[নরেন উঠিয়া দাঁড়াইয়া হাতে লাঠি তুলিয়া লইল]
বিজয়া। নইলে কি বলুন না? আপনার গায়ে জোর আছে এবং হাতে লাঠি আছে এই ত?
নরেন। (লাঠিটা ফেলিয়া হতাশভাবে বসিয়া) ছিঃ ছিঃ—আপনি মুখে যা আসে তাই বলেন। আপনার সঙ্গে আর পারি না।
বিজয়া। এ কথা মনে থাকে যেন। কিন্তু আপনার জন্যেই যখন আমার দেরি হয়ে গেল, বেরোনো হলো না— তখন আপনারও চলে যাওয়া হবে না। কিন্তু আপনি নিশ্চয় হাত দেখতে জানেন!
নরেন। জানি। কিন্তু কার দেখতে হবে? আপনার?
বিজয়া। (সহসা নিজের হাত বাড়াইয়া দিয়া) দেখুন ত, আমার জ্বর হয়েছে কিনা।
নরেন। (হাত ধরিয়া) সত্যিই ত আপনার জ্বর! ব্যাপার কি?
বিজয়া। কাল রাত্তিরে একটু জ্বর হয়েছিল। কিন্তু ও কিছুই নয়। আমার জন্যে বলিনে, কিন্তু সেই পরেশ ছেলেটাকে ত আপনি জানেন—তিন দিন থেকে তার খুব জ্বর। এখানে ভাল ডাক্তার নেই। কালীপদ!
[কালীপদর প্রবেশ]
পরেশের মাকে বল ত পরেশকে এখানে নিয়ে আসুক।
নরেন। না, আনবার দরকার নেই। কালীপদ, চল ত পরেশ কোথায় শুয়ে আছে আমাকে নিয়ে যাবে।
কালীপদ। চলুন।
[নরেন ও কালীপদ প্রস্থান করিলে নলিনী প্রবেশ করিল]
নলিনী। নমস্কার! আমার নাম নলিনী। দয়ালবাবু আমার মামা হন।
বিজয়া। ও আপনি? বসুন, সেদিন মন্দির-প্রতিষ্ঠার দিন আপনি অসুস্থ ছিলেন, তাই পরিচয় করার জন্যে আপনাকে আর বিরক্ত করিনি। তারপরেই শুনলুম আপনি চলে গেছেন আপনার মামীমা পীড়িত বলে। কিন্তু মনে হচ্ছে কোথায় যেন এর আগে আপনাকে দেখছি,—আচ্ছা আপনি কি বেথুনে পড়তেন?
নলিনী। হাঁ, কিন্তু আমার ত মনে পড়ছে না!
বিজয়া। না পড়লেও দোষ নেই, কেবলি কামাই করতুম, শেষে সব সাবজেক্ট ফেল করে পড়া ছেড়ে দিলুম, আই. এ. দেওয়া আর হলো না—আপনি এবার B. Sc. দিচ্ছেন শুনলুম।
নলিনী। হাঁ, আমার মনে পড়েছে। আপনি মস্ত একটা গাড়ি করে কলেজে আসতেন।
বিজয়া। চোখে পড়বার মত ত আর কিছু নেই, তাই গাড়ি দিয়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতুম। ওটা মার্জনা করা উচিত।
নলিনী। ও কথা বলবেন না। দৃষ্টি পড়বার মত আপনারও যদি কিছু না থাকে তবে জগতের অল্প লোকেরই আছে। কিন্তু Dr. Mukherjee গেলেন কোথায়?
বিজয়া। গেছেন রোগী দেখতে, এলেন বলে। কিন্তু তিনি এসেছেন আপনি জানলেন কেমন করে মিস দাস?
[নরেন প্রবেশ করিল]
নলিনী। এই যে Dr. Mukherjee (বিজয়ার প্রতি) আমরা এক গাড়িতেই যে কলকাতা থেকে এলুম। স্টেশনে এসে দেখি Dr. Mukherjee দাঁড়িয়ে—সেদিন রাত্রে মন্দিরে ওঁর সঙ্গে দৈবাৎ আলাপ।কি কয়েকটা তাঁর জিনিস পড়েছিল তাই নিতে এসেছিলেন। আজ আবার হাওড়া স্টেশনেও দৈবাৎ ওঁর দেখা পেয়ে গেলুম। উনিও বললেন, থাকবার জো নেই, এই বারোটার গাড়িতেই ফিরতে হবে। আমারও তাই—ফিরতেই হবে কলকাতায়।
বিজয়া। (সহাস্যে) আপনাদের শুধু দৈবাৎ আলাপ এবং দৈবাৎ এক গাড়িতে আসাই নয়, আবার দৈবাৎ এক গাড়িতেই ফিরতে হবে। এমন দৈবাতের সমাবেশ একসঙ্গে সংসারে দেখা যায় না।
নাটক : বিজয়া Chapter : 2 Page: 33
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 190