গাঁয়ের পথে চলেছিলেম 
        অকারণে , 
বাতাস বহে বিকালবেলা 
        বেণুবনে । 
ছায়া তখন আলোর ফাঁকে 
লতার মতন জড়িয়ে থাকে , 
একা একা কোকিল ডাকে 
        নিজমনে । 
আমি কোথায় চলেছিলেম 
        অকারণে । 
  
জলের ধারে কুটিরখানি 
         পাতা - ঢাকা , 
দ্বারের ‘পরে নুয়ে পড়ে 
        নিম্বশাখা । 
ওই যে শুনি মাঝে মাঝে 
না জানি কোন্‌ নিত্যকাজে 
কোথায় দুটি কাঁকন বাজে 
গৃহকোণে । 
যেতে যেতে এলেম হেথা 
        অকারণে । 
  
দিঘির জলে ঝলক ঝলে 
        মানিক হীরা , 
সর্ষেখেতে উঠছে মেতে 
        মৌমাছিরা । 
এ পথ গেছে কত গাঁয়ে                 
কত গাছের ছায়ে ছায়ে 
কত মাঠের গায়ে গায়ে 
        কত বনে । 
আমি শুধু হেথায় এলেম 
        অকারণে । 
  
আরেক দিন সে ফাগুন মাসে 
        বহু আগে 
চলেছিলেম এই পথে সেই 
        মনে জাগে । 
আমের বোলের গন্ধে অবশ 
বাতাস ছিল উদাস অলস , 
ঘাটের শানে বাজছে কলস 
         ক্ষণে ক্ষণে । 
সে - সব কথা ভাবছি বসে 
        অকারণে । 
  
দীর্ঘ হয়ে পড়ছে পথে 
         বাঁকা ছায়া , 
গোষ্ঠঘরে ফিরছে ধেনু 
        শ্রান্তকায়া । 
গোধূলিতে খেতের ‘পরে 
ধূসর আলো ধূ ধূ করে , 
বসে আছে খেয়ার তরে 
        পান্থজনে । 
আবার ধীরে চলছি ফিরে 
        অকারণে । 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর