়ে পড়েছে কিশোর, তার কিনারে গলা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। আবার ডাকল, কিশোওর?

আমি ঠিকই আছি, গোঁ গোঁ করে জবাব দিল কিশোর। উঠে দাঁড়াল। ছোট ঘরের পাশের বড় ঘরটায় পড়েছে। নব ধরে মোচড় দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল। নড়ল না নবটা। তালা দেয়া।

ঘরে অনেকগুলো ইস্পাতের র‍্যাক। তাকে সাজানো টেডি বিয়ার। আরও নানারকম খেলনা আর পুতুল রয়েছে। বাক্স, প্যাকেট করার কাগজ ছড়িয়ে রয়েছে মেঝেতে। কিছু খেলনা মেঝেতেও পড়ে আছে।

একটা ভালুক হাতে নিল কিশোর। ডলিরটা যেমন ছিল তেমনই দেখতে। নিয়ে এগোল আরেক দিকে। বাড়ির সামনের দিকে। আরেকটা দরজা চোখে পড়েছে। সহজেই খুলে গেল ওটা। ভেতরটা অফিসঘর। দুটো ডেস্ক আছে। ওপাশের দরজাটা খুলতে যাবে এই সময় আবার কানে এল গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ।

দরজার কাচের প্যানেল দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ফিরে এসেছে মেরুন অডিটা। দ্রুত আবার স্টোররুমে ফিরে এল কিশোর। অফিসের দরজাটা লাগিয়ে দিল।

ছাতের ওপরে নড়েচড়ে উঠল মুসা। ডেকে জিজ্ঞেস করল, কিশোর, কি করছ?

আস্তে! সাবধান করল কিশোর। সরে যাও! ওই লোকটা ফিরে এসেছে!

কয়েকটা বাক্সের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল সে। দরজায় চাবি লাগানোর শব্দ শুনল। অফিসে ঢুকল কেউ। চেয়ার টানার শব্দ হল। ড্রয়ার খুলল; কাগজপত্রের খসখস হল, কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল লোকটা।

 কি করছে জেনসেন?

বিশাল ঘরটায় চোখ বোলাল কিশোর। একটা ডাবলডোর দেখতে পাচ্ছে। ওটা খুলতে পারলে বেরিয়ে যেতে পারত। নেবে নাকি ঝুঁকিটা? বেরোতে, পারবেই, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আওয়াজ করে ফেলতে পারে। শুনে ফেললে। দেখতে আসবে জেনসেন। তখন কি করবে কে জানে! লোকটার কাছে পিস্তল থাকতে পারে।

সামনের ঘরে আবার চেয়ার টানার শব্দ হল। তারপর পদশব্দ। আসছে লোকটা। এ ঘরে ঢুকলেই ছাতের ফোকরটা দেখে ফেলবে। তারপর?

খুলে গেল অফিস ঘরের দরজা। অনেকগুলো খেলনা বোঝাই একটা তাকের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল কিশোর। ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল লোকটার শরীর, মুখটা চোখে পড়ছে না।

কয়েক কদম এগিয়েই থমকে দাঁড়াল লোকটা। নিশ্চয় ফোকরটা চোখে পড়েছে। মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা তক্তাও নজর এড়ানোর কথা নয়।

পকেটে হাত ঢুকে গেল জেনসেনের। বের করে আনল পিস্তল। এই ভয়ই করছিল কিশোর। আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু করার নেই। আরও গুটিসুটি হয়ে দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে চাইল সে।

পালানোর চেষ্টা করবে? একদৌড়ে অফিসের দরজার কাছে যেতে সময় লাগবে না। কিন্তু তার আগেই যদি গুলি করে বসে লোকটা?

এই সময় নিতান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই শোনা গেল পুলিশের সাইরেন। এগিয়ে আসছে। দ্বিধায় পড়ে গেছে লোকটা। নড়ছে না। হাতে উদ্যত পিস্তল। আস্তে আস্তে আবার সরে যেতে শুরু করল সাইরেন।

নড়ে উঠল জেনসেন। পা বাড়াল সামনে। এগিয়ে আসছে কিশোর যে র‍্যাকের আড়ালে লুকিয়েছে ওটার দিকে।

ধকধক করছে কিশোরের বুক। এই সময় ঘটল যেন অলৌকিক ঘটনা। সামনের দরজায় থাবা দিতে লাগল কেউ।

চমকে গেল জেনসেন।

থাবা পড়ছেই। ডেকে জিজ্ঞেস করল একটা কণ্ঠ, এই, ভেতরে কে আছেন? আছেন কেউ? আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?

ঘুরে অফিসের দিকে রওনা হয়ে গেল জেনসেন। দরজার ওপাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কে?

বাইরে থেকে জবাব এল, ফেরারস মেশিন পার্টসের অফিসটা কোথায় বলতে পারেন?

রাস্তার ওপারে। এক ব্লক পরে।

 কিন্তু সাইনবোর্ড তো দেখছি না।

আর দেরি করল না কিশোর। বেরিয়ে সোজা এগোল ডাবলডোরটার দিকে। ছিটকানি লাগানো আছে। টান দিতেই খুলে গেল। পাল্লা খুলে বেরোনোর আগের মুহূর্তেও কানে এল সামনের দরজার কাছে লোকটার কথা, যে মেশিন পার্টসের অফিস খুঁজছে। মুচকি হাসল কিশোর। বুদ্ধিটা ভালই বের করেছে হ্যানসন। কায়দা করে তাকে সুযোগ করে দিল বেরোনোর।

বেরিয়ে এসে আস্তে করে আবার পেছনে দরজাটা লাগিয়ে দিল কিলোর।

.

উত্তরে চলল রোলস রয়েস। রকি বীচে ফিরে চলেছে।

মুসা বলছে কিশোরকে, ছাত থেকে নেমে পড়লাম আমি আর রবিন। ভাবলাম, আমরা গিয়ে ডাকাডাকি করলে চিনে ফেলবে জেনসেন। সে জন্যেই হ্যানসনকে পাঠিয়েছি।

ভাল বুদ্ধি করেছ।

হাতের ভালুকটা টিপেটুপে দেখল কিশোর। বিড়বিড় করল, অদ্ভুত! সাধারণত খেলনা, যে রকম হয় সে রকম নরম নয়। ভেতরটা শক্ত।

কেটে দেখলেই হয়, রবিন পরামর্শ দিল।

পকেট নাইফ বের করে কাটতে শুরু করল কিশোর। দুপাশ থেকে ঝুঁকে এল। অন্য দুজন। নিরাশ হতে হল তিনজনকেই। ভেতরটা প্ল্যাস্টিকে তৈরি। ফাপা। কিছু নেই। প্ল্যাস্টিকের ওপরে রোমশ চামড়া পরিয়ে দেয়া হয়েছে।

দূর! নিরাশ হয়ে হেলান দিল মুসা। এত কিছু করেও কোনই লাভ হল না। একটা কথাই শুধু জানতে পারলাম, ওই রিভসটা শয়তানীতে জড়িত।

পুলিশের কাছে যাব? হ্যানসন জিজ্ঞেস করল।

গিয়ে কি বলব? জেনসেনের কথা বলতে পারি। কিন্তু কি প্রমাণ আছে আমাদের হাতে? কেন বিশ্বাস করবে পুলিশ?

জবাব দিতে না পেরে চুপ হয়ে গেল হ্যানসন।

.

১৮.

 গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। কার একটা ভেড়া যেন ছুটে গিয়েছে। বাড়ির কাছে এসে ব্যা ব্যা করে ডেকে চলেছে।

 বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে কিশোর, ভেড়াটাকে তাড়াবে? না শব্দ উপেক্ষা করে বালিশে কান ঢেকে আবার ঘুমিয়ে পড়বে?

হঠাৎ বিছানায় উঠে বসল সে। ভেড়া! ঠিক! এই তো পাওয়া গেছে ডলির কিডন্যাপারদের!

ঘড়ির দিকে তাকাল। তিনটে বাজে। এই অসময়ে হ্যানসনকে পাওয়া যাবে। না। রবিন আর মুসাও ঘুমিয়ে। ওদেরকেও ডাকা যাবে না। তার মানে সকালের আগে কিছুই করতে পারছে না।

অন্ধকারে শুয়ে রইল সে। চুপ করে থেকে ভাবছে। ঘুম আসছে, পরক্ষণেই টুটে যাচ্ছে। উত্তেজনার সময় এ রকম হয়। ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়ল সে। হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পরে নিচে নামল নাস্তা করার জন্যে।

সাড়ে সাতটায় রবিনকে ফোন করল।

ডলির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কি বলেছিল রোজার মনে আছে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।

বলেছিল ডলিকে ছবিতে নামাতে চায়।

তা তো বলেইছিল। আরও বলেছিল ক্রুগার মনটাগোর বাড়িতে থাকে ওরা। বাড়ির পেছনে ভেড়া চড়ে।

কিছু বলল না রবিন। তাকে হাই তুলতে শোনা গেল ফোনে।

বল তো লস অ্যাঞ্জেলেসের কোন এলাকায় ভেড়া দেখা যায়?

অনেকের বাড়িতেই…আচ্ছা, দাঁড়াও। বসন্তের শুরুতে উপকূলের ধারে পাহাড়ের ঢালে চড়ে বেড়ায় ভেড়ার পাল। তরপর সিয়েরা আর অন্যান্য জায়গায়। রপ্তানি করা হয় ওগুলো।

 ঠিক। এমন সব জায়গায় পাঠানো হয়, যেখানে শীত বেশি পড়ে, উলের দরকার হয়। তবে সব তো আর পাঠানো যায় না, কিছু না কিছু থেকেই যায়। সেগুলোকে কোথায় রাখা হয়? পাহাড়ের ওপরেই কোথাও। ওখানে যদি ভেড়া থাকতে পারে, দুতিনজন লোকও তো সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। পারে না?

তাই তো! সজাগ হয়ে গেছে রবিন।

 সেখানেই যাব আমরা। আমি হ্যানসনকে ফোন করছি।

করো। আমি মুসাকে করছি।

.

নটার কয়েক মিনিট আগে হাজির হল হ্যানসন। তবে রোলস রয়েস নিয়ে নয়। এক জীপ নিয়ে। যেখানে যাচ্ছে সেখানে রোলস রয়েসের চেয়ে এ ধরনের জীপই বেশি উপযোগী। বলেই দিয়েছিল কিশোর।

জীপে চড়ে বসল তিন গোয়েন্দা। রওনা হল হ্যানসন। প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে কিছুক্ষণ চলে মোড় নিয়ে একটা সরু পথে পড়ল জীপ। পথটার নাম কটনউডক্রীক রোড। পাহাড়ী পথ ধরে ওপরে উঠে চলল।

ডানে-বাঁয়ে চোখ রেখেছে ছেলেরা।

পনেরো মিনিটের মাথায় পৌঁছে গেল মুলোল্যাণ্ড হাইওয়েতে। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হলিউড পার হয়ে ভেনচুরায় চলে গেছে পথটা।

কিশোরের হাতে বিনকিউলার। আতিপাতি করে দেখছে পথের পাশের। পাহাড়ী অঞ্চল। পাহাড়ের ঢালে মাঠ আর চারণভূমি যেখানেই আছে ভাল করে দেখছে ভেড়া দেখা যায় কিনা। সাইকেল নিয়ে ঘামতে ঘামতে চলেছে একজন লোক। কিশোরের নির্দেশে তার কাছে এনে গাড়ি থামাল হ্যানসন।

এই যে ভাই, কিশোর বলল। এখানে আমার এক বন্ধু ভেড়া পালে। ডারমট নাম। কোথায় থাকে বলতে পারেন?

সরি, হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিল লোকটা। ও নামে কাউকে চিনি না।

আবার এগিয়ে চলা।

কিছুদূর গিয়ে পাহাড়ের ঢালে কিছু ধূসর জিনিস চোখে পড়ল কিশোরের। প্রথমে ভাবল পাথর, পরে দেখে নড়ছে। ভেড়া! সেদিকে এগিয়ে যেতে বলল। হ্যানসনকে।

আরেকটু কাছে গেলে দেখা গেল, পুরানো একটা ঝরঝরে ভ্যানের পাশে। ফোল্ডিং চেয়ার পেতে বসে রয়েছে একজন লোক। মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে আপনমনে।

গাড়ি রাখতে বলল কিশোর।

বড় একটা পাথরের চাঙড়ের পাশে এনে জীপ থামাল হ্যানসন। নেমে পড়ল তিন গোয়েন্দা। লোকটার দিকে চলল।

কাছে এসে কিশোর বলল, কয়েকজন বন্ধুকে খুঁজছি। দুজন লোক, ডারমট আর তার ভাই। আর একটা মেয়ে। পাহাড়ের এদিকটাতেই কোথাও থাকে। ঠিকানা ঠিকমত বলতে পারব না। জানেন, কোথায় থাকে?

চারপাশে চোখ বোলাল রবিন। যতদূর চোখ যায়, কোন বাড়িঘর চোখে পড়ল না।

আমাদেরকে বলা হয়েছে, আবার বলল কিশোর। যেখানে ওরা থাকে, তার পেছনে ভেড়া থাকে। কই, এখানে তো বাড়িঘর দেখছি না। আর কোথাও ভেড়া পালে নাকি?

কাঁধ ঝাঁকাল লোকটা। কি জানি, বলতে পারব না তো। তবে পশ্চিমে গিয়ে দেখতে পার। থাকতেও পারে। এখানে এসেছি আমি কাল রাতে। পথের ওদিকটায় থাকতেও পারে। ভেড়ার ডাক শুনেছি আসার সময়।

লোকটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার এসে গাড়িতে উঠল ছেলেরা।

পশ্চিমে, নির্দেশ দিল কিশোর। রাস্তার যা অবস্থা দেখছি, উঠতে গিয়ে না পড়ে মরি।

কিচ্ছু ভেব না। গাড়ি তো চালাব আমি।

 রাস্তার এই অংশটা একেবারে নির্জন। যানবাহন চোখে পড়ছে না, মানুষজন নেই। রকি বীচের এত কাছে যে এরকম একটা জায়গা থাকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।

 মাইল খানেক এগোনোর পর দুভাগ হয়ে গেছে পথ। ধূসর একটা পাথরের টাওয়ার চোখে পড়ল। একঝাঁক গাছের মাথার ওপরে বেরিয়ে আছে।

সেদিকে এগোতে লাগল হ্যানসন।

আরি! মুসা বলল। দুর্গটুর্গ না তো?

একটা কাঁচা রাস্তায় পড়ল গাড়ি। আর এগোনোর দরকার নেই, কিশোর বলল। জীপ থামাল হ্যানসন।

দুর্গের মতই লাগছে, রবিন বলল। একপাশে কয়েকটা কাঠের কেবিন রয়েছে। উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা।

পুরানো ওয়েস্টার্ন শহরের মত লাগছে, মুসা বলল।

 এটাই জায়গা! চোখ চকচক করছে কিশোরের।

আমার কাছে তো ছবির লোকেশনের মত লাগছে।

ঠিক! এরকম জায়গাতেই তো লুকিয়ে থাকতে চাইবে কেইনের মত লোক। এখন ওই ধোঁকাবাজ প্রযোজক আর ডলিকে এখানে পেলেই হয়!

.

১৯.

হ্যানসন, কিশোর বলল। আপনি থাকুন এখানে। যদি মনে হয় আমরা বিপদে পড়েছি, সাহায্য করতে যাবেন। ঠিক আছে?

নিশ্চয়ই।

 অন্যান্য মুভি লোকেশনের মত এই জায়গাটারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বার বার নতুন করে সাজানো হয়েছে। বড় বেশি চুপচাপ।

কোনখান থেকে শুরু করব? ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন। জোরে বলতে ভয় পাচ্ছে যেন।

কিশোরও ভাবছে সে কথা। বাড়িগুলোর ওপর নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে তার দৃষ্টি। কোথায় থাকতে পারে? কোনখানে? শেষে দুৰ্গটাকেই বেছে নিল সে।

অনেক দিনের অযত্নে ধুলো জমে আছে পুরু হয়ে, প্রতিটি ঘরে। কিন্তু ডলি কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা দরজার সামনে এসে থামল তিনজনে। নতুন করে খিল লাগানো হয়েছে।

এইটাই! নিচু গলায় বলল রবিন।

 ঠোঁটে আঙুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করল কিশোর।

ভেতরে কি করে দেখা যায়? একটা জানালা চোখে পড়ল। ওটার কাছে চলে এল ওরা। উঁকি দিল ভিতরে। কাঠের পাটাতনের ওপর জড়সড় হয়ে পড়ে আছে। যেন একগাদা কম্বল। কেউ অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে নষ্ট হওয়ার জন্যে, দেখে সে রকমই মনে হয়।

ডলি? নরম গলায় ডাকল কিশোর। ডলি, আপনি আছেন ওখানে?

