নকল কিশোর –- রকিব হাসান
প্রথম প্রকাশ ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২

আরে, গেল কোথায়! এখানেই তো ছিল! চেঁচিয়ে উঠল মুসা আমান।

ঝট করে তার দিকে তাকাল কিশোর আর রবিন। মোবাইল হোমে তিন গোয়েন্দার গোপন হেডকোয়ার্টারে রয়েছে ওরা।

কি গেল কোথায়? জানতে চাইল রবিন।

কড়া চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। কেন, জান না?

নিরীহ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন।

কি জানি না? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

দেখ, বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা। সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে আমার। এসব রসিকতা ভাল্লাগছে না! খেয়ে ফেলে থাকলে বল।

আমরা তোমার খাবার খেতে যাব কোন দুঃখে? আর তোমার মত খাই খাই করি নাকি?

সত্যি বলছ খাওনি?

না।

 সরিয়েও রাখনি, মজা করার জন্যে?

 না, এবার জবাব দিল রবিন। আমরা তো আমাদের কাজেই ব্যস্ত।

অবাক কাণ্ড! তাহলে গেল কোথায়?

দেখ, কোথায় রেখেছ, কিশোর বলল। একখানে রেখে আরেকখানে খুঁজলে পাবে কি করে? যাকগে, যা বলছিলাম, কিছু একটা করা দরকার আমাদের। রিক্রিয়েশনের জন্যে। ইয়ার্ডে কাজ করতে করতে হাড় কালো হয়ে গেছে আমার। আর ভাল্লাগে না। চল, কাল কোনখান থেকে ঘুরে আসি। কোথায় যাওয়া যায়? ডিজনিল্যাণ্ডে আর না, অনেক হয়েছে। এক কাজ করি, চল, ম্যাজিক মাউনটেইনে যাই। কখনও যাইনি।

আমিও না, মুসা বলল। জায়গাটা কেমন, তা-ও জানি না। রবিন, জান?

শুনেছি তো ভাল। ডিজনিল্যাণ্ডের ধারেকাছেও লাগে না, তবে ভাল। অনেক মজার মজার জিনিস আছে, চড়ার ব্যবস্থা। আসলে বাচ্চাদেরই বেশি ভাল লাগবে। এই যেমন ফেরিস হুইল, চাড রাইড, এসব আর কি।

— হুঁ, মাথা দোলাল মুসা। বাচ্চাদেরই। তবে আমারও খারাপ লাগবে না। অন্তত বাগান সাফ আর গ্যারেজ পরিষ্কারের চেয়ে তো ভাল।

আর মেরিচাচীর মরচে পড়া লোহার চেয়ার ঘষার চেয়ে, যোগ করল কিশোর। তাহলে কি ঠিক হল? ওখানেই যাচ্ছি আমরা। রোলস রয়েসে চেপে যাব। অনেক দিন ওটাতে চড়ি না। হ্যানসনকে ফোন করে দেব নিয়ে আসতে।

ভালই হবে, হেসে বলল রবিন। ওটা থেকে নামতে দেখলে লোকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। ভাবে কোনও কোটিপতির ছেলে। বন্ধু বান্ধব নিয়ে হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। হাহ হাহ।

যাওয়ার ব্যবস্থা তো হল, অধৈর্য হয়ে বলল মুসা। এখন আমার খাওয়ার কি হবে? খিদেয় তো পেট জ্বলে গেল। সত্যিই তোমরা দেখনি?

আবার সেই এক কথা, হাত নাড়ল কিশোর। তুমি আর রবিন তো তখন ওয়ার্কশপে কাজ করছিলে। ওখানে রাখনি তো? চল, আমিই দেখছি। ওটা বের না করলে আর শান্তিতে থাকতে দেবে না আমাদের।

দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ওয়ার্কশপে বেরিয়ে এল ওরা। রবিন খুঁজে বের করল ওটা, কিংবা বলা যায় তাকাতেই চোখে পড়ল। ওয়ার্কবেঞ্চের ওপর পড়ে রয়েছে লাঞ্চ প্যাকেট। বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল মুসা। একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে।

ওই তো, রবিন বলল। নিজেই ফেলে গেছ। আর এদিকে আমাদের মাথা খারাপ করছ।

ব্যাগটা তুলে নিল মুসা। ভেতরে ছেঁড়া প্যাকেট কে জানি খেয়ে ফেলেছে! কে? রবিনের দিকে তাকাল সে।

তুমিই হয়ত খেয়েছ, কিশোর বলল। তারপর ভুলে বসে আছ।

আমি? খেলে ভুলে যাব, কথা হল একটা? তাছাড়া পেটের তো ভোলার কথা নয়।

তাহলে ইঁদুর, ছেঁড়া কাগজটা দেখতে দেখতে রবিন বলল। ইঁদুরে সবই খায়। তোমার চেয়ে রাক্ষস।

 ইঁদুর? আমার বিশ্বাস হয় না। স্যালভিজ ইয়ার্ডে ইঁদুর থাকলে ওটার ঘুম হারাম করে ছাড়তেন মেরিচাচী। সেই সঙ্গে নিজের ঘুমও। না মারা পর্যন্ত। মনে নেই গত বছর…

তা আছে, হেসে বলল কিশোর। ওই একটা চোখে পড়েছিল বলে। শেষে ওটাকেই মেরেছে, না অন্যটাকে, সে ব্যাপারেও শিওর নই আমি। যত খুঁতখুতেই হোক, স্যালভিজ ইয়ার্ডের মত একটা জায়গা থেকে ইঁদুর নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার সাধ্য হবে না। ইঁদুর এমন এক জাত একেবারে শেষ করার ক্ষমতা কারও নেই।

এখন তাহলে কি করব? মাথায় হাত দিয়ে বসার অবস্থা মুসার। পেটের মধ্যেই তো ইঁদুর ঢুকে বসে আছে। তিনি

হেসে ফেলল কিশোর। আজ কিছু খাওনি নাকি? এমন করছ। চল, ফ্রিজে কিছু থাকতে পারে। না থাকলে মেরিচাচীকে বললেই রেডি করে দেবে।

ইয়ার্ডের অফিসের দিকে এগোতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল কিশোর। গেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাস্তা থেকে গেটে ঢোকার মাঝখানে এক চিলতে জায়গা, সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা সবুজ, মার্সিডিজ। কেউ বেরোচ্ছে না ওটা থেকে।

এই, ওই গাড়িটা আগে দেখেছ?

মুসা আর রবিনও তাকাল। মাথা নাড়ল দুজনেই।

আস্তে করে ওখানে এসে দাঁড়িয়ে গেল, কিশোর বলল। দেখলাম।

তাতে কি? মুসার প্রশ্ন। ওখানে কোনও গাড়ি থামতে পারে না নাকি? হয়ত ইয়ার্ডে ঢুকবে, কাস্টোমার।

হয়ত, মাথা দোলাল কিশোর। কিন্তু তাহলে কেউ নামছে না কেন? আজ সকালেও গেটের পাশ দিয়ে যেতে দেখেছি গাড়িটাকে। তখন থামেনি। খুব আস্তে আস্তে চলছিল।

কিশোর, বলে উঠল রবিন। এখন মনে পড়েছে, আমিও দেখেছি! পেছনের বেড়ার কাছে, রাস্তায়। সাইকেল নিয়ে যখন আসছিলাম। এই ঘণ্টাখানেক আগে।

ওরাই হয়ত আমার লাঞ্চ চুরি করেছে! মুসা বলল।

 তা তো নিশ্চয়, টিটকারির ভঙ্গিতে বলল রবিন। ইন্টারন্যাশনাল ফুড থিভস। তোমার কয়েকটা স্যাণ্ডউইচ চুরি না করলে কি ওদের চলে?

তোমার এই খাবারের চিন্তা মাথা থেকে নামাও তো, বিরক্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বলাই তো হল তুমি ভুলে না খেয়ে থাকলে ইঁদুরে খেয়েছে। ওই গাড়িটা কি চায় দেখা দরকার।

রবিন হাসল। হয়ত আরেক প্যাকেট লাঞ্চ চুরির সুযোগ খুঁজছে।

মনে হয় কিছু চায়, রবিনের কথা যেন শুনতেই পেল না কিশোর। দেখি।

রহস্যের গন্ধ পেয়েছে কিশোর, বুঝতে পারল অন্য দুজন। কি করে জানি পেয়ে যায় সে, অনেকবার দেখেছে রবিন আর মুসা। কখনও ভুল করে না। এখনও সেরকমই আচরণ করছে গোয়েন্দাপ্রধান।

মুসা, ইয়ার্ডের পেছনে চলে যাও, জরুরী কণ্ঠে বলল কিশোর। লুকিয়ে থেকে গাড়িটার ওপর চোখ রাখ। লাল কুকুর চার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি আমি আর রবিন। বেড়ার চারপাশে চক্কর দিয়ে আসব। রবিন, তুমি বাঁয়ে যাও, আমি ডানে যাচ্ছি। এতে সব দিক থেকেই নজর রাখতে পারব। মুসা, চলে যাও।

মাথা ঝাঁকাল মুসা। দেখল, তিন গোয়েন্দার গোপন প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে তার বন্ধুরা। সে-ও রওনা হল। জঞ্জালের স্তূপের আড়ালে আড়ালে চলে এল মেইন গেটের কাছে। বেড়ার আড়ালে থেকেই উঁকি দিয়ে দেখল, মার্সিডিজটা আগের জায়গাতেই রয়েছে। ভেতরে দুজন লোক। চট করে মাথা নিচু করে ফেলল সে। হামাগুড়ি দিয়ে এগোল খোলা গেটের দিকে। উপুড় হয়ে পড়ে থেকেই ঘুরে তাকাল আবার।

এই যে, কিছু হারিয়েছ? সাহায্য করব?

ঢোক গিলল মুসা। গাট্টাগোট্টা একজন লোক। রোদে পোড়া চামড়া। হালকা স্যুট। তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাদামী কোঁকড়া চুল লোকটার। নীল চোখ। মুখে মোলায়েম হাসি। ইয়ার্ডের ভেতরে মুসাকে ওভাবে হামাগুড়ি দিতে দেখে যেন খুব মজা পাচ্ছে।

আমি…আমি…, নিজেকে বোকা বোকা লাগছে মুসার। ইয়ে-বল হারিয়ে ফেলেছি। সেটাই…খুঁ-খুঁজছি…

এদিকে তো কোনও বল দেখলাম না, লোকটা বলল।

তাহলে অন্য কোনও দিকে চলে গেছে হয়ত, ভোঁতা গলায় বলে উঠে দাঁড়াল মুসা।

হ্যাঁ, তা হতে পারে। লোকটার হাতে একটা লোক্যাল ম্যাপ। সেটা দেখিয়ে মুসাকে বলল, সাহায্য করবে একটু? হারিয়ে গেছি আমরা।

সবুজ মার্সিডিজের দরজা খুলে গেল। ভেতরে আরেকজন লোককে দেখতে পেল মুসা। সেদিকে ফিরে মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিত করল রোদেপোড়া লোকটা, বোঝাতে চাইল দুজনেই হারিয়েছে। বলল, সেই তখন থেকে ঘুরে মরছি। বার বার একই জায়গায় ফিরে আসছি। পুরনো মিশনারিটা খুঁজছি আমরা।

লোকটার কথায় বিদেশী টান। ইংরেজিই বলছে তবে ইংরেজ নয় সেটা স্পষ্ট। তাহলে এই ব্যাপার! ভাবল সে। দুজন পথ হারানো টুরিস্ট। কিশোর পাশার রহস্য খোঁজায় তাহলে শুরুতেই ছাই পড়ল।

নিশ্চয় করব। ম্যাপটা নিয়ে দেখিয়ে দিল মুসা, কোস্ট হাইওয়ের কোন জায়গায় রয়েছে স্প্যানিশ মিশনটা। গোলমেলে রাস্তা। খুঁজে বের করাটা একটু জটিলই।

ঠিকই, মাথা ঝাঁকাল লোকটা। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।

গাড়িতে গিয়ে উঠল লোকটা। চলতে শুরু করল সবুজ মার্সিডিজ। দৌড়ে এল কিশোর আর রবিন। গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোয়েন্দাপ্রধান।

টুরিস্ট, তিক্ত কণ্ঠে বলল মুসা। লোকটার কাছে কিভাবে ধরা পড়ে গিয়েছিল জানাল। ইংরেজিই বলে, তবে অদ্ভুত টান।

 পথ হারিয়েছে? হতাশ গলায় বলল কিশোর। আর কিছু না?

 আর কি হবে? হাতে কোনও কেস নেই আমাদের যে পেছনে লাগবে।

গম্ভীর হয়ে আছে কিশোর। চিন্তিত। পথ হারাতেই পারে, যেহেতু বিদেশী, কিন্তু—

এর মাঝে আবার কিন্তু দেখলে কোথায়? ওরা পথ হারিয়েছে। ব্যস।

বাদ দাও, হাত নাড়ল রবিন। চল, ম্যাজিক মাউনটেইনে কখন কিভাবে যাব সেই আলোচনা করিগে।

 হ্যাঁ, চল। মনে করিয়ে দিল মুসা। তবে তার আগে আমার খাবারেরও ব্যবস্থা কর। বড্ড খিদে পেয়েছে।

.

০২.

পরদিন সকাল সকাল উঠল রবিন। হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পড়ে তাড়াহুড়ো করে এসে রান্নাঘরে ঢুকল। গপগপ করে নাস্তা গিলছে, এই সময় খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন তার বাবা।

কি ব্যাপার? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার মিলফোর্ড। জরুরী তদন্ত আছে মনে হয়?

না, বাবা। আজ আমরা ম্যাজিক মাউনটেইনে যাচ্ছি তো, তাই। হ্যানসনকে রোলস রয়েস নিয়ে আসতে বলা হয়ে গেছে। সময়মত হাজির হয়ে যাবে সে। ব্রিটিশ শোফার। খুব সময় জ্ঞান। তার কাছে লজ্জা পেতে চাই না।

ও, শিস দিয়ে উঠলেন মিস্টার মিলফোর্ড। তিনজন সম্ভ্রান্ত বিশিষ্ট ভদ্রলোক। ভাল।

 একেবারেই কি অস্বীকার করতে চাও?

আরে না না, হাসলেন মিস্টার মিলফোর্ড। আসলেই তোমরা ভদ্র। রোলস রয়েসে চড়ে যাচ্ছ তো, সেজন্যেই সম্ভ্রান্ত আর বিশিষ্ট শব্দ দুটো যোগ করলাম।

বাবা, দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই। ডিনারের সময় ফিরব, মাকে বোলো। দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এল রবিন।

রোদ উঠছে। সকালের প্রায় নির্জন রাস্তা দিয়ে দ্রুতবেগে সাইকেল চালাল। সে। ইয়ার্ডের গেট দিয়ে ঢোকার সময়ই দেখল অফিসের সামনে বারান্দায় একটা টুলে বসে রয়েছে মুসা। তাকিয়ে রয়েছে কালো বিশাল রোলস রয়েসটার দিকে। গাড়ি বটে একখান। মনে মনে আরেকবার তারিফ না করে পারল না রবিন।

 গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে লম্বা, ফিটফাট শোফারের পোশাক পরা একজন লোক। হ্যানসন। রবিনকে দেখে হাসল। গুড মর্নিং, রবিন।

গুড মর্নিং, জবাব দিল রবিন।

নতুন কোনও কেস?

 নাহ। কেন, কিশোর বলেনি?

কথা হয়নি।

ও। ম্যাজিক মাউনটেইনে যাচ্ছি আমরা।

বেড়াতে? চমৎকার জায়গা।

 বারান্দা থেকে নেমে এল মুসা। রবিনকে বলল, চল, ওঠ।

গাড়িতে উঠল দুজনে।

কি ব্যাপার, কিশোর আসছে না? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন। কোথায় ও?

হেডকোয়ার্টারে। কি জানি করছে। চলে আসবে এখনি।

কিছুক্ষণ বসে থেকে অস্থির হয়ে উঠল রবিন। চল তো দেখি। নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। মুসাও নামল। রবিনের পেছন পেছন এসে ঢুকল দুই সুড়ঙ্গে।

ট্রেলারে ঢুকে দেখল, ডেস্কের ওপাশে বসে রয়েছে কিশোর। অনেকগুলো রঙিন ব্রশিয়ার ছড়ানো টেবিলে।

হ্যানসন বসে আছে, কিশোর, রবিন বলল।

এই হয়ে গেছে। আর একটু, মুখ না তুলেই জবাব দিল গোয়েন্দাপ্রধান। আরও কয়েক মিনিট পরে সন্তুষ্ট হয়ে হেলান দিল চেয়ারে, হ্যাঁ, হয়েছে। চলবে।

কি চলবে? মুসা জানতে চাইল।

আমাদের এক্সকারশনের প্ল্যান করলাম, কিশোর জানাল। ম্যাজিক মাউনটেইনের একটা ম্যাপ জোগাড় করেছি। সবচেয়ে কম সময়ে কত বেশি মেশিনে চড়তে পারব হিসেব করলাম। কোনও মেশিনে বেশি মজা পেলে দুবার করেও যাতে চড়তে পারি সেই সময়ও রেখেছি। আবার কোনটা যদি হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়, কিংবা বাতাসের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দেরি করিয়ে দেয়…দিতেই পারে, তাই না? কতটা সময় নষ্ট হবে তাতে সেটাও ধরেছি…।

গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিশোর, মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার মাথায় সত্যি ছিট আছে। চল, ওঠ তো।

রবিন বলল, এতসব ভেবে কি লাভ? সময় যা লাগার লাগবেই।

কি লাভ? ভ্রূকুটি করল কিশোর। হিসেব ছাড়া কিছুই চলে না…

আরে বাবা, দুহাত তুলল মুসা, ওখানে কাজ করতে যাচ্ছি না আমরা। যাচ্ছি নিছক মজা করতে। আনন্দ। তার আবার হিসেব কি?

বেশ, মুখ গোমড়া করে ফেলল কিশোর। আমার প্ল্যান যদি তোমার পছন্দ না হয়, বাদ দিতে পার।

টেবিলের কাগজগুলোর দিকে কয়েক সেকেণ্ড নীরবে তাকিয়ে রইল সে। এত কষ্ট করে অঙ্কগুলো করেছে। কাগজগুলো এক জায়গায় করে দলামোচড়া করে একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে ফেলে দিল ময়লা ফেলার ঝুড়িতে। রবিন আর মুসার মনে হল একটা জ্বালাতন থেকে মুক্তি মিলল, হাসি ফুটল মুখে। উঠে দাঁড়াল কিশোর। ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এল তিনজনে।

গাড়িতে উঠে নির্দেশ দিল কিশোর, ম্যাজিক মাউন-টেইনে যান।

ইয়েস, স্যার, হেসে বলল হ্যানসন। ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক, তবু সৌজন্য ভুলতে রাজি নয় খাঁটি ইংরেজ শোফার।

জায়গাটা রকি বীচের পুবে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে। শহর থেকে বেরিয়ে এসে কাউন্টি হাইওয়ে ধরে চলল বিশাল গাড়িটা। শুকনো, ধুলোময়, পাহাড়ের প্রথম ঢালটার কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস করল হ্যানসন, সত্যি বেড়াতে? না কোনও গোপন কেস?

নাহ, কেসটস না, হতাশ কণ্ঠে বলল কিশোর। বেড়াতেই এসেছি। কেন?

কারণ, অনুসরণ করা হচ্ছে আমাদেরকে।

অনুসরণ! প্রায় একই সঙ্গে বলল তিন কিশোর। মাথাগুলো ঘুরে যাচ্ছে পেছন দিকে।

কোথায়, হ্যানসন? রবিনের প্রশ্ন। আমি তো কোনও গাড়ি দেখছি না।

মোড়ের ওপাশে রয়েছে। স্যালভিজ ইয়ার্ড থেকে বেরোনোর পর পরই গাড়িটা চোখে পড়েছে আমার। তারপর থেকে লেগেই রয়েছে পিছে। একটা সবুজ মার্সিডিজ।

সবুজ মার্সিডিজ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। আপনি শিওর?

গাড়ি চালানো আমার পেশা, কিশোর, দৃঢ়কণ্ঠে বলল হ্যানসন। ওই যে, বেরিয়েছে! আসছে আবার।

পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। ভুল নেই। পিছু নিয়েছে সবুজ গাড়িটা।

সেই গাড়িটাই! মুসা বলল।

তারমানে, কিশোরের কণ্ঠে খুশির আমেজ। টুরিস্ট নয় লোকগুলো। কাল মিথ্যে কথা বলেছে। আমার ধারণাই ঠিক।

তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু কি চায় ওরা?

বুঝতে পারছি না।

কিন্তু বুঝতে হবে মনে হচ্ছে, রবিন বলল। গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ওরা।

 হ্যানসন, কিশোর বলল। ওদেরকে খসাতে পারবেন?

 চেষ্টা করতে পারি, শান্ত কণ্ঠে বলল হ্যানসন।

একসিলারেটরে চাপ বাড়াতেই লাফ দিয়ে আগে বাড়ল বিশাল গাড়িটা। প্রায় নিঃশব্দে। ইঞ্জিনের আওয়াজ এখনও তেমন বাড়েনি। পর্বতের ভেতরে ঢুকে পড়েছে ওরা এখন। সরু টু-লেন পথটা একেবেকে উঠে গেছে। এক পাশে গভীর খাত। স্টিয়ারিং চেপে ধরেছে হ্যানসন। দক্ষ হাতে মোড় ঘুরছে। একটু এদিক ওদিক হলেই গিয়ে খাতে পড়তে পারে গাড়ি।

গতি বেড়ে গেছে সবুজ মার্সিডিজের। রোলস রয়েসটাকে ধরার জন্যে তেড়ে আসছে ওটা। মোড় ঘোরার সময় গতি কমাচ্ছে না একটা গাড়িও, ফলে কর্কশ শব্দ করছে টায়ার। মাঝে মাঝেই বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার কিনারে চলে যাচ্ছে একপাশের চাকা। যত শক্তিশালী ইঞ্জিনই হোক, স্বাভাবিক ভাবেই বড় গাড়ির চলন ভারি হয় ছোটগুলোর চেয়ে। অতটা ক্ষিপ্র হতে পারে না। তাই কাছিয়ে আসতে থাকল মার্সিডিজটা।

ধরে ফেলেছে! চিৎকার করে বলল মুসা।

শান্ত রয়েছে হ্যানসন। এর চেয়ে জোরে চালানো উচিত না। সামনের পথের ওপর দৃষ্টি স্থির। তবে… থেমে গেল সে। সামনে একটা বাঁক। সেটা ঘুরতে ক্ষণিকের জন্যে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল মার্সিডিজটা। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল হ্যানসন। স্কিড করে এগিয়ে গেল গাড়ি। ডানে আর কয়েক ইঞ্চি সরলেই চাকা চলে যেত পথের বাইরে। বন বন করে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে সে। ব্রেক ছেড়ে দিয়ে। আবার একসিলারেটরে চাপ দিল। বায়ের একটা সরু কাঁচা রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে এল গাড়ি। ওকের বন আর চ্যাপারালের ঝোপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে পথটা।

গর্জন করতে করতে চলে গেল মার্সিডিজটা।

 দিয়েছেন খসিয়ে! প্রায় চিৎকার করে বলল রবিন।

আপাতত, হ্যানসন বলল। তবে শীঘ্রি ওরা বুঝে যাবে ফাঁকিটা। ফিরে আসবে আমাদেরকে ধরার জন্যে। জলদি পালাতে হবে আমাদের।

একসিলারেটর চেপে ধরল সে। তীব্র গতিতে ছুটল গাড়ি, ধুলো ওড়াতে ওড়াতে। খানিক পরই গতি কমিয়ে ফেলল হ্যানসন। ব্রেক কষে থামিয়ে দিল। গাড়ি। সরি। লাভ হল না। এতক্ষণে হতাশা প্রকাশ পেল তার কণ্ঠে।

কি হয়েছে দেখল ছেলেরা। সামনে পাহাড়ের দেয়াল। দুধারে পাহাড়। পথ। রুদ্ধ। একটা বক্স ক্যানিয়নে ঢুকেছে গাড়ি।

হাইওয়েতে ফিরে চলুন! নির্দেশ দিল কিশোর। জলদি! হয়ত এখনও বুঝতে পারেনি ওরা যে আমরা ফাঁকি দিয়েছি।

গাড়ি ঘোরাল হ্যানসন। ফিরে চলল মেইন রোডের দিকে।

তীক্ষ্ণ একটা মোড় ঘুরতেই সামনে পড়ল মার্সিডিজ। আরেকটু হলেই ওটার। গায়ে গুতো মেরে বসত রোলস রয়েস। ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়েই স্টিয়ারিং ঘোরাতে শুরু করল হ্যানসন, পাশ কেটে বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলল মার্সিডিজের দুই আরোহী। দুপাশ থেকে দরজা খুলে লাফিয়ে। নেমে এল। হাতে পিস্তল।

বেরোও! জলদি! গর্জে উঠল একজন।

সাবধানে রোলস রয়েস থেকে নেমে এল হ্যানসন আর তিন গোয়েন্দা।

দেখুন, হ্যানসন বলল। বুঝলাম না কেন আপনারা

 চুপ! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল লোকটা।

খপ করে বিস্মিত কিশোরের কব্জি চেপে ধরল আরেকজন। তার মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে একটা মোটা থলে নামিয়ে দিল মাথার ওপর। টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে তাকে মার্সিডিজে তোলা হল। পিস্তলের মুখে কিছুই করতে পারল না হ্যানসন, মুসা আর রবিন। নীরব অসহায় দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

খবরদার আমাদের পিছু নেবে না! শাসিয়ে বলল একজন, যদি বন্ধুর জীবন বাঁচাতে চাও। তোমরা গোলমাল করলে ওর বিপদ হবে।

চলতে শুরু করল মাসাজ। হারিয়ে গেল হাইওয়ের দিকে।

.

০৩.

চরকির মত পাক খেয়ে রোলস রয়েসের দিকে ঘুরল মুসা। আসুন, পিছু নেব!

না, মুসা! বলল রবিন আর হ্যানসন।

 ওদের দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। কিন্তু ওকে বাঁচাতে হবে তো!

তা তো হবেই, মুসার কাঁধে হাত রাখল হ্যানসন। কিন্তু ওদের পিছু নেয়া চলবে না। কিডন্যাপাররা বিপজ্জনক লোক।

ওদের পিছু নিলে কিশোরের ক্ষতি করতে পারে, রবিন বলল। তবে ওরা। কোন দিকে গেল সেটা আমাদের দেখা দরকার, যাতে পুলিশকে বলতে পারি। ওরা জানে না আমাদের গাড়িতে ফোন আছে। পুলিশকে সতর্ক করে দিতে পারব ভাবেনি। মুসা, জলদি চল। পাহাড়ের ওপরে গিয়ে দেখি। হ্যানসন, আপনি থানায় ফোন করুন। চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে পান কিনা দেখুন।

প্রায় ডাইভ দিয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকল হ্যানসন। রবিন: আর মুসা উঠতে শুরু করল ঢাল বেয়ে। তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে হাঁপাতে লাগল অল্পক্ষণেই। চূড়ায় যখন উঠল দরদর করে ঘামতে আরম্ভ করে দিয়েছে। হাইওয়ের দিকে তাকাল।

ওই যে! রবিন হাত তুলল।

দক্ষিণে যাচ্ছে! মুসাও দেখতে পেয়েছে। রকি বীচের দিকেই তো। এত আস্তে চলছে কেন?

কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে না হয়ত।

পুলিশ তাড়াতাড়ি করলে ওদেরকে ধরে ফেলতে পারবে। এস।

ঢাল বেয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে পা পিছলাল রবিন। গড়িয়ে নামল কিছুদূর। আবার উঠল। মুসা একবারও না পড়ে দৌড়ে নেমে চলেছে। রোলস রয়েসের কাছে পৌঁছে শুনল পুলিশকে মার্সিডিজের লাইসেন্স নম্বর আর লোক দুটোর চেহারার বর্ণনা জানাচ্ছে হ্যানসন।

চীফকে বলুন, মুসা বলল। দক্ষিণে রকি বীচের দিকে যাচ্ছে ওরা। তাড়াতাড়ি করলে সামনে দিয়ে এসে পথ আগলাতে পারবে।

মুসার কথাগুলোও পুলিশকে জানাল হ্যানসন। ওপাশের কথা শুনল। তারপর বলল, চীফ। আমরা আছি। আসুন।

ফোন রেখে দিয়ে ছেলেদের দিকে তাকাল সে। কিশোরকে নিয়ে গিয়ে কি করতে চায়? ওরা কে সত্যিই চেন না?

কালকের আগে দেখিইনি কখনও, জবাব দিল রবিন।

 কিচ্ছু জানি না আমরা! প্রায় ককিয়ে উঠল মুসা।

নিরাশ দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল ওরা।

.

ধীরে চলছে মার্সিডিজ। ধীরে ধীরে নিচে নামছে পথ। কাউন্টি হাইওয়ে ধরে চলেছে, অনুমান করল কিশোর। তার মানে রকি বীচের দিকে চলেছে। তাকে নিয়ে কি করতে চায় লোকগুলো? ওরা কারা? কোনদেশী লোক?

পেছনের সীটে ফেলে রাখা হয়েছে তাকে। বান মাছের মত শরীর মোচড়াল। সে। পিস্তলের নলের খোঁচা লাগল পাজরে। একজন তার কাছেই বসে রয়েছে।

চুপ করে থাক, আদেশ দিল লোকটা।

কথা বলার চেষ্টা করল কিশোর। প্রতিবাদ করতে চাইল। কথা বেরোল না মুখ দিয়ে, শুধু গোঁ গো শব্দ।

চুপ করতে বললাম না! ধমকে উঠল লোকটা। লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থাকবে, বড় বংশের ছেলের মত।

নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল লোকটা। কুৎসিত হাসি প্রতিধ্বনি তুলল বদ্ধ জায়গায়। অন্য লোকটা নীরবে গাড়ি চালাচ্ছে।

 কিন্তু আবার কথা বলার চেষ্টা করল কিশোর। তাকে নিয়ে কি করবে। লোকগুলো জিজ্ঞেস করতে চাইল। কিডন্যাপ লোকে একটা কারণেই সাধারণত করে। জিম্মি রেখে টাকা আদায়ের জন্যে। রাশেদ পাশার কাছে কি টাকা চাইবে! গোঙানি আর কুলকুচা করার মত এক ধরনের মিশ্র শব্দ বেরোল তার গলা থেকে। ছটফট করছে ডাঙায় ভোলা মাছের মত।

চুপ থাকতে বললাম না। বাবাকে নির্বংশ করার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি?

 স্থির হয়ে গেল কিশোর। বাবা? কিন্তু তার তো বাবা নেই। সে অনেক ছোট থাকতেই মোটর দুর্ঘটনায় মারা গেছে। সেটাই বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কথা বেরোল না মুখ দিয়ে।

পাঁজরে পিস্তলের খোঁচা খেল সে। ধমক দিল লোকটা, দেখ ছেলে, আর হুশিয়ার করব না।

তার পরেও থামল না কিশোর। বোঝানোর চেষ্টা করলই।

পিস্তলের খোঁচা না দিয়ে বরং এবার হেসে উঠল লোকটা। একেবারে বাবার মতই হয়েছে। একরোখা। তাই না, জন? হবেই। রক্তের দোষ।

থামাও ওকে ডেভ, সামনের সীট থেকে বলল অন্য লোকটা। ওরকম করতে থাকলে তো দম আটকেই মরে যাবে।

পেটালে পারি এখন। কথা তো শুনছে না।

হুঁ, মুশকিল। কোনও ক্ষতিও করা চলবে না। একটা মুহূর্ত নীরব রইল জন। সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। নইলে লাভ হবে না আমাদের।

আবার হাসল ডেভ। স্যার মনটেরো যখন খবর শুনবে পিটারকে কিডন্যাপ করেছি আমরা, মুখখানা কেমন হবে দেখতে ইচ্ছে করছে এখনই। আমাদের কথা না শুনে পারবে না তখন।

সামনে ঝুঁকে ছিল, সীটে হেলান দিল কিশোর। স্যার মনটেরো? পিটার? বুঝে গেছে আসল ব্যাপারটা কি ঘটেছে। লোকগুলো তাকে অন্য কেউ বলে ভুল করেছে। এমন কেউ যার বাবা একজন নামী দামী ব্যক্তি, হোমড়া চোমড়া কেউ। টাকার জন্যে কিডন্যাপ করেনি। অন্য কারণ। হয়ত ব্ল্যাকমেল করবে। স্যার মনটেরো যে-ই হোন, তাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করবে। কিন্তু ভুল করে বসেছে ওরা। ভুল লোককে তুলে এনেছে। সেটাই ওদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করল।

 পিস্তল দিয়ে খোঁচা মেরে তাকে আর চুপ করাতে চাইল না লোকটা। পাহাড়ী রাস্তার নিচে নেমে এসেছে গাড়ি। সমতল পথ ধরে জোরে ছুটছে এখন। তীক্ষ্ণ মোড় নিল আচমকা। আর্তনাদ করে উঠল চাকা। প্রায় ছিটকে গিয়ে সীটের কিনারে ধাক্কা খেল কিশোর। এই সময় শোনা গেল সাইরেন। পুলিশ! বাড়ছে সাইরেনের শব্দ। ক্ষণিকের জন্যে দম বন্ধ করে ফেলল সে। তাহলে পুলিশ আসছে, তাকে বাঁচাতে..কমে যেতে শুরু করল আবার সাইরেনের ওয়াও ওয়াও। মিলিয়ে গেল দূরে।

ধরে ফেলেছিল আরেকটু হলেই! বলল কিশোরের পাশে বসা লোকটা, ডেভ।

আমাদের পেছনে লেগেছে? সামনের লোকটার প্রশ্ন।

তাই তো। দেখলে না পর্বতের দিকে চলে গেল ওরা। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি জানল কি করে?

