বিনকিউলার চোখে লাগিয়ে সামনের ডেকে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। তিন মাইল দূরে তীরের দিকে নজর। জাহাজটা নড়ছে, টাওয়ার দুটোও সরছে। আরও একশো গজ-হিসেব করল সে, তারপরই এক লাইনে এসে যাবে দুটো।

হুইল ধরে রয়েছে উলফ।

গতি কমান, নির্দেশ দিল কিশোর। হ্যাঁ, এই গতি স্থির রাখুন।

একে অন্যের দিকে সরছে টাওয়ার দুটো। সরছে…সরছে…হ্যাঁ মিশে গেছে। চিমনিটার ঠিক সামনাসামনি হয়েছে টেলিভিশন টাওয়ার। জাহাজের সঙ্গে এক লাইন।

রাখুন, চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। রাখুন এখানেই, নড়াবেন না। চোখ থেকে ইনোকুলার সরাল সে।

পানি খুব গভীর, নোঙ্গর ফেলা গেল না। এঞ্জিন চাল রেখে যোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক জায়গায় রাখতে হবে জাহাজটাকে, হুইল ধরে রাখতে হবে সারাক্ষণ।

তীরের দিকে জাহাজের নাক ঘোরাল উলফ। চকচকে টাকটা কয়েক মিনিট আগে ভোতা ভেঁতা লাগছিল, এখন মনে হলো কিশোরের, বেশ জুলজুল করছে। মুখের ভাব টাকের চামড়ায় প্রকাশ প্রায় নাকি? ফিরে গিয়ে এ-ব্যাপারে পড়াশোনা করতে হবে, ঠিক করল সে। আর যা-ই হোক, সারেঙ হিসেবে উলফের জুড়ি কম, স্বীকার করতেই হলো তাকে। সেটা নিশ্চয় টাকের জন্যে নয়।

ও-কে, মুসা, হয়েছে, মুসার পিঠে এয়ার ট্যাংক বেঁধে দিয়ে বলল টিনহা।

মাস্ক পরে নিল মুসা, ব্রীদি হোস আর এয়ার-প্রেশার গজ চেক করে দিল টিনহা। বাতাসের ট্যাংক ফুল শো করছে গজের কাঁটা।

পারে ফ্লিপার, বিচিত্র একটা জম্ভর মত থপাস থপাস করে ডেক দিয়ে হেঁটে গেল মুসা টিনহার পেছনে। রেলিঙে উঠে বসল টিনহা, সাগরের দিকে পেছন করে, রেলিঙ ধরে আস্তে করে উল্টে গিয়ে আলগোছে ছেড়ে দিল হাত, ঝপাং করে পড়ল পানিতে।

মুসা পড়ল টিনহার পর পর।

কয়েক ফুট নেমে গিয়ে ডিগবাজি খেয়ে শরীর সোজা করল মুসা, মাথা নিচু করে ভেসে রইল। মনে করার চেষ্টা করল ওস্তাদ কি কি শিখিয়েছেন। কি করতে হবে এখন।

মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলবে, তাতে তোমার মাস্ক ধোয়াটে হবে না, পরিষ্কার দেখতে পাবে। এয়ার হোস চেক করা, হোসে গিটটিট লেগেছে কিনা, বাতাস রুদ্ধ হয়েছে কিনা শিওর হয়ে নাও। তোমার সুইম স্যুটের ভেতরটা নিশ্চয় ভেজা-ভেজা লাগছে, অপেক্ষা করো, সাগরের পানি আর তোমার দেহের তাপমাত্রা এক হয়ে নিক। এবার নামতে শুরু করে, মনে রাখবে, যত নিচে নামবে পানির তাপ ততই কমবে, চাপ বাড়বে। মাথা গুলিয়ে উঠছে টের পেলেই আর নামবে না, সঙ্গে সঙ্গে উঠতে শুরু করবে, তবে আস্তে আস্তে, তাড়াহুড়ো করবে না।

তিন ফুট পানির নিচে অলস ভঙ্গিতে কয়েক মিনিট সঁতরে বেড়াল মুসা, শরীরকে ঢিল হওয়ার সময় দিল, সইয়ে নিল এখানকার পানির সঙ্গে।

ডাইভিং খুব পছন্দ মুসার। দারুণ একটা অনুভূতি। মনে হচ্ছে, বাতাসে ভাসছে সে, পাখি যেভাবে ভাসে। আশ্চর্য এক স্বাধীনতাবোধ। দেখতে পাচ্ছে, কয়েক গজ দূরে তারই মত ভেসে রয়েছে টিনহা আর রোভার। হাত তুলে ইঙ্গিত করল মুসা, বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাথা লাগিয়ে গোল করে দেখাল, তারমানে ডাইভ দেয়ার জন্যে তৈরি। .

রোভারের পিঠ চাপড়াল টিনহা। নিচের দিকে মুখ করে ডাইভ দিল রোভার, তার আগে আগে পানি ছুঁড়ে নেমে যাচ্ছে শক্তিশালী সার্চলাইটের উজ্জ্বল আলোকরশ্মি। নামছে…নামছে…নামছে… ওকে অনুসরণ করতে কো পেতে হচ্ছে মুসার, এমনকি টিনহারও।

 

ককপিটে বসে দেখছে কিশোর, টেলিভিশন মনিটরের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ। হুইলে হাত রেখে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে রয়েছে উলফও।

দেখতে দেখতে মনে হলো কিশোরের, পানির তলার দৃশ্য নয়, মহাকাশের বিচিত্র দৃশ্য দেখছে। তীব্র সাদা গোল একটা আলোর চক্র যেন মহাকাশের কালো অন্ধকারে ফুটে উঠেছে, তার মাঝে ফুটছে নানা রকম রঙ, আকৃতি। একবার মনে হলো, মেঘলা আকাশ দেখছে, তারপর এলোমেলো হয়ে ঝাপসা হয়ে গেল মেঘ, সরে গেল, লাফ দিয়ে এসে যেন সে জায়গা দখল করল এক ঝাক রঙিন মাছ। সরে গেল ওগুলোও।

রোভার বোট থেকে পাশে বেশি সরলে আবছা হয়ে আসে ছবি, তাড়াতাড়ি সেটুকু দূরত্ব আবার পূরণ করে নেয়া উলফ বোট সরিয়ে নিয়ে। চিমনি আর টাওয়ারের সঙ্গে অদৃশ্য লাইন একটু এদিক ওদিক হলেই ঘটছে এটা। ছবি আর আলো আবার স্পষ্ট হলেই জাহাজ স্থির করে ফেলছে সে, দক্ষ হাত, সন্দেহ নেই। কাজটা যথেষ্ট কঠিন।

 

রোভারের অনেক ওপরে থাকতেই থেমে গেল মুসা। আর নামার সাহস হলো না। তার জানা আছে, মানুষের দেহের ওপর পানির চাপ অসহ্য হয়ে উঠলে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি জাগে, অনেকটা মাতলামির মত, তাল পায় না যেন শরীর। অতিআত্মবিশ্বাসী হয়ে তখন উল্টোপাল্টা অনেক কিছু করে বসতে পারে সাঁতারু, নিজের জীবন বিপন্ন করে তোলে নিজের অজান্তেই।

সেই পর্যায়ে যেতে চাইল না মুসা। অনেক নিচে রোডারের সার্চলাইটের আলো দেখতে পাচ্ছে। রোভারের ক্ষমতায় ঈর্ষা হলো তার। আফসোস করল, আহা তিমির মতই যদি মানুষের শরীরের গঠন হত, গভীর পানিতে সহজে নামতে পারত। তিমি ডাইভ দিয়ে এক মাইল গভীরেও নেমে যেতে পারে, ঘণ্টাখানেক সহজেই কাটিয়ে দিয়ে আসতে পারে এই ভয়ঙ্কর গভীরতায় অকল্পনীয় পানির চাপের মধ্যে।

ব্রীদিং টিউবটা সোজা করার চেষ্টা করল মুসা। বাকা পাইপটার পুরোটায় আঙুল বোলাল, একেবারে এয়ার ট্যাংকের গোড়া পর্যন্ত।

