টু লেট
বেশ অদ্ভুত এই বাড়িটার কাহিনি শুনিয়েছেন আয়ারল্যাণ্ডের মি. ই, বি. লেসি। বালক বয়সে তিনি থাকতেন শহরতলীতে। প্রতিদিন সকালে ডাবলিন শহরের স্কুলে আসতে হত তাকে। এসময় এমন একটা রাস্তা দিয়ে আসতে হত যেখানে নিঃসঙ্গ একটা বাড়ি পড়ে। ওটা খালি পড়ে থাকত অনেক সময়ই। কোনো ভাড়াটে আসার পর কয়েক মাস পরেই দেখা যেত বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। তারপর বাড়ি ভাড়ার নোটিশ ঝুলত। এভাবে কয়েক মাস খালি থাকার পর হয়তো নতুন ভাড়াটে আসত। তবে কাউকেই পাকাপাকিভাবে খুব বেশিদিন থাকতে দেখেননি এখানে। আট-ন বছর এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। মাঝে মাঝেই তার মনে প্রশ্ন জাগত বাড়িটাতে ভাড়াটে থাকে না কেন? একদিন এক বন্ধুকে প্রশ্নটা করতে সে জানাল এটা হানাবাড়ি হিসাবে বদনাম কামিয়েছে।
কয়েক বছর পরের কথা। একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন লেসি। এসময়ই একদিন এমন একজন মহিলার সঙ্গে ব্যবসায়িক কাজে দেখা করার প্রয়োজন পড়ল, যিনি ওই মুহূর্তে হানাবাড়িটাতে বসবাস করছেন। ব্যবসা নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে মহিলাটি জানালেন বাড়িটি ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। এমনিতেই এই বাড়িটা নিয়ে লেসির আগ্রহের শেষ নেই। কাজেই এমন একটা সুযোগ পায়ে ঠেলবেন তা কী করে হয়। ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলেন এই বাড়িটার ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর যতটুকুন জানা আছে, বললে হেসির কৌতূহল মিটত। ভদ্রমহিলা খুশি মনেই বললেন। কাহিনির মূল রস অক্ষুন্ন রাখার জন্য মহিলাটির বর্ণনাই আমরা তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।
বছর চল্লিশেক আগে উইল করে এক ভদ্রলোককে দেওয়া হয় বাড়িটা। এখানে খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি। কারণ তারপরই হঠাৎ পাগল হয়ে যান। একটা পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেওয়া হলো তাঁকে। তারপর ভদ্রলোকের এজেন্ট এক মহিলাকে ভাড়া দিলেন বাড়িটা। গোড়ার দিকে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটল না। কয়েক মাস পর এক সকালে রান্নাঘরের পিছনের কামরাটায় ঢুকে আবিষ্কার করলেন বাড়ির ছাদের হুকে একটা দড়িতে ঝুলছে রাঁধুনি। এর কিছুদিনের মধ্যে মহিলাটি বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
তারপর কিছুদিন খালি পড়ে থাকে বাড়িটা। তারপর আবার টু লেট ঝুলানো হয়। আর একজন মহিলা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়। একরাতে, একটার মত বাজে তখন, একজন কনস্টেবল টহল দিচ্ছেন, এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে সাহায্য চেয়ে চিৎকার শুনলেন। তারপরই দেখলেন হানাবাড়ির নারী তত্ত্বাবধায়ক জানালার কড়িকাঠ যত শক্ত করে সম্ভব আঁকড়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ তাকে পিছন থেকে টানছে। কনস্টেবল মহিলাটিকে বললেন ভিতরে গিয়ে হলের দরজা খুলে তাঁকে ঢুকতে দিতে। কিন্তু মহিলাটি আবার কামরাটায় ঢুকতে অস্বীকৃতি জানাল। এবার কনস্টেবল বেশ শক্তি প্রয়োগ করে দরজা খুলে ফেলতে পারলেন। তারপর মহিলাটিকে টানতে টানতে হলরুমে নিয়ে এলেন। কিন্তু তখনই আবিষ্কার করলেন পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে তত্ত্বাবধায়ক।
আবার খালি হলো বাড়িটা। ঝুলল টু-লেট। এবার এক মহিলা ভাড়া নিলেন পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু কয়েক মাস থেকেই তালা লাগিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। বন্ধুরা কেন ওটা ছেড়ে দিলেন জানতে চাইলেন তাঁর কাছে। জবাবে ভদ্রমহিলা বললেন নিজে এখানে থাকা কিংবা অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেওয়ার চেয়ে বরং এর পাঁচ বছরের ভাড়া পরিশোধ করতে রাজি আছেন তিনি। তবে কেন এই বাড়ি ছাড়লেন এ সম্পর্কে কিছুই বললেন না।
আমার মনে হয় এরপর এই বাড়িতে উঠি আমি। আঠারো মাস আগে তিন বছরের জন্য এটা লিজ নিই। ইচ্ছা ছিল ভাড়া দিয়ে কিছু রোজগার করব। কিন্তু এখন এই আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ কেউই এক-দু সপ্তাহর বেশি থাকে না। কেন বাড়িটা ছেড়ে যাচ্ছে এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখায় না কেউই। তবে এটা বলেছেন, আমার দিক থেকে কোনো ধরনের ত্রুটি খুঁজে পাননি তারা। বরং কী কারণে যেন বাড়ির কামরাগুলো পছন্দ করতে পারছেন না। অথচ কমরাগুলো, আপনি চাইলে দেখতে পারেন, বড়সড় আর আলো-বাতাসপূর্ণ। আমি নিজেও ভূতে বিশ্বাস করি না। এখানে কিংবা অন্য কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি আমি। তবে যদি জানতাম এর হানাবাড়ির দুর্ণাম আছে তবে কখনো এটা ভাড়া করতাম না।
<