তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
বিশ্বেশ্বরীর গৃহ। জ্যাঠাইমা ও রমেশ
জ্যাঠাইমা। হাঁরে রমেশ, তুই নাকি তোর পীরপুরের নতুন ইস্কুল নিয়েই মেতে রয়েছিস, আমাদের ইস্কুলে আর পড়াতে যাসনে?
রমেশ। না। যেখানে পরিশ্রম শুধু পণ্ডশ্রম, যেখানে কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না, সেখানে খেটে মরায় কোন লাভ নেই। শুধু মাঝে থেকে নিজেরই শত্রু বেড়ে ওঠে। বরঞ্চ, যাদের মঙ্গলের চেষ্টায় দেশের সত্যকার মঙ্গল হবে, সেই-সব মুসলমান আর হিন্দুর ছোটজাতেদের মধ্যেই পরিশ্রম করব।
জ্যাঠাইমা। এ কথা ত নতুন নয় রমেশ। পৃথিবীতে ভাল করবার ভার যে-কেউ নিজের ওপরে নিয়েচে চিরদিনই তার শত্রুসংখ্যা বেড়ে উঠেচে। সেই ভয়ে যারা পেছিয়ে দাঁড়ায়, তুইও যদি তাদেরি দলে গিয়ে মিশিস তা হলে ত চলবে না বাবা। এ গুরুভার ভগবান তোকেই বইতে দিয়েচেন, তোকেই বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু হ্যাঁরে, তুই নাকি ওদের হাতে জল খাস?
রমেশ। (হাসিয়া) এই দেখ, এরই মধ্যে তোমার কানে উঠেচে। কিন্তু আমি ত তোমাদের জাতভেদ মানিনে জ্যাঠাইমা।
জ্যাঠাইমা। মানিস নে কি রে? এ কি মিছে কথা, না, জাতভেদ নেই যে তুই মানবি নে?
রমেশ। আছে তা মানি, কিন্তু ভাল বলে মানিনে। এর থেকে কত মনোমালিন্য, কত হানাহানি—মানুষকে ছোট করে অপমান করবার ফল কি তুমি দেখতে পাও না জ্যাঠাইমা? সেদিন অর্থাভাবে দ্বারিক ঠাকুরের প্রায়শ্চিত্ত হয়নি বলে তার মৃতদেহ কেউ স্পর্শ করতে চায়নি, এ কথা কি তুমি জানো না?
জ্যাঠাইমা। জানি বাবা, সব জানি। কিন্তু এর আসল কারণ জাতিভেদ নয়। যা সবচেয়ে বড় কারণ তা এই যে, যাকে যথার্থ ধর্ম বলে, একদিন যা এখানে ছিল, আজ তা পল্লীগ্রাম থেকে একেবারে লোপ পেয়েচে। আছে শুধু কতকগুলো অর্থহীন আচারের কুসংস্কার, আর তার থেকে নিরর্থক দলাদলি।
রমেশ। এর কি কোন প্রতিকার নেই জ্যাঠাইমা?
জ্যাঠাইমা। আছে বৈ কি বাবা। প্রতিকার আছে শুধু জ্ঞানে। যে পথে তুই পা দিয়েচিস শুধু সেই পথে। তাই ত তোকে বার বার বলি বাবা, তুই যেন তোর জন্মভূমিকে ত্যাগ করে কিছুতে যাসনে। তোর মত বাইরে থেকে যারা বড় হতে পেরেচে, তারা যদি তোরই মত গ্রামে ফিরে আসত, সমস্ত সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করে চলে না যেত, পল্লীগ্রামের এতবড় দুর্গতি হোত না। তারা কখনো গোবিন্দকে মাথায় নিয়ে তোরে দূরে সরাতো না।
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 49
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 185