বিলাস। কিন্তু খবর পাওয়া তাঁর উচিত ছিল।
[বিলাসের প্রস্থান
২য় ব্যক্তি। শুনেছি দয়ালবাবু ইতিপূর্বেই এসেচেন, কৈ তাঁকে ত—
রাস। দুর্ভাগ্যক্রমে এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আজ ভাল আছেন। তিনি এলেন বলে।
১ম ব্যক্তি। আচার্যের কাজ ত?—
রাস। হাঁ তিনিই সম্পাদন করবেন স্থির হয়েছে—এই যে নাম করতেই তিনি—আসুন, আসুন, দয়ালবাবু আসুন। দেহটা সুস্থ হয়েছে?
[দয়ালচন্দ্রের প্রবেশ ও সকলকে অভিবাদন]
শরীর দুর্বল, নিজে গিয়ে সংবাদ নিতে পারিনি, কিন্তু ওঁর কাছে (ঊর্ধ্বমুখে চাহিয়া) নিরন্তর প্রার্থনা করছি আপনি শীঘ্র নিরাময় হন, শুভকর্মে যেন বিঘ্ন না ঘটে।
[ইহার পরে কিয়ৎকাল ধরিয়া সকলের কুশল-প্রশ্নাদি ও প্রীতিসম্ভাষণ
চলিল। সকলে পুনরায় উপবেশন করিলে]
রাস। আমার আবাল্য সুহৃদ বনমালী আজ স্বর্গগত। ভগবান তাঁকে অসময়ে আহ্বান করে নিলেন—তাঁর মঙ্গল ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার নালিশ নেই, কিন্তু তিনি যে আমাকে কি করে রেখে গেছেন আমার বাইরে দেখে সে আপনারা অনুমান করতে পারবেন না। আমাদের উভয়ের সাক্ষাতের ক্ষণটি যে প্রতিদিন নিকটবর্তী হয়ে আসছে সে আভাস আমি প্রতিমুহূর্তেই পাই। তবুও সেই পরমব্রহ্মপদে এই প্রার্থনা আমার, সেই দিনটিকে যেন তিনি আরও সন্নিকটবর্তী করে দেন। (রাসবিহারী জামার হাতায় চোখটা মুছিয়া আত্মসমাহিতভাবে রহিলেন। উপস্থিত অভ্যাগতরাও তদ্রূপ করিলেন। আবার কিছুকাল চুপ করিয়া থাকিয়া) বনমালী আমাদের মধ্যে আজ নেই—তিনি চলে গেছেন; কিন্তু আমি চোখ বুজলেই দেখতে পাই, ওই তিনি মৃদু মৃদু হাস্য করছেন। (সকলেই চোখ বুজিলেন। এই সময় বিজয়া ও বিলাস প্রবেশ করিলেন। বিজয়ার মুখের উপর বিষাদ ও বেদনার চিহ্ন ঘনীভূত হইয়া উঠিয়াছে তাহা স্পষ্ট দেখা যায়) ওই তাঁর একমাত্র কন্যা বিজয়া, পিতার সর্বগুণের অধিকারিণী! আর ঐ আমার পুত্র বিলাসবিহারী, কর্তব্যে কঠোর, সত্যে নির্ভীক। এঁরা বাইরে এখনো আলাদা হলেও অন্তরে—হাঁ আরও একটি শুভদিন আসন্ন হয়ে আসছে, যেদিন আবার আপনাদের পদধূলির কল্যাণে এঁদের সম্মিলিত নবীন জীবন ধন্য হবে।
দয়াল। (অস্ফুটস্বরে) ওঁ স্বস্তি!
রাস। মা বিজয়া, ইনিই তোমার মন্দিরের ভাবী আচার্য দয়ালচন্দ্র, এঁকে নমস্কার কর। আর এঁরা তোমার সম্মানিত পূজনীয় অতিথিগণ, এঁরা বহু ক্লেশ স্বীকার করে তোমাদের পুণ্যকার্যে যোগ দিতে এসেছেন,—এঁদের সকলকে নমস্কার কর।
[বিজয়া হাত তুলিয়া নমস্কার করিল। বৃদ্ধ দয়াল বিজয়ার
কাছে গিয়া দাঁড়াইলেন। হাত ধরিয়া বলিলেন।]
দয়াল। এসো মা, এসো। মুখখানি দেখলেই মনে হয় যেন মা আমাদের কতকালের চেনা!
[এই বলিয়া টানিয়া নিজের পাশে বসাইলেন—অনেকে মুখ টিপিয়া হাসিল]
রাস। দয়ালবাবু, আমার সহোদরের অধিক স্বর্গীয় বনমালীর এই শুভকর্ম—একমাত্র কন্যার বিবাহ—চোখে দেখে যাবার বড় সাধ ছিল, শুধু আমার অপরাধেই তা পূর্ণ হতে পারেনি। (কিছুকাল নীরব থাকিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া) কিন্তু এবার আমার চৈতন্য হয়েছে, তাই নিজের শরীরের দিকে চেয়ে এই আগামী অঘ্রাণের বেশি আর বিলম্ব করবার সাহস হয় না। কি জানি আমিও না পাছে চোখে দেখে যেতে পারি।
নাটক : বিজয়া Chapter : 2 Page: 28
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 471