রাস। ব্যাপার কি বিলাস? এত চেঁচামেচি কিসের? বিজয়া কোথায়?

বিলাস। জানো বাবা, বিজয়া আমায় বললে আমি তার মাইনের চাকর। অন্য চাকরের মত মনিবের মন যুগিয়ে না চললে আমাকে ডিসমিস করবে।

রাস। কেন? কেন? হঠাৎ এ কথা কেন? কি বলেছিলে তাকে?

বিলাস। বলব আবার কি? কালীপদকে জবাব দিয়েছিলুম—এই হলো প্রথম অপরাধ।

রাস। বল কি? তা এত শীঘ্র তাকে জবাব দিতেই বা গেলে কেন? এই ত সেদিন নরেনকে খামকা অপমান করলে—জানো ত তার প্রতি বিজয়ার—

বিলাস। ওই ত হচ্ছে আসল রোগ। সেই জোচ্চোর লোফারটার জন্যেই ত এত কাণ্ড। জানো বাবা, বিজয়া বলে কিনা, চাকর হয়ে আমি তার অতিথিকে—সেই নরেনটাকে—অপমান করি কোন্‌ সাহসে—

রাস। অ্যাঁ, আর কি সে বললে? নাঃ, আমি যতই গুছিয়ে-গাছিয়ে আনি—তুমি কি ততই একটা -না-একটা বিভ্রাট বাধিয়ে তুলবে!

বিলাস। বিভ্রাট কিসের? ঐ ব্যাটা কালীপদকে তাড়াব না ত কি তাকে বাড়িতে রাখতে হবে? বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ সেই একটা অসভ্য জানোয়ারকে নিয়ে এসে বিজয়ার ঘরে বিছানার ওপরই বসালে—আর ঐ বুড়ো দয়ালটাও জুটেছে তেমনি!

রাস। আবার তাঁকেও কিছু বলেছ নাকি? সর্বনাশ বাধালে দেখছি!

বিলাস। বলব না? একশো বার বলব। নরেন ডাক্তারের ওপর তাঁর বড় টান। সেটাকে দিলাম সেদিন ঘর থেকে বার করে—আর উনি কিনা লুকিয়ে এসেছেন তারই দালালি করতে, একটা prescription পর্যন্ত এনে হাজির—বিজয়ার চিকিৎসা হবে। এদিকে স্ত্রীর অসুখের ছুতো করে বুড়ো চারদিন ডুব মেরে রইল, একবার কাছারিতে পর্যন্ত এল না; worthless, old fool!

[রাসবিহারী ক্রোধে ও ক্ষোভে নির্বাক স্তব্ধভাবে চাহিয়া রহিলেন]

বিলাস। বিজয়া আজ তোমাকে পর্যন্ত অপমান করতে ছাড়লে না।

রাস। তাতে তোমার কি?

বিলাস। আমার কি? আমার মুখের ওপর বলবে দয়ালবাবুকে রাসবিহারীবাবু আনেন নি, এনেছি আমি! বলবে, দয়াল কাজ করুন না করুন তাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না! ও আমাকে বলে আমলা! বলে, যে নিয়মে আমার অপর কর্মচারীরা কাজ করে সেই নিয়মে কাজ করুন, নইলে চলে যান!

রাস। সে ত শুধু তোমাকে চলে যেতে বলেছে, আমার ইচ্ছে হচ্চে তোমার গলায় ধাক্কা মেরে বার করে দিই!

বিলাস। অ্যাঁ!

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়