নড়ে উঠল কম্বলের দলাটা। উঠে বসল ডলি ডিকসন। আবছা অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে ফ্যাকাসে হয়ে আছে ওর চেহারা।

ডলি, আমি। আমি কিশোর পাশা। রবিন আর মুসাও এসেছে। ওরা। কোথায়? রিভস আর কেইন? মানে, রোজার?

মূককীটের মত যেন গুটি থেকে বেরোল ডলি, তেমনি করে কম্বল সরিয়ে বেরিয়ে উঠে এল। পরনে কালো স্কার্ট, সাদা ব্লাউজ। সব কিছুতে ময়লা। হাতে ময়লা, মুখে ময়লা। পা খালি।

আপনাকে বের করে নিয়ে যেতে এসেছি, কিশোর বলল।

সাবধান! ফিসফিস করে বলল ডলি। লোকগুলো ভীষণ পাজি! অনেক চেষ্টা করেছি। কিছুতেই বেরোতে পারিনি। সব সময় পিস্তল নিয়ে পাহারা দেয়।

কোথায় ওরা?

ওদিকে। একটা জেনারেল স্টোর আছে না, ওটাতে।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। জানালায় কাঠ আটকে দেয়া হয়েছে, গরাদের মত করে। সেগুলো খুলতে চেষ্টা করল সে আর মুসা। রবিন বেরিয়ে গেল হ্যানসনকে বলার জন্যে, যাতে পুলিশকে খবর দেয়।

 সে ফিরে এসে দেখল, একটা কাঠ খুলে ফেলেছে কিশোর আর মুসা। জায়গাটা সিনেমার শুটিঙের জন্যে তৈরি হয়েছে। তাই সব কিছুতেই আসলের চেয়ে নকলের ছড়াছড়িই বেশি। জানালার শিকগুলোকে শিকের মত দেখতে হলেও আসলে কাঠের তৈরি।

ঘরের ভেতরে বসে কাঁদতে আরম্ভ করেছে ডলি।

পাগল! ওরা পাগল! সব বদ্ধ উন্মাদ! একটা খেলনার জন্যে এত কিছু করছে!

 ভালুকটা তো? কিশোর জিজ্ঞেস করল। পেয়ে গেছে। কেন চেয়েছে, জানেন?

না।

আপনাকে আনল কিভাবে এখানে?

বাথরুম থেকে সবে বেরিয়েছি, এই সময় এল ওরা। বলল, আমার সঙ্গে ভাকুলার ব্যাপারে কথা বলতে চায়। লিভিং রুমে বসে রিভসের সঙ্গে কথা বলছি। আমি, রোজার উঠে গেল ওপরে। আমাকে বলল, রান্নাঘরে যাবে পানি খেতে, অথচ গেল ওপরতলায়। অবাক লাগল। কি করছে ওখানে? শেষে আর থাকতে না। পেরে আমিও গেলাম ওখানে। আমাকে থামানোর চেষ্টা করেছে রিভস, পারেনি। গিয়ে দেখি, মিসেস লেসিঙের ঘরে আলমারি, ড্রয়ারে খোঁজাখুঁজি করছে রোজার। ভালুকটার কথা জিজ্ঞেস করল আমাকে। শেষে খপ করে এসে আমার হাত চেপে ধরে ঝাঁকাতে লাগল। চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ভালুকটা কোথায় আছে তাকে বলতেই হবে!

আবার ফুঁপিয়ে উঠল ডলি। হ্যাঁচকা টানে হাত দুটিয়ে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলাম। ছিটকানি লাগিয়ে দেয়ার আগেই সে-ও ঢুকে পড়ল। থাবড়া মারল আমার নাকেমুখে। নাক থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করল আমার। আমার হাত মুচড়ে ধরে শাসাতে লাগল, ভালকুটার কথা না বললে না বললে..

 হয়েছে, থাক, বুঝতে পেরেছি। কাঠের আরেকটা শিক খুলে ফেলল কিশোর।

ভাবলাম, ডলি বলল। ভালুকটা পেয়ে গেলেই আমাকে ছেড়ে দেবে। দিল না।

দেয়নি, কারণ যদি পুলিশকে বলে দেন। গাড়ির বুটে ভরে আপনাকে এনেছে, না?

হ্যাঁ। রিভসের কাছে পিস্তল ছিল। আমাকে ভয় দেখাল, টু শব্দ করলেই গুলি করে মারবে। ভয়ে কিছু করলাম না।

শেষ শিকটা খুলে ফেলল মুসা। আসুন। বেরিয়ে আসুন। আমরা আপনাকে সাহায্য করছি।

মুসা আর কিশোরের সাহায্যে জানালা গলে বেরিয়ে এল ডলি। একটা পেরেকে লেগে ছিঁড়ে গেল স্কার্টের কিছুটা। বেরিয়ে এল চারজনে। রওনা হলো জীপের দিকে।

 ঠিক এই সময় খুলে গেল জেনারেল স্টোরের দরজা। বেরিয়ে এল হ্যারিসন রিভস। হাতে একটা কাগজের প্লেটে খাবার। স্তব্ধ হয়ে রইল একটা মুহূর্ত। তার পর ঘরের দিকে ফিরে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করল, ডেগি! ডেগি!

