এই সময় অমূল্য কোথা হইতে আসিয়া আস্তে আস্তে তাহার ছোটমার কোলে গিয়া বসিল। বসিয়াই গলা ধরিয়া কানে কানে বলিল, কাল রবিবার, ছোটমা, আজ মাস্টারমশায়কে যেতে বলে দাও না।
বিন্দু হাসিয়া বলিল, এই যে ছেলেটি দেখচ ঠাকুরঝি, এটি গল্প পেলে আর উঠবে না—কদম, মাস্টারমশায়কে যেতে বলে দে, অমূল্য আজ আর পড়বে না।
নরেন আশ্চর্য হইয়া বলিল, ও কি রে অমূল্য, অত বড় ছেলে, এখনও মেয়েমানুষের কোলে গিয়ে বসিস!
বিন্দু হাসিয়া বলিল, শুধু এই বুঝি? এখনও রাত্তিরে—
অমূল্য ব্যাকুল হইয়া তাহার মুখে হাত-চাপা দিয়া বলিল, ব’লো না ছোটমা, ব’লো না।
বিন্দু বলিল না, কিন্তু অন্নপূর্ণা বলিয়া দিলেন। বলিলেন, এখনো ও রাত্তিরে ছোটমার কাছে শোয়।
বিন্দু বলিল, শুধু শোয়া দিদি, এখনো সমস্ত রাত্তির বাদুড়ের মত আঁকড়ে ধরে ঘুমোয়।
অমূল্য লজ্জায় তাহার ছোটমার বুকের মধ্যে মুখ লুকাইয়া রহিল।
নরেন কহিল, ছি ছি, তুই কি রে! তুই ইংরাজী পড়িস?
অন্নপূর্ণা বলিলেন, পড়ে বৈ কি। ইস্কুলে ও ত ইংরাজীই পড়ে।
নরেন বলিল, ইস, ইংরাজী পড়ে! কৈ, ইন্জিন্ বানান করুক ত দেখি? তা আর পারতে হয় না।
এলোকেশী বলিলেন, ও-সব শক্ত শক্ত কথা, ও কি ছেলেমানুষে পারে?
অন্নপূর্ণা বলিলেন, কৈ অমূল্য বানান কর না?
অমূল্য কিন্তু কিছুতেই মুখ তুলিল না।
বিন্দু তাহার মাথাটা একবার বুকে চাপিয়া ধরিয়া বলিল, তোমরা সবাই মিলে ওকে লজ্জা দিলে ও আর কি করে বানান করে?
তারপর এলোকেশীর দিকে চাহিয়া বলিল, ও আমার আসচে বছর পাস দেবে। আমাদের মাস্টারমশাই বলেচেন, ও কুড়ি টাকা জলপানি পাবে। ও সেই টাকা দিয়ে ওর কাকার মত এক জোড়া ঘোড়া কিনবে।
কথাটা সত্য হইলেও পরিহাস-ছলে সবাই হাসতে লাগিলেন।
এলোকেশী বিন্দুকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, আমার নরেন্দ্রনাথ শুধু কি লেখা-পড়াতেই ভাল, ও এমনি থিয়েটারে অ্যাক্টো করে যে, লোকে শুনে আর চোখে জল রাখতে পারে না। সেই সীতা সেজে কি-রকমটি করে বলেছিলে, একবার মামীদের শুনিয়ে দাও ত বাবা!
নরেন তৎক্ষণাৎ হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া হাতজোড় করিয়া, উচ্চ নাকিসুরে সুর করিয়া আরম্ভ করিয়া দিল, প্রাণেশ্বর! কি কুক্ষণে দাসী তব—
বিন্দু ব্যাকুল হইয়া উঠিল,—ওরে থাম থাম, চুপ কর, বঠ্ঠাকুর ওপরে আছেন। নরেন চমকিয়া চুপ করিল।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 4 Page: 15
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 203