কি করে জেনেছে, কিশোর বুঝতে পারছে। রোলস রয়েসে টেলিফোন আছে। নিশ্চয় ফোন করেছে তার বন্ধুরা। কিন্তু লাভ হল না। পার পেয়ে গেল। কিডন্যাপাররা। ধরতে পারেনি পুলিশ। লোকগুলোকে এখন বোঝানো দরকার যে ওরা ভুল করেছে।

কিন্তু আরেকটা কথা মনে পড়তেই ঘামতে শুরু করল সে। ভয়ে। ভুল লোককে ধরে এনেছে ওরা, এবং সেটা এখনও জানে না। পিটার নামে একটা ছেলেকে দরকার ওদের, কিশোর পাশাকে নয়। পিটারকে মারবে না ওরা, তাহলে তার বাবার বিরুদ্ধে অস্ত্রটা হারাবে। কিন্তু ভুলটা যখন বুঝতে পারবে ওরা তখন কি করবে?

.

কাঁচা রাস্তা ধরে গর্জন করতে করতে ছুটে এল দুটো গাড়ি। একটা পুলিশের। অন্যটা শেরিফের। ধুলোর মেঘ উড়িয়ে এসে ব্রেক কষে থামল দুটোই। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। লাফিয়ে নেমে দৌড়ে এলেন কাউন্টির শেরিফ আর পুলিশ। চীফ ইয়ান ফ্লেচার।

ওদের দেখেছেন? চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল রবিন।

 ধরতে পেরেছেন ওদের? জানতে চাইল মুসা।

মাথা নাড়লেন চীফ। হাইওয়ের প্রথম ক্রসরোডটা ব্লক করে দিয়েছি আমরা। তারপর সোজা চলে এসেছি এখানে। গাড়িটা তো দেখলাম না। রেডিব্লকের কাছেও নেই।

 তাহলে নিশ্চয় আমরা ব্লক করার আগেই বেরিয়ে গেছে, শেরিফ অনুমান করলেন। হাইওয়ের পাশের কোনও রাস্তায় নেমে যেতে পারে। বেশি দূর যেতে পারেনি নিশ্চয়। আরও লোক লাগাতে হবে আমাদের। দিকে দিকে খুজতে বেরিয়ে যাক।

এটা কাউন্টি এলাকা, ছেলেদেরকে বললেন চীফ। এখানে শেরিফের দায়িত্ব। তবে এরকম কেসে আমরা মিলেমিশেই কাজ করি। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ ডিপাটমেন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি।

এখন, শেরিফ বললেন। এখানে সূত্র খুঁজতে হবে আমাদের।

কিছু পাবেন বলে মনে হয় না, স্যার, রবিন বলল। এখানে বেশিক্ষণ থাকেনি কিডন্যাপাররা। সূত্র ফেলে যাওয়ার কথা নয়।

ঠিকই বলেছে সে। কাঁচা রাস্তার প্রতিটি ইঞ্চি খুঁজে দেখলেন শেরিফ আর চীফ মিলে। কিছুই পেলেন না।

অল রাইট। অবশেষে চীফ বললেন, এখানে থেকে আর লাভ নেই। থানায় চলে যাই। এফ বি আইকেই খবর পাঠাতে হবে।

হ্যাঁ, স্যার, ততটা আশা করতে পারছে না রবিন। এভাবে খুঁজে লাভ হবে। না। একটা গাড়ি খুব ছোট্ট জিনিস, তাই না?

হোক ছোট। পুরো কাউন্টি ঘিরে ফেলব আমরা। সমস্ত রাস্তা ব্লক করে দেব। ওদের বেরিয়ে যাওয়ার কোনও পথই খোলা রাখব না।

 রোলস রয়েসে গিয়ে উঠল রবিন আর মুসা। একেবারে চুপ। হ্যানসন যখন পুলিশের গাড়িটাকে অনুসরণ করল তখনও কিছু বলল না, ওরা। নীরবে শুধু তাকাল একবার পরস্পরের দিকে। চোখে অস্বস্তি। একই কথা ভাবছে দুজনে।

রোডব্লক যে করা হবে কিডন্যাপাররাও নিশ্চয় জানে সেটা। কি করে বেরোতে হবে প্ল্যানট্যান করেই রেখেছে। বেরিয়ে যাবে। সাথে করে নিয়ে যাবে। কিশোরকে।

.

০৪.

থেমে গেল মার্সিডিজ।

থলের ভেতরে মুখ লুকানো। স্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্যে নাকের ডগার সমান ছোট একটা ফুটো কেবল। কিছুই দেখতে পারছে না কিশোর। অনুমানে বোঝার চেষ্টা করেছে কোন পথে কোন দিকে এগিয়েছে গাড়ি। কয়টা মোড় নিয়েছে মনে। রেখেছে। কান পেতে রয়েছে পরিচিত শব্দের আশায়। এমন শব্দ, যেটা থেকে বুঝতে পারে কোথায় রয়েছে। কিন্তু কোনও শব্দই নেই। শুধু শূন্য নীরবতা। কোথাও কোনও নড়াচড়া নেই। না মানুষের, না যানবাহনের, না সাগরের।

বের কর ওকে, সামনের সীট থেকে বলল ড্রাইভার।

গাড়ির দরজা খোলার শব্দ শুনল কিশোর। শক্ত হাত চেপে ধরল তাকে। ঠেলে বের করল গাড়ি থেকে। মাটিতে দাঁড় করিয়ে দিল। জুতোর নিচে ঝরা পাতা, ঘাস, আর কঠিন মাটি।

ব্যাগটা খুলে নাও। দেখে দেখে নিজেই হাটুক।

একটানে কিশোরের মাথার ওপর থেকে থলেটা খুলে নেয়া হল। ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে আসা আলো চোখ ধাধিয়ে দিল যেন তার। আলো সইয়ে নেয়ার জন্যে চোখ মিটমিট করল সে। মুখ থেকে খুলে নেয়া হল কাপড়।

এখন অনেকটা আরাম লাগছে, না? বলল গাট্টাগোট্টা লোকটা যার নাম ভেজ। খুলে দিলাম বলেই যে চিৎকার করবে তা হবে না। একদম চুপ থাকবে। নইলে…, কিশোরের চোখের সামনে এনে পিস্তলটা নাড়ল সে।

মাথা ঝাঁকাল শুধু কিশোর। কিছু বলল না। যখন থেকেই বুঝতে পেরেছে তার আসল পরিচয় জানালে মারাত্মক বিপদে পড়ে যাবে তখন থেকেই চুপ হয়ে। গেছে সে। কথা বলতেও ভয় লাগছে এখন। লোকগুলো তার ইংরেজি শুনে যদি বুঝে যায় যাকে ধরেছে সে পিন্টার নয়! কিশোরের কথায় লোকগুলোর মত টান। নেই। পিটার ওদের দেশের ছেলে হয়ে থাকলে একই রকম টান থাকার কথা। খুব সাবধান হতে হবে এখন তাকে। ছোট্ট একটা ভুলও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে। পারে।

এক মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল ডেভ। তারপর ফিরল সঙ্গীর দিকে। ব্যাগ তো খুললাম।

আরও সহজ ভাবে শ্বাস নিতে পারল কিশোর। লোকগুলো তাকে চিনতে পারেনি এখনও কাজেই আপাতত নিরাপদ। দ্রুত চারপাশে তাকাল সে। পর্বতের গোড়ায় ওকের বন আর চাপারালের ঘন ঝোপের মাঝখানে আরেকটা কাঁচা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অপরিচিত জায়গা। রকি বীচের একশ মাইলের মধ্যে এরকম জায়গা অনেক আছে।

কিশোরকে হাঁটার নির্দেশ দিল জন, অর্থাৎ ড্রাইভার। ড়েভের চেয়ে লম্বা, পাতলা শরীর। কালো চুল। ছোট ছোট চোখ কোটরে বসা। চোখের কোণের চামড়ায় ভাজ। ডেভের মত একই রকম রোদে পোড়া। একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিচ্ছে, এমন কোনও দেশ থেকে এসেছে লোকগুলো, যেখানে ভীষণ গরম, রোদ খুব কড়া।

 পথের পাশের ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে চলল ওরা। পঞ্চাশ গজ মত এগিয়ে ডানে ঘুরল। পর্বতের দিকে মুখ করে এগোল। রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। শুধু ঘন, প্রায় দুর্ভেদ্য ঝোপ।

জন, তুমি আগে যাও, ডেভ বলল। ব্যাগগুলো নিয়ে যাও। 

মাথা ঝাঁকাল ড্রাইভার। ব্যাগ মাটিতে নামিয়ে রেখে টেনে ঝোপ ফাঁক করল। বেরিয়ে পড়ল একটা সরু পায়েচলা পথ। তার ভেতরে দুটো ব্যাগ ঠেলে দিয়ে নিজেও ঢুকে পড়ল। গিলে ফেলল যেন তাকে ঝোপ।