দৌড় দিতে বলল কিশোর। ভলির হাত ধরে টেনে নিয়ে ছুটল মুসা। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল ডলি। ব্যথায় কাতরে উঠল। বুড়ো আঙুল মুচড়ে গেছে। টেনেটুনে তাকে তুলল আবার মুসা।

বেরিয়ে পড়েছে রিভস আর রোজার। দুজনের হাতেই পিস্তল। দৌড়ে গাড়ির কাছে পৌঁছতে পারবে না, বুঝতে পেরে পাশের একটা বাড়ির দিকে ঘুরে গেল কিশোর। সবাইকে বলল বাড়িটাতে ঢুকে পড়তে।

কতদিন ওটাতে মানুষ ঢোকে না কে জানে! ভেতরে বাদুড়ের বাসা। ফড়ফড় করতে লাগল ওগুলো, সেই সঙ্গে কিচিক কিচিক করে বিচিত্র ডাক ছাড়তে লাগল।

অন্ধকার একটা ঘরে ঢুকে বসে রইল চারজনে।

রিভস ঢুকে পড়েছে। বাইরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল, জলদি বেরিয়ে এসো। যদি গুলি খেতে না চাও!

চুপ করে রইল কিশোর। সবাইকে চুপ থাকতে বলল।

বেরোতে বললাম না! আবার ধমক দিয়ে বলল রিভস। আমি জানি তোমরা। ওখানেই আছ!

ফিসফিসিয়ে মুসা বলল, ব্যাটা ঢুকতে দেখেনি আমাদের! বোধহয় গাছের জন্যে! নইলে ওরকম করে বলত না। সোজা ঢুকে পড়ত।

বাদুড়গুলোই বাঁচিয়ে দিল আমাদের, রবিন বলল।

রোজারও এসে ঢুকল ঘরে। রিভসকে জিজ্ঞেস করল, কোথায়?

কি জানি, বুঝতে পারছি না…

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইঞ্জিনের শব্দ হলো। জীপের ইঞ্জিন। নিশ্চয়। পুলিশকে ফোন করে ফিরে এসেছে হ্যানসন। করল কোথা থেকে? পথের পাশের কোন ফোনবক্স থেকে হবে, ভাবল কিশোর।

 ঘরের বাইরে জীপ থামল। রোজারকে বোধহয় ঢুকতে দেখেছে হ্যানসন। অনুমান করল তিন গোয়েন্দা। ভেতরে ঢুকে পড়ল হ্যানসন। ধস্তাধস্তি শোনা গেল।

 আর চুপ থাকতে পারল না মুসা। কারাতে ব্যবহারের এরকম একটা মোক্ষম। সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় সে। এক লাফে উঠে বেরিয়ে গেল।

কিশোর আর রবিনও বসে থাকল না। মুসা আর হ্যানসনকে সাহায্য করতে গেল।

 রোজারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে হ্যানসন। আর পিস্তল উচিয়ে বার বার তাকে শাসাচ্ছে রিভস। গুলি করছে না।

তবে কি!…চট করে ভাবনাটা খেলে গেল কিশোরের মাথায়। এখানকার সব কিছুই তো নকল। ওদের পিস্তলগুলোও নকল নয় তো? নইলে গুলি করছে না। কেন?

পেছন থেকে পা টিপে টিপে গিয়ে এক থাবায় রিভসের পিস্তলটা কেড়ে নিল কিশোর। ওজন দেখেই বুঝে গেল, নকল।

দুটো মিনিটও আর টিকল না এরপর রোজার আর রিভস। কাবু করে ফেলল। হ্যানসন আর তিন গোয়েন্দা মিলে। সাহস বেড়ে গেছে ডলির! খুঁজেপেতে দড়ি বের করে নিয়ে এল। বেঁধে ফেলল দুই শয়তানকে।

.

২০.

কেসের রিপোর্ট লিখে তৈরি হয়ে রয়েছে রবিন। কিন্তু বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার বিদেশ থেকে ফিরলেন না।

ডালিয়া ডিকসনকে উদ্ধারের এক হপ্তা পরে ইডাহো থেকে ফিরে এলেন ভিকটর সাইমন। কিশোরকে ফোন করলেন। কিশোর যে খোঁজ করেছিল, একথা তাকে জানিয়েছে কিম।

একটা কেস শেষ করেছি, কিশোর জানাল। শুনতে চান?

ফ্রেনসোর সেই মেয়েটার ব্যাপার তো?

আপনি কি করে জানলেন?

অনুমান। এতদিন ধরে গোয়েন্দাগিরি করছি, হাসলেন লেখক এবং গোয়েন্দা। পেপারে হেডলাইন হয়ে খবর বেরিয়েছে। কাল বিকেল চারটে নাগাদ চলে এসো না? চা খেতে খেতে শোনা যাবে। আজকাল চা খেতে দিচ্ছে কিম।

দ্বিধা করছে কিশোর। কিমকে বিশ্বাস নেই, খাবারের ব্যাপারে।

সত্যি বলছি, কিশোরের ভাব বুঝে বললেন লেখক। চা-ই দেবে। বিশ্বাস। করো।

বেশ। আরও দুজন বন্ধুকে কি আনব?

একজন নিশ্চয় ডালিয়া ডিকসন?র

হ্যাঁ। তবে ডলি আমাকে কথা দিয়েছে, সিনেমায় যোগাযোগ করিয়ে দিতে অনুরোধ করবে না আপনাকে। শুধু দেখা করতে চায়। নাম শুনেছে তো অনেক। হ্যানসনও আপনার ভক্ত। আপনার সব বই পড়েছে।

তাই নাকি? হ্যানসনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেটা কিন্তু অনেক দিনের। তোমাদের প্রথম কেসের কাহিনীটা পড়ার পর থেকেই। হাসলেন তিনি। তা। তোমরা তাকে আনবে, না সে-ই তোমাদেরকে নিয়ে আসবে?

