কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এল। রান্নাঘরের চেয়ারে বসে কিশোরের বানিয়ে দেয়া কফিতে চুমুক দিচ্ছেন তখন মেরিচাচী।

কি হয়েছিল, সব বলতে পারবেন, এখন ম্যাম? অনুরোধ করল একজন অফিসার।

 নিশ্চয় পারবেন তিনি। আর বললেনও বেশ উৎসাহের সঙ্গে। তবে তাতে রাগ আর ক্ষোভ প্রচুর পরিমাণে মিশিয়ে। রান্নাঘরে এসেছিলেন তিনি স্যুপ তৈরি করার। জন্যে। সবে একটা টিন পেড়েছেন তাক থেকে, এই সময় ডাইনিং রুমে নড়াচড়ার শব্দ শুনলেন। ভাবলেন কিশোর এসেছে। ডেকে জিজ্ঞেস করলেন।

জবাব পেলেন না। মুহূর্ত পরেই পেছন থেকে কেউ জাপটে ধরল তাকে। নাকেমুখে চেপে ধরল নরম কোন জিনিস। হাত থেকে টিনটা খসে পড়ে গেল। তার। ঠেলতে ঠেলতে তাকে নিয়ে যাওয়া হল আলমারিটার কাছে। ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা আটকে দেয়া হলো। এমন ভাবেই ঘটে গেল ঘটনাটা, লোকটাকে দেখতে পর্যন্ত পারেননি তিনি। সারাক্ষণই পেছনে ছিল লোকটা।

আলমারির কাছে একটা পুরানো বালিশ দেখতে পেল অফিসার। ওটাই মেরিচাচীর মুখে চেপে ধরা হয়েছিল বলে অনুমান করা হল। জিজ্ঞেস করল, লোকটা কতক্ষণ ছিল, আন্দাজ করতে পারবেন? ক্যাশবাক্স ছোয়নি সে। দামী আরও অনেক জিনিস আছে, ইচ্ছে করলে নিতে পারত। নেয়নি। যেন কোন কারণে ভয় পেয়ে পালিয়েছে।

ভয়! ভয় তো কাকে বলে জানেই না সে! জানাব! একবার ধরতে পারলে হয়!–ঘোষণা করে দিলেন মেরিচাচী। ঠিক বলতে পারব না, তবে মনে হয় বেশ কিছুক্ষণ ছিল। কিশোর আসার একটু আগে গেছে। কিশোর যে ঢুকেছে, টের পেয়েছি আমি। ভেবেছি, চোরটাই। সে না ডাকলে বুঝতে পারতাম না।

অফিসার আর তার সহকারী সূত্র খুঁজতে শুরু করল। ডাইনিং রুমের জানালার একটা পর্দা খুলে নিচে পড়ে আছে।

এদিক দিয়েই ঢুকেছে মনে হয়, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল একজন অফিসার। চুরি করতে যা যা সরাতে চেয়েছিল সরানোর আগেই ঢুকে পড়েছিলেন তোমার চাচী। তাকে আটকে ফেলার পরেও আর বেশি সময় পায়নি। কিংবা এত বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কাজটা আর ঠিকমত সারতে পারেনি। চুরি করতে ঢুকলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে এমনিতেই চোরের কলজে কাপে। অনেক সময় অকারণেই ভয় পেয়ে পালায়।

চোরাই ডেকসেটটা উদ্ধারের ভরসা দিতে পারল না পুলিশ। তবু মেরিচাচীকে বলল, সাধ্যমত চেষ্টা করবে বের করার। বলে চলে গেল। ওরা যাওয়ার একটু পরেই রাশেদ পাশা এসে ঢুকলেন। কিশোর তখন অগোছাল জিনিসগুলো গুছিয়ে শেষ করেছে। পর্দাটা লাগাচ্ছে রোভার।

কাজ শেষ করে ওয়ার্কশপে চলল কিশোর। ঢুকে দেখল, মুসা এসেছে। সাইকেলটা স্ট্যাণ্ডে তুলে রাখছে।

পুলিশকে যেতে দেখলাম, মুসা বলল। এখানেই এসেছিল নাকি?

হ্যাঁ। রকি বীচে মনে হয় চোরের উপদ্রব বেড়েই গেল। দুদিন আগে মিস লেসিঙের বাড়িতে ঢুকেছিল। আজকে ঢুকেছে আমাদের বাড়িতে। মেরিচাচীকে আলমারিতে আটকে রেখেছিল।

কি বললে?

সংক্ষেপে জানাল কিশোর।

হা হা করে হাসতে লাগল মুসা। আল্লাহ না করুক, চোরটা যদি ধরা পড়ে তবে ওর কপালে দুঃখ আছে। হা হা! আর লোক পায়নি, শেষকালে মেরিচাচীকে..হাহ হা!

কিশোরও হাসল।

তা মেরিচাচীর চোরটাকে খুঁজতে বেরোবে নাকি?

না। পুলিশই যা করে করুক। মনে হচ্ছে সাধারণ চোর।

তার মানে ডালিয়া ডিকসনের কেসেই শুধু আপাতত মাথা ঘামার আমরা?

জবাব দেয়ার আগে ভাবল কিশোর। সেটাও পারব কিনা বুঝতে পারছি না। চীফ তো আমাদেরকে প্রায় তাড়িয়েই দিলেন। তার মানে তিনি চান না ডলিকে নিয়ে মাথা ঘামাই আমরা। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার সে। উজ্জ্বল হলো মুখ। তবে, তার বাবা-মাকে ফোন করতে পারি আমরা। যা যা ঘটেছে, জানাতে পারি।

আমরা মানে কি? আমাকে এসব থেকে বাদ দিতে পার তুমি। একা পারলে করগে। ডিকসনদেরকে অপছন্দ করি আমি, তা নয়। মিস্টার ডিকসন ঠিকই আছেন, তবে মিসেস একটু বেশি লাই দেন মেয়েকে। আমার মনে হয় তার। জন্যেই খারাপ হয়েছে মেয়েটা। ভাগ্যিস আমার মায়ের ঘরে জন্মায়নি। পিটিয়ে। পিঠের ছাল তুলে ফেলত।

হাসল কিশোর। দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা সরাল। এসো, ভেতরে গিয়ে কথা বলি।

হেডকোয়ার্টারে ঢুকল দুজনে। ডেস্কে বসেই আগে ফ্রেনসোতে ডিকসনদের নম্বরে ডায়াল করল কিশোর। ওপাশে বেজেই চলল ফোন। রিং হচ্ছে… হচ্ছে…দশবার পর্যন্ত গুনল সে। তারপর রিসিভার নামিয়ে রেখে বলল, বাড়ি নেই। কেউ ধরছে না।

চীফ হয়ত ফোন করেছিলেন, মুসা বলল। রওনা হয়ে গেছেন ওরা। রকি বীচে আসার জন্যে।

হতে পারে।…এখন ভেবে দেখা দরকার, কি কি সূত্র আছে আমাদের হাতে? রোজারের কার্ডটা ভুয়া। প্রমাণ হয়ে গেছে। আর তার সহকারী:সহ…

চুপ হয়ে গেলে কিশোর। হাত এখনও রিসিভারে।

কি হল? কিছু ভাবছ মনে হয়?

হ্যারিসন রিভস! রোজার বলেছে, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সে কাজ করেছে নাকি লোকটা। সত্যি বলেছে?

 কিশোরের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেলিফোন ডিরেক্টরি টেনে নিল মুসা। খুঁজতে শুরু করল। ফিল্ম স্টুডিওর নামটা বের করতে সময় লাগল না। দেখাল। সেটা কিশোরকে।

ডায়াল করল কিশোর। অপারেটরকে জিজ্ঞেস করল হ্যারিসন রিভসের নাম। কিছুক্ষণ খাতা ঘাটাঘাটি করে অপারেটর জানাল, ওই নামে, কেউ নেই। কিশোরকে জিজ্ঞেস করা হল সে কে বলছে। বানিয়ে বলে দিল কিশোর, সে রিভসের খালাত ভাই। লস অ্যাঞ্জেলেসে বেড়াতে এসেছে। ভাইয়ের ঠিকানাটা খুব দরকার।

এত মিথ্যে বলতে পারো! বিড়বিড় করে বলল মুসা।

মাউথপীসে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করল, কি বললে?

জবাব শোনার আগেই ওপাশ থেকে মহিলা বলল, আরেকটা রেজিস্টার খুঁজে দেখলাম। নেই। ওই নামের কেউ নেই টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চরি ফক্সে।

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর।

নেই। কোন সূত্রও পেলাম না, যা দিয়ে শুরু করতে পারি। দুজন লোক যেমন রহস্যজনক ভাবে দেখা দিল, তেমনি ভাবেই গায়েব হয়ে গেল আবার। সেই সঙ্গে ডলিও গায়েব।

ওই পিজা শ্যাকে আরেকবার গেলে কেমন হয়? খাওয়াও যাবে, শোনাও যাবে। ডলির পার্টিতে যারা গিয়েছিল তাদের কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করতে পারতাম, ডলির খোঁজ জানে কিনা। রোজার আর তার হাঁদা সহকারীটার কথাও কিছু জানতে পারে।

সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে একেবারে কিছু না পাওয়ার চেয়ে রাজি হয়ে গেল কিশোর। বেরিয়ে এল দুজনে। সাইকেল নিয়ে চলল পিজা শ্যাকে। রবিনকে ফোন করল না ইচ্ছে করেই। জানে, করলেও লাভ হবে না। কারণ অনেক দিন পর লাইব্রেরিতে গেছে রবিন। সেখান থেকে যাবে তার চাকরির জায়গায়, মিউজিক কোম্পানিতে।

পিজা শ্যাকে পৌঁছল দুজনে।

একই রকম ভাবে মিউজিক বাজছে, জোরে জোরে। ভিডিও গেম খেলছে ছেলেমেয়েরা। হৈ চৈ করছে। ছোট ছোট টেবিল ঘিরে বসে খাচ্ছে অনেকে। অর্থহীন কথার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে।

সেদিন পার্টিতে গিয়েছিল এরকম একটা ছেলে কিশোর আর মুসাকে দেখেই চিনল।

অ্যাই! হাত নেড়ে ডাকল সে। হাসল। তার কাছে গিয়ে বসতে বলল। চিনতে পার? সেদিন পার্টিতে দেখা হয়েছিল। তো, আছ কেমন?

আছি একরকম, জবাব দিল কিশোর। ডলিকে খুঁজতে এলাম।

ডলি? ও আচ্ছা, বেটির কথা বলছ। কি হয় তোমার? বোন?

না। কিছু হয় না।

ও, কিছুটা অবাকই হলো যেন ছেলেটা।

তার পাশের চেয়ারটায় বসল কিশোর। মুসা বসল উল্টো দিকে, ওদের দিকে মুখ করে।

চেশায়ার স্কোয়্যার থেকে নিখোঁজ হয়েছে ভলি, ছেলেটাকে জানাল কিশোর। আমাদের ধারণা, কিডন্যাপ করা হয়েছে।

হাঁ হয়ে গেল ছেলেটা। যাহ,ঠাট্টা করছ।

 মাথা নাড়ল কিশোর। আজ সকালেও লেসিং হাউসে ছিল ডলি। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। রোজার দেখা করতে এল তার সঙ্গে। সাথে করে রিভসকেও এনেছিল। তারপর থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না মেয়েটাকে।

এক সেকেণ্ড চুপ করে রইল ছেলেটা। তারপর চেঁচিয়ে ডাকল, অ্যাই, শুনে যাও তোমরা। এরা কি বলছে শুনে যাও।

 বন্ধ হয়ে গেল ভিডিও মেশিন। সরাই এসে ঘিরে দাঁড়াল কিশোরদেরকে, গল্প শোনার জন্যে। কাউন্টারের ওপাশে ওয়েইট্রেস মহিলাও গলা বাড়াল।

ডলির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা খুলে বলল কিশোর। খুঁটিনাটি কিছুই বাদ না দিয়ে। শেষে বলল, রোজার আর রিভস তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে। রোজারের সঙ্গে নিশ্চয় তোমাদের কারও কারও পরিচয় হয়েছে। লোকটা একটা ভুয়া। নামটাও আসল কিনা সন্দেহ আছে। ফলে তাকে ধরাটাও মুশকিল। তোমাদের কারও কি কিছু জানা আছে?

চুপ করে আছে সবাই।

দরজা খুলে ঢুকলেন ধূসর চুলওয়ালা লোকটা। ম্যানেজার। কিশোর আর মুসাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন ছেলেমেয়েদেরকে।

কি হয়েছে? ওয়েইট্রেসকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

ওদের বন্ধুর কথা আলোচনা করছে, মিস্টার জেনসেন, মহিলা বলল। এত সুন্দর একটা মেয়ে, হারিয়ে গেল। কত আসত এখানে। ভিডিও গেম খেলত। সবার সঙ্গে হাসিঠাট্টা করত। ওরা বলছে, ওকে নাকি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কিডন্যাপ? ভুরু কুঁচকে গেল ম্যানেজারের।

তাই তো বলছে।

মহিলার দিকে ঘুরে তাকাল কিশোর। রোজার সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন? এখান থেকে অনেক পিজা নিয়েছিল।

 মাথা ঝাঁকাল মহিলা। বিশেষ কিছু জানি না। তবে ওকে পছন্দ হয়নি আমার। এদের বন্ধু হওয়ার বয়েস নয় ওর।

হলিউডের অনেক বড় প্রযোজক ও, একটা ছেলে বলল। ও নিজেই বলেছে। বেটির অনেক প্রশংসা করে বলেছে, ও নাকি অভিনয়ে সাড়া জাগাতে পারবে।

এখানেই দেখা করেছে? কিশোর জানতে চাইল।

হ্যাঁ। সাথে করে নিয়ে এসেছে বোকা লোকটাকে। আলাদা হয়ে গিয়ে ফিসফাস করে কথা বলেছে রেটির সঙ্গে। এমন ভান করেছে যেন বেটিকে পেয়ে হাতে সোনার বার পেয়ে গেছে।

ভিড় সরিয়ে এগিয়ে এল একটা মেয়ে। একটা চেয়ার খালি রয়েছে, তাতে বসল।

বেটির মাথায়ও বোধহয় ছিটটিট আছে। বাস্তবতা বোঝে না, কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। কি বলছি বুঝতে পারছ? ওর ধারণা, ও ভাল অভিনেত্রী হতে পারবে। কাজেই লোকটা এসে যখন বলল, লাফিয়ে উঠল একেবারে। তারপর আর কি? লোকগুলোর সঙ্গে খাতির করে ফেলল। একসাথে বসে পিজা খেতে লাগল। লোকগুলো অনেকক্ষণ কথাটথা বলার পর আমাদের সবাইকে ডেকে বলল, বেটসির নতুন কাজটাকে সেলিব্রেট করার জন্যে একটা পার্টি দেবে।

বুঝলাম না,মুসা বলল। সবাইকে দাওয়াত করতে গেল কেন?

ওসব এক ধরনের চালিয়াতি। হয়ত ভেবেছে, এরকম ধুমধাম করলে বেটি তাকে বিশ্বাস করবে। কোন সন্দেহ থাকবে না। সবাইকে নিয়ে হৈ-হুঁল্লোড় করলে। তাড়াতাড়ি সহজ হয়ে আসবে বেটি।

কিশোর আর মুসার মুখের দিকে তাকাল মেয়েটা। কেন যেন মনে হচ্ছে, মিস লেসিঙের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই ওকাজ করেছে লোকটা। একা নিয়ে যেতে চাইলে নতুন পরিচিত একজনের সঙ্গে যেতে যদি রাজি না হয় বেটি, সে জন্যেই সবাইকে নিয়ে গেছে। পঞ্চাশ জনের কম ছিল না।…ইয়ে, সত্যিই হারিয়ে। গেছে বেটি?

মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

চিন্তিত দেখাল মেয়েটাকে। বিউটি পারলারে, যেখানে সে কাজ করে, টেলিফোন করেছিলাম। ওরা জানাল, আজ নাকি যায়নি। আর বেশ গরম গরম কথাই শুনিয়ে দিল। ওর বাবা-মা কোথায় এখন?

তারা ফ্রেনসোতে ফিরে গিয়েছিলেন, কিশোর বলল। আবার হয়ত রওনা হয়ে পড়েছেন এখানে আসার জন্যে। বাড়িতে ফোন করেছিলাম। পাইনি।

 লোকটার নাম রোজার নয় কেন মনে হলো তোমার? ভিড়ের মধ্য থেকে জিজ্ঞেস করল একটা ছেলে।

কারণ আজ সকালে আসল ইয়ান রোজারের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাদের।

রোজার? লোকটা তার নাম রোজার বলেছে? কিন্তু তার দোস্ত তো অন্য নামে। ডাকছিল। অদ্ভুত একটা নাম!

ডেগি, বলল আরেকটা মেয়ে। হ্যাঁ, ডেগি বলেই ডাকছিল।

ডেগি? কাউন্টারের ওপাশ থেকে বলে উঠলেন ম্যানেজার।

সবাই ফিরে তাকাল তার দিকে।

ডেগি! গম্ভীর হয়ে গেছেন মিস্টার জেনসেন। এটা কি রকম নাম হলো? মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ওরকম নামের একটা লোক ভাল হতেই পারে না। খারাপ লোক। খুব খারাপ। এত সুন্দর মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেল! কোন্ দুনিয়ায় বাস করছি আমরা।

তার সঙ্গে একমত হলো অনেকেই।

কিশোর আর মুসা অপেক্ষা করতে লাগল। ভুয়া চিত্র প্রযোজকের সম্পর্কে আর কেউ কিছু মনে করতে পারে কিনা সে সুযোগ দিল।

কেউই কিছু বলতে পারল না আর।

.

১২.

রাতেই রকি বীচে পৌঁছলেন ডিকসনরা। ইয়ার্ডে এলেন সকাল আটটায়। বিধ্বস্ত চেহারা। চোখ লাল। চীফ ইয়ান ফ্লেচারের সঙ্গে দেখা করেই এসেছেন।

তাদের অবস্থাটা বুঝতে পারলেন মেরিচাচী। আদর করে বসিয়ে নাস্তা-টাস্তা এনে দিলেন। তবে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন না। মেয়েকে ফিরে না পেলে অহেতুক সান্ত্বনা দিয়ে মা-বাবার মন শান্ত করা যাবে না।

কেউ কিছুই দেখেনি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না, ডিকসন বললেন। পড়শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন চীফ। ওই লোকদুটোর সঙ্গে ডলিকে বেরোতে দেখেনি কেউ। রোজার যে গাড়িটা নিয়ে এসেছিল সেটা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে জনৈক ডক সাইমারের নামে। সাইমার আবার বিক্রি করে দিয়েছে পিটারের কাছে। পিটার আর নিজের নামে রেজিস্ট্রি করায়নি। কাজেই লাইসেন্স নম্বরে সুবিধে হয়নি। গাড়িটা ধূসর রঙের, এটুকুই জানি আমরা। ডলি যেখানে চাকরি করত সেখানেও খোঁজ নিয়েছি। যে বুড়িটা জবাব দিল, সে ভাল করে কথাও বলতে চায়নি।

শেষ দিকের কথাগুলো তিক্ত শোনাল তাঁর।

মিস্টার ডিকসন, মেরিচাচী বললেন। আপনারা দুজনেই ক্লান্ত। কয়েকদিন এখানেই থেকে যান না? আমাদের ঘর আছে। থাকতে অসুবিধে হবে না। এ

ধন্যবাদ। তার দরকার হবে না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন ডিকসন। রকি বীচ ইনে ঘর ভাড়া করেছি আমরা। ওখানেই থাকতে পারব। চীফের ফোনের অপেক্ষা করব। বাড়িতে একজনকে রেখে এসেছি ফোন ধরার জন্যে। কিছু জানলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবে। কিডন্যাপাররা যদি ফোন করে, খবর দেবে। হয়ত মেয়েকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে কিছু টাকাটুকা চাইবে।

ঘোরের মধ্যে রয়েছেন যেন, এমন ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন মিসেস।

তুমি আর তোমার বন্ধুরা অনেক করেছ আমাদের জন্যে, কিশোরকে বললেন। ডিকসন। থ্যাঙ্কস।

স্ত্রীর হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

ওয়ার্কশপে চলে এল কিশোর। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। মুসা আর রবিন এসে বসে আছে।

ফাইলিং কেবিনেটে পিঠ দিয়ে মেঝেতে বসেছে মুসা। চোখে ঘুম। ডিকসনদের গাড়িটা দেখলাম অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রবিনকে ফোন করলাম সে জন্যেই। আর কিছু ঘটেছে?

না, নিজের ডেস্কের ওপাশে গিয়ে বসল কিশোর। রকি বীচ ইনে উঠেছেন। ডিকসনরা। ডলির খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত যাবেন না।

খোঁজটা পেয়ে গেলেই ভাল, রবিন বলল। নোটবুক বের করল। দেখে নিয়ে। বলল, এ যাবৎ যা যা করেছি আমরা, কোনটাতেই ফল হয়নি। যেখানে শুরু সেখানেই শেষ, এই হয়ে যাচ্ছে অবস্থা।

অনেক কিছুই মিলছে না, কিশোর বলল। ওই লোকদুটো ডলিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক। কিন্তু সব কিছুর জন্যেই একটা মোটিভ লাগে। কেন নিল? উদ্দেশ্যটা কি? কিডন্যাপিং হলে মুক্তিপণ চাইছে না কেন? আর যদি নিয়েই থাকে নেয়ার অনেক সুযোগ পেয়েছে আগেই। কেন একটা পার্টি দিয়ে, লোক জানাজানি করে এরকম একটা কাজ করতে গেল?

দুহাতের আঙুলের মাথা এক করে ছোট একটা খাঁচার মত তৈরি করল সে। তারপর রয়েছে সেই রহস্যময় চোরটা। যে লেসিং হাউসে ঢুকেছিল, ডলির সঙ্গে রোজার আর রিভস দেখা করার আগেই। ওই দুজনেরই একজন চোরটা ছিল কিনা। কে জানে। তাহলে প্রশ্নঃ কেন ঢুকেছিল? ডলির জন্যে? নাকি লেসিং হাউস থেকে কিছু চুরি করতে?

কাকতালীয় না তো? রবিন বলল। সেই বন্ধকী দোকানের মায়ানেকড়েটার মত??

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। সারা দিন ধরে চিবালেও এই রহস্যের মধ্যে ছিবড়ে ছাড়া আর কিছু মিলবে না।

 প্ল্যাস্টিকের সেই ব্যাগ, যেটা সৈকতে কুড়িয়ে পেয়েছিল ওরা, এখনও অফিসেই রয়েছে। চেশায়ার স্কোয়ারে ডলির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ওটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। ফাইলিং কেবিনেটের ওপর থেকে নামিয়ে এনে ভেতরের জিনিসগুলো টেবিলে ঢেলে দিল রবিন। মেকাপের সরঞ্জাম, লাইব্রেরির বই আর খেলনা ভালুকটার দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল, যেন ওগুলো কোন সূত্র বলে দেবে। কিংবা বলবে ডলি এখন কোথায় আছে। কালো নিপ্রাণ দৃষ্টি মেলে ভালকটা তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে।

 বইটা তুলে নিয়ে আনমনে পাতা ওল্টাতে লাগল কিশোর। কিছু কিছু পৃষ্ঠায় লেখার নিচে দাগ দেয়া রয়েছে। বিড়বিড় করে ইংরেজিতে যা পড়ল সে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সাফল্য, ভালবাসা, ধনী এই শব্দগুলো ঘন ঘন আওড়াবে। সূর্য যেমন উঠবেই, তেমনি নিশ্চিত করে জেনে রাখো, সাফল্য, ভালবাসা আর অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে যাবে তুমি।

পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসল ওরা।

ভালুকটাকে চোখের সামনে নিয়ে এল মুসা। বলল, তুমিও এই বইয়ের কথা মেনে চলতে পার। ভাবতে থাকো, কাল থেকে গভীর বনের বাতাসে শ্বাস নেবে। বুক ভরে। কে জানে, কাল সকালেই হয়ত খেলনা ভালুক থেকে জ্যান্ত ভালুকে পরিণত হবে তুমি।

আরেকবার হেসে উঠল ওরা।

বাড়ি রওনা হয়ে গেল রবিন আর মুসা।

কিশোর বসেই রইল। বসে বসে ভাবতে লাগল। তাকিয়ে রয়েছে ভালুকটার। দিকে। তার মনে হচ্ছে, কোথাও কিছু একটা সূত্র অবশ্যই রয়েছে, যেটা চোখ। এড়িয়ে যাচ্ছে ওদের। ওটা পেয়ে গেলেই ডলিকে বের করার ব্যবস্থা করতে পারবে।

ব্যাগের ভেতরে আবার জিনিসগুলো ভরতে আরম্ভ করল সে।

হঠাৎ ট্রেলারের বাইরে কি যেন নড়ে উঠল।

থমকে গেল সে। কান পাতল। কি নড়ছে? জঞ্জালের ভেতর কোন ছোট জানোয়ার ঢুকল?

আবার শোনা গেল শব্দটা। এতই মৃদু, বাতাসের ফিসফিসানি বলেই মনে হয়। কিংবা কেউ রোধহয় নিঃশ্বাস ফেলল জোরে। ঘাপটি মেরে রয়েছে কিশোরের বেরোনোর অপেক্ষায়।

নাহ, দেখতে হচ্ছে।

আস্তে করে উঠে দাঁড়াল সে। ধাক্কা লেগে চেয়ারটা যাতে সরে গিয়ে শব্দ না হয়ে যায়, খেয়াল রাখল। ঘুরে চলে এল ডেস্কের আরেক পাশে। আবার কান পাতল।

নীরব হয়ে আছে। আর হচ্ছে না শব্দটা।

কোন জানোয়ারই হবে। ইঁদুর, বেড়াল, কিংবা ছুঁচো। কাঠবেরালিও হতে পারে। মাঝে মাঝেই ওগুলোকে ইয়ার্ডে ঢুকতে দেখেছে সে।

হেডকোয়ার্টার থেকে সব চেয়ে তাড়াতাড়ি বেরোনোর পথটা হল সহজ তিন। সেই পথ ধরে চত্বরে বোরোল সে। ছোট জানোয়ার কিংবা রহস্যময় অনুপ্রবেশকারীকে দেখার আশায় তাকাল এদিক ওদিক। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে আবার এসে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। প্রথমেই তাকাল টেবিলের দিকে, যেখানে ব্যাগটা রেখে গিয়েছে।

