রমেশ। দূরে যেতে আর আমার দুঃখ নেই জ্যাঠাইমা।

জ্যাঠাইমা। কিন্তু এই দুঃখই যে সবচেয়ে বড় দুঃখ রমেশ। কিন্তু আজ যদি কাজের মাঝখানেই সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাস বাবা, তোর জন্মভূমি তোকে ক্ষমা করবে না।

রমেশ। জন্মভূমি ত শুধু একা আমার নয় জ্যাঠাইমা!

জ্যাঠাইমা। তোর একার বৈ কি বাবা, শুধু তোরই মা। দেখতে পাসনে মা মুখ ফুটে সন্তানের কাছে কোনদিন কিছুই দাবী করেন না। তাই এত লোক থাকতে কারো কানেই তাঁর কান্না গিয়ে পৌঁছয় নি, কিন্তু তুই আসামাত্রই শুনতে পেয়েচিস।

রমেশ। (ক্ষণকাল নতমুখে নীরবে থাকিয়া) একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করব জ্যাঠাইমা?

জ্যাঠাইমা। কি কথা রমেশ?

রমেশ। আমি ত তোমাদের জাতভেদ মানিনে, কিন্তু তুমি ত মানো?

জ্যাঠাইমা। তুই মানিস নে বলে আমি মানব না রে?

রমেশ। কিন্তু আমি ত সকলের ছোঁয়া খাই—আমার হাতে ত তুমি খেতে পারবে না জ্যাঠাইমা?

জ্যাঠাইমা। পারব না কিরে? তুই আমার বাবা—তাই কি ছোটখাটো? মস্ত বড় বাবা। মেয়ে হয়ে এতবড় আস্পর্ধার কথা কি আমি মুখে আনতে পারি রে?

রমেশ। (তৎক্ষণাৎ হেঁট হইয়া তাঁহার পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া) এই আশীর্বাদ আমাকে তুমি কর জ্যাঠাইমা, তোমাকে যেন আমি চিনতে পারি।

জ্যাঠাইমা। (তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া চুম্বন করিয়া) হয়েচে, হয়েচে। কিন্তু আমার যে এখনো আহ্নিক সারা হয়নি বাবা, একটুখানি বসবি?

রমেশ। না জ্যাঠাইমা, আমার ইস্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে।

জ্যাঠাইমা। তালে যখনি সময় পাবি আসিস রমেশ।

[রমেশ ও জ্যাঠাইমার প্রস্থান]

[একদিক দিয়া রমা ও অপর দিক দিয়া দাসীর প্রবেশ]

রমা। জ্যাঠাইমা কোথায় রাধা?

দাসী। এইমাত্র পূজো করতে গেলেন। দেরি হবে না দিদি, একটু বসো না?

[বেণী প্রবেশ করিল, এবং তাহাকেই দেখিয়া দাসী সরিয়া গেল]

বেণী। তোমাকে আসতে দেখেই এলাম রমা। অনেক কথা আছে। মা বুঝি পূজো করতে গেলেন?

রমা। তাই ত রাধা বললে।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়