অদ্ভুত তো! ভাবল সে। পাইপে কোনরকম গিঁট নেই, জট নেই, তার পরেও…

উদ্বিগ্ন হয়ে আবার হাত বোলাল পাইপে, কোথাও একটা জট আছেই আছে, থাকতেই হবে, নইলে বাতাস পাচ্ছে না কেন ফুসফুস? শ্বাস নিতে পারছে না।

কোমরের ওয়েট বেল্টের বাকসে হাত দিল সে। শান্ত থাকার চেষ্টা করছে। নিজেকে বোঝাল, দম বন্ধ রাখো। ভারিকেল্টটা খুলে ফেলে দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে যাও ওপরে। আতঙ্কতি হয়ো না, গর্দভ কোথাকার! খোলো, খুলে ফেলো কেল্ট।

কিন্তু কথা শুনছে না আঙুল, অসাড় হয়ে গেছে। চোখেও কি গোলমাল হয়েছে। নইলে চারপাশের পানির রঙ বদলে যাচ্ছে কেন? হালকা গোলাপী থেকে লাল…তারপর গাঢ় লাল…গাঢ় হতে হতে এমন অবস্থা হলো, কালো মনে হচ্ছে লনকে…

বাতাসের জন্যে হাঁসফাঁস করছে সে। লাথি দিয়ে পা থেকে খুলে ফেলতে চাইছে ফ্লিপার। অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে ঠেলে উঠতে চাইছে ওপরে…

উজ্জ্বল আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল চোখের সামনে। বুকে চাপ দিতে শুরু করেছে ভারি শক্ত কিছু। বুলডোজারের মত শক্তিশালী কিছু একটা ঠেলে তুলছে যেন তাকে ওপরে।

বাধা দিল না মুসা, দেয়ার সামর্থ্যও নেই। শরীরের শেষ শক্তি বিন্দু দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাইল ভারি জিনিসটাকে।

পানির ওপরে ভেসে উঠল মুসার মাথা। পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে একটানে তার মাস্ক খুলে নিল কেউ। হাঁ করে দম নিল সে, ফুসফুস পূর্ণ করে টানল বিশুদ্ধ বাতাস।

ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে সরে গেল লাল অন্ধকার। নিচে তাকিয়ে আবছা একটা ঝিলিমিলি দেখতে পেল। ছবিটা স্পষ্ট হতে সময় নিল।

ক্যানভাসের কলারটা চিনতে পারল সে। একটা সার্চলাইট। একটা ক্যামেরা।

রোভারের পিঠে শুয়ে আছে মুসা।

পাশে ভাসছে টিনহা। সেই খুলে নিয়েছে মুসার মাস্ক। চুপ, কথা নয়। লম্বা লম্বা দম নাও। এক মিনিটেই ঠিক হয়ে যাবে।

তা-ই করল মুসা। রোভারের পিঠে গাল রেখে চুপচাপ শুয়ে রইল। সহজ হয়ে এল শ্বাস-প্রশ্বাস। হাপাচ্ছে না আর। সেই ভয়ঙ্কর লাল অন্ধকারের ছায়াও নেই, সরে গেছে পুরোপুরি। কথা বলার ক্ষমতা ফিরে এল।

কিন্তু কোন প্রশ্ন করার আগে, কি হয়েছিল টিনহাকে জিজ্ঞেস করার আগে, আপনা-আপনিই একটা কথা বেরিয়ে এল অন্তর থেকে, তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছ, রোভার।

তুমিও একদুিন ওর প্রাণ বাঁচিয়েছিলে, মনে নেই? রোভারের মাথায় হাত রাখল টিনহা। ও কিছু ভোলে না…

পাশে চলে এসেছে বোট। হুইল ধরেছে কিশোর। রেলিঙের ওপর ঝুঁকে রয়েছে উলফ।

দেখেছি, চেঁচিয়ে বলল সে, উত্তেজনায় জ্বলছে যেন টাক। মনিটরে দেখলাম, এক ঝলক। কিন্তু দেখেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। শ্যাটানোগার বোট। কিশোরের দিকে ফিরে বলল, ধরে রাখো, নড়বে না। ঠিক আমাদের নিচেই রয়েছে। রোভার ওপরে ওঠার সময় আলো পড়ল, তখনই দেখলাম বোটটা। তাহলে…

এখন পারব না, কড়া গলায় বাধা দিল টিনহা। মুসাকে আগে ডেকের ওপর তুলি, দেখি কি হয়েছে, কি গোলমাল।

কিন্তু…রেলিঙে থাবা মারল উলফ।

পরে, কণ্ঠস্বর বদলাল না টিনহা। যান, গিয়ে হুইল ধরুন, কিশোরকে পাঠিয়ে দিন, সাহায্য দরকার।

দ্বিধা করল উলফ। কিন্তু জানে, এখন সব কিছু টিনহার হাতে। এ-মুহূর্তে ওকে চটানো উচিত হবে না। ওর সাহায্য ছাড়া বোট থেকে মাগুলো উদ্ধার করতে পারবে না। গোমড়া মুখে মাথা ঝাঁকাল সে, গিয়ে কিশোরের হাত মুক্ত করল।

মুসাকেবোটে উঠতে সাহায্য করল কিশোর আর টিনহা। এখনও দুর্বল লাগছে, ডেকেই বসে পড়ল মুসা। এক মগ গরম কফি এনে দিল টিনহা। ইতিমধ্যে বেল্ট খুলে এয়ার ট্যাংক আর অন্যান্য যন্ত্রপাতির বোঝা মুসার পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়েছে কিশোর।

ও-কে, জিজ্ঞেস করল টিনহা, এবার বলো, কি হয়েছিল। গোলমানটা কি ছিল? পানির চাপ না, এত গভীরে নামোনি। কি?

দম নিতে পারছিলাম না, মগে চুমুক দিল মুসা, কফি খুব ভাল বানানো হয়েছে। টিউব দিয়ে বাতাস আসছিল না। ভাবলাম জট লেগেছে। কিন্তু লাগেনি।

তার কি কি অসুবিধে হয়েছিল, জানাল মুসা। কি ভাবে চোখের সামনে রঙ বদলে গিয়েছিল, লাল হতে হতে কালো হয়ে গিয়েছিল, সে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠল গলা।

কারবন-ডাই-অকসাইড, বলল টিনহা। কারবন-ডাই-অকসাইড টানছিলে।

এয়ার ট্যাংকটা টেনে নিয়ে ভালভ খুলল সে, হিসহিসিয়ে চাপ চাপ বাতাস বেরোল না।

এজন্যেই শ্বাস নিতে পারোনি, বাতাসই নেই ট্যাংকে।

কিন্তু নামার আগে চেক করেছি, বলল মুসা।

প্রেসার গজটা পরীক্ষা করল কিশোর। কাটা এখনও ফুল নির্দেশ করছে। দেখাল টিনহাকে। কেউ গজ জ্যাম করে দিয়েছে। তারপর ট্যাংক থেকে বাতাস বের করে দিয়েছে।

একমত হলো টিনহা। এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা।

যন্ত্রপাতিগুলো কোত্থেকে এনেছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

ওশন ওয়ারল্ড। আমি নিজে এনে রেখেছি গতরাতে। সব কিছু ঠিকঠাক ছিল তখন। উলফের কাছে গিয়ে দাঁড়াল টিনহা। মুসার ট্যাংকে গোলমাল কে করেছে? আমি জানতে চাই

আমি কি জানি? রেগে গেল উল। যন্ত্রপাতি আমি নষ্ট করতে যাব কেন? আমি কি গাধা, জানি না, গণ্ডগোল করে দিলে বোটের মাল তুলতে অসুবিধে হবে? এই যে দেরিটা হচ্ছে, ক্ষতি কি আমার হচ্ছে না? আমি শুধু চাই… কি চায়, উত্তেজিতভাবে দ্রুত বলে গেল সে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক শব্দ ভেঙে ফেলল, হাস্যকর করে তুলল কথাগুলো।

উলফের কথা বিশ্বাস করল কিশোর, সত্যি কথাই বলছে। মুলার ট্যাংক নষ্ট করে দিয়ে তাকে মেরে ফেললে উলফের কোন লাভ হবে না। জিজ্ঞেস করল, গতরাতে এই বোট কেউ উঠেছিল? কিংবা আজ ভোরে?