কিশোরও হাসল। লাইন কেটে দিয়ে প্রথমে লেসিং হাউসে ডলিকে ফোন। করল, তারপর করল হ্যানসনকে।

পরদিন বিকেলে কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে তিনটেয় হাজির হল হ্যানসন। অবশ্যই রোলস রয়েস নিয়ে। তবে শোফারের ইউনিফর্ম পরে আসেনি। তার বদলে পরেছে খাঁটি ইংরেজের পোশাক। অভিজাত ইংরেজের মত বেশ গম্ভীর চালে বলল, আজ আমি মেহমান। শোফার নই। তাই ভাবলাম, এই পোশাকটাই পরে যাই।

দারুণ লাগছে আপনাকে, হ্যানসন, উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল মুসা। সত্যি, তুলনা হয় না। ডলি কি পরে আসবে বুঝতে পারছি না।

পরবে হয়ত ড্রাকুলার বৌয়ের পোশাক, রবিন বলল। ভেলকি লাগিয়ে দেবে মিস্টার সাইমনকে।

কিন্তু ডলি অবাক করল ওদেরকে, নিরাশও করল। সাধারণ একটা জিনসের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে এসেছে।

ডলি, ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল মুসা। আজকে আপনি কি সাজলেন?

যা সাজার সেজেছি। অতি সাধারণ আমি, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল ডলি।

কোস্ট হাইওয়ে ধরে উত্তরে চলল রোলস রয়েস। ভিকটর সাইমনের বাড়িটা দেখা যেতেই সামনে ঝুঁকল ডলি। ভাল করে দেখার জন্যে।

 আরে, সত্যিই তো বলেছ তোমরা! সরাইখানাকে বাড়ি বানানো হয়েছে তোমরা যখন বললে, আমি কিন্তু বিশ্বাস করিনি।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল হ্যানসন। বারান্দায় বেরিয়ে এলেন সাইমন। পেছনে এসে দাঁড়াল কিম, একগাল হাসি নিয়ে। হ্যানসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সম্মান জানাল ব্রিটিশ কায়দায়। পরক্ষণেই ছুটে পালাল যেন লজ্জা পেয়ে।

কিম খুব উত্তেজিত হয়ে ছিল আপনার আসার কথা শুনে, মিস্টার হ্যানসন, সাইমন বললেন।

প্লীজ, স্যার, আমাকে মিস্টার বলার দরকার নেই, বিনীত কণ্ঠে বলল হ্যানসন। তিন গোয়েন্দা আমার বন্ধু। আপনাকেও বন্ধু হিসেবে পেলেই আমি খুশি হব।

 নিশ্চয় নিশ্চয়, সাইমনও খুশি হলেন। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। টেলিভিশনে অসংখ্য ব্রিটিশ শো দেখেছে কিম। এখন একজন খাঁটি ইংরেজের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সারাদিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল, আপনার সঙ্গে ইংরেজের মত আচরণ করার জন্যে।…রান্নাঘর থেকে চমৎকার গন্ধ আসছে, না?

হ্যাঁ।

ডলির দিকে তাকিয়ে হাসলেন সাইমন। একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন। হাত ধরে মেয়েটাকে নিয়ে এলেন বসার ঘরে।

তিন গোয়েন্দা শেষবার দেখে যাওয়ার পর কিছু রদবদল করা হয়েছে লিভিং রুমটার। ঢুকতেই সেটা চোখে পড়ল ছেলেদের।

মেহমানদেরকে বসতে অনুরোধ করলেন সাইমন। তারপর তিন গোয়েন্দাকে। বললেন, হ্যাঁ, এবার শুরু করতে পার।

কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল রবিন। তারপর বলতে আরম্ভ করল। মাঝে মাঝে নোটবুক দেখে মিলিয়ে নিচ্ছে। কোথাও ঠেকে গেলে তাকে সাহায্য করছে মুসা আর কিশোর। হ্যানসনও করছে। কারণ সে-ও বেশিরভাগ সময়ই ওদের সঙ্গে ছিল এই কেসে।

 রবিন থামলে সাইমন জিজ্ঞেস করলেন, ভালুকটার ব্যাপারটা কি? এমন কি জিনিস ছিল?

শুনলে অবাকই হবেন, ডলি বলল।

রিভস আর রোজারকে বেঁধে ফেলে রাখলাম, রবিন বলল। পুলিশের। অপেক্ষায়। কিশোরের মনে পড়ল ওই দুৰ্গটা আগেও দেখেছে।

 একটা হরর ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল, কিশোর জানাল। প্রিজনার অভ হন্টেড হিলের শুটিং করা হয়েছিল ওই দুর্গে। মনে পড়ল একটা দৃশ্যের কথা। দেয়ালের গায়ে একটা গোপন কুঠুরির দরজা খুলে রাজকুমারীর মুকুট বের করেছিল। দুর্গের মালিক। আমার মনে হল, এটা নিশ্চয় জানে রিভস আর রোজার।

সুতরাং সোজা হেঁটে গিয়ে আবার দুর্গে ঢুকল কিশোর, মুসা বলল। খুঁজে খুঁজে ঘরটা ঠিক বের করে ফেলল। তার অনুমান ঠিক। ওই কুঠুরিতেই পাওয়া গেল ভালুকটা।

কিশোর পাশার জন্যে এটা কোন ব্যাপার না, হাত নাড়লেন লেখক। তা ছিলটা কি ভেতরে? ড্রাগ? হীরা? রত্ন…

হাসল কিশোর। আপনাকে নিরাশ করতে হচ্ছে, স্যার। ওসব কিছুই ছিল। ছিল একগাদা টাকা।

টাকা! জালনোট?