এবার তুমি যাও, কিশোরকে আদেশ দিল ডেভ।

এক মুহূর্ত ঝোপটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। টেনে ফাঁক করল ঝোপের ডাল। ঢুকে পড়ল ভেতরে। হাত থেকে হঠাৎ ছুটে গেল চ্যাপারালের শক্ত ডাল। কাঁটাঝোপের আঘাত থেকে মুখ বাঁচাতে এক ঝটকায় হাত তুলে নিয়ে এল মুখের কাছে, ঢেকে ফেলল। লাফিয়ে পিছাতে গিয়ে গাছের গোড়ায় পা বেধে উল্টে পড়ে গেল। তাকে টেনে তুলল ডেভ। ঠেলে আবার ঢুকিয়ে দিল ঝোপের ভেতর।

 ধমক দিয়ে বলল, এরকম চমকে দিলে কিন্তু ট্রিগারে চাপ লেগে যাবে আমার।

ঢোক গিলল কিশোর। সরু পথ ধরে যতটা সম্ভব জোরে হাঁটতে লাগল। তার পেছনেই লেগে রয়েছে ডেভ, হাতে পিস্তল। কিছুদূর এগোতেই আবার ঘন ঝোপ। পড়ল সামনে। পথটা অদৃশ্য হয়ে গেল। তবে সামনের লোকটাকে দেখতে পাচ্ছে! ঝোপের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে।

তাকে অনুসরণ করল কিশোর। না দেখে ফেলতে গিয়ে পা আবার বেধে গেল। একটা শেকড়ে। পড়ে গেল উপুড় হয়ে। হাপাচ্ছে। উঠে পড়ল আবার পেছনের লোকটা তার গায়ে হাত দেয়ার আগেই।

লোকগুলোর কিছু হচ্ছে না। ঘন ঝোপের ভেতর দিয়ে এমন সাবলীল ভঙ্গিতে এগোচ্ছে, দেখলে মনে হয় জায়গাটা ওদের পরিচিত। আগেও এসেছে এখানে। ওদের সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে যেন হিমশিম খাচ্ছে কিশোর। পথটাই দেখতে পাচ্ছে না। আরও দুবার আছাড় খেল। তারপর এসে ঢুকল পর্বতের গভীরে সরু একটা বক্স ক্যানিয়নে।

দুধারে পাহাড়ের উঁচু দেয়াল। এক দেয়ালের গা ঘেঁষে রয়েছে ছোট একটা পাথরের কেবিন। কেবিনের দরজা খুলল ওদের একজন। আরেকজন ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিল কিশোরকে। আবার লাগিয়ে দেয়া হল দরজা।

নির্জন কেবিনে ঢুকে শুনতে পেল কিশোর, দরজায় তালা লাগানোর শব্দ।

.

থানায় এসেছে মুসা, রবিন, রাশেদ পাশা আর মেরিচাচী। দেয়াল ঘেঁষা একটা বেঞ্চে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রেখেছে।

আমাদের ইমারজেন্সি সিগন্যালগুলো যদি সঙ্গে থাকত! আফসোস করল মুস্রা।

থাকবে কি করে? মনে করিয়ে দিল রবিন, ওগুলো তো মেরামতই হয়নি। তবে যোগাযোগের একটা না একটা উপায় বের করেই ফেলবে কিশোর।

কড়া চোখে শেরিফ আর চীফের দিকে তাকালেন মেরিচাচী। সারাদিনই। এখানে বসে থাকব নাকি? কিডন্যাপাররা তো আর খেলা করছে না যে হাসতে হাসতে এসে ধরা দেবে।

মাথা নাড়লেন চীফ। ভাববেন না। সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছে। পুরো শহর আর কাউন্টি এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। পালাতে পারবে না কিডন্যাপাররা। এসব কিডন্যাপিঙের কেসে খুব হুশিয়ার থাকতে হয় আমাদের। একটা ভুলচুক হলেই মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কাজেই তাড়াহুড়া করে রিস্ক তো আর নিতে পারি না।

যা যা করার সবই করা হচ্ছে, শেরিফ বললেন। ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাডা, অরিগম, অ্যারিজোনার সমস্ত পুলিশ বিভাগকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ বি আইকে খবর দেয়া হয়েছে। মেকসিকান অথরিটিকে জানান হয়েছে। টেলিটাইপ করে মার্সিডিজের লাইসেন্স নম্বর জানিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রতিটি পেট্রল কারকে। পুলিশের ডিপার্টমেন্ট অভ দা মোটর ভেহিকলকেও জানানো হচ্ছে।

ল্যাবরেটরি এক্সপার্টদের একটা দল ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গেছে, চীফ, জানালেন। যে জায়গাটায় কিডন্যাপ করা হয়েছে সেখানটায় আবার ভালমত খুঁজবে ওরা। সূত্রটুত্র কিছু না পেলে তো এগোতে পারছি না আমরা।

আপনি নিজে গিয়ে কিছু করছেন না কেন? কিছুতেই বুঝতে চান না। মেরিচাচী।

এখন গিয়ে তো আর লাভ নেই, জবাবটা দিলেন শেরিফ। অযথা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানোর চেয়ে একটা সূত্র নিয়ে যদি বেরোতে পারি, তাহলে কাজ হতে পারে।

কিছুতেই বোঝান গেল না মেরিচাচীকে। চীফ আর শেরিফ বেরিয়ে গেলেন। সেদিকে জুলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তিনি। নিষ্ফল হয়ে ফিরে এল ল্যাবরেটরি টীম। শুনে আরও খেপে গেলেন তিনি। তার ধারণা, পুলিশ কোনও কাজের না। নইলে এতগুলো লোক মিলে এত চেষ্টা করেও এখনও কোনও খোঁজ বের করতে পারছে না কেন কিশোরের?

ছেলেটাকে যে কোথায় নিয়ে গেল! ফুঁসে উঠলেন মেরিচাচী। এই, মুসা আর রবিনের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝাল কণ্ঠে বললেন। আবার কিছুর তদন্ত করছ না। তো তোমরা? কোনও কেটেস নয় তো? অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে গিয়েছিলে?  

না, আন্টি, জবাব দিল রবিন। সত্যি বলছি, ম্যাজিক মাউনটেইন দেখতে বেরিয়েছিলাম আমরা।

রাশেদ পাশা জিজ্ঞেস করলেন, কেন কিডন্যাপ করা হল কিছুই বুঝতে পারছ না?

ইস, যদি পারতাম! আবার আফসোস করল মুসা।

ব্যাটাদের যদি খালি ধরতে পারতাম, দাঁত কিড়মিড় করলেন মেরিচাচী। চট করে একে অন্যের দিকে তাকাল রবিন আর মুসা। এত দুঃখেও হাসি পেল। ওদের। মেরিচাচীর সামনে যদি এখন পড়ে কিডন্যাপাররা তাহলে তাদের জন্যেই। কষ্ট হবে ওদের।

একটা উপায় বের করতে পারলেও হত, রবিন বলল। খুঁজতে যেতে পারতাম। কিশোর কি কোনই পথ করে রেখে যায়নি?

পারলে তো করবে, মুসা বলল। লোকগুলো সাংঘাতিক চালাক। সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না।

কাছে এসে দাঁড়ালেন চীফ। কতটা চালাক শীঘ্রি সেটা বের করব। হেলিকপ্টার নিয়ে বেরিয়েছিল শেরিফের একজন লোক। র‍্যাটলস্নেক রোডের পাশে মার্সিডিজটা দেখতে পেয়েছে সে। শহর থেকে তিন মাইলের বেশি হবে না।

চলুন! চলুন! পেছন থেকে প্রায় চিৎকার করে বললেন শেরিফ, এইবার পেয়েছি ব্যাটাদের!

.

কেবিনে একা বসে আছে কিশোর। বাইরে লোকগুলো কি বলে শোনার চেষ্টা করছে। ভাবছে, সে যে পিটার নয় এটা বুঝতে কতক্ষণ সময় লাগবে। লোকগুলোর?

ওদের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে সে, তবে কথা ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছে লোকগুলো। আরও একজন লোকের। ব্যাপারে কথা বলছে যে তখন ওখানে নেই। বুঝতে অসুবিধে হল না, সেই লোকটার আসার অপেক্ষাতেই রয়েছে ওরা। কেউ একজন আসবে। কিছু একটা ঘটবে।

 কিন্তু কে আসবে? আর এই পার্বত্য নির্জন এলাকায় ঘটবেটাই বা কি?

আরও ভাল করে শোনার জন্যে কান খাড়া করল সে। লাভ হল না। মোচড় দিয়ে উঠল পেটের ভেতর। যে আসবে সে যদি আসল পিটারকে চেনে? কেবিন থেকে বেরোনো দরকার। পালাতে হবে কিডন্যাপারদের কবল থেকে। নইলে কি যে ঘটবে বলা মুশকিল। মুখ বন্ধ করানোর জন্যে মেরেও ফেলা হতে পারে ওকে।

ছোট কেবিনটায় চোখ বোলাল সে। একটি মাত্র শূন্য ঘর। আসবাব নেই বললেই চলে। একমাত্র দরজাটা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আটকান। জানালাও একটাই। আড়াআড়ি তক্তা লাগিয়ে পেরেক ঠুকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিপজ্জনক জিনিস রাখা হত বোধহয় এখানে। পাহাড় ভাঙার জন্যে ডিনামাইট হতে পারে। কিংবা তেল তোলার যন্ত্রপাতি।

কিন্তু এখন আর কিছুই নেই কেবিনে। পালানোর পথও দেখতে পাচ্ছে না সে।

পাথরের দেয়ালের ধার ঘেঁষে একবার চক্কর দিল। দুর্বল জায়গা খুঁজল। নেই। প্রায় এক ফুট পুরু দেয়াল। ফাটল-টাটল দেখা গেল না। এই দেয়াল ভেঙে বেরোন সম্ভব না। আর ভাঙার কিছু নেইও কেবিনে। যদি থাকতও, তাতে লাভ হত না। ভাঙতে গেলে বিকট আওয়াজ হবে। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে এসে উঁকি দেবে লোকগুলো। মোট কথা, দেয়ালের গায়ে বেরোনোর কোনও পথ নেই। অবশেষে মেঝের দিকে নজর দিল সে।

 ইঞ্চিখানেক পুরু চওড়া বড় বড় তক্তা দিয়ে মেঝে তৈরি হয়েছে। গায়ে গায়ে ঠেসে বসান। ফাঁকও নেই তেমন। তবে জোরে চাপ দিলে বাঁকা হয়ে যায়। মাটিতে বসান হয়নি তক্তাগুলো। আড়াআড়ি কডিকাঠের মত তক্তা নিচে পেতে তার ওপর সাজান হয়েছে। নিচে ফাঁক তেমন নেই।

 হামাগুড়ি দিয়ে পুরো মেঝেটা ঘুরে দেখল কিশোর। পেছনে দেয়ালের কাছে একটা তক্তা আলগা। এক প্রান্তে পা দিয়ে চেপে ধরে তত্তটা তুলে তার ফাঁকে। হাত ঢুকিয়ে দিল সে। টেনে সরিয়ে আনল ওটা।

নিচে ফাঁক রয়েছে। নীরবে পাশের তক্তাটার ওপরও কাজ করে চলল সে। সরিয়ে ফেলতে পারল অনেক কায়দা কসরৎ করে। নেমে গেল ফাঁকটায়। মেঝে আর মাটির মধ্যখানে যেটুকু ফাঁক রয়েছে, তাতে শুয়ে পড়া যায়। তা-ই করল সে। একধারে ঢালু হয়ে নেমে গেছে মাটি। বুকে হেঁটে ঢাল ধরে এগোল সে। মেঝের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে ফাঁক এত কমে গেছে বুকে হেঁটেও আর এগোন যায় না। চারপাশের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে পাথর দিয়ে। বাতাস চলাচলের জন্যে খুব ছোট ছোট ছিদ্র রাখা হয়েছে। সেসব দিয়ে মানুষ বেরোনো অসম্ভব। বেরোনোর পথ পেল না।

বাধ্য হয়ে যে পথে নেমেছিল সে পথে আবার ওপরে উঠে এল সে।

পালানোর কোনই পথ নেই।

.

র‍্যাটলস্নেক রোডে মার্সিডিজটার, পেছনে এসে থামল পুলিশের গাড়ি। গাড়ির। ভেতরটা ভালমত পরীক্ষা করে দেখা হল।

কিছুই নেই, মুখ কালো করে বললেন ইয়ান ফ্লেচার। এখান থেকে কোন দিকে গেছে বোঝার উপায় নেই।

কিন্তু জলজ্যান্ত একটা মানুষ গায়েব হয়ে যেতে পারে না, মেরিচাচী বললেন।

গাড়িটার আশপাশে খুঁজে দেখলেন রাশেদ পাশা, মুসা আর রবিন। রাস্তার পাশের ঘাসে ঢাকা জুমিতে নামিয়ে রাখা হয়েছে ওটা।

কিশোরের কোনও চিহ্নই তো দেখছি না, রবিন বলল।

একটা পায়ের ছাপ পর্যন্ত নেই, বললেন রাশেদ পাশা।

বাতাসে মিলিয়ে গেছে যেন, চীফ বললেন। আশপাশের ঘন ঝোপ আর একধারে মাথা তুলে দাঁড়ানো পর্বতের দিকে নজর। যা অঞ্চল! যেখানে খুশি নিয়ে । সব গিয়ে লুকিয়ে রাখতে পারে কিশোরকে।

তা পারে, মুসা বলল। তবে বেশি দূরে গেছে বলে মনে হয় না আমার।

.

০৫.

 কি করে বুঝলে? ভুরু নাচালেন শেরিফ।

সূত্রটুত্র পেয়েছ নাকি? চীফ জানতে চাইলেন।

মার্সিডিজের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁচা রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। বসে পড়ে মাটিতে আলগা ধুলোয় হাত বোলাল।

দেখুন, স্যার! সামনের মাটির দিকে দেখাল সে। পুরো রাস্তাটায় ওখানটাতেই যা এক চিলতে নরম মাটি দেখছি। মার্সিডিজের চাকার দাগ আছে। আর কোনও গাড়ি নেই। তার মানে অন্য গাড়ি আসেনি এখানে ওদেরকে তুলে নেয়ার জন্যে। এ পথে হেঁটে যাওয়ারও কোনও লক্ষণ দেখছি না। এর একটাই অর্থ, কাছাকাছিই আছে ওরা।

মুসা যেখানটা দেখিয়েছে সে জায়গাটা চীফও পরীক্ষা করলেন। খটখটে শুকনো মাটি। প্রচুর ধুলো আছে। অথচ পায়ের ছাপ নেই।

তার মানে, রবিন বলে উঠল। মুসা ঠিকই বলেছে। কাছাকাছিই আছে ওরা।

আছে, আবার বলল মুসা। রাস্তাই পেরোয়নি। আমার ধারণা, সোজা নেমে গেছে ঝোপের কাছে। ওই চ্যাপারেলের ঝোপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে পর্বতের দিকে পা বাড়াতে গেল সে।

দাঁড়াও! বাধা দিলেন চীফ। পথের একপাশ দেখিয়ে বললেন, এখানে ঘাস আছে, পায়ের ছাপ পড়বে না। এদিক দিয়েও গিয়ে থাকতে পারে।

শেরিফও একমত হলেন তার সঙ্গে। দুজন সহকারীকে বললেন, অ্যাই, এই ঘাস ধরে তোমরা দুজন দুদিকে চলে যাও। পায়ের ছাপ দেখলেই ডাকবে। আমরা ঝোপগুলোয় খুঁজব। দেখি ঢোকার কোনও পথ আছে কিনা।

আশ্চর্যবোধক চিহ্ন চোখে পড়ে কিনা দেখবেন, রবিন বলল। কিংবা অস্বাভাবিক কিছু। জড় করা পাথর হতে পারে। ভাঙা ডাল হতে পারে। ওরকম চিহ্ন রেখে যেতে পারে কিশোর।  

রাস্তার যে পাশে পর্বত সেদিকটায় খুঁজতে চলল পুলিশ আর শেরিফের দুই ডেপুটি। দুই দল দুই দিকে গেল। খানিক পরেই ফিরে এল ওরা। জানাল ঘাস বেশিদূর নেই। তাতে পায়ের ছাপও নেই। একজন খুঁজে পেল পাথরের ছোট একটা স্তূপ। আন্দাজ করল, ওটা কিশোরের রেখে যাওয়া নির্দেশক হতে পারে। পরীক্ষা করে দেখলেন শেরিফ। অনেক পুরনো মাটি বেরোল পাথরের ফাঁক থেকে। অনেক দিন ধরে একরকম ভাবে পড়ে আছে। নতুন নয়। তার মানে এটা কিশোর। রেখে যায়নি। একজন পুলিশ খুঁজে বের করল একটা ঝোপ। ওটার ডাল ভাঙা। ঘন ঝোপে খোঁজাখুজি করা হল। আর কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না। রাস্তা চোখে পড়ল না।

চীফ? ডেকে বলল আরেকজন পুলিশ। দেখুন তো!

 ছোট শাদা একটা জিনিস আটকে রয়েছে ঝোপের কাটায়। একটুকরো শাদা শক্ত কাগজ। দৌড়ে গেল রবিন আর মুসা।

দেখে তো…, শুরু করল রবিন।

শেষ করল মুসা, আমাদের কার্ডের মত মনে হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে খুলে আনল কার্ডটা। হ্যাঁ, তিন গোয়েন্দার কার্ডই। কোনও ফাঁকে কিডন্যাপারদের চোখ এড়িয়ে ফেলে গেছে কিশোর।

দেখি, ঝোপটা ফাঁক কর, নির্দেশ দিলেন শেরিফ।

ডেপুটিরা আর পুলিশ মিলে টেনে ফাঁক করল ঝোপের ডাল। সরু পায়ে চলা। পথটা আবিষ্কার করতে বেশিক্ষণ লাগল না।

 রাস্তাই। সন্দেহ নেই, তাকিয়ে রয়েছে চীফ। দেখ, হেঁটে গেছে কেউ। পরিষ্কার চিহ্ন রয়েছে।

সরু পথটা ধরে চলল সবাই।

ওই তো! রবিন দেখাল। একটা ঝোপের পাতা ছেঁড়া, ডাল দোমড়ান; যেন কেউ পড়ে গিয়েছিল ওখানে। কাছেই একটা পাথরে খুদে একটা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন।

কিশোরই এঁকেছে। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। চক ছিল পকেটে।

জলদি! তাগাদা দিলেন রাশেদ পাশা। আছে কাছাকাছিই, পর্বতে…

থেমে গেলেন তিনি। কান পেতে শব্দ শুনছেন। তারপর সকলেই শুনতে পেল শব্দটা। শক্তিশালী মোটরের আওয়াজ ক্রমেই বাড়ছে ঠিক যেন ওদের মাথার ওপর।

আকাশের দিকে হাত তুললেন মেরিচাচী। হেলিকপ্টার!

কপালের ওপর হাত রেখে দেখতে লাগলেন শেরিফ। পুলিশের কিনা বোঝার চেষ্টা করছেন। একশ গজ ওপর দিয়ে উড়ে গেল পর্বতের দিকে।

না, ইঞ্জিনের গর্জনকে ছাপিয়ে চিৎকার করে বললেন চীফ। পুলিশের নয়! কিনডন্যাপারদের! ওটাতে করেই পালাবে!

 গাছের আড়ালে হারিয়ে গেল কপ্টারটা। ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল ইঞ্জিনের শব্দ।

আপনি না বললেন কিছুতেই বোরোতে পারবে না! শেরিফের ওপর ভীষণ রেগে গেলেন মেরিচাচী।

থামবে না কেউ, হাঁটো! মেরিচাচীর কথা এড়িয়ে গিয়ে বললেন শেরিফ। সামনেই কোথাও আছে। পালানোর আগেই ধরতে হবে

যদি সময় মত পৌঁছতে পারি! আর ভরসা করতে পারছে না মুসা।

.

ধুলোর ঘূর্ণি তুলে বক্স ক্যানিয়নে নামল হেলিকপ্টার। পরিষ্কার প্রেক্সিগ্লাস বাবলের ভেতর থেকে লাফিয়ে নামল পাইলট। পরনে ফ্লাইং স্যুট, মাথায় হেলমেট, চোখে গগলস, মাথা নিচু করে দৌড়ে এল দুই কিডন্যাপারের কাছে।

ঠিক সময়েই এসেছ, ডেভ বলল।

ওকে নিয়ে এসেছি! হেসে বলল অন্য লোকটা। জন।

জবাবে হাসল না পাইলট। মার্সিডিজটাকে হেঁকে ধরেছে পুলিশ, দেখে। এলাম। ঝোপের ভেতর দিয়ে এদিকে আসছে কয়েকজন।

ঝোপের ভেতর দিয়ে? ভুরু কোঁচকাল ডেভ। এত তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করল কিভাবে?

ওই ছেলেটা, জুন বলল। সব ওর শয়তানী। ইচ্ছে করেই পড়েছে কয়েকবার। চিহ্ন রেখে এসেছে।

হেসে উঠল ডেভ। রাখুক। লাভ হবে না। ওরা আসার আগেই উড়ে যাব আমরা।

অত হাসির কি হল! ধমকে উঠল পাইলট। যাও, নিয়ে এস ছেলেটাকে।

আনছি।

ও কোথায়?

ওই কেবিনে।

হুঁ। জলদি কর।

ক্যানিয়নের পাথরের মত শক্ত মাটির ওপর দিয়ে জুতোর শব্দ তুলে এগোল তিনজনে। তালা খুলল জন। ডেকে বলল, বেরিয়ে এস।

ডেভ! চিৎকার করে উঠল জন। ও নেই!

ডেভও উঁকি দিল ভেতরে। শূন্য কেবিন।

ঘাস খেয়েছ নাকি বসে বসে! কর্কশ কণ্ঠে বলল পাইলট, পালাল কিভাবে?

অসম্ভব! বেরোনোর কোনও পথ নেই!

তাহলে গেল কোথায়? জনের প্রশ্ন।

যেভাবেই হোক বেরিয়েছে! চেঁচিয়ে বলল পাইলট। থাকলে তো থাকতই!

হয়েছে, অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই, কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল ডেভ। পালিয়ে যাবে কোথায়? কেবিন থেকে বেরোলেও ক্যানিয়ন থেকে বোরোতে পারবে না। পথ নেই। একটাই পথ, সেটা দিয়ে গেলে আমাদের সামনে দিয়ে যেতে হত। যায়নি। তারমানে আছে। জন, খোঁজ।

নির্জন ক্যানিয়নে ছড়িয়ে পড়ল তিন কিডন্যাপার।

.

হাঁপাতে হাঁপাতে এসে সরু ক্যানিয়নের মুখে পৌঁছল উদ্ধারকারী দলটা। হেলিকপ্টারটাকে দেখার বিশ মিনিট পর।

ওই তো! হাত তুলল রবিন।

ধীরে ধীরে ঘুরছে হেলিকপ্টারের রোটর। ওদের চোখের সামনেই লাফিয়ে গিয়ে বাবলে উঠে পড়ল পাইলট। শক্তি বাড়তে শুরু করল রোটরের।

জলদি! বলেই দৌড় দিল মুসা।

তার পেছনে ছুটল অন্যেরা। কপ্টারটাকে ধরার জন্যে। কেবিনের পেছন থেকে বেরিয়ে এল দুজন লোক। ওরাও দৌড় দিল কপ্টারের দিকে।  

এই থাম, থাম! পুলিশ! চিৎকার করে উঠে ওদের দিকে দৌড় দিলেন শেরিফ।

 ততক্ষণে কপ্টারের কাছে পৌঁছে গেছে দুজনে। উঠে পড়ল। উদ্ধারকারীদের অসহায় দৃষ্টির সামনেই আকাশে উঠে পড়ল কপ্টার। ধুলোর ঝড় উঠেছে। বিশাল এক ফড়িঙের মত শূন্যে ঝুলে রইল একটা মুহূর্ত, তারপর আগে বাড়ল। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল ক্যানিয়নের দেয়ালের ওপাশে, দক্ষিণে।

বোকা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে উদ্ধারকারীরা।

গেল…চলে গেল! বিড়বিড় করলেন রাশেদ পাশা।

ওদেরকে যেতে দিলেন আপনারা! রাগে দুঃখে মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা হল। মেরিচাচীর। আমার…আমার ছেলেটাকে নিয়ে গেল!,

সহকারীদের দিকে ফিরে আদেশ দিলেন শেরিফ, গাড়ির কাছে ফিরে যেতে। টেলিফোনে নির্দেশ দেবেন পুলিশের হেলিকপ্টারকে, যাতে পিছু নিতে পারে।

কিশোরকে কিন্তু দেখলাম, না হেলিকপ্টারে, রবিন বলল।

হয়ত কেবিনেই রয়ে গেছে, মুসা বলল। আমাদেরকে দেখেই পালিয়েছে ব্যাটারা। ওকে নেয়ার আর সময় পায়নি।

কেবিনের দিকে ছুটে গেলেন চীফ। ঠেলা দিয়ে খুলে ফেললেন ভেজানো দরজা। পেছনে ঢুকল অন্যেরা। শূন্য ঘর।

খাইছে! নেই তো! গুঙিয়ে উঠল মুসা।

আগেই হয়ত কপ্টারে তোলা হয়েছিল, রবিন বলল। দেরি করে ফেলেছি আমরা।

না, নথি, যেন গায়েবী আওয়াজ হল। বরং সময়মতই এসেছ।

কেবিনের পেছন দিকের দুটো তক্তা উঠে গেল। বেরিয়ে এল কিশোর পাশা। মুখে হাসি।

কিশোওর! প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল সবাই।

হ্যাঁ, কিশোর, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। আর কাউকে আশা করেছিলে নাকি?

<

Super User