মিনিট পাঁচ-ছয় ঘরটা নিঃশব্দ হয়ে রইলো।

মণি বললে, কি রমেন, এবার বাপান্ত শুরু করবে নাকি?

রমেন বললেন, সে নেপথ্যে। তবে প্রত্যক্ষে বলার আজ এইটে পেলাম যে, এতকাল রমেন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল তাঁর চেয়ে মহাশয় ব্যক্তি ভূ-ভারতে নেই। এতদিনে সেই অহঙ্কারটা চূর্ণ হ’লো।

হ’লো ত?

হ্যাঁ। আর একটা কথা বলবো। ভয়ে, না নির্ভয়ে?

নির্ভয়ে বলো।

দাদার একটু বয়স হয়েছে, বেশ মানাবে, না—কিন্তু সংসারে মণিমালার বর যদি কেউ থাকে ত এই ব্যক্তি।

মণি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠলো, আহা রমেন, তোমার মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক।

পড়তেও পারে গো বন্ধু, পড়তেও পারে। কিন্তু আর না, উঠি। রাস্তায় একলা ঘুরে ফিরে মাথাটা ঠাণ্ডা করে নিই গে। নইলে সারারাত ঘুম হবে না। এই বলে সে ধীরে ধীরে উঠে পড়লো। দোর পর্যন্ত এগিয়ে ফিরে চেয়ে বললে, তোমার সতীলক্ষ্মী বিদুষী বান্ধবীদের একবার দেখাতে পারো না মণি?

পারি, কিন্তু কি হবে?

একটু বাজিয়ে দেখবো।

সর্বনাশ! তুমি কি তাদের বিদ্যের পরীক্ষা নেবে নাকি?

ওগো না না। তোমাদের ও-দিকটা আমার জানা আছে, তুমি নিঃশঙ্ক হও। দীর্ঘদিন দেশছাড়া, ইতিমধ্যে দেশের মেয়েদের বহু পরিবর্তন, অর্থাৎ বহু উন্নতি ঘটেছে, এমনি একটি জনশ্রুতি বিদেশ থেকেই কানে পৌঁছেছে। শানে আছড়ালে তাঁরা কিরকম আওয়াজ দেন, অর্থাৎ খাদটা কি পরিমাণে মিশেছে দেখতে একটু সাধ হয় মণি।
তাঁরা তোমাকেও ত আছড়াতে পারেন?
তা-ও পারেন, বিচিত্র নয়।—এই বলে রমেন হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। (‘বিচিত্রা,’ চৈত্র, ১৩৪২)

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়