ওটা আছে জায়গামতই। কিন্তু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে ডেস্কের ওপর। টেলিফোনের কাছে খুলে রয়েছে একটা নোটপ্যাড। তারমানে সে যখন বাইরে বেরিয়েছিল, চুপ করে এখানে ঢুকে পড়েছিল কেউ। নোটপ্যাডটা খুলে দেখেছে ওটাতে কি লেখা রয়েছে। শিরশির করে উঠল মেরুদণ্ডের ভেতর।

 তেমন জরুরী কিছু লেখা নেই। তবে কেউ একজন ঢুকেছিল এটা স্পষ্ট। হঠাৎ করেই টের পেয়ে গেল, যে ঢুকেছে, সে এখনও ভেতরেই রয়েছে।

স্থির হয়ে গেল কিশোর। বুঝতে পারছে, পেছনেই রয়েছে অনুপ্রবেশকারী। ছোট ডার্করুমটার দিকে পেছন করে আছে সে। দরজায় পর্দা ঝুলছে। তার ওপাশেই রয়েছে কেউ অপেক্ষা করছে..নিঃশ্বাস ফেলছে…

নিঃশ্বাসটা এতই ধীর, প্রথমে বুঝতেই পারেনি কিছু সে। আস্তে আস্তে জোরাল হয়েছে। শব্দটা অদ্ভুত। খসখসে। হালকা ভাবে কোন জিনিস সিরিশ কাগজে ঘষা হচ্ছে যেন।

খলখল করে একটা শয়তানী হাসি যেন ফেটে পড়ল ঘরের ভেতরে।

লাফ দিয়ে পর্দার কাছ থেকে সরে গেল কিশোর। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে তাকাল।

টান দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে পর্দা।

ভয়ঙ্কর একটা জিনিসের ওপর চোখ পড়ল তার। আঁশে ঢাকা শরীর। চোখা। দাঁত। চেহারার কোন আকৃতি নেই। গলে গলে পড়ছে মাংস। যেন হরর ছবি থেকে উঠে আসা জীবন্ত এক আতঙ্ক।

আবার হেসে উঠল ওটা। ঈগলের মত বাঁকা আঙুলওয়ালা একটা থাবা। বাড়িয়ে দিল কিশোরকে ধরার জন্যে।

সরার চেষ্টা করতে গিয়ে ডেস্কের সঙ্গে বাড়ি খেল সে। ঝট করে মাথা নামিয়ে ফেলল।

হাসতে হাসতেই আঘাত হানল বীভৎস প্রাণীটা।

আঘাতটা লাগল কিশোরের গায়ে। মনে হল, ধাতব ফাইলিং কেবিনেটটা ছুটে আসছে তার সঙ্গে মোলাকাত করার জন্যে।

-কপাল ঠুকে গেল ওটাতে। এরপর সব অন্ধকার।

.

১৩.

 ব্যাগটার জন্যেই এসেছিল, কিশোর বলল। হুঁশ ফিরতে দেখি ওটা নেই। চাচীকে যেদিন আলমারির ভেতরে আটক করেছিল, সেদিনও ওটা খুঁজতেই এসেছিল, ব্যাগটা নেই দেখে বুঝলাম। ওটার জন্যেই কিডন্যাপ করা হয়েছে ভলিকে। তারপর, আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকে ওটা পেয়ে নিয়ে চলে গেছে।

হুঁশ ফিরে পেয়েই দুই সহকারীকে ফোন করেছে গোয়েন্দাপ্রধান। ছুটে চলে এসেছে ওরা। বসে আছে এখন কিশোরের মুখোমুখি।

চেহারা এখনও ফ্যাকাসে হয়ে আছে কিশোরের। ধাক্কাটা পুরোপুরি. সামলে। উঠতে পারেনি। আর আমি গাধা, আবার বলল সে। কাজটা সহজ করে দিলাম তার জন্যে। সহজ তিনের পথ খুলে দিয়ে। ঘরে ঢুকে লুকিয়ে ছিল ওটা।

ভয়ানক কুৎসিত চেহারাটার কথা মনে হতেই গায়ে কাঁটা দিল তার।

মুসার মনে পড়ল বন্ধকী দোকানের সেই মায়ানেকড়ের চেহারার কথা। জিজ্ঞেস করল, একই চেহারার? ওই যে, সেদিন দেখেছিলাম, মায়ানেকড়ে?

না। অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে কিশোর। তবে একই লোক হতে পারে। মুখের রং ফিরতে শুরু করেছে তার। রোজার আর রিভস হরর ছবির ছাত্র। অন্তত ওদের কথাবার্তায় সে রকমই মনে হয়েছে। সুতরাং ছদ্মবেশে অপরাধ যদি করতেই আসে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

 তবে, রবিন বলল। লেসিং হাউসে যে চোরটা ঢুকেছিল, সে আর দশটা চোরের মতই সাধারণ। মোজা মাথায় গলিয়ে চেহারা ঢেকে অনেক চোরই চুরি করতে আসে।

ওই চোরটাকে সাধারণ ভাবতে পারছি না ডলির জন্যে। তার সঙ্গে কোনভাবে যোগাযোগ থাকতে পারে। কাজেই চোরটাও একই লোক হতে পারে।

ঠিক! একমত হল মুসা। কিন্তু দানবটা ব্যাগ নিল কেন? কি চায়? বন্ধকীর দোকানের রশিদগুলো?

যেগুলো বইয়ের ভেতরে রেখে দিয়েছিল ডলি? ভ্রূকুটি করল কিশোর। আমার তা মনে হয় না। যেসব জিনিস বন্ধক রেখেছে, একেবারেই সাধারণ। দাম আর কত। একটা আংটি, একটা মেডেল, আর একটা সোনার পিন। ওগুলো রেখে মাত্র কয়েকটা ডলার পেয়েছে ডলি। নাহ, ওই রশিদের পেছনে কেউ লাগেনি।

তাহলে কিসের জন্যে? বইটার জন্যে? উফ, মাথাই ধরে যাচ্ছে আমার।

ওই বই যে কোন লাইব্রেরিতে গেলেই মেলে, রবিন বলল। তবে বিশেষ ওই বইটাতে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে আলাদা কথা। নোটফোট লিখে থাকতে পারে ডলি। কিন্তু কিসের নোট? বয়েস কম। কোন অপরাধ করেছে বলে মনে হয় না। লুকানোর নিশ্চয় কিছু নেই। বাড়ি থেকে ওরকম অনেকেই পালায়। সে-ও পালিয়েছে। একটা উদ্দেশ্যও আছে তার। ছবিতে কাজ করতে চায়।

খেলনা ভালুক! আচমকা বলে উঠল কিশোর।

ওর দিকে তাকিয়ে রইল রবিন আর মুসা।

ওটার আবার কি হলো? জিজ্ঞেস করল মুসা।

ওটাই চায় তথাকথিত দানবটা, কিশোর বলল। সাধারণ খেলনা নয় ওটা। অন্যান্য টেডি বিয়ারগুলো বানানো হয় তুলো দিয়ে, কিন্তু ওটা আসল রোম।

তাতেই বা কি? যদি সবচেয়ে দামি মিংক দিয়েও বানানো হত, তাতেই বা কি হত? এমন কিছু দাম হত না যার জন্যে এতসব ঝামেলা করতে চাইবে কেউ।

হয়ত ভালুকটার ভেতর কিছু আছে।

এইবার বলেছ একটা কথা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। তাই হবে। রত্ন! অলঙ্কার। ড্রাগ! যেকোন জিনিস হতে পারে। রোজার আর রিভস জানে, একটা খেলনা ভালুকের ভেতরে সাংঘাতিক দামি কিছু লুকানো রয়েছে। সেটা খুঁজতে লেসিং হাউসেও গিয়েছিল, ডলির জন্যে পারেনি। সে দেখে ফেলে পুলিশে খবর দিয়েছিল। তারপর অন্যভাবে ঢুকেছে ওই বাড়িতে। খুঁজেছে, পায়নি। তখন ধরে। নিয়ে গেছে ওকে জিজ্ঞেস করার জন্যে। ও বলেছে ওটা আমাদের কাছে থাকতে পারে। তখন এসেছে ইয়ার্ডে। আমাদের অনুসরণ করেই এখানকার ঠিকানা বের করেছে ওরা।

ওদিকে ডলিকে আটকে রেখেছে, যোগ করল মুসা। যাতে সে পুলিসকে বলে দিতে না পারে।

চমৎকার থিওরি, কিশোর বলল। সব খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। এখন। বাথরুমের তোয়ালেতে রক্তের কথাটায় আসা যাক।

হ্যাঁ। ওটাও সহজ। জোরাজুরি করতে গিয়ে কেউ জখম হয়েছিল। কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে মুছেছে তখন।

টগবগ করে ফুটতে আরম্ভ করেছে কিশোর। রিসিভার তুলে নিল। চকচক করছে চোখ। আমাদের এখন জানতে হবে খেলনাটা ডলির হাতে এল কিভাবে? এটা জানা জরুরী। হয়ত এর সাহায্যেই ওই রহস্যময় দানবকে ধরতে পারব। আমরা।

দ্রুত ডিরেক্টরির পাতা ওল্টাল কিপোর। এই যে, পেয়েছি। রকি বীচ ইন।

ওপাশ থেকে রিসিভার তুলতেই মিস্টার ডিকসনকে চাইল সে। তিনি ধরতে বললেন, কিশোর পাশা বলছি। একটা সূত্র বোধহয় পেয়েছি, যেটা কাজে লাগতে পারে। ডলির ব্যাগের খেলনা ভালুকটার কথা মনে আছে? ফ্রেনসো থেকে আসার সময় কি ওটা সঙ্গে নিয়েছিল? ভালুকটা আসল রোম দিয়ে তৈরি।

কি ভালুক?

