ওরে মাতাল , দুয়ার ভেঙেদিয়ে 
        পথেই যদি করিস মাতামাতি , 
থলিঝুলি উজাড় করে ফেলে 
        যা আছে তোর ফুরাস রাতারাতি , 
অশ্লেষাতে যাত্রা করে শুরু 
        পাঁজিপুঁথি করিস পরিহাস , 
অকারণে অকাজ লয়ে ঘাড়ে 
        অসময়ে অপথ দিয়ে যাস , 
হালের দড়ি নিজের হাতে কেটে 
       পালের ‘পরে লাগাস ঝোড়ো হাওয়া , 
             আমিও ভাই , তোদের ব্রত লব 
                 মাতাল হয়ে পাতাল - পানে ধাওয়া । 
  
  
পাড়ার যত জ্ঞানীগুণীর সাথে 
        নষ্ট হল দিনের পর দিন— 
অনেক শিখে পক্ব হল মাথা 
        অনেক দেখে দৃষ্টি হল ক্ষীণ , 
কত কালের কত মন্দ ভালো 
        বসে বসে কেবল জমা করি , 
ফেলাছড়া - ভাঙাছেঁড়ার বোঝা 
        বুকের মাঝে উঠছে ভরি ভরি , 
গুঁড়িয়ে সে - সব উড়িয়ে ফেলে দিক 
        দিক্‌ - বিদিকে তোদের ঝোড়ো হাওয়া । 
               বুঝেছি ভাই , সুখের মধ্যে সুখ 
                      মাতাল হয়ে পাতাল - পানে ধাওয়া । 
  
  
হোক রে সিধা কুটিল দ্বিধা যত , 
        নেশায় মোরে করুক দিশাহারা ,   
দানোয় এসে হঠাৎ কেশে ধরে   
        এক দমকে করুক লক্ষ্মীছাড়া । 
সংসারেতে সংসারী তো ঢের 
        কাজের হাটে অনেক আছে কেজো , 
মেলাই আছে মস্ত বড়ো লোক— 
        সঙ্গ তাঁদের অনেক সেজো মেজো । 
থাকুন তাঁরা ভবের কাজে লেগে , 
        লাগুক মোরে সৃষ্টিছাড়া হাওয়া— 
             বুঝেছি ভাই , কাজের মধ্যে কাজ 
                  মাতাল হয়ে পাতাল - পানে ধাওয়া । 
  
  
শপথ করে দিলাম ছেড়ে আজই 
        যা আছে মোর বুদ্ধি বিবেচনা , 
বিদ্যা যত ফেলব ঝেড়ে ঝুড়ে 
        ছেড়ে ছুড়ে তত্ত্ব - আলোচনা । 
স্মৃতির ঝারি উপুড় করে ফেলে 
        নয়নবারি শূন্য করি দিব , 
উচ্ছ্বসিত মদের ফেনা দিয়ে 
        অট্টহাসি শোধন করি নিব । 
ভদ্রলোকের তকমা - তাবিজ ছিঁড়ে 
        উড়িয়ে দেবে মদোন্মত্ত হাওয়া , 
                 শপথ করে বিপথ - ব্রত নেব— 
                      মাতাল হয়ে পাতাল - পানে ধাওয়া । 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর