এখন আমার একটু ঘুম না
হলেই নয়। অনেকদিন
ঘুর রাস্তায়, ফুটপাথে, খোলা
পথে,
মানুষের মুখর হাটে হেঁটে
হেঁটে বস্তুত
ক্লান্ত আমার হাড়-পাঁজর;
মগজের কোষে কোষে
গুঁড়ো গুঁড়ো রং আর কুয়াশা
আমাকে কিছুক্ষণ ঘুম
পাড়িয়ে রাখার গান বাঁধছে।

নির্জনতম এক জায়গায় পা
বাড়াই,
হারাই অনুশোচনা। খাড়াই
পেরিয়ে টলতে টলতে খুঁজে
নিই
ঝরা পাতার বিছানা। এখানে
নিঃশব্দতার
নিঃশ্বাস আমাকে ছোঁয়;
বনস্থলীর ডুকরে-ওঠা
বুকের মধ্যে এসে ভাবি,
হাঁটতে হাঁটতে এতদূর এসে
পড়েছি?

মাথার উপর দু’টি তারা
কাঁপছিল
প্রেমে ডগমগ কুমারীর চোখের
মতো, অথচ
সেদিকে বেশিক্ষণ তাকানোর
ধৈর্য তখন গায়েব। এখন
আমি কিছুই দেখব না,
কিছুই শুনব না, এখন আমার
শিশিরভেজা ঘাস-পাতায়
মাথা পেতে ঘুমোনো দরকার।

এখানকার নিঝুম গাছপালা
আমার পরিচয়
জানতে চায়নি, বনমর্মর
কৌতূহল প্রকাশ করেনি
আমার নাম ধাম এবং পেশার
ব্যাপারে।
শিয়রে ঝুঁকে-থাকা স্বপ্ন
জানালো না তার ঠিকানা;
আমি
আমার অকুণ্ঠ ভালোবাসাকে
বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

কতক্ষণ ঘুমের ঢেউ বয়ে
গ্যাছে আমর উপর,
বুঝতে পারিনি; কানে তৃণের
সুড়সুড়ি
আর মানবকণ্ঠের গুঞ্জন
আমাকে জাগিয়ে দেয়,
আমার চোখে তখনো
চিকচিক করছে স্বপ্নকণা।
পথরেখা
এবং চঞ্চল মানুষগুলোর দিকে
তাকাতেই
মনে হলো, এখুনি আবার
বেরিয়ে পড়তে হবে।
৬.৪.৯৪

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান