একের পর এক বোমা ফাটতে লাগল, বাজ পড়ার মত প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে যাবার জোগাড়।
এক সময় থামল সেটা। পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনির রেশ মিলাতে আরও কয়েক সেকেন্ড লাগল।
হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে কোনমতে খনি থেকে বেরিয়ে এল ছেলেরা। খনিমুখের চারপাশে পোড়া কাঠ আর জ্বলন্ত অন্যান্য জিনিস।
শুধু আগুন চেয়েছিলাম… উত্তেজনায় কথা রুদ্ধ হয়ে গেল মুসার।
এরপর সাংঘাতিক দ্রুত ঘটতে শুরু করল ঘটনা। বিল্ডিঙের দরজা খুলে বেরিয়ে এল দুই মেকসিকান শ্রমিক। বেড়া ডিঙিয়ে ছুটে হারিয়ে গেল খনিমুখের ওপরে পাথরের স্তুপের আড়ালে। কেবিন থেকে লাফিয়ে বেরোল হ্যারি আর বিগো। ঠিক এই সময় গেট দিয়ে ঢুকতে শুরু করল ম্যাকআরবারের লাল ট্রাক।
মিস্টার ম্যাকআরথার, চেঁচিয়ে উঠে দৌড়ে গেল মুসা। সাবধান! ব্যাটাদের কাছে বন্দুক আছে।
ঝট করে ঘুরে তাকাল হ্যারি।
এক ঝটকায় দরজা খুলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামল ম্যাকআরথার, হাতে শটগান। থামো ওখানে! আর এক পা বাড়ালে
কিন্তু থামল না হ্যারি। ম্যাকআরথার বন্দুক সোজা করার আগেই মুসার কাধ খামচে ধরে হ্যাঁচকা টানে ঘুরিয়ে ফেলল, তার পেছনে চলে এল। গুলি খেলে এখন মুসা খাবে।
পিঠে কঠিন ধাতব স্পর্শ অনুভব করল মুসা।
বন্দুক ফেলে দাও ম্যাকআরখার, আদেশ দিল হ্যারি। নইলে ছেলেটার পিঠ ফুটো করে দেব।
ধীরে ধীরে বন্দুক নামাল ম্যাকআরখার, ছেড়ে দিল হাত থেকে।
ছুটে এসে বন্দুকটা কুড়িয়ে নিল বিংগো, মুখে কুৎসিত হাসি। জিনার দিকে চেয়ে বলল, এদিকে এসো, খুকি। জলদি!
না, যেও না, জিনার পথরোধ করে দাঁড়াল রবিন।
সরো, ধমক দিল বিগো। এগিয়ে এসে এক ধাক্কায় রবিনকে সরিয়ে জিনার কজি চেপে ধরল, মুচড়ে হাত নিয়ে এল পিঠের ওপর। ঠেলা দিয়ে বলল, হাঁটো।
দূরে শোনা গেল সাইরেনের তীক্ষ্ণ বিলাপ, ফায়ার ব্রিগেড আসছে।
একে অন্যের দিকে তাকাল হ্যারি আর বিংগো, জিম্মিদেরকে আরও শক্ত করে ধরল।
হ্যামবোনের দিকের পথটা ঠিকমত নজরে আসছে না, সেদিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল বিগো, পথটা কোথায় গেছে, খুকি?
একটা…একটা ভূতুড়ে শহরে, জবাব দিল জিনা।
পাহাড়ের ওদিকে কি আছে?