না, তা-ও না! আসল টাকা। মিস্টার জেনসেনের কাছ থেকে চুরি করেছিল রোজার আর রিভস।

তার মানে তিনজনে একসঙ্গে কাজ করেনি? একদলের নয়?

না। রোজার আর রিভস সিনেমা পাগল লোক। ছবি বানানোর ভীষণ শখ। কিন্তু টাকা নেই। রিভস কিছুদিন একটা স্টুডিওতে কাজ করেছে। আর রোজার একস্ট্রা হিসেবে অভিনয় করেছে হরর ছবিতে। দুজনে বন্ধু। আলাপ আলোচনা করে ঠিক করল একদিন, ছবি বানাবে। কি ছবি? ড্রাকুলার গল্প নিয়ে কিছু। সব প্ল্যান প্রোগ্রাম ঠিকঠাক। বাকি রইল টাকার ব্যবস্থা করা।

ড্রাকুলা? ভুরু কোঁচকালেন লেখক। ওই কাহিনী নিয়ে আর কত ছবি। বানাবে? বানিয়ে বানিয়ে পচিয়ে ফেলা হয়েছে।

হাসল মুসা। সে জন্যেই কেউ ওদেরকে টাকা দিতে রাজি হয়নি।

বাই চান্স, আগের কথার খেই ধরল কিশোর, মিস্টার জেনসেনের খেলনার কোম্পানিতে শিপিং ক্লার্কের একটা চাকরি পেয়ে গেল রোজার। খেলনার গুদামে তালা দেয়া ছোট একটা ঘর আছে, যেটাতে আমরা ঢুকতে পারিনি। ওটার প্রতি কৌতূহল বাড়তে লাগল ওর। একদিন জিনসেনের ড্রয়ার থেকে চাবি চুরি করে। ঢুকে পড়ল ওই ঘরে। দেখে আলমারিতে অনেক টাকা। বেশ কিছু বাণ্ডিল হাতিয়ে নিল সে। কিন্তু সরায় কি করে? শেষে এক বুদ্ধি করল। বড় দেখে একটা খেলনা ভালুকের ভেতরে ভরে ফেলল সেগুলো। ফারের পোশাক বিক্রি করে যে দোকানদার, তার দোকানে আরও খেলনার সঙ্গে চালান করে দিল বিশেষ ভালুকটা। এবং সেদিনই জেনসেনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেল রোজার।

ফারের দোকানদারের কাছ থেকে ভালুকটা আবার হাতানো দরকার। তাই গিয়ে যেচে পড়ে জোরজার করেই তার দোকানে চাকরি নিল রোজার। কিন্তু সে এতই অকর্মা, ভালুকটা দোকানে পৌঁছার আগেই তাকে বের করে দিল মালিক। খেলনা ভালুকগুলো এল। দোকানে কাজ করে না তখন রোজার, বেছে বেছে যে বের করবে কোনটাতে টাকা ভরেছে, সেই সুযোগ নেই। কাজেই ওই চালানে যে কটা খেলনা এসেছিল সব চুরি করল রোজার আর রিভস। সাধারণ ছুরি হিসেবে দেখানোর জন্যে কয়েকটা ফারের কোটও চুরি করল।

এবারেও ভাগ্য ওদের বিপক্ষে গেল। ওরা চুরি করার আগেই বিশেষ ভালুকটা মিসেস লেসিংকে দিয়ে দিয়েছে দোকানদার। চুরি করা ভালুকগুলো সব খুলেও যখন টাকা পেল না রোজার, মাথায় হাত দিয়ে বসল। খুঁজতে শুরু করল কার কাছে গেছে ভালুকটা। সেটা জানার জন্যেই আরেকবার চুরি করতে ঢুকতে হল দোকানে, কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করার জন্যে।

কত টাকা ছিল ভেতরে? জানতে চাইলো সাইমন।

দশ হাজার ডলার। ওই টাকায় ছবিটা শুরু করতে চেয়েছিল ওরা, মুসা, বলল। ভেবেছিল, পরে যা টান পড়বে, কোনভাবে জোগাড় করে নিতে পারবে।

যাই হোক, আবার বলতে লাগল কিশোর। ওরা জেনে গেল ভালুকটা কোথায় আছে। মিসেস লেসিং তখন বিদেশে। আছে শুধু ডলি। তাকেই পটাতে শুরু করল দুজনে। জেনে গেছে ডলি, সিনেমায় অভিনয় করতে আগ্রহী। তার সঙ্গে খাতির করেছে আসলে মিসেস লেসিঙের বাড়িতে ঢোকার সুযোগের জন্যে, যাতে ভালুকটা বের করে নিয়ে যেতে পারে। ওখানে পেল না। জানতে পারল, ওটা আছে আমাদের কাছে। কাজেই ঢুকল গিয়ে আমাদের ইয়ার্ডে।

দানবের সাজে সেজে আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে ওটা কেড়ে নিয়ে এল,. তিক্ত কণ্ঠে বলল মুসা।

ওরকম সাজা ওদের জন্যে কিছুই না, সাইমন বললেন। বিশেষ করে রোজারের জন্যে। হরর ছবিতে এক্সট্রার অভিনয় করেছে সে। দৈত্যদানবই সেজেছে বেশি। তাই না?

হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন।

বন্ধকীর দোকানে কেন গিয়েছিল? আরও টাকা লুট করতে?

