বিশেষরূপে উপদিষ্ট হইয়া সদানন্দ দুঃখিতভাবে বলিল, যাহা হইবার তাহা হইয়াছে; এখন পিসিমার শ্বশুরবাটী হইতে ফিরিয়া আসিয়া ধানের গোলাটা আপনার বাটীতে রাখিয়া যাইব।
গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয় বিষম ক্রদ্ধ হইয়া বলিলেন, ওহে সদানন্দ, তোমার পিতাও আমাকে মান্য করিয়া চলিতেন।
আমিও কোনরূপ অমান্য করি নাই।
তবে এমন কথা বলিলে কেন?
সদানন্দ অপ্রতিভভাবে কহিল, আমার সব সময়ে মতিস্থির থাকে না।
গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয় আরো রাগিয়া উঠিলেন; বলিলেন, তুমি উৎসন্ন যাইতেছ।
সদানন্দ মৃদু হাসিল; আপনারা একটু চেষ্টা করিলে না যাইতেও পারিতাম।
তুমি আমার সম্মুখ হইতে দূর হও।
যে আজ্ঞা, বলিয়া সদানন্দ বাহিরে আসিয়া খুব একগাল হাসিয়া লইল, তাহার পর গলা ছাড়িয়া রামপ্রসাদী ধরিল।
নিকটে কাঙ্গালীচরণ মাথায় পটলের বোঝা লইয়া হাটে যাইতেছিল, সে চোখে হাসি, মুখে গান দেখিয়া বলিল, কি দাদাঠাকুর, এত আমোদ কিসের?
সদানন্দ হাসিতে হাসিতে বলিল, গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়িতে আজ নিমন্ত্রণ ছিল, খুব খেয়েছি।
সে বলিল, বটে!
তখন সদানন্দ আজকাল পটলের দর জিজ্ঞাসা করিয়া আর একবার হাসিয়া পূর্বত্যক্ত গানটার সুর গলার মধ্যে বেশ করিয়া ভাঁজিয়া লইয়া মনের আনন্দে পথ বাহিয়া চলিল, কাঙ্গালীচরণও যথাস্থানে চলিয়া গেল।
এখন একটা কথা আছে। কবি বলিয়াছেন, মনেই স্বর্গ, মনেই নরক; সাংসারিক অস্তিত্ব ইহার বড় একটা নাই। একথা সম্পূর্ণ সত্য না হইলেও যে আংশিক সত্য, তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই। কারণ, হারাণচন্দ্রের যাহা পার্থিব সুখের শেষ সীমা, শুভদা তাহা তেমন উপভোগ করিয়া উঠিতে পারে না। হারাণচন্দ্র দুবেলা পরিতোষে আহার করিতে পান, চাহিলেই দুই-চারি আনা পয়সা স্ত্রীর নিকট কর্জ পাইতে পারেন, তাহা পরিশোধ করিবার বালাই মাত্র নাই, বাজারের ভিতর দিয়া এখন উন্নত মস্তকে গমনাগমন করেন, কোন শ্যালকের নিকট একটি পয়সা মাত্র কর্জ নাই, আড্ডাধারী তাঁহার পূর্বপদ সসম্মানে ফিরাইয়া দিয়াছে; আর চাই কি? তবে যেটুকু বাকি আছে, হারাণচন্দ্র ভাবেন, সদানন্দ আর একটু ক্ষেপিলেই তাহা সমাধান করিয়া ফেলিবেন।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 6 Page: 26
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 163