>তাঁকে বাদ না দিয়েও সঙ্ঘ আপনার টিকবে না এককড়িদা।

এককড়ি মুখ ফিরিয়ে রমেনের প্রতি খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বললে, তুমি কি করে জানলে রমেন?

জানিনে, শুধু আমার অনুমান। জলধিবাবু যাই হোন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্তা আপনি। কিন্তু, একটা কথা বলি এককড়িদা, পারা-আঁচড়ানো আরশিতে মুখ দেখে যে মুখের বিচার করে, সে সুবিচার করে না। ভাবে, মুখের ঐ ক্ষতচিহ্নগুলোই সত্যি। আপনারও হয়েচে সেই দশা। সঙ্ঘের অশুভ কামনা করিনে, কিন্তু উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক, মনে হচ্ছে এ টিকবে না। কিন্তু মণি, তুমি বিষণ্ণ হয়ে উঠলে কেন, এ ত তোমাকে মানাচ্চে না!

মণি একটুখানি ম্লান হেসে বললে, আমার প্ল্যানটা যে ফেঁসে গেল।

এককড়ি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, কিসের প্ল্যান মণি?

মণি একবার দ্বিধা করলে, হয়ত ভাবলে বলা উচিত কি না, কিন্তু এককড়ি তেমনি আগ্রহে চেয়ে আছে দেখে আস্তে আস্তে বললে, একটু পূর্বেই ভাবছিলাম আপনার কাছে হাজার-খানেক টাকা ধার চেয়ে নেবো।

এককড়ি ক্ষণমাত্রও দ্বিধা না করে বললে, বেশ ত, তাই নিয়ো।

রমেন জিজ্ঞাসা করলে, চাকরি ত গেল, শোধ দেবে কি করে?

এককড়ি বললে, সে ও-ই জানে। আমি জানি ও যেখানেই থাক, বেঁচে থাকলে শোধ দেবেই। আর মরে যদি যায় সে এতবড় ক্ষতি যে, হাজার টাকার শোক আমার মনেও পড়বে না। টাকাটা তোমাকে আমি কালই পাঠিয়ে দেবো।

রমেন বললে, কিসের প্রয়োজন তা-ও জিজ্ঞাসা করবেন না?

না। আমি জানি ও অপব্যয় করে না। কিন্তু এখন উঠি। সঙ্ঘের তরফ থেকে তোমাকে সাধুবাদ দেওয়া চলে না, কিন্তু আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ রইলো। যদি কখনও তোমার উপকারে আসতে পারি আন্তরিক খুশী হবো—এই বলে এককড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বললে, রমেন, তোমার সঙ্গে পরিচয় শুধু ঘণ্টা-খানেকের, আর কখনও আলাপ করবার সুযোগ হবে কি না জানিনে, কিন্তু এটুকু জেনে গেলাম যে, আমার সম্বন্ধে ধারণা তোমার খুব খারাপ হয়েই রইলো।

রমেন হেসে বললে, তাতে আপনার ক্ষতি হবে না দাদা। কিন্তু এ কথাটা বলাই ভাল যে, রুগী যখন মরে তখন আড়ালে ডাক্তারের বাপান্ত করা ছাড়া গৃহস্থের আর কোন সান্ত্বনাই থাকে না।

এককড়িও হাসলে এবং উভয়কেই নমস্কার করে বেরিয়ে গেল। মণিমালাকে আজ সে প্রথম নমস্কার করলে। আর কোনদিন করেনি।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়