 না, ওরা যায়নি। গেছে আরেকটা পাগল। এই হলিউডে যে কত রকম পাগল আছে। হাত নেড়ে মুসা বলল, আমার তো একেক সময় মনে হয় এখানকার বেশির ভাগ মানুষেরই মাথায় ছিট। লোকটা ছদ্মবেশে গিয়েছিল ভয় দেখিয়ে মজা পেতে। যখন দেখল, লোকে সিটিয়ে যায়, টাকা লুট করার বুদ্ধিটা তখনই মাথায়। এল ওর। কয়েকটা করেছে ওভাবে। রোজার আর রিভস যেদিন ধরা পড়ল, তার পরদিনই ওই ব্যাটাকেও ধরে ফেলেছে পুলিশ।  

হাসলেন লেখক। এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, আসল কথায় আসি এবার। জেনসেন এত টাকা পেল কোথায়? তোমাদেরকেই বা অনুসরণ করেছে কেন?

পিজা শ্যাকে আমাদেরকে ভালুকটার কথা বলতে শুনেছে, রবিন জানাল। ব্যাপারটা কি ঘটেছে, আন্দাজ করে ফেলল। কারণ আলমারি থেকে যে টাকা চুরি গিয়েছিল, জেনে গেছে তখন সে। কে, কিভাবে চুরি করেছে, বুঝতে পেরেছে আমাদের আলোচনা শুনেই।

পুলিশকে জানাল না কেন?

জানাবে কি করে? সে নিজেই তো চোর, কিশোর বলল।

আমিও সে রকমই কিছু আন্দাজ করছিলাম। তা কোত্থেকে চুরি করেছিল?

গত বছর নভেম্বর মাসে ট্রেজারি থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলার চুরি হয়েছিল, জানেন আপনি? কাগজে বেরিয়েছিল।

মাথা ঝাঁকালেন সাইমন।

জেনসেনই সেই টাকা চুরি করেছিল। পুলিশ এতদিন ধরতে পারেনি। সেই টাকা পুঁজি খাঁটিয়ে ড্রাগ আর নানা রকম অবৈধ জিনিসের ব্যবসা করে অনেক কামিয়ে ফেলেছিল। সেগুলো ভরে রেখেছিল আলমারিতে।

হুঁ। তাহলে এই ব্যাপার। তোমাদের পিছু নিয়েছিল নিশ্চয় ভালুকটা কোথায় আছে জানার জন্যে?

হ্যাঁ।

কোথায় এখন? ধরেছে পুলিশ?

না। পালিয়েছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন লেখক। তারপর মুখ তুলে বললেন, রোজার আর রিভসের জন্যে খারাপই লাগছে। বেচারারা! ছবি আর বানাতে পারল না…

দরজা খুলে ঘরে ঢুকল কিম। হাতে বিশাল এক ট্রে। সামনের টেবিলে এনে

নামিয়ে রেখে হেসে বলল, খাঁটি ইংরেজি চা, মিস্টার হ্যানসন। আশা করি আপনার ভাল লাগবে।

প্লেটগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। বড় বড় কেক, আর একটা বিরাট প্লেটে পুডিং। জিজ্ঞেস করল, এগুলোও কি ইংরেজি?

নিশ্চয়ই। খেয়ে দেখতে পার। ভাল হয়েছে।

 হাসল মুসা।

কিশোর আর রবিন হাসতে পারল না। ভয় কাটেনি। কিমকে বিশ্বাস নেই। বলা যায় না, এগুলো খাওয়া শেষ হলেই হয়ত ইঁদুর কিংবা পোকা নিয়ে এসে হাজির হয়ে বলবে, এগুলো যেদেশের খবরই হোক, খাঁটি ইংরেজি পদ্ধতিতে কাবাব করা।

উঠে দাঁড়াল ডলি। বলল, চা-টা আমিই দিই। কেটলি হোকে কাপে ঢালতে শুরু করল সে। সবাইকে দিতে দিতে বলল, আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি দুএকদিনের মধ্যেই। বাবাকে বলে দিয়েছি, আবার স্কুলে যাব। পড়ালেখা ভ ল ত শেষ হলে ভর্তি হব অভিনয়ের স্কুলে। ট্যালেন্ট থাকলে আমার অভিনেত্রী হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না।

এই তো বুদ্ধিমতি মেয়ের মত কথা, লেখক বললেন। ট্যালেন্ট এবং আত্মবিশ্বাস। যে কোন কাজ স্বাভাবিক উপায়েই করা উচিত।

শেষ হয়ে গেল খাওয়া। কোন প্লেটেই তার কিছু নেই।

আতঙ্কের মহর্ত উপস্থিত। ভয়ে ভয়ে কিমের দিকে তাকাতে লাগল কিশোর আর রবিন।

বুঝে ফেলল কিম। জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, ভয় নেই, আজ ইংরেজি ছাড়া কিছু করিনি। তবে আমাজানের জংলীদের একটা বিশেষ ডিশ করার ইচ্ছে আছে। সাপের মাংস, বানরের রক্ত আর…

সেটা কবে! আতকে উঠল রবিন।

অবশ্যই জানাব। দাওয়াত করব তোমাদেরকে, আশ্বাস দিয়ে বলল কিম।

অন্তত সাতদিন আগে জানাবেন। যাতে আমেরিকা ছেড়েই পালাতে পারি। রীতিমত আতঙ্ক ফুটেছে রবিনের চোখে।

 লেখক বললেন, আমিও পালাব তোমার সঙ্গে। পরের একটা মাস আর বাড়িমুখো হব না।

মুখ বাকাল কিম। এত বেরসিক লোকদের নিয়ে পারা যায় না। বলল, আসলে আপনাদেরকে আমার দরকার নেই। আমি মুসাকে পেলেই খুশি। কি বলো, মুসা?

<

Super User