উপাদানধন-সম্বল

কিন্তু এই ধন-সম্বলের কথা বলিবার আগে আমাদের ঐতিহাসিক উপাদান সম্বন্ধে দু’একটি কথা আলোচনা করিয়া লওয়া দরকার। আমাদের প্রধান উপাদান লেখমালা, এবং প্রাচীন বাঙলার সর্বপ্রাচীন লেখমালার তারিখ আনুমানিক খ্ৰীষ্ট-পূর্ব তৃতীয় হইতে দ্বিতীয় শতকের মধ্যে। বগুড়া জেলার মহাস্থানে প্রাপ্ত এই সুপ্রাচীন প্রস্তর-লেখখণ্ডটিতে প্রাচীন বাঙলার ধন-সম্বলের একটি প্রধান উপকরণের সংবাদ পাওয়া যায়। এই উপকরণটি ধান, কৃষিজাত দ্রব্যাদির মধ্যে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান। এই লেখখণ্ডটি ছাড়া, পঞ্চম হইতে ত্ৰয়োদশ শতক পর্যন্ত বাঙলাদেশে সম্পর্কিত প্রচুর লিপির সংবাদ আমরা জানি, কিছু কিছু প্রাচীন গ্রন্থের উপাদানও আমাদের অজ্ঞাত নয়, অথচ এই সর্বপ্রাচীন মহাস্থান-লেখখণ্ডটি এবং আরও দুই চারিটি তাম্রশাসন ছাড়া বাঙলাদেশের প্রধান উৎপন্ন ধন যে ধান-লিপিতে সে উল্লেখ কোথাও নাই বলিলেই চলে। সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতে’ অবশ্য বলা হইয়াছে, বরেন্দ্রীর লক্ষ্মীশ্ৰী দৃষ্টিগোচর হইত নানা প্রকার উৎকৃষ্ট ধান্যক্ষেত্রের কমনীয় রূপে অর্থাৎ বরেন্দ্ৰ-ভূমিতে (উত্তর-বাঙলায়) নানাপ্রকারের খুব ভাল ধান জন্মাইত, এই ইঙ্গিত ‘রামচরিতে’ পাওয়া যাইতেছে। অথচ, ইহা তো সহজেই অনুমেয়, আজও যেমন অতীতেও তেমনি ধান্যই ছিল শুধু বরেন্দ্ৰভূমির নয়, সমগ্র বাঙলাদেশেরই প্রধান ধন-সম্বল। শুধু ধান সম্বন্ধেই নয়, অন্যান্য অনেক কৃষি ও শিল্পজাত বা খনিজ দ্রব্যের উল্লেখই আমাদের ঐতিহাসিক উপাদানে পাওয়া যায় না। কাজেই, আমাদের এই বিবরণীতে যে-সব উপকরণের উল্লেখ নাই, অথচ যাহা উৎপাদিত ধন হিসাবে বর্তমান ছিল বলিয়া সহজেই অনুমান করা যায়, তাহা প্রাচীন বাঙলার ছিল না, এ কথা নিশ্চয় করিয়া বলা যায় না! কার্পাস বস্ত্র ও রেশম বস্ত্ৰ যে বাঙলার প্রধান শিল্পজাত দ্রব্য ছিল এবং সুদূর মিশর ও রোমদেশ পর্যন্ত তাহা রপ্তানি হইত, সর্বত্র তাহার আদরও ছিল এ কথা আমরা খ্ৰীষ্টপূর্ব প্রথম শতকে অজ্ঞাতনামা গ্রন্থকার বর্ণিত Periplus of the Erythrean Sea অথবা কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্ৰ’ কিংবা ‘চর্যাগীতি’-গ্ৰন্থ হইতে কিছু কিছু জানিতে পারি; অথচ এ-যাবৎ বাঙলাদেশ -সম্পর্কিত যত লেখমালার খবর আমরা জানি কোথাও তাহার উল্লেখ নাই। উদাহরণ দিবার জন্য ধান্য ও বস্ত্ৰ-শিল্পের উল্লেখ করিলাম মাত্র, তবে অনেক খনিজ, কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের সম্বন্ধেই এ কথা বলা যাইতে পারে। কাজেই অনুল্লেখের যুক্তি অন্তত এক্ষেত্রে অনস্তিত্বের দিকে ইঙ্গিত করে না। কৃষি ও শিল্পের তদানীন্তন অবস্থায়, প্রাচীন বাঙলার তদানীন্তন ভূমি-ব্যবস্থায়, সামাজিক পরিবেশ ও জলবায়ু এবং নদনদীর সংস্থানে যে-সব দ্রব্য উৎপন্ন হওয়া স্বাভাবিক তাহা সমস্তই উৎপাদিত হইত এই অনুমানই যুক্তসংগত, তবু ঐতিহাসিক বিবরণ লিখিতে বসিয়া কেবলমাত্র সেইসব উপকরণই বিবৃত করা যাইতে পারে যাহার উল্লেখ অবিসংবাদিত উপাদানের মধ্যে পাওয়া যায়, এবং যাহার উল্লেখ না থাকিলেও অস্তিত্বের অনুমান প্রমাণের অনুরূপ। মূল্য বহন করে। একটি উদাহরণ দিলেই আমার বক্তব্য পরিষ্কার হইবে। তক্ষণ অথবা স্থাপত্য শিল্পের কোনও উল্লেখ আমরা আমাদের জ্ঞাত উপাদানের মধ্যে পাই নাই, যদিও তিব্বতী লামা তারনাথ তাহার বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে ধীমান ও বীটপাল-নামে বরেন্দ্ৰভূমির দুই খ্যাতনামা শিল্পীর উল্লেখ করিয়াছেন, এবং বিজয়সেনের দেওপাড়া তাম্রশাসনে “বারেন্দ্রক শিল্পিগোষ্ঠীচুড়ামণি রাণিক শূলপাণি”র উল্লেখ আছে। ঠিক তেমনই স্বর্ণকার অথবা রৌপ্যকারের উল্লেখও নাই। অথচ বাঙলাদেশে প্রাপ্ত অগণিত দেবদেবীর পোড়ামাটি ও পাথরের মূর্তিগুলি দেখিলে, পাহাড়পুর ও অন্যান্য স্থানের প্রাচীন মন্দির, স্তুপ এবং বিহারের ধ্বংসাবশেষ অথবা সমসাময়িক চিত্রে ও ভাস্কর্যে সেই যুগের ঘর-বাড়ি-মন্দিরাদির পরিকল্পনা দেখিলে, দেবদেবীর মূর্তিগুলির চিরযৌবনসুলভ শ্ৰীঅঙ্গে বিচিত্ৰ গহনার সূক্ষ্ম ও বিচিত্ৰতর কারুকার্যগুলির দিকে লক্ষ করিলে এ কথা অনুমান করিতে কোনও আপত্তি করিবার কারণ নাই যে, তদানীন্তন কালে তক্ষণ ও স্থাপত্য শিল্প অথবা স্বর্ণ ও রৌপ্যশিল্পজাত দ্রব্যাদির কোনও প্রকার অপ্রতুলতা ছিল। অন্যান্য অনেক কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যাদি সম্বন্ধেই এ কথা বলা যাইতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্বন্ধেও একই কথা। গঙ্গা ও তাম্রলিপ্তি যে মস্ত বড় দুইটি বন্দর ছিল এ খবর বিশেষভাবে পেরিপ্লাস-গ্রন্থ, টলেমির বিবরণ, জাতক-গ্ৰন্থ ও ফাহিয়ান-যুয়ান-চোয়াঙের বিবরণীর ভিতর পাওয়া যায়; তাহা ছাড়া অন্য কোথাও ইহাদের বিশদ উল্লেখ কিছু নাই বলিলেই চলে। এই দুই বন্দর হইতে, এবং কিছু পরবর্তীকালে অর্থাৎ, মধ্যযুগের প্রারম্ভ হইতেই সপ্তগ্রাম হইতে যে পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপগুলিতে, দক্ষিণ-ভারতের উপকূল বাহিয়া সিংহলে, এবং পশ্চিম উপকূল বাহিয়া সুরাষ্ট্র-ভৃগুকচ্ছ পর্যন্ত বাণিজ্যতরী যাতায়াত করিত তাহার কিছু কিছু আভাস হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু সমসাময়িক বিশদ প্রমাণ কিছু নাই বলিলেই চলে। অৰ্ত্তবাণিজ্যও নিশ্চয়ই ছিল, , বাঙলাদেশের বিভিন্ন জনপদগুলির ভিতর এবং দেশের বাহিরে অন্যান্য রাজ্য ও রাজ্যখণ্ডগুলির সঙ্গে। এই অন্তবাণিজ্য চলিত হয়তো অধিকাংশই নদীপথে, কিন্তু স্থলপথেও কিছু কিছু না চলিত এমন নয়। অথচ এই সব বাণিজ্য-সম্ভার, বাণিজ্যপথ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-সংক্রান্ত অন্যান্য খবরের আভাসও উপাদানগুলির মধ্যে খুঁজিয়া বাহির করা কঠিন। হাট-বাজার, আপণ-বিপণি, ব্যাপারী ইত্যাদির নির্বিশেষ উল্লেখ লেখামালাগুলির মধ্যে মাঝে মাঝে দেখা যায়, কিন্তু তাহা উল্লেখ মাত্রই; বিশেষ আর কিছু খবর পাওয়া যায় না।

পাওয়া যে যায় না, উল্লেখ যে নাই তাহার কারণ তো খুবই পরিষ্কার। লেখমালাই হউক, অথবা অন্য যে-কোনও প্রকার লিখিত বিবরণই হউক, ইহাদের কোনটিই দেশের উৎপন্ন দ্রব্যাদির কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের, কিংবা দেশের সামাজিক অথবা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচয় দিবার জন্য রচিত হয় নাই। দু’একটি ছাড়া সব লেখমালাই প্রায় ভূমি দান-বিক্রয়ের পট্টোলি, আধুনিক ভাষায় পাট্টা বা দলিল। প্রস্তাবিত দান-বিক্রয়ের ভূমির পরিচয় দিতে গিয়া, কিংবা দান-বিক্রয়ের শর্ত ও স্বত্ব উল্লেখ করিতে গিয়া পরোক্ষভাবে কোনও কোনও উৎপন্ন দ্রব্যাদির নাম বাধ্য হইয়াই করিতে হইয়াছে, কারণ সেইসব উৎপন্ন দ্রব্যাদি সেই ভূমিখণ্ডের ধন-সম্পদ, এবং তাহার অবলম্বনেই ক্রেতা অথবা দানগ্রহীতার ক্রয় অথবা দানগ্রহণের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। সব লেখমালায় আবার সে উল্লেখও নাই। পূর্বোক্ত মহাস্থান শিলালিপির কথা ছাড়িয়া দিলে, খ্ৰীষ্টীয় পঞ্চম শতক হইতে আরম্ভ করিয়া সপ্তম শতক পর্যন্ত বহু তাম্রপট্টোলীর খবর আমরা জানি, কিন্তু উহাদের মধ্যে কোথাও দত্ত বা ক্রীত ভূমির উৎপন্ন দ্রব্যাদির বা কোনও শিল্পজাত দ্রব্যাদির উল্লেখ নাই বলিলেই চলে; একমাত্র সপ্তম শতকে রচিত কর্ণসুবর্ণ (কর্ণস্বর্ণ-কানসোনা, মুর্শিদাবাদ জেলা) রাষ্ট্রের ঔদুম্বরিক বিষয়ের বপ্যঘোষবাট গ্রামের তাম্রপট্টোলীতে “সর্ষপ-যাণক” বলিয়া সর্ষপক্ষেত্র-পার্শ্ববিলম্বিত যে পথের (?) উল্লেখ আছে তাহা হইতে হয়তো অনুমান করা যায়, উক্ত গ্রামের অন্যতম উৎপন্ন ছিল সর্ষপ বা সরিষা। অষ্টম শতক হইতে ত্ৰয়োদশ শতক পর্যন্ত পাল, সেন ও অন্যান্য রাজবংশের যে সমস্ত পট্টোলীর খবর আমরা জানি তাহার প্রায় সব ক’টিতেই দত্ত অথবা ক্রীত ভূমির প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যাদির উল্লেখ আছে, এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের পটোলীগুলিতে ভূমিজাত দ্রব্যাদির আয়ের পরিমাণও উল্লেখ আছে। ভূমিসম্পর্কিত দলিল বলিয়াই ভূমিজাত দ্রব্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু শিল্পজাত দ্রব্যাদির উল্লেখ নাই বলিলেই চলে। প্রশ্ন দাঁড়ায়, পঞ্চম হইতে সপ্তম শতকের লেখমালায় ভূমিজাত দ্রব্যাদির উল্লেখ নাই কেন, এবং অষ্টম হইতে ত্রয়োদশ। শতকের লেখমালায় আছে কেন? সঠিক উত্তর দেওয়া কঠিন, একটা অনুমান করা চলে। বৈন্যগুপ্তের গুনাইঘর পট্টোলীতে (৫০৭-৮ খ্রী) দেখিতেছি, মহাযানিক অবৈবাতিক ভিক্ষ সংঘকে যে গ্রাম বা অগ্রহার দান করা হইতেছে তাহার শর্ত হইতেছে “সর্বতোভোগেন” অর্থাৎ দানাগ্রহীতা সকল প্রকারে এই ভূমির উৎপন্ন দ্রব্য ও তাহার আয় ভোগ করিতে পরিবেন, এই অধিকার তাহাকে দেওয়া হইতেছে। এই যুগের অন্যান্য লেখমালায় এই ধরনের “সর্বতোভোগেন” অধিকারের উল্লেখ বিশেষভাবে নাই, কিন্তু “অক্ষয়নীবীধর্মানুযায়ী” যে দান তাহা যে “সর্বতোভোগেন”ই দেওয়া হইত এবং ক্রেতা ও দানগ্রহীতারা যে সেইভাবেই গ্রহণ করিতেন, এ অনুমান করা যায়। পরবর্তীকালে এই “সর্বতোভোগে”র স্বরূপ নির্দেশ করা প্রয়োজন হইয়াছিল, নানা বিশেষ ও অবিশেষ কারণে; ভোক্তার অধিকার সম্বন্ধে প্রশ্ন হয়ত উঠিয়াছিল, এবং হয়ত এই কারণেই প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পরবর্তী কালে কতকটা বিশদভাবে এই অধিকারের স্বরূপ নির্দেশ করা হইয়াছিল; তাহার ফলেই ভূমিজাত দ্রব্যাদির খবর আমরা কিছু কিছু পাই।

এ তো গেল লেখমালাগুলির কথা। অন্যান্য উপাদানগুলি সম্বন্ধে দু’এক কথা বলা দরকার। পূর্বে বলিয়াছি, খ্ৰীষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রচিত Periplus of the Erythrean Sea নামক গ্রন্থে ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাচীন বাঙলার প্রধান শিল্পজাত দ্রব্য রেশম ও কার্পাস বস্ত্রের খবর পাওয়া যায়। পূর্বোক্ত গ্রন্থ রচিত হইয়াছিল বিদেশী বণিক যাঁহারা সমুদ্র-পথে ভারতবর্ষের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাইতেন তাহাদের সুবিধার জন্য, কতকটা গাইড় বই’র মতন। বাঙলাদেশ হইতে যে সব জিনিস বিদেশে পশ্চিম এশিয়ায়, মিশরে, রোমে, গ্ৰীসে যাইত, তাহাদের মধ্যে অজ্ঞাতনামা লেখক রেশমীবস্ত্রের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। ঐ সব দেশে এই জিনিসের চাহিদা ছিল, তাই ইহার উল্লেখ করা হইয়াছে। অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্যও নিশ্চয়ই ছিল, সেগুলির চাহিদা হয়তো তেমন ছিল না, রপ্তানিও হইত না, সেই জন্য তাহাদের উল্লেখ নাই। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্ৰে’ এই বস্ত্রশিল্পের উল্লেখ আপরোক্ষভাবে। কারণ, এই গ্রন্থ এবং গ্রন্থোক্ত বিশেষ অধ্যায়টি ভারতবর্ষের বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্যের সংবাদ দিবার জন্য বিশেষভাবে রচিত নয়। রাজশেখরের “কাব্যমীমাংসায় পূর্বদেশগুলির উৎপন্ন দ্রব্যাদির একটি ক্ষুদ্র তালিকা আছে, কিন্তু একটু লক্ষ করিলেই দেখা যাইবে, এই তালিকা কিছুতেই সম্পূর্ণ হইতে পারে না; মনে হয় কোনও বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে যে সব গন্ধ ও আয়ুৰ্বেদীয় দ্রব্যাদির প্রয়োজন হইতে, এ তালিকায় শুধু সেইসব কয়েকটি দ্রব্যেরই নাম আছে। সেইজন্য আমাদের নানা উপাদানের মধ্যে প্রাচীন বাঙলার ধন-সম্বলের যে সংবাদ তাহা প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পরোক্ষ ও অসম্পূর্ণ। এইসব বিচ্ছিন্ন, টুকরো-টাকরা তথ্য আহরণ করিয়া এই ধন-সম্বলের একটি সম্পূর্ণ স্বরূপ গড়িয়া তোলা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবু, মোটামুটি একটা কাঠামো গড়িয়া তোলার চেষ্টা করা যাইতে পারে।

Niharranjan Ray ।। নীহাররঞ্জন রায়