অন্নপূর্ণা ঐটুকু শুনিয়াই মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলেন, বলিলেন, শুনলেই বা ঠাকুর-দেবতার কথা, এ ত ভাল কথা ছোটবৌ।
বিন্দু বিরক্ত হইয়া বলিল, তবে শোন তুমি ঠাকুর-দেবতার কথা, আমরা উঠে যাই।
নরেন বলিল, আচ্ছা, তবে থাক, আমি সাবিত্রীর পার্ট করি।
বিন্দু বলিল, না।
এই কণ্ঠস্বর শুনিয়া এতক্ষণে অন্নপূর্ণার চৈতন্য হইল যে, ব্যাপারটা অনেক দূরে গিয়াছে এবং এইখানেই তাহার শেষ হইবে না। এলোকেশী নূতন লোক, তিনি ভিতরের কথা বুঝিলেন না, বলিলেন, আচ্ছা এখন থাক। পুরুষেরা বেরিয়ে গেলে সে একদিন দুপুরবেলা হতে পারবে। আহা গান-বাজনাই কি ও কম শিখেচে? দময়ন্তীর সেই কেঁদে কেঁদে গানটি একবার বলিস ত বাবা, তোর মামীরা শুনলে আর ছাড়তে চাইবে না।
নরেন বলিল, এখনি বলব?
রাগে বিন্দুর সর্বাঙ্গ জ্বালা করিতেছিল, সে কথা কহিল না।
অন্নপূর্ণা তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলেন, না না, গান-টান এখন কাজ নেই।
নরেন বলিল, আচ্ছা, গানটা আমি অমূল্যকে শিখিয়ে দেব। আমি বাজাতেও জানি। ত্রেকেটে তাক্ বাজনা বড় শক্ত মামী, আচ্ছা, ঐ পেতলের হাঁড়িটা একবার দাও ত দেখিয়ে দিই।
বিন্দু অমূল্যকে উঠিবার ইঙ্গিত করিয়া বলিল, যা অমূল্য ঘরে গিয়ে পড় গে।
অমূল্য মুগ্ধ হইয়া শুনিতেছিল, তাহার উঠিবার ইচ্ছা ছিল না, চুপি চুপি বলিল, আরো একটু বোস না ছোটমা।
বিন্দু কোন কথা না বলিয়া তাহাকে তুলিয়া দিয়া সঙ্গে করিয়া ঘরে চলিয়া গেল। সহসা সে কেন যে অমন করিয়া গেল, অন্নপূর্ণা তাহা বুঝিলেন এবং পাছে সঙ্গদোষে অমূল্য বিগড়াইয়া যায়, এই ভয়ে নরেনের এইখানে থাকিয়া লেখাপড়াও যে সে পছন্দ করিবে না, ইহা সুস্পষ্ট বুঝিয়া তিনি উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, বাবা নরেন, তোমার ছোটমামীর সামনে ঐ অ্যাক্টো-ট্যাক্টোগুলো আর ক’রো না। ও রাগী মানুষ, ও-সব ভালবাসে না।
এলোকেশী আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ছোটবৌ ও-সব ভালবাসে না বুঝি? তাই অমন করে উঠে গেল বটে।
অন্নপূর্ণা বলিলেন, হতেও পারে। আরো একটা কথা বাবা, তুমি নিজের খাবে-দাবে পড়াশুনা করবে—যাতে মায়ের দুঃখ ঘোচে, সেই চেষ্টা করবে, তুমি অমূল্যর সঙ্গে বেশী মিশো না বাবা। ও ছেলেমানুষ, তোমার চেয়ে অনেক ছোট।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 4 Page: 16
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 187