খোকার চোখে যে ঘুম আসে 
     সকল - তাপ - নাশা — 
জান কি কেউ কোথা হতে যে 
     করে সে যাওয়া - আসা । 
শুনেছি রূপকথার গাঁয়ে 
জোনাকি - জ্বলা বনের ছায়ে 
দুলিছে দুটি পারুল - কুঁড়ি , 
     তাহারি মাঝে বাসা — 
সেখান থেকে খোকার চোখে 
     করে সে যাওয়া - আসা । 
  
খোকার ঠোঁটে যে হাসিখানি 
     চমকে ঘুমঘোরে — 
কোন্‌ দেশে যে জনম তার 
     কে কবে তাহা মোরে । 
শুনেছি কোন্‌ শরৎ - মেঘে 
শিশু - শশীর কিরণ লেগে 
সে হাসিরুচি জনমি ছিল 
     শিশিরশুচি ভোরে — 
খোকার ঠোঁটে যে হাসিখানি 
     চমকে ঘুমঘোরে । 
  
খোকার গায়ে মিলিয়ে আছে 
     যে কচি কোমলতা — 
জান কি সে যে এতটা কাল 
     লুকিয়ে ছিল কোথা । 
মা যবে ছিল কিশোরী মেয়ে 
করুণ তারি পরান ছেয়ে 
মাধুরীরূপে মুরছি ছিল 
     কহে নি কোনো কথা — 
খোকার গায়ে মিলিয়ে আছে 
     যে কচি কোমলতা । 
  
আশিস আসি পরশ করে 
     খোকারে ঘিরে ঘিরে — 
জান কি কেহ কোথা হতে সে 
     বরষে তার শিরে । 
ফাগুনে নব মলয়শ্বাসে , 
শ্রাবণে নব নীপের বাসে , 
আশিনে নব ধান্যদলে , 
     আষাড়ে নব নীরে — 
আশিস আসি পরশ করে 
     খোকারে ঘিরে ঘিরে । 
  
এই - যে খোকা তরুণতনু 
     নতুন মেলে আঁখি — 
ইহার ভার কে লবে আজি 
     তোমরা জান তা কি । 
হিরণময় কিরণ - ঝোলা 
যাঁহার এই ভুবন - দোলা 
তপন - শশী - তারার কোলে 
     দেবেন এরে রাখি — 
এই - যে খোকা তরুণতনু 
     নতুন মেলে আঁখি । 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর