ইমন হাঁটছে। হাঁটতে তার ভাল লাগে। হাঁটার সময় চারদিকে খেয়াল রাখতে হয় বলে মাথায় অন্য চিন্তা আসে না। রিকশায় উঠতেই উদ্ভট উদ্ভট সব চিন্তা আসে। আজ রাস্তায় হাঁটতে ইমনের ভাল লাগছে না। ঘুম পাচ্ছে। কাল রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয় নি। সেই ঘুমে এখন শরীর প্রায় জমে যাচ্ছে। এমন কোন উদাহরণ কি আছে যে হাঁটতে হাঁটতে একজন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ল, এবং ঘুমের মধ্যেই হাঁটতে থাকল? উদাহরণ না থাকলে সে তৈরি করবে। গিনিস বুক অব রেকর্ডে নাম উঠবে।-বাংলাদেশের ইমন ঘুমন্ত অবস্থায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তার ছাত্রীকে পড়াতে যান। ঘুমন্ত অবস্থাতেই তাকে এক ঘন্টা পড়ান এবং ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। গিনিস বুক অব রেকর্ডে নাম উঠার পর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ইন্টার্ভূ ছাপা হতে থাকলে বিভিন্ন সংগঠন পুরস্কার দেয়া শুরু করবে। উপাধিও দিতে পারে। বীর শ্রেষ্ঠের মত ঘুম শ্ৰেষ্ঠ জাতীয়।

আচ্ছা এইসব সে কি ভাবছে? ঘুম কাটাবার জন্যে ইমন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে থামল। পর পর দুকাপ চা খেল। টাকা দিতে গিয়ে দেখে ভাংতি নেই। একটা পাঁচশ টাকার নোট। দুপ্যাকেট সিগারেট কিনলে টাকার ভাংতি পাওয়া যাবে। দুপ্যাকেট সিগারেটই দরকার। একজনকে দিতে হবে। আচ্ছা তিন প্যাকেট সিগারেট কিনলে কেমন হয়? তার নিজের জন্যে এক প্যাকেট।

রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানবে। মা হঠাৎ ঘরে ঢুকে আতংকিত গলায় বলবেন, কি করছিস? সে বলবে, সিগারেট খাচ্ছি মা।

বিছানায় আধশোয়া হয়ে সিগারেট খেতে খেতে গল্পের বই পড়তে নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগবে। নবনীদের ঘর ভর্তি গল্পের বই।

আজ ফেরার পথে নবনীর কাছ থেকে কিছু গল্পের বই চেয়ে নিয়ে আসতে হবে। বই ধার চাইলেই সে আহ্লাদী ধরণের কোন একটা কথা বলবে। নবনী সহজ ভাবে কোন কথা বলতে পারে না। তার কাছে প্ৰকান্ড একটা কাচের জার আছে, জার ভর্তি তরল আহ্লাদী। নবনী প্রতিটি কথা বলার আগে আহ্লাদী জারে ড়ুবিয়ে বলে। নবনীকে যে ছেলে বিয়ে করবে তার প্রথম করণীয় কাজটা হচ্ছে বিয়ের রাতেই আহ্লাদীর জারটা ভেঙ্গে ফেলা। আচ্ছা এইসব সে কি ভাবছে? নবনীর আহ্লাদীতে তার কিছু যায় আসে না। নবনী যা ইচ্ছা করুক। তার দায়িত্ব নবনীকে অংক শেখানো।

নবনীকে সে সপ্তাহে তিনদিন পড়ায়-সন্ধ্যার পর এক ঘন্টা। পড়ানোর টাইম টেবিলের ঠিক নেই। হুট করে নবনী বলবে, স্যার আগামী কাল আসবেন না। পরশু দিন আসুন। দুপুর দুটার সময়। যদি আপনার কাজ না থাকে।

স্যার শুনুন, আগামী এক সপ্তাহ আসবেন না। আমরা দলবেধে টেকনাফ যাব। না গিয়ে থাকলে আমাদের সঙ্গে চলুন। প্লীজ, প্লীজ, প্লীজ।

ইমন ঠিক সাড়ে তিনটায় নবনীদের বাড়ির সামনে উপস্থিত হল। নবনী দরজা খুলে আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বলল, ওমা! স্যার আপনি!

ইমন বিস্মিত হয়ে বলল, তুমিতো সাড়ে তিনটার সময় আসতে বলেছিলে।

ও আল্লা আমার কি হবে? কিছু মনে নাই। আজকেও বোরিং ম্যাথ নিয়ে বসতে হবে। ছুটির দিনেও ম্যাথ?

তোমার ইচ্ছা না করলে থাক।

উহু, থাকবে কেন? এসেছেন যখন তখনতো পাশা খেলতেই হবে।

পাশা খেলতে হবে মানে কি?

পাশা খেলার গান শুনেন নি? হিট গান—আইজ পাশা খেলবারে শ্যাম। স্যার, আপনি পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে বই-খাতা নিয়ে চলে আসব। এই পাঁচ মিনিট বরং খবরের কাগজ পড়ুন। আজকের কাগজ পড়েছেন।

না।

আমিও পড়ি নি। পড়তে ভাল লাগে না—সব সময় বিশ্ৰী বিশ্ৰী সব নিউজ ছাপা হয়। স্যার আমি যাই—জাস্ট ফাইভ মিনিটস।

ইমন কুড়ি মিনিট ধরে বসে আছে। নবনীর খোেজ নেই। বিশাল বাড়িতে নিজেকে ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছ মনে হচ্ছে। বড় বড় সোফা, সোফার সামনে কাচের টেবিল। পায়ের নিচের কার্পেটটা এতই সুন্দর যে এর উপর দাঁড়াতে মায়া লাগে। ড্রয়িং রুমের দুই কোনার কাচের তিনকোণা টেবিলে দুটা শ্বেত পাথরের নারী মৃতী। গায়ের কাপড় গায়ে থাকছে না, খুলে পড়ে যাচ্ছে। মুতী দুটার দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না, আবার দৃষ্টিও ফিরিয়ে নেয়া যায় না। ইমনের নিজেকে বসার ঘরের অনেক আসবাবের মত একটা আসবাব বলে মনে হচ্ছে।

স্যার, আপনাকে চা দেয় নি। কি আশ্চর্য, আমি বলে গেলাম চা দিতে। ছিঃ ছিঃ স্যার আপনি কি রাগ করেছেন?

না। রাগ করব কেন?

একা একা এতক্ষণ বসেছিলেন এই জন্যে। কেন দেরি হয়েছে জানেন স্যার। আমি বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে বের হব। এমন সময় টেলিফোন-আমার এক বান্ধবী, ওর নাম-শম্পা, টেলিফোন করেছে। শম্পা একবার টেলিফোন ধরলে ছাড়ে না।

ইমন তাকিয়ে আছে। নবনী শম্পার সঙ্গে কথা বলছিল এটা মিথ্যা। নবনী এতক্ষণ সাজগোজ করছিল। যে সাজ সে দিয়েছে সেই সাজের জন্যে বিশ মিনিট খুব কম সময়। মেরুন রঙের সবুজ পাড় শাড়ি। মেরুন স্যান্ডেল। গাঢ় সবুজ ব্লাউজ। চুলেও কিছু একটা করা হয়েছে। ঢেউ-এর মত ফুলে আছে। চোখে কাজল দেয়া হয়েছে। নবনীর চোখ এখন যতটা টানা মনে হচ্ছে। আসলে ততটা টানা না।

নবনী বলল, স্যার কি দেখছেন?

ইমন বলল, চল পড়তে বসি।

স্যার আজ পড়ব না। এ রকম সাজগোজ করে পড়তে ভাল লাগে না। এমন সাজের পর ইটিস পিটিস করতে ভাল লাগে।

ইটিস পিটিস কি?

