সুরা নাস

শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।

বল, আমি তাঁরই কাছে মাগি গো শরণ
সকল মানবে যিনি করেন পালন।
কেবল তাঁহারই কাছে – ত্রিভুবন মাঝ
সবার উপাস্য যিনি রাজ- অধিরাজ।
কুমন্ত্রণাদানকারী ‘খান্নাস’ শয়তান
মানব দানব হতে চাহি পরিত্রাণ।

————-
সুরা নাস
মদিনা শরিফে অবতীর্ণ; ইহাতে ৬টি আয়াত, ২০টি শব্দ, ৮১টি অক্ষর ও ১টি রুকু আছে। ‘নাস’ অর্থ মানুষ। (কোর-আন শরিফের মোট ১১৪টি সুরার মধ্যে এইটিই শেষ সুরা)।

শানে-নজুল– মদিনা শরিফের অধিবাসী লবিদ নামক একজন ইহুদির কয়েকটি কন্যা ছিল। তাহারা হজরত নবি করিমের মাথার কয়েকটি চুল ও চিরুনির কয়েকটি দাঁতের উপর জাদুমন্ত্র পাঠ করিয়া এগারোটি গ্রন্থি দিয়াছিল এবং তাহা এক একটি খোর্মা মুকুলের মধ্যে রাখিয়া ‘যোরআন’ নামক কূপের তলদেশস্থ প্রস্তরের নীচে স্থাপন করিয়াছিল। এই জাদুর দরুন হজরতের শরীর এরূপ অসুস্থ হইয়াছিল যে, তিনি যে কাজ করেন নাই তাহাও করিয়াছেন বলিয়া কখনও কখনও তাঁহার ধাটণা হইত। হজরত ছয় মাস কাল যাবৎ এরূপ ব্যাধিগ্রস্ত ছিলেন। এক রাত্রে তিনি স্বপ্নে জানিতে পারিলেন তাঁহার ওই পীড়ার কারণ কী। প্রাতে হজরত আলি, আম্মার ও জোবায়েরকে ‘যোরআন’ কূপের দিকে প্রেরণ করেন। তাঁহারা উক্ত কূপের তলদেশ হইতে ওইসব দ্রব্য তুলিয়া হজরতের নিকট নিয়া হাজির করেন। তখন জিব্রাইল ‘ফলক’ ও ‘নাস’ এই দুই সুরা সহ অবতরণ করেন। এই দুই সুরায় এগারোটি আয়াত আছে। তিনি এক এক করিয়া ক্রমান্বয়ে এগারোটি আয়াত পাঠ করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এক এক করিয়া উহার এগারোটি গ্রন্থি খুলিয়া গেল। অতঃপর হজরত সম্পূর্ণরূপে রোগ হইতে মুক্তি লাভ করিলেন।
(–এমাম এবনে কছির, জালালায়ন, কবির।)
এস্থলে ইহাও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, জাদুমন্ত্র দ্বারা মানুষের শারীরিক ক্ষতি হওয়া অসমীচীন নয়; কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জাদুমন্ত্র-প্রভাবে স্বর্গীয় আদেশ প্রচারের কালে বিকারগ্রস্ত হইয়াছিলেন এরূপ ধারণা করা বাতুলতা মাত্র।
(কবির, হাক্কানী)

<

Kazi Nazrul Islam ।। কাজী নজরুল ইসলাম