শুধু মরুভূমি, ভয় পাচ্ছে জিনা, কিন্তু প্রকাশ করছে না।
ম্যাকআরধারের ট্রাকটা দেখাল বিংগো। এতে করেই যেতে পারব। ফোরহইল-ড্রাইভ।
এসব করে পার পাবে না। চেঁচিয়ে বলল জিনা।
চুপ! ফোঁস ফোঁস করে উঠল বিংগো।
এগিয়ে আসছে ফায়ার ব্রিগেডের সাইরেন।
জলদি। ট্রাকে। জিনাকে ঠেলা দিল বিংগো। তাকে সামনে তুলে দিয়ে নিজে
মুসাকে নিয়ে হ্যারি উঠল পেছনে।
অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল কিশোর, রবিন আর ম্যাকআরথার। তাদের চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রাকটা, কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।
গেটের বাইরে ছুটে গেল কিশোর আর রবিন। আলো না জেলেই গাড়ি চালাচ্ছে বিগো, অল্পক্ষণেই হারিয়ে গেল পাইনবনের আড়ালে।
উল্টো দিকে, আঙ্কেল উইলসনের গেটের আরও ওদিকে দেখা যাচ্ছে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির লাল আলো।
কয়েক মিনিট পর ম্যাকআরথারের গেটের কাছে এসে থেমে গেল সাইরেন। পেছনেই এসেছেন শেরিফ, হঠাৎ ব্রেক কষায় স্কিড করে থেমে গেল গাড়ি।
ছাউনির ভস্মযুপ দেখলেন শেরিফ। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির হুইলে বসা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, জরুরী অবস্থা শেষ। জুলার আর কিছু বাকি নেই। ম্যাকআরবারের দিকে এগোলেন। হয়েছিল কি? শহর থেকে তো মনে হলো পুরো পর্বত ধসে পড়ছে।
দ্রুত সামনে এসে দাঁড়াল কিশোর। ছাউনিতে আগুন দিয়েছিলাম আমি। দুটো লোক তালা ভেঙে মিস্টার ম্যাকআরবারের বাড়িতে ঢুকল, হাতে বন্দুক। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে আগুন লাগিয়েছি, আর কোন উপায় ছিল না। জিনা আর মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে ওরা। হ্যামবোনের দিকে…লোকগুলোকে বেপরোয়া মনে হলো।
অন্ধকার পথের দিকে চেয়ে বললেন শেরিফ, জিনাকে নিয়ে গেছে?
আর আমার বন্ধু মুসা আমানকেও। গানপয়েন্টে।
নিজের গালে মত্ত থাবা বোলালেন শেরিফ। কতক্ষণ আগে?
এই কয়েক মিনিট। তাড়াতাড়ি করলে এখনও ধরা যায়। আলো জ্বলেনি, জোরে চালাতে পারবে না, বেশি দূরু যায়নি।
আমাকে পিছে দেখলে তখন ঠিকই চালাবে। এভাবে তাড়া করে লাভ নেই। বাচ্চাদুটোর বিপদ বাড়বে আরও।
তাইলে পথের ও-মুখে পাহারার ব্যবস্থা করুন, তাড়াতাড়ি। হ্যামবোনে থামবে না ওরা, ওপাশ দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করবে। তার আগেই যদি পথ আটকানো যায়…
কোন পথ?
হুঁ হয়ে গেল কিশোর। কয়টা পথ আছে?
হ্যামবোন থেকে ডজনখানেক সরু সরু পথ বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন দিকে। কোনপথে যাবে ওরা কে জানে। ছোট ছোট কেবিন পাবে, যেখানে খুশি লুকাতে পারবে। মরুভূমির ওদিকেও যেতে পারে। খুব সহজেই এক হপ্তা লুকিয়ে থাকতে পারবে ওরা ইচ্ছে করলে।
তাহলে? চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
গাড়ির কাছে গিয়ে পড়ালেন শেরিফ। জানালা দিয়ে টু-ওয়ে রেডিও বের করে বললেন, হাইওয়ে পেট্রোলকে জানাচ্ছি, হেলিকপ্টার নিয়ে আসুক। এছাড়া আর কোন পথ নেই। ঈশ্বরই জানে কি করবে ওরা। তাড়াহুড়ো করে পালানোর জন্যে বাচ্চাদুটোকে না, … বাক্যটা শেষ করলেন না তিনি।
<