নদীর চককচে তরতাজা
মাছগুলো ছটফটিয়ে মরে যাচ্ছে,
গাছের পাতা ধুলো হ’য়ে ঝরছে,
গাছের কংকাল দেখে পাখিরা বোবা,
ভুলে গেছে গান। কান খাড়া
করে থাকলেও কোকিল কি দোয়েল
কারো সুর শোনা যাচ্ছে না আর।
ফুল ফোটে না কোথাও,
উধাও পায়রা, কাঠবিড়ালি, খরগোশ। বসন্ত
আসে না দশ দিগন্ত রাঙিয়ে।

যেখানে একদা নদী ব’য়ে যেতো
তরুণীর উচ্ছলতার মতো,
এখন সেখানে ধু ধু বালি, খালি গায়
ক্লান্ত লোকজন ধিকিয়ে ধিকিয়ে হাঁটে।
ফসলের ক্ষেত পুড়ে গেছে, বীজতলা শ্মশান।
কৃষকের মাথায় হাত, টগবগিয়ে ভাত ফোটে না হাঁড়িতে।

শুটিকয় মানুষ সুন্দরের কথা,
আলোর কথা বলায় চেষ্টাশীল,
লোকগুলো ওদের মাড়িয়ে
পায়ের তলায় থেঁৎলে
দলে দলে দৌড়ুচ্ছে পূর্ণিমা ছেড়ে
অমাবস্যার দিকে।
অনেকেই লেখা ছেড়ে না-লেখার দিকে চলে গেছেন।
হাতে গোণা কজন বিষণ্ন, অথচ
জেদী কবি রক্তজবাপ্রতিম
সূর্যোদয়ের দিকে মুখ রেখে
একটি মর্মস্পর্শী শোকগাথা রচনার জন্যে
বিষপাত্র দূরে সরিয়ে
আঁকিবুঁকিময় পাতার পর পাতা ক্রমাগত
ছিঁড়ে চলেছেন প্রহরে প্রহরে।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান