বৃথা এ বিড়ম্বনা!
কিসের লাগিয়া          এতই তিয়াষ,
        কেন এত যন্ত্রণা!
ছায়ার মতন             ভেসে চলে যায়
        দরশন পরশন—
এই যদি পাই            এই ভুলে যাই,
        তৃপ্তি না মানে মন।
কত বার আসে,        কত বার ভাসে,
        মিশে যায় কত বার—
পেলেও যেমন           না পেলে তেমন
        শুধু থাকে হাহাকার।
সন্ধ্যাপবনে                      কুঞ্জভবনে
        নির্জন নদীতীরে
ছায়ার মতন                    হৃদয়বেদন
        ছায়ার লাগিয়া ফিরে।
কত দেখাশোনা         কত আনাগোনা
        চারি দিকে অবিরত,
শুধু তারি মাঝে        একটি কে আছে
        তারি তরে ব্যথা কত!
চিরদিন ধ’রে               এমনি চলিছে,
        যুগ-যুগ গেছে চ’লে!
মানবের মেলা               করে গেছে খেলা
        এই ধরণীর কোলে!
এই ছায়া লাগি          কত নিশি জাগি
        কাঁদায়েছে কাঁদিয়াছে—
মহাসুখ মানি            প্রিয়তনুখানি
        বাহুপাশে বাঁধিয়াছে!
নিশিদিন কত               ভেবেছে সতত
        নিয়ে কার হাসিকথা!
কোথা তারা আজ,         সুখ দুখ লাজ,
        কোথা তাহাদের ব্যথা?
কোথা সেদিনের             অতুলরূপসী
        হৃদরপ্রেয়সীচয়?
নিখিলের প্রাণে         ছিল যে জাগিয়া,
        আজ সে স্বপনও নয়!
ছিল সে নয়নে               অধরের কোণে
        জীবন মরণ কত—
বিকচ সরস                      তনুর পরশ
        কোমল প্রেমের মতো।
এত সুখ দুখ                    তীব্র কামনা
        জাগরণ হাহুতাশ
যে রূপজ্যোতিরে                 সদা ছিল ঘিরে
        কোথা তার ইতিহাস?
যমুনার ঢেউ                    সন্ধ্যারঙিন
        মেঘখানি ভালোবাসে—
এও চলে যায়,          সেও চলে যায়,
        অদৃষ্ট বসে হাসে।
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর