বন্দনার দুই চক্ষু আনন্দে ও উৎসাহে উজ্জ্বল হইয়া উঠিল—কৈলাস? কৈলাসে যাবেন? শুনেচি সে নাকি এক পরমাশ্চর্য বস্তু। সঙ্গে আপনাদের আর কে কে যাবেন?
ঠিক জানিনে, বোধ হয় আরও কেউ কেউ যাবেন।
আমাকে সঙ্গে নেবেন?
দ্বিজদাস চুপ করিয়া রহিল। বন্দনা ক্ষুণ্ণ অভিমানের কণ্ঠে জোর করিয়া হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, আর এই জন্যেই বুঝি ঠিক সেই সময়ে আমাকে এখানে এসে থাকবার সুপরামর্শ দিচ্চেন?
দ্বিজদাস তাঁহার মুখের পানে চোখ তুলিয়া শান্তভাবে কহিল, সত্যিই এই জন্যে পরামর্শ দিয়েছি। বৌদি এত কথা লিখেচেন, কেবল এই খবরটিই দেননি যে আমাদের এটা কতবড় গোঁড়া হিন্দুর বাড়ি? এর আচার-বিচারের কঠোরতার কোন আভাস চিঠিতে পাননি?
বন্দনা মাথা নাড়িয়া কহিল, না।
না? আশ্চর্য! একটুখানি থামিয়া দ্বিজদাস বলিল, একা আমি ছাড়া আপনার ছোঁয়া জল পর্যন্ত খাবার লোক এ বাড়িতে কেউ নেই।
কিন্তু দাদা?
না।
মেজদি?
না, তিনিও না। আমরা চলে গেলে তবুও হয়ত দুদিন এখানে থাকতে পারেন, কিন্তু মা থাকতে একটা দিনও আপনার এ বাড়িতে থাকা চলে না।
বন্দনার মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল—সত্যি বলচেন?
সত্যিই বলচি।
ঠিক এমনি সময়ে নীচের সিঁড়ি হইতে সতীর ডাক শোনা গেল,—ঠাকুরপো! বন্দনা! তোমরা দুটিতে করচ কি?
যাচ্চি বৌদি,—সাড়া দিয়া দ্বিজদাস দ্রুতপদে প্রস্থান করিতে উদ্যত হইল, বন্দনা পাংশুমুখে চাপাকণ্ঠে শুধু কহিল, এত কথা আমি কিছুই জানতুম না। ধন্যবাদ।
উপন্যাস : বিপ্রদাস Chapter : 5 Page: 17
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বিপ্রদাস
- Read Time: 1 min
- Hits: 170