সব শুনে সুজনবাবু একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, “সাতপয়সার হাট! গগনচাঁদের হাটই সাতপয়সার হাট! খবর ঠিক তো!”

পাগলু বলল, “যে আজ্ঞে। দিনুগুণ্ডা এদের দুজনকে বলেছে।”

“তার কথায় বিশ্বাস কী?”

“আজ্ঞে সেটা যে দিনুর মামার বাড়ি। দিনুর মামাই হল সাতকড়ি।”

“বটে।”

“যে আজ্ঞে। তার সাতানব্বই বছর বয়স।”

“তা হলে তো সবই মিলে গেছে দেখছি।”

“আজ্ঞে। এখন বাক্সটা নিয়েই সমস্যা।”

“হুম!”

সুজনবাবু একটু ভাবিত হলেন, ঘরের মধ্যেই কিছুক্ষণ পায়চারি করে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, “বাক্সটা যারা চুরি করেছে তারা যদি সাত পয়সার হাট আর সাতকড়ির সন্ধান পেয়ে যায়, তা হলেই হয়ে গেল।”

জগা হঠাৎ বলল, “অভয় দেন তো একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“কী কথা?”

“বাক্সটা আসলে কার?”

“জানি না, অনেকবার হাত বদল হয়ে আমার হাতে এসেছিল।”

জগা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “আজ্ঞে, সঠিক ওয়ারিশটা কে সেটা জানা দরকার।”

“কেন বলো তো?”

জগা বলল, “আজ্ঞে, আমরা তো দাগি চোর, আপনারা তো তা নন। বাক্সটা নিয়ে ভদ্রলোকেরা যা করছেন তাতে বড় ঘেন্না ধরে গেল মশাই। চোরে আর ভদ্রলোকে তফাত রইল না দেখছি।”

সুজনবাবু একথা শুনে একটু হাসলেন, তারপর ঠাণ্ডা গলাতেই বললেন, “কথাটা একেবারে খারাপ বলোনি। বাক্সটা কার তা আমাদের ভেবে দেখা উচিত ছিল। যতদূর শুনেছি, বাক্সটা বার-বার এর-ওর কাছ থেকে চুরি হয়েছে বা চুরি করানো হয়েছে। ওয়ারিশও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কি না তা বলা কঠিন।”

জগা অভিমানী গলায় বলে “খুঁজলে তো পাবেন! কেউ তো ভাল করে খোঁজই করল না।”

সুজনবাবু একটু থমকে গেলেও ভালমানুষের মতো বললেন, “কিন্তু এখন সেসব ভেবে লাভ নেই। এখন কাজ হল রহস্যটা ভেদ করা। এবং তা থেকে যদি কিছু টাকাকড়ি পাওয়া যায় তবে তা সৎ কাজে লাগানো।”

জগা ফস করে উঠল, “সৎ কাজটা কীরকম?”

সুজনবাবু এবারও একটু থতমত খেয়ে বললেন, “আমার একটা পরিকল্পনা হল–একটা ভাল গবেষণাগার তৈরি করা।”

“তা গাঁয়ের লোকের কী উপকার হবে সুজনবাবু?”

“গবেষণায় সকলেরই উপকার।”

“আমরা গরিব চোর-ছাচোড় মানুষ। আমাদের কাছে পেটের চিন্তার বড় চিন্তা নেই। গবেষণা-টবেষণা আমরা বুঝি না। আমাদের অর্ধেক হিস্যা দেবেন বলেছেন তো!”

“হ্যাঁ বলেছি।”

“এখন বলুন তো বাবু আমরা এই তিনজনে যদি টাকাপয়সা বা গুপ্তধন উদ্ধার করি, তা হলে আপনাকে অর্ধেক বখরা দেব কেন? আপনি কিসের হিস্যাদার?”

সুজনবাবু এবার চটলেন, ফরসা মুখোনা লাল টকটকে হয়ে গেল। প্রায় কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তোমার এত বড় সাহস!”

জগা হাতজোড় করে বলল, “কিছু মনে করবেন না, এই পাগলুদাদাই আমাদের আপনার কাছে নিয়ে এসেছে, আপনি ভাল পরামর্শ দেবেন বলে, তা পরামর্শ আর কী দিলেন! শুনছি তো, কেবল বখরার কথা আর গবেষণাগার না কী যেন, বলি কাজটা কী করে উদ্ধার হবে তার কথা কিছু বলবেন? চাট্টি খেয়ে আমাদের তো রওনা হতে হবে। রাত হতে চলল, হাতে বিশেষ সময়ও নেই।”

সুজনবাবু রাগে আর উত্তেজনায় প্রথমটা কথাই বলতে পারলেন না কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে অতিকষ্টে সামলে নিয়ে পাগলুর দিকে চেয়ে বললেন, “যদি আমাকে ডিঙিয়ে তোমরা সম্পদ উদ্ধার করে গাপ করো তা হলে তার পরিণতি ভাল হবে না।”

পাগলু কিছু বলার আগেই জগা বলল, “কেন বাবু, আপনি কি আমাদের মারবেন নাকি?”

এতক্ষণ রামপ্রসাদ কথাটথা বলছিল না, এবার হঠাৎ বলে উঠল, “আপ ভি চোর আছেন, হামলোগ ভি চোর আছে, গুসসা করে কী হোবে? মগজমে কোই মতলব আসলে বলিয়ে ফেলুন, আপনার ভি দু-চার পইসা হেবে, হামার ভি দু-চার পইসা হোবে।”

সুজনবাবুকে খুবই চঞ্চল আর অস্থির দেখাচ্ছিল। তিনি ফের কিছুক্ষণ পায়চারি করে বললেন, “তোমরা এখন যাও। আমার ভাবতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এক ঘণ্টা বাদে এসো।”

তিনজন নিঃশব্দে উঠে বেরিয়ে গেল।

সুজনবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনজন অন্ধকারে কিছুদূর হেঁটে এসে একটা গাছতলায় দাঁড়াল।

জগা বলল “পাগলুদাদা, সুজনবাবুর সঙ্গে তোমার সম্পর্কটা কী একটু বলবে?”

পাগলু হেসে বলল, “ওরে, উনি যে আমার মাসতুতো ভাই।”

“মাসতুতো ভাই?”

“চোরে-চোরে তো তাই সম্পর্ক। “তাই বলো, লোকটা কিন্তু সুবিধের নয়।”

“তা আর বলতে, লোক ভাল হলে আমাদের সঙ্গে গুজগুজ ফুসফুস করে?”

“তা লোকটা চায় কী?”

“মুফতে রোজগার করতে চায়। ভেবেছিলাম লোকটা কিছু কাজের কথা বলতে পারবে।”

হঠাৎ জগা বলল, “ওই দ্যাখ, সুজনবাবু কোথায় যাচ্ছে!”

বাস্তবিকই দেখা গেল সুজনবাবুর বাড়ির দিক থেকে একটা মোটরবাইক বেরিয়ে ঝড়ের বেগে কোথায় যেন চলে গেল।

“কোথায় যাচ্ছে বলো তো পাগলুদাদা?”

“কী করে বলব? তবে নিতাই পালের সঙ্গে সুজনবাবুর দোস্তি আছে।”

“তা হলে এখানেই চেপে বসে থাকি এসো। সুজনবাবু তো এক ঘণ্টা সময় দিয়েছে।”

“অগত্যা তাই।”

“তারা বসে-বসে নানা কথা কইতে লাগল।”

আধঘণ্টা বাদে দেখা গেল, মোটরবাইকটা ঝড়ের বেগে ফিরে আসছে। সামনে সুজনবাবু পেছনের ক্যারিয়ারের আর একটা লোক।

বোধহয় নিতাই পালকে নিয়ে এল। “চলো যাই পাগলুদাদা, দেখি লোকটা কী বলে।”

“চল।”

দরজায় ধাক্কা দেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ বাদে দরজা খুললেন সুজনবাবু। গম্ভীর মুখে বললেন, “এখনও এক ঘণ্টা হয়নি। আরও পনেরো মিনিট বাকি আছে।”

জগা একগাল হেসে বলল, “আজ্ঞে আমাদের হাতে তো ঘড়ি নেই, তা ছাড়া খিদেও পেয়েছে মশাই।”

সুজনবাবু খুব কড়া চোখে তার দিকে চেয়ে থেকে বললেন, “ঠিক আছে, ভেতরে এসো।”

জগা ভেতরে ঢুকে বলল, “তা মশাই, আপনার মাথায় কোনও মতলব এল, নাকি ঝুটমুট আমাদের হয়রান করছেন?”

সুজনবাবু গিয়ে চেয়ারে বসে বললেন, “আমি চা খাচ্ছিলাম। ইচ্ছে করলে তোমরাও খেতে পারো, চা খুব স্টিমুল্যান্ট।”

“কী আন্ট বললেন?”

“বলকারক জিনিস।”

“শুধু চা? ধুর মশাই আমার যে খিদে পেয়েছে।”

“ওঃ হ্যাঁ, সন্দেশ খাবে?”

“খুব খাব মশাই, আমাদের আবার জিজ্ঞেস করতে আছে? দিলেই খাই।”

সুজনবাবু একটা সন্দেশের বাক্স ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন, বললেন, “খাও, অনেক আছে।”

তিন জনেই টপটপ করে কয়েকটা খেয়ে নিল। “আরও খাব মশাই?”

“খাও খাও, কোনও বাধা নেই।”

বাক্স একটু বাদেই ফাঁকা হয়ে গেল। সুজনবাবু বললেন “ওই কুঁজোয় জল আর পাশে গেলাস আছে। জলও খেতে পারো।”

তিনজনেই উঠে গিয়ে জল খেয়ে এল।

জগা পেটে হাত বুলিয়ে বলল, “আহা ভুড়ি ঠাণ্ডা না থাকলে মাথাটাও ঠাণ্ডা থাকে না কিনা, আহা, এখন বড় আনন্দ হচ্ছে।”

“হচ্ছে? বেশ বেশ!”

“তা কী ভাবলেন বলুন তো! নাকি বুদ্ধি দেওয়ার জন্য নিতাই পালকে আনতে হল?”

“নিতাই পাল! সে কেন আসবে?”

“এসেছে মশাই, নিজের চোখে দেখেছি।” সুজনবাবু একটু হেসে বললেন, “তোমার চোখ দেখছি বেশ শার্প।” হাই তুলে জগা বলল, “যে আজ্ঞে। চোরের চোখ বলে কথা।”

আরও দু’জনও হাই তুলল, বড্ড ঘুম পাচ্ছে তিনজনের।

জগা বলল, “মশাই সন্দেশে কি সিদ্ধি-টিদ্ধি কিছু মেশানো ছিল?”

“কেন বলো তো।”

“এত ঘুম পাচ্ছে কেন?”

“ঘুম পেলে ঘুমোও।”

সুজনবাবু একটু হাসলেন। তিনজনের ঘুমন্ত মাথা পর্যায়ক্রমে ঠাই ঠাঁই করে টেবিলে পড়ল হঠাৎ।

.

২২.

ঘরের বাইরে পেছনের আগাছার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে জানালার পাল্লার একটু ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরকার দৃশ্যটা দেখছিল আর-একজন। সুজনবাবু তিনটে চোরকে সন্দেশ খাওয়ালেন এবং তারপরই তিনজন প্রায় একই সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে টেবিলে মাথা দিয়ে পড়ে রইল।

সুজনবাবু পেছনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত তিনজনের দিকে চেয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলেন, তারপর অনুচ্চ গলায় ডাকলেন, “নিতাই!”

ভেতরের ঘর থেকে নিতাই বেরিয়ে এল। চোখমুখে কিছুটা যেন আতঙ্কের ভাব, “সুজনবাবু, এরা মরে যায়নি তো!”

“আরে না, মরবে কেন? ঘণ্টা কয়েকের জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে মাত্র।”

“বাঁচা গেল।”

“বড় জ্বালাচ্ছিল। চোর বটে, কিন্তু বুদ্ধিমান চোর নয়। কাজ পণ্ড করে দিত।”

“কিন্তু কাজটাই বা কী করে হবে? সেই কড়ি আর পয়সা তো চুরি হয়ে গেছে।”

গম্ভীর হয়ে সুজনবাবু বললেন, “হুঁম, সেটাই ভাবিয়ে তুলল।”

“চোরদের তো আপনি দেখেছেন। চেনা ঠেকেনি?”

“না হে! আচমকা মাথায় মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছিল।”

“এরা কি এভাবেই পড়ে থাকবে?”

“না, জ্ঞান ফিরলে গোলমাল করতে পারে। আমার ঘরে এভাবে এদের পড়ে থাকাটাও ভাল দেখাবে না।”

“তা হলে?”

“একটু পরিশ্রম করতে হবে।”

“তিনজনকে অন্য কোথাও পাচার করবেন?”

“ঠিক ধরেছ, তবে বেশি দূরে নয়। রাস্তার ওপাশে একটা জংলা জায়গা আছে। ধরাধরি করে সেখানে নিয়ে গিয়ে রেখে আসতে হবে।”

“কিন্তু তাতে কি প্রতিক্রিয়া এড়াতে পারবেন?”

“সে পরে দেখা যাবে।”

“এরা জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আপনার ওপর প্রতিশোধ নেবে না তো?”

“তত এলেম এদের নেই। অন্তত পাগলু সেরকম নয়। তবে ওই জগাটা একটু ঢ্যাঁটা আছে। আর রামপ্রসাদ এ-গাঁয়ের লোক নয়। কাজেই ওকে নিয়ে চিন্তা নেই।”

“তা হলে চলুন, কাজটা সেরেই ফেলা যাক। দেরি করলে কে কখন এসে পড়বে।”

এরপর দুজন ধরাধরি করে একে-একে তিনজনকে নিয়ে আগাছার জঙ্গলে ফেলে এল। তারপর দুজনে মুখোমুখি বসল।

নিতাই বলল, “এরপর প্ল্যানটা কী?

“এটা তো জানা গেছে যে, গগনচাঁদের হাটই সাতপয়সার হাট। আর সাতকড়ি নামে একশো বছরের কাছাকাছি বয়সি একটা লোকও সেখানে থাকে। সুতরাং আমাদের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।”

“কাজ কোনদিকে এগোল তা তো বুঝতে পারছি না।”

“কেন বলো তো?”

“গোটাটাই তো অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া।”

সুজনবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “হয়তো তাই। কিন্তু কে বলতে পারে?”

“সুজনবাবু, সামান্য একটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে শূলপাণিকে সরিয়ে ফেলা বা পরঞ্জয়বাবুকে অন্যত্র নিয়ে রাখাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়নি কি?”

সুজন থমথমে মুখে বলে, “তুমি জানো না, শূলপাণির মুখচোখ দেখে আমার মনে হয়েছিল, সেই ওই বাক্সের রহস্য প্রায় ভেদ করে ফেলেছে। পাগল ছাগল যাই হোক, শূলপাণিকে ছেড়ে রাখা বিপজ্জনক ছিল, আর পরঞ্জয় শূলপাণির সঙ্গে মাখামাখি শুরু করায় ব্যাপারটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।”

“বিপদ এখনও আছে। শূলপাণি ছাড়া পেয়ে গাঁয়ের লোককে ঘটনাটা বললে কী হবে কে জানে!”

“ভয়ের কিছু নেই। শূলপাণিকে গুম করেছে বাইরের ভাড়াটে লোক। আমরা যে তার পেছনে আছি, তা তো সে জানে না।”

“আপনাকে ধরা যাবে না ঠিকই, কিন্তু আমাকে তো শূলপাণি দেখেছে।”

“তোমারও ভয় নেই, তুমি অন্য গাঁয়ে থাকো, তোমাকে কেউ কিছু করবে না। তা ছাড়া শূলপাণিকে তো আমরা খারাপ রাখিনি। সে খাচ্ছে দাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে, আরামে আছে। শুধু ঘরে তালা দিয়ে রাখা হয় এই যা।”

“পরঞ্জয়বাবু কি কিছু সন্দেহ করবেন না?”

“পরঞ্জয়বাবুর কেসটা আলাদা, তাঁর সংসারে শান্তি ছিল না বলে তাঁকে আমি অজ্ঞাতবাসের পরামর্শ দিই। তিনি তো খুশি মনেই প্রস্তাবটা মেনে নিয়েছেন। আছেনও ভাল। জঙ্গলের মধ্যে ক্যাম্প করে দিব্যি শিকার করছেন, নিজেই রান্না করে খাচ্ছেন। দেখাশোনা করার জন্য লোকও রাখা হয়েছে একজন।”

নিতাই বলল, “হ্যাঁ, এঁদের পেছনে আপনার টাকা আর পরিশ্রম বড় কম যায়নি। কিন্তু শেষ অবধি কী লাভ হবে সেটাই ভাববার বিষয়।”

“দ্যাখ নিতাই, জীবনটা এরকমই, সবসময়ে লাভ হবে এমন কথা নেই, ঝুঁকি নিতেই হয়। টাকা খরচ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যদি আন্দাজটা লেগে যায় তা হলে এই খরচটা সুদে-আসলে উশুল হয়ে যাবে।”

“কিন্তু সুজনবাবু, এখন প্রশ্ন হল, ওই সাতটা পয়সা আর সাতটা কড়ি ছাড়া শেষ রক্ষা হবে কি না।”

“দেখা যাক। আজ রাতেই আমাদের রওনা হতে হবে। কাল ভোরেই আমাদের কাজ।”

“ঠিক আছে। আমি তৈরি।”

জানালার বাইরে ঘাপটি মেরে থাকা ছায়ামূর্তির পাশে হঠাৎ আর একটা ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়াল।

প্রথম ছায়ামূর্তি দ্বিতীয়জনের দিকে চেয়ে ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ থাকতে ইশারা করল।

ভেতরে সুজনবাবু তাঁর রিভলভারে গুলি ভরলেন, একখানা বাঁদুরে টুপিতে মুখমাথা প্রায় ঢেকে ফেললেন, হাতে দস্তানা গলালেন।

নিতাই পালও সোয়েটার পরল।

“তা হলে ‘দুর্গা’ বলে বেরিয়ে পড়া যাক সুজনবাবু।”

“হ্যাঁ চলো।”

দু’জনে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

প্রথম ছায়ামূর্তি দ্বিতীয়জনের দিকে চেয়ে বলল, “কিছু বুঝলে?”

“আন্দাজ করছি।”

“নাটের গুরু হচ্ছে ওই সুজনবাবু।”

দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “সে সন্দেহও ছিল।”

পবনকুমার মৃদু স্বরে বলল, “তোমার বাড়ি থেকে কাঠের বাক্সটা কবে চুরি যায়?”

“অনেকদিন আগে।”

“বাক্সের রহস্য কিছু জানো?”

“খুব পরিষ্কারভাবে জানি না, তবে পিতামহের আমলের কোনও ঘটনা। মনে হয় কোনও একজন বিশেষ খাতকের কাছে আমাদের প্রভূত পরিমাণ পাওনা আছে। দাদু কোনও কারণে সরাসরি পাওনাগণ্ডার দলিল না করে এরকম একটা অদ্ভুত সাঙ্কেতিক ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। হয়তো রহস্য ভালবাসতেন বলেই।”

“তার মানে বাক্স যে পাবে এবং রহস্য যে ভেদ করতে পারবে পাওনাগণ্ডা সে-ই আদায় করতে পারবে?”

 “হ্যাঁ।”

“আর না পারলে পাওনাগণ্ডা খাতকের দখলেই থেকে যাবে?”

“হ্যাঁ।”

“ভাল চাল দেখছি।”

“হ্যাঁ। আমার দাদু এসব ছোটখাটো রহস্য করতে ভালবাসতেন।”

“তার মানে তুমি ন্যায্য অধিকারী হয়েও পাওনাগণ্ডা আদায় করতে পারবে না?”

“তাই তো দাঁড়াচ্ছে।”

পবনকুমার একটু ভেবে বলল, “সুজনবাবু যদিও রহস্য ভেদ করতে পেরেছেন কিন্তু বাক্সটা ওঁর কাছে নেই। সুতরাং উনি সুবিধে করতে পারবেন না।”

“না।”

“কিন্তু সঙ্গে রিভলভার নিয়েছেন, খুন-খারাপি করবেন না তো!”

“লোকটাকে আমি সামান্যই চিনি। কীভাবে বলব?”

“উনি একটু গুণ্ডাপ্রকৃতির মানুষ। বয়স হওয়ায় গায়ের জোর কমলেও বুদ্ধি দিয়ে গুণ্ডামি করতে ছাড়েন না।”

“তাই তো দেখছি।”

পবনকুমার ভ্রূ কুঁচকে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “তোমাদের এখন পড়তি অবস্থা। পাওনাগণ্ডা আদায় হলে তোমার সুবিধে হত।”

“হ্যাঁ। প্রজাপালক হিসেবে এ-বংশের নাম ছিল, তুমি তো জানো। কিছু টাকা-পয়সা হাতে এলে সেই কাজটা করা যেত।”

“জানি, কিন্তু সুজনবাবুর সঙ্গে এঁটে ওঠা শক্ত। লোকটা মরিয়া হয়ে নেমেছে। শূলপাণি আর পরঞ্জয়বাবুকে গুম করার মতো কাজ যে করতে পারে সে সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়।”

“জানি, কিন্তু সজল সেই কাজটা কর নাম ছিল, তুমি তে

“বুঝেছি।”

“কিন্তু আমাদের একটা ভরসা আছে। বাক্সটা এখনও সুজনের হাতে নেই।”

“বাক্সটা কার কাছে আছে পবন?”

“সেটা জানলে তো কাজ হয়েই যেত।”

মহেন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি আশা ছেড়েই দিয়েছি।”

“তা কেন ছাড়বে? ঠাণ্ডা মাথায় এসো দুজনেই একটু ভাবি।”

“তা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ঘটনা যেমন দ্রুত এগোচ্ছে তাতে–”

“আরে, অত ভেঙে পোডো না। দেখাই যাক না।

.

২৩.

পবনকুমার আর মহেন্দ্র যখন স্থানত্যাগ করার উপক্রম করছে তখন হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে দু’জনেই দাঁড়িয়ে পড়ল। শব্দটা বেশ জোরালোই, কে যেন সুজনের দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করছে।

ঝনাৎ-ঝনাৎ করে বারতিনেক শব্দ হল। তারপরই ঝড়াক করে দরজাটা খুলে ঘরে ঢুকল একটি অন্ধকার মানুষ। অন্ধকার বলে তাকে দেখা গেল না ঠিকই, কিন্তু পবনকুমারের অভ্যস্ত চোখ দেখতে পেল লোকটা বেশ লম্বা-চওড়া।

একটা টর্চ জ্বেলে লোকটা চারদিকটা দেখতে লাগল। জিনিসপত্রও হাঁটকাল, বিশেষ করে টেবিলের ওপর কাগজপত্রগুলো, ড্রয়ার খুলে সব তছনছ করল কিছুক্ষণ।

পবনকুমার চাপা গলায় মহেন্দ্রকে বলল, “পরঞ্জয়বাবু।”

“অ্যাঁ! বলো কী!”

“চুপ।”

মহেন্দ্র চাপা গলায় বলল, “কী করছেন উনি?”

“কিছু খুঁজছেন?”

“কী খুঁজছেন?”

“তা কী করে বলব?”

“চলো ওঁকে ধরি।”

“ধরবে?”

“ক্ষতি কী?”

“অপ্রস্তুত হবেন হয়তো।”

“তা হোক না, আমাদেরও তো উনি অপ্রস্তুত কিছু কম করেননি।”

“তাহলে চলো ফটকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বেরোলে মুখোমুখি হওয়া যাবে।”

“তাই চলো।”

দু’জনে গিয়ে ফটকের দুধারে দাঁড়িয়ে রইলেন।

মিনিট পনরো বাদে পরঞ্জয় টর্চ নিবিয়ে বেরিয়ে এলেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবলেন, তারপর ভাবতে-ভাবতেই এগিয়ে এলেন ফটকের দিকে।

পবনকুমার মৃদুস্বরে বললেন, “এই যে পরঞ্জয়বাবু!”

পরঞ্জয় এমন চমকে উঠলেন যে, বলার নয়। ধাঁ করে একটা পিস্তল বের করে প্রায় ট্রিগার টিপে দিয়েছিলেন, আর কি। কিন্তু মহেন্দ্র তার চেয়েও দ্রুতবেগে পরঞ্জয়ের কবজি চেপে ধরে পিস্তলের লকটা নামিয়ে দিয়ে বললেন, “করছেন কী?”

পরঞ্জয় অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “আরে তোমরা! তোমরা এখানে কী করছ?”

পবন বলল, “সেই প্রশ্ন তো আমাদেরও, আপনি এখানে কী করছেন?”

পরঞ্জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “কী করছি তা এক কথায় বলা মুশকিল। বলতে সময় লাগবে।”

“তার আগে বলুন, হঠাৎ নিরুদ্দেশ হলেন কেন।”

“নিজের ইচ্ছেয় হইনি।”

“তবে কি সুজনবাবুর ইচ্ছেয়?”

“অনেকটা তাই, তিনি আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি সেটা গ্রহণ করেছি মাত্র।”

“এখন বাকি কথা বলুন।”

“এখানে দাঁড়িয়ে?”

“তার দরকার কী? আমরা সুজনবাবুর ঘরে গিয়েও বসতে পারি। উনি আজ রাতে আর ফিরবেন না।”

“ফিরবেন না? কেন কোথায় গেছেন সুজনবাবু?”

“গুপ্তধনের সন্ধানে।”

“সর্বনাশ! তা হলে তো–”

“ব্যস্ত হবেন না পরঞ্জয়বাবু। গুপ্তধন উদ্ধার করা অত সহজ নয়, কিন্তু আপনিই বা কেন গুপ্তধন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন?”

পরঞ্জয় একটু থতমত খেয়ে বললেন, “আসলে কী জানো, রহস্য ভেদ করতে আমি বড় ভালবাসি।”

পবনকুমার বললেন, “রহস্যভেদ করা ভাল, কিন্তু আগে জানা দরকার গুপ্তধন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা আসলে কার প্রাপ্য। আপনি কি তা জানেন?”

“না, কার প্রাপ্য তোমরা জানো?”

“জানি। ওই বাক্সটা মহেন্দ্রর হেফাজত থেকে অনেকদিন আগে চুরি যায়।”

“বলো কী।”

“হ্যাঁ। ওই গুপ্তধনের আসল উত্তরাধিকারী মহেন্দ্র। ওর পিতামহ কিছু বিষয়সম্পত্তি বা টাকাপয়সা যাই হোক একজনের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। কী শর্তে তা অবশ্য আমাদের জানা নেই, সেটা উদ্ধার করা যাবে কি না তাও জানি না। কিন্তু উদ্ধার হলে তা মহেন্দ্ররই প্রাপ্য হয়।”

পরঞ্জয় যেন একটু ঘাবড়ে গেলেন। তারপর বললেন, “ওহে বাপু, অতশত আমার জানা ছিল না। আমি শূলপাণির কাছে শুনেছিলাম যে, ওই বাক্সে যা আছে তা এলেবেলে জিনিস নয়, একটা সংকেত আছে।”

“তাই কি দুজনে যড়যন্ত্র করছিলেন?”

“ষড়যন্ত্র! ষড়যন্ত্র হবে কেন? আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি, সঙ্কেত উদ্ধারের চেষ্টা করতাম, যেমন লোকে ধাঁধাঁর সমাধান করে বা শব্দজব্দ মেলায়।

“গুপ্তধন যদি উদ্ধার হত তা হলে কী করতেন?”

“সত্যি কথা বলব?”

“বলুন না।”

“আমার ইচ্ছে ছিল কিছু মোটা টাকা পেলে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে অনেকটা জমি বন্দোবস্ত করে নিয়ে একটা জঙ্গল বানাতাম।”

“জঙ্গল?”

“হ্যাঁ। এ-দেশের বনজঙ্গল যেভাবে সাফ হয়ে যাচ্ছে, তাতে মনটা বড় খারাপ হয়।”

পবন আর মহেন্দ্র দু’জনেই হাসল। পরঞ্জয় বললেন, “জঙ্গল বানিয়ে বাঘ টাঘ ছাড়তাম।”

“তারপর বাঘগুলোকে শিকার করতেন তো!”

“আরে না, শিকারের শখ যৌবনে ছিল, এখন অরণ্যের জীবদের জন্যে কষ্ট হয়। যাকগে, গুপ্তধন যখন মহেন্দ্রর তখন আর ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই।”

“কিন্তু আপনি অজ্ঞাতবাস ছেড়ে ফিরছেন কবে?”

“সংসার আর ভাল লাগে না। জঙ্গলে তো বেশ আছি, তাঁবুতে থাকি, সারাদিন ঘুরি, পাখির ডাক শুনি। বেশ কেটে যাচ্ছে, তোমরা আমাকে এরকমই থাকতে দাও।”

“তাই নয় থাকবেন।”

“এতদিন সুজন আমাকে পুষতেন, তাঁরই খরচে আছি, এবার থেকে। হয় নিজের খরচেই থাকব।”

“আমাদের জানা দরকার সুজন আপনাকে পুষতেন কেন?”

“সেটা প্রথমে বুঝতে পারিনি, ভেবেছি আমার প্রতি তাঁর একটা সিমপ্যাথি হয়েছে বলেই বুঝি প্রস্তাবটা দিয়েছেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারি আমাকে ঘটনা থেকে দূরে রাখার জন্যেই এটা একটা চালাকি।”

“তাই ওঁর ঘরে আজ হানা দিয়েছিলেন?”

“অনেকটা তাই, আমি দেখতে এসেছিলাম বাক্সের সঙ্কেত ভেদ করে উনি কী পেয়েছেন।”

“তালা ভাঙলেন কেন?”

“সুজন নেই দেখে মাথায় বদ মতলব খেলে গেল। ভাবলাম সঙ্কেত ভেদ করে কোথাও কিছু লিখে রেখেছে কি না।”

“কিছু পেলেন?”

“না।”

“সঙ্কেত ভেদ করেও লাভ নেই, বাক্সটা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ওটা সুজনের হেফাজত থেকে চুরি গেছে।”

পরঞ্জয় একটু হেসে বললেন, “চুরি আমিই করিয়েছি।”

“বলেন কী?”

“হ্যাঁ। জঙ্গলে যারা কাঠ বা পাতা আনতে যায় তাদের সঙ্গে আমার খুব ভাব। তাদের দিয়েই কাজটা করিয়েছি।”

“তা হলে কি বাক্সটা আপনার কাছে?”

“অবশ্যই, ওটা আমি মোটা প্লাস্টিকে জড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছি।”

“সেটাই যে এখন দরকার!”

“তা হলে চলো, বের করে দিচ্ছি। ওয়ারিশান যখন পাওয়া গেছে তখন ও বস্তু রেখে আমার লাভ কী? মহেন্দ্র কিছু মনে কোরো না, আগে জানলে আমি লোভ করতাম না।”

মহেন্দ্র বললেন, “আমি কিছু মনে করিনি, তবে এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য পেলে খুশি হব।”

“নিশ্চয়ই, সুজনবাবু লোকটি খুব সুবিধের নন। যদিও খুবই উচ্চশিক্ষিত বলে শুনি, কিন্তু মতলবটা মোটেই ভাল নয়। চলো, একটু তাড়াতাড়ি যাই, নইলে অঘটন ঘটতে পারে।”

পবনকুমার বললেন, “হ্যাঁ, সেইটেই ভয়, সুজনবাবু পিস্তল নিয়ে গেছেন।”

তিনজনে যথাসাধ্য দ্রুতবেগে হাঁটা দিলেন।

.

২৪.

পরঞ্জয়, পবনকুমার আর মহেন্দ্রর রওনা হতে একটু দেরি হল, কারণ পরঞ্জয়ের জঙ্গলের আস্তানা অনেকটা দূর। পায়ে-হাঁটা পথ নয়। পরঞ্জয় একটা ঘোড়ায় চেপে এসেছেন, আরও দুটো ঘোড়া রাজবাড়ির আস্তাবল থেকে জোগাড় করতে হল, কপাল ভালই, আস্তাবলে রাজবাড়ির শেষ দুটো ঘোড়াই অবশিষ্ট আছে। মহেন্দ্র মাঝে-মাঝে চড়েন।

গোটাপাঁচেক গ্রাম পেরিয়ে প্রায় বারো মাইল দূরবর্তী জঙ্গলে পৌঁছতে বেশ সময় লেগে গেল।

জঙ্গলের পথে ঢোকার মুখে পরঞ্জয় হুঁশিয়ার করে দিলেন, “ওহে, এ রাস্তা খুব অন্ধকার, মাথার ওপর মোটা ডাল, লতাপাতা আছে। মাথা নিচু করে আস্তে-আস্তে এসো।”

“জঙ্গলটা বাস্তবিকই বেশ ঘন আর জম্পেশ।”

পবনকুমার বললেন, “একসময়ে এসব জঙ্গলে আমার আস্তানা ছিল। সব চিনি।”

পরঞ্জয় বললেন, “তা বটে। তুমি যে একসময়ে রাজদ্রোহী ছিলে তা ভুলেই গিয়েছিলাম।”

“ডাকাতিও করতে হত। সে একটা দিনই গেছে।”

আগু-পিছু তিনজন সাবধানে ঘোড়া চালাতে লাগলেন। পরঞ্জয়ের বেশ শক্তিশালী টর্চবাতি থাকায় তেমন অসুবিধে হল না।

জঙ্গলের মধ্যে মাইলখানেক এগনোর পর পরঞ্জয়ের তাঁবু দেখা গেল। মিলিটারির ধরনের খাঁকি রঙের মজবুত তাঁবু। তলায় মাটি চেঁছে লেপেপুছে বেশ তকতকে করা হছে, ডবল তাঁবুর ভেতরে ক্যাম্পখাট আর বসবাস করার জন্য অত্যাবশ্যক জিনিসপত্র রয়েছে।

“মহেন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, “এভাবে কষ্ট করে থাকেন বুঝি?”

“কষ্ট! কষ্ট কিসের? চিরকাল বনজঙ্গল ভালবাসি। এখানে থাকলে মনটা পবিত্র থাকে। খুব ভাল আছি হে।”

‘কিন্তু বিপদআপদ! সাপখোপ বা পোকামাকড়ের উৎপাতও তো আছে।”

“তা আছে। খুবই আছে। কিন্তু জঙ্গলে বসত করলে ধীরে ধীরে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তৈরি হয়ে যায়। তাঁবুতে যদি সাপ ঢোকে তবে গভীর ঘুমের মধ্যেও আমি ঠিক টের পাব।”

“পেয়ে কী করবেন? সাপটাকে মারবেন?”

“পাগল! অন্ধকারে, ঘুমচোখে সাপ মারার চেষ্টা করা আত্মহত্যার সামিল। তখন নড়াচড়া বন্ধ করে চুপটি করে শুয়ে থাকব। সাপ গা বেয়ে উঠলেও অকারণে কামড়াবে না।”

“আপনার সাহস আছে।”

“সাহস বলল সাহস, কৌশল বলো কৌশল।”

“জিনিসপত্র এভাবে ফেলে রেখে যান, চুরি হয় না?”

“না হে, পাহারাদার আছে।”

“কোথায় পাহারাদার? কাউকে তো দেখছি না!”

“দেখবে?” বলে হেসে পরঞ্জয় হঠাৎ হাঁক মারলেন, “টুপসা!”

ডাকার সঙ্গে-সঙ্গেই একজন বেঁটেখাটো মাঝবয়সী লোকের আবির্ভাব ঘটল তাঁবুর দরজায়। লঙ্কের ম্লান আলোয় যতদূর বোঝা গেল যে আদিবাসী মানুষ।

পরঞ্জয় বললেন, “আমি সঙ্গে আছি দেখে সামনে আসেনি। নইলে এতক্ষণে তোমাদের ওপর চড়াও হত।”

“এ কি আপনার কাছেই থাকে?”

“না। জঙ্গলের পাশেই ওদের গ্রাম। খোঁজখবর নেয়, নজরে রাখে, এই পর্যন্ত। আমিও ওদের দায়ে দফায় দেখি, অসুখ হলে হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিই।”

পরঞ্জয় একটা পেট্রোম্যাক্স জ্বাললেন, তারপর একটা শাবল বের করে বললেন, “চলো, আগে বাক্সটা তুলি।”

টুপকা পেট্রোম্যাক্সটা নিয়ে আগে-আগে চলল। তাঁবুর পেছন দিকে একটা বড় অশ্বত্থ গাছের তলায় পরঞ্জয় শাবল চালিয়ে গর্ত খুঁড়লেন। তারপর বাক্সটা বের করে মহেন্দ্রর হাতে দিয়ে বললো, “খুলে দেখে নাও, কড়ি আর পয়সা আছে কি না।”

মহেন্দ্র বাক্স খুলে দেখলেন, সবই ঠিক আছে।

সবাই ফের তাঁবুতে ফিরে এলেন। পরঞ্জয় বললেন, “সাতপয়সার হাটে যাওয়ার অর্ধেক পথ আমরা চলেই এসেছি। আরও দশ-বারো মাইল পথ, রওনা হওয়ার আগে একটু কফি খেয়ে নিই এসো, জঙ্গলে তোমাদের আর কী আপ্যায়ন করতে পারি বলো।”

মহেন্দ্র বললেন, “আপ্যায়নের দরকার নেই, কফি হলেই চলবে।”

পরঞ্জয় বললেন, “সঙ্গে বন্দুক-পিস্তল নিতে হবে নাকি?”

পবনকুমার বললেন, “একটা পিস্তল সঙ্গে থাক। তবে মনে হয় না ওসবের দরকার হবে। ভয় দেখানোর জন্য কাজে লাগতে পারে।”

আরও আধঘণ্টা বাদে তিনজন ঘোড়ায় চেপে রওনা হয়ে পড়লেন।

মহেন্দ্র পরঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলেন, “শূলপাণি এখন কোথায় তা কি জানেন?”

“না। শূলপাণিকেও কোথাও সরিয়ে রাখা হয়েছে।”

“কেন বলুন তো!”

“শূলপাণিকে তোমরা পাগল বলে জানো। পাগল না হলেও তার মাথায় ছিট আছে। কিন্তু বুদ্ধি বা মেধা তার বড় কম নেই। সে বুঝেছিল, এই বাক্সটা একটা রহস্যময় জিনিস।”

“বাক্সটা আমাদের বাড়ি থেকে চুরি যায়।”

“সেটা আমার জানা ছিল না।”

“আমি ভাবছি, বাক্সটার কথা সরলাবুড়ি কি করে জানল। আর চুরিই বা করাল কেন?”

সরলাবুড়ি যে রাজবাড়ি থেকেই ওটা চুরি করিয়েছিল এমন নাও হতে পারে। হয়তো তোমাদের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়ার পর সরলাবুড়ি ওটার সন্ধান পায় এবং চোরের ওপর বাটপাড়ি করায়।”

“হ্যাঁ, সবই সম্ভব। তবে বাক্সটার কথা জানা থাকলেও ওটা যে একটা সঙ্কেত, তা আমার জানা ছিল না, খুব সম্প্রতি আমার দাদুর কিন্তু পুরনো হাতের লেখা কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে বাক্সটার ব্যাপারে জানতে পারি। ততদিনে অবশ্য বাক্স চুরি হয়ে গিয়েছিল।”

পবনকুমার বললেন, “পরঞ্জয়বাবু, কিছু টাকা-পয়সা পাওয়া গেলে মহেন্দ্র মানুষের কাজে তা খরচ করবে।”

“খুব ভাল।”

মাঝরাত পেরিয়ে তাঁরা সাতপয়সার হাট নামে গাঁয়ে পৌঁছলেন। গ্রাম নিঃঝুম। শুধু কয়েকটা কুকুর তাঁদের দেখে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল।

পরঞ্জয় বললেন, “সাতকড়ির বাড়িটা কোন দিকে?”

পবনকুমার বললেন, “গাঁয়ের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য বাড়িটাই তার হওয়ার কথা, চলুন, একটু ঘুরে দেখি।”

বেশি খুঁজতে হল না। গাঁয়ের এক প্রান্তে বেশ বড় পাঁচিলঘেরা একটা দোতলা বাড়ি দেখা গেল। ফটকে মোটা তালা ঝুলছে। ফটকের ভেতরে দারোয়ানের ঘরে দারোয়ানও আছে বলে মনে হল। তবে সে হয়তো ঘুমোচ্ছে।

পরঞ্জয় বললেন, “এবার?” মহেন্দ্র বললেন, “আমাদের একটু আড়ালে অপেক্ষা করতে হবে।”

“আড়ালে কেন?”

“কারণ, সুজনবাবু এবং নিতাই পালও এখন এ-গাঁয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়াটা আমি এড়াতে চাই।”

“তা বটে।”

পবনকুমার বললেন, “চণ্ডীমণ্ডপটা পেরিয়ে এলাম। চলুন, সেখানেই ফিরে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিই। সকাল হোক তারপর দেখা যাবে।”

“সেটাই ভাল।”

চণ্ডীমণ্ডপটা ফাঁকা হাঁ-হাঁ করছে। বাঁধানো চাতালে তিনজন বসে জিরোতে লাগলেন। ঘোড়াগুলো ছাড়া পেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোতে লাগল।

পরঞ্জয় হঠাৎ বললেন, “আচ্ছা, ওরা তো সোজা পথে গুপ্তধন উদ্ধার করতে পারবে না। যদি ওরা আজ রাতেই ও-বাড়িতে ঢুকে হামলা করে?”

পবনকুমার সোজা হয়ে বসে বললেন, “তাই তো?”

.

২৫.

তিনজনেই ফের উঠে পড়লেন।

পরঞ্জয় বললেন, বিশ্রাম নিয়ে ভাববেন না। আমরা বরং সাতকড়ির বাড়ির ধারে কাছে থানা গেড়ে থাকি।

পবনকুমার বললেন, সেইটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মহেন্দ্র বলে উঠলেন, কিন্তু সুজনবাবু যে রকম মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাতে গুলিটুলি চালিয়ে দেবেন না তো!

পরঞ্জয় গম্ভীর হয়ে বললেন, অসম্ভব নয়। আমি যতদূর জানি সুজনবাবু একটা ল্যাবরেটারি বানানোর চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানের গবেষণাগার তৈরি করতে অনেক টাকা লাগে। সেই টাকার জন্যই উনি হন্যে হয়ে উঠেছেন।

পবনকুমার বললেন, কিসের ল্যাবরেটারি তা জানেন? বিজ্ঞানের তো অনেক শাখা।

পরঞ্জয় বললেন, উনি সেটা আমাকে ভেঙে বলেননি। আমেরিকায় উনি কী করতেন তাও কখনও আলোচনা করেননি।

মহেন্দ্র বললেন, যতদূর মনে হয় ওঁর বিষয় হল পদার্থবিদ্যা। উনি একজন পণ্ডিত ও গুণী মানুষ। তবু এই বেআইনি কাজটি কেন করতে যাচ্ছেন সেটাই বুঝতে পারছি না।

পবনকুমার বললেন, এ গাঁয়ের অপরাধীদের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ আছে। সেটাও খুব ভাল ব্যাপার নয়।

মহেন্দ্র বললেন, গন্ধটা থেকেই যাচ্ছে।

তিনজন হাঁটতে হাঁটতে সাতকড়ির বাড়ির ফটকের কাছে পৌঁছে গেলেন।

পরঞ্জয় বললেন, বাড়ির কম্পাউন্ডটা বিশাল বড়। তবু একটা চক্কর সেরে আসবে নাকি হে?

পবন বললেন, সেটা মন্দ প্রস্তাব নয়।

সাতকড়ির বাড়ির চারদিকে দশ ফুট উঁচু দেয়াল। দেয়ালের ওপরে কাঁচ বসানো। তবু দেয়ালটা ডিঙোনো খুব একটা শক্ত কাজ নয়। কারণ, বাড়ির উত্তর আর পশ্চিমে দেয়ালের বাইরেই বিশাল আমবাগান। সেই আম বাগানের মেলা গাছের ডাল সাতকড়ির দেয়াল ডিঙিয়ে ভেতরে ঝুলে পড়েছে। গাছের ডাল বেয়ে দিব্যি ঢোকা যায়।

পরঞ্জয় সেই কথাটাই বললেন, চারদিকে দেয়াল থাকলে কী হবে, চোরের পক্ষে কোনও সমস্যাই নয়।

পবনকুমার বললেন, চোরেরা পারলেও সুজনবাবুর পক্ষে পারা মুশকিল। তাঁর বয়স সত্তরের ওপর।

পরঞ্জয় বললেন, আমার বয়সও সত্তরের কাছাকাছি। আমি জঙ্গলে যে ভাবে বাস করি তোমরা পারবে না। বয়সটা ফ্যাকটর নয়। আসল কথা হল প্র্যাকটিস। সুজনবাবু বেশ চটপটে এবং শক্তিমান মানুষ।

মহেন্দ্র বললেন, হ্যাঁ, তা বটে।

পরঞ্জয় বললেন, সত্তর বছর বয়সেও সুজন ব্যায়াম করেন। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া আর পরিশ্রমের ফলে সুজন বেশ ফিট। কিন্তু এই বয়সে বেশি আকাঙ্ক্ষা করাটা ঠিক নয়। ওঁর উচ্চাশা বড্ড বেশি।

তাঁরা হাঁটছেন আগাছা এবং ঝোঁপ-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। নিকস্যি অন্ধকার চারদিকে। পরঞ্জয় মাঝে মাঝে টর্চ জ্বেলে পথ দেখে নিচ্ছেন। তাঁর পেছনে পবন এবং মহেন্দ্র।

পবন কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ পরঞ্জয় থমকে দাঁড়িয়ে হাত তুলে বললেন, চুপ।

টর্চটা নিবিয়ে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো পরঞ্জয়। তারপর খুব চাপা গলায় বললেন, হুঁশিয়ার।

পবন বললেন, কী হল? সামথিং ইজ হ্যাঁপেনিং অ্যাহেড। শব্দ না করে এসো।

একটু থেমে তিনজন আবার সাবধানে এগোতে লাগলেন। দশ-বারো গজ এগিয়ে পরঞ্জয় আবার দাঁড়ালেন। টর্চটা জ্বেলে চারদিকটা খুঁটিয়ে দেখে বললেন, এখান দিয়েই ঢুকেছে।

পবন বললেন, একটু বুঝিয়ে বলুন।

সামনে একটা আমগাছের গায়ে টর্চ ফেলে পরঞ্জয় বললেন, এ গাছটায় ওঠা সবচেয়ে সহজ একখানা ডাল কেমন বাঁকা হয়ে উঠে গেছে দেখেছো? এই ডাল বেয়ে যে-কেউ দেয়াল পেরোতে পারে।

কেউ দেয়াল পেরিয়েছে বলে মনে হচ্ছে কেন আপনার?

আমি জঙ্গলে থাকি তো তাই আমার কান খুব সজাগ। সামান্য ডালপালা নাড়া বা পাতা খসে পড়ার শব্দও টের পাই। কেউ যে এই গাছ বেয়েই ভেতরে ঢুকেছে তাতে সন্দেহ নেই।

পরঞ্জয়বাবু টর্চ জ্বেলে দুজনকে দেখালেন, গাছের তলায় ঝোঁপঝাড়ে কিছু দলিত মথিত ভাব। আর হেলানো ডালটার গা থেকেও একটু বাকল খসার চিহ্ন।

পবন বললেন, তাহলে আমরা এখন কী করব?

পরঞ্জয় দৃঢ়স্বরে বললেন, আমাদেরও মহাজনপস্থা নিতে হবে।

সর্বনাশ! বুড়োবয়সে পড়েটড়ে যে হাড় ভাঙবে। প্রাণও যেতে পারে।

তুমি না বিপ্লবী ছিলে! ছোঃ, প্রাণের ভয় আবার একটা ভয় নাকি? আর বয়সের কথা তুললে বলতেই হয় যে, তোমরা আমার হাঁটুর বয়সী। বুড়ো হওয়ার আগেই বুড়িয়ে গেলে চলবে কেন?

আচ্ছা ঢুকে হবেটা কী?

তা জানি না। আমার মন বলছে আমাদের ভেতরে যাওয়া একান্ত দরকার।

আপনাকে নিয়ে আর পারা যায় না। সবসময় আপনি অ্যাডভেঞ্চার খোঁজেন। কী আর করা যাবে। চলো হে মহেন্দ্র।

গাছে উঠতে খুব যে একটা অসুবিধে হল, তা নয়। তবে অন্ধকার বলে একটু সময় লাগছিল। তবে ডালটা বড় চমৎকার। দেয়াল পেরিয়ে একটা প্যারাবোলার মতো মাটির কাছাকাছি নেমে গেছে। পরঞ্জয় এই বয়সেও দারুণ চটপটে। ডাল বেয়ে সাতকড়ির বাগানে নামতে তাঁর তিন মিনিটও লাগল না। পবন আর মহেন্দ্রর সময় একটু বেশি লাগল।

অন্ধকার বাগানে নেমে তিনজন একটু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। চারদিক নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঝির ডাক শোনা যাচ্ছে। কাছেপিঠেই কোথাও

একঝাঁক শেয়াল ডাকল।

মহেন্দ্র বললেন, এবার?

পরঞ্জয় চাপা গলায় বললেন, চারদিকে মেলা গাছপালা রয়েছে। কিছু দেখার উপায় নেই। চলো, বাড়িটার দিকে এগোই।

পবন বললেন, কুকুর নেই তো!

থাকতে পারে। তবে কুকুর যদি তাড়া করে তবে ওদেরই আগে করবে। এসো।

চারদিকে দুর্ভেদ্য গাছপালা। বাগান না বলে জঙ্গল বলাই ভাল। পরঞ্জয় অভিজ্ঞ মানুষ। জঙ্গল ভেদ করে তিনিই আগে চললেন। পেছনে পবন আর মহেন্দ্র। খানিক দূর গিয়ে একটা পুকুরধারে পৌঁছালেন তারা। পুকুরের ওপাশে দুর্গের মতো বাড়ি।

পবন বললেন, ও বাবা, এ তো বিশাল বাড়ি। সাতকড়ি কোন ঘরে থাকে। তা বুঝব কী করে?

পরঞ্জয় বললেন, আগে থেকে অত ফ্যাঁকড়া তুলে লাভ কী? চলো দেখাই যাক।

পুকুরধার ধরে এগিয়ে গিয়ে তাঁরা বাড়ির পেছন দিকটায় পৌঁছলেন। গোটা বাড়িটাই অন্ধকার। কোথাও কোনও সাড়াশব্দ নেই। দরজা জানালা সবই আঁট করে বন্ধ।

পবন বললেন, পরঞ্জয়বাবু, সুজন আর নিতাইকে তো দেখা যাচ্ছে না।

না, ওরাও এন্ট্রান্স খুঁজছে নিশ্চয়ই। এসো, আমরাও চারদিকটা ঘুরে দেখি।

ঘুরে দেখাও সোজা ব্যাপার নয়। বাড়ির চারদিকে মেলা ঝোঁপজঙ্গল এবং বড় বড় গাছ।

পরঞ্জয় টর্চ আর জ্বালছিলেন না। অন্ধকারেই ঠাহর করে করে এগোতে এগোতে হঠাৎ থেমে হাত তুললেন।

কেউ কোনও কথা বলল না। সামনেই একটা নিমগাছ। গাছটা দোতলা ছাড়িয়ে ছাদে গিয়ে পৌঁছেছে।

পরঞ্জয় একটু ইশারা করে গাছটা বেয়ে উঠতে লাগলেন।

কোথায় উঠছেন? পবন চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করে।

 ছাদে।

এখানে হেলানো ডাল নেই। খাড়া গাছে ওঠাও শক্ত। তাছাড়া মহেন্দ্র কাঠের বাক্সটা নিয়ে উঠতেও পারবেন না।

পরঞ্জয় উঠতে উঠতেই বললেন, তোমরা দাঁড়াও, আমি দেখে আসছি। মনে হয় এটা দিয়েই ওরা ছাদে উঠেছে। ছাদ দিয়ে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করবে।

অগত্যা দুজনে নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন। হনুমানকেও লজ্জা দেওয়ার মতো দক্ষতায় টারজানকেও হারিয়ে দেওয়ার মতো দ্রুতবেগে পরঞ্জয় দোতলা ছাড়িয়ে ছাদের কাছে উঠে গেলেন। তারপর আর তাঁকে দেখা গেল না।

মহেন্দ্র বললেন আশ্চর্য লোক বটে!

<

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়