রমেন বললে, শুনে আহ্লাদে তোমার পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করচে। আশা হচ্চে হাতড়ে হাতড়ে এতদিনে ঠিক জিনিসটিতে হাত লেগেছে। মণি, ও-বস্তু যত অর্থহীন হয় ততই হয় খাঁটি। একদম অবোধ্য হলে তার আর মার নেই—সেই হলো একেবারে সিদ্ধমন্ত্র। তখন দেবতার গলায় গামছা দিয়ে টেনে এনে অভীষ্ট আদায় করা যায়।
মণি গম্ভীর হতে গিয়েও হেসে ফেললে। বললে, বুনোদের অনেক দেবতা, তাদের মন্ত্রসিদ্ধ ওস্তাদদের ভাবনা নেই—যাকে হোক একটা ধরতে পারলেই হলো, কিন্তু তুমি কোন্ দেবতার ঝুঁটি ধরে বর আদায় করবে শুনি?
এখন শুনে কি হবে? শুধু এইটুকু জেনে রাখো, ঝুঁটি খুললে তার চুল পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, সেইটি বাগিয়ে যখন ধরবো, তখন দেবতা আপনিই টের পাবেন। কথাটি কবেন না, সুড়সুড় করে পিছনে পিছনে আসবেন। শুধু বাঙলা মুলুক নয়, হয়ত ইউরোপ পর্যন্ত।
তোমার ভারী আস্পর্ধা রমেন।
আস্পর্ধাই ত। নইলে সব ছেড়ে এত দূরে আসতাম কোন্ সাহসে?
তোমার ভুল। তুমি জানো দেশের কাজে আমি নিজেকে সঁপে দিয়েচি।
দিলেই বা গো। মন্ত্রের জোর যে তারও উপরে। দেশ-টেশ কোথায় ভেসে যায়।
মণি রাগ করে বললে, দেখো, মন্ত্র মন্ত্র করে চালাকি করো না। আমার কুমীরের মতো হাঁ, অমাবস্যার মতো রং—আমার আশা তুমি ছাড়ো। সত্যি ভালোবাসলে কেউ অমন বলে না। তা আবার প্রিয়ার মুখের উপর। তার চেয়ে বরঞ্চ তুমি যেখান থেকে এসেছ সেইখানেই ফিরে যাও।
ফেরবার জো নেই মণি, ভাড়ার টাকা পাবো কোথায়?
আমি যোগাড় করে দেবো।
তা হলে সে-ই ভালো। দু-জনের ভাড়া যোগাড় করো।
দু-জনের নয় একজনের । কিংবা আর একটা কাজ করো না রমেন? নানা দেশের নানা ইউনিভারসিটি থেকে পাস করার যে লম্বা ফর্দ তোমার নামের পিছনে আছে তাতে বিদেশ ফিরে যাবার দরকার কি? চেষ্টা করলে এখানেই যে একটা বড় চাকরি পাবে। অনেক সুন্দরী ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার আলাপ আছে, কেউ তাদের সম্বন্ধে এতটুকু কলঙ্কের আভাস পর্যন্ত দিতে পারে না, তারা এমনি মেয়ে। চিরদিন সাধ্বী পতিব্রতা হয়ে তোমার ঘর আলো করবে আমি লিখে দেবো। এমন কি, জামিন পর্যন্ত হবো। কথা দিচ্ছি তুমি সত্যিই সুখী হবে রমেন। শুধু একটি প্রার্থনা, যখন তখন এসে এক কথা নিয়ে আমাকে আর জ্বালাতন ক’রো না।—বলতে বলতে তার চোখ মুখের ভাব গম্ভীর হয়ে এলো, বললে, তা ছাড়া নিজেকেও ত চিনি। আমার মতো একটা দজ্জাল দুর্দান্ত কুশ্রী মেয়ে নিয়ে তোমার হবে কি? আমি কি কোন অংশেই তোমার যোগ্য?
রমেন উত্তর দিলে, কোনদিন কি বলেচি তুমি আমার যোগ্য? নিজেকে কি আমিই চিনিনে? তোমার ঐ ভাল-ভাল সতীলক্ষ্মী বান্ধবীদের যথাকালে যথাযোগ্য পাত্রে অর্পণ করো, আমি তিলার্ধ আপত্তি করবো না।
পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা : আগামীকাল Chapter : 2 Page: 9
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 191