গুলির দোকানটা তখন নিজেই কিনিয়া লইবেন, আর কাত্যায়নী ছোটলোক বেটীর গর্ব রীতিমত খর্ব করিবেন। তাহার এক বৎসরের খোরাক ঝনাৎ করিয়া তাহার সম্মুখে আগাম ফেলিয়া দিয়া বলিবেন, ছোটলোক বেটী! আমাকে হেয় করিস? পুরুষের ভাগ্য আর স্ত্রীলোকের চরিত্র দেবতারা জানেন না, তা তুই কোন্ ছার। আর ভগবান নন্দী তার বাটীর সম্মুখে যদি আড্ডাঘর না বসাই ত আমার নাম হারাণ নয়। হারাণচন্দ্র এখন গুনগুন্ স্বরে গলায় সুর লইয়া সমস্ত বামুনপাড়াটা ঘুরিয়া বেড়ান।
কিন্তু শুভদা? তাহার কি এক ভাবনা? ভগবান জানেন স্বামীসুখ সে একদিনের জন্যেও পায় নাই; অন্ততঃ তাহার মনে পড়ে না— সে স্বামীর মুখে অন্নব্যঞ্জন তুলিয়া দিতে যে তাহার কত আনন্দ, কত তৃপ্তি, তাহা সে নিজেই অনুধাবন করিয়া উঠিতে পারে না; আনন্দে চোখের কোণে জল আইসে, কিন্তু কে তাহা দেখিবে? দেখিবার একজন ছিল, বুঝিবার একজন ছিল, কিন্তু সে পূর্বেই গত হইয়াছে।শুধু ইহাই যদি হইত, তাহা হইলে শুভদা এই সুখেই সাংসারিক কাহিনী খতম করিয়া দিতে পারিত; কিন্তু ছলনা দিন দিন বড় হইয়া উঠিতেছে, তাহার উপায় কি করিয়া হইবে? যে মরিয়াছে সে বাঁচিয়াছে, কিন্তু মাধবের মনে যে কি আছে, শুভদা সে তত্ত্ব কিছুতেই নিরূপণ করিয়া উঠিতে পারে না। আজকাল চিকিৎসার অনেক সুযোগ হইয়াছে, যথাসাধ্য চিকিৎসাও হইতেছে, কিন্তু ফল যে কিছু হইতেছে তাহা কিছুতেই বোধ হয় না। শুভদা একথা ভাবিয়া কপালে করাঘাত করে, ললনার কথা মনে করিয়া আকুলভাবে আপনা-আপনি রোদন করে, আর তাহার নিকট যাইবার কামনা করে; আবার জল আনে, রন্ধন করে, সকলকে খাওয়ায় পরায়— এমনি করিয়া দিন অতিবাহিত করিয়া চলিতেছে।
একদিন মধ্যাহ্নে আহার করিতে বসিয়া সদানন্দ শুভদার মুখপ্রতি চাহিয়া বলিল, ছলনা বড় হয়েছে।
শুভদা মলিন মুখে বলিল, হাঁ।
আর রাখা যায় না, ভালও দেখায় না।
শুভদা বলিল, মা দুর্গাই জানেন।
সদানন্দ একটু হাসিল; বলিল, মা দুর্গা ত আর বিবাহ দিয়া যাইবেন না?
শুভদা মৌন হইয়া রহিল।
হরমোহনবাবুর ছেলে শারদার সহিত বিবাহ দিলে হয় না।
শুভদা ভাল বুঝিতে পারিল না; বলিল, শারদার সঙ্গে?
হাঁ।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 6 Page: 27
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 165