অন্নদা উঠিয়া কহিলেন, “আচ্ছা, একটু বোসো মা, আমি আসিয়া শুনিতেছি।” বলিয়া যোগেন্দ্রের কাছে গেলেন। মনে করিয়াছিলেন বলিবেন–আজ কথা হইতে পারিল না, আর-এক দিন হইবে। কিন্তু যেই যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কী হইল বাবা? বিবাহের কথা বলিলে?” অমনি তাড়াতাড়ি কহিলেন, “হাঁ বলিয়াছি।” তাঁহার ভয় ছিল, পাছে যোগেন্দ্র নিজে গিয়া হেমনলিনীকে ব্যথিত করিয়া তোলে।
যোগেন্দ্র কহিল, “সে অবশ্য রাজি হইয়াছে?”
অন্নদা। হাঁ, একরকম রাজি বৈকি।
যোগেন্দ্র কহিল, “তবে আমি অক্ষয়কে বলিয়া আসি গে?”
অন্নদা ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “না না, অক্ষয়কে এখন কিছু বলিয়ো না। বুঝিয়াছ যোগেন, অত বেশি তাড়াতাড়ি করিতে গেলে সমস্ত ফাঁসিয়া যাইবে। এখন কাহাকেও কিছু বলিবার দরকার নাই; আমরা বরঞ্চ একবার পশ্চিমে বেড়াইয়া আসি গে, তার পরে সমস্ত ঠিক হইবে।
যোগেন্দ্র সে কথার কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেল। কাঁধে একখানা চাদর ফেলিয়া একেবারে অক্ষয়ের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। অক্ষয় তখন একখানি ইংরাজি মহাজনী হিসাবের বই লইয়া বুক-কীপিং শিখিতেছিল । যোগেন্দ্র তাহার খাতাপএ টান দিয়া ফেলিয়া কহিল, “ও-সব পের হইবে, এখন তোমার বিবাহের দিন ঠিক করো।”
অক্ষয় কহিল, “বল কী!”

<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর