ম্যাজিস্ট্রেট। (জীবানন্দের প্রতি কটাক্ষে চাহিয়া ষোড়শীকে কহিলেন) তোমার কোন ভয় নেই, তুমি সত্য কথা বল। তোমাকে বাড়ি থেকে ধরে এনেছে?
ষোড়শী। না, আমি আপনি এসেচি।
ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে তোমার কি প্রয়োজন?
ষোড়শী। আমার কাজ ছিল।
ম্যাজিস্ট্রেট। এত রাত্রেও বাড়ি ফিরে যেতে দেরি হচ্ছিল!
তারাদাস। (চেঁচাইয়া) না হুজুর, সমস্ত মিছে—সমস্ত বানানো, আগাগোড়া শিখানো কথা।
ম্যাজিস্ট্রেট। (তাহার প্রতি লক্ষ্য না করিয়া শুধু মুখ টিপিয়া হাসিলেন এবং শিস্ দিতে দিতে প্রথমে বন্দুকটা এবং পরে পিস্তলটা তুলিয়া লইয়া জীবানন্দকে কেবল বলিলেন) I hope you have permission for this.
[ধীরে ধীরে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন
ম্যাজিস্ট্রেট। (নেপথ্যে) হামারা ঘোড়া লাও!
[ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা গেল। তারাদাস হতজ্ঞানের ন্যায় স্তব্ধ অভিভূতভাবে দাঁড়াইয়া থাকিয়া]
তারাদাস। (অকস্মাৎ বুকফাটা ক্রন্দনে সকলকে সচকিত করিয়া পুলিশ-কর্মচারীর পায়ের নীচে পড়িয়া কাঁদিয়া) বাবুমশায়, আমার কি হবে! আমাকে যে এবার জমিদারের লোক জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।
ইন্স্পেক্টার। (তিনি বয়সে প্রবীণ, শশব্যস্ত হইয়া তাহাকে চেষ্টা করিয়া হাত ধরিয়া তুলিয়া সদয়কণ্ঠে) ভয় কি ঠাকুর, তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাকো গে। স্বয়ং ম্যজিস্ট্রেট সাহেব তোমার সহায় রইলেন—আর কেউ তোমাকে জুলুম করবে না। (কটাক্ষে জীবানন্দের দিকে চাহিলেন)
তারাদাস। (চোখ মুছিতে মুছিতে) সাহেব যে রাগ করে চলে গেলেন বাবু!
ইন্স্পেক্টার। (মুচকি হাসিয়া) না ঠাকুর, রাগ করেন নি, তবে আজকের এই ঠাট্টাটুকু তিনি সহজে ভুলতে পারবেন, এমন মনে হয় না। তা ছাড়া আমরাও মরিনি, থানাও যা হোক একটা আছে। (আড়চোখে জীবানন্দের দিকে চাহিয়া, কিছু পরে) এখন চল ঠাকুর, যাওয়া যাক। এই রাত্তিরে যেতেও ত হবে অনেকটা।
সাব-ইন্স্পেক্টার। (বয়সে তরুণ, অল্প হাসিয়া) মেয়েটি রেখে ঠাকুরটি কি তবে একাই যাবেন নাকি?
[কথাটায় সবাই হাসিল—কনস্টেবলগুলা পর্যন্ত। এককড়ি কড়িকাঠের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিল। তারাদাসের চোখের অশ্রু চোখের পলকে অগ্নিশিখায় রূপান্তরিত হইয়া গেল]
তারাদাস। (ষোড়শীর প্রতি কঠোর দৃষ্টিপাত করিয়া সগর্জনে) যেতে হয় আমি একাই যাব। আবার ওর মুখ দেখব—আবার ওকে বাড়িতে ঢুকতে দেব আপনারা ভেবেচেন?
ইন্স্পেক্টার। (সহাস্যে) মুখ তুমি না দেখতে পার কেউ মাথার দিব্যি দেবে না ঠাকুর! কিন্তু যার বাড়ি, তাকে বাড়ি ঢুকতে না দিয়ে আর যেন নতুন ফ্যাসাদে পোড়ো না।
তারাদাস। (আস্ফালন করিয়া) বাড়ি কার? বাড়ি আমার। আমিই ভৈরবী করেচি, আমিই ওকে দূর করে তাড়াব। কলকাঠি এই তারা চক্কোত্তির হাতে। (সজোরে নিজের বুক ঠুকিয়া) নইলে কে ও জানেন? শুনবেন ওর মায়ের—
ইন্স্পেক্টার। (থামাইয়া দিয়া) থামো ঠাকুর, থামো, রাগের মাথায় পুলিশের কাছে সব কথা বলে ফেলতে নেই—তাতে বিপদে পড়তে হয়। (ষোড়শীর প্রতি) তুমি যেতে চাও ত আমরা তোমাকে নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি। চল, আর দেরি করো না।
[ষোড়শী অধোমুখে নিঃশব্দে দাঁড়াইয়াছিল, ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, না]
সাব-ইন্স্পেক্টার। (মুখ টিপিয়া হাসিয়া) যাবার বিলম্ব আছে বুঝি?
ষোড়শী। (মুখ তুলিয়া চাহিয়া ইন্স্পেক্টারের প্রতি) আপনারা যান, আমার যেতে এখনো দেরি আছে।
তারাদাস। (উন্মত্তের মত) দেরি আছে! হারামজাদী, তোকে যদি না খুন করি ত আমি মনোহর চক্কোত্তির ছেলে নই! (লাফাইয়া উঠিয়া ষোড়শীকে আঘাত করিতে গেল)
নাটক : ষোড়শী Chapter : 1 Page: 9
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 191