 টেডি বিয়ার।

এক মিনিট। নরিয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখি।

ওপাশে আলোচনা চলছে, কথাগুলো বুঝতে পারল না কিশোর। একটু পরেই লাইনে ফিরে এলেন ডিকসন। না, সে-ও বলতে পারছে না। যতদূর জানি, কাপড় আর মেকআপের জিনিসগুলো ব্যাগে ভরেই বাড়ি ছেড়েছে ও। কেন?

আমরাও শিওর নই, মিস্টার ডিকসন। তবে ভালুকের ব্যাপারে জানাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। যাই হোক, নতুন কিছু জানতে পারলে জানাব।

লাইন কেটে দিল কিশোর। সহকারীদেরকে বলল, ভালুকটা এখান থেকেই জোগাড় করেছে ও। কোত্থেকে, সেটা বের করব কিভাবে?

পিজা শ্যাক! রবিন বলল। ওখানকার ওরা কিছু জানতে পারে।

ঠিক বলেছ। ওখান থেকেই শুরু করতে পারি।

কয়েক মিনিট পরেই কোস্ট হাইওয়ে ধরে সাইকেল চালিয়ে চলল তিন। গোয়েন্দা। পিজা শ্যাকে ঢুকে কয়েকজন পরিচিতকে দেখল। ওরা হাত নাড়ল। কাউন্টারের ওপাশের মহিলা হাসল।

ওরা এলে খুব একটা খায়টায় না, হেসে মিস্টার জেনসেনকে বলল মহিলা। তবে ভাল ছেলে। ভদ্র।

মন্তব্য করলেন না ম্যানেজার। নজর রাখলেন তিন গোয়েন্দার দিকে। ওরা। ছেলেমেয়েদেরকে খেলনা ভালুকটার কথা জিজ্ঞেস করছে যে, সেটাও শুনলেন।

টেডি বিয়ার? একটা ছেলে বলল, কি বল! অতবড় একটা মেয়ে ব্যাগের ভেতর খেলনা বয়ে বেড়াবে?

এতে অবাকের কি আছে? গাঢ় লাল লিপস্টিক লাগানো একটা মেয়ে বলল। অনেকেই বয়েস হলেও বাচ্চাই থেকে যায়। অন্তত ছোটদের কিছু কিছু স্বভাব থেকে যায়। বেটিটা একটু পাগলাটে ধরনেরই। ওর পক্ষে সব সম্ভব। আমি দেখেছি ব্যাগে। জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় পেয়েছে। বলেনি।

অনেক দিন ধরে ছিল তার কাছে? জানতে চাইল কিশোর।

 শ্রাগ করল মেয়েটা। দুএক দিন হবে।

আর কেউ কিছু বলতে পারল না। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে পিজা শপ থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।

এবার? বেরিয়েই প্রশ্ন করল মুসা, আর কাকে জিজ্ঞেস করব?

খেলনার দোকানে যাওয়াই তো উচিত, জবাব দিল কিশোর।

গুঙিয়ে উঠল মুসা। জানো, কটা দোকান আছে?

জানি। গোয়েন্দাদের কাজটাই কঠিন।

পিজা শপ থেকে কোয়ার্টার মাইল দূরেই পাওয়া গেল প্রথম খেলনার দোকানটা। ওখান থেকেই শুরু করল তিন গোয়েন্দা। ওখানে ভালুকের সমাহার দেখে আরেকবার গোঙাল মুসা। খাইছে! কি করে জানব? এত ভালুক যারা বিক্রি করে তাদের কি আর মনে থাকবে?

দেখাই যাক না, কিশোর বলল। তবে এখানে জিজ্ঞেস করে লাভ হবে না। একটাও রোমশ ভালুক নেই। রোম দিয়ে তৈরি নয়, সব তুলো।

তবু, এসেছি যখন জিজ্ঞেস করেই যাই, রবিন বলল।

দোকানের মালিক এক মহিলা। একটা খেলনা ভালুকের খোঁজে বেরিয়েছে ওরা শুনে একটু অবাকই হল। কিশোর বলল, আসল রোম। মিংক হতে পারে।

এতটাই দামি?

কি জানি, বুঝতে পারছি না। গাঢ় রঙের রোম। আমাদের এক বন্ধুর কাছে। দেখেছি। এখান থেকেই কিনে নিল কিনা জানতে এসেছিলাম।

না। এখানে ওরকম জিনিস পাবে না। সান্তা মনিকায় চলে যাও। বন্দরের ধারে কয়েকটা বড় বড় দোকান আছে। দামি খেলনা বিক্রি করে একমাত্র ওরাই। আর ওদের কাছে যদি না থাকে, বলে দিতে পারবে কোথায় পাওয়া যাবে।

সাইকেল রেখে বাসে করে সান্তা মনিকায় এল তিন গোয়েন্দা। বন্দরের কাছে প্রথম যে দোকানটা দেখল, ওটাতেই ঢুকল। পরে এক এক করে বাকিগুলোতে ঘুরবে। অনেক ধরনের খেলনা ভালুক দেখতে পেল ওখানে। মিংকের তৈরি টেডি বিয়ার অবশ্য পেল না।

অল্প বয়েসী একটা সুন্দরী মেয়ে কাউন্টারে রয়েছে। সে ওদেরকে বলল, বেভারলি হিলের খেলনার দোকানগুলোতে খোঁজ নিতে। ওখানে নাকি মিংকের তৈরি টেডি ভালুক বিক্রি হয়। কয়েকটা দোকানের নাম ঠিকানাও দিল।

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার রাস্তায় বেরোল ছেলেরা। একটা অডি গাড়ি চলে গেল সামনে দিয়ে। তারপর রাস্তা পেরিয়ে বাসস্টপে চলে এল ওরা। ধপাস করে বেঞ্চের ওপর বসে পড়ল মুসা। হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, হবে না এভাবে। বুঝলে, হবে না। সারা জীবন ধরে খুঁজলেও পাব না।

হবে, কিশোর, অতটা নিরাশ হতে পারল না। তবে বাসে করে ঘুরে কূল করতে পারব না। একটা গাড়ি লাগবে।

.

১৪.

 রোলস রয়েস নিয়ে হাজির হয়ে গেল হ্যানসন। তিন গোয়েন্দাকে বেভারলি হিলে নিয়ে গেল। পার্ক করল বেভারলি ড্রাইভের একটা লোডিং জোনে।

আমি এখানেই থাকি, বলল সে। দরকার হলে ডাকবে। বাড়িটা ঘুরেই গাড়ি বের করে নিয়ে যেতে পারব।

দুজন মহিলা হেঁটে চলল। একজনের হাতে একটা গাইডবুক। অন্যজনকে বলল, এই, শোন, এখানকার সব চেয়ে সম্ভ্রান্ত অঞ্চল বেভারলি হিল। অনেক দামি দামি ফিল স্টারের বাড়ি এখানে। দোকানপাটগুলো… সাড়া না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে মাঝ পথে কথা থামিয়ে দিল সে।

ইরিনা! চিৎকার করে উঠল সে। গাড়িটা কি দেখেছ! তোলো তোলো, ছবি তোলো।

দেখেও না দেখার ভান করল হ্যানসন। হেঁটে যাচ্ছে তিন গোয়েন্দা। ঝট করে ক্যামেরা তুলে রোলস রয়েসটার একটা ছবি তুলে ফেলল ইরিনা।

 যেখানে গাড়িটা পার্ক করা হয়েছে তার কাছেই পাওয়া গেল দুটো খেলনার দোকান। প্রথমটাতে খুঁজে কিছু পেল না গোয়েন্দারা। পরেরটাতে চামড়ার প্যান্ট পরা একজন লম্বা লোক জানাল একটা মিংকের তৈরি টেডি বিয়ার দেখেছে।

বিক্রির জন্যে ছিল না অবশ্য ওটা, লোকটা বলল। আমাদের একজন। কাস্টোমার বোনাস হিসেবে পেয়েছে ওটা। উইলশায়ারের কোণের একটা দোকান। থেকে একটা ফারের জ্যাকেট কিনেছিল। জ্যাকেটটা তার বাড়িতে ডেলিভারি। দেয়ার সময় ভালুকটা চলে গেছে ওটার সঙ্গে। দোকানের তরফ থেকে উপহার।

ও, কিশোর বলল।

ওখান থেকে ইচ্ছে করলে ওরকম ভালুক কিনতে পারো। যদি আরও থাকে।

থ্যাঙ্ক ইউ।

অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আমাদের কাছেও আছে। দরকার হলে চলে। এসো। এই ধরো না মাউজ হাউসের কথাই। অনেক আছে আমাদের।

কেন? মুসা জানতে চাইল, ইঁদুর পোষার জন্যে?

খেলনা ইঁদুর। বেভারলি হিলে জ্যান্ত ইঁদুর রাখা নিষিদ্ধ।

নাক মুখ কুঁচকে এমন একটা ভঙ্গি করল মুসা, যেন বোঝাতে চাইল, সবখানেই পাগল থাকে। নইলে খেলনা ইঁদুরের আবার বাড়ি কেন?

গাড়িতে ফিরে এল ওরা। একজন পথচারীকে বোঝাচ্ছে হ্যানসন, গাড়িটা, ছবিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়নি। বিশ্বাস করাতে পারছে না লোকটাকে। তিন গোয়েন্দাকে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাচল। তাড়াতাড়ি ওদেরকে তুলে নিয়ে ছেড়ে দিল। গাড়ি। উইলশায়ারের দিকে যেতে যেতে বলল, বেভারলি ড্রাইভ আস্তে আস্তে পর্যটন কেন্দ্র হয়ে যাচ্ছে। ট্যুরিস্টদের উৎপাত বাড়ছে।

কয়েকবার করে আমাকে সহ গাড়িটার ছবি তুলে নিয়ে গেছে কয়েকজনে, জানাল সে। লোকের ধারণা, আমি ফিল্ম স্টার।

 লোকের দোষ নেই, রবিন বলল। গাড়িটা যেমন চোখে পড়ার মত। আপনার ইউনিফর্ম তেমনি। এমনকি বেভারলি হিলের জন্যেও অস্বাভাবিক।

অস্বীকার করছি না, হেসে বলল হ্যানসন।

উইলশায়ারের কোণের দোকানটার নাম উচ্চারণ করাই কঠিনঃ, অনস্কি ফ্রেরিজ। সাদাটে ধূসর দেয়াল, ধূসর কার্পেটে গোড়ালি দেবে যায়। ছেলেরা ঢুকে দেখল, গলায় দরজির ফিতে ঝোলানো একজন লোক যুবক বয়েসী একজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিছুতেই বুঝতে চাইছে না যুবক। মুখ গোমড়া করে একনাগাড়ে অভিযোগ করে চলেছে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ভাল না হলে সে কিভাবে। কাজ করবে?

টেডি বিয়ার? কিশোরের প্রশ্ন শুনে লোকটা বলল। কিছু ভালুক ছিল আমার কাছে। তবে এখন একটাও নেই। সব নিয়ে গেছে।

নিয়ে গেছে?

চুরি। ও জানো না? জানবেই বা কি করে। পত্রিকায় ছাপা হয়নি। চুরিদারি আজকাল আর কোন ব্যাপারই না।

উত্তেজিত হলো কিশোর। চুরি? কবে?

প্রথমে কিছু ফরি চুরি করেছে। হপ্তাখানেক আগে। তারপর চারদিন আগে কিছু রেকর্ড চুরি করে নিয়ে গেছে। কেন? তোমার এসব জানার আগ্রহ কেন? খেলনা ভালুক চাও তো? খেলনার দোকানে চলে গেলেই পারো।

কিন্তু আমার বন্ধুরটা ছিল ফারের ভালুক। আসল রোমের তৈরি, বুঝতেই পারছেন। আমার কাছে রেখে গিয়েছিল। কে জানি আমাদের বাড়িতে ঢুকে নিয়ে গেছে।

মাথা ঝাঁকাল লোকটা। ঠিক আমার দোকানে যা ঘটেছে। পয়লা বার যখন চুরি করল, ফারের সঙ্গে খেলনাগুলোও নিয়ে গেল। তারপর এল আমার ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে। সারা মেঝেতে ছড়িয়ে ফেলে গেল। কিছু কাগজ এখনও পাচ্ছি না। ফারগুলো ভাগ্যিস বীমা করানো ছিল। ওগুলো নিয়েছে, নাহয় বুঝলাম দামি জিনিস বলে। কাগজপত্র ঘাটল কেন? সব শয়তানী। আসলে কাজের লোকের ওপর বোধহয় রাগ আছে। ফলে যারা কাজ করে খেতে চায় তাদের সঙ্গে নষ্টামি শুরু করেছে।

এটা যুক্তির কথা নয়। তবু কিশোর বলল, হবে হয়ত।

সকেট থেকে প্লাগ খুলে যন্ত্র নিয়ে পেছনের ঘরে চলে গেল যুবক।

ওই যে দেখ না, যুবকের কথা বলল লোকটা। এর কথাই ধরো। সে সৎও। হতে পারে আবার অসৎও হতে পারে, কি করে বুঝবে? কেবল অনুমান করতে পার। আর কিছু করার নেই। এ তো কাজটা অন্তত ঠিকভাবে করে, আগেরটা তা ও করত না। ওকে কাজ করতে বলতাম, চুপ করে থাকত। যা-ই বলতাম, কিছুই বলত না। এর চেয়ে কবর থেকে একটা লাশকে তুলে নিয়ে এসে যদি বকাঝকা কুরতাম, কাজ হত। তবে সিনেমার ব্যাপারে বেশ ভাল জ্ঞান ছিল। আমি সিনেমা দিয়ে কি করব, বল?

উত্তেজনা বাড়ল কিশোরের। এমনকি পেছনে মুসাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গলা বাড়িয়ে দিয়েছে রবিন, যাতে দোকানদারের একটা কথাও কান না এড়ায়।

 সিনেমায় কাজ করত? কিশোর জিজ্ঞেস করল, হরর ছবির ব্যাপারে কিছু জানত কি?

তুমি কি করে বুঝলে? জানত! অবশ্যই জানত! ড্রাকুলা! মায়ানেকড়ে! কবর থেকে উঠে আসা নানারকম পিশাচ, যারা মানুষের কলজে খায়! বিচ্ছিরি সব ভাবনাচিন্তা!।

হঠাৎ ভুরু কুঁচকে ফেলল লোকটা। সন্দেহ দেখা দিল চোখে। লোকটাকে চেন নাকি? তোমরা কারা? কি চাও?

আমরা…আমরা আমাদের বন্ধুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, সাবধানে বলল কিশোর। ভালুকটা তারই ছিল। হারিয়ে গেছে সে। তাকে উদ্ধার করা খুব। জরুরী। অনুরোধ করল সে। প্লীজ! একটা উপকার করুন। লোকটাকে কিভাবে জোগাড় করেছেন, বলবেন? কোন এজেন্সির মাধ্যমে?

ভ্রূকুটি করল লোকটা। এমনি এসে হাজির হলো একদিন। একটা চাকরি চাইল। খুব নাকি দরকার। যেকোন কাজ করতে রাজি।

চুরির আগে এসেছিল, না পরে? গেছে কবে? কতদিন কাজ করেছে?

দুদিনও করেনি। কোনমতে তাকে দিয়ে কাজ করাতে না পেরে শেষে বিদেয়। করে দিয়েছে। হপ্তা দুই আগের কথা সেটা। ওসব শুনে তোমার লাভ হবে না।

লোকটার ঠিকানা জানেন? চাপাচাপি শুরু করল কিশোর। কোথায় থাকে? কি নাম বলেছে? মিসেস লেসিংকে চেনেন? চেশায়ার স্কোয়্যারে থাকেন? তিনি আপনার কাস্টোমার?

বাহ! এবার আমার কাস্টোমারদের কথাও জানতে চায়? আরও সন্দিহান হয়ে। উঠল লোকটা। মতলবটা কি তোমার? যাবে, না পুলিশ ডাকব?

প্লীজ, আপনি বুঝতে পারছেন না! ব্যাপারটা জানা খুবই জরুরী। গড়গড় করে ডলির গল্প বলতে আরম্ভ করল কিশোর। কি করে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিল, কি করে ওরা খুঁজে বের করেছিল, কি করে লেসিং হাউসে চাকরি নিয়েছে, বলল। ওর ব্যাগের খেলনা ভালুকটার কথাও বলল। বলল তার উদ্বিগ্ন মা-বাবার কথা। শেষে বলল, মনে হয়, মেয়েটাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে ভালুকটার যোগাযোগ থাকতে পারে।

পুরো গল্পটা শোনার পরেও সন্দেহ গেল না লোকটার। বলল, একজন মিস লেসিংকে চেনে। যে লোকটা দুদিন থেকে চলে গেছে তার নাম-ঠিকানা জানার জন্যে চাপাচাপি করতে লাগল কিশোর। কিছুতেই তাকে নিরস্ত করতে না পেরে রেগেমেগে শেষে গিয়ে পেছনের ঘর থেকে কতগুলো কাগজপত্র নিয়ে এল লোকটা।

একটা অফিশিয়াল ফর্ম রয়েছে ফাইলে, যেটা সরকারের কাছে জমা দেয় কর্মচারীরা। নাম আছে, সোশাল সিকিউরিটি নাম্বার আছে। জ্যাক ব্রাউন নামে ফর্ম পূরণ করেছে। আরেকটা কাগজ দেখাল দোকানদার, ওটাতে নিজের হাতে নাম ঠিকানা লিখেছে ব্রাউন।

টাকা নিয়ে যায়নি, লোকটা বলল। যে দুদিন কাজ করেছে, তার চেক ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

ফেরত এসেছে?

না।

এই ব্রাউন লোকটা দেখতে কেমন? রোগাপাতলা, কান ঢেকে ফেলা লম্বা। চুল। তাই না?

না। বেঁটে। পেটমোটা, হোঁকাই বলা চলে। ছোট করে হাঁটা কালো চুল। কোকড়া। দেখ, আমার এসব পছন্দ হচ্ছে না

আর একটা কথা, হাত তুলল কিশোর। টেডি বিয়ারটা কোথায় পেয়েছিলেন? আপনি তৈরি করেননি, তাই না?

না। একজন ডিলারের কাছ থেকে কিনেছি। এইচ. কে. ইমপোর্টারস।

 সেটা মিসেস. লেসিংকে দিয়েছিলেন?

আর সহ্য করল না দোকানদার। বেরোও!

দোকান থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। বেরোনোর আগে লক্ষ্য করল, রিসিভার তুলে ডায়াল করছে লোকটা।

পুলিশকে ফোন করছে, অনুমান করল মুসা।

শুনলই না যেন কিশোর। মোড়ের কাছে পৌঁছল। মেরুন রঙের একটা অডি গাড়িকে দেখল সরে যাচ্ছে। রাস্তা পেরিয়ে অন্য পাশে এল ওরা। রোলস রয়েস। নিয়ে যেখানে অপেক্ষা করছে হ্যানসন।

কিশোর বলল, ফারের একটা পোশাক কিনেছিলেন মিস লেসিং। সেই সাথে গিয়েছিল মিংকের ভালুকটা। তিনি ইউরোপে চলে গেলে ভালুকটা পেয়েছিল ডলি। কিংবা হয়ত চেয়েছিল, দিয়ে দিয়েছেন মিস লেসিং। বিনে পয়সায় পেয়েছেন তিনি। ওটা। খেলনা দিয়ে কি করবেন? মেয়েটা যখন চেয়েছে, দিয়েই দিই, এরকম ভেবেই হয়ত দিয়েছেন। এইবার আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে দোকানদারের অলস কর্মচারীকে।

ঠিকানাটা মনে আছে তো? জিজ্ঞেস করল রবিন। যদিও জানে কিশোর। পাশা একবার কোন জিনিস পড়লে সহজে ভোলে না।

আছে। সান্তা মনিকার একটা গলিতে। একটা অ্যাপার্টমেন্ট নাম্বার রয়েছে। তার মানে কোন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিঙে তার বাসা।

নামটাও বানিয়ে লিখতে পারে, আশাবাদী হতে পারছে না মুসা, ঠিকানাটাও। অহেতুক গিয়ে ঘুরে আসব তাহলে।

হাসল কিশোর। একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। বেতনের চেক পাঠিয়েছিল দোকানদার। সেটা ফেরত আসেনি। তারমানে সান্তা মনিকার ওই ঠিকানায় কেউ আছে যে ওটা গ্রহণ করেছে। হাত নেড়ে বলল, এখন আমাদের কাজ, চেকটা যে নিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করা। হয়ত এর ওপর নির্ভর করছে ডলির বাঁচামরা!

.

১৫.

 বাড়িটা খুঁজে বের করতে অসুবিধে হল না। সাগরের তীর থেকে দশ ব্লক দূরে। একটা অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ির নিচতলায় জ্যাক ব্রাউনের ঘর।

দ্বিধা করল মুসা। কি করব?

বেল বাজাব, কিশোর বলল।

কিন্তু কলিং বেলের জবাব দিল না কেউ।

মিনিট দুই অপেক্ষা করে জানালার কাছে নাক চেপে ধরল রবিন। বই আর, কাগজপত্রে ঠাসা, গাদাগাদি করে রয়েছে মেঝেতে, পুরানো আসবাবপত্রের ওপরে। ছবির ফিল্ম রাখার কয়েকটা ক্যানূ পড়ে রয়েছে একধারে। বুককেসের ওপর একটা মানুষের খুলি। খুলির ওপরের দেয়ালে একটা পোস্টার। কালচে রঙের একটা কিম্ভুত জীবের ছবি, মুখটা সবুজ। কবর থেকে বেরিয়ে আসছে।

 থার্ড অ্যানুয়াল কনভেনশন! বিড়বিড় করে পড়ল রবিন, পোস্টারের ওপরের লেখাটা। হরর ফ্যান ক্লাব অভ নর্থ আমেরিকা। আগস্ট ফোরটিন অ্যাণ্ড ফিফটিন, সান্তা মনিকা সিভিক অডিটরিয়াম!

ফিরে তাকিয়ে বলল, ঠিক জায়গায় এসেছি আমরা!

অ্যাই, কি করছ? সামনের বাগানের কাছ থেকে বলে উঠল একটা কণ্ঠ।

 ফিরে তাকাল ছেলেরা। লাল চুল এক মহিলা। মিস্টার রিভসকে খুঁজছ, না? লোকটার ম্যানেজার হবে মনে হয় মহিলা।

তার বন্ধু জ্যাক ব্রাউনকে হলেও চলবে, কিশোর, বলল। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

ব্রাউন? চিনি না। তবে ওই নামটা নিজের লেটার বক্সে কদিন ধরে লাগিয়ে রেখেছেন মিস্টার রিভস। এখন তো বাড়ি নেই। ছুটিতে বেড়াতে গেছেন। কিছু বলতে হবে?

না। থ্যাঙ্ক ইউ। পকেট থেকে নোটবুক বের করল কিশোর। ব্রাউনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না?

মাথা নাড়ল মহিলা। না। কখনও দেখিনি। হতে পারে, কিছু দিন ছিল মিস্টার রিভসের সঙ্গে। ওই মিস্টার কেইনের মত।

 মিস্টার কেইন? উত্তেজনায় কাঁপতে আরম্ভ করেছে কিশোর। লম্বা চুলওয়ালা। সেই মানুষটা? চুলে কান ঢেকে যায় যে?

হ্যাঁ। ডেগি কেইন।

ডেগি!

হ্যাঁ। আমার কাজ আছে। মিস্টার রিভসকে কিছু বলতে হবে?

খসখস করে নোটবুকে ফোন নম্বর আর ঠিকানা লিখে বাড়িয়ে দিয়ে কিশোর বলল, আমার কাছে কিছু পুরানো সিনেমার পোস্টার আছে। কিনতে চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবেন মিস্টার রিভসকে। তার অফিসের নম্বর আছে?

না, নেই, এখন কোথাও কাজ করেন না। কয়েক হপ্তা আগে একটা স্টুডিওতে। করতেন, চোখে কৌতূহল নিয়ে কিশোরের দিকে তাকাল মহিলা। তাহলে তুমিও ওদেরই একজন?

মানে?

উদ্ভট জিনিস সংগ্রহ কর? মিস্টার রিভসের মত কি যে আজেবাজে জিনিস যোগাড় করে! ওসব কিনে পয়সা খরচ করে ফেলে। অনেক সময় না খেয়েও থাকে। তোমার বয়েস কম। ওসবে জড়িয়ে অহেতুক জীবনটা নষ্ট কোরো না।

বাড়ির ভেতরে টেলিফোন বাজল। জবাব দিতে গেল মহিলা।

রিভস তাহলে একজন সংগ্রাহক, কিশোর বলল। আগেই বোঝা উচিত ছিল। ডেগি কেইন ছিল কিছুদিন ওর সঙ্গে। আর কেইন যদি রোজারের ছদ্মনাম হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে অগ্রগতি হচ্ছে আমাদের।

পুলিসকে জানাব? মুসার প্রশ্ন। নাকি বসে থাকব। রিভস ফিরতে পারে। সংগ্রাহকরা তাদের জিনিসের জন্যে ফিরে আসে, তাই না?

আসে। ইউ অক্ষরের আকৃতিতে তৈরি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। ঢোকার জায়গা খুজছে মনে হয়। এগিয়ে গিয়ে একটা দরজার ফাঁকে সবে চোখ রাখতে যাবে, এই সময় একটা লোককে আসতে দেখল।

মুসা বলল, আরে! ওই তো, মিস্টার রিভস!

কালো কোঁকড়া চুলওয়ালা একজন লোক, রোজারের সঙ্গে ছিল ডলির। পার্টিতে। তিন গোয়েন্দাকে দেখেই চিনল। থমকে গেল মুহূর্তের জন্যে। তারপর এগিয়ে এল। বাহ, আবার দেখা হয়ে গেল। তা কি জন্যে এসেছ?

 ডলি ডিকসনের জন্যে, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। কিংবা বলতে পারেন। বেটসি আরিয়াগোর জন্যে।

ওর..ওর কি হলো?

হারিয়ে গেছে। আপনি ভাল করেই জানেন। ইয়ান রোজার নামের লোকটা…

রোজার? ওর আবার কি হল?

ওর নাম রোজার নয়। কোথায় আছে দয়া করে যদি বলেন গিয়ে কথা বলে। দেখতে পারি। আর

কিশোরের এসব নরম কথা ভাল লাগল না মুসার। খপ করে লোকটার হাত চেপে ধরে বলল, লোকটা কোথায়? ডলি ডিকসন কোথায়? ভাল চাইলে জলদি বলুন!,

কি বলছ তাই তো বুঝতে পারছি না। ঘামতে শুরু করেছে লোকটা। দেখো, হাত ছাড় বলছি। নইলে পুলিশ ডাকব।

ডাকুন। আমরা তো সেটাই চাই।

ইয়ে…মানে… রিভসের কতকতে চোখে অস্বস্তি দেখা দিল। শোন… হাতটা ছাড় না, বলছি। ডলির ট্যালেন্ট আছে। কিছুদিন ট্রেনিং দিলেই হয়ে যাবে। সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। আচমকা কণ্ঠস্বর বদলে গেল লোকটার। বলল, এসো, দেখাচ্ছি একটা জিনিস।

একে অন্যের দিকে তাকাল ছেলেরা।

পকেট থেকে চাবি বের করে গ্যারেজের দরজা খুলল রিভস। ওই দেখ! এমন ভঙ্গিতে বলল লোকটা। যেন পবিত্র কোন কিছু সম্বন্ধে বলছে। দেখে চোখ সার্থক কর। পুরানো দুর্গে যে জোম্বি ঢুকেছিল ব্লাড হারভেস্ট ছবিতে, মনে আছে? তারই দৃশ্য। আর ওই কফিনটা ভিলেজ অভ কার্ড থেকে নেয়া। ওটা লন চ্যানি অভিনীত ফ্যান্টম অভ অপেরা থেকে…

এ তো হরর ছবির একটা মিউজিয়ম! হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে রবিন।

কিশোর তাকিয়ে রয়েছে বোরিস কারলফ অভিনীত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ছবির পোস্টারের দিকে। একভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিভসকে কিছু বলার জন্যে ঘুরেই স্থির হয়ে গেল কিশোর। নেই লোকটা। ওদেরকে কায়দা করে এখানে ঢুকিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে।

মিস্টার রিভস? চেঁচিয়ে ডাকল সে।

জবাবে ঝটকা দিয়ে লেগে গেল গ্যারেজের দরজা। অন্ধকার হয়ে গেল ঘর।

খাইছে! অ্যাইই! চিৎকার করে ডাকল মুসা।

বাইরে তালা লাগানোর শব্দ হল। চেঁচামেচি জুড়ে দিল তিন গোয়েন্দা। লাভ হল না। কেউ সাড়া দিল না। আটকা পড়ল ওরা।

.

 কয়েক মিনিট চিৎকার চেঁচামেচি করে ক্ষান্ত দিল ছেলেরা।

হ্যানসন কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? মুসা বলল। বেশি দেরি দেখলে নিশ্চয় খুঁজতে আসবে আমাদের। কিন্তু গ্যারেজে দেখার কথা কি ভাববে?

ওর জন্যে বসে থাকতে পারি না আমরা, কিশোর বলল। রিভস তার সঙ্গীকে নিয়ে ফিরে আসতে পারে। পিস্তল-টিস্তল নিয়ে।

তাই তো!

বোরোনোর চেষ্টা করতে হবে আমাদের। জানালা থাকতে পারে। শেষ মাথায়।

যদি না থাকে? রবিনের প্রশ্ন।

আবার এসে দরজায় ধাক্কা দেব আর চিৎকার করতে থাকব।

অনেক লম্বা ঘরটা। নানা রকম উদ্ভট জিনিসে বোঝাই। হরর ছবি তৈরি করার মালমশলার একটা গুদাম যেন। গন্ধটাও পুরানো কবরস্থানের কফিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেক দিন পর পুরানো কবর খুললে যেমন বোটকা গন্ধ বেরোয়, অনেকটা তেমনি।

নরম কিছুতে পা পড়তে কিচ করে উঠল ওটা।

বাবারে! ভূত! বলে চিৎকার করে উঠল মুসা।

দূর! কি কর, ও তো ইঁদুর! রবিন বলল।

অনেক খোঁজাখুঁজি করল ওরা। অবশেষে দেয়ালের এক জায়গায় দেখল হার্ডবোর্ড লাগানো রয়েছে। একধার ধরে হ্যাঁচকা টান মারল মুসা। নড়ে উঠল, বোর্ডটা। আরেকটু জোরে. টানতেই খুলে চলে এল হাতে। বেরিয়ে পড়ল একটা জানালা।

ঠেলা দিতেই খুলে গেল পাল্লা। মাথা বের করল মুসা। পাশে তাকাতেই চোখে পড়ল পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন পুলিশ অফিসার।

বেরিয়ে এস, বলল অফিসার। শয়তানীর চেষ্টা করবে না একদম। এস।

 মুসা বেরোল। তারপর বেরোল রবিন। সব শেষে কিশোর।

অফিসারের কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে লালচুল মহিলা। বলল, হ্যাঁ, এই ছেলেগুলোই। মিস্টার রিভসকে খুঁজতে এসেছিল। একটু পরে গ্যারেজে চেঁচামেচি শুনলাম। ভাবলাম ওরাই হবে।

আমাদের আটকে রেখে পালিয়েছে হ্যারিসন রিভস, অভিযোগের সুরে অফিসারকে বলল কিশোর।

তাই? পাথরের মত কঠিন হয়ে আছে অফিসারের মুখ।

কদিন ধরেই মিস্টার রিভস বাড়িতে নেই, মহিলা বলল। কি করে আটকাল। তোমাদের?

শান্ত কণ্ঠে বিশেষ একটা ভঙ্গি নিয়ে কিশোর বলতে লাগল, একটা মেয়ে। হারিয়ে গেছে। ওর নাম ডালিয়া ডিকসন। রিভস আর তার এক সঙ্গী শেষবার দেখা করেছে মেয়েটার সঙ্গে। গতকাল, চেশায়ার স্কোয়্যারে। আমাদের সন্দেহ, ওরা দুজনই মেয়েটাকে নিয়ে গেছে।

বড় বেশি টিভি দেখ তুমি, গম্ভীর কণ্ঠে বলল অফিসার।

 বিশ্বাস না করলে পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

বাড়ির কোণ ঘুরে এগিয়ে এল দুজন লোক। একজন বয়স্ক। পরনে ইউনিফর্ম। নেই, কিন্তু ভাবভঙ্গি আর পুলিশ অফিসারের সম্মান দেখানো থেকেই আন্দাজ করা গেল, ওই দুজনও পুলিশের লোক। সাদা পোশাকে এসেছে। ডিটেকটিভ।

কিশোরের কথা মন দিয়ে শুনল ওরা। তারপর বয়স্ক লোকটা ওদেরকে ওখানে থাকতে বলে চলে গেল। ইউনিফর্ম পরা অফিসার লাল চুল মহিলার সঙ্গে বাড়ির ভেতরে গেল, নিশ্চিত হয়ে আসার জন্যে যে রিভস বাড়িতে নেই। ফিরে এল খানিক বাদেই। তিন গোয়েন্দাকে তিরস্কার করে বলল সিনিয়র অফিসার, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো উচিত নয়। তিন গোয়েন্দার নাম-ঠিকানা লিখে নিতে লাগল।

উঁকিঝুঁকি দিতে আরম্ভ করেছে কৌতূহলী পড়শীরা।

অ্যাই! ট্রাইসাইকেলে বসা একজন জিজ্ঞেস করল পুলিশকে, চোর ধরলেন। নাকি?

না। গম্ভীর হয়ে জবাব দিল অফিসার। আপনারা যান।

তিন গোয়েন্দাকে ছেড়ে দেয়া হলো। দ্রুতপায়ে ওখান থেকে সরে চলে এল। ওরা। আরও লোক জড়ো হওয়ার আগেই। অপমানকর কথা শুনতে ভাল লাগে না। অর্ধেক পথ আসতেই চোখে পড়ল, মোড়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে মেরুন অডি গাড়ি, সেই গাড়িটা, যেটা আরও দুবার দেখেছে। ওটার পাশে চলে এল তিন গোয়েন্দা। মুখ ফিরিয়ে তাকাল আরোহী, যেন প্যাসেঞ্জার সীটে পড়ে থাকা কিছু দেখছে।

এই! কিশোর বলল ফিসফিস করে।

 কী? রবিন জানতে চাইল।

পেছনে তাকাবে না। কোন দিকেই তাকাবে না। গাড়ির ভেতরে যে লোকটা বসে আছে, এখান থেকে সে রিভসের বাড়ির ওপর চোখ রাখতে পারে। রেখেছিল। বলেই মনে হয় আমার।

তাতে কি? মুসার প্রশ্ন। অনেকেই তো এখন রিভসের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।

এই গাড়িটা আজকে আরও দেখেছি। আর ভেতরের লোকটা মিস্টার জেনসেন, পিজা শ্যাকের ম্যানেজার। আমাদেরকে না দেখার ভান করছে। ও এখানে কি করছে?

<

Super User