দ্বিজু হাসিয়া বলিল, দাদাকে জানলে আর আশ্চর্য মনে হবে না। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, ঘরে তখনো চাকরে আলো দিয়ে যায়নি, আমি পাশের ঘরে একটা বই খুঁজছিলাম, হঠাৎ বাবার কথা কানে গেল। দাদা বললেন, না। বাবা জিদ করতে লাগলেন, না কেন বিপ্রদাস? আমার পিতা-পিতামহকালের সম্পত্তি আমি নষ্ট হতে দিতে পারব না। পরলোকে থেকেও আমি শান্তি পাব না। তবুও দাদা জবাব দিলেন, না, সে কোনমতেই হতে পারে না। বাবা বললেন, তবুও তোমারি হাতে আমি সমস্ত রেখে গেলাম। যদি ভাল মনে কর দিয়ো, যদি তা না মনে করতে পার, তাকে দিয়ো না। এর পরেও বাবা দু-তিন বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু আমি নিশ্চয় জানি, তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন নি।
বন্দনা মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করিল, এ কথা আর কেউ জানে?
কেউ না। শুধু আমি জানি লুকিয়ে শুনেছিলাম বলে।
বন্দনা বহুক্ষণ নীরবে থাকিয়া অস্ফুটে কহিল, সত্যই আপনার দাদা অসাধারণ মানুষ।
দ্বিজদাস শান্তভাবে শুধু বলিল, হাঁ। কিন্তু এখন আমি নীচে যাই, আমার অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। আপনি বসে বসে বই পড়ুন যতক্ষণ না ডাক পড়ে।
বন্দনা হাসিয়া কহিল, এখন বই পড়বার রুচি নেই, চলুন আমিও যাই। অন্ততঃ আট-দশদিন ত এখানে আছি, – বই পড়বার অনেক সময় পাব।
দ্বিজদাস চলিতে উদ্যত হইয়াছিল, থমকিয়া দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল, আপনার বাবার সঙ্গে আজ কলকাতা যাবেন না?
না। তাঁর ফেরবার পথে বোম্বায়ে চলে যাব।
দ্বিজদাস কহিল, বরঞ্চ আমি বলি তাঁর ফেরবার পথেই আপনি কিছুদিন এখানে থেকে যাবেন।
বন্দনা কহিল, প্রথমে সেই ইচ্ছেই ছিল, কিন্তু এখন দেখচি তাতে ঢের অসুবিধে। আমাকে পৌঁছে দেবার কেউ নেই। কিন্তু আপনি যদি রাজী হন, আপনার পরামর্শই শুনি।
কিন্তু আমি ত তখন থাকব না। এই সোমবারে মাকে নিয়ে কৈলাস তীর্থে যাত্রা করব।
উপন্যাস : বিপ্রদাস Chapter : 5 Page: 16
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বিপ্রদাস
- Read Time: 1 min
- Hits: 165