দ্বিতীয় অযোধ্যাকাণ্ড শুন সর্ব্বজন।
কৈকেয়ীর বাক্যে রাম যাইবেন বন।।
বৃদ্ধ রাজা দশরথ, শিরে শুভ্র কেশ।
আসন বসন শুভ্র, শুভ্র সর্ব্ব বেশ।।
রাজত্ব করেন রাজা বসি সিংহাসনে।
আইল সকল রাজা রাজ-সম্ভাষণে।।
হস্তী ঘোড়া নানা রত্ন নানা আভরণ।
বিবাহে যৌতুক রামে দেন রাজগণ।।
নমস্কার করি বলে যোড় করি হাত।
মহারাজ দশরথ তুমি লোকনাথ।।
নমস্কার করি বলে যোড় করি হাত।
মহারাজ দশরথ তুমি লোকনাথ।।
এক নিবেদন করি শুন নৃপবর।
শ্রীরামেরে রাজা কর সর্ব্বগুণাকার।।
বালক শ্রীরাম চুলে পঞ্চঝুঁটি ধরে।
মারীচ রাক্ষস পলাইল যাঁর ডরে।।
রামতুল্য বীর আর নাহি ত্রিভুবনে।
রাম রাজা হইলে আনন্দ সর্ব্বজনে।।
অন্তরে সানন্দ রাজা শুনিয়া বচন।
বাক্ছলে সবার বুঝেন রাজা মন।।
শ্রীরাম হইলে রাজা সবার সন্তোষ।
বৃদ্ধকালে আমি করিলাম কিবা দোষ।।
পুত্রবৎ পালি প্রজা, করি দুষ্টে দণ্ড।
কোন্ দোষে আমার ঘুচাও রাজদণ্ড।।
আনন্দিত অন্তরে, বাহিরে ওষ্ঠ চাপে।
ভূপতির কোপ দেখি সর্ব্ব রাজা কাঁপে।।
সবারে সভয় দেখি দশরথ কয়।
পরিহাস করিলাম, না করিহ ভয়।।
বশিষ্ঠেরে ডাকি আনি কুলপুরোহিত।
রামে রাজা কর সবে হয়ে হরষিত।।
ভূপতির অনুজ্ঞা পাইয়া সর্ব্বজন।
করিল সকলে তাঁর চরণ বন্দন।।
ভূপতি বলেন, শুন পাত্র মিত্রগণ।
রামে রাজা করিব করহ আয়োজন।।
নানা পুষ্প বিকাশ, বসন্ত চৈত্র মাস।
কালি রাম রাজা হবে আজি অধিবাস।।
অধিবাস করিতে যতেক দ্রব্য লাগে।
যে সকল দ্রব্য আহরণ কর আগে।।
শ্রীরামের অধিবাসে যত দ্রব্য চাই।
যে সকল আনি দেহ বশিষ্ঠের ঠাঁই।।
সুমন্ত্র সারথি তুমি চলহ সত্বর।
রথে করি আন রামে আমার গোচর।।
আজ্ঞা পেয়ে সুমন্ত্র চলিল শীঘ্রগতি।
শ্রীরামেরে আনিল যেখানে মহীপতি।।
কত দূরে রথ হৈতে নামিলেন রাম।
পিতার চরণে পড়ি করিল প্রণাম।।
আশীর্ব্বাদ করিলেন রাজা শ্রীরামেরে।
সিংহাসনে বসাইলা হরিষ অন্তরে।।
পিতা পুত্রে বসিলেন সিংহাসনোপরে।
পাত্র মিত্র সকলে বেষ্টিত নৃপবরে।।
নক্ষত্রে বেষ্টিত যেন পূর্ণ শশধর।
সেইমত শোভিত হইল রঘুবর।।
পুত্রেরে শিখান বিদ্যা সভা বিদ্যমান।
রাজনীতি ধর্ম্ম আর বিবিধ বিধান।।
প্রথমা রাণীর তুমি প্রথম নন্দন।
ভূপতি হইয়া কর প্রজার পালন।।
লোকের আদ্দাশ তুমি শুনহ যতনে।
তোমার মহিমা যেন সর্ব্বত্র বাখানে।।
রাজনীতি ধর্ম্ম তুমি শিখ সাবধানে।
যাহাতে মহিমা যশ বাড়ে দিনে দিনে।।
পরের দেখহ যদি পরমা সুন্দরী।
না দেখিহ সে সবারে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করি।।
রাজা যদি পরদার করে ব্যবহার।
আপনি সে মজে পাপে, মজায় সংসার।।
পরহিংসা পরপীড়া না করিহ মনে।
কভু না করিহ রাম লোভ পরধনে।।
শরণ লইলে শত্রু কর পরিত্রাণ।
অপরাধ বিনা কারো না লইও প্রাণ।।
তপ জপ ধর্ম্ম কর্ম্ম করিবে বিহিত।
না হইও দেব দ্বিজে ভক্তিতে রহিত।।
যজ্ঞাদিতে নানা যশ করিহ সঞ্চয়।
সর্ব্বলোক দয়ালু হইও সদাশয়।।
পরদার পরপীড়া করে যেই জন।
শাস্ত্র-অনুসারে তার করিহ শাসন।।
অপরাধ মত দণ্ড করো সাবধানে।
দোষ নাহি রাজার সে শাস্ত্রের বিধানে।।
দুঃখিত অনাথ রাম যদি কেহ হয়।
তাহারে পালিলে পুণ্য সর্ব্বশাস্ত্রে কয়।।
দেব গুরু ব্রাহ্মাণে তুষিহ ভক্তিমনে।
দেখ সর্ব্বলোকে যেন দুঃখ নাহি জানে।।
রাজনীতি ধর্ম্ম রাজা শিখান রামেরে।
শুনিয়া কৌশল্যা রাণী হরিষ অন্তরে।।
রামের কল্যাণে রাণী করে নানা দান।
স্বর্ণ রৌপ্য অন্ন বস্ত্র সহস্র প্রমাণ।।
মুনি ব্রহ্মচারী যত ভট্ট বিপ্রগণ।
সবাকারে দেন রাণী নানাবিধ ধন।।
যত যত লোক আছে যত যত স্থানে।
সবারে আনিয়া রাণী তোষে নানা ধনে।।
আইল যতেক লোক রাজ-বিদ্যমানে।
রামচন্দ্র রাজা হবে শুনি ভাগ্য মানে।।
কেহ নাচে, কেহ গায়, আনন্দ বিশেষ।
রাম রাজা হইলে না হবে কার ক্লেশ।।
যত যত লোক আছে অযোধ্যা-নগরে।
রামের নিকটে যার হরিষ অন্তরে।।
সমাদরে সকলেরে করিয়া সম্মান।
জননী দর্শনে রাম করেন প্রয়াণ।।
মাতৃগৃহে উপস্থিত মনে কুতূহলী।
অযোধ্যাকাণ্ডেতে গান প্রথম শিকলি।।
০১. শ্রীরামচন্দ্রের রাজা হইবার প্রস্তাব
- Details
- Super User
- কৃত্তিবাসী রামায়ণ
- Category: (২) অযোধ্যাকাণ্ড
- Read Time: 1 min
- Hits: 186