০২.

টুপুর ছবি দেখলেন? কেমন? সুন্দরী নয়? টু লি মিস এলাহাবাদ। টুপুর কথা আপনাকে কিন্তু লিখতেই হবে।

বিশাল চিঠি। তাতে টুপুর খুন হওয়া সম্ভবও অসম্ভব কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। টুপু ছিল নিপাপ, পবিত্র, স্বর্গীয় একটি মেয়ে।

চিঠিটা রেখে ধৃতি বরং ফোটোটাই দেখে। মিথ্যে নয় যে মেয়েটি সুন্দরী। এবং মিস এলাহাবাদ হলেও কোনও আপত্তির কারণ নেই। এখাটেদের বড় বড় চোখের দৃষ্টিতে কথা ফুটে আছে। কী অসম্ভব সুন্দর টসটসে ঠোঁট দুখনা।অনেক ছবিটার দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

পাশ থেকে অমিত উঁকি দিয়ে বলে, আরে!কার ছবি দেখছেন? দেখি দেখি!

ধৃতি ছবিটা অমিতের হাতে দিয়ে বলে, পাত্রীর মছবিটা পাঠিয়েছে।

বেশ দেখতে। একে বিয়ে করুন।

 ধৃতি হেসে চলে, বিয়ে করা শক্ত।

 কেন?

মেয়েটা এখন অনেক দূরে। সেখানে জ্যাও যাওয়া যায় না।

 মরে গেছে?

 তাই তো জানিয়েছে।

 তবে যে বললেন পাত্রী।

পাত্রী মানে কি বিয়ের পাত্রী? পাত্রীর অর্থ এখানে একটি ঘটনার পাত্রী। মেয়েটা খুন হয়েছে।

ওঃ! দেখতে ভারী ভাল ছিল মেয়েটা।

ধৃতি গম্ভীর হয়ে বলে, হ্যাঁ, কিন্তু পাস্ট টেনস।

আপনাকে ছবি পাঠিয়েছে কেন?

 কত পাগল আছে।

নিউজ এডিটর তার ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যও পায়ে চলে যেতে যেতেও হঠাৎ থমকে ধৃতির সামনে ঘুরে এসে বললেন, এ সত্যহে আকার ইনিং শিফট চলছে তো?

হ্যাঁ।

কালকের মধ্যে একটা ফিচার লিখে দিতে পারবেন?

কী নিয়ে?

 ম্যারেজ ল অ্যামেন্ডমেট।

লিগ্যাল অ্যাসপেক্ট নিয়ে?

আরে না, না। তাহলে আপনাকে বলা হত না। আপনি শুধু সোস্যাল ইমপ্যাক্টটার ওপর লিখকেন। কিন্তু কাল চাই।

ধৃতি মাথা নাড়ল।

এখন ইমারজেনসি চলছে। খবরের ওপর কড়া সেনসর। বস্তুত দেওয়ার মতো কোনও খবর নেই। তাই এত ফিচারের তাগিদ। টেলিপ্রিন্টারে যাও বা খবর আসে তার অর্ধেক যায় সেনসরে। ট্রেনে ডাকাতি হওয়ার খবরটাও নিজের ইচ্ছেয় ছাপা যায় না।

ধৃতি উঠে লাইব্রেরিতে চলে আসে। লাইব্রেরিয়ান অতি সুপুরুষ জয়ন্ত সেন। বয়সলিশের কিছু ওপরে, দেখলে ত্রিশও মনে হয় না। চমৎকার গোহনো মানুষ। লাইব্রেরিটা ঝকঝক তকতক করছে।

জয়ন্ত গম্ভীর মানুষ, চট করে কথা বলেন না, একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে একটা মস্ত পুরনো বই দেখতে থাকেন।

ধৃতি উলটোদিকের চেয়ারে বসে বলে, দাদা, ম্যারেজ অ্যামেন্ডমেন্ট ল নিয়ে লিখতে হবে।

জয়ন্ত এবার মৃদু একটু হাসলেন। বই থেকে মুখ তুলে বললেন, ফিচার।

হ্যাঁ।

 জয়ন্ত মস্ত টেবিলের ওপাশ থেকে হাত বাড়িয়ে বলেন, হাতটা দেখি।

জয়ন্তর ওই এক বাতিক। হাত দেখা আর কোষ্ঠী বিচার। গত শীতে কলকাতা আর ব্যাঙ্গালোর টেস্ট ম্যাচের ফলাফল আশ্চর্যজনক নিখুঁত বলে দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে এক-আধটা দারুণ কথা বলে দেন। রিপোর্টার সুশীল সান্যালকে গত বছর জুন মাসে হঠাৎ একদিন ডেকে বললেন, কিছু টাকা-পয়সা হাতে রাখো। তোমার দরকার হবে। আর এই হিলি-দিরি করে বেড়াচ্ছ ফুর্তি লুটছ, তাও কিছুদিন বন্ধ। চুপটি করে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে।

ঠিক তাই হয়েছিল। সুশীলবাবুর পেটে টিউমার ধরা পড়ল পরের মাসে। অপারেশনের পর পাক্কা তিন মাস বিছানায় শোওয়া। টাকা গেল জলের মতো। জয়ন্ত সেনকে তাই সবাই কিছু খাতির করে। এমনিতে মানুষটি বেশি কথা বলেন না বটে কিন্তু বাতিক চাড়া দিলে অ্যাসট্রোলজি নিয়ে অনেক কথা বলতে পারেন।

ধৃতির হাতটা দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন, কোষ্ঠী আছে?

 ছিল। এখন নেই।

হারিয়ে ফেলেছেন?

আমার কিছু থাকে না। আমি হলাম নাগা সাধু। ভূত-ভবিষ্যৎও নেই।

 জয়ন্ত গম্ভীর মুখে বললেন, হাতের রেখা তো তা বলছে না।

 কী বলছে তবে?

ভূত ছিল, ভবিষ্যৎও আছে।

ধৃতি একটু নড়ে বসে বলে, কী রকম?

জয়ন্ত হাতটা ছেড়ে নির্বিকার ভাবে বললেন, দুম করে কি বলা যায়। তবে খুব ইন্টারেস্টিং হাত।

ধৃতি কায়দাটা বুঝতে পারে। খুব আগ্রহ নিয়ে হাতটা দেখে একটু রহস্য জাগানো কথা বলেই যে নির্বিকার নির্লিপ্ত হয়ে গেলেন ওর পিছনে ছোট একটি মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষা আছে। ধৃতি যে হাত দেখায় বিশ্বাসী নয় তা বুঝে তিনি ওই চাল দিলেন। দেখতে চাইছেন এবার ধৃতি নিজেই আগ্রহ দেখায় কি না।

ধৃতি আগ্রহ দেখায় না। আবার বলে, কিন্তু আমার ল-এর কি হবে? হবে।

আমার কাছে কাটিং আছে।-বলে জয়ন্ত আবার মৃদু হেসে যোগ করলেন, কেবল আমার কাছেই সব থাকে।

সেটা জানি বলেই তো আসা।

কলিং-বেলে বেয়ারা ডেকে কাটিং বের করে দিতে বললেন জয়ন্ত।

রিডিং-এর ফাঁকা টেবিলে বসে বিভিন্ন খবরের কাগজের কাটিং থেকে ধৃতি অ্যামেন্ডমেন্ট ল সম্পর্কে তথ্য টুকে নিচ্ছিল প্যাডে। এসব অবশ্য খুব কাজে লাগবে না। তাকে ঘুরে ঘুরে কিছু মতামত নিতে হবে। সাক্ষাৎকার না হলে ব্যাপারটা সুপাঠ্য হবে না। আইন শুকনো জিনিস, কিন্তু মানুষ কেবল আইন মানা জীব নয়।

নতুন সংশোধিত আইনে ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে ভারী সহজলভ্য। মামলা করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেপারেশন পাওয়া যাবে। আগে আইন ছিল, ডিভোর্সের পর কেউ এক বছর বিয়ে করতে পারবে না, নতুন আইনে সে সময় কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হচ্ছে। এসব ভাল না মন্দ তা ধৃতি জানে না। ডিভোর্স সহজলভ্য হলে কী হয় তা সে বোঝে না। তবে এটা বোঝে যে ডিভোর্সের কথা মনে রেখে কেউ বিয়ে করে না।

জয়ন্ত উঠে বাইরে যাচ্ছিলেন। টেবিলের সামনে ক্ষণেক দাঁড়িয়ে বললেন, পেয়েছেন সবকিছু?

ধৃতি মুখ তুলে হেসে বললে, এভরিথিং।

 চলুন চা খেয়ে আসি। ফিরে এসে লিখবেন।

ধৃতি উঠে পড়ে। শিফটে এখনও কাজ তেমন শুরু হয়নি। সন্ধের আগে বড় খবর তেমন কিছু আসে না। তাছাড়া খবরও নেই। প্রতিদিনই ব্যানার করবার মতো খবরের অভাবে সমস্যা দেখা দেয়। আজ কোনটা লিড হেডিং হবে সেটা প্রতিদিন মাথা ঘামিয়ে বের করতে হয়। সারাদিন টেলিপ্রিন্টর আর টেলেক্স বর্ণহীন গন্ধহীন জোলো খবরের রাশি উগরে দিচ্ছে। কাজেই খবর লিখবার জন্য এক্ষুনি তাকে ডেস্কে যেতে হবে না।

ধৃতি ক্যান্টিনের দিকে জয়ন্তর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বলে, আপনি মানুষের মুখ দেখে কিছু বলতে পারেন?

জয়ন্ত বলেন, মুখ দেখে অনেকে বলে শুনেছি। আমি তেমন কিছু পারি না। তবে ভূত-ভবিষ্যৎ বলতে না পারলেও ক্যারেক্টারিস্টিক কিছু বলা যায়।

ফোটো দেখে বলতে পারেন?

ফোটো। প্রাণহীন বস্তু, তবু তা থেকেও আন্দাজ করা সম্ভব। কেন বলুন তো?

ক্যান্টিনে চা নিয়ে মুখোমুখি বসার পর ধৃতি হঠাৎ খুব কিছু না ভেবে-চিন্তে টুপুর ফোটোটা বের করে জয়ন্তকে দেখিয়ে বলে, বলুন তো কোন মেয়ে?

জয়ন্ত চায়ে চুমুক দিয়ে ফোটোটা হাতে নিয়ে বলেন, তাই বলুন। এতদিনে তাহলে বিয়ের ফুল ফুটতে যাচ্ছে। তবে ম্যাট্রিমোনিয়াল ব্যাপার হলে ফোটোর চেয়ে কোষ্ঠী অনেক সেফ। মেয়েটার কোষ্ঠী নেই?

ধৃতি ঠোঁট উলটে বলে, মেয়েটিই নেই।

সে কী!–বলে জয়ন্ত ছবিটা আর একবার দেখে ধৃতির দিকে তাকিয়ে বলেন, তাহলে এর ক্যারেক্টারিস্টিক জেনে কী হবে? মারা গেছে কবে?

তা জনি না। তবে বলতে পারি খুন হয়েছে।

 খুন। ও বাবাঃ, পুলিশ কেস তাহলো– বলে জয়ন্ত ছবিটা ফেরত দিতে হাত বাড়িয়ে বললেন, তাহলে আর কিছু বলার নেই।

আছে। ধৃতি বলে, ধরুন, মেয়েটার চরিত্রে এমন কী আছে যাতে খুন হতে পারে, তা ছবি থেকে আন্দাজ করা যায় না?

জয়ন্ত গম্ভীর চোখে চেয়ে বলেন, মেয়েটি আপনার কে হয়?

কেউ না।

 পরিচিতা তো। প্রেম-ট্রেম ছিল নাকি?

 আরে না দাদা, চিনতামই না।

 তবে অত ইন্টারেস্ট কেন? পুলিশ যা করবার করবে।

পুলিশ তার কাজ করবে। আমার ইন্টারেস্ট মেয়েটির জন্য নয়।

তবে?

অ্যাসট্রোলজির জন্য।

ছবিটা আবার নিয়ে জয়ও তার প্লাস পাওয়ারের চশমাটা পকেট থেকে বের করে চোখে আঁটলেন। তাতেও হল না। একটা খুদে আতস কাঁচ বের করে অনেকক্ষণ ধরে দেখলেন ছবিটা। চা ঠাতা হয়ে গেল। প্রায় আট-দশ মিনিট বাদে মত আতস কাঁচ আর চশমা রেখেছবিটা দুআঙুলে ধরে নাড়তে নাড়তে চিন্তিত মুখে প্রশ্নটা করলেন, মেয়েটা খুন হয়েছে কে বলল?

ওর মা।

তিনি আপনার কে হন?

কেউ না। চিনিই না। একটা ফোন কলে প্রথম খবর পাই। আজ একটা চিঠিও এসেছে। দেখুন না।-বলে ধৃতি চিঠিটা বের করে দেয়।

জয়ন্ত খুব আলগা ভাবে চিঠিটা পড়লেন না। পড়লেন খুব মন দিয়ে। অনেক সময় নিয়ে। প্রায় পনেরো মিনিট চলে গেল।

তারপর মুখ তুলে বললেন, আমি মুখ দেখে তেমন কিছু বলতে পারি না বটে, কিন্তু আমার একটা ফিলিং হচ্ছে যে মেয়েটা মরেনি।

বলেন কী?

 জয়ন্ত আবার চা আনালেন। গম্ভীর মুখে বলে চা খেতে খেতে চিন্তা করে বললেন, আপনি জ্যোতিষবিদ্যা মানেন না।

না। মানে, তেমন মানি না।

বুঝেছি। কিন্তু মানেন না কেন? যেহেতু সেকেন্ডহ্যাভ নলেজ তাই না?

তাই।

তবে আপনাকে যুক্তিবাদী বলতে হয়। না?

হ্যাঁ।

কিন্তু আসলে আপনি যুক্তিবাদী নন, আপনার মনন বৈজ্ঞানিক সুলভ নয়।

কেন?

একটা ফোনকল, একটা চিঠি আর একটা ফোটো মাত্র এই জিনিসগুলোর ভিত্তিতে আপনি কী করে বিশ্বাস করছেন যে মেয়েটা খুন হয়েছে?

তবে কি হয়নি?

না। আমার মন বলছে শি ইজ ভেরি মাচ অ্যালাইভ।

কী করে বললেন?

বলছি তো আমার ধারণা।

কোনও লজিক্যাল বেস নেই ধারণাটার?

জয়ন্ত মৃদু হেসে বললেন, আপনি আস্থা লোক মশাই। মেয়েটা যে মরে গেছে, আপনার সে ধারণাটারও তো কোনও লজিক্যাল কেস নেই। আপনাকে একজন জানিয়েছে যে টুপু মারা গেছে বা খুন হয়েছে। আপনি সেটাই ধ্রুব বলে বিশ্বাস করছে।

জয়ন্ত সেন ছবিটার দিকে আবার একই তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আপন মনে মৃদু স্বরে বলতে লাগলেন, খুব সেনসিটিভ, অসম্ভব সেন্টিমেন্টাল, মনের শক্তি বেশ কম, অন্যের দ্বারা চালিত হতে ভালবাসে।

কে?-ধৃতি চমকে প্রশ্ন করে।

জয়ন্ত ছবিটার দিকে চেয়ে থেকেই বলে, আপনার টুপু সুন্দরী।

আমার হতে যাবে কেন?

দেখি আপনার হাতটা আর একটু।– বলে জয়ন্ত হাত বাড়িয়ে ধৃতির ডান হাতটা টেনে নিলেন।

ফোটোগ্রাফার সৌরীন এক প্লেট মাস আর চার পিস রুটি খেয়ে মৌরি চিবোতে চিবোতে টেবিলের ধারে এসে বলে, আমার হাতটা দেখবেন না জয়ন্তদা?

পরে।– জয়ন্তর গম্ভীর উত্তর।

অনেকদিন ধরে ঝোলাচ্ছেন। ধৃতিবাবু, কী খবর?

ভাল।

সৌরীন হঠাৎ বুকে ছবিটা দেখে বলে, বাঃ, দারুণ ছবিটা তুলেছে তো! ফোটোগ্রাফার কে?

ধৃতি হাসল। সৌরীন পেশাদার ফোটোগ্রাফার, তাই মেয়েটার চেয়ে ফোটোর সৌন্দর্যই তার কাছে বেশি গুরুতর।

ধৃতি বলে, মেয়েটা কেমন?

 ভাল।– সৌরীন বলে, তবে ফ্রন্ট ফেস যতটা ভাল প্রোফাইল ততটা ভাল কি না কে জানে। মেয়েটা কে?

চিনবেন না। ধৃতি বলল।

 সৌরীন চলে গেলে জয়ন্ত ধৃতির হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন, হু।

হু মানে?

মানে অনেক ব্যাপার আছে। আপনার বয়স এখন কত?

উনত্রিশ বোধহয়। কম বেশি হতে পারে।

একটা ট্রানজিশন আসছে।

কী রকম?

 তা হুট করে বলি কেমন করে?

কবে?

শিগগিরই।

ধৃতি অবশ্য এসব কথার গুরুত্ব দেয় না। সারা জীবনে সেকখনও ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছে বলে মনে পড়ে না। যা কিছু হয়েছে বা করেছে সে, তা সবই নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে।

ধৃতি বলল, খারাপ নয় তো?

হয়তো খারাপ। হয়তো ভাল।

ধৃতি হাসল। বলল, এবার আসুন ডিম খাই। আমি খাওয়াচ্ছি।

দুজনে ওমলেট খেতে লাগল। খেতে খেতে ধৃতি বলে, জয়ন্তদা, আপনি টুপুর কেসটা যত সিরিয়াসলি দেখছেন ততটা কিছু নয়।

তাই নাকি?- নিস্পৃহ জবাব জয়ন্তর।

ওর মা চাইছে খবরটা কাগজে বেরোক।

খবরদার বের করবেন না।

আরে মশাই, আমি ইচ্ছে করলেই কি বের করতে পারব নাকি? কাগজ তো আমার ইচ্ছেয় হাবিজাবি খবর ছাপাবে না।

তা হলেও আপনি কোনও ইনিশিয়েটিভ নেবেন না। মেয়েটার মা ফোনে আপনাকে কী বলেছিল?

এলাহাবাদ থেকে ট্রাককল করেছিল। রাত তখন দুটোআড়াইটে। শুধু বলছিল টুপুকে খুন করা হয়েছে, আপনি খবরটা ছাপবেন।

চিঠিটা কবে এল?

আজ।

দেখি।– বলে জয়ন্ত হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন।

আবার অনেকক্ষণ চুপচাপ। তারপর চিঠি ফেরত দিয়ে জয়ন্ত হেসে বললেন, আপনি মশাই দিনকানা তোক।

কেন?

চিঠিটা ভাল করে দেখেছেন? দে

খেছি তো।

কিছুই দেখেননি। চিঠির ওপর এলাহাবাদের ডেটলাইন। কিন্তু খামের ওপর কলকাতা উনত্রিশ ডাকঘরের শিলমোহর, সেটা লক্ষ করেছেন?

ধৃতি একটা চমক খেয়ে তাড়াতাড়ি খামটা দেখে। খুবই স্পষ্ট ছাপ। ভুল নেই।

ধৃতি বলে, তাই তো!

জয়ন্ত বলেন, এবার টেলিফোনটার কথা বলুন তো।

সেটা এলাহাবাদের ট্রাকলই ছিল।

কী করে বুঝলেন?

অপারেটার বলল যে।

অপারেটারের গলা আপনি চেনেন?

না।

তবে?

তবে কী?

অপারেটার সেজে যে-কেউ ফোনে বলতে পারে এলাহাবাদ থেকে ট্রাঙ্ককলে আপনাকে ডাকা হচ্ছে। অফিসের অপারেটারও সেটা ধরতে পারবে না।

সেটা ঠিক।

 আমার সন্দেহ সেই ফোন কলটা কলকাতা থেকেই এসেছিল।

 ধৃতি হঠাৎ হেসে উঠে বলে, কেউ প্র্যাকটিক্যাল জোক করেছিল বলছেন?

জোক কি না জানি না, তবে প্র্যাকটিক্যাল অ্যান্ড এফেকটিভ। আপনি তো ভোঁতা মানুষ নন, তবে মিসলেড হলেন কী করে? এবার থেকে একটু চোখ কান খোলা রেখে চলবেন।

ধৃতি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল ফের।

Shirshendu Mukhopadhyay ।। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়