কিছু না স্যার। রসিকতা করলাম। আসলে কি হয়েছে জানেন-শম্পা টেলিফোন করেছে তার বাসায় যাবার জন্যে। তার বড়বোনকে বর পক্ষের লোকজন দেখতে আসবে এই উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান। আমাকে যেতে বলেছে। বলেই সেজেছি।

তাহলে তুমি যাও। আমি সোমবারে আসব।

সেখানে যাব সন্ধ্যাবেলা, সাড়ে ছটায়। এখনতো না। আপনি একদিন গল্প করুন। সবদিন অংক করতে হবে এমন কোন কথা আছে? All work and no play make Jack a dull boy. এ কথাটা আমার বাবা সব সময় বলেন। আমি যখন ফাইভ সিক্সে পড়তাম তখন খুব ভিডিও গেম খেলার শখ ছিল। বাবা তখন নিয়ম করে দিয়েছিলেন, এক ঘন্টা পড়লে এক ঘন্টা ভিডিও গেম খেলতে পারব। কাজেই আজ আমি আপনার সঙ্গে গল্প করব। একটু বসুন আপনার জন্যে চা নিয়ে আসি।

নবনী পট ভর্তি করে চা নিয়ে এল। একটা বাটিতে পায়েস, একটা বাটিতে হালুয়া জাতীয় কিছু, অন্য একটা প্লেটে আলুর চাপ।

স্যার, এই যে খাবারগুলি দেখছেন সব আমার বানানো। আজ সারাদিন কষ্ট করে বানিয়েছি—আপনাকে খাওয়াব এই জন্যে।

ইমন বিরক্ত মুখে বলল, আমি যে আসব সেটাইতো তুমি ভুলে গিয়েছিলে।

না ভুলে যাইনিতো। আমার খুব মনে আছে। আপনাকে মিথ্যা করে বলেছি। ভুলে গেছি। স্যার খেয়ে দেখুনতো কেমন হয়েছে। যেটা দেখতে আলুভতাঁর মত সেটা আসলে আলু ভর্তা না, বুটের ডালের হালুয়া।

ইমন হালুয়া মুখে দিল। জিনিসটা দেখতে অখাদ্য হলেও খেতে ভাল হয়েছে।

নবনী বলল, আপনার জন্যে সামান্য গিফটও এনে রেখেছি স্যার। যাবার সময় নিয়ে যাবেন।

গিফট কি জন্যে?

আজ আপনার জন্মদিন।

কে বলল তোমাকে?

মিতু আপা বলেছেন। অনেক আগেই মিতু আপার কাছ থেকে আপনার ডেট অব বাৰ্থ জেনে নিয়েছি। স্যার হ্যাপী বাৰ্থ ডে।

ইমন গম্ভীর গলায় বলল, থ্যাংক য়্যু।

স্যার আপনি সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকেন। প্লীজ—জন্মদিনের দিন গম্ভীর হয়ে থাকবেন না। পায়েসটা খান। পায়েসটা খুব ভাল হয়েছে। কাওনের চালের পায়েস।

ইমন পায়েসের বাটি হাতে নিল। আজ তার জন্মদিন ঠিকই। তারিখ তার নিজেরই মনে ছিল না।

হ্যাঁ।

পায়েস বানানো আমি আজই শিখেছি। মাকে বললাম, মা পায়েস বানানো শিখিয়ে দাও। মা শিখিয়ে দিল। পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইনস্ট্রাকসন দিল-আমি রাধলাম।

পায়েসটা বেশ ভাল হয়েছে।

মা বললেন, এত যত্ন করে পায়েস রাধছিস কার জন্যে-আমি বললাম স্যারের জন্যে। ওমি মার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। মা আপনাকে।্য করতে পারে না।

কেন?

মার ধারণা আমি আপনাকে মার চেয়ে বেশি পছন্দ করি এই জন্যে। তবে মার পছন্দে কিছু যায আসে না। বাবার পছন্দ অপছন্দটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাড়ির স কিছু চলে বাবার চোখের ইশারায়। বাবা যদি কোন একটা ব্যাপারে হ্যাঁ বলেন—তাহলে পৃথিবীর কেউ সেই হ্যাকে না বানাতে পারবে না।

ও আচ্ছা।

আর সেই কঠিন বাবাকে কে কনট্রোল করে বলুনতো?

তুমি করা?

হ্যাঁ, আমি করি। আমি বাবাকে যা করতে বলব, বাবা তাই করবে।

ভালতো।

ঐ দিন আমি বাবাকে বললাম, বাবা। আমি কিন্তু নিজের ইচ্ছামত বিয়ে করব। আমি যদি কাউকে পছন্দ করি তুমি কিন্তু না বলতে পারবে না। বাবা হাসিমুখে বললেন—আচ্ছা না বলব না। পছন্দের কেউ ইতিমধ্যেই কি জোগাড় হয়ে গেছে? আমি বললাম, হুঁ। বাবা বললেন, তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিবি না? আমি বললাম, দেব।

ইমন বলল, নবনী আজ থাক। অন্য একদিন পরিচয় করব। আজ আমার ইমনের চা খাওয়া হয়ে গেছে।

সে উঠতে যাবে নবনী বলল, স্যার উঠবেন না। বাবার সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দি। আপনি এতদিন ধরে আমাকে পড়াচ্ছেন। কিন্তু এখনো বাবার সঙ্গে আপনার দেখা হয়নি। আজ বাবা বাসায় আছেন, ঘুমুচ্ছেন। ঘুম ভাঙ্গলেই বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।

ইমন বলল, নবনী আজ থাক। অন্য একদিন পরিচয় করব। আজ আমার একটা কাজ আছে।

বাবার ঘুম এক্ষুণি ভাঙবে। চারটার পর বাবা বিছানায় থাকেন না। এখন বাজছে চারটা দশ।

ইমন দাঁড়িয়ে পড়ল। নবনী আহত গলায় বলল,  স্যার আপনি সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছেন?

হ্যাঁ। আমার জরুরী কাজ আছে।

কি জরুরী কাজ?

আমার এক ভাইকে পুলিশে ধরেছে। সে থান সাজতে আছে—তার সঙ্গে দেখা করব।

আপনার ভাই থানা হাজতে? উনি কি করেছেন?

অনেক কিছু করেছে।

পুলিশের এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল আমার মেজো মামা। উনাকে বলব?

না তাকে কিছু বলতে হবে না।

আপনার গিফটটা নিয়ে যান।

আরেকদিন এসে নিয়ে যাব। গিফট নিয়ে হাজতে যাওয়া যায় না, তাই না?

স্যার—আসুন আপনাকে একটা গাড়ি দিয়ে দি। গাড়ি নিয়ে যাবেন।

গাড়ি লাগবে না।

ইমন ঘর থেকে বের হল। নবনীর চোখ সঙ্গে সঙ্গে পানিতে ভর্তি হয়ে গেল। সে যে তার স্যারের জন্যে এই প্ৰথম চোখের পানি ফেলল তা না। প্রায়ই ফেলে। প্রতি রাতেই ঘুমুতে যাবার সময় সে বালিশে মুখ গুঁজে কিছুক্ষণ কাঁদে।

হাজতে গাদাগাদি ভিড়। এক কোনায় শোভন গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। তার চুল লম্বা, মুখ ভর্তি দাড়ি গোফের জঙ্গল। চোখ লাল হয়ে আছে। জিন্সের প্যান্টের সঙ্গে কটকট হলুদ রঙের উইন্ড ব্রেকারে তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে।।

ইমন হাজাতের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। শোভনকে চিনতে পারছে না। তাকে বিস্মিত করে জঙ্গলামুখের এক যুবক বলল, ইমন সিগারেট এনেছিস। আমি যে এখানে খবর কার কাছে পেয়েছিস?

টোকন ভাইয়ার কাছে।

ও তোকে টাকা পয়সা দেয় নি?

পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়েছে।

মাত্ৰ পাঁচশ! বলিস কি? আমার দরকার হাজার হাজার টাকা।

তোমাকে কি ওরা মেরেছে?

প্রথম দুদিন ধোলাই দিয়েছে, এখন ধোলাই বন্ধ।

শোভন আনন্দিত মুখে সিগারেট ধরাল। পা নাচাতে নাচাতে বলল, তোর মুখ এত শুকনা কেন? তোর প্রবলেম কি?

কোন প্রবলেম নেই।

ফুপু ভাল আছেন?

হুঁ।

ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছে, এটা ভাল। তোর পরীক্ষা কবে?

সাত তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে।

প্রিপারেশন কেমন?

ভাল।

শোভনের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। সে আরেকটা সিগারেট ধরাল। ইমন দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। অন্যান্য হাজতিরা শুরুতে তাদের কথাবার্তা শুনছিল। এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মাঝে মাঝে তারা তৃষিত চোখে তাকাচ্ছে শোভনের সিগারেটের দিকে। তাদের আগ্রহ সীমাবদ্ধ হয়ে এসেছে।

ইমন!

হুঁ।

এবারো নিশ্চয়ই ফাস্ট সেকেন্ড হবি?

হুঁ হব।

ভাল ভাল। ভেরী গুড।

তোমাকে কি এরা থানা হাজতেই রাখবো?

নিয়ম নাই। জেল হাজতে পাঠানোর কথা। পাঠাচ্ছে না। নিয়ম কানুন. সব কাগজে কলমে। তুই মাঝে মাঝে এসে খোঁজ নিয়ে যাবি।

আচ্ছা। জিনিসটা সাবধানে রাখবি।

আচ্ছা।

কখনো হাতছাড়া করবি না। এইসব জিনিস। সচরাচর পাওয়া যায় না। যদি ছাড়া পাই, জিনিসটা লাগবে। বেপারীকে শিক্ষা দেব। জন্মের শিক্ষা।

বেপারী কে?

আব্দুল কুদ্দুস বেপারী। ঐ হারামজাদা আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে। হারামীর বাচ্চাকে আমি শিয়ালের শিং দেখাব। হারামী দেখবে শিয়ালের শিং কেমন। হরিণের মত ডালপালাওয়ালা, না-কি গরুর মত প্লেইন।

ইমন চুপ করে রইল। শোভন গলা নামিয়ে বলল, ভয় পাস না। ভয়ের কিছু নেই। তোর কাছে এই জিনিস আছে এটা কেউ সন্দেহ করবে না। মা

কেমন আছে?

জানি না। অনেক দিন যাই না।

যাস না কেন? মাঝে মধ্যে যাবি। মা কি জানে। আমি ধরা খেয়েছি?

মনে হয় জানেন না।

না জানলেই ভাল। নষ্ট ছেলে পুলে সম্পর্কে যত কম জানা যায় ততই ভাল।

তোমার কেইস আদালতে কবে যাবে?

দেরী আছে। পুলিশকে আগে কেইস সাজাতে হবে। পুলিশের এত সময় কোথায়? তাদের সব গুছিয়ে আনতে বছর দুই সময় লাগবে। এই দুই বছরে কত কি হবে। আলামত হারিয়ে ফেলবে। সাক্ষি ট্যাপ খেয়ে যাবে। ফাইল খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইমন কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল, তুমি কি খুন করেছ?

শোভনের দ্বিতীয় সিগারেটটিও শেষ হয়েছে। শিকের বাইরে সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে সে আরেকটি সিগারেট হাতে নিল, ধরাল না। ইমনের ধারণা হল শোভন প্রশ্নের উত্তর দেবে না। প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াও এক ধরণের উত্তর। তবে ইমনের ধারণা ভুল প্রমাণ করে শোভন বলল, খুন করেছি। একা করিনি, সঙ্গে আরো লোকজন ছিল। এইসব নিয়ে তুই মাথা ঘামাবি না। সবই কপালের লিখন। যার কপালে যা লেখা থাকে তার তাই হয়। যা চলে যা।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