রজনী একাদশী 
        পোহায় ধীরে ধীরে, 
রঙিন মেঘমালা 
         উষারে বাঁধে ঘিরে। 
আকাশে ক্ষীণ শশী 
        আড়ালে যেতে চায়, 
দাঁড়ায়ে মাঝখানে 
        কিনারা নাহি পায়। 
এ-হেন কালে যেন 
        মায়ের পানে মেয়ে 
রয়েছে শুকতারা 
        চাঁদের মুখে চেয়ে। 
কে তুমি মরি মরি 
        একটুখানি প্রাণ। 
এনেছ কী না জানি 
        করিতে ওরে দান। 
  
মহিমা যত ছিল 
        উদয়-বেলাকার 
যতেক সুখসাথি 
        এখনি যাবে যার, 
পুরানো সব গেল— 
        নূতন তুমি একা 
বিদায়-কালে তারে 
        হাসিয়া দিলে দেখা। 
  
ও চাঁদ যামিনীর 
        হাসির অবশেষ, 
ও শুধু অতীতের 
            সুখের স্মৃতিলেশ। 
তারারা দ্রুতপদে 
            কোথায় গেছে সরে— 
পারে নি সাথে যেতে, 
            পিছিয়ে আছে পড়ে। 
  
তাদেরই পানে ও যে 
            নয়ন ছিল মেলি, 
তাদেরই পথে ও যে 
            চরণ ছিল ফেলি, 
এমন সময়ে কে 
            ডাকিলে পিছু-পানে 
একটি আলোকেরই 
            একটু মৃদু গানে। 
  
গভীর রজনীর 
            রিক্ত ভিখারিকে 
ভোরের বেলাকার 
            কী লিপি দিলে লিখে। 
সোনার-আভা-মাখা 
            কী নব আশাখানি 
শিশির-জলে ধুয়ে 
            তাহারে দিলে আনি। 
অস্ত-উদয়ের 
            মাঝেতে তুমি এসে 
প্রাচীন নবীনেরে 
            টানিছ ভালোবেসে— 
বধূ ও বর-রূপে 
            করিলে এক-হিয়া 
করুণ কিরণের 
            গ্রন্থি বাঁধি দিয়া। 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর