জ্যাঠাইমা। সে কি তুই নিজেই বুঝিস নি মা, কে এদের বুক এমন কোরে ভরে দিয়ে গেছে। ওরা ভাবলে তাকে যেমন কোরে হোক জেলে বন্ধ করলেই আপদ চুকল। কিন্তু এ কথা তারা ভাবলে না যে, আগুন জ্বলে উঠে শুধু শুধু নেবে না। জোর করে নেবালেও সে আশেপাশের জিনিস তাতিয়ে দিয়ে যায়।
রমা। কিন্তু এই কি ভালো জ্যাঠাইমা?
বিশ্বেশ্বরী। ভাল বৈ কি মা। একদিকে প্রবলের অত্যাচার করবার অখণ্ড স্পর্ধা, অন্য দিকে নিরুপায়ের সহ্য করবার তেমনি অবিচ্ছিন্ন ভীরুতা,—এই দুইই যদি সে খর্ব করে থাকে মা, বেণীর কথা মনে করে আমি কোনদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলব না। বরঞ্চ এই প্রার্থনাই করব, সে আবার ফিরে এসে দীর্ঘজীবী হয়ে যেন এমনি কোরেই কাজ করতে পারে। রমা, এক সন্তান যে কি সে শুধু মায়েই জানে। বেণীকে যখন তারা রক্তমাখা অবস্থায় পালকিতে করে হাসপাতালে নিয়ে গেল, তখন যে আমার কি হয়েছিল তোমাকে বোঝাতে পারব না। কিন্তু তবুও কারুকে আমি অভিশাপ দিতে পারিনি। এ কথা ত ভুলতে পারিনি মা, যে, ধর্মের শাসন মায়ের মুখ চেয়ে থাকে না।
রমা। তোমার সঙ্গে তর্ক করচি নে জ্যাঠাইমা, কিন্তু এই যদি সত্যি হয়, তবে রমেশদা কোন্ পাপে এ দুঃখ ভোগ করচেন? আমরা যা কোরে তাঁকে জেলে দিয়েছি এ কথা ত কারও অগোচর নেই।
বিশ্বেশ্বরী। নেই বলেই ত বেণী আজ হাসপাতালে। আর তোমার—কি জানিস মা, কোন কাজই কোনদিন শুধু শুধু শূন্যে মিলিয়ে যায় না। তার শক্তি কোথাও-না-কোথাও গিয়ে কাজ করেই। কিন্তু কি কোরে করে তা সকল সময় ধরা পড়ে না বলেই আজ পর্যন্ত এ সমস্যার মীমাংসা হোলো না, কেন একের পাপে অন্যে প্রায়শ্চিত্ত করে। কিন্তু করতে যে হয় রমা, তাতে ত সংশয় নেই।
[রমা নীরবে দীর্ঘশ্বাস মোচন করিল]
বিশ্বেশ্বরী। এর থেকে আমারও চোখ ফুটেচে মা, ভাল করব বললেই সংসারে ভাল করা যায় না। গোড়ার ছোট—বড় অনেকগুলো সিঁড়ি উত্তীর্ণ হবার ধৈর্য থাকা চাই। একদিন রমেশ হতাশ হয়ে যখন চলে যেতে চেয়েছিল তখন আমিই যেন তাকে যেতে দিইনি। তাই তার জেলের খবর শুনে মনে হয়েছিল আমিই যেন তাকে জেলে পাঠালাম। তখন ত জানিনি মা,—বাইরে থেকে ছুটে এসে ভাল করতে যাওয়ার বিড়ম্বনা এত। সে কাজ এত কঠিন।
রমা। কেন জ্যাঠাইমা?
নাটক : রমা Chapter : 4 Page: 68
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 173