চতুর্থ দৃশ্য
বাটীর একাংশের ঢাকা বারান্দা
[নরেন প্রবেশ করিল। পরনে সাহেবী পোশাক, টুপি খুলিয়া সেটা বগলে চাপিয়া হাতের লাঠিটা একধারে ঠেস দিয়া রাখিল]
নরেন। (এদিকে-ওদিকে চাহিয়া) উঃ—কোথাও একফোঁটা হাওয়া নেই। আর এই বিজাতীয় পোশাকে যেন আরও ব্যাকুল করে তুলেছে। এদিকে কি কেউ নেই নাকি? এই যে কালীপদ—
[কালীপদ প্রবেশ করিল]
নরেন। কালীপদ, তোমার মা-ঠাকরুনকে একটা খবর দিতে পার?
কালীপদ। দিতে হবে না, মা নিজেই নেমে আসচেন। ভেতরে গিয়ে বসবেন না বাবু?
নরেন। না বাপু, ঘরে ঢুকে আর দম আটকাতে চাইনে,—এখান থেকেই কাজ সেরে পালাব। বারোটার ট্রেনেই ফিরতে হবে।
কালীপদ। হাঁ বাবু, আজ বড় গরম, কোথাও বাতাস নেই। তবে এখানেই একটা চেয়ার এনে দিই বসুন।
[কালীপদ চেয়ার আনিয়া দিল, নরেন বসিয়া টুপিটা
পায়ের কাছে রাখিয়া মুখ তুলিয়া কহিল]
নরেন। আর সুমুখের ঐ জানালাটা একবার খুলে দাও, নিশ্বেস ফেলে বাঁচি।
কালীপদ। ওটা খোলা যায় না। এখন মিস্ত্রী কোথায় পাব বাবু?
নরেন। মিস্ত্রী কি হে? দোর-জানালা কি তোমরা মিস্ত্রী দিয়ে খোলাও, আর রাত্তিরে পেরেক ঠুকে বন্ধ করো?
কালীপদ। আজ্ঞে না, কেবল এইটেই কিছুতে খোলা যায় না। মা ক’দিন ধরে মিস্ত্রী ডাকতে বলছিলেন।
নরেন। এমন কথাও ত শুনিনি। কৈ দেখি, (নিকটে গিয়া টানিয়া খুলিয়া ফেলিয়া) একটুখানি চেপে বসেছিল। তোমার মা-ঠাকরুনকে একবার ডাক।
কালীপদ। এই যে আসচেন।
[বিজয়া প্রবেশ করিতেই নরেন সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়া চাহিল]
নরেন। নমস্কার। বাঃ—কি চমৎকার দেখাচ্ছে আপনাকে। যে কেউ ছবি আঁকতে জানে—আপনাকে দেখে তারই আজ লোভ হবে।
বিজয়া। কালীপদ, আমাকে বসবার একটা জায়গা এনে দাও। আর বল গে বাবুর জন্যে চা করতে। এখনও চা খাওয়া হয়নি বোধ হয়?
নরেন। না, কলকাতা থেকে সকালেই বেরিয়ে পড়েছিলুম। স্টেশন থেকে সোজা আসচি।
[কালীপদ চলিয়া গেল
বিজয়া। আপনাকে কি আমার ছবি আঁকবার বায়না নিতে ডেকেছি যে আমাকে ও-রকম অপদস্থ করলেন?
নরেন। অপদস্থ করলুম কোথায়?
বিজয়া। চাকরদের সামনে কি ঐরকম বলে? কাণ্ডজ্ঞান কি একেবারে নেই?
নরেন। (লজ্জিতমুখে) হাঁ, তা বটে। দোষ হয়ে গেচে সত্যি।
বিজয়া। আর যেন কখনো না হয়।
[কালীপদ চেয়ার লইয়া প্রবেশ করিল]
কালীপদ। বলে এলুম মা। অমনি কিছু খাবার করতেও বলে আসব?
বিজয়া। হাঁ, বলগে। (জানালার প্রতি চোখ পড়ায়) এই যে তবু একটা কথা শুনেছিস কালীপদ। কাকে দিয়ে জানালাটা খোলালি?
কালীপদ। (ইঙ্গিতে দেখাইয়া) উনি খুলে দিলেন।
[এই বলিয়া সে বাহিরে গিয়া একটা ছোট টিপয় আনিয়া নরেনের পাশে রাখিয়া চলিয়া গেল]
বিজয়া। আপনি? কি করে খুললেন?
নরেন। হাত দিয়ে টেনে।
বিজয়া। শুধু হাতে টেনে খুলেছেন? অথচ ওরা সবাই বলে মিস্ত্রী ছাড়া খুলবে না। আপনার হাতটা কি লোহার নাকি?
নাটক : বিজয়া Chapter : 2 Page: 31
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 181