সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ঘুরে টাউন হলের একপাশে চলে এল কিশোর। পেছনে ছুটছে তার সহকারীরা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে সবাই, চোখ উজ্জ্বল। থমকে দাঁড়াল গোয়েন্দাপ্রধান। দেয়ালে একটা খিলানমত দেখা গেল, দরজা ছিল এককালে বোঝা যায়, ম্যারিজ লাইসেন্স ব্যুরো থেকে বেরোনোর।

কি করব এখন, কিশোর? হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল মুসা।

দরজার ইট নতুন, আনমনে বুলল কিশোর। তারমানে মুসার কথাই ঠিক,, কয়েক মাস আগে বন্ধ হয়েছে। তারমানে কয়েক মাস আগে এলেও ওই পথে আমরা বেরোতে পারতাম। বোঝা যাচ্ছে, কারমল যখন শেষ দেখেছে এই দরজাটা, তখনও এটা ভোলা ছিল।

কিন্তু,নরি বলল, ধাঁধার সঙ্গে মিলটা কোথায়? স্যালিসপুয়েডস…

কিশোর! বড় বড় হয়ে গেল রবিনের চোখ। স্যালিসপুয়েডস স্প্যানিশ শব্দ, মনে পড়েছে। এর ইংরেজি মানে করলে দাঁড়ায়ঃ গেট আউট ইউ ক্যান!

তারমানে স্যালিসপুয়েডস স্ট্রীটে বেরিয়ে পশ কুইনস ওন্ড নেডের খোঁজ করতে বলছে, কিশোর বলল।

বন্ধ করে দেয়া দরজার আশেপাশে ঘন ঝোপঝাড় জন্মে আছে। বিল্ডিঙের পেছনে গাছও আছে বেশ কিছু। সরু একটা পথ দরজার গোড়া থেকে লন পেবিয়ে গিয়ে উঠেছে স্যালিসপুয়েডস স্ত্রীটে। বন্ধ করে দেয়া দরজাটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল ছেলেরা, কোন গোপন সূত্র লুকিয়ে রেখেছে কিনা বোঝার চেষ্টা করল। কিছু না পেয়ে, সরু পথ ধরে দ্রুত পা চালাল বড় রাস্তার দিকে।

খোলা জায়গায়, দুপুরের রোদে বেরিয়ে থমকে দাঁড়াল ওরা। ঠিক ওপাশেই চেম্বার অভ কমার্সের অফিস। ডিসপ্লে উইণ্ডোতে বড় বড় অক্ষরে লেখাঃ

সী আ লিজেণ্ড অভ দ্য সী৷৷
এস, এস, কুইন অভ দ্য সাউথ
ফুললি রিস্টোরড টু
ইটস অরিজিন্যাল গ্লোরি
নাউ ওপেন
স্যুভনির রিফ্রেশমেন্টস
রকি বীচ হারবার হোয়ার্ফ

দ্য কুইন! মানে রানী! টুরিস্টদের জন্যে নতুন আকর্ষণ! মুসা বলল।

তাই? নরি জানতে চাইল।

হ্যাঁ, বলল কিশোর। নিশ্চয় এটা পশ কুইন। আর সমুদ্রগামী জাহাজে বিছানা থাকবেই।

তারমানে এরপর আমাদেরকে যেতে হবে কুইন জাহাজে? মুসা জিজ্ঞেস করল।

বিছানা খোঁজার জন্যে, বলল রবিন।

দাদার জিনিস পেয়ে গেছি! দাদার জিনিস পেয়ে গেছি! হাততালি দিয়ে সুর করে গেয়ে প্রায় নাচতে আরম্ভ করল নরি।

নীরবে দাঁত বের করে হাসল কিশোর। ঘুরে রওনা হল টাউন হলের পার্কিং লটের দিকে, যেখানে ওদের সাইকেলগুলো রেখেছে। থেমে গেল আচমকা যেন হোঁচট খেয়ে।

ঝোপের ভেতর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে কে যেন। লনে বেরোল। টেরিয়ার ডয়েল!

ধর, ধর ব্যাটাকে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। নিশ্চয় আমাদের কথা শুনে ফেলেছে!

শুঁটকি কোথাকার, শুঁটকি! আজ ভর্তা বানিয়ে খাব! মুসার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে চেঁচিয়ে বলল রবিন।

বিল্ডিং ঘুরে পার্কিং লটে পৌঁছার আগেই টেরিয়ারকে হারিয়ে ফেলল ওরা। যখন পৌঁছল, দেরি হয়ে গেছে। গাড়ি বের করে ফেলেছে টেরিয়ার। গর্জন করতে করতে ওদের দিকে ছুটে এল গাড়িটা। লাফ দিয়ে সরে গেল ওরা। পেছনে তাকিয়ে বুড়ো আঙুল দেখাল শুঁটকি, দাঁত বেরিয়ে পড়েছে হাসিতে।

জলদি! সাইকেল! ছুটতে শুরু করল আবার কিশোর।

কিন্তু…কিন্তু…, চেঁচিয়ে বলল নরি, সাইকেল নিয়ে গাড়ি ধরতে পারব না! জিনিসগুলো নিয়েই যাবে!

এত সহজ না। আগে আসল বিছানাটা খুঁজে বের করতে হবে তো। চলো চলো, জলদি চলো।

আরি, সাইকেল কোথায়! চোখ কপালে উঠে গেল মুসার। বোকা হয়ে পার্কিং লটের দিকে তাকিয়ে রইল ছেলেরা। নিশ্চয় শুঁটকি সরিয়েছে, রবিন বলল। দাঁড়াও, হাত তুলে দেখাল কিশোর, ওই যে।

পার্কিং লটের একপ্রান্তে হালকা ঝোপের মধ্যে ভরে রাখা হয়েছে সাইকেলগুলো। লুকানো যায়নি ভালমত, বেশির ভাগই বেরিয়ে আছে। দৌড় দিল আবার ওরা। এই সময় নরির জুতোর ফিতে গেল খুলে। সঙ্গে সঙ্গে বাঁধতে বসে গেল সে। ঝোপ থেকে সাইকেল বের করে জলদি করার জন্য তাগাদা দিতে লাগল ওকে তিন গোয়েন্দা।

আরে, এই নরি, জলদি কর না, অস্থির হয়ে উঠেছে মুসা। দেরি করলে…

কথা শেষ হল না তার। সামনে এসে দাঁড়াল দুজন লোক। একজন সেই দৈত্য, আরেকজন তার পিত্তলধারী খুদে সঙ্গী।

খপ করে মুসার হাত চেপে ধরল দানবটা। আরেক হাতে কিশোরকে। রবিনকে ধরল খাটো লোকটা। অনেক চেষ্টা করেও তিনজনের একজনও ছুটতে পারল না। একটা গাড়ির দিকে তিন গোয়েন্দাকে টেনে নিয়ে চলল লোকগুলো।

ঝোপের কাছে সাইকেল সরিয়ে আনার কারণটা এতক্ষণে বুঝতে পারল ছেলেরা। ওদেরকে ধরার জন্যে।

<

Super User