না, মাথা নাড়ল উলফ। ঘাটে বাঁধা ছিল। গতরাতে আমি বোটে ঘুমিয়েছি। টিনহা যাওয়ার পর একবারও নামিনি।

কেউ দেখা করতে এসেছিল?

না। শুধু আমার বন্ধু নীল বনেট। আমার সঙ্গে বসে হুইসকি খেয়েছে, কিন্তু নীলকে আমি অবিশ্বাস করি না…

ওকে কতদিন থেকে চেনেন? বাধা দিয়ে বলল কিশোর। ও কে? ওর সম্পর্কে কি কি জানেন?

প্রশ্ন। বোকার মত খালি প্রশ্ন, বিরক্তিতে মুখ বাঁকাল উলক, টাকে খামচি মারল। এত কথা বলতে পারব না। যাও, গিয়ে বাক্সটা তোলো…

জবাব দিন, কঠিন শোনাল টিনহার গলা, কোমরে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়েছে। যা যা জিজ্ঞেস করে, সব কথার জবাব দেবেন। নইলে ওই বোটের ধারেকাছে যাব আমি।

ঠিক আছেহ্‌! হাত নাড়ল উলফ, রাগ দমন করে বলল, কি জানতে চাও? নীলের সঙ্গে কতদিনের পরিচয়?

মাথা নোয়াল কিশোর।

কয়েক বছর। ইউরোপে দেখা হয়েছিল। ওখানে দুজনে… দ্বিধা করল উলফ। কিছু ব্যবসা করেছি একসঙ্গে। তারপর আবার দেখা হয়েছে মেকসিকোতে।

কবে?

কয়েকবারই হয়েছে…

শেষবার যখন গিয়েছিলেন, হয়েছিল?

হ্যাঁ। লা পাজে ছোটখাট ছাপাখানার ব্যবসা করছে। পুরানো দোস্ত, মেকসিকো গেলেই ওর সঙ্গে দেখা না করে ফিরি না। তাতে দোষের কি?

নীরব রইল কিশোর, ভাবছে।

আর কিছু জিজ্ঞেস করবে, কিশোর? বলল টিনহা।

না। আর কিছু না।

শুড, টিনহার দিকে ফিরুল উলফ। আবার কাজ শুরু করা যেতে পারে?

পারে। তবে আগে ভালমত আবার ট্যাংক-ফ্যাংকগুলো চেক করে নিই। মরতে চাই না।

ডেকের ওপর নিজের যন্ত্রপাতিগুলো ফেলে রেখেছে টিনহা। গিয়ে ট্যাংকের ভালভ খুলল। এখান থেকেই বাতাসের হিসহিস শুনতে পেল কিশোর।

যে শয়তানী করেছে, সবগুলো যন্ত্র নষ্ট করার সময় পায়নি। কিংবা ইচ্ছে করেই করেনি। হয়তো ভেবেছে, মারাত্মক একটা দুর্ঘটনাই পুরো উদ্ধার কাজটা পর্যন্ত করে দেবে, ব্যর্থ করে দেবে।

টিনহার পাশে এসে দাঁড়াল কিশোর। ফিসফিস করে বলল, বাক্সটা উলককে দেব আগে ভেতরে কি আছে দেখতে চাই। আমার সন্দেহ হচ্ছে।

প্রস্তাবটা ভেবে দেখল টিনহা। ওকে চিন্তিত কণ্ঠে বলল, তাই হবে।

থ্যাংকস। তার ওপর টিনহার বিশ্বাস দেখে খুশি হলো কিশোর। তবে বিশ্বাস না করলে ভুল করত, কারণ এখন প্রায় সব প্রশ্নের জবাবই কিশোরের জানা।

জাম হওয়া প্রেসার গজ। উলফের পুরানো বন্ধু, নীল বনেট। লা পাজে ট্রিপ। বনেটের চোখের নিচের দাগ, কুঁচকানো চামড়া। ছড়ানো ছিটানো প্রতিটি টুকরো প্রশ্নের উত্তরই খাপে খাপে জোড়া লেগে গেছে গোয়েন্দাপ্রধানের মনে।

<

Super User